গল্পের_নাম : #অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব : ১২ ( #crazy_for_you )
Writer : #Mimi_Muskan
“নিশি : ( বাইরে এসে ) যাহ ছুটির নেবার কথা তো বলতেই ভুলে গেলাম। আর আমার মনে হয় না উনি ছুটি দিবেন। যেভাবে রেগে আছে আজকে।আসতে না আসতেই কাজ। উফফ আল্লাহ উঠাইয়া নাও আমাকে আর ভাল্লাগেনা।।
“দিয়া : কিরে কার সাথে কথা বলিস!
“নিশি : নিজের সাথেই বলছি আর কার সাথে বলবো?
“দিয়া : শুনেছি মানুষ প্রেমে পড়লে নাকি একা একা কথা বলে..
“নিশি : তা আপনার কি মনে হয়?
“দিয়া : তুই maybe স্যার এর প্রেমে পরেছিস!
“নিশি : কিহহহহ ( অবাক হয়ে )
“দিয়া : আরে আস্তে.. স্যার এসে পরবে আর পরে বকবে আমাদের!!
“নিশি : তুই এটা ভাবলিও কি করে..
“দিয়া : ভাবার কি আছে.. সবাই দেখছে!
“নিশি : কি দেখছে শুনি! ( নিজের কেবিনে যেতে যেতে )
“দিয়া : এই যে স্যার তোর কেয়ার করছে..( নিশি’র পিছু যেতে )
“নিশি : কেয়ার করাটা আর ভালোবাসা এক না বুঝলি! ( দিয়ার কপালে টোকা দিয়ে )
“দিয়া : তাহলে তোর কাছে ভালোবাসা মানে কি?
“নিশি : ভালোবাসা.. এটা বলে বোঝানো যায় না অনুভব করতে হয়!
“দিয়া : যেমন..
“নিশি : মনে কর কোনো এক সন্ধ্যায়, নদীর তীরে , হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে যে আমার খোলা চুল গুলো এলোমেলো করে দেবে, আমি তার হাতের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে তার চোঁখের ভাষা বুঝতে থাকবো…আর সেও আমার চোখে দিকে তাকিয়ে থাকবে। সন্ধ্যার আকাশ লাল বর্ণ ধারন করবে কিন্তু তাও তাকে দেখা আমার শেষ হবে না। আমি তাকে দেখতেই থাকবো। তাকে দেখা তখন যেনো আমার কাছে একটা নেশার মতো লাগবে। দুজনে দু’চোখ ভরে এক অপরকে দেখবো। আর এভাবেই সারাজীবন দেখতে থাকবো।।
“দিয়া : ( গালে হাত দিয়ে ) শুধু দেখবি..
“নিশি : হুম ( জিসান’কে মনে করে ) দেখতেই থাকবো। তাকে দেখার মাঝেই আমার হাজার’টা বছর পেরিয়ে যাবে।
“দিয়া : এতো দেখতে বিরক্ত লাগবে না।
“নিশি : বিরক্ত কেন লাগবে ( কপাল কুঁচকে ) যাকে ভালোবাসি তাকে দেখতে বিরক্তির কি আছে। এটাতেও একটা ভালোলাগা আছে। আছে ভালোবাসা..!
“দিয়া : বাংলা সিনেমার ডায়লগ..
“নিশি : আমার ও এমন’টাই লাগলো ( মুচকি হেসে )
“দিয়া : আরে বাঙালিরা তো বাংলায় ভাববে না।
“নিশি : হুম! এতোক্ষণ পর একটা সত্যি কথা বললি। আচ্ছা আমার কাজ আছে পরে কথা বলবো না হলে স্যার আমার বারো’টা বাজাবে।
“দিয়া : আচ্ছা তুই কাজ কর আমি আসছি।
“নিশি : হুম।
।।
কিছুক্ষণ পর..
নিশি ফাইল গুলো চেক করে নিশানের কেবিনে গেল ।
“নিশি : স্যার এগুলো শেষ..
“নিশান : হুম। ল্যাপটব টা নিয়ে এসো..
“নিশি : জ্বি স্যার.. কিন্তু কেন?
“নিশান : কালকের প্রেজেন্টেশন এর জন্য..
“নিশি: ওহ্ আচ্ছা।
….
“নিশি : স্যার…
“নিশান : ওখানে বসো!
“নিশি : হুম।
.
নিশি গিয়ে পাশের টেবিলে বসে। নিশান এসে নিশি’কে কাজ বুঝাচ্ছে। নিশান নিশি’র পাশের চেয়ারে বসে ঝুঁকে নিশি’কে কাজ বুঝাচ্ছে আর নিশি ও মাথা নেড়ে নেড়ে হ্যাঁ বলছে।
নিশান মাঝে মাঝে নিশি’কে আড়চোখে দেখছে। কেন জানি ভালো লাগে তার এভাবে নিশি’কে দেখতে। কিন্তু নিশি’র মনোযোগ সব ল্যাপটবে’র স্কিনে। নিশান নিশি’কে বুঝিয়ে দিয়ে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আর নিশি’কে বলে এখানে বসেই কাজ করতে।
.
নিশি বসে কাজ করছে আর নিশান কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাকে দেখছে। কাজের ফাঁকে বললে ভুল হবে কাজ না করেই নিশি দেখছে। নিশি আনমনে কাজ করছে। বাতাস এসে ওর চুল গুলো বার বার এলোমেলো করে দিচ্ছে। নিশানের মন চাচ্ছে নিজে গিয়েই চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে আসতে।
চুল গুলো এতো বার জ্বালাচ্ছে দেখে নিশি কলম দিয়ে চুল গুলো খোঁপা বেঁধে নেয়। নিশানের এটা মোটেও ভালো লাগে না। সে চুপচাপ বসে আছে। বিরক্ত লাগছে তার নিশি’র এমন চুল বাঁধায়। আচ্ছা নিশি’কি বুঝতে পারে না তার এই চুলের প্রেমেই পরেছে সে। তার জান পাখি’র চুলের ঘ্রাণে পাগল হয়েছে সে।
.
নিশি ভাবছে কি করে ছুটি নিবে এর মাঝেই নিশান নিশি’কে তার কাছে আসতে বলে।
“নিশি : জ্বি স্যার..
“নিশান : কতটুকু কাজ করেছো দেখিয়ে যাও যদি ভুল করে ফেলো তাহলে..
“নিশি : হুম.. ( ইশ কতো ভয় যদি ভুল করে ফেলি তাহলে কাজ করতে দিলি কেন আমাকে । উগন্ডা একটা! )
“নিশান : ( তোমাকে চুল বাঁধার মজা দেখাচ্ছি আমি জান পাখি )
.
নিশি ওঠে গিয়ে নিশান’কে কতটুকু কাজ করলো তা দেখাচ্ছে। এ্য মাঝেই নিশান হুট করে নিশি’র চুল থেকে কলম’টা খুলে নেয়। নিশি নিশানের ওপর ঝুঁকে থাকায় চুল গুলো সব নিশানের মুখের ওপর পরে। নিশি’র চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত নিশান । নিশি তো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
“নিশি : এটা কি হলো?
“নিশান : কোনটা?
“নিশি : আপনি এমন’টা কেন করলেন?
“নিশান : কি করলাম?
“নিশি : আপনি প্রশ্ন করছি। আপনি উওর না দিয়ে প্লাটা প্রশ্ন কেন করছেন? ( কোমরে হাত দিয়ে )
“নিশান : তুমি ঠিকমতো প্রশ্ন করছো না তাই.. সোজাসুজি বলো কি হয়েছে..
“নিশি : আবার জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে.. আপনি কলম’টা কেন খুলে নিলেন!
“নিশান : কলম’টা কোথায় ছিল..
“নিশি : আমার চুলে..
“নিশান : কলম কি চুলে রাখার জিনিস!
“নিশি : আমার চুল গুলো খুব জ্বালাচ্ছিল তাই..
“নিশান : যার যা কাজ সে তো তাই করবে তাই না!
“নিশি : মানে..
“নিশান : যেমন ধরো এই কলম। এটার কাজ লেখালেখি করা তাই এটা আমার হাতে যেটা দিয়ে আমি লেখালেখি করবো আর সেরকম ভাবেই তোমার চুলের কাজ তোমাকে জ্বালানো তাই সেও জ্বালাবে..
“নিশি : উফফ এতো কথা পেচান কেনো। সবকিছু’ই আমার মাথার ওপর দিয়ে গেলো । বললেই হয় আপনার কলম তাই আমাকে দিবেন না। এতে এতো কথা বলার কি আছে?
“নিশান : বাহ্ তুমি বুদ্ধিমান তো..
“নিশি : হুহ ( নাক ফুলিয়ে )
“নিশান : ( ইশ আমার জান পাখি’কে নাক ফুলালে কি কিউট লাগে ) বিড় বিড় করে..
“নিশি : কিছু বলছেন..
“নিশান : না তোমাকে কি বলবো যাও কাজ করো!
“নিশি : আচ্ছা করছি!
( বলেই ল্যাপটব রেখে কেবিন থেকে বের হতে যায় । তখন নিশান বলে….
“নিশান : কোথায় যাচ্ছো? তোমাকে কাজ এখানে করতে হবে।
“নিশি : হ্যাঁ জানি আসছি আমি!
( বলেই নিশি চলে যায় )
.
কিছুক্ষন পর নিশি আসে। নিশান নিশি’র দিকে তাকিয়ে দেখে সে একটা চুল বাঁধার তুলি দিয়ে কোনোমতে চুল গুলো খোঁপা করে এসেছে। নিশান নিশি’র দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি নিশানের দিকে তাকিয়ে বলে…
“নিশি : এটা’র কাজ চুল বাঁধা তাই এটা দিয়ে চুল বেঁধেছি। কোনো কথা আছে আর…
‘নিশান : ( মাথা নাড়িয়ে যার অর্থ না )
.
নিশানের উওর পেয়ে নিশি আবার কাজ করতে বসে। নিশানের কেন জানি রাগ হচ্ছে এখন নিশি’র চুল বাঁধা দেখে। তার মটেও ভালো লাগে না তার জান পাখি’র চুল এরকম বাঁধা থাকলে।
নিশান কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসি দেয়।
.
লাঞ্চ টাইমে…
নিশি এখনো কাজ করছে। নিশান ওকে যেতে বলে নি তাই সে যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ বাদে নিশান ওঠে এসে নিশি’র কাছে এসে বসে…
“নিশান : মিস নিশি..
“নিশি : জ্বি স্যার..
“নিশান : আমার সাথে আসো..
“নিশি : কোথায় স্যার?
“নিশান : আবার প্রশ্ন করছো?
“নিশি : সরি স্যার..
নিশি ওঠে নিশানের পিছু পিছু যেতে থাকে। নিশাধ ওকে নিয়ে অফিসের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে যায় ।
.
“নিশি : স্যার আমরা এখানে কেন?
“নিশান : মানুষ রেস্টুরেন্টে কেন আসে..
“নিশি : খেতে..
“নিশান : তাহলে কেন জিজ্ঞেস করছো?
“নিশি : না স্যার মানে আমাদের অফিসেই তো ক্যান্টিন ছিলো তাই..
“নিশান : শেষ কথা বলা…
“নিশি : না।
“নিশান : এখন আবার কি
“নিশি : আপনি ক্যান্টিন ছেড়ে এখানে এসে খাবেন তার মানে নিশ্চয়ই ক্যান্টিন এর খাবার ভালো না। আর আমি সেই খাবার খেয়েছি.. ইশ্ ( চোখ মুখ বন্ধ করে )
“নিশান : তুমি এতো ফালতু বকবক কোথায় পাও বলোতো? ( গালে হাত দিয়ে নিশি’র দিকে তাকিয়ে )
“নিশি : আমি ফালতু বক বক মোটেও করি না..
“নিশান : আচ্ছা শোন। এখানকার চিকেন’টা আমার খুব ভালো লাগে তাই… হয়েছে এবার শান্তি!
“নিশি : তা আমাকে কেন আনলেন?
“নিশান : ( দাঁতে দাঁত চেপে ) তোমাকেও চিকেনের সাথে খাবো তাই…
“নিশি : কিহহহহহ ( চেঁচিয়ে ) স্যার আপনি কি রাক্ষস নাকি যে আমাকে খাবেন।
“নিশান : গাধা’র মতো প্রশ্ন করলে উওর’টা এমনই পাবে… তোমাকে সাথে করে এনেছি নিশ্চয়ই আমার সাথে তুমিও খাবে তাই!
“নিশি : আমি মোটেও গাধা নই। কি বললেন আপনার সাথে খাবো.. ( অবাক চোখে নিশানের দিকে তাকিয়ে )
“নিশান : হ্যাঁ এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি কথাই বলবে না বসবে..
“নিশি : আ…আমি বসবোনা আপনার সাথে!
“নিশান : কেন?
“নিশি : মনে নেই আপনি গতবার কি করেছেন আমার সাথে…
“নিশান : কি করেছি!
“নিশি : ( চোখ বন্ধ করে সেদিনের কিসের কথা মনে করে)
আমি বসবোনা…
“নিশান : ( বুঝতে পেরে ) আচ্ছা আজ এমন কিছু হবে না বসো!
“নিশি : সত্যি তো!
“নিশান : হ্যাঁ বসো তুমি
.
নিশি ভয়ে ভয়ে নিশানের বিপরীতে বসে পড়ে । নিশান মুচকি হেসে নিশি’র বিপরীতে ওর সামনা সামনি বসে পরে।
নিশি খুব ভয়ে ভয়ে খাবার খাচ্ছে যেনো সেদিনের মতো আজ কিছু না হয়। নিশান এটা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। সেও মুচকি মুচকি হাসছে আর খাচ্ছে ।
খাবার শেষে নিশান কয়েকটা সেন্টার ফ্রুট কিনে। আর একসাথে ৩,৪ টা মুখে দেয়। নিশি অবাক হয় একসাথে এতোগুলো মুখে দেওয়ায়।
.
নিশান মুচকি মুচকি হাসচে আর সেন্টার ফ্রুট চাবাচ্ছে । নিশান নিশি’র পিছ পিছ হাঁটছে । নিশি’র কেমন জানি মনে হচ্ছে নিশানের এমন হাবভাব দেখে। সে বোঝার চেষ্টা করছে নিশান কি করতে চাইছে।
হঠাৎ নিশান নিশি’র মাথায় টোকা দিয়ে নিশি’র সামনে এসে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসি দেয়। নিশি অনেকটা অবাক হয়। হঠাৎ সে খেয়াল করে নিশানের মুখে সেন্টার ফ্রুট নেই তার মানে কি এটা নিশি’র চুলে লাগিয়েছে। নিশি তাড়াতাড়ি করে চুল খুলে চেক করতে থাকে। নিশান তখন জোরে হেসে দেয়। নিশি বুঝতে পারে নিশান ওকে বোকা বানিয়েছে। সে রাগে ফুলতে ফুলতে কেবিনে চলে যায়। নিশান হাসতে হাসতে বলতে থাকে…
– জান পাখি দেখি আমি তুমি কিভাবে চুল বেঁধে রাখো।।
চলবে…..
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/385131356541976/