ফেইরিটেল পর্ব-৯

0
1817

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–9

ক্ষণে ক্ষণে, থেমে থেমে মৃদ্যু শব্দে মেঘমালা কান্নার সুর তুলছে। আজ সম্ভবত অমাবস্যা। চাঁদের টিকিখানারও দেখা মিলছে না। আকাশ ভরা মেঘের দাপাদাপির আড়ালে ঢাকা পরে গেছে মেঘ। তবে প্রকৃতির ভাব-সাব দেখে ইমানের মন বলছে আজ বৃষ্টি নামবে।ঝড় হবে। কোমল ঠাণ্ডা বাতাসে গা জুড়িয়ে যাচ্ছে। চোখ বুজে বাতাস উপভোগ করতে মন চাচ্ছে। ছাদে থাকার দরুণ একদম সতেজ হাওয়া কোন বাঁধা ছাড়াই গায়ে এসে মেখে যাচ্ছে৷ কিন্তু বাতাসবিলাস করা এমুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সে বিরাট বড় মসিবতে ফেঁসে গেছে৷ ভ্রুকুটি এক করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। আপাতত এই পাশটায় কেউ নেই। ছাদে শূন্যতা বিরাজমান। সবাই খাওয়ার জন্য ছাদের অন্যপাশে অবস্থান করছে৷ হুহু বাতাসের মধ্যে আচমকা কানে আসলো, ” আমার ড্যান্স করতে মন চাচ্ছে।”

কথাটা বোকাবতী উরফ মিরা বলেছে। ইমানের চোখ অক্ষীগোলক থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। মেয়েটার কী হয়েছে সে বুঝে পাচ্ছে না। একবার মনে হলে, সি ইজ ড্রাংক৷ পরক্ষণেই তার মনে হতে লাগলো, মিরা তো প্রচুর রক্ষণশীল। যে মেয়ে ব্যাচেলর পার্টিতে শাড়ি পড়ে আসে, সে নিশ্চয়ই ম-দ খাবে না। আবার খাওয়ার পসিবিলিটিও আছে। আজ প্রান্ত ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা ভাইয়ার মিঙ্গেল হওয়া সেলিবেট করার জন্য বোতল খুলবে। বোতলগুলোর পাশেই চকলেট ছিল।তবে এই প্রোগ্রাম আরো রাত গভীর হওয়ার পর থেকে শুরু করার কথা ছিল৷ মিরার কর্ম-কারখানা তার ভালো লাগছে না। সে বিচলিত হয়ে বলে, আর ইউ ওকে, মিরা? ইজ এনিথিং রঙ?

তার প্রশ্নের উত্তর ভেসে আসলো, কিছুটা এমন ভাবে, “ওই খাম্বা ওই তুই এতো ইংলিশ ফটফট করিস ক্যান? খবরদার ইংলিশে কথা বলবি না৷ সর সামনে থেকে আমি নাচব৷ বাংলা আমার মাতৃভাষা। বাংলায় কথা বল হাতির বাচ্চা।”

— “খাম্বা কে?”

–“তুই! আমার পথ আটকাচ্ছিস। কত বড় বুকের পাটা রাজকন্যার রাস্তা আটকায়। তোকে শাস্তি দিব আমি। তোর গর্দান কেটে নেওয়া হবে।”

ইমান একহাতে মেয়েটাকে শক্ত করে ধরেছিল।কারণ সি ওয়াস আনস্ট্যাবেল৷ দাঁড়িয়ে থাকার ও শক্তি নেই মেয়েটার। অথচ দেখো, তাকে কীনা শাস্তি দিবে। হাস্যকর। আরেক হাতে ছিল জলন্ত সিগারেট। সে সিগারেট ফেলে দিল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল, কারো কাছে সাহায্য চাবে কীনা? মিরাকে চেয়ারে বসিয়ে রেখে, সোনালী আপুকে কল লাগায়৷ আপু ফোন ধরতে বেশ সময় নিল।

আপুর সঙ্গে কথা বলতে সে একটু দূরে সরে যেতেই আরেক ঘটনা ঘটলো। মিরা ঢুলু ঢুলু পায়ে হাঁটা ধরল আর তার আপনমনে বিড়বিড়িয়ে কথা বলেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে গান-টান গাইছে। দূর থেকে তাকে দেখলে যে কেউ ভাবে নিবে সে সুখে আত্মহারা। মেয়েটা আঁচল নাড়াচ্ছে। আঁচল নাড়িয়ে প্রজাপতি সেজে উড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে৷ ইমান দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। এই একটা মেয়েকে তার দেখতে বড্ড ভালো লাগে। তার বোকামি গুলো তাকে আনন্দ দেয়। রাগে নাক ফুলিয়ে উল্টা-পাল্টা কথাগুলো শুনলে মনে হয় পৃথিবীতে সুখ বলে এখনো কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে৷

চোখের পলকে আরেকটা ঘটনার সম্মুখীন হলো সে। মিরা ছাদে হাঁটছিল। আচমকা কোথা থেকে যেন সেদিনের গায়ে পড়া স্বভাবের ছেলেটা হুড়মুড়িয়ে মিরার দিকে ছুটে আসলো। ছেলেটাকে দেখামাত্র তার আনন্দ মুহুর্তে রাগে রুপান্তর হয়। চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে থেকে সামনে পা বাড়ায়৷

ইমান যখন রাকিবের সামনে গিয়ে, একদম মুখের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, বেচারা সামান্য ভড়কে যায়। সে এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যেন মিরাকে আড়াল করতে চাইছে। কিন্তু কার কাছ থেকে আড়াল করবে সে? আর কেন-ই বা?

রাকিব সৌজন্যমূলক হেসে বলে, “হ্যালো ভাইয়া৷”

সে গম্ভীর গলায় বলে, “হাই।”

এমনই সময় মিরা তার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বলে, “এই খাম্বা তুই এখানে কী করিস? তোর না গর্দান কেটে ফেলার কথা?”

ইমান তার কথায় বিরক্ত হলো। মিরা ঢুলু ঢুলু করে দাঁড়িয়ে আছে। যখন-তখন রাকিবের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে৷ হলোও তাই মেয়েটা বোধহয় সামনে আগাতে চাইছে, মুক্ত প্রজাপতির মতো যে উড়তে চায়, সে কী আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে? কোন পাহাড়-পর্বত,খাম্বাও মুক্ত-স্বাধীন প্রজাপতিকে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না৷
মেয়েটা পুরোপুরি সেন্সে না থাকার কারণে, ছাদের জমিন ঘেষে ফেলে রাখা তারের সঙ্গে হোচট খেয়ে আছাড় খেয়ে পড়ে যেতে ধরলে ইমান তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। তবে, ইমানের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা মিরার আরেক শুভাকাঙ্ক্ষী তার ডান বাহু বেশ শক্ত করে ধরে, ফলে শুভাকাঙ্ক্ষীকে সম্মুখীন হতে হয় ইমানের রাগান্বিত চোখ রাঙ্গানির। চোখ দিয়েই যেন রাকিবকে সে ভষ্ম করে দিবে।

রাকিব কী করবে বুঝে উঠার আগেই ইমান তাকে চরম ভাবে অপমান করে। তার হাতটা নিজ থেকে মিরার বাহু থেকে প্রায় এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে কটমট করে বলে, “আমি আছি তো ওর সাথে। আমি থাকলে আর কারো প্রয়োজন নেই।”

কথা শুনে রাকিব বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে স্পষ্ট ইমানের ভাব-ভঙ্গিতে তুমুল রাগের বহিঃপ্রকাশ পাচ্ছে। আদৌতে রেগে যাবার ন্যায় কী কিছু সে করেছে? হয়তোবা করেছে।

ইমান বলে, ” কাইন্ডলি লিভ আস এলোন।”

রাকিবের কথাটা ভালো লাগলো না। মানে যেচে পড়ে হুদা ইনসাল্ট করছে। অন্য কেউ হলে সেও দু-একটি কথা শোনাতে৷ কিন্তু কেন যেন তার মিরাকে খুব ভালো লাগে। প্রথম দেখাতেই মেয়েটার আচরণ তাকে মুগ্ধ করেছে৷ তাই ঝামেলা না বাধিয়ে সে নিচে নেমে যায়।

মিরা তখনো অবচেতন অবস্থাতেই আছে। আচমকা সে ছাদের জমিনে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে বলে, “রাজকন্যার পা ব্যাথা করছে। এই প্রজা জলদি গিয়ে পালকি আনো। আমি পালকি করেই রাজসভায় যাব।”

তাকে বসতে দেখে সে খানিকটা চমকে উঠে৷ মিরা যে ভুলক্রমে ড্রাংক তা দিব্যি বোঝা যাচ্ছে। সোনালী আপুর সঙ্গে কথা হয়েছে। ইরা নাকী মুভি দেখতে দেখতে নিচে আপুর ননদের সঙ্গে ঘুমিয়ে গেছে। আপুও গল্প করছে নিচে। এই অবস্থায় মিরাকে নিচে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ব্যাচেলর পার্টি হলেও কী হবে? প্রায় অনেক মুরুব্বিই নিচে আছেন। মিরাকে এভাবে দেখলে নিশ্চয়ই খারাপ মেয়ে ভাববে। কাজেই সোনালী আপুর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মিরাকে আপাতত গাড়িতে নিয়ে যাবে। ফযরের নামাজের সময় বড় আব্বু বের হবেন। ওই ফাঁকে তারা সবাই বাসায় ঢুকে পড়বে। মামলা ডিসমিস।

সে সামান্য ঝুঁকে বলে, “মিরা উঠো, আমরা চলে যাব এখন। উঠো দাড়াও।”

মিরা তাকে ধমকে বলে, “তুই আমাকে আদেশ করার কে রে? আমি এই রাজ্যের একমাত্র রাজকন্যা। বলেছি না আমার পা ব্যাথা। পালকির ব্যবস্থা কর। সামান্য প্রজা হয়েও রাজকন্যাকে হুকুম দেয়। হুকুম দেওয়ার ক্ষমতা কেবল আমার। হুহ। ”

ইমান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো। এই মাতালকে নিয়ে সে কী করবে? ছাদের ওইদিকে দৃষ্টি দিল। এখনো খাওয়া শেষ হয়নি ভাইয়ার ফ্রেন্ডদের। তবে বৃষ্টি নামবে। ঝড়ো বাতাসে মিরার অবাধ্য চুলগুলো উড়াউড়ি করে মুখে আছড়ে পড়ছে। কেমন অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় ইমানের মন দিয়ে। বাতাসে সুমিষ্ট ঘ্রাণ পাচ্ছে সে।

সে ভেবে দেখলো, আরোও সময় ব্যয় করলে, তাদের অনেকেই বোতল খোলার জন্য এদিকে আসবে। তারা আসার আগেই তাকে যেতে হবে। উপায় না পেয়ে সে, তড়িঘড়ি করে মিরাকে নিজের পাজকোলে তুলে নিল। মিরা চিৎকার দিবে তার আগেই ইমান বুদ্ধি ঘাটিয়ে বলে, “হার হাইনেস, পালকি রেডি। আপনি অনুমতি দিলে পালকি পথে যাত্রা শুরু করি?”

মিরা পালকির কথা শুনে খুশিতে গদগদ করে তার গলায় নিজের দুই হাত জড়িয়ে ধরে বলে, “শুরু করো হে প্রজা। অনুমতি দিলাম।”

ইমান মজা করে বলে, “ধন্যবাদ। আপনার যাত্রা শুভ হোক।”

তাকে কোলে করে নিয়ে লিফট দিয়ে ছাদ থেকে গ্যারেজে নামে। রাত আড়াইটা হওয়ার সুবাদে গ্যারেজ ফাঁকা। দারোয়ান রুমে ঘুমাচ্ছে। তবে একটা এনার্জি বাল্ব জ্বলছে। সে গাড়ির লক খুলে পেছনের সীটে মিরাকে নিয়ে বসে দরজা আটকে দিল। ভীষণ ভয় করছিল তার। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় যেন কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছে সে মিরাকে!

গাড়ির পকেট থেকে পানির বোতল বের করে সে পানি পান করল। তাকে দেখে মিরা বলে, “প্রজা, আমিও পানি পান করব৷”

ইমানের ভারী মন খারাপ হলো। মিরা শেষ-মেশ তাকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে প্রজা বানিয়ে দিল? কি হত তাকে নিজের শেহজাদা বানিয়ে দিলে? মাতলামোতেই তাকে রাজা বানিয়ে আদেশ দিত, রাজকন্যা তার রাজার বুকে আরাম করে ঘুমুতে চায়!

মিরার হাতে পানির বোতল দিল, সে পানি খেতে গিয়ে অর্ধেক পানি নিজের গায়ে ফেলে দিল৷ সে দ্রুত ভেজা অংশ থেকে পানি ঝরানোর জন্য নিজের আঁচল সরাতে লেগে, ইমান ঘাবড়ে যায়। সে বাঁধা দিয়ে বলে, কিছু করো না দোহাই লাগে৷

মিরা অচেতন অবস্থাতে বাধা পাওয়ার পর থেমে গিয়ে বলে, আমার ঘুম পাচ্ছে৷

ইমান যে আকাশের চাঁদ হাতে পেল। চোখে মুখে স্বস্তির ছাপ। দ্রুত সে স্মিত হেসে বলে, তাহলে ঘুমিয়ে পড়।

সে মাথা চুলকে বলে উঠে, “আমি তো রাজসভায় পৌছায়নি এখনো। ঘুমিয়ে গেলে যদি শক্রদল আমর উপর আক্রমণ করে?”

ইমানের হাসি পেয়ে গেল। ছোট্ট রাজকন্যার কত চিন্তা! বাপরে! নিজেকে এবারে সত্যি সত্যি রুপকথার গল্পের অংশ মনে হচ্ছে। এখুনি কোন দৈত্য এসে হামলা করবে রাজকন্যার উপর! রাজকন্যাকে সিন্দুকে করে সমুদ্রে ফেলে দিবে। রাজা আর কন্যাকে খুঁজে বের করার উপহার হিসেবে নিজের কন্যায় সঙ্গে বিবাব দিয়ে রাজ্য সপে দিবেন। আর সে রাজকন্যাকে বিয়ে করার লোভে বীরবেশে হন্ন হয়ে উদ্ধার করতে ময়দানে নামবে।

সে বলে উঠে, “রাজকন্যা আপনার সুরক্ষার জন্য আমি মনোনীত হয়েছি৷ আপনি ঘুমান। আমি আপনাকে পাহাড়া দিব।”

মিরা উসখুস করতে লাগলো। আশপাশে হাত ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো। তখনি অসাবধানতার কারনে তার আচল সামান্য সরে যায়। ইমান লক্ষ করে, তার গলার ডান পাশে পর পর দুটো আদুরে তিল বিদ্যমান। একটা তিল সাইজে একটু বড়, আর অপরটা ছোট। তার হাত বুলাতে ইচ্ছা করে ঐখানটায়। কিন্তু নিজেকে সে যথাসম্ভব সংযত করে৷ এই মূহুর্তে একা একটা মেয়েকে নিয়ে থাকার সময় তার আদিম পুরুষসত্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে যায়৷ কিন্তু ওই যে শিক্ষিত মনুষ্যত্ববোধ আর বিবেক তার আদিম পুরুষসত্তাকে দাবিয়ে রাখছে৷

মিরা আচমকা তার কোলে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে৷ ইমান হাফ ছেড়ে বাচলো। সে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগে। যেন আরাম পেয়্ব দ্রুত ঘুমিয়ে যায় মেয়েটা৷ এসি এক ফাঁকে অন করে দেয়। শীতল গাড়িতে মিনিট দশেক নীরবতা হরতাল চালালো। ইমান ভেবেই নিল, রুপকথা থেকে বাস্তবে আসার সময় ঘনিয়ে এসেছে। অর্থাৎ সে ঘুমিয়ে গেছে৷ কিন্তু আরো পনের মিনিটের অন্তর তাকে ভুল প্রমাণিত করে মিরা উঠে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে৷ সে সামান্য হতবিহ্বল হয়৷ তবে সে ঘুমায়নি? তার সব আয়োজন বৃথা গেল!

মিরার যেন কী হয়েছে, কে জানে? সে ক্রমশ আস্তে আস্তে ইমানের দিকে নিজের মুখ আগাতে থাকে৷ ইমান কিছু বুঝে ওঠার আগে মিরার উষ্ণ, কোমল, নরম ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়া নিজের ডান গালে অনুভব করে। তার চুমুতে একটা শব্দও উৎপন্ন হলো। ইমানের হৃদপিন্ড ক্ষণেই বহুগুণ দ্রুত বেগে ওঠা-নামা করতে আরম্ভ করে। রক্ত সঞ্চালন থেমে গেল যেন। প্রতিটা স্নায়ুকোষ সংকেত পাঠানো থামানো বাদ দিয়ে আন্দোলিত হতে লাগলো। তার মনে হলো, চুমুর শব্দ ফ্লাটের প্রতিটা মানুষের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে৷ নিজের বেগতিক অবস্থা সামলানো দায় যেন। নারী অধ্যায় এতো জটিল কেন? এর চেয়ে তো ইঞ্জিনিয়ানিং এর চার পাতার ম্যাথও বড্ড সহজ!

মিরা পুনরায় নিজের অধর জোড়া তার কাছে আনতে ধরলে, ইমান তাকে থামিয়ে দিয়ে মিনমিন করে বলে, “দোহাই লাগে দূরে সরো। একে তো কালো শাড়ি পড়ে আমাকে অর্ধেক পাগল করে দিয়েছো, এখন এইসব কারবার করে আমাকে কন্ট্রোললেস করে দিও না৷ বেহায়া হতে চাই না। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেলে পরে তো আমাকেই দোষ দিবা। ”

মিরা তার বাধা আমলে না নিয়ে আরো নিকটে ঘেঁষে আসলে, ইমান নিজের হাত দিয়ে মিরার মুখ চেপে ধরে বলে, “ভালো মেয়েরা চুমু খায় না।”

মিরা নিজের মুখ উম্মুক্ত করে ভারী ইনোসেন্ট গলায় বলে, “এই বাদড়, তাহলে ভালো মেয়েরা কী খায়? হু?”

ইমান থমকালো। মাতালের প্রশ্নের উত্তরে সে কী বলবে? এরপর ভেবে-চিন্তে বলে, “ভালো মেয়েরা দুধ-ডিম আর ফল খায়৷”

মিরা হাত-পা ছুড়াছুড়ি শুরু করল আবার। এবার তার নতুন আবদার! সে ডিম খাবে। কারণ সে ভালো মেয়ে৷

ইমানের মাথায় হাত। এই রাতে সে ডিম কই থেকে আনবে। মিরা দরজা-জানালা ধাক্কাতে লাগে। ফলে শব্দ হতে লাগলো। এমন শব্দে দারোয়ানের ঘুম ভেঙে যেতে পারে। অবস্থা প্রতিকূলে দেখে সে মিরাকে শক্ত করে নিজের দিকে টেনে আনে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মিরাকে ধরে রাখে। মিরা মুখে বলতে থাকে, “আমাকে ডিম এনে দাও৷ আমি ডিম খাব। রাজকন্যার ডিম খেতে মন চাচ্ছে।”

— তাই? সত্যি ডিম খাবে?

— হু।

ইমান বেশ সময় নিয়ে কী যেন ভাবলো। এরপর অতি অনাকাঙ্ক্ষিত একটা কাজ করলো। সে মিরার ডান গালে গভীরভাবে নিজের অধর ছুঁইয়ে দিল। বেশ সময় নিয়ে৷ প্রায় দশ মিনিট ধরে। মিরা সেই সময় একদম বরফের জমে গেল। চুম্বন পর্ব শেষ করে তাকে নিজের বুকে ঠাই দিয়ে বলে, “এটাকে ডিম খাওয়া বলে বুঝলে প্রিন্সেস?”

মিরা তার বুকে মাথা রেখে মলিন সুরে হু বলে৷

ইমান হাসে। অপেক্ষা করে সকাল হওয়ার। অনেকদিন পর আজ সে সূর্যোদয় দেখবে। অনেকদিন পর।

আচ্ছা নিউইয়র্ক আর বাংলাদেশের সূর্য কী এক? নাকি বাংলাদেশে অন্য আরেকটা সূর্য উঠে? কে জানে? হয়তো এক কিংবা এক না।

চলবে।

[ সবাই রেসপন্স করবেন প্লিজ। পেজের রীচ একদম ডাউন। ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা অবিরাম। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here