শঙ্খচিল পর্বঃ-৪৩

0
1407

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৪৩


মানহা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
” শুনেছি ডাক্তাররা নাকি খুব হ্যালথ কনসিয়াস হয়?”

আচমকা প্রশ্নে ওয়াহাব একটু অবাক হয়ে বলো,” তা হয়। কেনো বলুন তো?”

” না মানে, সারে পাঁচটায় লাঞ্চ করছেন… ”

ওয়াহাব স্মিথ হেসে বললো,” ইমারজেন্সি ছিলো। একটা নয়, দুটো। আপনি লাঞ্চ করেছেন? ”

” হুম। এখন সবার জন্য চা বানাতে যাবো। রাখছি।”

” শুনুন। ”

” কি?”

” কি? মানে। একটু মিষ্টি ভাবে কথা বললে কি হয় হ্যাঁ? ”

মানহা ভেংচি কেটে বললো,
” উহ হুহ! আপনার সাথে যে ঘর করছি এটাই তো বেশি৷ ”

ওয়াহাব মিটি মিটি হাসলো, মানহা চুলে আগা মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,” কি বলবেন জলদি বলুন৷ ”

” মা কে গিয়ে বলবেন শুক্রবার সহ আমি তিন দিনের ছুটি পেয়েছি। আজ রাতের ট্রেনের বুকিং ও আমি দিয়ে রেখেছি। ”

” জ্বি আচ্ছা৷”

” আর হ্যাঁ। তানিয়া আপু আর দুলাভাইয়ের জন্য কিন্তু টিকেট কেটেছি, মা কে বলতে ভুলবেন না। ”

” ওকে ওকে, এক্ষুনি বলছি। ” বলেই মানহা ফোনটা কেটে দিলো।

শিহাব বসে বসে খাঁচার দুটো হলুদ পাঁখি কে খাবার দিচ্ছে। মানহা অবাক হয়ে বললো, ” এই পাখিটা কে তো আগে দেখি নি?”

” এটাতো বাবা এনেছে, গতকাল মায়ের জন্য৷ ”

” তানিয়া আপু দুলা ভাইয়ের চয়েজ তো খুব সুন্দর। হলুদ রং আপনার পছন্দ? ”

তানিয়া স্মিথ হাসলো। পেছন থেকে শাহেদ বললো, ” হলুদ রঙ তানিয়া দুচোখে দেখতে পারে না। ভার্সিটি লাইফের কথা, একদিন হঠাৎ খুব ঝড়ে একটা হলুদ কুটুম পাখি ক্যাম্পাসের মাঠে পড়ে ছিলো। আমি পাখিটাকে পেয়েছিলাম, আমার হাতে পাখি দেখে তানিয়া আমার কাছে এসেছিলো দেখতে। পাখির ওর পছন্দ হয়েছিলো, পাখির সুবাদেই ওর সাথে আমার প্রথম কনভার্শেন হয়েছিলো, তাই আমি পাখিটা ওকে দিয়ে দিয়েছিলাম। ”

মানহা চায়ের দুধ গরম দিয়ে বললো,
” তার পর কি হলো দুলাভাই? ”

শাহেদ তানিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, ” তার পরই তো প্রেমের শুরু। পাখির ছুতোয় ওর সাথে টুক টাক কথা বলতাম। তার পর সম্পর্কটা ফ্রেন্ডলি হয়ে গিয়েছিলো, তার পর তিন বছর প্রেম, আর বিয়ে। ”

” হাউ সুইট। তাই তানিয়া আপুকে গিফট দিলেন।”

” পাখি টা আমাদের ভালোবাসার সাক্ষি৷ আমি দেশের বাইরে চলে যাবার কিছু দিন আগেই পাখিটা মারা গিয়েছিলো।
হঠাৎ পাখিটার কথা মনে পড়লো, তাই এই হলুদ পাখিটা নিয়ে এলাম। ”
তানিয়া এক দৃষ্টিতে পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছে, অতীতের দৃশ্য গুলো মূহুর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠছে৷ পাখিটা মারা যাওয়ায় সেদিন অনেক কেঁদেছিলো। কারন, পাঁখিটা তাদের ভালোবাসার সাক্ষি বিয়ের সাক্ষি বিয়ের সাক্ষি। শাহেদ বিদেশে যাবার প্রস্তুতিতে এতোটাই ব্যাস্ত ছিলো, তানিয়ার কান্নার দিকে খেয়ালই করে নি সে।

” আপু চা… ” মানহার কথায় তানিয়ার ধ্যান ভাংলো। তানিয়া মানহার দিকে তাকিয়ে বললো,
” থ্যাংক ইউ।”

” ওয়েল কাম। খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে। ”

তানিয়া চায়ে কাপে চুমুক দিয়ে বললো, ” খুব ভালো। ”

শাহেদ বললো, ” এই না হলে বাড়ির বউয়ের হাতের চা।”
মানহা মুচকি হেসে, চায়ের ট্রে নিয়ে শ্বশুরি মায়ের রুমে দিকে চলে গেলো।

————————————————–

” মা আসবো?”

কুসুম বেগম খাতায় কিছু একটা লিখছিলেন। মানহার কথা শুনে আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
” এসো। ”

মানহা শ্বাশুড়ি মা কে চা এগিয়ে দিয়ে বললো, ” বাবা চা টা.. ”

” উনি ছাদে গিয়েছে৷আজানের আগেই চলে আসবেন।”

” ও আচ্ছা। মা উনি শুক্রবার সহ উনি, তিন দিন ছুটি পেয়েছেন। আজ রাতের ট্রেনের টিকিট বুক করেছেন। তানিয়া আপু দুলা ভাইয়ের জন্য ও। ”

কুসুম বেগম চায়ের কাপে, চুমুক দিয়ে বললেন, ” বাহ এতো কথা আমার ছেলে, তোমাকে বলতে বলেছে। অথচ আমাকে কল দিয়ে জানাতে পারলো না। ”

মানহা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, এ কোন বিপাকে পরে গেলো। মানহা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ মতি সাহেব রুমে এলেন, মানহা কে দেখে স্মিথ হেসে বললেন,
” কি গল্প হচ্ছে দুজনে মিলে। ”

কুসুম বেগম উত্তর দিলেন, ” কিছু না। ছেলে আমাকে ফোন না দিয়ে বউ কে ফোন করে জানাতে বলেছে আজ রাতে সবাই খুলনা যাচ্ছি। ”

” তাতে কি হয়েছে৷ এক জন কে জানালেই তো হয়েছে। ”

” কিছু হয় নি। আমার ছেলে এখন..”

মতি সাহেব কুসুম বেগম কে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ” চা টা বেশ হয়েছে মানহা। ”

মানহা শ্বাশুড় বাবার কথা শুনে একটু একটু হাসলো। মতি সাহেব আবার বললেন, ” প্রথম বার আসল বাড়ি যাচ্ছো, গোছ-গাছ আছে না। যাও মা সব কিছু গুছিয়ে নাও। ”

” আচ্ছা বাবা। ”

মতি সাথেব মজার ছলে বললেন,” আমার ছেলের জামা নিতে ভুলে যেও না। ”

” জ্বি আচ্ছা বাবা।” বলেই মানহা হাসলো।

————————————————–

কমলাপুর রেইল স্টেশন…….

রাত নয় টা কি নয়টা পনেরো বাজে। ধানমন্ডি থেকে দু’ঘন্টা জার্নি বাদে কমলাপুর রেইল স্টেশন। জনমানবের ভীর তার ওপর ভাবসা গরমে সবাই ক্লান্ত প্রায়। মাঝে মাঝে মেঘের গর্জন সবার মনোযোগ নিয়ে নিচ্ছে। ট্রেন স্টেশনে থামতেই পুরোনো যাত্রী সবাই নামতে শুরু করলো। ক্ষানিকের মধ্যেই স্টেশন ফাঁকা হয়ে গেলো। মেঘের গর্জন যেনো তাদের নিজেদের গন্তব্যে যাবার জন্য আরো তাড়া দিচ্ছে।
ওয়াবের বাবা মা, ওয়াহাব মানহা, এবং তানিয়া শাহেদ শিহাব সবাই ট্রেনে উঠে, নিজেদের কেবিনে প্রবেশ করলো।

ছোট্ট একটা এসি কেবিন দেখে মানহার চোখের নিন্দ্র উড়ে গেলো। এতো দিন ছলে বলে কৌশলে মানহা ওয়াহাব কে তাড়িয়ে দিয়েছে এখন এই একই কেবিনে তাকে থাকতে হবে। কেবিনের এক কোনে বসে মানহা আংগুল দিয়ে দাঁত কামড়াচ্ছে।
হঠাৎ ওয়াহাবের কেবিনে প্রবেশ করে বললো, ” আপনি আংগুল কামড়াচ্ছেন। কত হাজার জীবাণু আপনার পেটে প্রবেশ করছে জানেন। আপনি একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট আপনার কাছ থেকে এটা একদম আনএক্সপেক্টেড। ”

” আপনার জ্ঞান দেয়া হলো ডাক্তার সাহেব। ”

” কেনো?”

” আমি ঘুমাবো। বড্ড টায়ার্ড। ”

ওয়াহাব দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো ” উহু। ”

মানহা চমকে গিয়ে বললো, ” কি?”

ওয়াহাব মুচকি হেসে বললো, ” ঘুমাবেন না আজকে… ”

মানহা আমতা আমতা করে বললো, ” কেনো?”

ওয়াহাব মানহার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, ” একটু বাদেই জানতে পারবেন…”


ট্রেনের বাতাসে তানিয়ার চুল গুলো এলো মেলো হয়ে উড়ছে। তানিয়া জানালায় হেলান দিয়ে অন্ধকারে বাইরের দৃশ্য দেখছে।
শিহাব অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ দরজার খট খটানির শব্দ শুনতেই তানিয়ার চিমকে উঠলো, তানিয়া হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো, বারোটা এখনো বাজে নি। নিশ্চিত শাহেদ এসেছে, মদ খেয়ে মাতাল হয়ে।
তানিয়া খুব কষ্টে চাপা রাগ টাকে নিয়ন্ত্রন করে বললো,
” কে? ”

বাইরে থেকে শাহেদ বললো ” তানিয়া আমি শাহেদ। ”

‘মদ খেয়ে এলে না আজকে ওর খবর আছে। ‘ মনে মনে বলতে বলতে তানিয়া দরজা খুললো। হাতে হলুদ পাখির খাঁচা নিয়ে শাহেদ দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে না শাহেদ নেশা করেছে। তানিয়া আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে , শাহেদ পাখিটা রেখে বললো।
” কি দেখছো? ”

” তোমকেই দর্শন করছি। ”

শাহেদ কলার ঠিক করে বললো, ” আমাকে, কিন্তু কেনো?”

” দেখছি আজও তুমি মদ গিলেছো কিনা। ”

শাহেদ থতমত খেয়ে বললো, ” তু তু তুমি জানলে কি ভাবে?”

” দু দিন আগে। রাতের বেলা। তুমি মদ খেয়ে ঘুমের ঘোরে বিড় বিড় করছিলে তখন। ”

শাহেদ মুখ চুপসে পাঁখির খাঁচার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। জীবনেও সে ধারণা করে নি বউয়ের হাতে শেষে কি না তাকে ধরা খেতে হবে। লজ্জায় শাহেদ কেবিন থেকে বের হবার সিদ্ধান্ত নিলো।
শাহেদ যেই, বের হতে যাবে ঠিক তখনি, তানিয়া বললো,

” কোথায় যাচ্ছো? ”

” ইয়ে মানে বাইরে৷ তোমাদের ঘুমাতে যদি সমস্যা.. ”

” আমাদের সমস্যার কথা ভাবতে হবে না। তুমি শিহাবের পেছনে ওপাশে শুয়ে পড়ো।” বলেই তানিয়া জায়গা করে দিলো। ‘ বাইরে যাওয়ার ছুতোয় মদ গিলতে হবে না। ‘বিড় বিড় করে বললো।

” কিছু বললে?”

” কিছু না। ঘুমাও। ”


চলবে
পরবর্তী গল্প পেইজে দিবো সবাই আমার পেইজে লাইক দিয়ে রাখবেন 👉 Story by Ruhi jahan

NOTE : গল্পের রেস্পন্সিবল খুব কমে যাচ্ছে,গল্প পড়ে কমেন্ট করেন না। আপনাদের কয়ক সেকেন্ডের কমেন্ট একজন লেখক কে অনুপ্রেরণা দেয়৷
সামনেই আমার পরিক্ষা, গল্পের রেস্পন্সও কম তাই খুব একটা উৎসাহ পাচ্ছি না। আর কয়েক পর্বে গল্প শেষ করে দিবো, ভাবছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here