#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-২৩
মানহা ট্যিসু দিয়ে কোন মতে ঘাম মুছে নিলো, তাতে খুব একটা লাভ হলো বলে মনে হলো না। অতঃপর দাদীর পিছু পিছু মানহা বসার রুমে গেলো৷ ভাবতেই বিরক্ত লাগছে এতো গুলো মানুষের সামনে মূর্তির ন্যায় বসে থাকতে হবে৷ জবাব – দিহির উত্তর দিতে হবে। বসার রুমে সবাই কে সালাম দিয়ে, তাকাতেই তানিয়া, শিহাব, কুসুম বেগম কে দেখে চমকে উঠলো মানহা। পাশেই বসে আছে অপরিচিত এক যুবক দেখতে কিছুটা ওয়াহাবের মতো। মানহা এর আগেও তাকে দেখেছে, তবে এই মূহুর্তে যুবকের নাম টা ঠিক মনে পড়ছে না তার, আচমকাই মানহার মনে প্রশ্ন জন্মালো, তাহলে ইনি কি পাত্র?
বাবার বলা ডাক্তার পাত্র ওয়াহাবের ছোট ভাই? সব কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে, মানহার মাথায় চাপা যন্ত্রণা করছে। তার ওপর তানিয়ার মা কুসুম বেগম, তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে…
তানিয়া মুচকি হেসে বললো, ” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মানহা। ”
তানিয়া কথায় মানহার ধ্যান ভাংলো, মানহা আমতা আমতা করে বললো, ” থেংক ইউ আপু।”
শিহাব চিপস মুখে পুড়ে নিয়ে বললো, ” মিস আমার মামী মা হবে, কি মজা..”
শিহাবের কথা শুনে রুম ময় সবাই হেসে দিলো৷ কুসুম বেগম ছাড়া। মতি সাহেব মানহার উদ্দেশ্য বললো, ” মা তোমার নাম আমরা জানি। তাই নতুন করে জিজ্ঞেস করছি না। পরিক্ষা কেমন হয়েছে?”
” জ্বি ভালো। ”
” আমার ছেলেও খুব ভালো মেডিক্যাল স্টুডেন্ট ছিলো। তোমাকে-ও কিন্তু ভালো রেজাল্ট করতে হবে… ” মানহা মনোযোগ দিয়ে মতি সাহেবের কথা শুনলো৷ হঠাৎ কুসুম বেগম বললেন,
” তানিয়ার আব্বা, আংটি টা পড়িয়ে দেই এবার। আংটি টা বের করো। ”
” আংটি তো ইলহামের কাছে। ”
ইলহাম বাবার কথা শুনে পকেটে হাত দিয়ে, বুঝলো তার পকেটে আংটির বক্স নেই৷ ইলহাম মুখে হাসি টেনে বললো,
” আংটিটা মনে হয় গাড়িতে… ”
কুসুম বেগম গম্ভির কন্ঠে বললো, “ইলহাম তোমাকে দিয়ে একটা কাজও ঠিক মতো হয় না। ”
ইলহাম লজ্জা লজ্জা মুখে বললো, ” হবু বউয়ের সামনে প্লিজ বোকো না আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি…”
বলেই উঠে চলে গেলো। মানহার বুঝতে আর বাকি রইলো না এই তাহলে বাবার পছন্দ করা ডাক্তার পাত্র। কিন্তু পাত্রী তো খোঁজার কথা ওয়াহাবের জন্য৷ শেষে কি না ওয়াহাব হয়ে গেলো তার ভাসুর…
যেই লোকটার কাছ থেকে সে দূরে সরতে চায়, সে খানেই সে থাকবে। ওয়াহাবের সামনে সংসার করবে। ‘কুসুমতি’ ভিলাতেই তাকে যেতে হবে, ওহাবের স্ত্রী হয়ে নয়, তার ভাইয়ের স্ত্রী হয়ে। ভাবতেই চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছে মানহার….
—————————————————
” এক্স কিউজ মি…”
হঠাৎ মেয়েলী কন্ঠ শুনে ইলহাম থমকে দাঁড়ালো। বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইলহাম খুব ভালো করেই জানে তার পেছনে আর কেউ নয়, ওয়ান এন্ড অনলি তানহা দাঁড়িয়ে আছে। ইলহাম পেছনে ঘুরে বললো,
” বলুন। ”
” বাবার কাছে শুনলাম পাত্র নাকি ডাক্তার। কিন্তু আপনি তো পুলিশ? তাহলে..”
উফফফ মেয়ে মানুষ এতো বোকা কেনো?”””” মেয়ে মানুষ জীবনে প্রয়োজনীয় কিছু নিয়ে ভাবে না, দুনিয়ার সব ইউজলেস জিনিস নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা আর চিন্তা!”””” —রুহি জাহান মায়া–
মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন টাই ইলহামের মনে ঘুর পাক খায়। এই জন্যই ইলহাম মেয়ে মানুষ কে বোকা বানিয়ে এতো মজা পায়।
” আপনার কি মনে হয় পাত্র ডাক্তার নাকি পুলিশ। ”
তানহা একটু ভেবে বললো,
” বাবা যেহেতু বলেছে ডাক্তার সো ডাক্তারই হবে। ”
” ইয়েস৷ পাত্র ডাক্তার। সে আসে নি। হঠাৎ ইমারজেন্সি তে আটকে গেছে। ”
” তাহলে আপনি কে? আপনার ভূমিকা? ”
ইলহাম থতমত খেয়ে বললো, ” আমি পাত্রের ছোট ভাই। আপনার বোনের হবু দেবর। ”
” অহহ। তাই বলুন৷ ”
” আপনি কি এই বাড়িতেই কাজ করেন? কত টাকা বেতন পান? ”
তানহা রাগে গা ফেটে যাচ্ছে, তানহা রাগ টাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে বললো,
” আমাকে দেখে কি আপনার কাজের মেয়ে মনে হয়?”
ইলহাম ফিক করে হাসলো, ইলহামের হাসি দেখে তানহার রাগ টা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। ইলহাম দ্রুত পায়ে বসার রুমে চলে গেলো আংটির বক্স নিয়ে। মায়ের হাতে আংটির বক্সটা দিতেই কুসুম বেগম বললেন,
” এতো দেরি করে এলে কেনো?”
” আর বলো না মা। হঠাৎ একটা গরিব দুঃখী মেয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো। একটু কথা বললাম তাই দেরি হয়ে গেলো। ”
বলেই ইলহাম তানহার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপুনি দিলো। কথাটা তাকেই ডেডিকেটেড করে বলেছে, ইলহাম। তানহা রাগে ফেটে যাচ্ছে, তানহার রাগী মুখটা বেশ উপভোগ করছে ইলহাম৷ তানহা ইলহাম কে ভেংচি কেটে সরে গেলো….
তানিয়া তাড়া দিয়ে বললো, ” আংটিটা এনেছিস? তাহলে মায়ের হাতে দে…”
” এই নাও আংটি..” বলেই ইলহাম আংটির বক্স মায়ের হাতে দিলো। কুসুম বেগম মানহা কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
” ডান হাত টা দাও দেখি।” মানহা ডান হাতটা এগিয়ে দিতেই কুসুম বেগম মানহার অনামিকা আংগুলে আংটি পড়িয়ে দিলো।
মতি সাহেব বললেন,” ইলহাম তানিয়া তোমরা বউমার সাথে গিয়ে গল্প করো৷ আমরা বড়রা কথা বলি..”
মানহা উঠে চলে গেলো, সাথে তানিয়া, শিহাব, ইলহাম ও। মতি সাহেব পূর্নরায় বললেন,
” আমরা চাইছি, ছেলের বউকে ঘরে উঠিয়ে, দেশের বাড়ি খুলনা চলে যাবো৷ দশ দিনের মধ্যে বিয়ের তারিখ পাকাপাকি করলে ভলো হয়। ”
মুকুল সাহেব বললেন, ” আমার প্রথম মেয়ের বিয়ে, তাই জাক জমক করেই করতে চাইছি। হাতে একটু বেশি সময় পেলে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে।”
কুসুম বেগম বললেন, ” তা ঠিক আছে। এটা তো সব বাবা মায়েরই স্বপ্ন। তাহলে আগামী শুক্রবারের পরের শুক্রবার… ”
মুকুল সাহেব সম্মতি জানালেন। মানহা এবং ওয়াহাবের বিয়ে চৌদ্দ দিন পর ধার্য্য হলো।
মানহা এবং ইলহাম বরাবর বসে আছে, কিছুক্ষণ আগেই তানিয়া শিহাব কে নিয়ে ওয়াশরুমে গেছে। মানহা চেয়ারে বসে বুড়ো আঙুলের সাহায্য অন্যান্য আংগুলের নোখ খুঁটছে। ইলহাম নিরবতা কাটানোর জন্য বললো, ” এটা কি আপনার রুম? ”
” না। আমার ছোট বোনের। ” ইলহাম রুমটা একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো। অতঃপর বললো,
” আপনি মেডিক্যাল থার্ড ইয়ারে পড়ছেন রাইট?”
” জ্বি।”
” আর আপনার ছোট বোন কিসে পড়ে? ”
” ইন্টারমিডিয়েট ২য় বছর। ”
” ও আচ্ছা। ”
বলেই চুপ করে রইলো ইলহাম। মানহার খুব ইচ্ছে করছে, ওয়াহাবের কথা জিজ্ঞেস করতে, জানতে ইচ্ছে করছে, ওয়াহাবের জন্য কি পাত্রী পেয়েছে। পরক্ষনেই মানহার মনে পড়লো, ওয়াহাব তো বড়, তাহলে নিশ্চয়ই আগে ওয়াহাবের জন্য পাত্রী খুঁজে পেয়েছে, তারপর ছোট ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজেছে। মানহার খুব ইচ্ছে করছে, ওয়াব কে একবার জাপটে ধরে কান্না করতে…
” আপনার হোবি কি? ” হঠাৎ ইলহামের কথায় মানহার ধ্যান ভাংলো মানহা আনমনে বললো,
” হু? ”
” হোবি, আই মিন শখ।”
” বই পড়তে ভালো লাগে আর মাঝে মাঝে গান শুনতে এবং গাইতে ভালো লাগে। ”
” ওয়াও আপনি গান গাইতে পারেন!”
” একটু -আধটু..”
” দ্যাট ইজ গ্রেইট। গান শুনতে আমারো ভালো লাগে। আপনি থ্রিলার বই পড়েন নাকি রোমান্টিক? ”
” দু’টোই পড়া হয়। কিন্তু আমার ছোট বোন আমার চেয়ে বেশি থ্রিলার এবং গোয়েন্দা টাইপ বই পরে। ”
ইলহাম মনে মনে বললো, এই জন্যই সব জিনিসে এতো বেশি কৌতুহল। অতি কৌতুহল ওর নিজের ওপর ভারী পড়ে যায়৷ বোকা রানী একটা৷
” কি কথা হচ্ছিলো? আমিও একটু শুনি… ” বলতে বলতে তানিয়া রুমে প্রবেশ করলো।
” উনি বই পড়তে ভালোবাসেন, গান করতেও.. ”
তানিয়া উৎসুক হয়ে বললো,” বাহ তাহলে মাঝে মাঝে তোমার গান শোনা যাবে মানহা৷ ”
মানহা ভদ্রতার হাসি হেসে মাথা নাড়ালো।
।
।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹
আমার গ্রুপ👉RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি