শঙ্খচিল পর্বঃ-৪৭

0
1406

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৪৭

তানহার জ্বর সারলো দু দিন পর। অবশ্য জ্বর পুরো পুরি সারে নি তবে আজকে তানহার শরীর টা একটু ভালো৷ দুপুরের পরে জ্বরটা ছাড়তেই, তানহা বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হলো। সে দিন ইলহাম কে দেখে প্রথম বার, জেনেছে ইলহাম ধূমপান করে। তার চেয়েও বড় কথা হলো ইলহামের সিগারেট খাওয়ার ধরণটা তার খুব চেনা, তবে তানহা চিনতে পারছে না।
দু দিন ধরে সে ভেবেই চলেছে। হঠাৎ তানহার খুনি লোকটার কথা মনে পড়লো। ইলহামের সিগারেট খাওয়ার ধরণ একে বারেই খুনি লোকটার মতো।

তবে ইলহামের মতো সুদর্শন যুবক কি ভাবে খুনি হতে পারে, আর ওই খুনি লোকটা তো কুচ কুচে কালো। তার চেয়েও বড় কথা ইলহাম একজন পুলিশ। একজন পুলিশ কেনো মার্ডার করতে যাবে। চিন্তায় তানহার মাথাটা গিজ গিজ করছে, সিগারেট খাওয়ার স্টাইলের মতো অতী তুচ্ছ বিষয় দেখে তানহা ইলহাম কে সন্দেহ করতে পারে না।
তানহার মনে এখন অনেক অনেক প্রশ্ন অনেক কৌতুহল। এর উত্তর শুধু ইলহাম দিতে পারবে।

” এই শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস তুই? ”

” একটু বাইরে যাচ্ছি দাদী। ”

” বাইরে যাচ্ছিস বুঝলাম। কিন্তু এই শরির নিয়ে বের হবি? ”

” কিছু হবে না দাদী তুমি ধরে দেখো এখন আমার জ্বর নেই। ”

” বাইরে যাওয়া কি খুব দরকার?”

” হ্যাঁ দাদী। ” বলেই তানহা শ্বাস ফেললো।
রেডি হয়ে তানহা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলো রিকশার জন্য। শাহবাগ অবশ্য খুব বেশি দূরে না। তবে হেটে যাওয়ার মতো শক্তি তার নেই। দাদীর সামনে সুস্থতার ভান করে তানহা বেরিয়ে এসেছে।
কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর তানহা একটা রিকশা পেলো, রিকশা চালকে তাড়া দিয়ে বললো,
” ভাই একটু দ্রুত যাবেন। আমার খুব তাড়া আছে। ”

রিকশার ওয়ালা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো, তানহার কথা মতোই দ্রুত রিকশা চালাতে শুরু করলো। মিনিট দশেক পর রিকশা থামলো শাহাবাগ থানার সামনে, তানহা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত থানায় ঢুকে গেলো। সবাই এক দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে, অন্য কোন দিন হলে তানহার অসস্থি লাগতো তবে আজ তার অসস্থি লাগছে বরং কে কি ভাবছে তাতে তার কোন যায় আসে না।
তনহা মনে হারুন রশীদ কে খুঁজিছে তবে পাচ্ছে না৷ তানহা একজন কন্টেবল কে জিজ্ঞেস করলো, ” এক্স কিউজ মি। ”

” জ্বি বলুন, জিডি..”

তানহা লোকটার কথা কেড়ে নিয়ে বললো, ” হারুন রশীদ স্যার কোথায়?”

” উনি ডিউটিতে আছেন। ”

” আর এস.আই ইলহাম? ”

” স্যার গত কাল রাতে বাড়ি গিয়েছে। এখনো আসেন নি। আজ ওনার ডিউটি মনে হয় নেই। ”

” আচ্ছা৷ ধন্যবাদ। ”

বলেই তানহা হাটতে শুরু করলো। আজকে যে ভাবেই হোক ইলহামের সাথে তার দেখা করতেই হবে। তানহা দাঁড়িয়ে আছে, এবং ভাবছে এখন সে কি করবে। থানায় না এলে নিশ্চিত সে বাসায় থাকবে, বাসায় থাকাটাই কমন।
পরক্ষনেই তানহা ভাবলো, যদি ইলহাম বাসায় না থাকে অন্য কোথাও গিয়ে থাকে!
তানহা ফোনটা বের করে, ইলহামের নম্বরে ডায়েল করলো কয়ক সেকেন্ডে পরেই সুকন্ঠে একজন মহিলা বললো, ‘ আপনার ডায়ল কথা নম্বর টি এই মূহুর্তে বন্ধ আছে। দয়া করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন। ‘

তানহা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো ধানমন্ডি ইলহামের বাসায় যাবে৷ যা হয় হোক, ইলহাম থাকুক চাই না থাকুক ইলহামের জন্য অপেক্ষা সে করবে। তানহা থানা থেকে বের হয়ে রিকশা নয়ে ধানমন্ডির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
বাড়ির নাম ‘কুসুমতি’ ভিলা, তানহা তার বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি চিনলেও এর আগে কখনো আসে নি সে৷ তানহাকে দেখা মাত্র দারোয়ান বললো,

” কাকে চাই। ”

” আমি মানহার ছোট বোন। ইলহামের সাথে দেখা করতে এসেছি । ”

দারোয়ান গেট খুলে দিয়ে বললো, ” সাব মনে হয় উপরেই আছে।”

” আচ্ছা। ” বলেই তানহা দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে গেলে গেলো। শিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে তানহা কলিং বেল বাজাতেই, ইলহাম ভ্রু কুচকিয়ে দরজার দিকে তাকালো। ভর বিকেলে আবার কে এলো, ভাবতে ভাবতেই ইলহাম দরজা খুলে দিয়ে চোখ চরক করে তাকিয়ে রইলো।
দু দিন আগেই যে মেয়েটা জ্বরের ঘোরে কাতরাচ্ছিলো, সে মেয়টাই আজ তার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ইলহাম অবাক হয়ে বললো,

” তুমি?”

” হুম। ভেতরে আসতে পারি। ”

ইলহাম দরজা ছেরে সরে দাঁড়ালো। তানহা পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতেই বাসায় সিগারেটের গন্ধে তানহার কাঁশি এলো। তানহা নাক চেপে দাঁড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। তানহা ভেতরে গিয়ে সোফায় বসতে বসতে বললো,
” আপুরা এখনো আসে নি। ”

ইলহাম ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো, ” কাল, পরশুর মধ্যেই চলে আসবে৷ ”

” ও আচ্ছা। ”

” কি খাবেন বলুন চা নাকি কফি নাকি অন্যকিছু। ”

” চা। দুধ চা। দুই লিকারের বেশি করে চিনি দিয়ে। ”

ইলহাম উঠে চা বানাতে চলে গেলো। তানহা টেবিলে রাখা কাপ গুলোর দিকে তাকালো, ছয়- সাত টা কাপ টেবিলে অগোছালো ভাবে রাখা নিশ্চয়ই কফি খেয়ে কাপ ফেলে রেখেছে। তানহা উঠে দাঁড়ালো, বাসাটা ঘুরে দেখার জন্য৷ বারান্দা থেকে আসার সময় একটা রুমের দরজা খোলা পেলো, একটু এগোতেই দিগারেটের গন্ধের তীব্রতা বেড়ে গেলো। তানহার বুঝতে আর বাকি রইলো না, এটাই ইলহামের রুম।

বদ্ধ রুমটায় তানহা প্রবেশ করলো, ঘরে খুব বেশি জিনিস নেই৷ একটা খাট পড়ার টেবিল এবং আলমারি টা৷ সাথেই একটা ড্রেসিং টেবিল। তানহা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের মুখটা একবার দেখলো, হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের সাইডে তাকাতেই দেখলো মেক আপের কিছু জিনিস রাখা। তানহা কৌতুহল বসত ধরতেই চমকে উঠলো। কারন মেক আপ গুলো, ছদ্দবেশ নেওয়ার জন্য নকল গোঁফ, মোছ , কালো, শ্যাম বর্নের মেক-আপ রাখা। তানহার হাত পা মৃদু কেঁপছে। একই ধুমপানের স্টাইল, কালো হবার মেক আপ, প্রায় একই শরীরে গঠন। তানহার গলা শুকিয়ে আসছে।
তানহা দৌড়ে বের হতে যাবে ঠিক তখনি ইলহামের সাথে ধাক্কা খেলো।

তানহা এক দৃষ্টিতে ইলহামের দিকে তাকিয়ে রইলো। খুনি লোকটার চোখ দুটো সে কোথায় যেনো দেখেছিলো। হঠাৎ ইলহামের চোখের দিকে তাকাতেই তানহা দুটো চোখের সাথে মিল খুজে পাচ্ছে। ইলহাম গম্ভীর কন্ঠে বললো,
” আপনি এখানে কি করছেন?”

তানহা কথা বলতে পারছে না, খুব কষ্টে অস্ফুট কন্ঠে বললো,
” আপনার রুমের দরজাটা খোলা ছিলো, তাই এলাম। ”

” আপনার চা তৈরি, ড্রইং রুমে চলুন। ”
বলেই ইলহাম হাটতে শুরু করলো। তানহা ইলহাম কে থামিয়ে দিয়ে বললো,
” শুনুন। ”

” হু। ”

” এই মেক আপের জিনিস কার।”

ইলহাম ভ্রু কুচকিয়ে বললো, ” আপনি ওগুলো ধরেছেন কেনো?”

” আমি ধরিনি। শুধু দেখেছি। বলুন এগুলো কার?”

ইলহাম দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত কন্ঠে বললো, ” এতো কিছু যেনে আপনি কি করবেন। আমার ব্যাপারে কেউ কিছু জানুক আমি চাই না। ”

বলেই ইলহাম বেরিয়ে গেলো। তানহা দ্রুত ইলহামের পিছু পিছু গিয়ে ইলহামের পথ আটকিয়ে দিয়ে ইলহামের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
” কে আপনি? ”

ইলহাম অবাক হয়ে বললো, ” আমি ইলহাম। ”

তানহা হেসে চিতকার দিয়ে বললো, ” নাম ইলহাম৷ কিন্তু আসলে একটা খুনি। একটা সাইকো। আপনি একটা খুনি, মিথ্যুক জালিম..”
বলেই তানহা বসে পড়লো তার চোখ দিয়ে অনবরত জল গরিয়েই পড়ছে ।

ইলহাম আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে, তানহা কান্না করতে করতে বললো,
” আপনি একটা খুনি। খুনি।খুনি।
কেনো আমার সাথে এমন টা করলেন। কি করেছিলাম আমি। আমার দোষটা কি ছিলো বলুন।”

ইলহাম চুপ করে আছে তার চোখ দুটো লাল বর্ন ধারণ করেছে, তানহা ইলহাম কে ঝাকিয়ে বললো, ” বলুন। আজ আপনাকে বলতেই হবে। কেনো আপনি এসব করলেন.. আমার দোষটা কি ছিলো, তুলে এনে কেনো ভয় দেখিয়েছিলেন..”

ইলহাম বলতে শুরু করলো, ” আমি খুন করি নি। ইনকাউন্টার করেছিলাম। ছন্দবেশে মাফিয়ার চেলা কে ধরতে গিয়েছিলাম। যাদের যাদের মেরেছি কেউ নির্দোষ ছিলো না। খুন, ধর্ষণ, লুট, ড্রাগ সাপ্লাই এমন কোন কাজ নেই যে ওরা করতো না। বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী মাদক ব্যাবসায়ীদের শাস্তি একটাই সেটা হলো ক্রস ফায়ার। আমি আমার ডিউটি পালন করেছি। নিজের রুপ বদলে ওদের ধরেছি…”

” তাই বলে খুন করার আগে নৃশংস ভাবে মারবেন।”

” ওদের সাথে আমার কিছু ব্যাক্তিগত হিসাব ও আছে। আমার অতীত জরিয়ে আছে, যে কারনে আমি পুলিশের চাকরি করতে এসেছি। ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” অতীত? ”

ইলহাম বলতে শুরু করলো…



চলবে

আমার গ্রুপের জয়েন করার অনুরোধ রইলো 👉 https://www.facebook.com/groups/346259796841444/?ref=share

গঠন মূলক মন্তব্য আশা করি 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here