ব্রোকেন হার্ট পর্ব-১৭

0
1146

#ব্রোকেন_হার্ট
লেখা : মান্নাত মিম

|১৭|
“প্রথমদিন সি-বীচে যখন কান্না করছিলাম, তখন কীভাবে আমাকে দেখলেন? আশেপাশেই ছিলেন না কি?”

“উহুম, তোমাকে নজরে নজরে রেখেছিলাম। সেই প্রথমদিন থেকেই। যেদিন আমাকে দেখতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলে।”

এপর্যায়ে এসে কথাগুলো বলতে বলতে এন্ডারসন হেসে ফেলল ফিক করে। কতোবড় শয়তান ছেলে! আমি যে তাকে দেখতে দেখতে পড়ে গিয়েছিলাম সেটাও খেয়াল করেছে। ধুরন্ধর একটা! গাঢ় নজরে লজ্জাহীন হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম, সুন্দর হাসির সুপুরুষকে কিংবা আমার প্রেমিক পুরুষ!

“কী হলো কোথায় হারালে?”

আমার মুখের সামনে হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করল এন্ডারসন। ফের হাসতে হাসতে বলে উঠল,

“হারাবেই তো সামনে এতো হ্যান্ডসাম ছেলে বসে থাকলে।”

ফাজলামো আমার সাথে! দেখাচ্ছি মজা। সামনে থাকা টি-টেবিলের ওপর থাকা জগ নিয়ে সবটুকু ঢেলে দিলাম তার মাথায়।

“ইমিইইই!”

“কীইইই!”

আমি-ও একই তালে সাড়া দিলাম

“এটা কী করলে?”

ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম,

“কী করলাম আবার?”

“মেয়ে বজ্জাত!”

“এই, এই একদম উলটাপালটা বলবেন না।”

“কী করবে শুনি?”

“কী করব তাই না?”

বলেই সোফার কুশন ছুঁড়ে মারলাম তার দিকে। সেটা ক্যাচ করে ফেলল। রাগ হলো মেজাজ হলো উত্তপ্ত। হার মানব না বিধায় আরেকটা ছুঁড়ে মারলাম। আগেরটা হাতে থাকায় তৎক্ষনাৎ পরেরটা ধরতে পারল না। এবার সে-ও আমার দিকে কুশন ছুঁড়ে মারল। ছুটে ছুটে দু’জনের এই ছুঁড়াছুঁড়ি বেখায়েলে আমার হাত লেগে গিয়ে সাউন্ড বক্সের গান প্লে হয়ে গেল। অথচ তখন আমরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ছুটছি। অবশ্য আমি ছুটছি আমার পেছনে পেছনে এন্ডারসন।

ওপরে এসে করিডোরের মাথায় খপ করে ধরে ফেলল এন্ডারসন। ধরেই কাঁধে তুলে নিলো। এগিয়ে গিয়ে তার রুমের বিছানায় ছুঁড়ে মারল। সে-ও ধপ করে বিছানায় এসে পড়ে আমায় গায়ে স্পর্শকাতর সুড়সুড়ি দিতে লাগল। আর আমি খিলখিলয়ে হেসে উঠতে লাগলাম। একসময় আমার খিলখিলিয়ে হাসি বন্ধ হয়ে গেল তার ওষ্ঠদ্বারা। নিচ থেকে গানের সুর ভেসে আসছে আর আমরা ভেসে যাচ্ছি সেই গানের মূর্ছনায় অন্য জগতে। সেটা ভালোবাসার জগত!

“হার্ট বিটস ফাস্ট কালারস এন্ড প্রমিসেস
হাও টু বি ব্রেভ?
হাও ক্যান আই লভ হোয়েন আ’ম এফ্রেইড টু ফল?
বাট ওয়াচিং ইউ স্ট্যান্ড এলোন
অল অফ মাই ডাউট সাডেনলি গোস অ্যাওয়ে সামহাউ।

ওয়ান স্টেপ ক্লোজার
আই হ্যাভ ডাইড এভরিডে ওয়েটিং ফর ইউ
ডারলিং ডোন্ট বি এফ্রেইড
আই হ্যাভ লাভড ইউ ফর অ্যা থাউজ্যান্ড ইয়ারস
আই ওয়িল লভ ইউ ফর অ্যা থাউজ্যান্ড মোর…”
______

সি-বীচে আজ আমার সাথে দেখা করতে ভেরোনিকার আগমন যা আমাকে খুবই অবাক করেছে। কারণ তার হাসিখুশি করা উৎফুল্লতা ঘেরা মুখশ্রী। অবশ্য তার সাথে ফোনে কথা হলেও আজকাল দেখা হয়ে না কারোর সাথেই। ক্রিশ্চানের সাথে সেদিনের পর থেকে না দেখা আর না কথা হয়। উপরন্তু ভার্সিটি যাওয়া হয় না বলে আরো তাদের খোঁজ নেই। হাতের কাজ সেরে এগিয়ে গেলাম ভেরোনিকার দিকে।

“কী ব্যাপার, হুম? ম্যাডামের আজ এত আনন্দ ও সৌন্দর্যের বহর?”

আমার প্রশ্নে লাজুক হয়ে উত্তরে ভেরোনিকা বলল,

“ক্রিশ্চানকে ডেটে যাওয়ার কথা বলেছি, সে রাজি হয়েছে।”

কথাটায় যতটা না আনন্দিত পাওয়ার কথা ততটা চিন্তারা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্রিশ্চান আমাকে ভুলে গিয়ে যদি ভেরোনিকাকে আপন করতে পারে তাও আবার সত্যি সত্যি ভালোবেসে তাহলে তো খুশি হব। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কী সে সত্যিই ভালোবাসতে পারবে? না কি মিথ্যে ভালোবাসায় ভেরোনিকাকে পস্তাতে হবে? অন্তারালের কথাগুলো আর সমুখে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দর, কোমল, নিষ্পাপ হাসিমুখ করে থাকা ভেরোনিকার প্রকাশ্যে এলো না। তবে বলার মতো শুধু বললাম,

“যাই করো না কেন বুঝে শুনে করো। তবে চিন্তা করো না তোমার পাশে আছি।”

তাকে বসিয়ে রেখে ফিশ ফ্রাই নিয়ে টেবিলে রাখলাম। দু’জনে খেতে খেতে আলাপ করার একপর্যায়ে ভেরোনিকা জিজ্ঞেস করল,

“তোমার কতদূর এন্ডারসনের সাথে?”

“এই তো চলছে।”

“তার ফিয়ন্সের কী করল?”

“ক্যাপ্রিনার বয়ফ্রেন্ড আছে বর্তমানে। আগে ছিল না বিধায় এন্ডারসনের সাথে এনগেজমেন্ট করেছে। কিন্তু ভালোবাসেনি তাকে। তা এন্ডারসন এনগেজমেন্ট ভেঙে ফেলবে তার ড্যাডকে বলে।”

“সবই বুঝলাম। যদি এন্ডারসনের ড্যাড না মেনে নেন তোমাদের সম্পর্ক?”

এই কথাতে আমি কিছু বলার মতো খোঁজে পেলাম না। যদিও আমরা দু’জন অর্থাৎ এন্ডারসন আর আমি অবগত তার ড্যাড যে মানবেন না। তবুও বুঝিয়ে বললে মানতেও তো পারেন। শিওরিটি নেই এসবের। মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লাম মুহুর্তের মাঝে। চোখ দিয়ে জলধারা বইতে লাগল। ভালোবাসা আমাদের বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে পিছানোর মতো অবকাশ নেই। সেখানে এন্ডারসনের ড্যাড না মানলে? আসলেই তো প্রশ্ন রয়ে যায়। এখানে একটি কারণ নয় যে একটি কারণ দেখে পিছপা হয়ে যাবেন তিনি। কারণ দুটি, একে তো তিনি ভালোবাসা বিদ্বেষী দ্বিতীয়ত তাদের স্ট্যাটাস। সেটা মিলবে না কখনোই। এটাই একবার বুঝাতে চেয়েছিল ক্রিশ্চান। অথচ প্রেমত্তে পাগলপারা হয়ে এখন জলে ডুবে আছি। সাঁতরে ফিরে আসার উপায় নেই। আমার কাঁধে হাত দিয়ে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করল ভেরোনিকা,

“চিন্তা করো না। আচ্ছা, এন্ডারসনের সাথে এ-নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তোমাদের মাঝে?”

মাথা নেড়ে না বুঝালাম। হয়নি তো তার সাথে এবিষয়ে আলোচনা। অথচ প্রতিদিন তার সাথে দেখাসাক্ষাৎ করছি আমি তার রেস্ট হাউসে গিয়ে।

“এন্ডারসন তো বুদ্ধিমান তাহলে এবিষয়টা স্কিপ করে গেল কেন?”

মুহূর্তেই আমার মুখ থমথমে ভাব ধারণ করল। মাথায় যত উদ্ভট চিন্তারা ঘুরপাক খেতে লাগল। এন্ডারসন কি কোনোভাবে আমাকে চিট করার পরিকল্পনা করছে না তো? না, না সে তো আমায় ভালোবাসে। আমি তার চোখে আমাকে নিয়ে অগণিত অনুভূতির পশরা সাজানো দেখেছি। ভালোবাসলে পাশে থাকলে তার ড্যাডকে ঠিক বুঝিয়ে নেব দু’জনে মিলে। আশ্বাস দিলাম নিজেকে নিজেই। আদৌও সেই আশ্বাস ধুপে টিকবে না কি বাতাসে ওড়ে যাবে কেউই অবগত নই। কারণ ভালোবাসা এমনই মারাত্মক অনুভূতির নাম।
______

“চলো আজ কোথাও ঘুরে আসি।”

“কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছ?”

এন্ডারসনের সাথে সম্পর্কের উন্নতির প্রভাবে ডাকের উন্নতি হয়েছে। এই যে আপনি আপমি সম্মোধন এখন তুমি তুমি করে চলছে। রেস্ট হাউসে প্রায় সকালে দেখা করে নিজেদের গন্তব্যে যাই। অর্থাৎ আমি কাজে আর সে ভার্সিটি নয়তো অফিসে। ওহ্, সে এখন অফিসে বসেছে। অবশ্য আমার কথাতে। নাহয় যে অলস ছেলে৷ তার না কি ঘুরতে-টুরতে ভালো লাগে। আমি-ও বুঝালাম, সেটা সবারই ভালো লাগে। আমার-ও তো মন চায়, ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে, সময় কাটাতে। তবুও জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হয়। অবশেষে আমি-ই জয়ী হই। হার মেনে অফিসে বসে সে। তবে আজ সাপ্তাহিক ছুটি বিধায় ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান। আর আমার বরাবরের মতোই সি-বীচ ঘুরাঘুরি করার আগ্রহ। অথচ সি-বীচেই কাজ করি, একটুি বিরক্তবোধ হই না। উলটো ভালো লাগে সকলের উল্লাস করতে আনন্দে মেতে থাকতে দেখে। কিন্তু কাজের জন্য পারি না, গ্রাহক থাকে প্রচুর।

বেরিয়ে পড়েছি আমরা। এন্ডারসনের গাড়িতে সাথে তো আছেই লং ড্রাইভ। আমার খুশি দেখে কে। তারউপর পছন্দের মানুষের সাথে। গাড়ি ড্রাইভ করা সুদর্শন পুরুষটাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,

“কী ব্যাপার হাসছ কেন?”

“একটা জিনিস মনে পড়ে গেল।”

“তা বিষয়টা কি আমাকে নিয়ে?”

“হুম।”

“সত্যিই! বলো তো শুনি।”

“একদিন মাত্রাতিরিক্ত ড্রিংক করেছিলে ক্লাবে মনে আছে?”

মাথা নেড়ে সায় দিলাম। মনে তো আছেই, কী কী কাণ্ড ঘটিয়েছিলাম।

“গাড়িতে করে তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলাম সেদিন প্রথম। তুমি কী আদুরে গলায় আদর চাইলে!”

লজ্জায় হতভম্ব আমি অন্যদিকে মুখ ফিরে তখন সে হো হো করে হাসতে ব্যস্ত। সারাটা পথ, সমুদ্রে জলে উল্লাসের চিৎকারে গা ভেজানো ফেরার পথে জানিও না সামনে আমাদের জন্য বিরাটকায় ঝড়ের তাণ্ডব, যা আমাদের সম্পর্ক ভাঙার জন্য তৈরি হচ্ছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here