রুপ_আহরন পর্ব_২

রুপ_আহরন পর্ব_২
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
#

দু বাহু ঝাঁকিয়ে দূরে এক ধাক্কা দিলো রুপায়ন আরোহীকে। মাটিতে না পড়ে গেলেও কিছুটা দূরে ছিটকে পড়লো আরোহী। আরোহী ছলছল চোখে তাকাতেই রুপায়ন ক্রোধ নিয়ে এগিয়ে এলো আরোহীর সামনে। কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো আরোহীর মুখপানে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— এতক্ষণ এসব কি হচ্ছিলো আরু?

‘ আরু ‘ আরু নামটি গভীরভাবে কয়েকবার কানে বাজলো আরোহীর। যে নামটি শুধু তার অজানা এক লোক ফোনে বলেছিলো সে নামটি মটেও রুপায়নের মুখে আশা করেনি আরোহী। সোজা হয়ে আটকালো গলায় বললো,

— আ্ আরু? আপনি আরু নামটি কোথায় শুনলেন রুপায়ন বাবু?

রুপায়ন ঘাবড়ে গেলো। রুপায়নই এই নামটা আরোহীকে দিয়েছিলো ফোনে। যখন রুপায়ন ইউনিভার্সিটিতে আর আরোহী কলেজে। সেসময়,

আপন খেয়ালে প্রতিদিনের মতোই ইউনিভার্সিটির দিকে যাচ্ছিলো রুপায়ন। রাস্তা পাড়ের জন্য ওভার ব্রীজ দিয়ে যায় রুপায়ন। কিন্তু একটু এগিয়েই সে থমকে যায়। সামনে থাকা সাদামাটা সুন্দরী যুবতিতে তার চোখ আটকে যায়। হালকা বাতাসে সেই মেয়েটার চুলগুলো অসম্ভব সুন্দর করে উড়ছিলো। সাথে তার এক বান্ধবী। মুখে হাসি নিয়ে বেশ ভালোভাবে কথা বলছিলো পাশে থাকা মেয়েটার সাথে। প্রথম দেখাতেই তার অদ্ভুত কিছু হয় বুকে। অজানা সেই কিছু! রুপায়নের ঠিক পাশ দিয়ে মেয়েটি বেড়িয়ে যায়। তার চুলে ঘ্রাণ স্পষ্ট নাকে এসেছে রুপায়নের। অনেক্ষণ তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হেসে চলে যায় সেখান থেকে।
সেদিনের পর প্রায়ই দেখা হয় আরোহীর আর রুপায়নের। আরোহী রুপায়নকে খেয়াল না করলেও রুপায়ন তাকে অপলকভাবে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। কিছুদিন যাওয়ার পড়ে সে যেনো আরোহীতে আসক্তি অনুভব করে। দিনে একবার না দেখলে ভেতরে কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে রুপায়নের। যখন দুদীন কিংবা তার বেশি দেখা হয় না তার নাম না জানা প্রেয়সীর সাথে, তখন কান্না পায় রুপায়নের। খেতে,পড়তে,শুতে সবসময় শুধু মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তা করে রুপায়ন। যত ভাবে ততই মুগ্ধতা ছেয়ে যায় রুপায়নের মন। রুপায়ন ঠিক করে এবার সবকিছু জানবে আরোহীর ব্যাপারে। নিজের বন্ধু প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরকে সব কিছু জানার জন্য বলে দেয়। এতে করে একদিনের বেশি সময় লাগেনি আরোহীর সম্পর্কে জানতে। নাম্বার পর্যন্ত পেয়ে যায় সে। আরোহী থেকে তাকে আরু বলে মানিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে ফোন করে। আরোহী মটেও কথা বলতে চাইতো না। তাই যখনি বিরক্ত হতো তখনি রুপায়ন ‘ আচ্ছা রাখছি প্রেয়সি আরু ‘ বলে কেটে দিতো! এরপর বিয়ে পর্যন্ত নিজেই নিয়ে যায় রুপায়ন।

রুপায়ন ভেবে পাচ্ছে না এখন কি বলবে আরোহীকে। সে এখন কিছুতেই আরোহীকে এসব বলতে চাচ্ছে না। এসকল কথাতো বাসরঘরে বলতে চেয়েছিলো রুপায়ন। তার মনের কথাগুলো সবই বলতো সেদিন। রুপায়ন নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বললো,

— আরোহী নামটা অনেক বড় মনে হয়। তাই আরু বলেছি।

আরোহী রুপায়নের সামনে আসলো। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— আপনি আমার কথাগুলো একবার শুনুন রুপায়ন বাবু। আমি…

— কি শুনতে বলছো তুমি? বিয়ের রাতে পালিয়ে এখন তুমি নিজেকে নির্দোষ প্রমানের চেষ্টা? কখনই না! কে জানে, বিয়ের রাতেই হয়তো কোন পরপুরুষের সাথে রাত কাটিয়ে এসেছো।

রুপায়নের কথায় আরোহী মাটিতে আসে পড়লো। তার জানা, ভাবা মতে সে নিশ্চিত ছিলো রুপায়ন তাকে বুঝবে। সবটা শুনবে। কিন্তু উনার আচরণ বোধগম্য হলোনা আরোহীর। রুপায়নও পা উচিয়ে মাটতে বসে এক আঙ্গুল দিয়ে আরোহীর মাথা উঁচু করলো। আবারো পানি ভরা চোখে তাকালো আরোহী। কানের লতি থেকে গাল স্লাইড করলো রুপায়ন। মুখে হাসি টেনে বললো,

— বাহ্ আরু বাহ্! তোমাদের পরিবার কত নাটক জানে। কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলো তোমাকে? বিয়ের রাতে পালিয়ে এসেছে, এখন কি আর তাদের মাঝে তুলে দেয়া যায়? তাইতো নির্লজ্জের মতো লুকিয়ে রেখে একটা কবর দেখিয়েছিলো। আর এখন এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। কি বলোতো আরু, তোমাদের কু বুদ্ধিটা খাটেনি। কি ভেবেছিলে, আসলেই তোমায় মেনে নেওয়া হবে? হাহ্!

আরোহীকে ছিটকে দিয়ে উঠে দাড়ালো রুপায়ন। উঠেই বললো,

— সবাই কি করবে কি না করবে আমি জানিনা মিস আরোহী খন্দকার। তবে আমি…

— মিস নয় রুপায়ন শেখ! মিসেস! মিসেস আরোহী শেখ!

উঠে রুপায়নকে আটকে দিয়ে কথাটা বললো আরোহী।পেছন ঘুরে রাগী চোখ নিয়ে তাকালো রুপায়ন। একদিকে রাগ আর অন্যদিকে সত্যতা পেলো আরোহীর কথায়। তবে এটা নিছকিই নিজের অধিকার দাবী। তাচ্ছিল্য হাসলো রুপায়ন। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললো,

— ভালোই গেড়ে বসতে চাইছো তাহলে?

আরোহী হু হু করে হেঁসে দিলো। রুপায়ন বুঝলো না এতে হাসির কি আছে? এখনো হেসে চলেছে। নিজেকে থামিয়ে বললো আরোহী,

— কোন বাড়ির বউকে কখনো দেখেছেন স্বামী সংসার ছেড়ে চলে যেতে? সবাই নিজেকে গেড়েই নেয় রুপায়ন বাবু। কেউই তার নিজের শশুড় বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চায় না।

কথাগুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে আরোহীর হাত মুচড়ে ঘুড়িয়ে নিজের বুকের সাথে পিঠ ঠেকালো রুপায়ন। ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো আরোহী। এতটা জোড়ে ধরেছে যে চোখে পানি এসে পড়লো। রুপায়নের তীব্র গতিতে পড়া গরম নিশ্বাস আঁচছে পরছে আরোহীর গলায়। চিপের বেবি হেয়ারগুলো উড়ছে প্রচন্ড বেগে। রুপায়ন আরোহীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— খুব শীগ্রই এ বাড়ির পাঠ উঠাতে হবে তোমায়। আই সোয়ার, আই উইল নট বি স্টিনিজি ইন ইট!

বলে ছেড়ে দিলো আরোহীকে। দ্রুত পায়ে চলে গেলো ছাদ থেকে রুপায়ন। আরোহীর এখনো ব্যাথা করছে হাত। দ্রুত বরফ না দিয়ে সমস্যা হবে ভেবে সেও নিচে নেমে এলো। সন্ধ্যা ৮.৩০ বাজে। ড্রইংরুমে কাউকে দেখলো না আরোহী। বিয়ে বাড়ির সবই এখনো সাজানো গুছানো। আরোহী রান্নাঘর খুজতে লাগলো। একটু পরই পেয়ে গেলো রান্নাঘর। মিনিরা তখন রান্না করছে সবার জন্য। আরোহী সোজা ফ্রিজের কাছে চলে গেলো। রান্না মগ্ন থাকায় খেয়াল করেনি মনিরা। আরোহী ফ্রিজ খুললো। মনিরা আওয়াজ পেতেই তাকালো সেদিকে। এগিয়ে গিয়ে বললো,

— তা হ্যা গো মাইয়া! চোরের মতোন কি খুজিবার লাগছো? কিছুকি লাগবো?

আরোহী আটকালো গলায় বললো,

— প্ পানি! বরফ পানি।

আরোহীর কথায় মনিরা বিরক্ত হয়ে ধুরুম ধারাম ফ্রিজ থেকে বরফ বের করতে লাগলেন আর বললেন,

— আমার হইসে দুনিয়ার জ্বালা। এত্তো মাইষের লাইগা কাম করতাছি এহন বাইরের লোকের হন্যও কাম করোন লাগবো। এ্ এই নাও!

কোন মতে হাত ধরিয়ে চলে গেলেন মনিরা। গ্রামের মেয়ে, তাই কথা এরকম। যদিও অনেকদিন থেকেই কাজ করে, তবুও তিনি এখনো সভ্য ভাষা আয়ত্ত করতে পারেনি। আরোহী আস্তে ধরে ড্রইংরুমে গিয়ে বরফ হাতে লাগাতে লাগলো। তখনি উপর থেকে নেমে এলো রুপায়নের চাচী আর মেঘা। বলাবলি করছিলো,

— না না। আমার ভাবি হিসেবে একদমই বেমানান মেয়েটি। না আছে স্টাইল আর নাইবা আছে কোন মেনার্স।

— যা বলেছিস! আর তাছাড়াও ঠকবাজ ওরা। তোর খালুকে বলিস যেন বিদেয় করে মেয়েটাকে। একদম ফালতু। পুরো পরিবার মিলে এই শেখ বাড়িকে ঠকালো?

— দাড়াও!

মেঘার কথায় থামলো রুপায়নের চাচী মিনা শেখ। চোখ খেয়াল করে তাকাতেই দেখলো আরোহী ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে। তারা দুজনে তড়িঘড়ি নিচে নেমে আসলো। মেঘা ভ্রু নাচিয়ে বললো,

— তুমি এইখানে কেন? তোমার যা যা প্রয়োজন তুমি ওই স্টোররুমে পেয়ে যাবে। এখন থেকে যাও।

মেঘার কথা ঠিক কানে গেলো না আরোহীর।হাতটা একটু ফুলে উঠেছে। সে বরফ লাগাতে ব্যাস্ত। মিনা শেখ ঠোঁট টিপে বললেন,

— এই মে, হুশ কোথায় তোমার?

এতক্ষণে আরোহী তাকালো সবার দিকে। রুপায়নের মা,বাবা,চাচা সহ বাকি সবাই চলে এসেছে। আরোহী সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ধির গলায় বললো,

— আসলে আমার হাতে একটু লেগেছিলো। তাই বরফ..

— তা তুমি নিজের রুমে থেকে মনিরাকে দিয়ে আনাতে পারলে না? যাও এখান থেকে। তোমার খাবার পৌছে দেওয়া হবে।

— ও আমার সাথে আমার রুমেই থাকবে।

কথাটা বলতে বলতে নিচে নামলো রুপায়ন। সবাই চোখগুলো ডিমের মতো করে তাকিয়ে। আরোহী উঠে দাড়ালো। রুপায়নের কথায় আসফিয়া আনম বললেন,

— এসব কি বলছিস আব্বা? এমন করলে ডিবোর্স পেতে সমস্যা হবে!

— কে বললো আমি ডিবোর্স চাই?

রুপায়ন সবার সামনে আরোহীর হাত ধারে টানতে টানতে উপরে নিয়ে আসলো। আরোহীর সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। রুমে এনে ছুড়ে বিছানায় ফেলো দিলো আরোহীকে রুপায়ন।

#চলবে…

সূচনা পর্বের https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/390380002683778/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here