রুপ_আহরোণ পর্ব_৬

রুপ_আহরোণ পর্ব_৬
#লেখক:হৃদয় আহমেদ

আকাশে সোনালি রৌদ্দুর ছড়িয়ে পড়েছে। মেঘের ভিরেও কড়া রোধ খুব সকালেই জানালার ফাঁকে উকি দিচ্ছে। আরোহী চোখ মেলে তাকাতেই ঘুমন্ত রুপায়নকে দেখে। চোখ আটকে আসে আরোহীর। যতই দেখে ততোই দেখতে ইচ্ছে করে লোকটাকে। কারন, আজানা! আরোহী মাথার নিচে হাত রেখে তাকিয়ে রইলো রুপায়নের রুপময় মুখপানে। আরোহীর চোখ আরহণ করতে ব্যাস্ত রুপায়নের রুপ। #রুপ_আহরোণ যাকে বলে! ‘ আরোহী করছে আহরোণ ‘ ভাবতেই মুচকি হাসে আরোহী। উঠে বিছানায় বসে। বেলকনি দিয়ে আসা চিকচিকে রোদ তার মন কেড়ে নিচ্ছে। শীতকাল আসছে! হালকা শিত পড়ছে ইতিমধ্যে। চিকচিকে রোদ উত্তপ্ত তবে তা বেশি নয়। ‘ ইস আমার জিবনটা জদি এই লাল রঙা চিকচিকে রোধের মতো স্নিগ্ধ হতো? খুবকি খারাপ হতো? নিজের স্বামী সংসার নিয়ে কাটতো আমার বেলা। কারোরই যদি থাকতো না রাগ। তাহলে কি খুব খারাপ হতো? খুব দোষের হতো হয়তো। তাইতো আজ এ জিবনের অধিকারী আমি। দামহীন জিবন! কবে মিলবে মুক্তি আমার? নিজেকে নির্দোষ প্রমানিত করে সবার সামনে মাথা উঁচু করে বললো, আমি এসব কখনো করিইনি। আজ বিশ্বাস হলো তো? কে জানে আদেও কখনো আসবে কিনা এই শুভ মূহুর্ত। উপরওয়ালাই ভালো জানে। ‘ নিজমুখে বিরবির করে কথাগুলো বললো আরোহী। ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।

— বসে বসে কি বিরবির করছো শুনি?

আরোহী চমকে উঠলো। পেছনে ফিরতেই রুপায়ন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে নিলো। কেঁপে উঠলো আরোহী। এমনটা করবে আরোহীর জানা ছিলো না। আরোহী কানের কাছে এলো রুপায়ন। ফিসফিস করে বললো,

— কি দেখছিলে আমায়?

আবার চমক খেলো আরোহী। রুপায়ন তারমানে জেগে ছিলো। ভাবতেই আরোহী লজ্জায় মাটি ফাঁক করে ডুকে যেতে চাইছে। রুপায়ন আবার বললো,

— কি হলো। বলছো না যে?

— আপনি কিভাবে জানলেন?

বলে আরোহী উঠে যেতে চাইছিলো। রুপায়ন ধপ করে হাতটা ধরে কোলে বসিয়ে বুক পিঠে ঠেকালো। আরোহীর কয়েকশোগুন জোড়ে হার্টবিট বেরে গেলো। মৃদু কাঁপছে। রুপায়ন বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো। তার চুলের মাতালো ঘ্রাণ আজও বজায় রেখেছে আরোহী। চুলে নাক ডুকিয়ে বললো রুপায়ন,

— আগে বলো কি দেখছিলে?

এদিকে আরোহী কুঁচকে গেলো। পিঠ অনেকটা বাঁকিয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিলো আরোহী। তার বুকে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঝড় বয়ে যাচ্ছে রীতিমতো। হঠাৎই রুপায়ন আরোহীকে ছেড়ে বললো,

— কারন আমিও তোমাকেই দেখছিলাম। তুমি ওঠায় চোখ বুজে ফেলি।

বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো রুপায়ন। আরোহী তন্দা মেরে দাড়িয়ে রইলো কিয়ৎপরিমাণ সময়। মাটি ফাঁক করে ডুকে গেলে হয়তো লজ্জা থেকে কিছুটা বাচতো ও।

রুপায়ন বেরোতেই আরোহীও চলে গেলো ওয়াসরুমে। যাওয়ার আগে তাকায়নি আরোহী। লজ্জা নামক জিনিসটাই আটকিয়ে রেখেছিলো তাকে। আরোহীও বেড়িয়ে এলো। রুপায়ন চুল ঠিক করতে করতে বললো,

— আজ আমরা বেরোবো। রেডি হয়ে নাও।

রুপায়ন ওয়ারড্রব থেকে একটা নীল কালারের সালোয়ার কামিজ বের করে দিলো আরোহীকে। আরোহী বাধ্য মেয়ের মতো পড়ে নিলো সেটাই। দুজনে নিচে নেমে এলো। তাসফিয়া আনম ছাড়া কেউ এখনো নামেনি নিচে। তাসফিয়া রুপায়নকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— কোথাও বেরোচ্ছো?

রুপায়ন বললো,

— হ্যা। আসলে…

— কইফিওত চাইনি, শুধু জিজ্ঞেসই করেছি।

আরোহী আর রুপায়ন খেতে বসে। এরিমধ্য মেঘা সহ সকলে শুধু মিনা শেখ এখনো নামেনি নিচে। সবাই বসে পড়লো। রুপায়নের আব্বুও কিছুও জিজ্ঞেস করতেই তাসফিয়া আনম ইসারায় থামিয়ে দিলেন। আজ বেশ খুশি আসফিয়া আনম। মুখে হাসির ছটা লেগে আছে সবসময়। আরোহী আর রুপায়নকে দেখে সে বেশ বুঝতে পারলেন তারা কোথাও বেরোবে। তবুও সে কিছু বললো না। চুপচাপ টেবিলে বসে পড়লেন। তাসফিয়া শেখ রুপায়নের চাচাকে জিজ্ঞেস করলেন,

— মিনা কোথায়? এখনো আসেনি যে? শরীর টরির সব ঠিক আছে তো?

রুপায়নের চাচা বেশ বিরক্তি ভঙ্গিতে বললেন,

— কি বললো ভাবী? নিজে নিজের জিনিসপত্র কোথায় রাখে জানে না আবার আমার উপর চোটপাট করে। কি না কি হারিয়ে গেছে সে পুরো রুম ছারখাড় করে খুজছে। আমি পাত্তা না দিয়েই চলে আসলাম।

— সে কি কথা। পাত্তা দিলি না মানে? কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসও তো হতে পারে।

মৃদুল বাবুর কথায় বিরক্তি আর খরাপ লাগা দুটোই কাজ করতে লাগলো অভি শেখ এর মধ্যে। উনি উঠতে যাবেন তখনি সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এলো মিনা শেখ। মুখে তার অসম্ভব অসস্তি প্রকাশ পাচ্ছে। উনি ধরফরিয়ে ড্রইংরুম পেড়িয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসলেন। তাসফিয়া আনম বিচলিত হয়ে এগিয়ে গিয়ে ধরলেন তাকে। মিনা শেখ এর পুরো শরীর ঝুকছে যেন। ভূমিকম্প তাকেই গ্রাস করছে। মিনা শেখকে তাসফিয়া আনম আদরে বসিয়ে দিলেন কেদারায়। বললেন,

— কি হয়েছে? এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?

বলে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন তাসফিয়া। উনি ডকডক করে খেয়ে বলতে লাগলেন।

— আজ সকাল থেকে আমার গহনার পুরো বাক্সটাই খুজে পাচ্ছি না।

মিনা শেখের কথায় সবাই উঠে দাড়ালো। সাথে আরোহীও। ব্যতিক্রম হলো শুধু আসফিয়া আনমের বেলায়। উনি একটু দেরি করে উঠে আড়ালে হাসলেন। ন্যাকার মতো মুখ করে বললেন,

— চুরি? শেখ বাড়িতে চুরি? এমনও দিন আসলো তাহলে?

নিজের বোনকে থামিয়ে বলে উঠলেন তাসফিয়া শেখ,

— আহ্! তুই চুপ করবি? চুরিই যে হয়েছে তার কি প্রমান আছে? হতে পারে মিনা কোথাও রেখেছে। মিনা একবার মনে করো।

— আমার খুব মনে আছে লকারেই ছিলো। আজ আমার একটু বেরোনোর দরকার ছিলো তাই বের করেতে গিয়েছিলাম। দেখলাম লকার পুরো ফাঁকা। কোথাও কোন ছিটেফোটা নেই।

বলে কেঁদে উঠলেন মিনা শেখ। আসফিয়া বেশ বিরক্ত তার নিজের বোনের প্রতি। আজকাল বেশি ভাব দেখাচ্ছে। গিন্নি হওয়ার সখ। ন্যাকা। যে কিনা একদিন আমার পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলো সে আমায় ধমকায়? সব হয়তো ভুলে গেছে। কিন্তু আমিতো ভুলিনি। আবারো রক্তিম ক্ষতেতো মুড়বো আমি তোমাকে তাসফিয়া আনম। আর সেটা খুব শিগ্রি।

এদিকে সবাই অবাক। আজ পর্যন্ত এমন কান্ড কখনো ঘটেনি এ বাড়িতে। তবে আজ? অভি শেখ চেয়ারের হাতোল শক্ত করে ধরলো। রুপায়ন এগিয়ে গিয়ে বললেন,

— চাচী তুমি ঠিক দেখেছো?

মিনা শেখ এবার বিরক্ত হলেন।রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন,

— আমি কি মিথ্যা বলছি রুপায়ন?

নিশ্চুপ হয়ে গেলো রুপায়ন। সবাই মিলে মিনার রুমে গেলো। চিরুনি তল্লাসি দিয়েও সোনার এক টুকরোও কারো নজরে আসলো না। সবাই বলাবলি করতে লাগলো গেলো কোথায় গেলো তাহলে। রুপায়ন গার্ডের কাছে গেলো সবটা শোনার জন্য। রুম থেকে সবাই দোতলার পাতানো সোফা, বলতে পারেন একটা ছোটোখাটো ড্রইংরুম। শুধু সে রুমে আছে আসফিয়া আর আরোহী। আরোহীও যেতে চলেছিলো। পেছন থেকে আটকে দিলেন আসফিয়া। বললেন,

— এসব তুমি করেছো তাইনা আরোহী? কোথায় রেখেছো এসব?

আরোহীর পৃথিবী কেঁপে উঠলো কথাটায়। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। মানলাম উনি আমায় পছন্দ করেননা তাই বলে চুরির অপবাদ? আরোহী আপাদমস্তক দু পা পিছিয়ে গেলো। আটকালো গলায় বললো,

— আ্ আমি..?

তক্ষুনি আরোহীর হাত শক্ত করে ধরে নিলো আসফিয়া আনম। একটু সময় চাইছিলেন উনি। একা অবস্থায়! পেয়ে গেছেন। তাই আরোহীকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো সবার সামনে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বললেন আসফিয়া আনম,

— এই মেয়ে চুরি করেছে মিনার গহনা।

রুপায়ন সেখানে নেই। আরোহী আবাক চাউনি নিয়ে তাকালো আসফিয়া আনমের দিকে। সবাই অবাক হলো।তাসফিয়া আনম সহ মৃদুল বাবু এগিয়ে এসে বললেন,

— এসব কি বলছো আসফি? ওনাদের পুরো পরিবার এসে মাফ চেয়ে গেছেন কালকে। আজ আবার এসব কি? তাস তুমি তোমার বোনকে এসব পাগলামি করতে বন্ধ করো।

আসফিয়া আনম চেয়াল খিচে মুখের উপর জবাব দিলেন,

— আপনার মনে হচ্ছে আমি মিথ্যে বলছি? এই মেয়ে একটু আগে তোমরা বেরিয়ে আসার পর কি বললো জানেন?

মিনা শেখ বললেন,

— চাইনা শুনতে। আসফিয়া আপু আরোহীকে এরকম মেয়ে বলেই মনে হয়নি আমার কখনো। ওরা শুধু ঠকবাজ ব্যাস এতেই আমার সমস্যা।

তাসফিয়া শেখ বললেন,

— তাইতো। এসব কি বলছিস তাসফি?

আসফিয়া আনম আরো জোরে বললেন,

— আজ আমাকে কথাও শোনাতে ভুলছে না কেউ। এই মদমাস মেয়েটা আমায় একলাঘরে বললো, সব শেষ করে দিয়েই সে দম নেমে। পুরো পরিবার ছারখার করে দিবে। কেবল তো গহনা, এখনো পুরো ফিল্ম বাকি।

আরোহীর চোখে পানি ভরে এলো। আরোহী বললো,

— আমি এসব কখন বললাম? কেন মিথ্যা কথাগুলো বলছেন?

— তাহলে রুম সার্চ করা হোক। তাহলেই প্রমান হবে তুমি করেছো কি করোনি।

আরোহীকে টেনে নিয়ে গেলেন রুপায়নের ঘরে আসফিয়া। হাত ছেড়ে পুরো রুম খুজতে লাগলেন। সবাই এলো সেখানে। আসফিয়া সবার শেষে একটা জায়গা থেকে শাড়ি মোড়ানো একটা পুটলি থেকে গহনাটা বাক্সটা বের করে সবার সামনে দেখিয়ে বললেন,

— দেখলে?

গহনার বাক্সটা সেই খারাপ হওয়া শাড়িটায় পেচ দেয়া ছিলো। সবার মাথা ঘুরে গেলো। ঘৃনা দৃষ্টি ছুড়লো আরোহীর দিকে। আরোহী বরংবার বলতে লাগলো সে এগুলো করেই নি। কেউ শুনলো না। মিনা শেখ গহনার বাক্সটা হাতে নিয়ে কড়া চোখে আরোহীকে দেখে চলে গেলেন ওখান থেকে। সাথে অভি শেখও। আসফিয়া আনমের মুখে স্বস্তির হাসি। মৃদুল শেখ কিছু বললেন না। চলে গেলেন। রইলো শুধু মেঘা, তাসফিয়া আর আসফিয়া আনম। আসফিয়া আনম গলা উঁচু করে বললেন,

— হলোতো বিশ্বাস? এই মেয়েটা চোর একটা।

আরোহী চোখের পানি মুছে বললো,

— আমি জানি না এগুলো কোথ থেকে আসলো। আমি চুরি করিনি বিশ্বাস করুন।

তাসফিয়া শেখ বললেন,

— তাহলে এসব এখানে আসলো কিভাবে আরোহী। তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আমাদের কিংবা রুপায়নকে বলতে পারতে। তাই বলে চুরি?

মেঘা ঠেস দিয়ে বললো,

— আমিতো জানতাম এরকম মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েরা এরকমই হয়। যেই বড়লোক বাড়ির টাকা দেখেছে অমনি হাত মেরেছে। চোর ছোকরা মেয়ে কোথাকার।

আরোহীর দিকে তাসফিয়া আনম না তাকিয়েই চলে গেলেন। যাওয়ার আগে শুধু ‘ ছিহ্’ শব্দটা উচ্চারন করলেন উনি। মেঘাও চলে গেলো। আরোহী কান্নায় ভেঙে পড়লো। মাটিতে ধপাস করে বসে দেয়া ঠেস লাগালো। মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো সে। আসফিয়া আনম ঝুঁকে আরোহীকে বললেন,

— তোমায় বিদেয় না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই আরোহী। শান্তি নেই!

আসফিয়া আনম চলে গেলেন। বাইরে থেকে রুপায়ন দ্রততার সাথে রুমে ডুকলো। আরোহীকে বললো,

— ক্ কি হয়েছে আরু? বাইরে সবাই…

— চোর আমি। চুরি করেছি আপনার চাচীর গহনা। চোর আমি!

আরোহীর আর্তনাদে পুরো রুম থমকে গেলো।

__________🍁

” কাজ কমপ্লিট। এবার আমার পাওনা নিজের ছেলেকে এনে দিন আপনি। কুইকলি! ”

#চলবে…

পর্ব ৬ এর লিংক,
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/393150765740035/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here