অপেক্ষা পর্ব ০৬-
লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ
রিধিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে দিব্য বাসায় ফেরার পথে ইশাকে দেখতে পেল।
ইশাকে দেখে পা একটু জোরে চালিয়ে ইশার কাছাকাছি চলে আসলো দিব্য। ইশার পাশে হাটতেই কেমন জানি ভালো লাগছে তার।
জ্যোৎস্না রাত, গলিতে মানুষজন নেই, হালকা হাওয়া এসে ইশার চুলগুলোকে ছুঁয়ে দিচ্ছে, প্রকৃতিকে দেখে যেন জ্বলছে দিব্যে। সব অধিকার যেন প্রকৃতির, দিব্যকে একটু সুযোগও দিচ্ছে না।
ইশা আনমনে হাটছে, সে এখন নিজের মাঝে নেই, একা থাকতে বড়ো ভালোবাসে মেয়েটি, আর কানে বাজচ্ছে রবীন্দ্রনাথের গান-
‘ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো–তোমার মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো–তোমার চরণমঞ্জীরে।।
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি–তোমার প্রাসাদপ্রাঙ্গনে।
মনে করে সখী,বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী–তোমার কনক কঙ্কনে।।’
ইশার মনে প্রাণে যেন বিষাদের ছায়া, যে মানুষটিকে এতো ভালোবাসতো সে মানুষটি যে বড়োই অপরিচিত আজ।
ইশার মনে পড়ছে সে দিনটির কথা যেদিন মুহিবের সাথে প্রথম দেখা।দুজনের মাঝে ছিল কতো জড়তা তবুও ছিল এক প্রশান্তির ছায়া, প্রিয় মানুষটিকে প্রথমবার চোখের আলোতে আনার প্রশান্তি। দিনটি যেন এক আঁধার নেমে আসা দুটি অবুঝ প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে এনে দেওয়া আলোর ছোঁয়া।
মুহিবের কিছুটা পরিবর্তন হয় সেদিনের পর। নিয়ম করে খোঁজ রাখে প্রিয় মানুষটির। ভালাবাসা যে বাঁধ ভেঙে এসেছিল তাদের জীবনে। কিন্তু সাময়িকের জন্য এসেছিল সেই ভালোবাসা। মুহিবের ইশার প্রতি কোনো ভালোবাসা ছিল না। সব ছিল মোহ। যা কেটে যায় এক মাসের মধ্যে।
এক মাস পর মুহিব সব দিক থেকে ইশাকে ব্লক করে দেয়, হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া।
এই একমাসে ইশার যেন মুহিবের প্রতি টান আরো বেড়েছিল। সে এখন পাগল প্রায়।
দুইবছর আগের ঘটনা এগুলো।
ইশা রাত দিন শুধু ছটফট করছে মুহিবের জন্য। মুহিবের কিছু বন্ধুর নম্বর ছিল। ইশা সেখানে ফোন দিয়ে দেখল কিন্তু বিনিময়ে মুহিবের খুব কড়া কথা শুনা ছাড়া আর কিছুই জুটল না।
পরের দিন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে ক্লাসে গেল সে।
ইশার মন খারাপ দেখে ইশার স্কুলের বান্ধবী রাইসা বলল,
রাইসা: আজকেও মুহিবের সাথে ঝগড়া?
ইশা: ব্রেকাপ আমাদের।
রাইসা: বিশ্বাসই হয় না। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যায়।
ইশা কথা বলতে বলতেই কেঁদে দিল।
ইশা: এইবার খুব বেশি করছে। জানিস, রাইসা পারছি না আর সহ্য করতে। ভালো লাগছে না একদম। কেন এমন কষ্ট হচ্ছে আমার? কেন লাগছে এমন ছন্নছাড়া?
আমি মনে হয় বাঁচবো না আর।
রাইসা: পাগল তুই? আঙ্কেল-আন্টির কতো স্বপ্ন তোকে নিয়ে। আর তুই দুই দিনের প্রেম এর জন্য এমন কথা বলছিস? তোর কি মনে হয় তুই মরে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে?
ইশা: আমি এই মানসিক কষ্টটা সহ্য করতে পারছি না। মুহিব আমাকে ভালোবাসে কিনা আমি জানি না। ও একবার বলে ভালোবাসে, আরেকবার বলে বাসে না। ও চাই কি? ও জানে আমি ওর জন্য পাগল, তাও এমন করছে। আমি একদম পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারছি না। অসহ্য লাগছে সব।
রাইসা: ইন্টারলাইফটা ক্যারিয়ার গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। ইশা, দেখ তোর স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। আর ডাক্তার হওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আর তুই এভাবে সময়টা অপচয় করছিস?
ইশা: ও আমার হয়ে থাকলে আমি ভালো থাকি। খুব ভালো থাকি। পড়ায়ও মন বসে। কিন্তু সবসময় পরীক্ষার আগেই ও আমার সাথে ঝগড়া করে। এর আগেও প্রথম বর্ষে ওর সাথে ঝগড়া হয়েছিল তাই ওর উপর রাগ করে পরীক্ষাও দেয় নি।
রাইসা: লাভ কি হয়েছে?
ইশা: কোনো লাভ হয়নি। আমাকে আজো বোঝে নি সে। জানিস, বাবাকে দেখলে না খুব মায়া হয়! অনেক কষ্ট করে আমাদের জন্য। অনেক স্বপ্ন দেখে। কিন্তু আমি না ওকে ভুলতে পারছিনা। ওকে ভুলে গেলে সব ঠিক হয়ে যেতো। দেখ সবাইতো সুখে আছে। আমি সুখে নেই শুধু।
ক্লাসে পুরো সময় ইশা আনমনে বসে ছিল। ক্লাস শেষে মুহিবকে রাইসা মেসেজ দেয় ইশার অবস্থা দেখে।
একদিন পর মুহিব আবার স্বাভাবিক হয়।
ইশা: তুমি আমার সাথে এমন কেন করো?
মুহিব: তোমার জন্য আমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। আই জাস্ট হেইট ইউ।
ইশা: মুহিব, আমি তোমাকে কি বিরক্ত করি বলো? আমি তো তোমাকে অবসরে ফোন দেই। তুমি তো সারাদিন নম্বর ব্লক করে রাখো। সবচেয়ে বেশি আমার পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে।
মুহিব: এই বেয়াদব মেয়ে। তোকে ভালো লাগে না আর, বললাম না। আমাকে বিরক্ত করবি না।
ইশা: মুহিব, আমার কথাটা শোনো—-
কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে ব্লক করে দেয় ইশাকে।
ইশা আর না পেরে কয়েকটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলে। সারাদিন ঘুমের ঘোরেই ছিল।
ইশার ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কথাটি জানার পর মুহিব তাচ্ছিল্য দেখিয়ে বলে, কয়েকটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে মানুষ মারা যায় না।
পরের দিন বাসা থেকে বের হয়ে এলোমেলো ভাবে রাস্তায় হাটতে থাকে। রাইসা ইশাকে রাস্তার মধ্যে হাঁটতে দেখে তাড়াতাড়ি সরিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে এলো।
রাইসা: কি করছিস তুই? পাগল হয়েছিস?
ইশা: আমার ভালো লাগছে না একদম।
রাইসা: ইশা, চুপ কর। বেশি বেশি করছিস। দেখ ঠান্ডা মাথায় ভেবে। মারিয়াকে বলে দেখ। মারিয়ার বয়ফ্রেন্ড সানিতো মুহিবের বন্ধু! ও কথা বলবে মুহিবের সাথে।
ইশা ছেলেদের সাথে কথা বলতো কম। আর আজ তাকে মুহিবের জন্য ছোট হতে হচ্ছে অন্য ছেলের সামনে।
আবেগ মানুষকে এমন সব কাজ করতে বাধ্য করে যা তার বৈশিষ্ট্যেই নেই। ইশার আবেগ তাকে মানসিক রোগী বানিয়ে দিয়েছে। সে বুঝতে পারছে না সে কি করছে।
জোর করে ভালোবাসা কখনো পাওয়া যায়না। ভালোবাসার জন্য যে মনের দরকার ওই মনটি এখনো অপরিপক্ব। তাই ইশার অবুঝ মন বুঝে নিতে পারছে না বাস্তবতা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মনকেও প্রস্তুত করতে হয়।
ইশার ব্যাপারটি মারিয়া সানিকে বলার পর সানি মুহিবকে বুঝায়। মুহিব সরাসরি না করে দেয়। ব্যাপারটির আর কোনো সমাধান নেই সানি মারিয়াকে বুঝিয়ে বলে।
পরের দিন মারিয়া আর রাইসা মিলে ইশাকে বুঝায়। ইশার অবস্থা হয়তো তারা বুঝছে না। যার অবস্থা সেই বুঝে আসলে।
ইশা সারাদিন এটিই ভাবছে যদি মুহিব তাকে ভালোই না বাসে, এতো সব মিথ্যা আশা দেখানোর কি দরকার ছিল? মুহিবের সব কথায় অন্ধের মতো মানতো সে। মুহিবকে নিজের ফেইসবুক পাসওয়ার্ড ও দিয়ে দেয়। মুহিব সারাদিন ইশার ফেইসবুক ঘেটে কোনো না কোনো দোষ বের করে তার সাথে ঝগড়া করতো। ইশাকে কোনো ছেলে মেসেজ দেওয়া তো দূর, ছবিতে কমেন্ট করলেও ইশার কপালে দুঃখ থাকতো। সেটি যদি ইশার থেকে বয়সে ছোট তার কাজিন ভাইও হয় তাও। সব মানসিক অত্যাচার সহ্য করেও ইশা শুধু একটি আশা নিয়ে বসে ছিল, মুহিবও তাকে ভালোবাসবে। কিন্তু মুহিব এতো সব অত্যাচার করে নিজেই অন্য মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করতো। ইশাকে ফেইসবুক পাসওয়ার্ড দেওয়ার আগে মেসেজ সব ডিলিট করতো। কিন্তু মুহিবের এসব ভাঁওতাবাজি ইশা হাতে নাতে ধরেও ফেলে তার বন্ধুর মেসেজ দেখে। যেখানে ওর বন্ধু লিখেছিল তুই কি ইশাকে নিয়ে সিরিয়াস?
মুহিবের রিপ্লাই ছিল,’না’।
ইশা মেসেজ দেখে আরো বুঝে নেয় মুহিবের অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ।
এতো সব কিছুর পর কেন মুহিব ইশাকে মিথ্যা আশা দেবে? ওর কোনো অধিকার নেই কারো আবেগ নিয়ে খেলার।
ইশা একটি বিষয় ভালোই বুঝেছে, মুহিবের প্রেম করার শখ হলে ইশার সাথে কথা বলে। মোহ কেটে গেলে সব শেষ। এর মধ্যে মুহিব ইশাকে নিয়ে অনেক বাজে কথাও রটিয়েছে।
ইশাকেও সে আরো অনেক কথা বলেছিল, যার মধ্যে ভয়ংকর কথা ছিল ইশা মুহিবের টেলেন্ট দেখে প্রেমে পড়েছে। মুহিব অনেক ভালো কলেজে পড়তো, তাই সে ইশাকে এ বিষয়েও খোঁচা দিয়েছিল।
এতো কিছুর পরো ইশার আত্ম-সম্মান বলতে কিছুই ছিল না। তাই সে নির্লজ্জের মতো মুহিবের আশায় ছিল।
মুহিব-ইশার প্রেমের গল্পে ইশার পাগলামো কাটে টেস্ট পরীক্ষার আগে। যখন মারিয়া ইশার খুশির জন্য শেষবার মুহিবকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে তোমার জীবনে ইশার জায়গা কোথায়?
আর মুহিবের উত্তর ছিল আমি শুধু তাকে বন্ধু ভাবি। জাস্ট ফ্রেন্ড, এর বেশি কিছুই না।
ইশা সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনের সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করে, কি ছিল এতোদিন? মুহিবের সেই প্রেমিকপুরুষের মতো দেওয়া মেসেজ। ভালোবাসি বাবু-সোনা! এসব কি জাস্ট ফ্রেন্ডকে বলে? রাত জেগে কথা বলেছিল কি জাস্ট ফ্রেন্ডের জন্য? এই জাস্ট ফ্রেন্ডের জন্য সে এতো সময়, এতো চোখের জল হারিয়েছে? সবার সামনে নিজেকে ছোট করেছে? আর না।
এরপর থেকেই ইশা মুহিবকে আর ফোন দেয় নি। এখন তার স্বপ্ন, তার বাবার ইচ্ছে পূরণ করা।
অনেক চেষ্টা করেছিল, সময় কম তাও নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছিল। দুইবছরের পড়াশুনা কয়েকমাসে কখনোই সম্ভব না। এইটিইতো বাস্তবতা, কোনো নাটকের সংলাপ না, কোনো গল্পের চরিত্র না। এটি জীবনের বাস্তবতা। সব জায়গায় তুমুল প্রতিযোগিতা। যে বেশি পরিশ্রম করে সেই সফল হয়। ইশার পরিশ্রম হয়তো অন্যদের তুলনায় কম ছিল, তাই সে আজ ডাক্তারি পড়তে পারছে না। তবুও সে সন্তুষ্ট।
কিন্তু ওই অভিশাপটি এখনো আছে তার জীবনে। মুহিবের সাথে টানা দেড় বছরের দূরত্বের পর সব ঠিক হয়েছিল।
ইশার পায়ে ধরে মাফ চাইবে বলেছিল। ইশার জন্য কান্নাকাটি করেছে। ইশার বাসার সামনে এসে টানা ছয়ঘন্টা ইশার জন্য অপেক্ষা করেছিল মুহিব। বুঝতে পেরেছিল ‘ভালোবাসা কারে কয়’।
কিন্তু কিছু অপেক্ষা সারাজীবনের অপেক্ষা হয়ে যায়। প্রিয় মানুষটিকে সে অবহেলায় এতো দূরে ফেলে দিয়েছে যে ইশা এখন অভ্যস্ত মুহিবকে ছাড়া। উলটো ভালোই ছিল। তবুও মুহিবকে সুযোগ দিয়েছে। শেষ সুযোগ। মুহিবও তার সবটা দিয়ে ইশাকে ভালোবাসতে চেয়েছে কিন্তু আগের মতো অধিকার দেখাতে আসলেই ইশা পুরোনো কথা তুলে মুহিবকে দূরে টেলে দেয়।
ইশার এখন মুহিবকে ভালো লাগে না। দিনদিন মুহিব নামের ছায়াটিকে অসহ্য লাগছে, তার উপর মুহিবের যত্তসব বিদঘুটে আবদার।
মুহিব হয়তো মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই ইশাকে এসব কথা বলে চাপ দেয়। কিন্তু যখন দেখছে ইশা আর আগের মতো চাপ নিচ্ছে না। ফোন অফ করে দিলে কান্না করে না, মুহিবকে নিজে কল দেওয়া তো বহুদূর মুহিবের কল দেখলে না দেখার ভান ধরে থাকে। তখন মুহিব পাগলের মতো ইশাকে পুরোনো ইশা হয়ে যাওয়ার আবদার করতে থাকে।
কিন্তু ইশার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।মুহিবকে সে এখনো ভালোবাসে হয়তো। ভালো না বাসলে চাপা কষ্ট কিসের? হ্যাঁ, ভালোবাসে। শুধু প্রকাশ করার ইচ্ছেটা চলে গিয়েছে তার। তাদের সম্পর্ক আগের মতো নেই।
মুহিব এখন ইশার জায়গায় সারারাত বালিশ ভিজিয়ে যায়। ছেলেরা নাকি অল্পতে কাঁদেনা। কিন্তু মুহিব শাস্তি পেয়ে গেছে তার কর্মফলের। এখন সে ইশাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে চায় ,সে বুঝেছে সে কি হারিয়েছে।
থাক না কিছু হারানো জিনিস না পাওয়া উত্তম। যার জন্য যেটি উপযুক্ত প্রকৃতি তাকে সেটিই দেয়।
ইশা হাঁটছিল আর পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো মনে করছিল। পাশে কারো ছায়া দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, দিব্য চোখ বন্ধ করে হাঁটছে।
কান থেকে ইয়ারফোনটা নামিয়ে ইশা বলল,
ইশা: আসসালামু আলাইকুম।
দিব্য: ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?
ইশা: আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
দিব্য: যেমন দেখছো। এতো রাতে একা রাস্তায়?
ইশা: আশেপাশে তো কেউ নেই, ভাবলাম একটু হাওয়া খেয়ে নি। আপনিও কি হাওয়া খেতে বের হয়েছেন?
দিব্য: দিয়ার বান্ধবী রিধি এসেছিল। তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসলাম।
ইশা: অনেক ভালো।
দিব্য: কি গান শুনছিলে?
ইশা: রবীন্দ্রসংগীত।
দিব্য: গান গাইতে পারো?
ইশা: নিজের মনে গেয়ে যায়। কখনো কাউকে শুনানো হয়নি।
দিব্য: আমাকে শুনাবে? আমি আছি না!
একটু হেসে উত্তর দিলো।
ইশা কথাটি শুনে মুচকি হাসি দিলো।
দিব্য মনে মনে বলল,
ইশা, তোমার গান শুনার, তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারার, তোমাকে মন ভরে দেখার অপেক্ষায় থাকি আমি সারাদিন। কিভাবে বোঝাবো তোমাকে কতো ভালোবাসি তোমায়!
দিব্য আবার ইশাকে বলল,
দিব্য: সামনের প্রোগ্রামে তুমি গান গাইবে।
ইশা: আমি পারি না। সবার সামনে লজ্জায় পরতে হবে তখন।
দিব্য: রোহান থেকে শিখে নিও। ও ভালো পারে। আর তোমার কন্ঠ খুবই সুন্দর। তুমি গান গাইলে ভালোয় লাগবে।
ইশা: আমার রোহান ভাইয়াকে খুব ভয় লাগে। কেমন অদ্ভুত!
দিব্য: অদ্ভুত না অনেক ভালো। ওর সাথে কথা বললে বোঝা যায়। কেউ বলে না তাই বুঝে না ছেলেটি কতো পরিষ্কার মনের।
এদিকে অনিক বাসায় চলে যাওয়ার জন্য অনেক বলার পরও রাজিয়া রহমান তাকে না খেয়ে যেতে দিবেন না বলেই দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে অনিক বসে আছে দিব্যের আশায়। দিয়া ভেবেছিল বাসায় কেউ নেই। সে ইচ্ছে মতো পায়ের উপর পা তুলে সামনের সোফায় শুয়ে শুয়ে সুর ছাড়া গান গেয়ে যাচ্ছে,
“আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চায়,
আমায় কতোটা ভালোবাসো সে কথাটা জানতে চায়?”
অনিক দিয়ার ভাঙা সুরের গান শুনে বলল,
অনিক: কার কাছ থেকে জানতে চাও?
দিয়া ভুত দেখার মতো অনিককে দেখে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।
অনিক: এই এই করছো কি? ছি! আন্টি কি ভাববে?
দিয়া: আপনি?
অনিক: দিব্যের সাথেই এসেছিলাম। এতোক্ষন তোমার ভাইয়ের ঘরে ছিলাম। কিন্তু তুমি এইসব কি গান গাচ্ছিলে?
দিয়া: আসলে ওই একটি দোকানে চলছিল…তো…আসলে তেমন কিছু না। আমতা আমতা করে উত্তর দিলো।
অনিক: এসব গান শুনবে না। ভালো ভালো কতো গান আছে। তোমার এসবের বয়স হয়নি। বুঝেছো?
দিয়া : আচ্ছা ভাইয়া শুনবো না,আমি এখন আসি।
দিয়া একপ্রকার পালিয়ে গেল। ভীষণ লজ্জা পেয়েছে সে।
মনে মনে বলছে, হুহ এখন এসব শুনার বয়স হয়নি। আমাকে কি শিশু মনে হয় তার?
আর অনিক দিয়ার কান্ড দেখে হাসছে। মনে মনে বলছে,
এতো সহজে কারো মনে ঘুরে আসার সুযোগ দিবো না তোমাকে।
চলবে—
আগের পর্বের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/373004671087978/