আনকোরা পর্ব-১৯

0
3101

#আনকোরা
#রূবাইবা_মেহউইশ
১৯.

থমথমে মুখে বসে আছে অনামিকা খন্দকার তার স্বামী তাফসীর খন্দকারের সামনে। আর কিছুক্ষণ পরেই তার ছেলে বাড়ি ফিরবে। এসেই নিশ্চয়ই জানতে চাইবে চৈতীর বাড়িতে প্রস্তাবে কি বলল তারা? ছেলেটা আর মাত্র এক মাস পরেই বিদেশে যাবে। ভেবেছিলো একেবারে আংটি পরিয়ে আর তারা রাজী হলে বিয়ে করে তবে যাবে। চৈতীকে সেদিন হাসপাতালের করিডোরে এক পলক দেখেছিল৷ এরপর অনামিকা যখন জোর করে নিজের কেবিনে নিয়ে নাশতা চৈতীকে করাচ্ছিল তখন দরজার বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছে ছেলেটা। প্রথমে নাকি সে চৈতীর উচ্চতা দেখে থমকে গিয়েছিলো। তার মত এত লম্বা একটা ছেলের সামনে চিবুক ছোঁয়া মাথা মেয়েটার কত লম্বা ভাবা যায়! পরক্ষণেই তার মনে হয়েছিলো মেয়েটি বোধহয় হিল পরেছে। কিন্তু না পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি স্লিপার পরে এসেছে। আজকাল এত লম্বা মেয়ে সচরাচর চোখে পড়ে না কিন্তু মেয়েটার মুখটা দেখেও ভালো লাগলো। পাতলা গড়নের তারওপর হেলথ দেখে মনে হয় বড্ড অযত্ন স্বভাবের। এতদিন তো মা-বাবা বিয়ে কর মেয়ে খুঁজি কিংবা তোর পছন্দ থাকলে বল, এমনি এমনি বিদেশে গিয়ে বছর পরে থাকবি তা চাই না৷ কিন্তু এতদিন তার মন সায় দেয়নি আবার মেয়েও পছন্দ হচ্ছিলো না৷ আজ এক দেখায়ই মেয়ে ভালো লেগে গেল তারওপর মা বাবার পরিচিতের মেয়ে সেই হিসেবে খোঁজ নেওয়ার ঝামেলাও নিশ্চয়ই হবে না! এই ভেবেই মাকে বলল এই মেয়ের ব্যবস্থা করো বিয়ে শাদী করেই যাই। কিন্তু অনামিকা আজ দিলশাদের বাড়ি থেকে চৈতীর বিয়ের কথা শুনেই মন খারাপ করে বসে আছে। তাফসীর কত বোঝাচ্ছে চৈতীর বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে! আরও মেয়েও আছে শহরে ছেলের ঠিক পছন্দমত কাউকে পেয়ে যাবে। কিন্তু অনামিকা নিজের মনকে বোঝাতে পারছে না৷ ছেলেটা তো হয়েছে তার মতোই। যা একবার চোখে লাগে তা আজীবনের জন্যই লাগে৷ এই যে ছেলেটা এত বড় হলো এখনও একটা প্রেম করেনি কারণ সে তার মনমতো কাউকে পায়নি। অথচ আজ কালকার ছেলেরা পছন্দ হোক বা না হোক প্রেম দু একটা ঠিকই করে। আর ছেলের আজ এত বছরের জীবনে এই প্রথম কারো প্রতি আকর্ষণবোধ করলো তাই একেবারে বিয়েটাই করতে চায়।অনামিকা আর বেশিক্ষণ ভাবার সুযোগ পেল না ছেলে বাড়ি চলে এসেছে।

আকাশে থালার মত বড় চাঁদ শুভ্র আলো ছড়াচ্ছে। খোলা প্রান্তরে চোখ রাখলে মনে হবে যেন সব ভেসে যাচ্ছে চাঁদের শুভ্রতায়।রাতের খাবারে আজ সুইটি দিহানকে জিজ্ঞেস করে ভুনা খিচুড়ি, কষা গরুর মাংস আর ইলিশ মাছ ভাজা করেছে। পায়েস করেছে বেশি করে কিশমিশ দিয়ে কিন্তু দিহান পায়েস ফ্রীজে রেখে খেতে পছন্দ করে৷ এ বাড়িতে এখনও ফ্রীজ আনার ব্যবস্থা হয়নি৷ চাঁদ বলেছে কয়েকদিন পর ছোট একটা ফ্রীজ কিনবে এখানেই৷ দিহানকে তাই ঠান্ডা পায়েস দেওয়া গেল না। তবে চৈতী ফাজলামো করে বলেছিলো আইসক্রিম কিনে পায়েসে ঢেলে দিতে। এই নিয়েও দুজনের মধ্যে একদফা কথার লড়াই হয়ে গেছে। রাতে চাঁদ বাড়ি আসেনি কোন কাজে ব্যস্ত থাকায়। কোয়ার্টারের পাশেই তার হেড অফিস। রাত তিনটার পর সে ক্লান্ত দেহে বাড়ি ফিরলে সুইটি দরজা খুলে দিলো। মাত্র একবারই দরজায় নক করেছে আর এরই মধ্যে সুইটি দরজা খোলায় অবাক হলো চাঁদ।

“তুমি ঘুমাওনি!” সোফায় বসে বুট খুলতে খুলতে প্রশ্ন করলো চাঁদ।

সুইটি চিন্তিত মুখে এসে পাশে বসলো। বসার ঘরের বাতি বন্ধ শুধু বেডরুম থেকে কিছুটা আলো আসছে বলে আবছা হয়ে গেছে এখানকার অন্ধকার। সুইটি মুখটা ফ্যাকাশে করেই চাঁদকে বলল, “বড় আপা ফোন করেছিলেন এগারোটার দিকে।”

“হ্যাঁ, আমাকেও করেছিলেন দেখলাম। কিন্তু অন ডিউটি থাকায় ফোন চেক করা হয়নি৷ আমি একটু আগেই মিসড কল দেখেছি।”

“জ্বী, আপনাকে ফোনে না পেয়েই আমাকে দিয়েছিলেন।”

” কি বললেন?”

“দিহান কাল ফিরবে চৈতীকেও যেন সাথে নেয় বলেছেন।”

“এ নিয়ে তুমি ভাবছো কেন এত? এখন ওরা সাথে সাথেই থাকুক এতেই তারা স্বাভাবিক হতে পারবে৷ পরে আমরা এনে রাখবো তাদের আমাদের সাথে।”

“ভাবনাটা অন্য জায়গায়।” বলেই সুইটি চুপ করে গেল সে তার স্বভাবসুলভ নির্লিপ্ত আচরণই করছে এখনো। কিন্তু চাঁদের মনে হলো ব্যাপার অন্য কিছু একটা আছে। তাই সে বুট খোলা শেষে সুইটিকে বলল রুমে গিয়ে কথা বলি! চাঁদ উঠে দাঁড়াতেই সুইটি হঠাৎ বলে উঠলো, “অনামিকা খন্দকার এসেছিলেন আপার কাছে আজ।”

চাঁদ ফিরে তাকালো সুইটির দিকে৷ অনামিকা নামটা শুনতেই সে ঝটকা খেল৷ সুইটি অনামিকা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না তবুও যেদিন দিহানকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলো তার পরদিনই চাঁদের সাথে কথা বলার সময় জানিয়েছে চাঁদের এক বান্ধবী তাকে ফোন নম্বর দিয়েছে চাঁদকে দেওয়ার জন্য। সেদিন চাঁদ স্পষ্ট বুঝতে পারছিলো সুইটি কথা বলছিলো খুব রুঢ়ভাবে। যা সুইটির স্বভাবে ছিলো না কখনো৷ আজও সুইটি এমন মুখে কথা বলল যেন সে আজও অনামিকার নাম নিতে অসহ্যবোধ করছে। চাঁদ কয়েক সেকেন্ড তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “হয়তো কোন দরকার ছিল তাই এসেছে আপার কাছে।”

“হ্যাঁ দরকারেই এসেছিলো ওই ডাক্তারনি৷ তার ছেলের জন্য চৈতীকে পছন্দ করেছে তাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।”

“কিহ! ওইদিন হাসপাতালে শোনেনি দিহান চৈতীর হাজবেন্ড!”

“না সেদিন কারো পরিচয়ের সময় ছিলো না তেমন৷ দিহান অসুস্থ ছিলো তাই অন্যকোন কথা হয়নি।”

“আচ্ছা।” চাঁদ বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেল। পেছন পেছন সুইটিও গেল তার।

মামা-মামীর কথা শেষ হতেই দিহান দরজা থেকে সরে গেল। সে মাত্রই ঘুম থেকে জেগেছিলো। গলা শুকিয়ে আছে আর চৈতীও ঘরে পানি এনে রাখেনি বলে সে বের হচ্ছিলো পানি খেতে। কিন্তু দরজাটা হালকা খুলতেই কানে এলো মামির কথা। তাই ফিরে যাচ্ছিলো বিছানার দিকে আর তখনি শুনতে পেল অনামিকা খন্দকার মায়ের কাছে এসেছে৷ অতি কৌতূহলী হয়েই সে দাঁড়িয়ে রইলো। চৈতীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে! কদিন আগেও তো সে চাইতো চৈতী অভ্রের কাছে ফিরে যাক। দুজনকে মিলিয়ে দিতে কত কি করতে চাইলো। কিন্তু আজ চৈতীর বিয়ের প্রস্তাব এসেছে শুনে তার ভালো লাগলো না। অতি সন্তর্পণে গিয়ে সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো চৈতীর ডান পাশে৷রাতটা কাটলেই সে ঢাকায় ফিরবে। এখানে আর ভালো লাগছে না এক মুহূর্তও। বিতৃষ্ণায় অন্তর ছেয়ে যাচ্ছে কোন কারণ ছাড়াই অথবা সে উপলব্ধি করতে পারছে না কারণটা৷ পাশে থাকা চৈতীকেও এখন অসহ্য লাগছে খুব৷ প্রিয়ন্তি! হ্যাঁ প্রিয়ন্তির তৃষ্ণায় তার বুক খা খা করছে খুব।মন ছুটে চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামের সেই সবুজে ঘেরা জঙ্গুলে বাড়ির কবরস্থানটায়। আজ কতগুলো দিন হলো প্রিয়ন্তির কাছে যাওয়া হয় না তার আর এ যন্ত্রণাই তাকে জাপটে ধরলো হঠাৎ করে।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে চৈতী ঘর থেকে বের হলো। এ ফ্ল্যাটটা তাদের বাড়ির অর্ধেকও হবে না৷ সে তাদের বাড়ি কিংবা ফুপির বাড়িতে সকালে উঠেই ঘর থেকে বেরিয়ে ছোট্ট উঠানের মত জায়গাটুকুতে হেঁটে বেড়াতো। দিহানদের বাড়ির বা দিকে এক টুকরো লন পাশে অনেকরকম ফুল গাছ সেখানে ঘুরে ঘুরে সে সকালের বাতাস গায়ে মাখতো কিন্তু এখানে তেমন সুযোগ নেই। বিল্ডিংটির সামনে বিশাল খোলা জায়গা কিন্তু পেছন দিকে বড় বড় কিছু গাছ আছে। নতুন পরিবেশ তবে ঘুরে বেরিয়ে দেখার ব্যবস্থা হবে কিনা তার জানা নেই৷ বাবার কর্মস্থল গুলোর আশেপাশে আগে কখনো তার যাওয়া হয়নি এই প্রথম সে চোখের সামনে অনেকগুলো নতুন মানুষ দেখছে প্রতিবেশী হিসেবে।তাদের পাশের ফ্ল্যাটের একজন কাল এসেছিলো দেখা করতে। মহিলার স্বামীও তার বাবার মত একজন সেই সুবাদে তারা এখানে। তাদের পরিবারে চৈতীর বয়সী একটা ছেলে আছে কিন্তু সে যশোরে থাকে৷ একটা ছোট মেয়ে আছে মেয়েটি এবার ক্লাস এইটে পড়ছে। দেখতে ভারী মিষ্টি মেয়েটি৷ বিকেলে এসে অনেকক্ষণ দিহানের সাথে গল্প করেছে৷ আর মেয়েটির বেশিরভাগ গল্পই ছিলো তার স্কুলের সিনিয়র ভাইদের নিয়ে। টিনএজ বাচ্চা তাই হয়তো যার দিকে তাকায় তাকেই মনে ধরে৷ দিহান তো মজা করে বলেই ফেলল, “আমাকে কেমন লাগে তোমার?”

মেয়েটিও বড্ড উৎসুক হয়ে তাকিয়ে বলল, “ভাইয়া আপনি খুব হ্যান্ডসাম কিন্তু,,,”

“কিন্তু কি!”

“আপনার বয়স আমার চেয়ে তো অনেক বেশি তাই ক্রাশের লিস্টে নিতে পারলাম না স্যরি?”

মেয়েটির কথা শুনে তো দিহানের কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা আর চৈতী তো শুনেই হি হি করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েছে বিছানায়।

“কিরে দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

সুইটির প্রশ্নে চৈতী মায়ের দিকে ফিরে তাকালো। ওড়না পেঁচিয়ে হিজাবের মত করে বাঁধা মায়ের তা দেখে বুঝলো মা নিশ্চয়ই নামাজের পর আর ঘুমায়নি। চৈতী মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি এখানে ক’দিন থাকবো মা?”

“যতদিন ইচ্ছা। তবে এবার নয়।”

“মানে!”

“আজকে তুই দিহানের সাথে ঢাকায় ফিরবি রাতের বাসে। তোর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবি ভালো করে৷ তারপর পরীক্ষা শেষ করে একেবারে অনেকদিনের জন্য আসবি আর অবশ্যই আসার আগে দিহানের প্রয়োজনীয় সবকিছু তার হাতের নাগালে রেখে আসবি। যেন তুই আসতেই সে তোর লেজ হয়ে পরেরদিনই না চলে আসে।”

চৈতী মায়ের কথা শুনে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই সুইটি আবার বলল, “চোখ রাঙাতে হবে না। সত্যিই বলছি তোর লেজ হয়েই তোর জামাই চলে এসেছে।মেয়ে আমার দু দিন থাকতে পারলো না বর এসে হাজির। এখন বেচারা তো আর তোর জন্য চাকরি ফেলে বসে থাকবে না আর আমিও আমার মেয়েটাকে কাছে পাবো না৷ তাই পরেরবার সব গুছিয়ে দিয়ে আসবি এক সপ্তাহের জন্য এরপর সে আসুক সেও কদিন থেকে তারপর তোকে নিয়ে যাক।” সুইটি অনর্গল কথাগুলো বলেই সে মনে পড়ার মত করে বলল, “আরেহ চা শুকিয়ে যাচ্ছে বোধহয়।”
সুইটি দ্রুতপায়ে চলে গেল কিচেনে আর দরজার আড়ালে গিয়ে তাকালো চৈতীর দিকে৷ কিছুটা ভাবুক হোক মেয়েটা। সে মজা করে বললেও কথাগুলো ছিলো চৈতীর মনকে একটু ভারী করতে। হতে পারে এই কথার ভারেই সে দিহানের সাথে যাবে আবার হতে পারে সংসারটাকেও বুঝতে চেষ্টা করবে৷ সুইটি পড়াশোনা অনেক করেনি তবে সে এইটুকু বোঝে একটা মেয়ে যতোই শিক্ষিত হোক,স্বাবলম্বী হোক দিন শেষে তার মাথা রাখার জন্য হলেও একটা ভরসাময় কাঁধ দরকার। পুরুষের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। আর দিহান মানুষটা ভেতর থেকে যতোই হোক ভাঙাচোরা চৈতীর পাশে সে নিটোল থাকবে সর্বদা সেই বিশ্বাস তার আছে। কিন্তু সুইটির আবার খারাপ লাগছে চাঁদের জন্য। অনেকদিন পর আবার দুটো রাত তারা একসাথে ছিল। দুটো রাতই সে দেখেছে তার স্বামীর ছটফটানো। চৈতী সাথে তো তাদের এসেছে কিন্তু বাবার সাথে সে কথা বলছে না৷ রাগ, অভিমান আর অভিযোগের কারণেই সে তার বাবার সাথে দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে ।এই অভিমানের পাহাড় ততদিন সরবে না যতদিন না দিহানকে মন থেকে মানতে পারবে। ততদিন সে বুঝবে না যতদিন তার মনে ওই সংসারের প্রতি মায়া জন্মাবে তবে তার দৃঢ় বিশ্বাস চৈতী খুব শিগ্রই তার স্বামী,সংসার সব বুঝবে। ভালোবেসে না হোক মায়ায় পড়ে হলেও সে সুন্দর এক সংসারী নারী হবে তারপরই সে বুঝবে তার বাবা তার খারাপ করেনি। বাবা দূর থেকেও তাকে কতোটা ভালোবাসতো এই অনুভবটাও তার হবে তবে এতে হয়তো সময়টা বেশি লাগবে।

সারাদিন অতি আলস্যে কাটিয়ে সন্ধ্যায় দিহান রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। চাঁদ নিজে লোক দিয়ে তাদের বাসস্ট্যান্ডে পাঠাতে চেয়েছিলো কিন্তু দিহান বলল তারা নিজেরাই যাবে। নতুন জায়গা তারওপর চৈতী সাথে বলেই চাঁদ চিন্তিত কিন্তু দিহান আছে সাথে ভেবেও স্বস্তি৷ বাড়ি থেকে তারা অটোতে করে রওনা দিলো বাস স্ট্যান্ডের পথে। চৈতী বসে আছে দিহানের পাশে নিশ্চুপ। তার সাথে একটা হ্যান্ড ব্যাগ ছাড়া কিছুই নেই। নিজের যা জামাকাপড় এনেছে সব রেখেই যাচ্ছে কিন্তু দিহানের আনা ব্যাগটা সে চৈতীর হাতে দিয়ে বলল, “ভালো করে ধরে রাখ আবার অটোতেই ফেলে যাবি না।”

“তোমার ব্যাগ তুমি ধরো আমাকে দিচ্ছো কেন?”

“এ্যাই বেয়াদব, আমার ব্যাগ বলে কি তুই ধরতে পারবি না? আর এ্যাই তুই আজকাল আমাকে একবার আপনি, একবার তুমি বলছিস কেন?”

“কারণ তুমি একবার পরিচিত আরেকবার অপরিচিতের মত আচরণ করছো।”

“কি করছি আমি!”
বিষ্ময়ে মুখ হা হয়ে এলো দিহানের।চৈতী আগের মতোই বলল, “যা শুনেছো তাই বলেছি। একটু সরে বসো গরম লাগছে।”

“তুই যে একটা অসভ্য হয়ে গেছিস তা কি তুই জানিস চৈতী?”

অটোওয়ালা অনেকক্ষণ ধরে তাদের ঝগড়া শুনছে আর মিটিমিটি হাসছে। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যখন তাদের ঝগড়া থামলো তখন লোকটা খেক খেক করে হাসতে হাসতে বলল, বাকি ঝগড়া বাসে উইঠা করেন আমারে ট্যাকা দিয়া বিদায় করেন আগে। লোকটা বলল রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায়। দিহান কিছুটা বুঝলেও চৈতী কিছুই বুঝলো না সে আবারও দিহানকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো। দিহান থামিয়ে দিয়ে বলল, “অনেক হইছে এবার নাম৷ ব্যাটাও বিরক্ত হচ্ছে বাকি তর্ক তুই বেডরুমে গিয়ে করিস।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here