আনকোরা পর্ব-১৫

0
2908

#আনকোরা

#রূবাইবা_মেহউইশ
১৫.

অর্ধেকটা রাত বৃষ্টিহীন ছিল। ভোরের আগে আবারও ঝমঝমিয়ে নামলো বৃষ্টি। চৈতীর বাবা ভোরের আগ মুহূর্তে আবার ফোন করলেন বাড়িতে। তিনি রংপুরে আছেন এবার। কথা ছিলো কাল রাতে আসবেন এবং এবার তিনি নিজের কোয়ার্টারে সুইটিকেও নিয়ে যাবেন। জীবনের যতগুলো বছর ধরে তিনি এই চাকরিতে জয়েন করেছেন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পরিবারকে সাথে নেননি। সারা দেশে ট্রান্সফার হয়ে অনেক গুলো জেলায় ছিলেন। পদ উপরে উঠেছে, দ্বায়িত্ব বড় হয়েছে সেই সাথে পরিবার নিয়ে পোস্টিংয়ের ব্যবস্থাও হয়েছে। কিন্তু সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বারবার শহর বদলে নষ্ট হবে। মূলত মেয়ের পড়াশোনায় জায়গা পরিবর্তনের কারণে কোন ক্ষতি না হয়ে যায় সেই ভেবে বসত ভিটায় স্ত্রী- সন্তানকে রেখে গেছেন। দেশের বাইরে থাকা সময় গুলোতে তাদের যখন খুব বেশি মনে পড়তো তখনই ভাবতেন এ কাজে তিনি সফল হতে পারবেন না। চাকরিটা এবার ছাড়তেই হবে। কিন্তু যখন যখন সফলতার মাধ্যমে নিজের নামের ক্রেস্ট বা মেডেল হাতে এসেছে তখনই তিনি হয়ে উঠেছেন স্বার্থপর। চৈতীর হাজারো অভিযোগ উপেক্ষা করে মজে ছিলেন দ্বায়িত্ব পালনে। কিন্তু এবার যখন সময় ফুরিয়ে আসছে। রিটায়ার্ড হতে আর মাত্র কয়েকটা বছর হাতে তখনি তিনি ভেঙে পড়লেন। চৈতীর বিয়েটা দেওয়ার পরই পরিবারের প্রতি ভালোবাসার একটা টান অনুভব করলেন। চৈতী শ্বশুর বাড়িতে থাকবে তাই এবার তিনি সুইটিকে নিজের কাছেই নিয়ে যাবেন। বয়স যেমন তার হচ্ছে তেমনি সুইটিরও তো হচ্ছে। এখন অন্তত তার জীবনের নির্লিপ্ত নারীটিকে একটু মন খুলে বাঁচার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে হয়।সুইটি বরাবরই স্বামী পরায়ণ নারী। বিয়ের পর নতুন অবস্থা থেকেই সে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে। কখনো নিজের চাওয়া-পাওয়া, শখ- আহ্লাদের কথা মুখ ফুটে বলেনি। চাঁদ খান নিজেও কখনো চেষ্টা করেননি স্ত্রীর মন বোঝার। ছুটির দিন গুলোতে বাড়িতে এসেছেন, দিনভর এ কাজ ও কাজে ব্যস্ত কিংবা সংসারের প্রয়োজনীয় দিক গুলো গুছিয়ে দিতেন যেন তিনি না থাকার সময়ে তার বাবা, স্ত্রী কিংবা মেয়েকে কোন ঝামেলা পোহাতে না হয়। আর রাতের বেলা স্ত্রীকে কাছে নিতেন প্রাকৃতিক চাহিদার টানেই। সম্পর্কের বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে কখনো জানা হয়নি স্ত্রীর দেহের ভেতরে মনটা কি চায়! সন্তানটা তার অর্থ আর খেলনার বাইরে কি চায়! কিন্তু এবার আর ভুল করবেন না। পবিত্র বন্ধন নিয়ে খেলা করা যায় না। আর চৈতী,দিহান জেদী হলেও বেশিদিন অবাধ্য থাকবে না। তারা নিশ্চয়ই সম্পর্কটাকে মেনে নিবে। আর চাঁদ খানের বিশ্বাস তার বড় আপা মানুষটাও খুব বুদ্ধিমতী তিনি নিশ্চয়ই ছেলে মেয়ে দুটোকে মানিয়ে নিবেন৷ চাঁদ খান যখন ফোন করলো সুইটিকে তখন চৈতী সজাগ ছিলো। দিহানের জ্বর আর চোখ মুখে নেশাগ্রস্ত মানুষের মত ঢুলুঢুলু ভাব দেখে ভয় পেয়েছিলো খুব। দিহানকে সে ডেকেছিলো কয়েকবার কিন্তু কোন জবাব পায়নি৷ লাল হয়ে চোখের ভেতর যেন রক্তের মাখামাখি অবস্থা দিহানের৷ চৈতী আর ভাবতে পারলো না কিছু। সে দরজা খুলে মায়ের ঘরের কাছে গেল। মায়ের কন্ঠস্বর বাইরে থেকেই শোনা গেল তাই চৈতীর বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার বাবা ফোন করেছে। কয়েক সেকেন্ড ইতস্তত করেও আবার দরজায় ধাক্কা দিলো।

“মা জেগে থাকলে একটু বের হও।”

সুইটি প্রথম ডাকেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। কানে তার তখনো ফোন ছিলো। চাঁদ খানও শুনেছে চৈতীর আতঙ্কিত কন্ঠস্বর।

“কি হয়েছে চৈতী তুই ঘুমাসনি!”

“ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু দিহান ভাইয়ের জ্বর বেড়ে হঠাৎ করেই কেমন যেন করছে।”

সুইটি শুনেই ভয় পেল। সন্ধ্যায় দিহানকে দেখে তারও মনে হয়েছিলো ছেলেটার বুঝি শরীর ভালো না কিন্তু খারাপ কিছু হবে বলে ভাবেনি৷ সে ফোন কানে নিয়ে বলল, “আপনি কি পরে ফোন দিবেন? দিহানের শরীরটা ভালো না আমি দেখে আসি কি অবস্থা।”

“হ্যাঁ তুমি যাও দেখো আর অবস্থা বেশি খারাপ হলে ড্রাইভারকে ফোন দাও। হাসপাতালে যাও। আমি পাঁচটা পর্যন্ত ফ্রী আছি।”

সুইটি ফোন রাখলো। চৈতী ততক্ষণে তার ঘরে চলে গেছে। দিহান উপুর হয়ে শুয়ে আছে আর বালিশ তার মাথায় চেপে রেখেছে। চৈতী কয়েকবার ডাকলো কিন্তু দিহান জবাব দিলো না৷ সুইটি এসেও বার কয়েক ডাকতেই সে বলল, “মামী মা’কে ফোন দেন৷ মা এলেই আমার মাথার যন্ত্রণা কমে যাবে।”

কি করা উচিত বুঝতে পারছে না সুইটি৷ সে এগিয়ে এসে দিহানের মাথার উপর থেকে বালিশটা সরাতে চাইলে দিহান দিলো না। সংকোচ নিয়েই সুইটি একটু জোর করেই বালিশ সরিয়ে মাথায় হাত দিলো দিহানের। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ছেলেটার। চৈতীকে থার্মোমিটার আনতে বলে সে জোর করেই দিহানকে বালিশের ওপর মাথা রাখতে বলল।বালতিতে পানি আগেই ছিলো সে আবার পানি ঢালতে লাগলো। চৈতী থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপলো। একশো তিন পেরিয়ে যাচ্ছে জ্বর।ভয় পাচ্ছে সুইটি। দিহান আবার আবোলতাবোলও বলতে শুরু করেছে কিছুক্ষণ ধরে। একবার বলছে, ব্যান্ডেজ করো জলদি৷ এত রক্ত গেলে বাঁচাবো কি করে তাকে৷ আবার বলছে, আমিও যাবো তোমার সাথে একটু দাঁড়াও।

ভয় হচ্ছে চৈতীর। সে কখনো কাউকে জ্বরের ঘোরে এমন করতে দেখেনি। একবার তার দাদুর খুব জ্বর হয়েছিলো। তখন সে ক্লাস ফাইভ কি ফোরে পড়ে৷ তখন দাদু প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছিলো খুব। মা আর ফুপিদের ডেকে বলেছিলেন আমার কোন কাজে,কথায় কষ্ট পেলে মাফ করে দিস। তখন মা বলেছিলো মৃত্যু ভয়ে নাকি দাদু অমন করেছিলো। কিন্তু দিহান ভাইয়ের অবস্থা চৈতী কিছুতেই বুঝতে পারছে না।সুইটিও ভয়ে দিশেহারা হয়ে আগে চৈতীর বাবাকেই কল দিলো। পাঁচটা বাজতে এখনও বিশ মিনিট বাকি। তিনি ফোন তুলেছেন আর সবটা শুনে যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালেই নিতে বললেন৷ বাড়ির ড্রাইভারকে ফোন করে জাগিয়ে দিয়েছেন চাঁদ খান নিজেই। ড্রাইভার এসে ধরাধরি করে দিহানকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। সুইটি চৈতীকে বলল তার পাশে বসতে। ভয়ার্ত চোখে চৈতী মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝলো এখন কিছু ভাবার সময় নেই। দিহানকে ধরে পাশে বসলো সে তার পাশে সুইটি। ভোরেই দিহানকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভর্তি করতে হয়। অত ভোরে ডাক্তার একজন পাওয়া গেলেও তিনি ছিলেন গাইনি বিভাগের। সুইটি নিজের পরিচয় দিতেই মহিলা চমকিত নজরে চাইলেন তার দিকে।

“আপনি চাঁদের স্ত্রী!”

চৈতী আর সুইটি অবাক হলেও আপাতত তারা দিহানকে নিয়ে খুব ভয়ে আছেন। মহিলা তাদের পরিচয় পেয়েই দিহানকেও চিনতে পারলেন। দিহানের অবস্থা দেখে নিজেই বললেন, “আপনারা ভয় পাবেন না আমার স্বামীও এ হাসপাতালেরই ডক্টর৷ তার ডিউটি নয়টা থেকে তাই আমি আপাতত তার সাথে কথা বলে দেখছি রোগীকে।”

মহিলার কথা শুনে সুইটির মন শান্ত হলো না। সে ফোন হাতে নিলো দিলশাদকে ফোন দিতে৷

“আপনি কি কাউকে ফোন করতে চাচ্ছেন।”

“হ্যাঁ, দিহানের মাকে।”

“এখন তো সবে সাড়ে পাঁচটা বাজে। এত সকালে ফোন দেখে দিলশাদ আপা নিশ্চয়ই ঘাবড়ে যাবেন। পরে ফোন করুন আমি ট্রিটমেন্ট শুরু করি আপনি একটু স্থির হয়ে বসুন।” মহিলা কথাটি বলতে বলতে বার কয়েক চৈতীকেও দেখলেন। তারপরই নিজের স্বামীকে কল দিয়ে দিহানের কথা বলে জেনে নিলেন কি করা প্রয়োজন।

ঘড়িতে সময় তখন এগারোটা বারো। দিহান ঘুমে অচেতন তার পাশেই একটা চেয়ার টেনে বসে আছে সুইটি।কেবিনে একটা দুই গদির সোফা আছে তাতেই হাত পা গুটিয়ে ঘুমিয়ে আছে চৈতী। সকালের মহিলা ডাক্তারটি দিহানের অবস্থার একটু উন্নতি হতেই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। তাঁর স্বামীর ডিউটি দিনে থাকায় ভদ্রলোক যথা সময়ে হাসপাতালে এসেই আগে দিহানের চেকাপ করলেন। কিছু টেস্টও করালেন তারপরই নিজের পরিচয় দিলেন তিনি এবং তাঁর স্তী চৈতীর বাবার কলেজ বন্ধু ছিলেন। চৈতীকে দেখে তো তিনি রীতিমতো অবাক হলেন চৈতী এত ছোট বলে সেই সাথে সুইটির মত অল্প বয়সী নারী বন্ধুর বউ বলে। তিনি বুঝতে পারলেন চাঁদ তবে দেরি করেই সংসারী হয়েছে। ভিজিটং আওয়ারে অন্য ডাক্তার এলেও আবার সেই ভদ্রলোক নিজে এলেন দিহানকে দেখতে। হোক না হোক রোগীটি তাদের বন্ধুর আপন ভাগ্নে। তখনও তিনি দিহানের দ্বিতীয় পরিচয়টি জানেন না। কিন্তু দ্বিতীয়বার দিহানকে দেখতে এসেই তিনি প্রশ্ন করলেন, “দিলশাদ আপা বা দিহানের বাবা কেউ এলেন না যে এখনে! তারা কি বাড়িতে নেই?”

ডাক্তারের কথায় চৈতীর খেয়াল হলো সে এখনও দিহানদের বাড়িতে জানায়নি। ঘড়ির সময় দেখে এবার ভয় হচ্ছে । দিলশাদ জানার পর তাকে নিশ্চিত ইচ্ছেমত কথা শোনাবে। সে চৈতীকে বলল, “তোর ফুপিকে একটু ফোন দিবি?”

“তুমিই দাওনা” বলেই সে ফোন এগিয়ে দিলো।

কালকের আবহাওয়া থেকে আজকের আবহাওয়া একদম ভিন্ন। সকাল থেকে কড়া রোদ সেই সাথে বাসন্তী হাওয়া। এই হাওয়ায় মন জুড়িয়ে যায় রোদের মধ্যেও। কিন্তু চৈতীর কিছুতেই মন জুড়ানো অবস্থা নেই। ফুপি হাসপাতালে এসেছে আরো দু ঘন্টা আগে। সেই থেকেই মা’কে কিংবা তাকে কথা শুনিয়েই যাচ্ছে সমানে। খুব বিরক্ত হয়েই সে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসেছে। হাসপাতালের তিন তলা কেবিনের লম্বা করিডোরে পায়চারী করছিলো। হঠাৎ একটা ছেলে বড় একটা ট্রলি ব্যাগ টেনে আসতে গিয়ে ধাক্কা খায় চৈতীর সাথে। ছেলেটি নিজের চিবুক ঘষতে ঘষতে কিছু বলবে তার আগেই চৈতী চেঁচিয়ে উঠল, “অন্ধ নাকি চোখে দেখেন না? বুইড়া ধামড়া কানা!” শেষের কথাটা বিড়বিড় করে বলল। ততক্ষণে ছেলেটি চলে গেছে। চৈতীর মন মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এমনিতেই রাতে ঘুমায়নি বলেই হয়তো মাথাটা চিনচিনে ব্যথা করছিলো। মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো সে।

“মাথাব্যথা করছে তোমার?”

কথাটা শুনে সামনে তাকাতেই দেখলো সকালের সেই ডাক্তার মহিলাটি। চিকন মিহি কন্ঠস্বর মহিলাটির। দেখতেও অনিন্দ্য সুন্দরি বলা যায়। বয়সটা ঠিক ঠাওর করা যায় হুট করে। মহিলার স্বামীও খুব চমৎকার মানুষ বলে মনে হয়েছে চৈতীর। সকালেই শুনেছে ইনি তার বাবার বান্ধবী।

“হ্যাঁ আন্টি একটু ব্যাথা করছে।”

“রাতে ঘুমাওনি বলল তোমার মা। তাই হয়তো ব্যথাটা। চা, কফি কিছু খাবে?”

“না আন্টি।”

” সকালের নাশতা তে করোনি এখনও। এসো তোমার আঙ্কেলের কেবিনে। আমি নাশতা নিয়ে এসেছি তোমাদের জন্য।” মিষ্টি হেসে চৈতীকে বলল

চৈতী অবাক হয়ে দেখছে মহিলাটিকে।কাল রাতে দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নাকি অন ডিউটি ছিলেন। এরমধ্যে আজ তাদের জন্য মহিলার বাড়ি ফিরতে লেট হলো। এখন আবার বাড়ি থেকে নাশতা নিয়ে এসেছেন।কি করে সম্ভব আম্মা! মনে মনেই চেঁচিয়ে উঠল চৈতী মহিলার স্পিরিট দেখে। তারমধ্যে আবার মহিলাকে দেখতে কেমন ফ্রেশ আর সতেজ লাগছে। বাবার বান্ধবী হিসেবেও মহিলার বয়স পঞ্চাশের কাছে তো হওয়াই স্বাভাবিক কিন্তু এর চেহারায় তো বলিরেখাও দেখা যাচ্ছে না। অথচ চৈতীর এই একুশ বছরের জীবনে চোখের নিচ আর কপাল দেখে মনে হয় পঁচিশ পেরিয়ে গেছে। চৈতীর ভাবনার মাঝেই তার মাও এসে তাকে ডাকলো নাশতার জন্য। দিলশাদ নাকি নাশতা আনিয়েছে দিশানকে দিয়ে। মহিলা মন খারাপ করলেন দিলশাদের আচরণে তবুও জোর করে চৈতীকে খাওয়ালেন নিজের আনা খাবার। বাকিরা দিশানের আনা খাবারই খেল। দুপুরের পর দিহানের রিপোর্ট পেয়ে ছেড়ে দিলো তাকে হাসপাতাল থেকে। এরই মাঝে মহিলা সুইটিকে নিজের ফোন নাম্বার দিলেন যেন চৈতীর বাবাকে এি নম্বরটি দেয় তাকে কল দেওয়ার জন্য। অনেক গুলো বছর হলো তাদের কারো সাথে কারো যোগাযোগ নেই। মহিলার স্বামীও খুব জোর করলেন একটিবার তাদের বাড়িতে আসার জন্য সুইটি বলল সে যাবে। চৈতীর বাবা আসলেই একদিন সপরিবারে যাবেন তাদের বাড়ি। সন্ধ্যার আগেই দিহানকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো দিলশাদ। চৈতীর খুব ইচ্ছে ছিলো নিজের বাড়ি চলে যাবার কিন্তু সুইটি তাকে নেয়নি। বরং জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে দিহানদের বাড়ি আর বারবার বলে দিয়েছে সে যেন দিহানের যত্ন নেয়।মনের বিরুদ্ধে তাকে ছোট থেকেই চলতে হয়েছে তাই আজ আর নতুন করে কষ্ট হলো না।

দিন তিনেক পরের ঘটনা। সুইটি এলো দিহানকে দেখতে। দিহান পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে কিন্তু শারীরিক দূর্বলতার জন্য সারাক্ষণ প্রায় ঘুমেই কাটে তার। রাতের বেলা চৈতী পড়াশোনায় ব্যস্ত থেকে দিনে আবার ক্লাস সেই সাথে সংসারের কাজও করে টুকটাক। বাড়িতে নতুন বউ আছে সেও কাজকর্ম করে। সুইটি এসেছে অনেকরকম ফলমূল আর কিছু নিজ হাতে রান্না করা খাবার নিয়ে। বিদেশ থেকে আসা দিহানের কাজিনরা সব চলে গেছে শুধু ছিলো তার চাচা আর চাচী। সুইটির আনা খাবারদাবার টেবিলে সাজাচ্ছিল চৈতী আর ঐশী। দিহানের মা,চাচী আর চেতীর মা তিনজনেই সোফায় বসে গল্প করছিলো। চৈতী মাংসের বক্সটা খুলতেই গন্ধে তার বমি বমি ভাব হলো। সে মুখে কয়েকবার ওয়াক ওয়াক শব্দ করতেই ঐশী তাকে ধরে বলল, “তুমি ঠিক আছে?”

সবাই খেয়াল করেছে ব্যপারটা।সুইটি বসা থেকে তৎক্ষনাৎ চৈতীর কাছে এসে জানতে চাইলো কি হয়েছে! চৈতী তখনও স্বাভাবিক হতে পারছে না বলে বেসিনে গিয়ে চোখে,মুখে পানি দিতে লাগলো। চিন্তায় অস্থির হয়ে সুইটি এটা, সেটা প্রশ্ন করছিলো তা দেখে চাচী বলল, “কি শুরু করলে চৈতীর মা? বয়স কি হয়নি তোমার বোঝার! মেয়ে বিয়ে দিয়েছে বাচ্চাকাচ্চা আসবে না?”

মন মেজাজ কয়েক দিন ধরেই ঠিক নেই চৈতীর। সে অভ্রকে নিয়ে গভীর কোন ভাবনা না ভাবলেও কেন জানি আজকাল দিহানকেও তার সহ্য হয় না। চাচীর কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরেই যেন মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। সে চেঁচিয়েই বলল, “না হবে না। বিয়ে দিলেই বাচ্চা হবে না। দিহানের বাচ্চা তো ভুলেও হবে না, আমিই হতে দেবো না।”

চৈতীর কথা শেষ হতেই সপাটে এক চড় মারলো সুইটি। চাচীর কথায় দুষ্টুমি ছিলো কিন্তু চৈতীর আচরণ উগ্র। সুইটি তার মেয়ের বেয়াদবি আচরণটা কিছুতেই সহ্য করতে পারলেন তাই চড়টা মারতেই হলো। কিন্তু চৈতীর কথায় অগ্নিমূর্তি হয়ে গেছে দিলশাদ। চৈতী নিজেও বোধহয় তখন হতভম্ব সে এমন কথা কেন বলল! বয়স তো নেহাৎই কম নয় তার। সংসার, ঘর ভোঝার ক্ষমতা হয়েছে তবুও কেন এসব আচরণ করছে সে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here