#বেলীফুল
পর্ব- ২৮
অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছে বলে সাজিদের ঘুম ভাঙল একটু দেরিতে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তার প্রথম কাজ হলো মোবাইলে ফেসবুক, ইমেইল চেক করা। ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন হলো আন্দোলন হচ্ছে। ইউনিভার্সিটিগুলোতে আন্দোলন হওয়ার জন্য বিশেষ কোনো কারণ লাগে না। একটা কিছু হওয়ার আগেই ছাত্র নয়তো শিক্ষক আর নয়তো স্টাফরা প্ল্যাকার্ড বানিয়ে রাস্তার মাঝে বসে যায়। আজব পরিস্থিতি! তবে এবারের আন্দোলনের কারনটা জোরালো। বেশ কিছুদিন হলো ছাত্র হলে খাবারের মান ভয়ানক খারাপ। একই দিলে এক হলের ডালের ডেগচিতে ইঁদুরের দুটো মরা ছানা পাওয়া গেছে, আরেক হলের মুরগির মাংসে আস্ত তেলাপোকা। এখন খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে সব রাস্তায় নেমে পড়েছে। গত তিনদিন ক্লাস হয় না, আজও হবে কি না জানা নেই। ক্লাস না হলে সে ছাত্রদের আন্দোলনে চলে যাবে। এরা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শিক্ষকদের পাশে পেলে মনে অন্যরকম জোর পায়।
মোবাইল অন করে সাজিদ দেখল মৌরি মেসেজ দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। মেসেজ ওপেন করে কয়েকটা ছবি দেখতে পেল। ডায়েরির পাতার ছবি। তাতে মুক্তোর মতো হাতের লেখা। কী লেখা তা সেটা পড়তে গিয়ে খেয়াল করল চোখ জ্বলছে। সে উঠে গেল হাতমুখ ধুতে।
ফ্রেশ হতে না হতে ডাক পড়ল বাইরে থেকে। বাবা ডাকছেন। সাজিদ মোবাইল চার্জে দিয়ে চলে গেল কী ঘটেছে দেখতে।
রইসুদ্দিন আজ ভোরে হাঁটতে বের হয়ে পেয়ে গেছেন এক মাছওয়ালাকে। সদ্য ধরে আনা বড় বড় গলদা চিংড়ি দেখে রইসুদ্দিনের জিভে পানি চলে এসেছে রাস্তায় দাঁড়িয়েই। দুই কেজি কিনে এনেছেন তিনি। এসেই তায়িফকে অর্ডার দেয়া হয়ে গেছে, আজ নারকেল দিয়ে চিংড়ির মালাইকারি রাঁধতে হবে, বাকি অর্ধেক আরেকদিন ভুনা করতে হবে। সাজিদ চোখ ডলতে ডলতে বের হয়ে এসে বাবার চকচকে চোখ দেখে হেসে ফেলল।
তায়িফ চাচাও খুশি। বললেন, “বসো সাজিদ বাবা। আমি চা আনি। কী চা খাইবা এখন? দুধ না রং? নাকি কফি দিব?”
“এখন চা খাব না চাচা। নাস্তা দিন। নাস্তা খেয়ে চা খাই।”
রইসুদ্দিন বললেন, “আমার নাস্তাও দাও। একসাথে খাই।”
খেতে খেতে রইসুদ্দিন একটা অদ্ভুত কথা বললেন। একথা সাজিদের মনেও আসেনি। শোনার পর থেকে তার পুরো শরীর শিরশির করতে থাকল। রইসুদ্দিন বললেন, “সাজিদ, তোমার কাছে কিছু চাইনি কখনো। এখন একটা কথা বলব। ইচ্ছে হলে রাখতে পারো।”
“কী বাবা?”
“তুমি মৌরি মেয়েটাকে বিয়ে করবে? আমার খুব ভালো লেগেছে ওকে। অসহায় একটা মেয়ে। কী হবে ওর কোনো ঠিক আছে? হয়তো দেখা গেল বিয়েই হবে না। এত ভালো একটা মেয়ের সাথে এরকম তুমি শিক্ষক হয়ে মেনে নিতে পারবে? তোমার নিশ্চয়ই ওর সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা নিয়ে মনে খুঁতখুঁতি নেই?”
সাজিদ থম ধরে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর বলল, “বাবা! আমি তো ভাবিনি এরকম কিছু। আমার ওর অতীত নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু..হুট করে বিয়ের কথা ভাবতেও কেমন যেন লাগছে।”
“তোমাকে এখুনি বিয়ে করতে বলছি না তো! ভাবো! ভালো করে ভেবে তারপর মনস্থির করো। ভেবো না জোর করছি। আমি শুধু বললাম। বাকিটা তোমার ইচ্ছে, তোমার জীবন।”
“ঠিক আছে বাবা।”
খাওয়া শেষে চায়ের কাপ নিয়ে জানালার ধারে বসল সাজিদ। জানালার ওপাশের প্রকৃতিতে গতরাতের বৃষ্টির ছাপ লেগেছে আছে। টুপটাপ পানি ঝরছে পাতা থেকে। ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে ঝপঝপ শব্দ তুলে চলে গেল একটা ব্যাঙ। বর্ষাকাল চলে এসেছে। এখন প্রায়ই বৃষ্টিবাদলার দেখা মিলবে। কেমন সতেজ একটা আবহাওয়া। তবু মনের ভেতর স্যাঁতস্যাঁতে গুমোট বদ্ধ বাতাস পাক খেয়ে যাচ্ছে! মৌরির মেসেজটার কথা মনে পড়ল। পড়তে ইচ্ছে হলো না।
***
তালাটা জং ধরে গেছে। চাবি ঘুরিয়ে বহুবার চেষ্টা করেও লাভ হলো না। অতঃপর ইট দিয়ে বাড়ি দিয়ে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হলো। ঢুকেই কাননের মনে হলো ভূতের বাড়ি এরচেয়ে ভালো হয়। অনেকদিন বাড়িতে কারো পা পড়েনি। দেয়ালগুলো থেকে প্লাস্টার খসে পড়বে পড়তে অবস্থা। মাকড়সাদের স্থায়ী বাস্থান হয়ে গেছে। দুটো ইঁদুর আর একটা তেলাপোকা কাননের পায়ের ওপর দিয়ে ছুটে পালাল। কানন শিউরে উঠল!
ভাগ্যিস আপা আসেনি! এলে সর্বনাশ হতো। আজই তাকে ত্যাজ্যভাই করে ফেরত যেত আমেরিকা।
ফার্নিচারগুলো ঢাকা দেয়া ছিল বলে মোটামুটি রক্ষা করা গেছে। তবু দেখা গেল অনেকগুলোই ঘুনপোকার কবলে পড়ে মরি মরি দশা।
কানন কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। ইলা!
“বলো।”
“কোথায় আপনি?”
“কোথায় থাকতে পারি?”
“এই অসময়ে অফিসে যাননি নিশ্চয়ই?”
“তুমি কি সারাদিন আমার ওপর নজরদারি করো নাকি?”
“না তো! আপনিই নজরে পড়ে যান, আমি কী করব?”
“গ্রেট! আমি তো তোমার চেহারাও দেখি না। নিজেকে লুকিয়ে রেখে খুব মজা পাও তাই না?”
ইলা হেসে বলল, “হ্যাঁ তো! বলুন না কোথায় গেছেন?”
“বাড়িতে।”
“আপনার নিজের বাড়িতে?”
“হ্যাঁ।”
“ওখানে চলে যাবেন?”
“বাড়ির যা হাল! টিকটিকি, মাকড়সা, তেলাপোকার বাড়ি হয়ে গেছে। কিছুদিন পর বাদুর ঝুলবে! কেমন করে থাকব? আপা বলেছে বাড়ি মেরামত করে বাসযোগ্য করতে। আমার মনে হচ্ছে কাজটা অসম্ভব।”
“কেন অসম্ভব? আপনি চাইলে আমি হেল্প করতে পারি!”
“তুমি?”
“হ্যাঁ!”
কানন একটু ভেবে বলল, “ওকে, তাহলে চলে এসো।”
“আমি যেন কত চিনি! এসে নিয়ে যান আমাকে।”
“আচ্ছা রেডি হও।”
“একটা কথা….”
“বলো।”
“আপা কি আমার কথা কিছু বলেছে? গতকাল যে কথা বললাম না…আসলে বুঝতে পারিনি কী করব…”
“না কিছু বলেনি। পরেরবার কথা হলে নিজেই বলো সেদিনের জন্য সরি। মিটে যাবে।”
“আচ্ছা। কিন্তু আজ আপনাদের বাড়ি গেলে আপা কিছু ভাববে না তো?”
“আপা কেমন করে জানবে শুনি? তুমি রেডি হও তো! আমি রওন দিয়ে দিয়েছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা।”
***
সাজিদ বাবার সাথেই দুপুরের খাবার খেল। তায়িফ চাচা ভালো রান্না করলেও চিংড়িটা ঠিক মজা লাগল না রইসুদ্দিনের। সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কয়েকবার বলে ফেলল, কিছু জিনিস রান্নার সময় মমতা আর ভালোবাসা লাগে। সেসব নরীর হাত ছাড়া হয় না৷ তায়িফ চাচা এমনিতে প্রতিবাদ করলেও আজ একেবারে চুপ করে রইল। কথার সুর সে ধরতে পেরেছে। পরোক্ষভাবে বোঝানো হচ্ছে বিয়ে করার কথা। সাজিদ অবশ্য বুঝেও না বোঝার ভান করল।
দুপুরে ভাতঘুম দেয়া রইসুদ্দিনের অভ্যাস। সাজিদ এ সময় বাসায় থাকে না। আজ কী করবে ভেবে পেল না। বিছানায় শুয়ে মোবাইল ধরতেই মৌরির মেসেজটার কথা মনে পড়ল। সে লেখাগুলো বের করে পড়তে শুরু করল।
——–
আমাকে যখন তারা মাইক্রোবাসে তুলে নেয় তখন আমার হাত পা বেঁধে ফেলেছিল। চোখে কালো পট্টি আর মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিয়েছিল। কিছু দেখতে না পেলেও বোঝার চেষ্টা করছিলাম গাড়িটা কোথায় যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়িনি। চুপচাপ ছিলাম। আমি যাতে বুঝতে না পারি তাই ওরা একই এলাকা কয়েকবার চক্কর দিয়েছে। ব্যাপারটা বুঝতে পারি, কারন একটা কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এর কাজ চলছিল, সেখানে প্রচুর লোকজনের কথা শোনা যাচ্ছিল। সেখান থেকে একটু সামনে গিয়ে একটা স্পিড ব্রেকার পড়েছিল। এই একই রাস্তা তিনবার গেছে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম।
তারপর একটা পথ ধরে সোজা চলে গিয়ে কোথাও গাড়িটা থেমেছিল। দরজা খোলার সময় ডাস্টবিনের উৎকট গন্ধ পেয়েছি।
শেষে যেখানে একেবারে থামা হলো সেখানটা গ্রামের মতো এলাকা। একেবারে নির্জন। আমি তিনটে দিন লোকের কথা তেমন শুনিনি। প্রচুর ঝিঁঝি পোকা ডাকছিল। পাখির ডাকাডাকিও শুনতে পেয়েছি। এক রাতে শেয়ালের ডাক পর্যন্ত শুনেছি।
এরপর দু’দিন আটকে থাকার সময় আমি অনেক বোঝার চেষ্টা করেছি কোথায় আছি। কিন্তু সে জায়গায় একটা মানুষের শব্দও শোনা যায়নি৷ ওই বাড়িতে কারেন্ট, পানি কিছুই ছিল না৷ বাথরুমও ছিল ভাঙা। আমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যেত বাথরুমে। কলটল কিছু ছিল না৷ একটা পানির ড্রামে ওরা পানি ভরে আনত কোথাও থেকে।
একদিন অবশ্য একটা ব্যাপার ঘটেছিল। কয়েকটা বাচ্চার গলা শুনতে পেয়েছিলাম৷ একজন শুধু সবসময় পাহাড়া দিতে থাকত। সে বাদে আর কেউ ছিল না সে সময়। আমার হাত পা বাঁধা। বাচ্চাগুলো ঠিক আমার পাশের জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে বলাবলি করছিল, বাড়িটা নাকি ভূতের বাড়ি। রাতদুপুরে প্রায়ই নারীকন্ঠের আর্তনাদ শোনা যায়। সাহসী কোনো এক ছেলে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পাহাড়ায় থাকা লোকটা ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয় ওদের৷ ওরা কয়েকবার শব্দটা উচ্চারণ করেছিল, ‘ভূতের বাড়ি’।
ফেরার সময় আমি কিছুই বুঝিনি। তখন এতটা বিদ্ধস্ত অবস্থা ছিল যে বোঝার ক্ষমতা ছিল না।
———–
সাজিদ পড়তে পড়তে উঠে বসল। উত্তেজনায় ওর হাত-পা কাঁপছে। কেন লেখাটা এতক্ষণ পড়েনি সেটা ভেবে নিজের ওপরেই রাগ লাগছে। মৌরি হয়তো ভাবছে সে ব্যাপারটা হালকাভাবে নিয়েছে। একটা কিছু রিপ্লাই করা উচিত ছিল!
সে লিখল, “পড়েছি। সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম বলে উত্তর দেয়া হয়নি।”
মৌরি সেকথা না ধরে বলল, “আপনি কি আন্দাজ করতে পারছেন বাড়িটা কোথায়? আমার মনে হয় ওখানে আমার মতো আরও ভিক্টিমদের নিয়ে যাওয়া হয়।”
“তাই তো মনে হয়। বাড়িটা খোঁজার চেষ্টা করছি।”
“আমি গুগল ম্যাপে অনেক খুঁজেও পাইনি।”
সাজিদ হেসে ফেলল। “গুগল ম্যাপে এই গ্রাম্য ভূতের বাড়ি পাবেন! পাগল নাকি! আপনি চিন্তা করবেন না, আমি দেখছি।”
সাজিদ আগেই ভেবে রেখেছিল কী করবে। নিরব নামে জার্নালিজম থেকে পাশ করা তার এক বন্ধু আছে, খুব স্টাগল করে ইদানীং মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে। নারী অধিকার নিয়ে খুব কাজ করে। বিভিন্ন ক্রাইমের ক্ষেত্রে নিজে তদন্ত করে। এই ব্যাপারটাতে ওর চাইতে ভালো আর কেউ সাহায্য করতে পারবে না। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, নিরব এই কাছাকাছি এলাকাতেই থাকে। ডাকলেই পাওয়া যাবে।
সাজিদ ফোন করল নিরবকে। এই ছেলেকে ফোন করলে সহজে পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত দেখায়। কিন্তু আজ প্রথমবারেই পেয়ে গেল। ভাগ্য ভালো বলতে হবে।
***
তুলন রাত থেকেই ভাবছে আজ কী বলে বের হবে। শেষে সে ঠিক করল পড়ার কথা বলে বের হবে। আগেই মাকে বলে রেখেছে কথাটা। কেউ যাতে সন্দেহ না করে সেজন্য একেবারে সাদামাটা একটা জামা পরল। কাঁধে মোটাসোটা একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে শীট ফটোকপি করবে বলে বের হয়ে গেল বাসা থেকে।
ওর অবশ্য আরেকটা উদ্দেশ্য আছে। আকাশ আজ ওকে দেখে কেমন রিয়েকশন দেয় তা থেকে বোঝা যাবে ছেলেটা সত্যি ওকে ভালোবাসে কি না! যদি ভালোবাসে তাহলে এমনি বাসবে, আর নাহলে ওর সাদামাটা চেহারা দেখে ঠান্ডা ব্যবহার করবে। ইলাকে যেমন কানন সত্যিকার ভালোবাসে সেটা বোঝা যায়। ইলা কোনোদিন সাজে না, অথচ কানন ওর সাথে থাকলে কেমন ঝলমল করে! আকাশও কি তাকে অতটা ভালোবাসবে?
আজ তার যাওয়ার কথা সুপার মার্কেটের সামনে। সেখান থেকে তাকে পিক করবে আকাশ।
তুলন মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিরক্ত হয়ে গেল। আশেপাশের ভ্রাম্যমান দোকানগুলো একটু ঘুরে দেখল। তারপর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে মার্কেটে ঢুকে গেল এসির বাতাস খেতে।
একটা মেনিকুইনের গায়ে পেঁয়াজ রঙের দারুণ একটা শাড়ি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল তুলন। ভারী শাড়িটা। কত দাম হবে? ট্যাগ লাগানো আছে, সতেরো হাজার! সেরেছে! কিনতে পারবে না, তবে দেখতে দোষ কী? তুলন নিজেকে শাড়িতে কল্পনা করে ফেলল। একবার কাছে গিয়ে, একবার দূরে গিয়ে শাড়িতে দেখল। এই অন্যমনষ্কতায় হঠাৎ এক লোকের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। তাকিয়ে দেখল লোকটা বিরক্ত মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। লম্বা চওড়া লোকটার কানে ব্লুটুথ, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। সেই চশমার ভেতর দিয়ে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চাহনি দেখে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতে চায়!
তুলন দ্রুত হেঁটে সরে গেল সেখান থেকে। বাইরে এসে পেয়ে গেল আকাশকে। ওকে কেন যেন অস্থির দেখাচ্ছে। তুলনের দিকে চেয়ে বোকা বোকা হেসে বলল, “অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছ তাই না?”
“আরে না। আমি একটু মার্কেটে ঘুরছিলাম।”
“আচ্ছা চলো তাহলে।”
“কোথায় যাব? চলো না ফুচকা খাই!”
“নাহ। একবার ফুচকা খেয়ে কেমন অসুস্থ হয়েছিল মনে নেই? চলো চলো!”
তুলন অনিচ্ছা নিয়ে আকাশের পিছু নিল। মার্কেট থেকে উল্টোদিকে ঘুরে গিয়ে হাঁটতে থাকল তারা। দেখে মনে হবে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটছে। তুলন একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “এই জায়গাটা ভালো না। চলো না বোটানিক্যাল এ যাই। আজকে আবার বেশিক্ষণ থাকতে পারব না।”
আকাশ কিছু না বলে কেমন করে যেন হাসল। তুলনের গা জ্বলে গেল। এখনই ডমিনেট করা শুরু হয়ে গেছে! আশ্চর্য!
আকাশ বলল, “তুলন জানো, তোমাকে গতকালকের চাইতে বেশি সুন্দর লাগছে।”
তুলনের রাগ পড়ে গেল। ভালোলাগায় ছেয়ে গেল মন। বলল, “কী বলো! আজ তো কাজের বুয়া সেজে এসেছি। বাসায় যেন সন্দেহ না করে তাই!”
আকাশ চোখ মটকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে বলল, “এভাবেই বেশি ভালো লাগছে হানি!”
দৃষ্টিটা ঠিক পছন্দ হলো না তুলনের। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল সে। কিন্তু ততক্ষণে তারা পৌঁছে গেছে মোটামুটি ফাঁকা একটা জায়গায়। একটা মাইক্রোবাসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তারা, হঠাৎ সেটার দরজা খুলে গেল। তুলন কিছু বোঝার আগেই তার মুখ চেপে ধরে টেনেটুনে বাসে তুলে ফেলা হলো। ও মোটামুটি ধাতস্থ হয়ে বুঝতে পারল, গাড়িটা চলতে শুরু করেছে। কয়েকটা গলা থেকে আলাদা করে আকাশের গলা শুনতে পেল সে, “যাক! ঠিকমতো কাজটা করা গেল।”
কেউ একজন তুলনের গায়ে বিচ্ছিরিভাবে হাত দিয়ে বলল, “জিনিস একটা আনছোছ! রাতে তোর জন্য একটা এক্সট্রা স্পেশাল বোতল থাকবে আমার পক্ষ থেকে!”
তুলনের মাথায় পরপর কয়েকটা বজ্রপাত হলো। যেন হাজার ভোল্টের শক খেয়েছে সে! জীবনে কখনো এতটা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়নি সে! যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কেমন অবশ হয়ে এলো শরীর-মন। জ্ঞান হারালো সে।
(চলবে)