শঙ্খচিল পর্বঃ-৪৮

0
1414

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৪৮ (ইলহামের অতীত)


” আপনি একটা খুনি। খুনি।খুনি।
কেনো আমার সাথে এমন টা করলেন। কি করেছিলাম আমি। আমার দোষটা কি ছিলো বলুন।”

ইলহাম চুপ করে আছে তার চোখ দুটো লাল বর্ন ধারণ করেছে, তানহা ইলহাম কে ঝাকিয়ে বললো, ” বলুন। আজ আপনাকে বলতেই হবে। কেনো আপনি এসব করলেন.. আমার দোষটা কি ছিলো, তুলে এনে কেনো ভয় দেখিয়েছিলেন..”

ইলহাম বলতে শুরু করলো, ” আমি খুন করি নি। ইনকাউন্টার করেছিলাম। ছন্দবেশে মাফিয়ার চেলা কে ধরতে গিয়েছিলাম। যাদের যাদের মেরেছি কেউ নির্দোষ ছিলো না। খুন, ধর্ষণ, লুট, ড্রাগ সাপ্লাই এমন কোন কাজ নেই যে ওরা করতো না। বাংলাদেশ আইন মাদক ব্যাবসায়ীদের শাস্তি একটাই সেটা হলো ক্রস ফায়ার। আমি আমার ডিউটি পালন করেছি। নিজের রুপ বদলে ওদের ধরেছি…”

” তাই বলে খুন করার আগে নৃশংস ভাবে মারবেন।”

” ওদের সাথে আমার কিছু ব্যাক্তিগত হিসাব ও আছে। আমার অতীত জরিয়ে আছে, যে কারনে আমি পুলিশের চাকরি করতে এসেছি। ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” অতীত? ”

ইলহাম বলতে শুরু করলো, ” পুলিশের চাকরিতে আমার কোন কালেই কোন আগ্রহ ছিলো না। ইচ্ছে ছিলো, ফিজিক্সের ওপর পি.এইচ.ডি করবো। ছয় বছর আগের কথা, তখন আমি সবে মাত্র অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ি, অনামিকা নামের একটা মেয়ে আমাকে পছন্দ করতো, আমার পিছনে ঘুরতো, প্রেম ভালোবাসা বিষয়ে কখনো আমার ইন্টারেস্ট ছিলো না, বিধায় অনামিকা কে আমি পাত্তা দিতাম না। অনামিকা হাল ছারে নি, সেই আমার জন্য আগের মতোই পাগলামি করতো, ক্যান্টিনে বসে থাকা, ক্লাসে ফলো করা। ক্লাস শেষে আমাকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো। ”

ভলেই ইলহাম চুপ করে রইলো। ইলহাম এক দৃষ্টিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। তানহা ঢোক গিলে বললো, ” তারপর? ”

ইলহাম শ্বাস ফেলে বললো, ” একদিন ভার্সিটিতে গিয়ে শুনলাম, আনামিকা এক্সিডেন্ট করেছে। দ্রুত হাস্পাতালে পৌঁছালাম কিসের যে এতো তাড়া ছিলো জানি না। গিয়ে দেখি অনামিকার পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। পা টা প্লাস্টার করা এবং অনামিকা ঘুমিয়ে আছে। আমি রুমে প্রবেশ করতেই অনামিকা জেগে গেলো। চোখ মেলে মুচকি হাসি দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সেই মূহুর্তে অনুভব করলাম। আমিও অনামিকা কে ভালোবাসি। নিঃস্বার্থ ভাবে নয়, অনামিকার ভালোবাসার বদলেই ভালোবাসি।
আমাদের প্রেম শুরু হলো। একবছর সব ঠিক ঠাক ছিলো। তখন আমি ফোর্থ ইয়ার পড়ি এবং অনামিকা থার্ড ইয়ারে।
আমার ফাইনাল পরিক্ষা আর মাত্র কিছু দিন বাকি, তাই পড়া শোনাতে ব্যাস্ত ছিলাম, অনামিকার সাথে তেমন দেখা হতো না। ”

বলেই ইলহাম থেমে গেলো। তার কন্ঠস্বর জরিয়ে আসছে৷ লাল বর্ন চোখ দিয়ে টুপ করে পানি পড়ছে। তানহা বিস্ময় নিয়ে ইলহামের দিকে তাকিয়ে আছে, ইলহামের মতো কঠিক পুরুষ কান্না করতে পারে তার ধারনা ছিলো না। দাদী সব সময় বলতো পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে নেই, ইলহামের মতো হৃদয়হীনা মানুষ যদি কান্না করতে পারে, তানহা নিশ্চিত ইলহামের সাথে কিছু একটা তো হয়েছে, সে মিথ্যা বলছে না।
তানহা ইলহানের বলার অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। ইলাহাম অন্য দিকে তাকিয়ে কান্না লুকানোর চেষ্টা করে বললো,

” একদিন সন্ধ্যায় অনামিকা আমাকে রবীন্দ্রসরবরে তে দেখা করতে বললো, পড়ার ব্যাস্ততা থাকা স্বর্ত্তেও আমি না করতে পারলাম না। ”
ইলহাম স্মিথ হেসে বললো, ” না করবো কি ভাবে আফটার অল প্রেমিকার আবদার বলে কথা। হাতে এক গুচ্ছো গোলাপ ফুল নিয়ে উপস্থিত হলাম রবীন্দ্র সরোবরেতে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ অনামিকার ডাকে ধ্যান ভাংলো আমার। রাস্তার বিপরীত পাশে অনামিকার রিকশা থেমিয়ে ভাড়া মিটিয়ে রোড ক্রস করবে, ঠিক তখনি একটা কালো গাড়ি এসে অনামিকা কে তুলে নিয়ে গেলো। ওই মূহুর্তে দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো আমার। ”

তানহা তাড়া দিয়ে বললো, ” তার পর? তার পর কি হলো অনামিকার বলুন না…?”

” গাড়ি নম্বর টা আমার মনে ছিলো। পুলিশে জিডি করলাম করলাম। অনামিকার গার্ডিয়ান ছাড়া তারা ব্যাপারটা আমলে নিলো না। অনামিকা ছিলো বাবা মা ছাড়া এতিম একটা মেয়ে চাচা চাচীর কাছে সে বড় হয়ে ছিলো। অনামিকার চাচা চাচিরা থানায় এলেন হাজার দশেক টাকা ঘুষ নিয়ে নিভেইস্টিগেশন করলেন, তিন-চার দিন পর কোন প্রমাণ না পেয়ে ব্যার্থ হলেন, কেইসের ফাইলটা রোজকার নিয়মে নিচে পড়ে ধূলোময়লায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। পুলিশ কিছুই করলো না।
বন্ধুর বড় ভাইয়ের সাহায্য গাড়ির মালিক কে খুঁজে বের করলাম, গাড়িটা ছিলো চোরাই মাল। গাড়ির মালিক জানালো, বড় মাপের মাফিয়ার চ্যালা তার গাড়িটা ছিনতাই করেছে, প্রানের ভয়ে লোকটা কিছু বলে নি। মাফিয়ার দলের এক ছেলেকে তুলে এনে ভয় দেখিয়ে জানতে পারলাম, অনামিকা কে ওরা ওরা ধর্ষণ করে ফেলে রেখেছে। কিছু দিন বাদে পাঁচার করবে।”

তানহা হা করে করে কথা গুলো শুনছে, অজান্তেই তানহার চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসছে। তানহা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো, ইলহাম ভুল কিছু করে নি। নৃশংস মৃত্যুটাই ওদের প্রাপ। তানহার ভাবনা ভাঙ্গিয়ে ইলহাম বললো, ” তখন পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি। পুলিশ কোন স্টেপ নিচ্ছিলো না। তাই নিজে সিদ্ধান্ত নেই অনামিকা কে উদ্ধার করবো, আমার প্রান যায় যাক তাতে আমার কিছু যায় আসে না৷ আস্তে আস্তে আরো কয়েকটা ছেলেকে আটকে টর্চার করলাম। ব্যাপারটা ওদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো, অনামিকা কে ওদের লিডারের ব্লাক কোবরার হাতে তুলে দিলো। ক্ষুধার্ত দূর্বল, অসহায় মেয়েটাকে ছিঁড়ে খেলো পিশাচ টা। ”

তানহা চোখের সামনে সব কিছু ভেসে উঠলো। তানহা কান চেপে বললো, ” থামুন ইলহাম৷”

” দু দিন পড়ে অনামিকার লাশ মিরপুর ব্রিজের নিচে পাওয়া গেলো। জানোয়ার গুলো নিষ্পাপ মেয়েটার শরিরের কোন অংশ অত্যাচার করতে বাকি রাখে নি। ওর দলের ছেলেদের টর্চারের বদলে আমার সাথে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ব্লাক কোবরা অনামিকা কে খুন করেছে৷ শুধু অনামিকার না শত শত মেয়েদের রেইপ করে বিদেশে পাঁচার করেছে এরা, আর করেই চলেছে আর করতেই থাকবে।
অনামিকার লাশে সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ব্লাক কোবরার কে এর চেয়েও দ্বিগুন টর্চার করবো৷ ওকে আমি মারবো না। একটু একটু করে শেষ করবো। শত শত বাবা-মায়ের মেয়ে হারানোর আহাজারির প্রতিশোধ নেবো আমি। ”

তানহা চুপ করে রইলো। ইলহামের প্রতি তার এখন আর কোন রাগ ঘৃনা কাজ করছেনা। বরং ইলহাম যা করেছে, ইলহামের স্থানে অন্য কেউ থাকলে হয়তো এমন সাহসিকতার কাজ করতো না। গুটিয়ে এক কোনে পড়ে থাকতো। ইলহামে সৎ সাহস আছে বলেই সে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে। তানহার মনে বার বার একটা প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছে, তানহা সংকোচ নিয়ে বললো,

” তাহলে আমি কি দোষ করে ছিলাম। আমার অপরাধটা কি ছিলো। আমাকে কেনো তুলে এনে প্রান নেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছিলেন? ”

” কোন দোষ ছিলো না। যদি খুনের ব্যাপারটা কাউকে বলে দেন। সবটা ফাঁস হয়ে যাবে তাই, ভয় দেখিয়েছিলাম।
বৃষ্টির দিনে আমি ছদ্দবেশে রিকশাওয়ালা সেজে দুটো মাদক পাচারকারী কে ধরতে গিয়েছিলাম। রাস্তায় আপনি থামিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। ”

” আমি জানি। আমি মারতে দেখেছিলাম আপনাকে। সে দিন লেকেও আপনি ছিলেন। কালো মুখ কিন্তু ফর্সা বাহু দেখে আমার বহু দিন আগেই সন্দেহ হয়েছিলো। তবে বিশ্বাস করুন আমি কখনো ভাবি নি লোকটা আপনি হবেন। ”

” ছদ্দবেশের আইডিয়াটা অনামিকার ছিলো। স্কুল লাইফে নাকি অনামিকা ছন্দবেশে যেমন খুশি তেমন সাজে অংশগ্রহণ করতো। কেউ অনামিকা কে চিনতে পারতো না। ”

” আপনি কি আমাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন নাকি খুন করতে চেয়েছিলেন ইলহাম। ”

ইলহাম তানহার দিকে তাকিয়ে বললো,” খুন করতে চাইলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতেন না। এতো দিনে সৃষ্টি কর্তার কাছে পৌছে যেতেন। আমি শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছি যাতে, আপনি এই বিষয়ে কৌতুহল না দেখান। কিন্তু প্রতিবার আপনার কৌতুহল বেরেই যেতো। ”

” শুধু কৌতুহল নয় জেদ ও। ঘৃনা করতাম আমি আপনাকে। চেয়েছিলাম আপনার ফাঁসি হোক। লাইফে সবচেয়ে বেশি, ওই খুনি টাকে ঘ্রিনা করেছিলাম আমি। আর সেই খুনিটাই আপনি। ”

” হ্যাঁ আমি। যা করেছি তার জন্য এক বিন্দুও অনুতপ নেই আমার। আমার জীবন আমি অনামিকার নামে সমর্পণ করে দিয়েছি। কেউ আমায় খুনি ভাবুক ঘ্রিনা করুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না। অনামিকার মৃত্যুর প্রতিশোধ যে পর্যন্ত আমি নিতে না পারছি, ব্লক কোবরাকে যে পর্যন্ত ধরতে না পারছি আমার কোন শান্তি নেই। আমার লক্ষ একটাই ব্লাক কোবরা। ”

” কে এই ব্লাক কোবরা? ”



চলবে
আমার গ্রুপ-RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি
আমার পেইজ- Story by Ruhi jahan

যারা আমার গ্রুপে, এবং পেইজে লাইক এবং জয়েন করেন নি। সবাইকে জয়েন হবার অনুরোধ রইলো 🌹
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই।
গঠন মূলক মন্তব্য আশা করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here