শঙ্খচিল পর্বঃ-২৪

0
1635

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-২৪

” ওলির ও কথা শুনে বকুল হাসে কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো…
ধরা-ও দুলি তে যে ফাগুন আগে কই তাহার মতো তুমি আমার কাছে কভু আসো না তো…
আকাশ পানে ওই অনেক দূরে, যেমন করে মেঘ গো উড়ে।
যেমন করে মেঘ যায় গো উড়ে
তেমন করে তুমি আমার কাছে কভু আসো না তো…”

গান শেষ করে, মানহা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তার কল্পনা জগতে ডুব দিলো, যে খানে ওয়াহাব ব্যাতিত আর কেউ নেই…
ইলহাম তালি দিয়ে বললো, ” আপনি অসম্ভব ভালো গান গাইতে পারেন। ”

তানিয়া তাল মিলিয়ে বললো, ” সত্যি খুব ভালো গাইতে পারো তুমি মানহা। মাশাল্লাহ। ”

মানহা স্মিথ হেসে, বললো ” ধন্যবাদ। ”

” আপু তুই এতো ভালো গান গাইতে পারিস, অথচ আমরা কেউ জানি না। ” বলেই তানহা থামলো। মানহা জানার দিকে তাকিয়েই পূর্ণরায় হাসি দিলো, ইলহাম তানহার কানে কানে ফিস ফিস করে বললো, ” গুন্ডা পান্ডা দের পিছনে লেগে থাকলে জানবেন কি করে…”

তানহা কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” চুপ থাকুন বাসায় কেউ জানে না কেইস এর ব্যাপারে। ”

ইলহাম মনে মনে নিশ্চিত হলো, এই বোকা মেয়েটা ফ্যামিলির কাউকে এই ব্যাপারে জানায় নি তাহলে৷ মেয়ে মানুষের ঠোঁটের আগে কথা লেগে থাকে, ইলহাম এক প্রকার ভেবেই নিয়ে ছিলো তানহা সেই খুনের দৃশ্য পরিবারে সবাই কে বলেই দিয়েছে।
বাইরে থেকে ডাক পরতেই ইলহাম, তানিয়া বেরিয়ে গেলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বর পক্ষ বের হবে ঠিক তখনি ইলহাম মনে মনে তানহা কে খুঁজলো তবে দেখতে পেলো না।

—————————————————

ইমারজেন্সি রুম থেকে বের হয়ে, ওয়াহাব নিজের কেবিনে ঢুকতে ফোনের দিকে চোখ পড়লো। ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো, তানিয়া আপুর ফোন থেকে এগারোটা মিসড কল এসেছে।
আজকে মানহা কে আংটি পড়ানোর কথা, কোন ঝামেলা হলো না তো? ভাবেতে ভাবতেই ওহায়াব দ্রুত কল বেক করলো, ফোনের ওপাশ থেকে শিহাব বললো,
” মামু জানো তোমার বিয়ে হবে, চৌদ্দ দিন পর। ”

শিহাবের কথা শুনে ওয়াহাব হাসলো৷ অতঃপর বললো, ” শিহাব তোমার মামিকে পছন্দ হয়েছে?”

” হ্যাঁ খুব খুব পছন্দ হয়েছে। ”

” ওকে দেন। তোমার মায়ের কাছে ফোনটা দাও এবার.. ”

শিহাব দৌড়ে তার মায়ের কাছে ফোনটা নিয়ে গেলো, তানিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে, বললো ” কংগ্রাচুলেশনস ব্রাদার। তোমার বিয়ের লাড্ডু ফুটে গেছে। ”

ওয়াহাব হাসলো। তানিয়া আবার বললো, ” মেয়েটা ভেতরে ভেতরে কুকড়ে গেছে জানিস? তুই যে কেনো পরিক্ষা নিচ্ছিস। ”

” সত্যি আজকে আমার ইমারজেন্সি ছিলো আপু। এই মাত্র বের হলাম আমি। ”

” আর এইদিকে যে মানহা ইলহাম কে পাত্র ভাবছে? ভাবছে ইলহাম পুলিশ নয়, ডাক্তার। ”

” ভাবুক। বিয়ের দিন ও যখন ও জানতে পারবে বর ইলহাম না, আমি তখন ও রিয়েকশন টা দেখতে চাই, এটাও প্রুভ হয়ে যাবে ও আমায় ভালোবাসে কি না…”

” দেখিস বাসর রাতে বউয়ের হাতে মার খাস না। ” বলেই তানিয়া হো হো করে হেসে দিলো। ওয়াহাব ও হাসলো।

——————————————————

চারিদিকে দক্ষিনা বাতাস, বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব। কখন যে আকাশ বেয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়বে তার অপেক্ষায় রয়েছে কিছু মানুষ। রাত দশটা বাজে, পথে এখনো মানুষের সমাগম, সব কিছু যেনো স্থির হয়ে আছে, সত্যি কি স্থির হয়ে, আছে?
উহু! পৃথিবী স্থির হয় না, না কা কারো জন্য থেমে থাকে। পৃথিবী তার নিজ নিয়মেই চলতে থাকে। এবং থাকবে।
মানহা জানালার গ্রীলে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বুজে বাতাস অনুভব করছে, যেনো বাতাস তার কানে গুন গুনিয়ে কিছু বলতে চায়।

” মানহা…”

দাদী এসেছে, মানহা চোখ মেললো না। আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো। শেহতাজ বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
” আর চৌদ্দ দিন পরে তোর বিয়ে..”

মানহা দম ফেলে বললো, ” জানি। ”

শেহতাজ বেগম অবাক হয়ে বললেন ” কি ভাবে জানিস?”

” রহিমা খালা বলেছে। ”

” এই মেয়েটা কে নিয়ে আর পারি না। সব সময় খালি অস্থিরতা পনা করে.. রাতের খাবার খাবি চল..”

” ক্ষুধা লাগে নি দাদী। তুমি যাও৷ ”

“ক্ষুধা লাগে নি মানে? সেই দুপুরে তাড়াহুড়ো করে খেয়েছিস। ঠিক মতো দানা পানিও পড়ে নি। এখন চল তো…”
মানহা শ্বাস ফেললো, দ্বিতীয় বার আর না করলো না। চুপ চাপ দাদীর পিছু পিছু হাটা শুরু করলো।

———————————————-

চওড়া রোদে, রিকশায় বসে আছে তানহা৷ কানের পিঠে ঘামে জব জব করছে। গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। গতকাল রাতে বাতাসের চাপে সবাই ভেবেই নিয়েছিলো বৃষ্টি হবে কিন্তু বৃষ্টি হয় নি। তাই হয়তো গরমের প্রভাব টা আজ আরো বেশি। তানহা একবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো, বিকাল চারটা বেজে চাল্লিশ মিনিট। অলরেডি কোচিং-য়ে যেতে দশ মিনিট দেরি করে ফেলেছে সে৷ জ্যামে বসে না থেকে, বাকি রাস্তা টুকু হেটে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো সে। দেরি না করে ধানমণ্ডি দুইয়ে নেমে পড়লো।
রাস্তার পাশ ধরে হাটতে হাটতে তানহা লেকের সামনে চলে এলো। ভর বিকেল হবার কারনে লোক জনের তেমন আনা গোনা নেই, কিছু মানুষ পাশের ছাউনিতে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
ক্ষানিকটা এগোতেই পানি তে ঝাপ দেওয়ার শব্দে তানহা পূর্নরায় লেকের দিকে তাকালো। হাতে ব্যাগ নিয়ে সতেরো আটারো বছর বয়সের একটা ছেলে লেকে ঝাঁপ দিয়েছে। ব্যাগ টা কে ওপরে তুলে প্রান পনে সাতার কাটার চেষ্টা করছে, আবর্জনা ময় লেকে।

পারে আরো দুটো লোক দাঁড়িয়ে আছে। মোটা পটকা লোক দাঁড়িয়ে কি যেনো ভাবছে পাশের ছেলেটা তানহা খেয়াল করার আগেই লেকে ঝাপ দিলো। সাতার কেটে ওই ছেলেটা কে অনুসরণ করার চেষ্টা করলো। তানহা হাটার গতি থামিয়ে, দাঁড়িয়ে রইল কি হয় তা দেখার জন্য।
মিনিট দুই তিনেক পর লোকটা ছেলেটার কাছে পৌঁছোতে সক্ষম হলো। আগ্রহ বশত তানহা ফোনটা বের করে ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করলো, পানির মধ্যেই উদম মার পিট শুরু করে দিয়েছে লোকটা, শেষ বার পানিতে ঝাপ দেওয়া লোকটা কিশোর ছেলেটার ঘাড় ধরে পানিতে চুবিয়ে ধরে রাখলো। ছেলেটা বাঁচার জন্য ছট ফট করছে তানহা হঠাৎ চেঁচামেচি করা শুরু করলো, গাড়ির শব্দে দূর অব্দি তানহার শব্দ পৌছালো না। তবুও তানহা চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো…

” ছারুন ছারুন৷ ছেলেটা মরে যাবে তো…জান নিবেন নাকি… ” ক্ষানিকটা চেঁচামেচি করার পর লোকটা তানহার দিকে তাকালো। তানহা হঠাৎ চেঁচামেচি থামিয়ে চুপ হয়ে গেলো, লোকটা তানহার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
কিশোর ছেলেটার জায়গায় তানহা থাকলে হয়তো তানহা কে চুবিয়ে মেরেই ফেলতো৷ হঠাৎ হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো তানহার। ফোন পড়ার শব্দে তানহা ধ্যান ফিরতেই দ্রুত ফোনটা উঠিয়ে নিলো।
লোকটা আর কেউ নয়, সে দিন সন্ধ্যার সিরিয়াল কিলার, তানহা কে কিডন্যাপ করে রাখা খুনি লোকটা।

তানহা এক প্রকারা দৌড়ে চলে গেলো। তানহা দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে গেছে, হঠাৎ ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো ফোনটা অফ হয়ে গেছে, রি স্টার্ট দিয়ে ভিডিও টা পূর্নরায় দেখা শুরু করলো তানহা, ক্যামেরার নিখুঁত চোখে সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার টা তানহা খেয়াল করলো.. সিরিয়াল কিলার লোকটার মুখ টা অস্বাভাবিক কালো হলেও গলা ফর্সা এবং ভেজা দাত দুটো ও।
ধ্যাত কেনো যে তানহা পালিয়ে চলে এলো, লুকিয়ে থাকলে অন্ততঃ দেখা তো যেতো এই লোকটা কোথায় যায়.. তানহা কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার সাথে তো এখন এস আই ইলহাম রয়েছে। তার ভয় কিসের? ভাবতে ভাবতেই তানহা আবারো লেকের পারে চলে গেলো।
একটা মোটা মেহগনি গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে রইলো, গাছের ফাঁকে উঁকি দেতেই তানহা দেখতে পেলো…


চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here