গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_৩৩ crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান
পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে নিশি’র। সাধারণত এমনটা হয় না কারন শহরে এরকম পাখির ডাক ঘুম একটা শোনা যায় না। কিন্তু এখানে গ্রামের মতো হওয়ায় পাখির কলকাকলি শোনা যাচ্ছে।
ঘুম থেকে ওঠে নিশানের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করল নিশি। আজকের সকাল টা অন্যরকম লাগছে তার কাছে। একেবারেই অন্যরকম। নিশান কে দেখছে নিশি। এখনও ঘুমাচ্ছে সে। নিশান কে নিয়ে ভাবতে থাকে। নিশান কে এতোটাই বিভোর থাকে যে নিশান কখন ওঠে ওকে দেখছে তার সেই খেয়াল’ই নেই নিশি’র ।
হঠাৎ’ই নিশি’র মনে পরল ও কি করছে। তাকিয়ে দেখে নিশান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নিশিও ভ্রু কুচকায়। তখন নিশান ভ্রু নাচিয়ে বলে…
“নিশান : ইদানিং খুব বেশি আমায় দেখো তুমি!
“নিশি : মোটেও না
“নিশান : হ্যাঁ এটাই!
“নিশি : না একদম’ই না।
“নিশান : তাহলে এখন কি করছিলে তুমি!
“নিশি : কিছু’ই না।
“নিশান : আমি দেখেছি তুমি দেখেছিলে আমায় তাও অনেক মনোযোগ দিয়ে।
“নিশি : আইছে রে কি মহান ব্যক্তি টা। উনাকে আমি মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম ( হেসে )
“নিশান : ওহ আচ্ছা খুব হাসি পাচ্ছে।
“নিশি : হ্যাঁ পাচ্ছে। ভয় পাই নাকি আপনাকে।
“নিশান : জান পাখি ভুলে যেও না আমার বাহুতে আছো তুমি!
“নিশি : তো…
“নিশান : তো দাঁড়াও দেখাচ্ছি!
“নিশি : এই না না ছাড়ুন আপনি।
“নিশান : কেন? দেখো না কি করি
“নিশি : না কিছু দেখার ইচ্ছে নেই আমার। ছাড়ুন আপনি আমাকে। সকাল হয়ে গেছে!
“নিশান : সকাল হয়ে গেছে এটা আমিও জানি নতুন কিছু বলো।
“নিশি : নতুন কি হলো যে বলবো।
“নিশান : যা আমি শুনতে চাই আর তুমি বলতে চাও।
“নিশি : আপনি কি শুনতে চান সেটা আমি কিভাবে বলবো কিন্তু আমার কিছু বলার নেই আপনাকে।
“নিশান : আচ্ছা তোমার কি দয়া মায়া নেই।
“নিশি : আছে তো কিন্তু কি বলুন তো আপনার জন্য তা আসে না।
“নিশান : ভালোবাসি কথাটা বলতে কি এতো কষ্ট লাগে তোমার
“নিশি : বলতে না বুঝতে..
“নিশান : আমার ভালোবাসা বুঝো না তুমি।
“নিশি : না!
“নিশান : কিহহহহহ ( ওঠে বসে পরে )
“নিশি : চেচানোর কি আছে। ( কানে হাত দিয়ে )
“নিশান : আমি সারাদিন ভালোবাসি ভালোবাসি বলছি, এতো ভালো ও বাসছি তাও তুমি বুঝো না।
“নিশি : না..
“নিশান : তুমি মেয়েরা আসলেই বোকা। সে ভালোবেসে তাকেই অবহেলা করো।
“নিশি : হ্যাঁ তারপর… ( বিছানা থেকে নিচে নেমে )
“নিশান : আমি সিরিয়াস বুঝলে।
“নিশি : আপনি না বললে তো জানতামই না আপনি সিরিয়াস
“নিশান : ধুর তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। ( বিছানায় শুয়ে )
“নিশি : হ্যাঁ আপনি বরং কথা বাদ দিয়ে আরেকটা ঘুম দিন কাজে লাগবে!
“নিশান : তুমি কোথায় যাচ্ছো।
“নিশি : ফ্রেশ হতে! আমি আপনার মতো না বুঝলেন
“নিশান : হ্যাঁ বুঝেছি ( বালিশে মুখ গুজে )
“নিশি : আমি কিন্তু আজকেই বাসায় যাবো।
“নিশান : কেন কাল না লাফালাফি করলা আরো কতোদিন থাকার জন্য।
“নিশি : এখন তো করছি না। আমি যাবো বলেছি যাবো।
“নিশান : ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) মেয়েদের মন বোঝা আসলেই বড় দায়।
“নিশি : উহু!
.
কিছুক্ষণ বাদে নিশি আর নিশান ব্রেকফাস্ট করার জন্য নিচে নামল। বাকি সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে।
ইশা নিশি আর নিশানের দিকে তাকিয়ে বলল..
“ইশা : এসে পরেছে মি: এ্যান্ড মিসেস। তা ঘুম কেমন হলো আপনাদের..
“ফাহিম : আর যাই হোক আমাদের মতো তো হয় নি।
“আরিফা : কেন ভাইয়া কালকে ঘুমাতে কোনো সমস্যা হয়েছে..
“ইশা : কেনো তোমার কি হলো।
“আরিয়ান : আরে তুই কি বুঝবি বউ ছাড়া একা একা ঘুমানোর কষ্ট।
( আরিয়ান এর কথায় হেসে দেয়। )
“আরিফা : ওহ্ আচ্ছা তাহলে তো খুব কষ্ট হয়েছিল তোমার ( রেগে )
“আরিয়ান : আরে বেবি শোন তো।
“নিশি : তা ভাইয়া বিয়েটা করে ফেললেই তো পারেন।
“নিশান : তাহলেই আর আফসোস করতে পারবি না। ( হেঁসে )
“ইশা : তা তোমার ও কি সমস্যা হয়েছিল?
“ফাহিম : না বেবি আমি ঠিক ছিলাম। ( অসহায় ভাবে )
“মেহেদী : আরে ব্রো তোমাদের তো তাও আছে।
“রৌদ্দুর : আমাদের তো তাও নেই। আমরা সারাজীবন একাই থাকমু।
( সবাই আরেক দফা হেঁসে ওঠে। )
“ইশা : কি নিশি আর নিশানের ব্যাপার’টাই আলাদা।
“আরিফা : দেখতে হবে কার ফ্রেন্ড
“আরিয়ান : হুম আমার ও ওকে।
“আরিফা : এই আপনি সবসময় আমার সাথে জোড়া দেন কেন?
“ফাহিম : তোরা সারাদিন সতিনের মতো ঝগড়া করতে থাকিস কেন?
“নিশি : কিহহ সতিন? ( অবাক হয়ে )
“আরিয়ান : ফাহিমের বাচ্চা এবার অফ যা।
“রৌদ্দুর : ভাইয়ার মান সম্মানের ফেলুদা বানাইয়া দিলো। ( জোরে হেসে )
“মেহেদী : কিরে জিসান তুই চুপ কেন ?
“জিসান : ( এতোক্ষণ নিশি আর নিশান কে দেখছিলো। নিশি আর নিশান দু’জনেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলো। মেহেদী’র কথায় চোখ সরিয়ে ) হুম বল…
“আরিয়ান : কিছু বল?
“জিসান : কি বলবো?
“আরিফা : কিছু না চুপ ছিলি চুপ থাক।
“নিশান : আমি একটা কথা বলতে চাই!
“আরিয়ান : অনুমতি নেওয়া শুরু করলি কবে থেকে।
“নিশান : হুহ।
“আরিফা : এই চুপ করো তো। ভাইয়া বলুন আপনি।
“নিশান : আমি আর নিশি আজ চলে যাচ্ছি। আসলে আমি না নিশি যেতে চাইছে।
“সবাই : কিহহ?
“জিসান : ( অবাক হয়ে নিশি দিকে তাকায় )
“নিশি : হ্যাঁ আসলে আমার একটু কাজ আছে, যেতে হবে তাই!
“আরিফা : কিন্তু তাই বলে…
“নিশি : it’s argent!
“ইশা : তাহলে তো আর কিছু করার নেই। কিন্তু তোমরা থাকলে আরো মজা হতো।
“নিশান : সরি…
“আরিয়ান : সরি তে কাজ হবে না।
“নিশান : একে বলে সুবিধা পার্টি।
“ফাহিম : আবার জিগায়
“নিশি : আচ্ছা কি চাও তোমরা!
“আরিয়ান : তোমাদের বিয়ে…!
“নিশি আর নিশান : ( একসাথে ) কিহহ?
“ইশা : আরে ইয়ার সেই আইডিয়া দিলি।
“আরিফা : উফফ খুব মজা হবে।
“নিশি : মানে কি?
“নিশান : হ্যাঁ বিয়ে তো হয়ে গেছে।
“নিশি : সেটাই তো।
“ফাহিম : তা বিয়ের মিষ্টি কোথায়?
“নিশান : ( মাথা চুলকিয়ে ) মানে…
“নিশি : যেভাবে বিয়ে হয়েছে তারপর আবার মিষ্টি ও চায় হায় কপাল ( বির বির )
“ইশা : কি হলো ভয় পেলি?
“ফাহিম : নিশ্চয়ই পেয়েছে?
“নিশান : আজব তো ভয় পাবো কেন? ঠিক আছে ডান। আমি আবার বিয়ে করব!
“নিশি : কিহহ?
“নিশান : মানে তোমাকেই করবো!
“সবাই : ( জোরে হেসে ওঠে। শুধু জিসান ছাড়া )
“মেহেদী : কি ভাগ্য তোর দু’বার বিয়ে হবে তোর।
“রৌদ্দুর : আর আমাদের দেখ এখনো একবার করতে পারলাম। শালা কোনো মেয়েও জুটে না কপালে।
“আরিফা : আর জুটবেও না।
“আরিয়ান : আগের বার বিয়ে টাও খেতে পারি নি এবার নিশ্চয়ই খেতে পারবো।
“নিশি : ( লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে )
“নিশান : কিন্তু আমার ও একটা শর্ত আছে।
“আরিয়ান : কিহহহ?
“নিশান : আমাদের সাথে আরেকজন এর ও বিয়ে হবে।
“আরিফা : কার?
“নিশি ; তোর আর আরিয়ান’র ভাইয়ার রাইট।
“ইশা : ( নিশি’র কথা শুনে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিতে থাকে ) বাহ বইন সেই ছিলো।
“ফাহিম : যা তোরাও মিংগেল হয়ে যাবি।
“আরিয়ান : হি হি আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।
“আরিফা : ( অবাক হয়ে যায় নিশির কথায়। তারপর আবার আরিয়ান এর রাগে তার দিকে তাকিয়ে )তো নাচতে শুরু করেন না। ভালো হবে!
“আরিয়ান : আরে রাগছো কেন আমি তো এমনেই বলছিলাম
“আরিফা : ( রাগি চোখে তাকিয়ে থাকে যেনো এখনই খেয়ে ফেলবে তাকে। )
“নিশি : আরে আরিফা এতো রাগিস না। মজা হবে দুই বেস্টুর এক সাথে বিয়ে। ( দাঁত বের করে হেসে ) কিন্তু একটাই কষ্ট!
“আরিফা : কিহহ?
“নিশি : আমার আর গেট ধরা হবে না। টাকা নেওয়া হবে না ( কাঁদো কাঁদো মুখ করে )
“আরিফা : আমি মনে হয় পেরেছিলাম। বেশ হয়েছে!
“নিশি : আরু….
“আরিফা : হুহ।
“নিশান : আচ্ছা আচ্ছা তাহলে এই কথাই রইল। আরিয়ান আংকেল এর সাথে আমি কথা বলবো।
“নিশি : আর আন্টি’র সাথে আমি ( আরিফা’র দিকে তাকিয়ে ) ।
“ইশা : সেই মজা হবে।
“ফাহিম : একসাথে দুই বিয়ে! সেই লেভেলের মজা হবে।
“মেহেদী : বিয়ে বাড়িতে আমারও একটু চান্স পাবো।
“রৌদ্দুর : তা আর বলতে।
( সবাই হেসে উঠল। কিন্তু জিসান মুখ ভার বসে আছে। রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। তা আর কেউ না বুঝতে পারলেও নিশি আর নিশান ঠিকই বুঝতে পারছে। )
“জিসান : আমি চাইছি ডির্ভোস করাতে, আর তারা আবার বিয়ে করার প্ল্যান করছে। নিশি এতো সহজে সব মেনে নিলো কিভাবে। তাহলে আমি কালকে যা দেখলাম তার মানে…. না আর যাই হোক আমি এটা মেনে নিতে পারছি না। এই বিয়ে তো হবে না হতে দেবো না। ( মনে মনে ) বলেই ওঠে গেলো সেখান থেকে। নিশান পরিস্থিতি সামলাতে বলল…
“নিশান : নিশি আমাদের দেরি হচ্ছে।
“আরিফা : আস্তা নাস্তা করে নেন তারপর যাবেন।
“নিশি : হুম।
.
নিশান গাড়ি চালাচ্ছে আর নিশি চুপচাপ বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। সকাল ১০ টা বাজে এখন কিন্তু বাইরের পরিবেশ টা এখনো শান্ত। তারা এখনো শহরের দিকে আসেনি। ভালোই লাগছে নিশি’র । এছাড়াও মাথায় আরো ভাবনা মা কে গিয়ে সব জিঙ্গেস করতে হবে তার।
নিশি কি মনে করে নিশান কে বলে…
“নিশি : আমি কিন্তু শশুর বাড়ি যাচ্ছি।
“নিশান : মানে…
“নিশি : আমার তো এখন তিন টা বাড়ি! একটা বাপির বাড়ি, একটা শশুড় বাড়ি আর একটা জামাইয়ের বাড়ি।
“নিশান : ( নিশি’র দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ) হ্যাঁ ঠিক বলেছো।
“নিশি : আমি সবসময়ই ঠিক বলি।
“নিশান : জান পাখি!
“নিশি : হুম…
“নিশান : তুমি যদি না চাও তাহলে বিয়েটা হবে না।
“নিশি : এখন এসব বলে কোনো লাভ আছে কি
“নিশান : তাও…
“নিশি : আমি এখন ঘুমাবো। ঘুমাতে দিন আমায়। ( বলেই গাড়িতে হেলান দিয়ে পরে নিশি।) বাসায় যেতে যেতে অনেক সময় লাগবে। এতোক্ষণে ঘুমাবে লাভ হবে আমার।
“নিশান : আচ্ছা ঘুমাও তুমি। ( নিশি’র মাথা নিজের ঘাড়ে রেখে )
“নিশি : ( কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ঘুমিয়ে পরি )
“নিশান : ( মুচকি হাসে )
.
আসতে আসতে বিকাল হয়ে যায়। নিশি’র ঘুম এতোক্ষণে ভেঙ্গে গেছে। চৌধুরী বাড়িতে আসা মাত্রই নিশি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢোকে। নিশান গাড়ি থেকে নেমে আশপাশ কয়েকটা গাড়ি দেখতে পায়।
“নিশান : কারা এসেছে বাসায়? ( গাড়ি’র দিকে তাকিয়ে )
.
নিশি বাড়িতে ঢুকে মা মা বলতে লাগে। তখনই তার চোখ পরে সোফায় বসে থাকা একটা মহিলার ওপর। অনেক স্মার্ট দেখতে তিনি। নিশি তাকে দেখে অনেক টা অবাক হয়। তখনই চোখ পরে সোফার ওপরে আরেকটা মেয়ে বসে আছে। কিন্তু মেয়েটার পোশাক কেমন জানি।ওয়েস্টান ড্রেস পরা কিন্তু ড্রেস গুলো খুব ছোট। মা তাদের সাথে বসে কথা বলছেন।
এর মাঝেই নিশান দরজা থেকে ফুপি বলে ওঠে। নিশি পিছনে ফিরে তাকায়। হুট করেই বসে থাকা মেয়েটা নিশান কে গিয়ে দৌড়ে জরিয়ে ধরেন। নিশান ও হালকা ভাবে তাকে ধরে। নিশি এইসব দেখে রেগে ফুলে ওঠে। নিশান বলে ওঠে…
“নিশান : আরে জান ছাড় আমাকে। আর কখন আসলি তুই।
( নিশি জান শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে নিশানের দিকে )
“- : তোর সাথে আমার কোনো কথাই নেই তুই কথাই বলবি না।
“নিশান : আরে বাবা কি করলাম আমি।
“- : কি করছিস আবার বলছিস। তুই পারলি এইভাবে আমায় ধোঁকা দিতে…..
( দেরি হবার জন্য সবার কাছে দুঃখিত )
চলবে….
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/398398285215283/