শঙ্খচিল পর্বঃ-৫২

0
1704

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫২

সকাল নয় টা বাজে, বাসার সবাই ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে। তানহা এক হাতে বই নিয়ে অপর হাতে খাবার খাচ্ছে। পড়া রিভাইস দিচ্ছে আজ তানহার এইচ.এস.সি পরিক্ষা শুরু, তানহা আর কিছুক্ষণ বাদেই এক্সাম দিতে যাবে।
নাস্তা শেষে তানহা বের হতে যাবে ঠিক তখনি, মুকুল সাহেব তানহাকে ডাক দিলেন। তানহা মুকুল সাহেবের কাছে যেতেই তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন। তানহা বাবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য বললো,
” বাবা আসছি। ”

” ঠিক মতো পরিক্ষা দিও।”

” আচ্ছা বাবা। দাদী আসছি আমি। ”

শেহতাজ বেগম কিছু একটা পড়ে তানহার গায়ে ফুঁ দিয়ে বললেন, ” সাবধানে যাস। ”
তানহা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর দ্রুত বেড়িয়ে গেলো।
তানহা বাসার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, রিক্সার জন্য। কিছুক্ষণ বাদে রিকশা পেতেই তানহা উঠে পড়লো। রিকশা এখনো পলাশি ছাড়ায় নি হঠাৎ তানহা সামনের রাস্তায় তাকাতেই চমকে উঠলো। হাতে একটা ওয়াকিটকি নিয়ে ইলহাম দাঁড়িয়ে আছে।

তানহা রিকশা থামাতে বলবে কিনা বুঝতে পারছে না। তানহা একবার ঘড়িটার দিকে তাকালো, নয় টা বিশ বাজে, তাকে নিজের সিট খুঁজতে হবে, হাতে সময় নেই তাই আর রিক্সা থামাতে বললো না।
রিকশা থামলো ধানমন্ডি ঝিগাতলা বাস স্ট্যান্ড রোডে তানহা রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত কলেজের দিকে হাটা শুরু করলো৷ এক্সাম সিট খুঁজে পরিক্ষার জন্য প্রস্তুত হলো…

————————————————

কিছুক্ষণ আগেই মানহার ক্লাস শেষ হয়েছে, ডক্টর.রেহমান দেশের বাইরে থাকার কারনে, ওয়াহাব ক্লাস করাতো গত রাতে ডক্টর.রেহমান দেশে ফিরেছেন জেনে মানহার ক্ষানিকটা মন৷ খারাপ হয়েছিলো।
ক্যান্টিনে এক পাশের টেবিলে মানিহা বসে আছে, টেবিলে রাখা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই হঠাৎ তার সমনে এসে বসলো৷ মানহা কিছুটা বিব্রতবোধ করে বললো,
“কে আপনি?”

” লোকটা হন্ত দন্ত হয়ে বললো, ব্লাক কোবরার অনেক বিপদ। ব্লাক কোবরা কে ওই পুলিশ টা ছাড়বে না।”

” কে ব্লাক কোবড়া? তার নাম পরিচয় বলুন। পুলিশ কেনো-ই বা তাকে ধরবে? আর আমাকেই বা কেনো এ কথা বলছেন?”

লোকটা প্রতিউত্তরে কিছু বলেই হাফাতে হাফাতে আবার চলে গেলো। মানহা অবাক হয়ে ক্ষানিক টা বসে রইলো। উদ্ভট লোকটার আচারনের কথা ভাবতে ভাবতে মানহা ক্লাসে ঠিক মতো মনোযোগ দিতে পারলো না।
সুযোগ বুঝে নেটে ব্লাক কোবরা নামে সার্চ দিলো৷ তবে খুব একটা জানতে পেরেছে, বলে মনে হলো না। ক্লাস শেষে মানহা কলেজের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, মানহা এক মনে কিছু একটা ভেবেই চলেছে, হঠাৎ মানহার সামনে গাড়ি থামতেই মানহা কিছুটা চমকে তাকিয়ে রইলো,
গাড়ি থেকে ওয়াহাব বের হয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে স্মিথ হাসে বললো, ” ক্লাস শেষ?”

” হুম। ”

” লাঞ্চ করেনি এখনো?চলুন একসাথে লাঞ্চ করি। ”

” হুম। চলুন। ”
বলেই মানহা ড্রাইভিং সিটের পাশে বসলো, ওয়াহাব গাড়ি ড্রাইভ করছে, গাড়ি ট্রাফিক সিগনালে পড়তেই ওয়াহাব মানহার দিকে তাকালো, মানহা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু একটা ভেবেই চলেছে৷ ওয়াহাব ড্রাইভিং করতে করতে বললো,
” মানহা। আপনি কি ঠিক আছেন। ”

” হ্যাঁ। কেনো বলুন তো, ওয়াহাব।”

” অন্যমনস্ক লাগছে তাই বললাম। সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কি না।”

” আপনি কখনো ব্লাক কোবরা নাম শুনেছেন? ”

ওয়াহাব অবাক হয়ে বললো,” আপনি এই শব্দ কোথা থেকে শুনলেন? ”

” ক্যান্টিনে একটা লোক হন্ত দন্ত হয়ে, আমার সামনে বসলো, বললো…..” মানহার সব কথা শুনে ওয়াহাব বললো,
” আমি যতদূর শুনেছি ব্লাক কোবরা নাকি খুব ডেঞ্জারাস মাফিয়া। বাট আপনাকে ওই লোকটা কেনো ব্লাক কোবরা কথা জিজ্ঞেস করলো, বুঝতে পারছি না।”

” আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না।”

ক্ষানিক সময় নিরব থাকার পর ওয়াহাব গাড়ি থামিয়ে বললো, “চলুন সামনেই রেস্টুরেন্ট। ” মানহা ওয়াহাব নেমে রেস্টুরেন্টের দিকে গেলো। মানহা এবং ওয়াহাব লাঞ্চ করে ক্ষানিকটা সময় পর বাসায় ফেরার জন্য বেড়িয়ে পড়লো,
মানহা ওয়াহাবের কাধে মাথা রেখে বসে আছে, এবং গুন গুনিয়ে গান গাইছে..
” এই পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?
যদি পৃথিটা স্বপ্নের দেশ হয়,
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো–”
ওয়াহাব মানহার এলোমেলো চুলের সুবাস নিচ্ছে, এবং গান শুনতে শুনতে গাড়ি ড্রাইভ করছে।

————————————————

তানহার বাড়ি ফিরলো, দুপুর দুটোয়৷ রিকশা না পাওয়ার কারনে ঝিগাতলার থেকে লোকাল বাসে চড়ে বুয়েটের ক্যাম্পাস পর্যন্ত এসেছে, বাকি রাস্তা টুকুনি কাঠ ফাঁটা রোদে হেটে তানহা বাড়ি ফিরেছে।
তানহা বাসায় ঢুকতেই শেহতাজ বেগম হন্ত দন্ত হয়ে বললেন,
” পরিক্ষা কেমন হয়েছে তানহা? সব দিয়ে এসেছিস তো?”

তানহা ক্লান্ত শরিরে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো, ” হ্যাঁ দাদী ভালো হয়েছে। ”

শেহতাজ বেগম, রহিমার উদ্দেশ্য বললেন, ” কড়া চিনি লেবু দিয়ে এক গ্লাস শরবত নিয়ে আয়৷ রোদে মেয়েটা লাল হয়ে গেছে। ”

“কিছু লাগবে না দাদী, একটু ফ্রেনের নিচে কিছুক্ষণ বসলেই ঠিক হয়ে যাবে। ”
রহিমা খালা এক গ্লাস লেবুর সরবত নিয়ে এলেন। তানহা দ্রুত শরবত পান করে রুমে চলে গেলো।

রাত দশটা কি সারে দশ টা বাজে। তানহা গুন গুনিয়ে পড়ছে। আগামীকাল তার অর্থনীতি পরিক্ষা৷ হঠাৎ শাহতাজ বেগম রুমে ঢুকে, বড় বড় শ্বাস নিয়ে বললেন,
” রাত সারে দশটা বেজে গেলো, মুকুল এখনো ফিরলো না। ”

তানহা বই থেকে মুখ উঠিয়ে বললো, ” বাবা হয়তো অফিসে ব্যাস্ত আছে, নয়তো অফিস শেষে কোথাও গিয়েছে। চলে আসবে, ভেবো না।”
বলেই তানহা আবার পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো। তবে শেহতাজ বেগমের চিন্তা কমলো না, বিছানার এক পাশে অস্থিরতা নিয়ে বসে রইলেন্। ঘড়ির কাটায় এগারো টা ছুঁই ছুঁই হঠাৎ শেহতাজ বেগম তানহাকে হুকুম দিয়ে বললেন,

” এবার মুকুল কে একটা ফোন কর। ”

তানহা বই থেকে মুখ উঠিয়ে বললো, ” আচ্ছা।”

কিছুটা চমকে বললো, ” বাবা এখনো আসে নি?”

শেহতাজ বেগমের চিন্তিত হয়ে বললেন ” বাসায় ফিরলে কি আর তোকে ফোন দিতে বললতাম। এখন তাড়াতাড়ি কল করতো! ”

তানহা ফোনটা হাতে নিয়ে, বাবার নম্বরে ডায়েল করলো। কল যাচ্ছে ঠিকই তবে কেউ রিসিভ করছে না। পড় পড় তিনবার রিং হবার পর-ও যখন কল রিসিভ করছে না, তানহা নিজেও ক্ষানিকটা ভয় পেলো, বাবা কি তাহলে অসুস্থ হয়ে পড়লো না তো?

————————————————-
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ইলহাম সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে এবং আকাশ পানে তাকিয়ে আনমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে। হঠাৎ পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ইলহাম সতর্ক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মানহা ইলহামের কাধে হাত রাখতেই ইলহাম ঝট করে পেছনে তাকালো, মানহা চমকে গিয়ে বললো,
” কুল কুল আমি আসামি নই। এভাবে তাকাবেন ভাইয়া। ”
মানহা কে দেখে হন্ত দন্ত হয়ে ইলহাম সিগারেট টা দ্রুত ফেলে দিয়ে বললো, ” ভাবি তুমি৷ ”

মানহা স্মিথ হেসে বললো ” হ্যাঁ আমি। আপনি যে ধূমপান করেন আমি জানি। ”

ইলহাম একটু লজ্জা পেলো। মানহা বললো, ” লজ্জা পেতে হবে না। ডিনার করেন নি ভাইয়া। চলুন আপনাকে খাবার বেরে দেই৷ ”

ইলহাম গিয়ে খাবার টেবিলে বসলো। মানহা ভাত, মাছ বেড়ে দিলো, ইলহাম ভাত খেতে শুরু করলো৷ মানহা বসতে বসতে বললো, ” ইলহাম ভাইয়া আপনার সাথে আমার কিছু বলার আছে। ”

ইলহাম চমকে গিয়ে বললো,…


চলবে৷

আর তিন পর্বে গল্প টা শেষ করবো। কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here