হঠাৎ পাওয়া সুখ পর্ব-৮

0
897

#হঠাৎ_পাওয়া_সুখ
(৮ম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু

নাবিলাদের ড্রয়িংরুমে মারজুক, ওর ছোট মামা,, মার্জিয়া আর আজিম বসে আছে। রাফিউল ইসলাম সাহেব যখন জানলেন মারজুকের বাবা মা কেউ রাজি না তখন উনিও নিষেধ করছেন। বাবা মায়ের মনে কষ্ট দিয়ে কিছু করলে তার ফল কখনো ভালো হয়না।
মারজুকের মামা বললেন,, দেখেন আমার ভাগ্নে আপনার মেয়েকে পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। মানছি, আমার বোন দুলাভাই এখন মানছে না! কিন্তু মানতে কতক্ষণ! আমরা অনেক বড় আশা নিয়ে এসেছি আপনারা আমাদের ফিরিয়ে দিবেন না।
-ভদ্রলোক বললেন, শুধু আপনার বোন দুলাভাই কেন ভাই আমি তো আমার মেয়েটাকে ও রাজি করাতে পারছিনা। ও কিছুতেই এমন বিয়ে করবেনা। নাবিলার মনে হচ্ছে আপনারা ওর অসহায়ত্ব দেখে ওর প্রতি দয়া করছেন! ও কারো দয়ার উপর আশ্রিত হতে চায়না। আর ও বলছে নাকি এ অবস্থায় বিয়ে করাও জায়েজ না। আমি, ওর মা আমার বড় মেয়ে যত বুঝাতে চাইছি ও মানতে চায়না।

মারজুক কি করবে বুঝতে পারছেনা। ও আসলেই জানতো না যে এভাবে বিয়ে করা ঠিক না। কিন্তু তারপরেও নাবিলার সাথে একবার কথা বলা দরকার। ওদিকে বাবা মা মানছেনা। এদিকে নাবিলা ও ঘাড়ত্যাড়া করে আছে। ওর মনে হচ্ছে আমি ওর প্রতি দয়া করছি! কিন্তু ওতো জানেনা আমার হৃদয়ের বৃহৎ একটা অংশ জুড়ে ওর ভাবনারা দখল করে নিয়েছে।
মারজুক একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো মনে মনে,, বিয়ে করতে হয় তো নাবিলাকেই করবো আর নয় আজীবন এভাবে কাটিয়ে দিবো। সেটা আজ কি একবছর পরে! এবার বার বার হেরে যেতে যেতে আমি ক্লান্ত আর পারছিনা! একবার ভালো মন্দ না ভেবে আবেগের বশবর্তী হয়ে না জেনে একজনকে ভালোবেসেছি! অল্প বয়সের ভালোবাসা না বলতে পারার কারণে হারিয়ে ফেলেছি! নিজেকে সামলে নিয়েছি। আজ আবার যখন কাউকে ভালোবাসে সাহস করে বিয়ের কথা বলতে এসেছি সে ভাবছে আমি করুনা করছি! সবসময় আমার সাথেই কেন এমন হবে? কেন আমাকে কেউ একবারো বুঝতে পারেনা? সেদিন লাবন্য বুঝতে চায়নি,, বাবা মাকে বুঝাতে পারছি না! আজ আবার নাবিলা কে পারছিনা! বারবার আমি কেন ব্যর্থ হবো?
আল্লাহ একটু সহায় হও আমার প্রতি!!

মারজুক মার্জিয়াকে ডেকে ওর কানে কানে কিছু বলতেই, মার্জিয়া বলে উঠলো, আঙ্কেল আপনি যদি অনুমতি দেন ভাইয়া একটু নাবিলার সাথে সরাসরি কথা বলতে চায়?

-এভাবে একা একা তো ও কথা বলতে রাজি হবেনা!
-সমস্যা নেই! আমি থাকবো সাথে!

নাবিলা যখন জানলো মারজুক ওর সাথে কথা বলবে,, তখন ও বলে দিলো যে ও কথা বলবেনা!
-সুমনা ধমক দিয়ে বললো,, সব সময় গোয়ার্তুমি না করলে কি হয়না তোর?
উনি কি বলতে চায় শুনতে তোর সমস্যা কি?
সে তো বলেছে সে তোর প্রতি কোন দয়া করছেনা তাহলে ও তোর এতো কথা কেন? আর বললেই তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না
যতই বলিস তোর পেটের এই বাচ্ছাকে তুই নিজের পরিচয় দিবি যেভাবে বলেছিস ব্যাপারটা কি অতোটাই সোজা নাবিলা?
এই সমাজ আমাদের প্রতি সহানুভূতি না দেখাতে পারলেও কলিজায় আঘাত করা কথাগুলো বলতে তাদের কখনো মুখ কাঁপেনা।
-আপু!
-এভাবে তাকাস না! সত্যি এটাই!৷ আজ তোর কথাগুলো কেউ হয়তো জানেনা আস্তে আস্তে সবাই জানবে তখন কি করবি?
কয়জনের মুখ আটকাবি?
জীবন যদি এতো সহজ হতো তাহলে মানুষ কখনো হতাশাগ্রস্ত হতোনা!

মানুষটা সব জেনেশুনে তোকে সন্মানের সহিত তার স্ত্রী করতে চাইছে এটা তো তোর পরম সৌভাগ্য বলতে পারিস! তোর পেটের নাম পরিচয় হীন বাচ্ছাকে পিতৃপরিচয় দিবে সে কেমন উদার মানুষ হলে এমন করতে পারে নিজেকে নিজে প্রশ্ন কর!
উনি এখন আসবে কথা বল!
তোর মন মত না হলে তো আমরা তোকে জোর করবোনা

-সুমনা বেরিয়ে যেতে নিলে নাবিলা হাত চেপে বললো,, আপু তুই থাক আমার ভয় করছে!
-জ্ঞানবুদ্ধি কি সব গেছে নাকি তোর! আমি উনার সাথে দেখা দিবো?
-একা একা একজন পুরুষ মানুষের সাথে একি রুমে কথা বলা কি ঠিক?
-একা কেন বলবি? উনার সাথে উনার ছোট বোন আসছে বলে সুমনা বেরিয়ে গেলো।

নাবিলা খাটের একপাশে চুপ করে বসে ছিলো। দরজার পাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ বলে উঠলো,, আসতে পারি?
-নাবিলা বললো,, জী আসুন!

মার্জিয়া ভিতরে এসে সালাম দিলো। নাবিলা সালামের জবাব দিয়ে নিজেও সালাম দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ভয়ে নাকি লজ্জায় পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো নাবিলার।

মার্জিয়া তা দেখে মুচকি হেসে পাশে এসে নাবিলার হাত ধরে বললো এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই আপু,, বসুন!

কিছুটা জড়তা নিয়ে নাবিলা খাটের একপাশে বসে পড়লো। মারজুক তার বরাবর চেয়ার টেনে তাতে বসলো।
মার্জিয়া বললো,,, আপু স্বাভাবিক হোন! এতো কাঁপাকাঁপির কিছু নেই। ভাইয়া আপনার সাথে কিছু কথা বলেই চলে যাবে।

মার্জিয়া মারজুকের দিকে তাকিয়ে বললো,, কি বলবি বল ভাইয়া। মার্জিয়া উঠতে নিলে নাবিলা শক্ত করে মার্জিয়ার হাত চেপে ধরলো।
মারজুক সেদিকে দৃষ্টি দিতেই আনমনে হেসে দিলো।
মার্জিয়া বললো,,আরে আমি যাচ্ছি না তো। বারান্দায় আছি! তোমরা কথা বলো।

নাবিলা তা ও হাত ছাড়ছেনা। মারজুক বললো, থাক মার্জিয়া তোর উঠতে হবেনা। আমি তো বাঘ ভাল্লুকক! তুই উঠলেই আমি তাকে খেয়ে ফেলবো।
নাবিলা চোখ তুলে একবার মারজুকের দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি নামিয়ে নিলো।

পরক্ষনেই মারজুক নাবিলার দিকে তাকিয়ে বললো,, কেমন আছেন?

-জী আলহামদুলিল্লাহ!

-আমি যে প্রস্তাবটা এনেছি তাতে নাকি আপনার মত নাই?

-জী ঠিকই শুনেছেন।

-কেন জানতে পারি?

-কেন আবার? এরকম বিয়ে শরীয়তে জায়েজ নাই।

-জী এ কথাটা আমার আগে জানা ছিলো না। যদি এটা ঠিক না হয় তাহলে পুরো ব্যাপারটা জেনে নিয়ে যখন জায়েজ হবে তখন আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। সেটা হোক কি একবছর আগে পরে!

-দেখুন আমি কারো দয়ার উপর বাঁচতে চাইনা। আমি আজ এ অবস্থায় পড়েছি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বা যেভাবেই হোক তাই হয়তো আপনার মনে সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। আমি চাইনা আমার প্রতি কেউ করুণা করুক!

-আপনার মনে হয় আমি করুণা করছি?

-তা নয়তো কি? আজকালকার সময়ে কেউ কারো এতোবড় বিপদ নিজের ঘাড়ে তুলে নেয় নাকি?
আজ আপনি হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাকে আপনি বিয়ে করবেন! জীবনের কোন একসময়ে এসে আপনার মনে হবে আমাকে বিয়ে করে আপনার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে তখন কি করবেন?
আপনার কখনো এমন মনে হতে পারে আমার মতো ধর্ষিতাকে বিয়ে করে সমাজে আপনার মাথা নিচু হয়ে গেছে তখন?
তখন তো এই সুযোগ থাকবেনা যে সরে আসবেন তখন কি করবেন?
যত সহজে আপনি এখন আমায় বিয়ে করতে চাইছেন আমাকে নিয়ে আপনাদের সভ্য সমাজে বেঁচে থাকাটা তার থেকে হাজারগুন বেশি কঠিন!
এ সমাজ পাশে না দাঁড়ালেও কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে ঠিকই পারে!

-আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না এখনো! আমি আগে পাঁচওয়াক্ত নামাজ ও ঠিক করে পড়তাম না ইসলামের অন্য বিধিবিধান গুলো তো অনেক দূরে! কিন্তু যেদিন থেকে রাসূলের দেখানো পথে চলা শুরু করেছি সেদিন থেকে জীবনের অন্য এক মানে খুঁজে পেয়েছি আমি! এখন আমি যাই করিনা কেন আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালোবেসে করার চেষ্টা করছি! হ্যা এটা ঠিক ইসলামের অনেক বিধিনিষেধ এখনো আমার অজানা। তবে আমি যখন একটা কথা বলি তখন তা বলার আগে আমি হাজারবার ভাবি যে এটা আমার জন্য কতটা ভালো হবে। আপনার ব্যাপারটা ও তেমন ভেবেছি!
এ অবস্থায় বিয়ে করা যে ঠিক না এটা আমি জানতামই না।
কিন্তু যেদিন থেকে ইসলাম মেনে চলি সেদিন থেকে মনে প্রাণে একটাই আকাঙ্খা ছিলো তা হলো একজন দ্বীনদার স্ত্রী পাওয়া!
আপনার বাবার মুখ থেকে আপনার কথা শুনে মনে হলো এমন একজন তো আমি সবসময় চেয়ে এসেছি!
দিনরাত আপনার ভাবনা আমায় বিভোর করে রাখতো! কিছুতেই মনকে বুঝাতে পারতামনা।
আমার বোনকে আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, আপনার প্র্যাগনেন্সির খবরটা শুনার আগে আমি আপনার বাসায় আসতে চেয়েছি বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি! আর বলার আগে আপনার এ খবর পাই। একমুহূর্তে মনে হলো, আমার সব স্বপ্নে ভাঙন ধরেছে! পরমুহূর্তে মনে হলো,, আমি যদি আপনাকে ভালোবেসে নিজের করে নিতে পারবো তখন এই নিষ্পাপ প্রানটাকে কেন নিতে পারবোনা!

-আমি শুনেছি আপনার বাবা মা নাকি আমাকে মেনে নিবেনা?

-হুম ঠিক শুনেছেন! আমার বাবা মায়ের মন মানুসিকতা একটু উচ্চাকাঙ্খী!

-বাবা যখন মানছেনা তখন এরকম একটা সিদ্ধান্ত আপনার কি নেয়া উচিত হয়েছে?

-তা জানিনা! তবে এটা ঠিক বাবা এখন সহজে মানবেনা কিন্তু একসময় ঠিক মেনে নিবে।
কিন্তু আজ যে সুযোগটা আমার কাছে আছে কালতো তা পাবোনা তখন তো এমনিতে পস্তাতে হবে!
আর কোন ভালো কাজে বাবা মা বাঁধা দিলে তাদের মতের বিরুদ্ধে তখন যাওয়া যেতে পারে ইসলাম তো এটাই বলে না কি?

-আমার জন্য কারো পরিবারে ভাঙন ধরলে তার দায় তো আমি এড়াতে পারবোনা!

-আমার পরিবার কখনো জোড়া লাগানো ছিলোনা। বাবা মা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। আমরা দুই ভাইবোন নিজেদের চেষ্টায় এগিয়েছি। আমার বাবা মায়ের কাছে সবসময় তাদের অর্থবিত্ত আর হাই সোসাইটির সন্মানের ভয় বেশি আমাদের চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য তাদের কাছে ছিলোনা। জানি নিজের মা বাবার সম্বন্ধে এসব বলা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু না বলেও উপায় নেই।

জীবনটা আমার তাই আমার বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আল্লাহ আমাকে দিয়েছে। তারপরও আপনার যদি মনে হয় আমি দয়া করছি তাহলেও কোন সমস্যা নেই। আমি আপনার উপর জোর করবোনা। আপনার জীবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আপনার।
তবে যদি আপনি ব্যাপারটা খুশি মনে মেনে নিতেন তবে খুব খুশি হতাম! বলেই ওরা বেরিয়ে গেলো।

নাবিলা কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বোনকে ডেকে বললো,, আপু তুই বাবাকে বল আমি রাজী! তবে বিয়েটা এখন নয় আমার গর্ভের সন্তান পৃথিবীতে আসার পরে হবে।

ড্রয়িংরুমে অপেক্ষারত সবাই রাফিউল সাহেবের মুখে নাবিলার সম্মতির খবর শুনে সমস্বরে বলে উঠলো,, আলহামদুলিল্লাহ!!!

পরদিন হসপিটালে আসার পরে মারজুক ডাক্তার ইসহাককে এ অবস্থায় নাবিলাকে বিয়ে করা যাবে কি না জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তার ইসহাক এক কথায় বলে দিলেন না মারজুক সাহেব এ বিয়ে কোনভাবেই জায়েজ না। যতদিন না তার গর্ভের সন্তান এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হবে ততদিন বিয়ে হবে না। সন্তান হবার পরে আপনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন তার আগে না!

কথাটা শুনে মারজুক মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো যা হবে নাবিলার সু্স্থ হবার পরেই হবে। আবেগের বশে এইরকম ভুল একটা কাজ থেকে আল্লাহ তাকে হেফাজত করেছে এই জন্য আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জানালো মারজুক।

এইপর থেকে মারজুক ওর বাবা মাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছে,, কোন লাভ হয়নি! তাদের এক কথা তারা এই মেয়েকে কোনভাবে মেনে নিবেনা। এই মেয়েকে এ বাড়ীতে তোলা যাবেনা।

এভাবেই সময় বয়ে যাচ্ছিলো। নাবিলার সাথে মারজুকের এর মাঝে দু একবার ফোনে কথা হয়েছিলো। আর নয়তো ওর বাবার কাছে মাঝে মাঝে ফোন করে নাবিলার খোঁজ নিতো।

এর প্রায় মাসখানিক পরে নাবিলার ফোন থেকে মারজুকের ফোনে একটা কল আসলো। মারজুক তখন হসপিটালেই ছিলো।
মারজুক ফোন ধরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে জবাব এলো ভাইয়া আমি নাবিলার বড়বোন বলছি। আপনি কি এখন হসপিটালে আছেন?

-মারজুক সুমনার কন্ঠ শুনে এক মুহর্তে চুপ করে গেলো। তারপর বললো, জী আমি হসপিটালে। কেন কি হয়েছে?

-আচ্ছা আপনি থাকুন আমরা আসছি। আসলেই সব জানতে পারবেন।

মারজুক ভয়ার্ত হয়ে গেলো সুমনার কথা শুনে। কি হয়েছে?কারো খারাপ কিছু হয়নি তো। সকালে তো নাবিলার সাথে কথা হলো ও তো জানালো সুস্থ আছে। তাহলে কার কি হলো?

ঘন্টাখানিকের মধ্যে নাবিলারা হসপিটালে চলে এলো।কিন্তু নাবিলাকে দেখেই মারজুক চমকে গেলো। মেয়েটার চেহারা কেমন বদলে গেছে।
মারজুক তৎখনাৎ সোহানা ম্যাডামকে নিয়ে আসলো।

ডাক্তার সোহানা কি হয়েছে জানতে চাইলে সুমনা জানালো গতকাল রাত থেকেই নাকি নাবিলার ব্লিডিং হচ্ছে অল্প অল্প।। কিন্তু সকাল দশটার দিকে নাকি নাবিলা বাথরুম থেকে চিৎকার দিতে ওরা ছুটে গিয়ে দেখে নাবিলার চোখমুখে কেমন আতঙ্ক। জিজ্ঞেস করতেই জানালো অনেক বড় একটা রক্তের চাকা বেরিয়েছে ওর শরীর থেকে।
এতে সোহানা যা বুঝার বুঝে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর তিনি জানালেন নাবিলার গর্ভপাত হয়েছে। বাচ্ছাটা নষ্ট হয়ে গেছে।
নাবিলার পরিবারের সবাইকে দেখে মনে হলো ওরা খুব খুশিই হলো। কিন্তু মারজুকের ভয় বেড়ে গেলো এখন যদি নাবিলা মারজুককে না করে দেয় বিয়ের ব্যাপারে!

পরদিন নাবিলাকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো।
কয়েকদিন পরে নারজুক ওর ছোটে মানাকে দিয়ে নাবিলাদের পরিবারের মতামত জানার জন্য আবারো পাঠালো।
মারজুকের মামার কথা শুনে রাফিউল সাহেব জানালেন নাবিলা সুস্থ হলেই উনারা বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবেন বলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ছোটোমামার মুখে নাবিলাদের সম্মতির কথা শুনে মারজুক মহান রবের দরবারে কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করে ফেললো।

এর মাঝে মারজুক তার মা বাবাকে আরো কয়েকবার রাজি করানোর চেষ্টা করেছে। এমনকি নাবিলার গর্ভপাত হওয়ার কথাটাও তাদের জানিয়েছে। কিন্তু তাদের এককথা তারা নাবিলাকে কোনভাবে মেনে নিবে না।
সবশুনে মারজুকের ছোটমামা মারজুককে বললো,, চিন্তা করিসনা। তোর বাবা মা তাদের অন্তরে অহংকার আর হাই সোসাইটির সিল মেরে রেখেছে যা তুই চাইলেও খুলতে পারবিনা। তবে খুব তাড়াতাড়ি তাদের এ অহংকার ভেঙে যাবে দেখিস।
মামার পরামর্শে মারজুক হসপিটালের কাছাকাছি একটা বাসা ঠিক করলো আপাতত নাবিলাকে নিয়ে থাকার জন্য। যতদিন বাবা মা মেনে না নিবে ওরা ওখানেই থাকবে।

এদিকে মার্জিয়া নাবিলার বড়বোন সুমনাকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে লাগলো। যত যাই হোক তার একমাত্র ভাই অনুষ্ঠান ঝাঁকঝমক না হলেও অন্য কোন কিছুর কমতি রাখতে চায়না ও।
নাবিলাকে কোনোভাবে শপিংয়ের জন্য বের করে আনতে পারেনি। আর তাছাড়া ও এখনো মানসিকভাবে সুস্থ নয় তাই আর মার্জিয়া তেমন জোর করেনি।

আজিম আর ছোটমামা বাসা সাজাতে ব্যস্ত!
মারজুক সে তো! তার কথা আর নাইবা বলি! একদিকে নিজের স্বপ্নরাণীকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ অন্যদিকে বাবা মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কষ্ট!
একেবারে দিশেহারা অবস্থা বেচারার!

অবশেষে কাঙ্খিত দিনটি এসে গেলো।

বিয়ে করতে যওয়ার আগে মারজুক ইস্তিখারার নামায পড়ে নিয়েছে। ইস্তিখারার নামায হচ্ছে কল্যান প্রার্থনার নামায। যদি কেউ কোন মুবাহ কাজের ইচ্ছা করে এবং তা করা না করার ব্যাপারে সন্দেহ ও দ্বিধা দেখা দিলে, সে বিষয়ে আল্লাহর কাছ থেকে ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে যে নামায আদায় করা হয় তাই ইস্তিখারার নামায। ইস্তিখারার নামাজ নফল। দুই রাকায়াত।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কোন কাজ করার সংকল্প করে সে যেনো দুই রাকায়াত নামায আদায় করে নেয়।
নিষিদ্ধ সময় ছাড়া দিনের যে কোন সময় এ নামায আদায় করা যায়।

আর এভাবে যেন দোয়া করে- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমারই জ্ঞানের সাহায্যে এ বিষয়ে কল্যান প্রার্থনা করছি। তোমার ক্ষমতার সাহায্যে তোমার কাছে এ বিষয়ে কল্যান লাভের সামর্থ্য প্রার্থনা করছি। তুমিতো সবকিছুর ক্ষমতা রাখো, আর আমার তো কোন ক্ষমতা নেই। তুমি তো সবকিছুই জানো, আর আমি তো জানিনা। আর সকল অদৃশ্যের তুমিই তো একমাত্র মহাজ্ঞানী।
হে আল্লাহ! তুমি যদি এই কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীন, জীবন এবং আমার পরকাল ও পরিণতির জন্য কল্যানকর হবে বলে জানো, তাহলে তা করার শক্তি আমাকে দাও, তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং তাতে আমার জন্য বরকত দান করো। পক্ষান্তরে তুমি যদি এই কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীন, জীবন ও পরকালের পরিনতি বা দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য মন্দ হয় তাহলে আমার ধ্যান কল্পনা উক্ত কাজ থেকে ফিরিয়ে দাও। তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দাও। আমার জন্য যেখানেই কল্যান রয়েছে তার ফয়সালা করে দাও। এবং তার উপর আমাকে সন্তুষ্ট রাখো। একটা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছি আমার সাহায্য করো।

নামাজ শেষ করার পরে মারজুকের পুরো হৃদয়জুড়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো। নিজেকে অনেকটা হালকা লাগতে শুরু করলো।

হসপিটালের কয়েকজন পরিচিত ডাক্তার আর হাতে গোনা নিজের কিছু আপন মানুষকে নিয়ে মারজুক বর বেশে নাবিলাদের বাসায় আসলো।
আসার সময় বাবা মায়ের পা ধরে কান্নাকাটি করেছে বিয়েটা মেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু একটা কথা আছেনা,, ঘুমের মানুষকে জাগানো যায়, জেগে থাকা মানুষকে জাগানো যায়না। অজ্ঞ লোকদের বুঝিয়ে বলা যায় কিন্তু এইসব শিক্ষিত মানুষ যারা বুঝেও বুঝতে চায়না তাদের কি করে বুঝাবে?

অতিরিক্ত কান্নাকাটির ফলে মারজুকের চোখমুখ ফুলে লাল হয়ে আছে। বিয়েতে মেয়েরা বাবা মাকে ছেড়ে যাবে বলে কাঁদে। আর আজ মারজুক মনে হয় প্রথম ছেলে এই পৃথিবীতে যে বিয়ে করার সাথে সাথে মা বাবার কাছ থেকে পর হয়ে যায়। এ কষ্ট যে কতটা তা জানে সেই ব্যক্তি যে তার স্বীকার!.
বিয়ের দিনে মা হাসিমুখে তার সন্তানকে বিদায় দেয় বাবা ছেলের পাশে থেকে তাকে সাহারা দেয় আর আজ সেই সুন্দর মুহুর্তটি থেকে মারজুক বঞ্চিত হলো।

নানারকম চিন্তাভাবনার ভেতর দিয়ে পাঁচ লক্ষ এক টাকা দেনমোহর নগদ পরিশোধ সাপেক্ষে তিনবার কবুল বলে মারজুক আর নাবিলার বিয়েটা হয়ে গেলো। জোড়া লেগে গেলো দুজন বিপরীত মানুষের মন একই সুতোর বাঁধনে। হয়ে গেলো একে অপরের সারাজীবনের সঙ্গী।
মার্জিয়া আর ওর মামা মিলে অভিবাবকের দায়িত্ব নিয়ে পুরো বিয়ের দায়িত্বটা সামলেছে।
সব ফর্মালিটিজ সম্পূর্ন করে সন্ধ্যার পরেই মারজুকরা বেরিয়ে গেলো।

নাবিলা আর মারজুক এক নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে পা রাখলো নিজেদের ছোট্ট সংসারে …..

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here