অন্তরালের অনুরাগ ❤ পর্বঃ৭৩

0
5529

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৭৩ ❤

শ্যাম পুরুষদের রাগ বড্ড ভয়ংকর। রাগের তোপে তখন শ্যাম বর্ণটা ঈষৎ কালচে হয়ে দাড়ায়। আপাতদৃষ্টিতে সামনের ব্যক্তির জন্য সেটা মুহূর্তেই অপ্রস্তুতের উৎস বহন করে উঠতে পারে। শান্তর বর্তমান পরিস্থিতিটাও কিছুটা তেমনই। তানবীরের রাগের অগ্নিলাভার ন্যায় গরম নিঃশ্বাসগুলো তার মুখের উপর এসে আছড়ে পরছে৷ গালে চেপে রাখা হাতের বাঁধন যেন আরও জোরালো হলো।

— ‘ আ..মার খু..ব লাগছে। ‘

শরীরের শিরা-উপশিরাগুলোতে প্রচন্ড রাগ কাজ করলেও প্রিয় নারীর আকুল আবেদনে তানবীরের হাতের বাঁধন কিছুটা আলগা হয়ে এলো। পুরোপুরি না ছাড়লেও একদম না ধরে রাখার মতনই তার হাতের চাপ। ভালোবাসে যে। আর ভালোবাসলে প্রিয় মানুষের কষ্টেভরা মলিন মুখটা কি সহ্য করা যায়? যায় না তো।
তানবীর শান্তকে নিজের সাথে আরও খানিকটা মিশিয়ে ধরলো। দুইজোড়া ঠোঁট প্রায় লেগে আসা দূরত্বে নিয়ে পূর্বেকার ন্যায় ক্ষেপা স্বরেই বলল,

— ‘ কতদিন ধরে এসব চলছে? আমাকে বলিসনি কেন? ‘
— ‘ আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না। ‘

তানবীর প্রচন্ড আক্রোশে শাড়ির ফাঁক দিয়েই শান্তর কোমড় চেপে ধরলো৷ হয়তো বা রাগের বশেই কোমড়ের নরম ত্বকে নখের আঁচড় লেগে গিয়েছে। যার ধরুণ কোমল নারী শরীরে সেটার প্রভাব জ্বলমান হচ্ছে।
তানবীর শান্তর ফোনের ডিসপ্লেটা তার মুখের সামনে ধরলো। ইনবক্সের কিছু বাজে ম্যাসেজে চোখ পরতেই শান্তর কলিজা যায় যায় অবস্থা। এই রাগী পুরুষ নির্ঘাত আজ তার জান কবজ করে ফেলবে। নিশ্চিতভাবে বলা যায় বুঝিয়ে বলার টাইমটুকু তাকে দেওয়া হবে না। তাই শান্ত নিজের সবটুকু শক্তি খরচ করে তানবীরকে জড়িয়ে ধরল। নিঃশ্বাস একপ্রকার বন্ধ করে একদমে বলতে লাগলো,

— ‘ প্লিজ আমার কথাটুকু একবার শুনুন। আপনি রেগে যাবেন বিধায় এতদিন সাহস করে বলতে পারিনি৷ আর এই ম্যাসেজগুলো আমি চেক করিনি। এর পিছনে কে রয়েছে সেটাও আমি জানি না। আমিতো বিরক্ত হয়ে উল্টো ব্লকলিস্টে ফেলে রেখেছি৷ প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আপনাকে ধোকা দেওয়ার চিন্তা আমি স্বপ্নেও করতে পারি না৷ বড্ড ভালোবাসি তো৷ প্লিজ ভুল বুঝবেন না। ‘

শান্ত জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। গলা বোধহয় শুকিয়ে গিয়েছে। বেশ ক্লান্ত হয়েই তানবীরের বুকে মুখ গোঁজে অনবরত ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। পুরুষালি শক্তপোক্ত একটা হাত শান্তর মাথাটা আলতো হাতে বলিষ্ঠ বুকে চেপে ধরতেই আবহাওয়াতে যেন শীতলতা নেমে এলো। এতক্ষণের দমবন্ধ করা শ্বাসটুকু যেন সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়াতে শুরু করেছে। শান্ত মুখ উঁচু করে তানবীরের দিকে তাকাতেই তার কপালের মধ্যেখানে সদ্য গোসল শেষ হওয়া সিক্ত ঠোঁটজোড়া জায়গা পেল। স্বামীর হৃদয়জুড়ানো ভালোবাসায় শান্তর চোখযুগল পিটপিট করে বন্ধ হয়ে গেল। তানবীর শান্তর ছোট্ট পানপাতা আকৃতির মুখটা আঁজলাভরে ধরে ভীষণ আদুরে ভালোবাসা মিশ্রিত স্পর্শ বিলাতে লাগলো। পুরুষালি ঠোঁটজোড়া কোমল ঠোঁট ছুঁয়ে যেতেই শান্তর হাতগুলো তানবীরের মাথার পিছনের ছোট্ট চুলগুলো টেনে ধরল। তানবীর শান্তর নরম-পাতলা শরীরটা মুহূর্তেই নিজের বুকের সাথে আগলে নিয়ে দরজাটা লক করে দিলো। তানবীরের নিকট একেবারে ভারহীন শরীরটাকে নিজের ছন্দে বালিশে সযত্নে এসে শুইয়ে দিলো। পুরুষালী শরীরী ভরটা আলতো করে শান্তর উপর পরতেই তার মুখ ফুটে চাপা অস্ফুট একটা শব্দ বেড়িয়ে এলো। তানবীর আলতো করে তার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়েই আবারও ঠোঁটযুগল মিলিত করলো। রুক্ষ বলিষ্ঠ হাতগুলো নিষিদ্ধ সব জায়গায় ছুঁয়ে যেতেই কোমল নারী শরীরটাতে ঝড় বয়তে শুরু করলো। শান্ত তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতেই তানবীরের অসভ্য হাতগুলোর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দুর্বল হাত দিয়ে তাকে বাঁধা দিতে চাইল। কিন্তু তানবীরের পাল্টা আক্রমণে শরীর যেন অসার হয়ে পড়ল। নরম গোলাকার বিছাটাতে একেবারেই শরীর ছেড়ে দিয়ে সে পরে রইল। তানবীর চোখের পলকে কোমল নারী শরীরটাকে নিজের উন্মুক্ত বুকের উপর তুলে নিলো। আলতো করে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

— ‘ তুই কি ভাবিস আমাকে? হ্যাঁ তোর বিষয়গুলো আমার কাছে আর দশটা বিষয় থেকে বহুগুণ আলাদা। তোকে নিয়ে আমার চিন্তাগুলো চব্বিশ ঘণ্টায় শেষ হতে চায় না। কিন্তু তাই বলে কি তোকে আমি অবিশ্বাস করি কিংবা তোর চরিত্র নিয়ে আমার মনে কোনো দ্বিধা আছে? এমনটাই কি তোর ভাবনা? ‘

শান্ত মুখ তুলে তানবীর হালকা রাগ মিশ্রিত মুখটাতে নজর দিলো। শুনতে খারাপ লাগলেও তখন তানবীরকে এমনভাবে রেগে যেতে দেখে শান্তর ভয়ার্ত মনটা এমনটাই চিন্তা করে নিয়েছে। তাই প্রশ্নের কোনোরকম প্রতিউত্তর দেওয়ার সাহস শান্তর হলো না। সে অপরাধীর ন্যায় মুখটা নিচু করেই রাখলো।
তানবীর মুহূর্তেই তার নিচু মুখটা তার বরাবরে নিয়ে আসলো। কোমড়ের দুইপাশে হালকা চাপ প্রয়োগ করে তাকে আরেকটু নিজের মুখ বরাবর করলো। ঠোঁটযুগল ছুঁইছুঁই করে পুনরায় বলল,

— ‘ হয়তো বা আর সবার মতো আমি আমার ভালোবাসার অনুভূতিগুলো তোকে বলে বেড়ায় না। তাই বলে কি ভালোবাসাটা কম?
তোর চিন্তাশক্তির উপরে আমি তোকে চাই। খুব বেশি চাই। যেই চাওয়ার হার প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়েই চলেছে। কমার বিন্দুমাত্র নাম নেই। তাই তোকে নিয়ে চিন্তাও বেশি হয়। অনিচ্ছা স্বত্বেও বোধহয় হিংসুটে হয়ে উঠি। তার মধ্যে যদি তুই এমন বিরক্তিকর কাজ-কারবার করিস তাহলে আমার মাথাটা কিভাবে ঠিক থাকবে বলতে পারিস? এতসব হলো অথচ
আমাকে একবারও বলার প্রয়োজনবোধ অবধই করিসনি? এটা জানার অধিকার কি আমার নেই? ‘

তানবীরের সুক্ষ্ম দাঁড়ালো প্রশ্নবাণে শান্তর মুখটা আবারও চুপসে গেল। সে মাথা নুইয়ে মিনমিন করলো,

— ‘ এভাবের মতো ক্ষমা করে দিন। আর কখনও এমনটা হবে না। ‘
— ‘ তোর কথার গ্যারান্টি কি? মাসখানেক আগেও কিছুটা এই ধরণের কাজই করেছিলিস। ‘
— ‘ আমার কি দোষ? আপনার যেই মাথাগরম! এমনসব কথা বলতে ভয়ে আমার বুক কাঁপে। আর বলি কি, ভার্সিটির ছেলেগুলো এতোদিন কোথায় ছিল? যখন সিঙ্গেল ছিলাম তখনতো একটাকেও পাশে ঘুরঘুর করতে দেখেনি৷ যেই বিয়ে হয়ে মিঙ্গেল হলাম এমনি তাদের দেখা সাক্ষাৎ মিলতে শুরু করলো৷ বিষয়টা কি গ্রহণযোগ্য? এটা যে প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ! ‘

শান্তর কন্ঠে ঈষৎ রাগপূর্ণ আভাস। কিন্তু তানবীর এবার রাগ ভুলে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ছিটেফোঁটা বেঁচে যাওয়া রাগটাও এবার যেন বরফের ন্যায় গলতে শুরু করলো। সে শান্তর কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলল।
আর মুহূর্তেই শান্তর উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মুখশ্রীতে যেন কেউ আলতা ঢেলে দিয়ে গেল। লজ্জায় তার কানের লতিটাও লালচে হতে শুরু করেছে।

— ‘ ছিঃ কি অশ্লীল! ‘
— ‘ বউয়ের কাছে আবার কি শালীনতা! এখানেই তো যত সীমালঙ্ঘনের স্বাধীনতা। ‘

শান্ত চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে তানবীরের বুকে একটা কিল বসালো। সে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসছে। অতঃপর আলতো করে শান্তর গালে হাত বুলিয়ে বলল,

— ‘ এবার কিন্তু সত্যিই এসব নিয়ে ভাবা উচিত। কি বলিস? ‘
— ‘ কি বলবো? ‘
— ‘ আরে বাচ্চা-কাচ্চা নিতে হবে না? আর এখনতো বাচ্চা নেওয়া রীতিমতো ফরজ হয়ে দাড়িয়েছে। বউয়ের পিছনে যেই পরিমাণ বেয়াদব ছেলেগুষ্টির লাইন পরেছে অতি শীঘ্রই মেয়ে থেকে মা তে কনভার্ট করা প্রয়োজন। ‘
— ‘ ইশশ চুপ করেন তো৷ সবসময় যত আজেবাজে কথাবার্তা। ‘

তানবীর থামলো না বরং শান্তকে নিজ বুকের সাথে আরেকটু চেপে ধরে অধৈর্য্য স্বরে বলল,

— ‘ তুই চুপ থাক। সাদি মেয়ের বাবা হয়ে গেল। অর্ণবও সেই পথের যাত্রী। আর আমি-ই কি-না সবার পিছনে রয়ে গেলাম! এই মেয়ে বল না কবে বাবা হচ্ছি? ‘
— ‘ ছাড়ুন তো আমাকে। আপনার মাথাটা পুরোই গিয়েছে। ‘

তানবীর তাকে ছাড়লো না। উল্টো মুহূর্তেই বুকের উপর থেকে নামিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরল। পূর্বেকার স্বরেই বলল,

— ‘ এতোসব বুঝি না। বল আমাদের বাবু কবে আসবে? ‘
— ‘ কি মহা জ্বালা! আমি এসব কিভাবে জানবো? এসবে কি আমাদের কারো হাত আছে? ‘
— ‘ সেটা না থাকুক। কিন্তু আমাদেরও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তোর জন্য তো ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। ‘
— ‘ সরুন তো। মুখে কিছু আটকায় না। ‘
— ‘ কি আটকাবে! ঠিকই তো বলছি। এবার আর ছাড়াছাড়ি নেই। একেবারে বাবা ডাক শুনে তবেই ছাড়ছি। ‘

শান্ত এবার লজ্জারাঙা মুখেই ফিক করে হেসে ফেলল। এমনসব কথা বললে না হেসে পারা যায়! কিন্তু তানবীরের মুখ হাসিহাসি দেখা গেল না। বরং সে খানিকটা রাগ ঝরা কন্ঠে ধমকে উঠল,

— ‘ এমন পরিস্থিতিতে দাঁত কেলিয়ে হাসলে দাঁতটাই ফেলে দিব বেয়াদব মেয়ে। আমি এদিকে টেনশনে মরছি আর তুই কি-না হাসিস? ফাজিল মেয়ে-ছেলে। ‘
— ‘ এসব কথা বললে না হেসে উপায় আছে? আর তাছাড়া এতো টেনশনের কি আছে! যখন বাবু হবার হয়ে যাবে। ‘
— ‘ মানে! তোর ভাষ্যমতে কি কোনো প্রসেস ছাড়াই বাবু আকাশ থেকে উড়ে উড়ে আসবে? ‘

শান্ত তানবীরের এহেন কথায় আবারও হেসে ফেলল। তানবীর রাগী চোখে তাকাতেই সে মুখ চেপে ধরল। অতঃপর লজ্জামাখা কন্ঠেই মিনমিনিয়ে বলল,

— ‘ সবই হবে। আমি কি আপনাকে কখনও বাধা দিয়েছি বা বাবুর বিষয়ে না করেছি? ‘
— ‘ মুখফুটে হ্যাঁ ও তো বলিসনি। ‘
— ‘ আপনি কি এতোটাই বোকা নাকি! আমার বলতে লজ্জা লাগবে না বুৃঝি? ‘

বলেই শান্ত আবারও মাথা নুইয়ে নিলো। তানবীরের মুখটা এবার বেশ উজ্জ্বল। খুশিতে আত্মহারা হওয়ার জোগাড়। সে একে-অপরের আরও ঘনিষ্ঠ হলো। শান্তর নিচু করে রাখা মুখটা আঁজলাভরে তুলে নিয়ে তপ্তস্বরে বলল,

— ‘ তার মানে হ্যাঁ বলছিস? ‘

দুনিয়ায় সব লজ্জার আবির বোধহয় আজ শান্তর কাছে এসেই ধরা খেয়েছে। সে আবারও লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল। নিঃশব্দের হ্যাঁ বোধক উত্তরে তানবীর দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। তার এতো খুশি খুশি লাগছে কেন!
তানবীর দীর্ঘ সময় নিয়ে শান্তর কপালে উষ্ণ পরশ দিলো। আবেশে শান্তর চোখজোড়া তৎক্ষনাৎ বন্ধ হয়ে এলো। কিন্তু শাড়ির আঁচলে তানবীরের হাত পরতেই সে বাধা দিতে গেল,

— ‘ কি করেন? ‘
— ‘ যা করা উচিত। ‘
— ‘ ছাড়ুন তো৷ ডিনার রেডি করা আছে। নিচে চলুন। ‘

শান্তর কথায় ছটফটানি ভাব। তানবীরকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরাতে চাইছে। কিন্তু তানবীরের মতো শক্ত সামর্থ্য পুরুষের সাথে কি শান্ত নামক পিচ্চি মেয়েটা পারে!
তানবীর হাত বাড়িয়ে রুমের লাইট সুইচগুলো অফ করে দিয়ে মুহূর্তেই রুমটাকে অন্ধকার রাজ্যে নিয়ে গেল।
পরিস্থিতি হাতের বাহিরে যাবার উপক্রম ধরতেই শান্ত আরেকবার লাস্ট চেষ্টা করলো,

— ‘ খাওয়া-দাওয়া করবেন না? প্লিজ ডিনারটা…

তানবীর তাকে বাক্যটা সমাপ্ত করতে দিলো না। উন্মুক্ত গলায় হালকা করে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল। অতঃপর অবাধ্য হাতগুলোর অসভ্য কার্যক্রম চালাতে চলাতেই ঘন স্বরে বলে উঠল,

— ‘ খাব তো। কিন্তু আজ যে রেগুলার ডিনারে পেট ভরার নয়। স্পেশাল ডিনার চাই। ‘

আধা আলো-অন্ধকার রুমটাতেও তানবীরের মুখের দুষ্টু হাসিটা শান্তর নজর এড়ালো না। যার ফলে মেয়েলি লজ্জাগুলো যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলতে লাগলো।
তানবীর শান্তকে কাছে টানলো। যতটুকু কাছে টানলে আর মিনিমাম ফাঁকা জায়গাটুকু অবশিষ্ট থাকে না। অতঃপর.. অতঃপর আকাশের চাঁদটাও কাপলযুগলের উষ্ণ ভালোবাসায় লজ্জা পেয়ে মেঘের আড়ালে গা ঢাকা দিলো। চৈত্রের শেষ সময়ে এসেও যেন ফাল্গুনের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত তপ্ত আকাশ-বাতাস।

__________________

পিচ্চি মেয়েটা ইতিমধ্যে যেন বাবার দুনিয়ার প্রায় সবটুকুই দখল করে নিয়ে বসে আছে। বাবা যে ব্যস্ততায় থাকে সব বুঝতে পারলেও এটা সে মানতে নারাজ। এমনকি বাবার সবটুকু সময় সে নিজের জন্যই চায়। সাদিদ একহাতে মেয়েকে নিজের বুকের সাথে আগলে রেখেছে আর অপর হাতে কোনোরকমে চামচ চালিয়ে খাবার শেষ করার চেষ্টা করছে।

— ‘ তাহলে বাবা কি সিদ্ধান্ত নিলে? অর্ণব কিন্তু বেশ জোর দিচ্ছে। না গেলে পরে আন্টি-আঙ্কেলকে নিয়ে বাসায় এসে হাজির হবে। ‘
— ‘ সিদ্ধান্ত আর কি নিব? পরশু আমার একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। সেটা শেষ করে আমি ডিরেক্ট সেখানে পৌঁছে যাব। আর তোমরা নিজেদের সময় ম্যানেজ করে পৌঁছে যাবে৷ ‘
— ‘ ভাইয়া তোমার কোনো প্রবলেম নেই তো? ‘
— ‘ না আমিও ম্যানেজ করে নিব। সবসময় তো আর কাজ নিয়ে পরে থাকলে চলবে না৷ ফ্যামিলি প্রোগাম বলেও তো কিছু আছে৷ তা প্রিয়তীর অবস্থা এখন কেমন? মেয়েটার সাথে দেখা হয় না বহুদিন হলো৷ ‘
— ‘ ভালোই তো দেখলাম। মানে এইসময়ে যেরকমটা থাকে আরকি। কিন্তু নীলাঞ্জনার মতো না। ওর প্রেগন্যান্সিতে এখন পর্যন্ত কোনো কমপ্লিকেশন পাওয়া যায়নি। ‘
— ‘ ভালো থাকলেই ভালো। আমাদের নীলার সময় শ্বাসটা গলায় এসে আটকে থাকতো। আল্লাহ যে শেষ পর্যন্ত সকলের দোয়া কবুল করেছে এটারই হাজার শুকরিয়া। ‘
— ‘ হ্যাঁ বাবা, এটা যা বলেছিস। ‘

সাদিদ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার নীলার মুখের দিকে তাকালো। সেই দমবন্ধকর মুহূর্তটা পেরিয়ে আসার বিজয়ের উল্লাস নীলার মুখে যেন এখনও বহমান। সাদিদ নিজেও মৃদু হাসলো। অতঃপর চামচে করে চিকেন ক্যাশুনাট সালাদের বাকি অংশটা মুখে তুলতে যেতেই পিচ্চি মেয়ের জন্য কিছুটা নিচে পরলো। নীলা তার পাশেই ছিল। তাই দ্রুত বলে উঠল,

— ‘ অনেক হয়েছে এবার আমার কাছে দিন। মেয়ের জন্য ভালোভাবে নাস্তাটুকু শেষ করতে পারছেন না। ‘

লোকে আসলে সত্যি কথাই বলে। আজকাল ভালো কথার দাম নেই বললেই চলে। তাইতো দুইজোড়া তীক্ষ্ণ চোখ একাধারে নীলাকেই পর্যবেক্ষণে লেগেছে। নীলারও এবার রাগ হলো। পেয়েছে টাকি এই বাপ-মেয়ে তাকে?
বাপের দোষেও কিছু বলা যায় না আবার মেয়ের দোষেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে হয়৷ আর যদি ভুলবশত দুইজনের মধ্যে কারো বিরুদ্ধে মুখ ফুটে কিছু বেড়িয়ে আসে তাহলে দুইজনেরই বাড়া ভাতে যেন কেউ মই দেওয়ার মতো অবস্থা হয়। সবসময় কি এসব ভালো লাগে?

— ‘ মা, আমি বাড়ি যাব। এই বজ্জাত বাপ-মেয়ের সাথে আমি আর নেই৷ ‘
— ‘ নীলাঞ্জনা, আমাকে বললে ঠিক আছে। কিন্তু আমার মেয়ের উপর অপবাদ দিবে না। সেটা তার বাবা একেবারে সহ্য করবে না। ‘

পিচ্চি ব্রিটিশটা তখন ঠোঁট উল্টো করে সাদিদের মুখের দিকে তাকালো। যেন নিঃশব্দে বাবাকে বলে দিচ্ছে আমার বেলায় নিয়ম উল্টো হবে কেন? মাকে বলো প্রিন্সেসের বাবাকে কিছু বলা যাবে না। তাহলে সেটা প্রিন্সেস সহ্য করবে না।
সাদিদ মেয়ের মিষ্টি মুখটার দিকে তাকিয়ে আপ্লূত হলো। ছোট্ট শরীরটা আরেকটু কাছে এনে নরম গালগুলোতে স্নেহের পরশ দিলো। মেয়ে এবার হাসে।
নীলা হাতের চামচটা শব্দ করেই টেবিলের উপর রাখলো৷ বাপ-মেয়ের এমন আধিখ্যেতা দেখে তার শরীর রীতিমতো জ্বলে যাচ্ছে।
ডাইনিং টেবিলে বসা বাদবাকি সবাই তাদের কান্ডে ঠোঁট টিপে হেসে যাচ্ছে।

— ‘ বাবা-মা আমি কিন্তু সিরিয়াস। এবার যাচ্ছি মানে যাচ্ছি। এদের সাথে আমি আর নেই। ‘
— ‘ তুইও না পিচ্চু! কি করেছে তারা? ‘
— ‘ কি করেছে তারা! তোমাদের চোখে এসব পরছে না। বাপ-মেয়ে এখনই একজোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি আর এদের মধ্যে নেই৷ ‘

সাদিদ এবার মেয়ের দিকে তাকালো। পিচ্চি মেয়েটাও তার মুখের দিকেই উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে রয়েছে। সাদিদ আলতো হাতে মেয়েকে আদুরেভাবে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,

— ‘ আম্মা, তোমার মা কিন্তু এবার সত্যিই রেগে ফায়ার। একটা কারিশমা দেখাও না৷ নতুবা এবার সত্যিই আমাদের দেবদাসের জীবন ধারণ করতে হবে। ‘

পাকাবুড়িটা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো৷ অতঃপর বাবার শিখানো বুলিতে বাজিমাত।
মেয়েটা মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভেঙে কান্না করতেই নীলা গলে গিয়ে মোম। বাপ-মেয়েকে শায়েস্তা করতে মেকি রাগটা আর ধরে রাখতে পারলো না। টিস্যু পেপার দিয়ে ভেজা হাত মুছে সাদিদের দিকে মেয়েটাকে কোলে দিতে হাত বাড়িয়ে দিলো।
সাদিদ নিঃশব্দে হেসে নিজের পাশের চেয়ারটা নীলার জন্য টেনে দিলো৷ নীলা একপলক সাদিদের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে নিয়ে চেয়ারে বসলো। বিচ্ছুটা মায়ের অগোচরে সাদিদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সাদিদ পাকা মেয়ের কান্ডে নিঃশব্দে হেসে ফেলল। নীলার আপাতত তাদের ষড়যন্ত্রের দিকে নজর নেই। সে ছোট্ট মেয়েটাকে ভীষণ আদুরেভাবে নিজের উষ্ণ বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।
সাদিদের খাওয়া শেষ হতেই সে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। টিস্যুতে হাত মুছতে মুছতে একপলক বাকি সবার দিকে তাকালো। অতঃপর খুবই সংগোপনে চোখের ইশারায় নীলাকে উপরে আসতে বলল। নীলা সেটা দেখেও অদেখা করলো৷ যার ধরুন তৎক্ষনাৎ ফ্রিতে একটা চোখ রাঙানি খেল। নিরুপায় হয়ে নীলা মেয়েকে কোলে নিয়েই উপরে উঠার জন্য পা বাড়ালো। কিন্তু শাদের ডাকে পিছনে ফিরল,

— ‘ খালামণি বউকে একটু কোলে দাও। সারাদিন কোলে নেইনি। ‘

শাদের কন্ঠে ভীষণ হতাশা। উপস্থিত সবাই নিচু শব্দে হেসে ফেলল। না হেসে উপায় আছে? মাত্রই সকাল হয়েছে। আর নাস্তার পূর্বে অবধি শাদ ছোট্ট নীয়ানার সাথেই ছিল। আর এখন কি-না বলছে এই কথা! কিন্তু শাদ তাদের হাসিতে যোগ দিতে পারলো না। উল্টো চোখ বাঁকিয়ে সবার দিকে তাকালো। নীলা হাসি মুখেই পিচ্চিটাকে শাদের কোলে দিতে চাইল। কিন্তু নিধি তাতে অমত পোষণ করে বসলো।

— ‘ পিচ্চু একদম না। ওর কোনো বিশ্বাস আছে? বাবুকে নির্ঘাত ফেলে দিবে। ‘
— ‘ মা! ‘

শাদের কন্ঠেও মায়ের অভিযোগের বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তি। নীলা ফেঁসেছে মা-ছেলের টক-ঝাল-মিষ্টি ঝগড়ার মধ্যেখানে। অবশেষে শাহেদ এসে আদরের পুত্রের পক্ষ নিলো।

— ‘ এটা কিন্তু ঠিক না নিধি। তুমি আমার ছেলেকে সবসময় ছোট মনে করো৷ আমার আব্বা কি এখনও ছোট রয়েছে? ‘

শাদ বাবার কথায় ব্যাপক খুশি। পারলে এখনই এসে গলায় ঝুলে পরবে। শাহেদ ছেলের হাসিমুখটা দেখে নিজেও হাসলো। অতঃপর নীলার উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ নীলা, আম্মুটাকে তার চাচ্চুর কোলে দাও তো। ‘

নীলা শাহেদের কোলে নীয়ানাকে দিতেই শাদ এসে ঝুঁকে পরল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছোট শরীরটা দেখতে লাগলো। নিধি ছোট্ট একটা হতাশাজনক শ্বাস ফেললো। কেউ কারো থেকে কম নয়। কাদের কাছে কার নালিশ নিয়ে যাবে?

— ‘ পাপা, বউটা সুন্দর না? ‘
— ‘ সুন্দর তো আব্বা। কিন্তু এটাতো বোন হয়। ‘
— ‘ না হয় না। আমার বউ হয়। ‘
— ‘ এমনি এমনি বললে তো বউ হয় না৷ বউ বানাতে অনেককিছু লাগে। ‘
— ‘ কি কি লাগে? ‘
— ‘ আরে আব্বা অনেক কিছু। ‘
— ‘ সেই অনেককিছুই জানতে চাচ্ছি। সব বলবে কিন্তু। ‘
— ‘ আহ্ শাহেদ, দাদু ভাইয়ের সাথে আবার কেন লাগলি? ‘
— ‘ লাগছি কই বাবা? ছেলে তো বুঝতে চায় না। মানুষ ছোট কিন্তু কথা বলে বড় বড়। ‘
— ‘ মানুষও বড়। এখন বলো বউ বানাতে কি কি লাগবে? দোকানে পাওয়া যাবে নাকি মায়ের মতো অনলাইনে অর্ডার দিতে হবে? ‘

বসার ঘরের সবাই হালকা স্বরে হেসে ফেলল। নীলারও বিচ্ছুটার পাকনামি দেখে ঠোঁটের কোণে প্রশয়ের হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু হঠাৎ করে তার উপরে চোখ পরতেই সাদিদের হালকা রাগী মুখশ্রী নজরে এলো। তাই রাগী মানুষকে আর রাগাতে না চেয়ে আস্তে করে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।
ঘরের চৌকাঠে পা রাখতেই শক্তপোক্ত একজোড়া হাত তাকে টেনে ভিতরে আনলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই বলিষ্ঠ বুকে কোমল নারী শরীরটাকে একপ্রকার চেপে ধরল। গমগমে ধারালো কন্ঠে বলল,

— ‘ কখন আসতে বলেছি? ‘

নীলা কয়েক মুহূর্ত থমকালো। কিন্তু পরবর্তীতেই নিজের ভয়কে জয় করার উদ্দেশ্য বলল,

— ‘ কি আজব! নিচে সবাই ছিল তাদের মধ্যে থেকে কিভাবে আসবো? ‘
— ‘ না আসবার তো কোনো কারণ দেখছি না। স্বামী বাহিরে যাবে বউ তো তার সাথেই থাকার কথা। ‘
— ‘ চুপ করুন। সবসময় দুষ্টুমি। ‘
— ‘ দুষ্টুমির কি দেখলে! এটাই তো স্বাভাবিক। বউরা পাশে থাকবে। একটু আধটু সেবাযত্ন করবে, মিষ্টি মিষ্টি আদর দিবে। ‘

নীলা কপাল কুঁচকে সাদিদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিদ দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাত দিয়ে নীলার কপালটা সোজা করে দিলো৷ অতঃপর নাকটাতে আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,

— ‘ এখন ঝটপট আদর-টাদর দিয়ে ফেলো তো৷ লেইট হয়ে যাচ্ছে। ‘
— ‘ কিসের আদর! সরুন তো। ‘
— ‘ তুমি এতো কিপ্টা কেন? বউরা হুমড়ি খেয়ে আদর বিলাতে প্রস্তুত থাকে। অথচ আমার বউটা এখনও পালাই পালাই করে। ‘

নীলা এবার লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে নিলো। সাদিদ বৃদ্ধাঙ্গুলে তার ঠোঁটের কোণ ছুঁইয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,

— ‘ আমার তো আদর চাই৷ সারাদিন কাজ করতে এনার্জি লাগবে তো। ‘
— ‘ এতক্ষণের খাবারের এনার্জি কোথায় গেল? সেগুলো দিয়েই দিন পার করুন। ‘

নীলা মৃদুস্বরে মাথা নুইয়েই কথাটুকু বলল। সাদিদ একপলক তার লজ্জারাঙা লালচে মুখশ্রীতে নজর বুলিয়ে কানের কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে ভীষণ অসভ্য স্বরে বলল,

— ‘ বিবাহিত পুরুষদের কেবলমাত্র রেগুলার রুটিন খাবারের এনার্জিতে পোষায় না সোনা। তাদের যে আরও কিছু চাই। এজ লাইক চুমু-টুমু, অর সে..

নীলা আন্দাজের উপর ঢিল মেলেই সাদিদের মুখের উপর হাত চেপে ধরল। সাদিদের দুষ্টুমিতে ঝকমক করা চোখজোড়া দেখে লজ্জায় কানের লতি পর্যন্ত লাল হতে শুরু করলো। অর্থাৎ তার অনুমান সঠিক।
সাদিদ আলতো করে নীলার হাতের উল্টো পাশে রুক্ষ ঠোঁটযুগল ছুঁইয়ে দিতেই সে হাত সরিয়ে নিলো। সাদিদ তার পূর্বের দুষ্টুমি বজায় রেখেই আবারও বলল,

— ‘ সেকেন্ড অপশনতো আপাতত হওয়ার নয়। ফাস্ট অপশনই তাহলে চলুক। ‘

দুষ্টু ছেলেটা নীলাকে আর উত্তর দেওয়ার সময় দিলো না। আলতো করে নরম ঠোঁটযুগল চেপে ধরল। বারকয়েক ভীষণ আদুরে স্পর্শ দিতেই নীলা কাঁপা হাতে অফিসের জন্য সদ্য আয়রন করা সাদিদের বাহুর শার্টটি খামচে ধরলো। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সাদিদের ভিতরের পুরুষ পশুটা যেন বারবার বেড়িয়ে আসতে চাইছে। যা হলে নির্ঘাত অনর্থ হয়ে যাবে। তাইতো জোরপূর্বক নীলার থেকে সরে আসতে চাইছে। কিন্তু কিসের এক টানে যেন বারবার আটকা পরে।
অবশেষে মেদহীন কোমড়টা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নীলাকে সামান্য উপরে তুলে ওয়াল কেবিনেটটার সাথে আলতো করে চেপে ধরে বিরামহীনভাবে চলতে লাগলো ঠোঁটের আদর। নীলার চোখজোড়া আবেশে বন্ধ হয়ে এলো। বন্ধ চোখজোড়াতেও যেন সুখের অশ্রুর নোনা জলগুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান। যুগের তালে যেখানে ভালোবাসাগুলো ক্রমশ মৃত্যুের পথে। ধোকা-পরকীয়াতে যখন সংসারগুলোতে মরিচা ধরছে এই প্রেমিক পুরুষটি এখনও সেই প্রথমবারের মতোই ভালোবাসতে ব্যস্ত। দিনকে দিন যে ভালোবাসাটা কেবল বেড়েই চলছে। যেখানে যুগের প্ররিক্রমায় ভালোবাসাটা হ্রাস পাওয়া উচিত সেখানে এই কাপলযুগলের পবিত্র সম্পর্কের আবেগঘন প্রেম যেন বেড়েই চলেছে। কমার যেখানে বিন্দুমাত্র কোনো চিহ্ন নেই।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here