শঙ্খচিল পর্বঃ-৪২

0
1529

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৪২


সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে, তানিয়া শিহাবের টিফিন প্যাক করছে। শাহেদ সোফায় বসে শ্বশুর বাবার সাথে গল্প করছে। এবং আড় দৃষ্টিতে তানিয়াকে দেখছে..
ওয়াহাব টেবিলে এসে বসতেই মানহা প্লেটে নাস্তা দেওয়া শুরু করলো, কুসুম বেগম বসতে বসতে বললেন,
” তোর বিয়ের জন্যই ঢাকায় আসা, তোর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ। তাই ভাবছি আজকে কালকের মধ্যেই খুলনায় ফিরে যাবো। ”

ওয়াহাব নাস্তা মুখে দিয়ে বললো, ” এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে আর কিছু দিন থাকলে হতো না মা?”

শেহতাজ বেগম নাস্তা মুখে দিয়ে বললেন, ” ইদানীং বাতের ব্যাথাটা খুব বেড়েছে, তোর দেওয়া ঔষধ গুলো তেমন কাজ করছে না, গ্রামের বাড়ি গেলে একটু হাটা চলা করলে ভালো লাগেবে। ”

” ঔষধ গুলো কি চেঞ্জ করে দিবো। ”

” তা দিস৷ তোর বাবাও বাড়ি যেতে চাচ্ছে। আজ রাতে না হলে, কাল ভোরে রওনা দিবো। ”

” ঠিক আছে মা৷ ”

শেহতাজ বেগম মানহার উদ্দেশ্য বললেন,
” মানহা তোমার ক্লাস কি শুরু হয়ে গেছে?”

” না মা৷ পুরো পুরি ক্লাস শুরু হয়নি এখনো। ”

” ওয়াহাব তাহলে, তোরাও তো আমাদের সাথে যেতে পারিস। দু-তিন দিন থেকে না হয় চলে আসবি। ”

” মা আমি আজকে ডিউটিতে জয়েন করছি, ছুটি পেলে যাবো প্রমিজ। ”

” আচ্ছা। দেখো কি করতে পারো। ”

ওয়াহাব দ্রুত নাস্তা সেরে, হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। ওয়াহাব থেকে বের হবার সময় মানহা কে দেখতে পেলো না, ক্ষানিকটা হতাশ হয়েই কুসুম মতি ভিলা থেকে বেড়িয়ে এলো।
মানহা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওয়াহাবের যাবার পানে তাকিয়ে আছে,
মানহার ভেতর টা ছট ফট করছে, একবার ওয়াহাবে পেছনে তাকাক একবার।

ওয়াব গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনি আনমনে বেলকনির দিকে তাকালো, ওয়াহাব তাকাতেই মানহার ভেতরটা ছেদ করে উঠলো, দ্রুত সরে গেলো। ওয়াহাব দ্বিতীয় বার তাকাতেই তার মানহার শাড়ির আঁচল দেখতে পেলো৷ ওয়াহাবের আর বুঝতে বাকি রইলো না, এটা মানহাই ছিলো।
ওয়াহাব স্মিথ হেসে গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।

———————————————–

মানহার আপুর বিয়ের লম্বা সময় বাসায় কাটানোর পর তানহা কলেজে এসেছে আজ। বন্ধু বান্ধবিদের সাথে আড্ডা এবং ক্লাসে সময়টা কেটে গেছে আজ। তানহার এইচ. এস.সি পরিক্ষার আর খুব বেশি দিন দেরি নেই, এক মাসের ও কম সময়ে ফুল সিলেবাস সে কি ভাবে রিভাইস দেবে তা ভেবে কুল পাচ্ছে না তানহা।
ক্লাস শেষে, কলেজে সময় বা কাটিয়ে দ্রুত বাসার জন্য বেড়িয়ে গেলো মানহা।

আজ বৃহস্পতিবার, অর্ধেক ক্লাস হবার কারনে তানহা ভর দুপুর বেলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। খালি রিকশার আনা গোনা নেই বললেই চলে। তানহা রোদের মধ্যেই হাটা শুরু করলো। গরমে কানের পিঠ বেয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে, মানহা হাতে একটা ট্যিসু নিয়ে ঘাম মুছছে, হঠাৎ একটা রিকশা সামনে আসতেই, তানহা হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,

” চাচা যাবেন? ”

মাঝ বয়সী রিকশা চালক বললো,” কই যাবেন আপনে?”

” পলাশি বাজার। ”

” এই রইদে নিয়া যামু, ভারা একটু বাড়াইতে লাগবো?”

” কত দিবো চাচা?”

” একশ টাকা দিবেন৷ ”

” সত্তর টাকার ভাড়া একশ টাকা চাইছেন চাচা? আশি টাকা দিবো চলেন। ”

” না। একশ টাকা দিলে যামু না দিলে না। ”
বলেই রিকশা চালক রিকশা নিয়ে এগোতে শুরু করলো, তানহা বাধ্য হয়ে রিকশায় উঠে বসলো, বিপদের দিনে এতো কিপ্টামি করতে নেই৷ নিজের জন্যই খারচ করতে হয়…
রিকশা চলছে, পলাশী বাজারের উদ্দেশ্য, ধানমন্ডি ছাড়িয়ে নিউ মার্কেটে পড়লো বিশ্বাল জ্যাম৷ এই কাঠ ফাটা রোদে মানুষ এতো গ্যাদারিং করে কেনো তা, তানহা খুঁজে পায় না।
রোদে বসে থাকতে থাকতে তানহার গাল দুটো লাল বর্ন ধারণ করেছে।

তানহা ওরনার আঁচল দিয়ে চোখ মুখ মুছে নিলো৷
” আপা আপা। ” হঠাৎ কারো ডাকে তানহা মুখ থেকে আঁচল সরিয়ে নিলো। আট-নয় বছরের একটা মেয়ে রিকশার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে দুটো আইসক্রিম আর একটা রজনীগন্ধা ফুলের ছোট মালা৷
মেয়েটা ফুলের মালাটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
” আপা এডা আপনেরে দিতে বলছে।”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” কে?”

বাচ্চা মেয়েটা আংগুলের ইশারা করে দেখিয়ে বললো, ” ওই ভাইয়া দিতে বলেছে। ”

তানহা মেয়েটার ইশারার দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো, রাস্তার এক পাশে পুলিশ জিপের এক হাত ভর দিয়ে ইলহাম দাঁড়িয়ে আছে।আশে পাশে আরো কয়েক জন পুলিশ। বাতাসের কারনে ইলহামের চুল গুলো কপালে ছড়িয়ে যাচ্ছে, ইলহাম কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে নিলো।
তানহা ইলহামের দিকে আগের মতোই তাকিয়ে আছে৷ ইলহাম সানগ্লাস খুলে তানহার দিকে তাকালো, ঠিক তখনি সিগনাল ছাড়তেই রিকশা পূনরায় চলতে শুরু করেলো৷

তানহা রিকশার হুডির আড়াল থেকে ইলহামের দিকে লক্ষ্য করলো, এক সময় পেছনের দৃশ্য মিলিয়ে গেলো। তানহা হাতে অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভব করছে, তানহা হাতের দিকে তাকালো, আইসক্রিম গুলো গলতে শুরু করেছে। তানহা রজনী গন্ধা ফুলের ছোট মালাটা থেকে ঘ্রান নিলো। অতঃপর স্মিথ হেসে, আইসক্রিমে কামড় দিলো।
মনে মনে ভাবলো, লোকটা বড়ই অদ্ভুত ওপর দিয়ে শক্ত হলেও মনটা নরম-ই আছে। একদম লাভার ম্যাটারিয়াল।

শেহতাজ বেগম মাত্র জোহরের নামাজ আদায় করলেন। সোফার এক কোনে বসে, আছেন তিনি৷ হঠাৎ বেল বাজাতেই রহিমা এসে দরজা খুলে দিলো। তানহা বাসায় ঢুকতেই দাদীর দিকে তাকিয়ে বললো, ” কি অবস্থা দাদী? ”

” আমার অবস্থা তো ভালো। তুই তো গরমে চুপসে গিয়েছিস। ”

তানহা স্মিথ হেসে বললো, ” হ্যাঁ। তবে আজ আমার মুড টা ভালো তাই, এই গরমের কুল আছি। ”

” কেনো কি হয়েছে আজ? ”

” কিছু না। এমনি। ”

শেহজাদ বেগম আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ” এমনি এমনি কে কুল থাকে, আর ফুলের মালা কে দিলো?”

তানহা আমতা আমতা করে বললো, ” কেন আমি কি কিনতে পারি না।”

” কিনতে পারবি না কেনো? মেয়ে মানুষ নিজে ফুল কেনার থেকে অন্য কারো কাছ থেকে ফুল পেতে বেশি ভালোবাসে। ”

দাদী কথাটা ভুল বলে নি, সত্যি তো ফুল কেনার থেকে ফুল পেতে বেশি লাগে। আর তা যদি দেয় প্রিয় মানুষ টা। তাহলে তো অনূভুতিটা অন্যরকম। ভাবতে ভাবতেই তানহা জোরে হাঁচি দিলো। ট্যিসু দিয়ে নাকের পানি মুছতে মুছতে বললো,
” দাদী আমি রুমে যাচ্ছি। ”

” হ্যাঁ যা। কিন্তু হঠাৎ এতো শর্দি লাগলো কি ভাবে৷ ”

” গরমের জন্যই মনে হয়, তুমি চিন্তা করো না… ”

তানহা পূর্নরায় হাঁচি দিয়ে রুমে চলে গেলো। ভাগ্যিস হাঁচির ছুঁতোয় তানহা রুমে চলে এসেছে, না হলে দাদী আরো প্রশ্ন করতো। ভাবতেই ক্ষানিকটা সস্তি পাচ্ছে।

———————————————–

সন্ধ্যার শুরু, বিকেলের ঝাঁঝালো রোদ আস্তে আস্তে মিইয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সূর্যের কিরনের ঝলক গোধূলি বর্ন ধারণ করেছে৷
আকাশে দুটো শঙ্খচিল উড়ে বেড়াচ্ছে। মানহা এক দৃষ্টি শঙ্খচিল দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে, আকাশ ময় কি সুন্দর তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷

হঠাৎ ফোনের রিং টোন বাজতেই, মানহা বারান্দা থেকে ঘড়ে ছুটে এলো৷ ফোনটা হাতে নিতেই মানহার মুখে হাসির রেখা ফুটলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো…

” কি করছো? ”

” কিছু না। আপনি?”

” লাঞ্চ করলাম মাত্র৷ একটু পর ওয়ার্ডে যাবো। ”

মানহা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ” শুনেছি ডাক্তাররা নাকি খুব হ্যালথ কনসিয়াস হয়?”

” তা হয়। কেনো বলুন তো?”

” না মানে, সারে পাঁচটায় লাঞ্চ করছেন… ”

ওয়াহাব স্মিথ হেসে বললো,” ইমারজেন্সি ছিলো। একটা নয়, দুটো..”



চলবে

আমার পেইজ👉 Story by Ruhi jahan আমাই পেইজে লাইক দেয়ার আমন্ত্রণ রইলো ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here