#আনকোরা
#রূবাইবা_মেহউইশ
২১.
পূবের আকাশে তখন সূর্যি মামার মুখ দেখানোর তোড়জোড়। রাতের শীতল বাতাস এখন আর তিরতিরিয়ে বইছে না। যেন অভিমানে মুখ লুকিয়েছে গাছের পাতায়। ঘরের উত্তরের জানালাটা খোলা পর্দাও সরানো। রোদ ছাড়াও বাইরে ধোয়াশা আলোয় ঘরের অন্ধকার কেটে গেছে অনেক আগে। বারান্দার দরজাটাও হাট করে খোলা ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দেওয়া তবে ভেতর থেকে খোলা আছে। চৈতীর ঘুম বেশি হয়নি তবুও এখন ভেঙে গেল ঘুমটা। চোখের পাতা ভীষণ ভারী লাগছে তার যেন পাথর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে চোখের ওপর। বা গালটাতে মাড়ির দিকে চিনচিনে ব্যথা সেই সাথে শরীরের প্রায় সব অঙ্গেই ব্যথা বইছে স্রোতের মত। রাতের আঁধার কাটতেই চৈতী ঘুমোঘোরে কয়েকটা কথা শুনতে পেয়েছিলো আর প্রত্যেকটা কথাই ছিলো মৃত এক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তার ছবি বুকে জড়িয়ে।চৈতী শুনেছে সেই করুণ কন্ঠস্বর আর আহাজারি। কিন্তু তার কি করার ছিলো! বিয়ে কোন পুতুল খেলা নয় তাকে এই কথাটা প্রায় পরিচিত প্রত্যেকটা মানুষ শুনিয়েছে,বুঝিয়েছে এমনকি তাকে মানতে বাধ্যও করতে চেয়েছে। সে নিজেও চেয়েছে জীবনটাকে থিতিয়ে নিতে একটা জায়গায়। অভ্র তার জন্য মরিচীকা আর সেও অভ্রের জীবনে বিষ সমতূল্য। কিন্তু দিহানের জীবনে এখনও যার অস্তিত্ব সেই মানুষটার অস্তিত্ব এই জগতেই নেই এখন। থাকলে চৈতী কখনোই তাকে নিয়ে ভাবতো না। প্রতি মুহূর্ত, প্রতিনিয়ত সে ভেবেছে কয়েকদিন দিহানকে নিয়ে কিন্তু তার একুশ বছরের বুদ্ধিতে সে এই সম্পর্ককে গুছিয়ে নেওয়ার বাইরে কোন উপায় পায়নি। আজ রাতে সে যা করেছে তার বাইরেও আর দিহানকে নিজের মস্তিষ্কে প্রবেশ করানোর উপায় দেখেনি৷ মানুষ মন থেকে নাকি দেহের প্রতি আকৃষ্ট হয় ভালোবাসার ক্ষেত্রে কিন্তু যারা ভালোবাসাবিহীন এক হয় জীবনে তারা কি করে হয়! অনেক ভেবে চৈতীর মনে পড়লো পারিবারিকভাবে বিয়ে হওয়া মানুষগুলোর কথা। তারা প্রথমে মন নয় বরং দেহের টানেই এক হয়। যেখানে মনের টান সেখানে দেহের আকর্ষণও চলেই আসে তাহলে যেখানে দেহের টান থাকবে সেখানে কি মনের টান পড়বে না! নিজের অল্প জ্ঞানে যা ঠিক মনে হলো সেও তাই করলো। জোর করেই হোক আর নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন করেই হোক দিহানকে কাছে টেনেছে। কে বলতে পারে হয়তো এই টানেই তাদের দুই মনের আনকোরা অনুভূতি এক হবে কিন্তু সে ভুল। দিহানের অনুভূতি তার মত আনাড়ি নয়। সে প্রচণ্ড আবেগি আজও তার প্রথম প্রেমের প্রতি এখনও সে তার মৃত প্রিয়তমার প্রতি অনুগত। যে মানুষটা এই ধরাধামেই নেই যার অস্তিত্ব বহু আগেই বিলীন হয়েছে মাটির সাথে দিহান সেই মানুষটার প্রতি আজও বিশ্বস্ত। তাই তো সে অন্তরঙ্গের চরম মুহূর্তেও চৈতীর কানের কাছে মুখ রেখেই বলেছিলো, “বড্ড ভুল করছিস চৈতী। পস্তাবি তুই অতি শিগ্রই শুধু মাত্র আজকে রাতের ভুলের জন্য; তোর এই ভুল তোকেই একা বহন করতে হবে আমি আর ফিরবো না দেখিস। তোরা সবাই আমাকে ধোঁকা দিয়েছিস। কেউ মমতার দোহাই দিয়ে কেউ পরকালের বন্দোবস্ত করে আর তুই করলি আমার পুরুষত্বের দূর্বলতা নিয়ে। আমি কাউকে ক্ষমা করবো না।” দিহানের প্রতিটি কথাই চৈতী স্পষ্ট শুনেছে। সে কোন এনেস্থিসিয়া আর ঔষধের দ্বারাই নেশায় ছিলো না। সজ্ঞানে সে দিহানকে নিজের মাঝে টেনেছে যা দিহান বুঝতেই পারেনি। চোখের কোণে চিকন এক সরোবর বইছে চৈতীর।ব্যথায় জর্জরিত দেহটাকে টেনে তুলে এলোমেলো ভাবেই।সে জানে এ ঘরের মানুষটা এতক্ষণে নিজের নতুন পথে পা বাড়িয়েছে। ইচ্ছে করেই সে আটকায়নি৷ যদি আদিম খেলা দেহ থেকে মনে জায়গা করতে পারে তবে সে ফিরবে আসবে৷ যদি সামাজিক হালাল বন্ধনের জোরটা শক্ত হয় তবে সে ফিরে আসবে আর যদি এসব শুধু লোকের মনগড়া নিয়ম কানুন হয় তবে আজকে দিনেই সব শেষ হয়ে গেল মনে রাখতে হবে সারাজীবন। এলোমেলো পা ফেলে বাথরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে বসে পড়লো চৈতী। একটুও শক্তি নেই মন আর দেহের ভেতর। আর্তনাদের পাহাড় বুকের ভেতর ভারী হয়ে তাকে তলিয়ে নিতে চাইছে এই বিশ্বচরাচর থেকে। অনেকটা সময় ঠান্ডা পানির নিচে বসে থেকে গায়ে কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। আর বসে থাকা সম্ভব নয় তাই বসা থেকে উঠে ভেজা কাপড়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। ভেজা হাতেই আলমারি থেকে কাপড়চোপড় বের করে বাথরুমে ঢুকলো আবারও। কাপড় বদলে নিজের এবং দিহানের গোসলের পর ফেলে যাওয়া ভেজা কাপড়গুলো ভালো করে ধুয়ে সে নিয়ে গেল বারান্দায়। রোদ উঠেছে বাইরে এখানেই শুকিয়ে যাবে কাপড়গুলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট চুপচাপ নিজেকে দেখলো, দেখলো গলার নিচে বুকের বা পাশটায় একটুখানি ক্ষত। গোসলের সময় খুব জ্বলেছে এই ক্ষতটা সেই সাথে আরো কয়েকটা জায়গায়। কষ্ট হয়েও যেন হচ্ছে না তার। প্রতিদিনকার চেয়ে আজ অনেক আগেই জেগেছে তবুও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে সে রান্নাঘরে ঢুকলো৷ ময়না খালা এখনো জাগেনি আর না ফুপু ঘর থেকে বেরিয়েছে। রান্নাঘরে ঢুকে কিছু রান্না করবে ভেবেও আর করতে পারলো না। চুপচাপ বের হয়ে আবার ঢুকলো দিশার ঘরে। সেই ছোট্ট ঘরটাতে তার বইখাতা কিছু আছে সেগুলোও আজ গুছিয়ে এনে দিহানের ঘরে রাখলো যেটা বর্তমান তার নিজেরও ঘর। খাটের চাদর বদলে নতুন চাদর বিছিয়ে আবার বই নিয়ে সেখানে বসলো। বইয়ে দৃষ্টি থাকলেও মনযোগ বিচ্ছিন্ন বইয়ের পাতা থেকে।
খুব ভোরে কোন রিকশা না পেয়ে পায়ে হেঁটে দিহান বাসস্ট্যান্ডে গেল। পনেরো মিনিটের রাস্তা সে হেঁটে যাওয়ায় আধঘন্টারও বেশি সময় লাগলো। বাসের টিকিট কেটে সে একটা টং দোকানে ঢুকে এক কাপ চা আর একটা বাসি পাউরুটি নিলো। রুটি চায়ে ভিজিয়ে মুখে দিতেই বিষাদ লাগলো খুব সেই সাথে নিচের ঠোঁটটা জ্বলতে লাগলো। ঝাল কিছু তো খাচ্ছে না তবুও এত যন্ত্রণা! ঠোঁটটাকে একদম চিবিয়ে খেয়েছে যেন রাক্ষসী একটা! বিড়বিড় করে কথাটা বলেই দিহান কাপের চা রাস্তায় ছুঁড়ে মারলো। রুটিটা ফেলে দিলো দোকানের পাশে আবর্জনার দিকে। নিশ্চয়ই পথের কোন ভুক্ত কুকুর এটা পেয়ে খুশিই হবে। চোখ মুখ কুঁচকে উঠে দাঁড়ালো দিহান। পকেট থেকে টাকা বের করে দোকানদারকে দিতেই দোকানদার বলল, “ভাইজান চা কি খারাপ হইছে?”
“না চা ঠিক আছে আমিই খারাপ হয়ে গেছি। উচ্ছিষ্ট হয়ে গেছি আমি।” কথাটা বলেই দিহান দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। যে বাসের টিকেট কেটেছে সেটা ছাড়বে আটটায়। কাধের ব্যাগপ্যাকটা টিকেট কাউন্টারের সামনে একটা বেঞ্চিতে রেখে চারদিকে চোখ বুলালো। দুয়েকজন মানুষ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। হঠাৎ কোথা থেকে এক লোক এসে পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলে, “কোথায় যাবেন আপনি?”
দিহান তাকালো লোকটির দিকে। বয়স তার মতোই হবে দেখতে হ্যাংলা- পাতলা। গালভর্তি দাড়ি-গোঁফ, পরনে শার্ট প্যান্ট এলোমেলো লাগছে। চোখ দুটো ভীষণ লাল আর চোখের পাতা যেন পুড়ে আছে। চোয়াল ভাঙা চামড়া তার একদম হাড়ের সাথে লেগে গেছে। মিনিট দুয়েকের মাঝেই দিহানের মস্তিষ্ক জানান দিলো লোকটি নেশাগ্রস্ত। সে আশেপাশে ভালো করে নজর দিয়ে দেখে নিলো তেমন কেউ নেই পাশে। এই লোক নির্ঘাত ছিনতাই করবে ভেবেই সে ব্যাগের ওপর হাত রাখলো। জবাব দিলো যাবো না এসেছি গুলশান থানায়।
লোকটা এবার চোরা চোখে চারপাশে দেখে আবার তাকে বলল, “ভাই থানায় কেন?”
দিহান চট করে জবাব দিলো, “এসপিরা থানায় কেন যায়?”
লোকটা এবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, “আমার এই দুই চোখ বাজপাখির চেয়ে তীক্ষ্ণ। কোনটা পুলিশের লোক আর কোনটা সাধারণ লোক তা আমার চেয়ে ভালো এই এলাকায় কেউ চিনে না।” কথাটা শেষ করেই লোকটা একটা ধারালো ছোট চাকু দিহানের গলায় লাগিয়ে দিলো। দিহান ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলো লোকটার সাথে কিছু তো আছে। কিন্তু এত দ্রুত তা বের করবে সেটা বুঝতে পারেনি। কিন্তু চাকুটার তীক্ষ্ণ মাথাটা গলায় একদম লাগানো যার ফলে দিহান খোঁচা টের পেল। যে কোন মুহুর্তে এই খোঁচাটা গভীর হয়ে গলার চামড়া ভেদ করে ঢুকে যেতে পারে। লোকটা দিহানের পেছনে গা ঘেঁষে দাঁড়ানো। কেউ হঠাৎ দেখলে ভাববে তারা আগপিছু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা উত্তেজিত তবে ফিসফিস আওয়াজে বলল, মোবাইল আর মানিব্যাগ বের কর। একদম চালাকি করবি না তাইলে গলার নালী ভাগ হইতে সময় লাগবো না।”
গলায় আঁচড় লেগেই গেছে টের পাচ্ছে দিহান। কিন্তু তার তৎক্ষনাৎ কোন উপায় মাথায় আসছে না তবে বুঝতে পারছে এখন সব দিলেও আঘাতটা লাগবে আবার না দিলেও লাগবে। বাসস্ট্যান্ডে দু চারজন যাও মানুষ কারো দৃষ্টি এদিকে নেই৷ অগ্যতা দিহান পকেটের মোবাইল বের করতে হাত ঢুকালো। মোবাইল বের করে ছিনতাইকারীর হাতে দিতে গিয়েই সে অন্য হাতে গলায় রাখা চাকুসহ ছিনতাই কারীর হাতটা মুচড়ে ধরলো। সে বুঝতে পারেনি এতে ভুল হলে হতেও পারে৷ আর ভুল হওয়া মানেই গলায় ধারালো এক টান পড়বে। কিন্তু না ভাগ্য সহায় তখনি ছিনতাইকারী তাকে দ্বিতীয় হাতে ঘুষি মেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো৷ কিন্তু তার আগেই কাউন্টারের লোকটা খেয়াল করে বেরিয়ে এলো। দিহানের হাত থেকে ছুটে সোজা কাউন্টারের লোকটার হাতে আটকা পড়লো। হাতের চাকু ছিটকে পড়েছে রাস্তায়। রাস্তায় থাকা দু চারজনের দৃষ্টিগোচর হতেই তারাও দৌড়ে এলো সামনে।সবাই মিলে চেপে ধরলো ছিনতাইকারীকে। ঘুষি লাথিও মারছে কিন্তু গাঁজাখোর লোক মার হয়তো তার শরীরকে কাবু করতে পারেনি। অনেকগুলো কিল, ঘুষি, লাথি খাওয়ার পরও ছিনতাইকারী পালিয়ে গেল সবার মধ্য থেকে। এবার সবার নজর পড়লে দিহানের দিকে৷ তার গলায় চাকুর আঁচর ভালোই লেগেছে। সরু রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়লো গলা বেয়ে। সবাই এবার তাকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলো৷ দিহানের মনে হলো লাগবে না ডাক্তার সে যেতে চাইলো না৷ কিন্তু পথেরই কিছু মানুষের জোরাজুরিতে সে পাশেই এক ফার্মেসি খোলা দেখে এগিয়ে গেল৷ কম্পাউন্ডার লোক গলা দেখেই বলল বেশি কাটেনি।রক্ত বন্ধ হওয়ার মেডিসিন লাগিয়ে তার ওপর ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। দিহান ফোন চেক করলো আটটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি৷ সে তড়িঘড়ি গিয়ে বাসে বসলো। তখনো বাসের যাত্রী পূর্ণ হয়নি৷ সে সিটে মাথা এলিয়ে দিতেই মনে পড়লো তার সার্টিফিকেটগুলো সে ব্যাগে ভরেনি৷ বড্ড ভুল হয়ে গেল এই কাজটা৷ কিন্তু এখন আর ফিরে যাওয়ার পথও নেই তার। সে কিছুতেই আর মা-বাবা, বিশেষ করে চৈতীর মুখোমুখি হতে চায় না। যে পথে পা বাড়াচ্ছে সেখান থেকে পিছু ফিরলেই সে আটকে যাবে এখানে৷
দিলশাদ সকালের নাশতা তৈরি ময়নাকে বলল, “আজ কি চৈতী,দিহান কেউ উঠেনি এখনও?”
“কইতে পারি না আফা। আজকা একবারও চৈতী খালারে দেখি নাই আর দিহান মামা তো উঠেই দেরি কইরা।”
“দেখতো সাড়ে আটটা বেজে গেল কিনা! সাড়ে আটটা বেজে গেলে দিহানকে ডেকে আয়। চৈতীর তো শরীর ভালো না কিন্তু দিহানের অফিস আছে।”
“আইচ্ছা।”
ময়না গেল দিহানকে ডাকতে৷ দরজায় কাছে যেতে লক্ষ্য করলে দরজা খোলা তবে পর্দা দেওয়া। সে প্রথমে দিহানকে ডাকলো জবাব পেল না এরপর চৈতীর নাম ধরে বার দুয়েক ডাকতেই চৈতী বলল, “ভেতরে আসেন ময়না খালা।”
ময়না কিছুটা সংকোচবোধ করলেও ভেতরে গেল। গিয়ে দেখলো চৈতী শুয়ে আছে বিছানায়৷ মাথার নিচে তার মোটা একটা বই পাশেই আরও কিছু বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা দিহান ঘরে নেই।
“আফায় মামারে ডাকতে কইলো অফিশে যাইবো না?”
চৈতী খুব আস্তে করে বলল, “সে তো ঘরে নাই।”
“কই গেছে?”
“জানি না।”
ময়না খেয়াল করলো চৈতীর গালের ফোলা কম কিন্তু তার চোখ ফুলে আছে অনেক আর তার গলা থেকে অনেকটা নিচে কয়েকটা ক্ষত চিহ্ন সাথে লম্বাটে আঁচরও৷ শরীরে পড়না না থাকায় এগুলো একটু বেশিই চোখে লাগলো তার। সে চৈতীকে নাশতার কথা বলে বেরিয়ে গেল। দিলশাদকে জানালো দিহান ঘরে নেই, চৈতীকেও বলেনি কোথায় যাচ্ছে। দিলশাদ ফোন তুলে দিহানের নাম্বারে ডায়াল করলো। প্রথমবারেই কল রিসিভ হলো।
“কোথায় তুই? নাশতা করবি না বাবা তোর তো অফিসের দেরি হচ্ছে তোর আব্বু কিন্তু নাশতার জন্য বসে আছে।”
দিলশাদের কথা শুনেই দিহান চুপ করে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর বলল, “আমি চলে যাচ্ছি।”
“কোথায় যাচ্ছিস?” দিলশাদ বুঝতে পারেনি দিহানের কথার ধরন। সে প্রশ্ন করতেই বলল, “যেখানে তোমরা কেউ থাকবে না। যেখানে আমার একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য কোন জোরজবরদস্তি থাকবে না আমি সেখানেই চলে যাচ্ছি।ধোঁকা শুধু তোমরাই দিতে জানো না আমিও জানি৷ তোমার ভাতিজীর দ্বায়িত্ব আমি নেবো না মা। আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ প্রিয়ন্তিই মা! আর কাউকে আমি ঠাঁই দিতে পারবো না।”
“তোর কথা শেষ!” একদম শীতল কন্ঠে প্রশ্নটা করলো দিলশাদ।
“কি হলো বল তোর কথা শেষ হয়েছে?”
“হ্যাঁ এটাই আমার শেষ কথা। আমি ফিরবো না আর।”
“তবে আমিও বলছি শেষ বারের মত কয়েকটা কথা। তুই নিজ মুখে আজ অবজ্ঞা করলি আমার ভাতিজীকে তাই না আমিও তোর মা হয়ে অভিশাপ দিচ্ছি ঠিক একদিন কাঁদতে কাঁদতে এসে পায়ে পড়বি আমার ভাতিজীর৷ শুধু মাত্র তার জীবনে ঠাঁই নিতে ফিরতে চাইবি এ বাড়িতে, চৈতীর ঘরে, চৈতীর জীবনে৷ সেদিন চৈতী মুখ ফিরিয়ে নেবে সেই সাথে চৈতীর ফুপিও৷ মনে রাখিস কথাটা দিহান। মায়ের অভিশাপ তো ঠিক লেগে যাবে৷ তুই কাঁদবি আজকে যেই মৃত মানুষটার জন্য আমাদের ছেড়ে গেলি একসময় সেই মানুষটাকে ভুলেই তুই আমাদের কাছে আসতে চাইবি৷”
ফোন কেটে দিলো দিলশাদ। হাতের ফোনটা ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে। সে কখনোই চিৎকার করে কাঁদে না আজও তার কান্না নিঃশব্দ। কিন্তু সামনে থাকা ময়নার মা দিলশাদকে ধরে রাখলো। ময়নার মা বহু বছর ধরে থাকছে এ বাড়িতে৷ চোখের সামনে বড় হয়েছে ছেলে মেয়েগুলো। দিলশাদকেও সে খুব গভীর ভাবে জানে৷ এই মানুষটা প্রথমবার ভেঙে পড়েছিলো মেয়ের কৃতকর্মের কথা জেনে৷ এরপর অনেকটা সময় নিয়ে সে নিজেকে সামলেছে আজ আবার ভেঙে পড়লো দিহানের জন্য। কি থেকে কি হচ্ছে এসব! দিলশাদের চেঁচিয়ে বলা কথাগুলোর সবটাই শুনেছে চৈতী। সে ঘর থেকে বেরিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছে ফুপুর কান্না কিন্তু সামনে এগিয়ে আসার শক্তি পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ফুপির এই আজকের কান্না, আর্তনাদ এই সবটার পেছনে সে’ই দায়ী।
চলবে