শঙ্খচিল পর্বঃ-৫০

0
1310

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫০

রাত দশ টা কি সারে দশটা বাজে, তানিয়া সহকারী মহিলা কে রান্নাঘর গোছানো দ্বায়িত্ব দিয়ে, মাত্র রুমে ঢুকলো। ফ্যান অন করে বসতে, হঠাৎ শাহেদ রুমে এলো। তানিয়া এক পলক তাকিয়ে দেখলো, শাহেদ নার্ভাসনেসের চোটে ঘামছে, মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে খুব চিন্তায় আছে। হঠাৎ শাহেদ বলতে শুরু করলো,

” তানিয়া আমি কিছুদিনের ছুটিতে এসেছিলাম। আমাকে এই সপ্তাহের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে। ”

তানিয়া অবাক হয়ে বললো, ” তুমি সত্যি চলে যাবে?”

শাহেদ আমতা আমতা করে বললো, ” হ্যাঁ তানিয়া। ”

তানিয়া জরানো কন্ঠে বললো, ” চলে যাবে যেহেতু তাহলে কেনো এসেছিলে? কে আসতে বলেছিলো তোমাকে? ”

শাহেদ চুপ করে রইলো, তানিয়া উচ্চ স্বরে বললো, ” বলো?”

” তানিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

তানিয়া কান্না জরানো কন্ঠে বললো, ” তোমার ভালোবাসা আমি দেখে নিয়েছি। তুমি এখন আমার রুম থেকে আসতে পারো। ”

” তানিয়া প্লিজ শোনো..”

তানিয়া শাহেদ কে থামিয়ে দিলো। অতঃপর নিজেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রাতের দক্ষিনা বাতাস বারান্দায় প্রবেশ করছে। তানিয়া বেতের মোড়ায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। বাতাসে চুল গুলো মৃদু উড়ছে, দৈর্ঘ্য ক্ষন কান্নাকাটি কারনে তার চোখ দুটো ফুলে আছে, নাকটা লাল বর্ন ধারণ করেছে।
আচ্ছা মানুষ কি মানুষের জীবনের মায়ায় জরানোর জন্য আসে? মায়ার বাঁধনে জরিয়ে তারপর হুট করে সে বাঁধন ছিঁড়ে চলে যায়। তাহলে তারা আসেই বা কেনো?

শাহেদ এই প্রথম তার সাথে এমন টা করেনি। বিয়ের বছর তিনেক পরে সে বিদেশে পাড়ি জমায়, তানিয়া এবং শিহাব কে রেখে, একবার টিও সে ভাবে নি একা একজন মা কিভাবে ছোট বাচ্চা,টাকে বড় করে তুলবে। তানিয়া শিহাব কে বাবার কাছ থেকে বঞ্চিত করে নি। দ্বিতীয় বার তানিয়া চেয়েছিলো নতুন করে বাঁচতে। নতুন করে সব কিছু শুরু করতে। কিন্তু শাহেদ বেইমান স্বামীর মতো দ্বিতীয় বার একই কাজ করলো।
হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতেই তানিয়া চোখ দুটো দ্রুত মুছে নিলো৷ তানিয়া পিছনে ঘুরে দেখলো, শিহাব দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

” মা তুমি কান্না করছো?”

” না সোনা। তুমি ঘুমাও নি?”

” ঘুম আসছে না মা। ”

তানিয়া ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বললো, ” চলো আমি তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেই। ”
বলেই তানিয়া রুমের দিকে হাটা শুরু করলো। শিহাব মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
” মা। বাবা যাবে না?”

” না, বাবা যাবে না। তুমি আমার ছেলে। আমি তোমার বাবা আমি তোমার মা। বুঝেছো?”

শিহাব মাথা নাড়ালো। আড়াল থেকে শাহেদ তানিয়ার কথা গুলো শুনতেই শ্বাস ফেললো৷ বুকের ভেতরটা তার প্রচন্ড ছটফট করছে। মনে হচ্ছে খুব বড় কিছু হারিয়ে গিয়েছে তার৷

—————————————————

” কোথায় যাচ্ছেন? ”

ওয়াহাব অবাক হয়ে বললো, ” বারান্দায় যাচ্ছি। আপনি একা ঘুমাবেন তাই। ”

মানহা ভেংচি কেটে বললো,” এতো নেকু সাজতে হবে না। পাসে এসে শুয়ে পড়ুন৷ ”

ওয়াহাব মনে মনে হাসলো। অতঃপর বললো,” রাতে আমার হাত পা চলে বেশি। যদি আপনাকে জরিয়ে ধরি? ”

মানহা ভ্রু কুচকিয়ে বললো,” আপনার বুকে খামচি দেবো বুঝলেন। বুঝে শুনে হাত পা নাড়াবেন। ”

“হুম। বুঝেছি। নাহলে মানহা বিড়াল আঁচড় দেবে৷ ”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” কে বিড়াল হু? হু? হু?”

ওয়াহাব ফিক করে হেসে দিলো অতঃপর দ্রুত বিছনায় শুয়ে পড়লো। ড্রিম লাইট জ্বালায়ে মানহা ও শুয়ে পড়লো। মানহা বিপরিত পাশে মুখ করে শুয়ে আছে হঠাৎ চোখে তন্দ্রা ভাব চলে আসতেই ওয়াহাব মানহাকে জরিয়ে ধরলো। মানহা ভয়ে চমকে উঠলো, হঠাৎ ওয়াহাব তার বাহুডোরের কাছে নিয়ে আসতেই মানহা চুপ করে শুয়ে রইলো।
ওয়াহাবের স্পর্শ তার ভীষণ ভালোলাগছে। যেনো কত কাল ধরে মানহা এই ছোঁয়ার অপেক্ষাতেই ছিলো।

—————————————————

ঘন্টা খানেক আগেই মানহা মেডিকেল কলেজ থেকে বাড়ি ফিরেছে। তানিয়া আপু ভর দুপুরে শুয়ে আছে দেখে মানহা ক্ষানিকটা অবাক হলো, ঘুমি আছে ভেবে আর ডাক দিলো না। ফ্রেশ হয়ে দু কাপ চা নিয়ে মানহা তানিয়ার রুমে প্রবেশ করলো। শাহেদ রুমে নেই, শিহাব ও নেই, হতো বাইরে গিয়েছে ভাবতেই মানহা তানিয়াকে ডাক দিলো, দু-তিনেক বার ডাক দিতেই তানিয়া উঠে বসলো। হাই দিয়ে বললো, ” মানহা তুমি কখন ফিরলে?”

” ঘন্টা ক্ষানেক আগেই? আপনার কি শরির খারাপ আপু?প্রেশার টা চেক কররো?”

তানিয়া চায়ের চুমুক দিয়ে বললো, ” না৷ আমি ঠিক আছি? শিহাব কে দেখেছো?”

” মেডিক্যাল থেকে ফেরার পর, শিহাব, দুলাভাই কাউ কেই তো দেখলাম না। ”

হঠাৎ তানিয়ার ভেতর টা ছেদ করে উঠলো। তানিয়ার হাত দুটো ভীষণ কাঁপছে। তানিয়া ভীত কন্ঠে বললো ” ওরা কোথায় গিয়েছে জানো?”

মানহা মাথা দুলিয়ে না করলো।তানিয়া দ্রুত শাহেদের ফোনে ডায়েল করলো, পাশের রুমেই ফোন বাজছে। মানহা দ্রুত শাহেদের ফোন এনে তানিয়ার হাতে দিলো। তানিয়া হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো, মানহা-ও তানিয়ার পিছু পিছু গেলো।
” মাআআআআ…”
হঠাৎ শিহাবের ডাক শুনে তানিয়া চমকে ওপরে তাকালো। ছাদের রেলিং ধরে শিহাব দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই শাহেদ দাঁড়িয়ে আছে। তানিয়া চোখ বুজে বুক ভরে স্বাস নিলো, কয়েক মূহুর্তের জন্য তানিয়া ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। তানিয়া ছাদে উঠে শিহাব কে জরিয়ে ধরে আদর করলো,
” আমাকে না বলে কেনো এখানে এসেছিস। জানিস কি ভয় পেয়েছিলাম আমি। ”

” মা আমি তো বাবার সাথে এসেছি। ”
তানিয়া শাহেদের দিকে তাকালো। শাহেদ আমতা আমতা করে বললো, ” আমি একটু ঘুরতে…”
শাহেদের কথা শেষ হবার আগেই তানিয়া নিচে নেমে এলো।

————————————————

বাড়ির নাম কুসুমতি ভিলা। সন ২০০৭। তানহা একবার মেইন গেটের পাশে নেইম প্লেট টার দিকে এক নজর তাকালো। গেইটে দারোয়ান নেই। গেইট টা ভেতর থেকেই খোলা। তানহা খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
শিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই তানহার হৃদপিণ্ড দপ দপ করতে শুরু করলো, পা দুটো তার ভারী হয়ে আসছে। খুব কষ্টে তানহা দরজার কাছে এলো, কলিং বেলের চাপ দিতেই এক মিনিট পর খট করে দরজা খোলার শব্দ হলো। তানহা চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে৷
ইলহামের কন্ঠ শোনার জন্য অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। ইলহামের কন্ঠ শুনে নয়, মানহার কন্ঠ কন্ঠ শুনে তানহা চোখ মেলে তাকালো। মানহা তার ছোট বোনকে আলিংগন করে বললো, ” কেমন আছিস তানহা? ”

” ভালো। তুমি কেমন আছো?”

” ভালো।ভেতরে আয়। ”
তানহা জুতো খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বললো, ” দুলা ভাই কেমন আছেন আপু। ”

” ভালো আছে। উনি এখন হস্পিটালে আছেন। ”

তানহা সোফায় বসলো, মানহার সাথে গল্প করতে করতে একজন মহিলা এসে এসে কিছু নাস্তা দিয়ে গেলো। মানহা তানহাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
” তুই ওয়াশ রুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আয়। আমি অপেক্ষা করছি। ”

তানহা উঠে দাঁড়ালো ওয়াশ রুমে যাবার জন্য৷ তানহা হাত মুখ ধুয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হতে যাবে হঠাৎ ইলহামের ঘরের দিকে তানহার চোখ পড়লো। ঘড়টা দরজা মৃদু আটকানো। রুমের ভেতরে কি ইলহাম আছে, হয়তো নেই। থাকলে আবশ্যই দরজাটা খোলা থাকতো। তানহার কৌতুহল বসত দরজাটা খুলে রুমে প্রবেশ করলো।
ঠিক আগের মতোই আছে রুমটা। হঠাৎ পেছনে ঘুরে তাকিতেই তানহা চমকে উঠলো, মানহা দাঁড়িয়ে আছে তার পেছোনে।

তানহা আমতা আমতা করে বললো, কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি মানহা বললো,” তুই কিভাবে জানলি ওয়াশ রুমটা এই দিকে?”

তানহা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো অতঃপর বললো, ” এমনি গেস করলাম। খুঁজতে খুঁজতেই পেয়ে গেছি। হঠাৎ ইলহামের রুমের দিকে… ”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” এটা ইলহামের রুম তুই কিভাবে জানলি? এটা নিশ্চয়ই তোর অনুমান না। ”

তানহা ভেবে পাচ্ছে না। এবার কিভাবে বলবে, যাই বলুক না কেনো সন্দেহের তীর তার দিকেই আসবে৷ মানহা থম থমে মুখ করে বললো,
” তুই এই বাড়িতে এর আগে এসেছিলি। তাই তো?”

তানহা মাথা দুলিয়ে বললো, ” হ্যাঁ। ”

চলবে
গঠন মূলক মন্তব্য আশা করি 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here