#অপূর্ণতায়_পূর্ণতা
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৭
প্রভাতের মিষ্টি কিরণে সূচনা হলো নতুন দিনের। আর নতুন দিন মানেই নতুন কিছু। জগৎ তার নিয়মেই চলা শুরু করে দিয়েছে। জানালার পর্দা ভেদে মৃদু কিরণ এসে মুখ থুবড়ে পড়তেই ঘুম থেকে উঠে বসলাম। এখনো ঘুমু ঘুমু ভাবটা কাটে নি। বিছানায় বসেই ঝিমাচ্ছি।
অবনী আমার কাছে এসে বললো, তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? জানো আজ কারা এসেছে?
আমি ঝিমাতে ঝিমাতেই বললাম, কে এসেছে?
অবনী আমাকে বললো, বললে কি দিবে বলো?
আমি বললাম, কি দিবো আবার? আগে বলো কে এসেছে?
অবনী আমায় অবাক করে দিয়ে বললো, তোমার মা বাবা এসেছে।
তৎক্ষণাৎ আমার চোখের ঘুম পালিয়ে গেলো। লাফিয়ে উঠলাম আমি। সত্যিই কি মা বাবা এসেছে? আমি তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে আসলাম। নিচে এসে দেখলাম অভ্র ভাইয়া আর বাবা সোফায় বসে কথা বলছে। আর মা আপু ও তার শাশুড়ির সাথে গল্প করছে। হঠাৎ করেই বাবা আমাকে ডাক দিলেন।
বাবা আমাকে বললেন, ইশা মা এদিকে আয়।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বাবা আমায় ডাক দিলো? বাবা আমার সাথে কথা বলছে? বাবা হাতের ইশারায় আমাকে আবার ডাকলেন। অভ্র ভাইয়াও ডাকছে। আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কত্তদিন পর বাবা আমার সাথে কথা বলেছে? আমার নেত্রকোণে জল চিকচিক করছে। আমি শান্ত পায়ে গিয়ে বাবার পাশে বসলাম।
বাবা আমায় পরম স্নেহে নিজের কাছে টেনে নিলেন। আমি জোরেই কেঁদে ফেললাম। বাবা বললেন, কাঁদিস না মা। আমার মামণি একদম কাঁদে না। একদম চুপ।
আমি আরো জোরে কেঁদে ফেললাম। বাবাও আমার সাথে কেঁদে ফেললেন। বললেন, কেমন আছিস মা? আমি কান্নার দরুন কথাই বলতে পারছি না। তবুও নিজেকে সংযত করলাম। এই মুহূর্তে খুব ভালো লাগছে। এতো গুলো দিন ধরে বাবার কথা না বলার বেদনা মনে নিয়ে কি যে বিষাদ যন্ত্রনার সম্মুখীন হয়েছি তা কেবল আমিই জানি। মনে মনে ভাবতে লাগলাম হঠাৎ বাবা আমার সাথে কথা বললেন? কিন্তু কিভাবে?
ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেলো গতকালের ঘটনা। অরিদ্র যখন আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ কি তখন আমি বলেছিলাম বাবার নিশ্চুপ থাকাটা। যেটা প্রতিটা মূহুর্ত আমাকে কাঁদায়। আমাকে অপরাধী বানিয়ে রেখেছে! তারমানে সেই কি বাবাকে এনেছে? আর ভাবতে পারছি না। আমি বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে বাবার কোলে শুয়ে পড়লাম। যেমনটা আগে করতাম। বাবাও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। অভ্র ভাইয়া আমার এই কাণ্ড দেখে হেসে ফেললেন। আপুকে ডেকে বললেন, সিহা দেখো তোমার বুড়ি বোন বাচ্চা সেজেছে। আমি কিছু বললাম না শান্ত মেয়ের মতো চুপচাপ থাকলাম। সিহা আপু বললো, আমার বোনকে তুমি বুড়ি বললে কেন? আমার বোন তো বাচ্চাই। আমার ইশা মণি তো ছোট্ট একটা বাচ্চা। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর হাসছেন। বাবা বললেন, এটা তো আমার ছোট মেয়ে। আমার আদরের হাসি। আমি হাসলাম। কত্ত দিন পর বাবার মুখে এই ডাকটা শুনেছি। বাবা ছোট থেকেই আমায় আদর করে হাসি বলে ডাকেন। আমি নাকি ছোট থেকেই সবসময় হাসি খুশি থাকি। তাই তিনি আমার নামের সাথে মুসকানও লাগিয়ে দিয়েছেন।আজ কত্তগুলো দিন পর আবার সেই নামে ডাকছেন।
মনের মধ্যে এক প্রশান্তির ছোঁয়া বয়ে যাচ্ছে।
আজকের দিনটা বেশ ভালোই কাটলো। আমার জীবনের স্মরণীয় একটা দিন। আমার বাবা আমার সাথে কথা বলেছে! বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফির কাপে চুমুক দিয়েছে। চারপাশটা দেখায় মগ্ন আমি। কিন্তু হঠাৎই আঁখি জোড়া সদর দরজার দিকে আটকে গেলো। দরজার কপাট খুলে প্রবেশ করা যুবকের মধ্যেই আটকে গেলাম। তাকে কখনো এতোটা খেয়াল করে দেখা হয় নি। তার ফর্সা চেহারায় ছোট ছোট দাঁড়ির আবির্ভাব। সুদীর্ঘ আঁখি পল্লবে খয়েরি রঙের চিকন ফ্রেমের চশমা। তিনি চশমাও পড়েন? তাকে কখনো চশমায় দেখি নি আমি। সুঠাম দেহটায় সাদা রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট বেশ ভালোই মানিয়েছে। কপাল বেয়ে অনবরত ঘাম ঝরছে যা মলিন টিস্যু পেপার নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিচ্ছে। আমি হেবলার মতো তাকিয়ে আছি। হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হতেই তিনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। আমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। কিন্তু তার হাসিটা আমার চক্ষুগোচর হলো না। নিজের কর্মে নিজের উপরই বিরক্ত হচ্ছি। ইশ! লোকটা কি ভাবলো আমায়? নিজেকে হাজার খানেক বকা দিয়ে ঘরে চলে আসলাম। কিন্তু ঘরে আসতেই চোখ কপালে উঠে গেলো। সে আমার সামনেই সশরীরে উপস্থিত। আমি বিস্মিত! চোখের চশমাটা খুলে ফ্রেমটা পরিষ্কার করতে করতে সে বললো, ইশারা এবার দেখুন মন ভরে দেখুন। এখন আমি আপনার সামনে সশরীরে উপস্থিত। দূর থেকে চোখ দিয়ে না গিলে সরাসরি গিলুন। তার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। কাজটা আমি ঠিক করি নি। এখন তো এই লোক আমায় কথায় কথায় লজ্জায় ফেলবেন। আমি কিছু বললাম না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। দৃষ্টি নিচের দিকে নিবদ্ধ। তার অদ্ভুত দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে চলেছি। সে কেমন করে জেনো তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আমায় অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন, আপনার লজ্জা রাঙানো মুখটা কিন্তু বড্ড বেশি কাছে টানে আমায়। অনেক কাছে। আমার চোখ দুটো পান্তুয়ার আঁকার ধারণ করলো। মাত্রই কি বললো সে! সেও হয়তো বুঝে উঠতে পারে নি সে কি বলেছে। হয়তো মনের অজান্তেই মনের কথাগুলো বলে ফেলেছে!
____________________________
বহুতল ভবনের ছাদে বসে আনমনে সিগারেটের ধোঁয়া নিচ্ছে এক যুবক। এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিন তার কাছে আজ বিষাক্ত। বিগত কয়েকদিন যাবৎ ই তার কাছে সব বিষাক্ত। কিছুই তার মনোরঞ্জন করতে পারছে না। নিজেকে তার পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্যতম ব্যক্তি মনে হচ্ছে। নিজেকে এক ব্যর্থ প্রেমিক মনে হচ্ছে তার। নিজেকে ভালো রাখার জিনিসটা সে হারিয়ে ফেলেছে। নিজের অজান্তেই নিজেকে মেরে ফেলেছে সে। হারিয়ে ফেলেছে তার সবচেয়ে কাছের মানুষট। বার বার নিকোটিনের ধোয়া উড়িয়ে দিচ্ছে আকাশে। আর ভাবছে কি করলো সে? এতোটাই জরুরি ছিলো এটা করার? পিতৃদেবের বাণী রক্ষার্থে নিজের অজান্তেই নিজেকে শেষ করে ফেললো সে? আর ভাবতে পারছে না সে। সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো সে। হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বরে থমকে গেলো। কিন্তু এই কণ্ঠস্বর তার কাছে বিরক্তিকর। তার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর। পায়েলের ডাকে পিছন ফিরে তাকালো সে।
এতো রাতে ছাদে কি করো শুভ্র?
পায়েলের কথাকে সে এতোটা পাত্তা দিলো না। নিজের কাজেই ফের ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পায়েল তার বেপরোয়া ভাব বুঝতে পারলো। শ্বাস ফেলে বললো, কি হয়েছে তোমার? কয়েকদিন ধরে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে তোমাকে?
শুভ্র কথা বললো না। পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট নিয়ে ফের মগ্ন হলো তাতে। পায়েল শুভ্রের অনেকটা কাছে এসে দাঁড়ালো। শুভ্রকে পিছন থেকে জড়িয়ে বললো, তুমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছো। আগের মতো নেই তুমি। তুমি আমাকে একদমই ভালোবাসো না। আমাকে একটুও আদর করো না।
বেশ আদুরে কণ্ঠেই বললো পায়েল। কিন্তু সে কি জানতো তার আদুরে কণ্ঠস্বরে অপর পক্ষ অতিশয় বিরক্ত। হঠাৎই এক হুংকারে শুভ্র বলে উঠলো,
গেট আউট ফ্রম হেয়ার। আই হেট ইউ। তোর জন্য আমি সব হারিয়েছি আমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি। নিজের স্বার্থে ওকে কষ্ট দিয়েছি। সব কেড়ে নিয়েছিস তুমি। আমার কাছ থেকে আমার সব কেড়ে নিয়েছিস। আই জাস্ট হেট ইউ। গেট লস্ট। তোর মুখ দেখতে চাই না আমি।
শুভ্রের হঠাৎ এমন আচরণে পায়েল হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলো! কি হলো হঠাৎ?
চলবে……
(রিচেক হয় নি। লেখাগুলো অগোছালো হয়েছে। অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দেরি করে গল্প দেওয়ার জন্য দুঃখিত। কারণ আমি অসুস্থ।)
#অপূর্ণতায়_পূর্ণতা
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৭
প্রভাতের মিষ্টি কিরণে সূচনা হলো নতুন দিনের। আর নতুন দিন মানেই নতুন কিছু। জগৎ তার নিয়মেই চলা শুরু করে দিয়েছে। জানালার পর্দা ভেদে মৃদু কিরণ এসে মুখ থুবড়ে পড়তেই ঘুম থেকে উঠে বসলাম। এখনো ঘুমু ঘুমু ভাবটা কাটে নি। বিছানায় বসেই ঝিমাচ্ছি।
অবনী আমার কাছে এসে বললো, তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? জানো আজ কারা এসেছে?
আমি ঝিমাতে ঝিমাতেই বললাম, কে এসেছে?
অবনী আমাকে বললো, বললে কি দিবে বলো?
আমি বললাম, কি দিবো আবার? আগে বলো কে এসেছে?
অবনী আমায় অবাক করে দিয়ে বললো, তোমার মা বাবা এসেছে।
তৎক্ষণাৎ আমার চোখের ঘুম পালিয়ে গেলো। লাফিয়ে উঠলাম আমি। সত্যিই কি মা বাবা এসেছে? আমি তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে আসলাম। নিচে এসে দেখলাম অভ্র ভাইয়া আর বাবা সোফায় বসে কথা বলছে। আর মা আপু ও তার শাশুড়ির সাথে গল্প করছে। হঠাৎ করেই বাবা আমাকে ডাক দিলেন।
বাবা আমাকে বললেন, ইশা মা এদিকে আয়।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বাবা আমায় ডাক দিলো? বাবা আমার সাথে কথা বলছে? বাবা হাতের ইশারায় আমাকে আবার ডাকলেন। অভ্র ভাইয়াও ডাকছে। আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কত্তদিন পর বাবা আমার সাথে কথা বলেছে? আমার নেত্রকোণে জল চিকচিক করছে। আমি শান্ত পায়ে গিয়ে বাবার পাশে বসলাম।
বাবা আমায় পরম স্নেহে নিজের কাছে টেনে নিলেন। আমি জোরেই কেঁদে ফেললাম। বাবা বললেন, কাঁদিস না মা। আমার মামণি একদম কাঁদে না। একদম চুপ।
আমি আরো জোরে কেঁদে ফেললাম। বাবাও আমার সাথে কেঁদে ফেললেন। বললেন, কেমন আছিস মা? আমি কান্নার দরুন কথাই বলতে পারছি না। তবুও নিজেকে সংযত করলাম। এই মুহূর্তে খুব ভালো লাগছে। এতো গুলো দিন ধরে বাবার কথা না বলার বেদনা মনে নিয়ে কি যে বিষাদ যন্ত্রনার সম্মুখীন হয়েছি তা কেবল আমিই জানি। মনে মনে ভাবতে লাগলাম হঠাৎ বাবা আমার সাথে কথা বললেন? কিন্তু কিভাবে?
ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেলো গতকালের ঘটনা। অরিদ্র যখন আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ কি তখন আমি বলেছিলাম বাবার নিশ্চুপ থাকাটা। যেটা প্রতিটা মূহুর্ত আমাকে কাঁদায়। আমাকে অপরাধী বানিয়ে রেখেছে! তারমানে সেই কি বাবাকে এনেছে? আর ভাবতে পারছি না। আমি বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি হয়ে বাবার কোলে শুয়ে পড়লাম। যেমনটা আগে করতাম। বাবাও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। অভ্র ভাইয়া আমার এই কাণ্ড দেখে হেসে ফেললেন। আপুকে ডেকে বললেন, সিহা দেখো তোমার বুড়ি বোন বাচ্চা সেজেছে। আমি কিছু বললাম না শান্ত মেয়ের মতো চুপচাপ থাকলাম। সিহা আপু বললো, আমার বোনকে তুমি বুড়ি বললে কেন? আমার বোন তো বাচ্চাই। আমার ইশা মণি তো ছোট্ট একটা বাচ্চা। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর হাসছেন। বাবা বললেন, এটা তো আমার ছোট মেয়ে। আমার আদরের হাসি। আমি হাসলাম। কত্ত দিন পর বাবার মুখে এই ডাকটা শুনেছি। বাবা ছোট থেকেই আমায় আদর করে হাসি বলে ডাকেন। আমি নাকি ছোট থেকেই সবসময় হাসি খুশি থাকি। তাই তিনি আমার নামের সাথে মুসকানও লাগিয়ে দিয়েছেন।আজ কত্তগুলো দিন পর আবার সেই নামে ডাকছেন।
মনের মধ্যে এক প্রশান্তির ছোঁয়া বয়ে যাচ্ছে।
আজকের দিনটা বেশ ভালোই কাটলো। আমার জীবনের স্মরণীয় একটা দিন। আমার বাবা আমার সাথে কথা বলেছে! বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফির কাপে চুমুক দিয়েছে। চারপাশটা দেখায় মগ্ন আমি। কিন্তু হঠাৎই আঁখি জোড়া সদর দরজার দিকে আটকে গেলো। দরজার কপাট খুলে প্রবেশ করা যুবকের মধ্যেই আটকে গেলাম। তাকে কখনো এতোটা খেয়াল করে দেখা হয় নি। তার ফর্সা চেহারায় ছোট ছোট দাঁড়ির আবির্ভাব। সুদীর্ঘ আঁখি পল্লবে খয়েরি রঙের চিকন ফ্রেমের চশমা। তিনি চশমাও পড়েন? তাকে কখনো চশমায় দেখি নি আমি। সুঠাম দেহটায় সাদা রঙের শার্ট আর কালো প্যান্ট বেশ ভালোই মানিয়েছে। কপাল বেয়ে অনবরত ঘাম ঝরছে যা মলিন টিস্যু পেপার নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিচ্ছে। আমি হেবলার মতো তাকিয়ে আছি। হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হতেই তিনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। আমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। কিন্তু তার হাসিটা আমার চক্ষুগোচর হলো না। নিজের কর্মে নিজের উপরই বিরক্ত হচ্ছি। ইশ! লোকটা কি ভাবলো আমায়? নিজেকে হাজার খানেক বকা দিয়ে ঘরে চলে আসলাম। কিন্তু ঘরে আসতেই চোখ কপালে উঠে গেলো। সে আমার সামনেই সশরীরে উপস্থিত। আমি বিস্মিত! চোখের চশমাটা খুলে ফ্রেমটা পরিষ্কার করতে করতে সে বললো, ইশারা এবার দেখুন মন ভরে দেখুন। এখন আমি আপনার সামনে সশরীরে উপস্থিত। দূর থেকে চোখ দিয়ে না গিলে সরাসরি গিলুন। তার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি। কাজটা আমি ঠিক করি নি। এখন তো এই লোক আমায় কথায় কথায় লজ্জায় ফেলবেন। আমি কিছু বললাম না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। দৃষ্টি নিচের দিকে নিবদ্ধ। তার অদ্ভুত দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে চলেছি। সে কেমন করে জেনো তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আমায় অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন, আপনার লজ্জা রাঙানো মুখটা কিন্তু বড্ড বেশি কাছে টানে আমায়। অনেক কাছে। আমার চোখ দুটো পান্তুয়ার আঁকার ধারণ করলো। মাত্রই কি বললো সে! সেও হয়তো বুঝে উঠতে পারে নি সে কি বলেছে। হয়তো মনের অজান্তেই মনের কথাগুলো বলে ফেলেছে!
____________________________
বহুতল ভবনের ছাদে বসে আনমনে সিগারেটের ধোঁয়া নিচ্ছে এক যুবক। এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিন তার কাছে আজ বিষাক্ত। বিগত কয়েকদিন যাবৎ ই তার কাছে সব বিষাক্ত। কিছুই তার মনোরঞ্জন করতে পারছে না। নিজেকে তার পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্যতম ব্যক্তি মনে হচ্ছে। নিজেকে এক ব্যর্থ প্রেমিক মনে হচ্ছে তার। নিজেকে ভালো রাখার জিনিসটা সে হারিয়ে ফেলেছে। নিজের অজান্তেই নিজেকে মেরে ফেলেছে সে। হারিয়ে ফেলেছে তার সবচেয়ে কাছের মানুষট। বার বার নিকোটিনের ধোয়া উড়িয়ে দিচ্ছে আকাশে। আর ভাবছে কি করলো সে? এতোটাই জরুরি ছিলো এটা করার? পিতৃদেবের বাণী রক্ষার্থে নিজের অজান্তেই নিজেকে শেষ করে ফেললো সে? আর ভাবতে পারছে না সে। সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো সে। হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বরে থমকে গেলো। কিন্তু এই কণ্ঠস্বর তার কাছে বিরক্তিকর। তার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর। পায়েলের ডাকে পিছন ফিরে তাকালো সে।
এতো রাতে ছাদে কি করো শুভ্র?
পায়েলের কথাকে সে এতোটা পাত্তা দিলো না। নিজের কাজেই ফের ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পায়েল তার বেপরোয়া ভাব বুঝতে পারলো। শ্বাস ফেলে বললো, কি হয়েছে তোমার? কয়েকদিন ধরে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে তোমাকে?
শুভ্র কথা বললো না। পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট নিয়ে ফের মগ্ন হলো তাতে। পায়েল শুভ্রের অনেকটা কাছে এসে দাঁড়ালো। শুভ্রকে পিছন থেকে জড়িয়ে বললো, তুমি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছো। আগের মতো নেই তুমি। তুমি আমাকে একদমই ভালোবাসো না। আমাকে একটুও আদর করো না।
বেশ আদুরে কণ্ঠেই বললো পায়েল। কিন্তু সে কি জানতো তার আদুরে কণ্ঠস্বরে অপর পক্ষ অতিশয় বিরক্ত। হঠাৎই এক হুংকারে শুভ্র বলে উঠলো,
গেট আউট ফ্রম হেয়ার। আই হেট ইউ। তোর জন্য আমি সব হারিয়েছি আমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি। নিজের স্বার্থে ওকে কষ্ট দিয়েছি। সব কেড়ে নিয়েছিস তুমি। আমার কাছ থেকে আমার সব কেড়ে নিয়েছিস। আই জাস্ট হেট ইউ। গেট লস্ট। তোর মুখ দেখতে চাই না আমি।
শুভ্রের হঠাৎ এমন আচরণে পায়েল হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলো! কি হলো হঠাৎ?
চলবে……
(রিচেক হয় নি। লেখাগুলো অগোছালো হয়েছে। অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দেরি করে গল্প দেওয়ার জন্য দুঃখিত। কারণ আমি অসুস্থ।)