ফেইরিটেল পর্ব-২৮

0
1396

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–28

ইমান বিষ্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকল। কখন যে তার হাত থেকে ফোন পড়ে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। সে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার৷

সে শক্তি সঞ্চায় করে বলে, “ত..তুমি! এ… এখানে! মানে, আই মিন…….” তাকে আর কষ্ট করে বাক্যটা সম্পূর্ণ করতে হলো না।

এর আগেই রিনরিনে আওয়াজে অপর পাশের শ্রোতা এখন বক্তায় পরিনত হয়ে বলে উঠে, ” আমি আসায় খুব চমকে গেছেন দেখছি। ভয় পেয়েছেন নাকী?”

ইমানের কপালের বলিরেখা ভাঁজ হয়ে আসে। সে গহীন গলায় বলে, ” ভয় পাচ্ছি না৷ কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে। ”

— “আশা করেননি কোনদিন আমি এখানে আসব?”

— “একদম আশা করিনি৷”

— “অথচ আপনার উচিত ছিল আমাকে নিজের সঙ্গে এখানে আনা।”

ইমানের নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কর্ম নেই আপাতত। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিরা৷ মিরা, যার সাথে ফিরে আসবার আগে সে একটাবারও বিদায় নেয়নি। যার সঙ্গে সে দুর্ব্যবহার করেছিল বিয়ের প্রথম রাতে। গত তিনটা মাস ধরে তার কোন যোগাযোগ নেই৷ কিন্তু এই দূরত্ব তাকে পীড়া দিচ্ছে বেশ। প্রতিদিন মনে মনে অন্তত একবার ভাবত যদি তার সঙ্গে একটাবার কথা বলতে পারত! আজকে তার ভাবনা বাস্তবে রুপ পেল। সত্যি বলতে কী, মিরা কে এই পরদেশে দেখে সে খুশি হয়েছে।তার এই খুশি অবশ্য অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পাচ্ছে না। সে নিজেও জানে না কেন সে এতো খুশি হলো। এদেশে মিরা তার জন্য উটকো এক ঝামেলা। সে পরখ করে মিরাকে দেখতে লাগলো। চুল থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে৷ কামিজ ভেজা। ভেজা কামিজ শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। তার মুখখানি শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে। নিশ্চয়ই এই বাসায় কেউ তাকে একফোঁটা পানিও অফার করেনি৷ অথচ মেয়েটা মিনিমাম আধ ঘন্টা আগে এসেছে৷

হাসনাহেনা ড্রয়িংরুমে এসে প্রবেশ করে তাদের দুইজনকে দেখল৷ মিরাকে দেখামাত্র সে মুখ বাকালো। বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেল৷ সে বলে উঠে, “ওকে তোমার দোতলায় নিয়ে যাও। নিচে কই ফ্রেশ হবে? উপরে নিয়ে যাও৷”

ইমান মিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আসো।”

সে মিরাকে সঙ্গে নিয়ে ড্রয়িংরুম থেকে বের হলো। এবং তার চোখে ল্যাগেজ পরে থাকার দৃষ্টি এড়ালো না৷ পাচঁ মিনিট আগেও ল্যাগেজ সোজা করে রাখা ছিল। এখন উলটে মেঝেতে পড়ে আছে। সে তড়িৎ গতিতে ল্যাগেজ দুটির দিকে এগিয়ে গিয়ে সোজা করল এবং দুই হাতে দুটো ল্যাগেজ নিয়ে উপরে দোতলায় উঠে৷ দোতলায় পুরো কাজ এখনো কমপ্লিট হয়নি। ইমান দুইটা রুম মিলে থাকছে সেখানে। তার আদেশমতেই বাকি কাজ থেমে আছে৷ সে দুটো রুমের সমান স্পেস নিয়ে নিজের একটা সাবলেট টাইপ বাসা বানিয়েছে। রুমের সঙ্গে এটাচ বাথ, ব্যালকনি আছে।

নিজের রুমে মিরাকে নিয়ে আসলো সে। একসাইডে ল্যাগেজ দুটো রেখে দিল সে।

মিরা বলে উঠে, ” আমি কিন্তু কাউকে কিছু জানিয়ে আসিনি৷”

ইমান যেন আকাশ থেকে পড়ল মিরার কথা শুনে৷ দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ” আগে ফ্রেশ হও। এরপর কথা বলি৷ ওদিকে বাথরুম। ”

মিরা একবার বাথরুমের দিকে তাকালো। ইমান তার দিকেই চেয়ে আছে৷ সে পরপর দুটো হাঁচি দিল।

ইমান বলে, ” ভেজা কাপড়ে থাকার জন্য ঠাণ্ডা লেগে আছে। আমি কফি আনছি৷”

ইমান মুহুর্তের মধ্যে নিচে নেমে যায়। গরম কিছু খেলে ওর ভালো লাগবে। আজকের ওয়েদার কিছুটা ঠাণ্ডাই বলা চলে৷ আর কয়েকদিনের মধ্যে স্নো পরা শুরু করবে। সেই হিসাব করলে এটাকে শীত বলা যায় না। কিন্তু আবহাওয়ায় উষ্ণতা বা উত্তাপ নেই। কিচেন থেকে কফি বানিয়ে বের হওয়ার সময় রান্নাঘরের সম্মুখে হাসনাহেনার সঙ্গে পুনরায় দেখা হলো৷

উনি বলে উঠলেন,” মেয়েটার আক্কেল-জ্ঞান বলে কিছু নাই। ভেজা শরীরে ড্রয়িংরুমে বসে পুরা ড্রয়িংরুম নোংরা করেছে৷ ওর ল্যাজেগ ময়লা, সেই ময়লা ল্যাগেজ ম্যাটের উপর রেখে ম্যাটটা নোংরা করে দিল।”

ইমান মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, “ড্রয়িংরুম আমি ক্লিন করে দিচ্ছি আর কালকে একটা ম্যাট কিনে আনব।”

হাসনাহেনা চলে গেলেন। সেও উপরে উঠে যায়৷ রুমে প্রবেশ করে সে থমথমে খেয়ে যায়৷ মেয়েটা ডিভানে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে। ভেজা কাপড়ও বদলায়নি। ফ্রেশও হয়নি। ওভাবেই ঘুমিয়ে গেছে। ক্লান্ত বোধহয় খুব! ও ওলরেডি হাঁচি দেওয়া শুরু করেছে৷ এখন ভেজা কাপড়ে থাকলে জ্বর বাঁধাবে নিশ্চয়ই!

সে কফির মগ টেবিলে রেখে মিরাকে ডাকল। ঘুম ভাংগানোর চেষ্টা করল। কিন্তু এই দু-তিন মিনিটের ব্যবধানে মিরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে৷ ডেকেও খুব একটা সুবিধা ইমান করতে পারলো না৷

মিরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল সে। এরপর তার গায়ে হাত দিল। সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। সে ব্ল্যাংকেট এনে তার গায়ে মুড়িয়ে দিল। এসি অন ছিল। এসিও অফ করে ফ্যান চালানোর পর তার মনে হলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিলে আর ঠাণ্ডা বাঁধবে না৷ নিজের আলমারির ড্রয়ার থেকে হেয়ার ড্রায়ার বের করে এনে আস্তে করে মিরার মাথায় দিকে হেয়ার ড্রায়ার ধরে রাখল। গরম বাতাস নির্গত হতে থাকল। চুলের পানি ক্রমে ক্রমে গরম তাপে বাষ্পায়িত হয়ে গেল। চুল শুকিয়ে দেওয়ার পর বেড থেকে বালিশ এনে মাথায় নিচে রেখে আলতো করে তার কপাল ছুয়ে দিল। আশ্চর্য ব্যাপার! কিছুক্ষণ আগেও শরীর ঠাণ্ডা ছিল। এখন হাল্কা গরম করছে৷ জ্বর আসলো নাকী?

সে আবার নিচে নেমে গিয়ে ড্রয়িংরুম ক্লিন করল। এর ফাঁকে খাবার অর্ডার দিল। যেন মিরার ঘুম ভাঙ্গলে ক্ষুধার্ত থাকতে নাহয়। খাবারও চলে আসল। কিন্তু মিরা তখনো ঘুমে। ইমান ইচ্ছা করেই ডাকছে না। ঘুমাক। চব্বিশ ঘন্টার বেশি প্রথমবার জার্নি করে বেচারি ক্লান্ত।

সে রুমে ফিরে আসল৷ তার রুমটা বিশাল বড়ই বলা যায়। জানালার সাইড ঘেঁষে কিং সাইজের বেড। দেয়ালের সঙ্গে লাগানো কাবার্ড৷ এবং বেডের বিপরীতে ডিভান। এরপর ডানদিকে লো-টেবিল রাখা আছে কাপড় আয়রন করার জন্য। এর পাশেই বড় একটা বুকশেলফ। বুকশেলফের সঙ্গে হেলান দিয়ে গিটার রাখা। বারান্দায় দুটো চেয়ার আর একটা টি-টেবিল এবং উইন্ড চার্ম লাগানো আছে। বাতাস হলেই উইন্ড চার্ম আওয়াজ করছে। রুমে কোন আয়না বা ড্রেসিং টেবিল নেই। ওয়াশরুমের আয়নাতেই তার কাজ হয়ে যায়৷ সে বেডে এসে বসল। এরপর বড় মামার নাম্বারে কল দিল৷ উনি কল ধরলেন না। তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মিরা হুট করে এখানে আসার মতো মেয়ে না। যেহেতু এতোদূর এসেছে, বড় কোন রিজন আছেই। বাসায় কাউকে না জানিয়ে এসেছে। এটা আরও চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে তাকে৷ এদিকে অফিস থেকে কন্টিনিউসলি কল আসছেই। তার বড় বিরক্ত লাগলো। সে ফোন রিসিভ করে বলে, “আজকে আর আসব না অফিসে। আমার পারসোনাল সময় দরকার। এরপর ফোন বন্ধ করে রেখে দিল৷

চলবে।

[ পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। যাইহোক আজকের পর্ব সবার কেমন লাগলো?যদিও বা আমি ধামাকা ভালো লিখতে পারি না৷ ভালোবাসা অবিরাম সবাইকে। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here