গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_৩৫_ও_৩৬ #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান
[৩৫]
নিশি আরশিয়া’র রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে আসতে নিলে হুট করেই তিশা এসে নিশি’র সামনে পথ আটকে দাঁড়ায়…
“নিশি : তুমি….
“তিশা : কথা আছে তোমার সাথে!
“নিশি : হ্যাঁ বলো। ( ফোনের রেকর্ডিং অন করে )
“তিশা : কি চাও তুমি?
“নিশি : মানে…
“তিশা : দেখে তো এতো বোকা মনে হয় না তোমায়!
“নিশি : আপ্পি কি বলতে চাও ভালো মতো বলো।
“তিশা : ( হুট করেই নিশি’র গাল চেপে ) বুঝতে পারছো না আসলেই বুঝতে পারছো না তুমি আমি কি বলছি কার কথা বলছি।
“নিশি : আহ্ আপ্পি লাগছে ছাড়ো।
“তিশা : ছেড়ে দেবো! তার আগে তুমি বলো আমার নিশান কে কবে ছাড়বে।
“নিশি : আপ্পি কি বলছো এইসব।
“তিশা : দেখে তো এতো innocent মনে হয় না তোমাকে! আমি কি বলছি তুমি বেশ বুঝতে পারছো। নিশান এর জীবন থেকে কবে যাবে সেটা বলো। তোমাদের মতো মেয়েদের আমি খুব ভালো মতো চিনি। টাকার জন্য সব করতে পারো তোমরা। কত টাকা লাগবে তোমার বলো। যা চাইবে তাই দেবো শুধু নিশানের জীবন থেকে সরে যাও।
“নিশি : আ..আর যদি না যাই…
“তিশা : ( বাঁকা হেসে ) good question! কি দরকার বলো তো এতো সুন্দর জীবন টা নষ্ট করার! ( বলেই নিশি কে ছিটকে ফেলে দেয় )
.
নিশি গিয়ে দেওয়ালে বাড়ি খায়। তিশা ভাবে নিশি হয়তো ভয় পেয়েছে। কিন্তু তার ভুল ভেঙ্গে দিয়ে নিশি হেসে ওঠে। তিশা অবাক হয়ে নিশি’র দিকে তাকিয়ে থাকে। নিশি ঘুরে বাঁকা হাসি দিয়ে ফোনের রেকর্ডিং অন করে। সাথে সাথে কিছুক্ষণ আগের সমস্ত কথা শোনা যায়। তিশা অবাক হয়ে যায়। নিশি হেসে বলে ওঠে….
“নিশি : আসলেই কি দরকার বলো এতো সুন্দর জীবন টা নষ্ট করার!
“তিশা : নিশি!
“নিশি : আরো লো ভয়েস এ কথা বলো আপ্পি! আসলে তুমি ঠিক বলেছো আমার ফেস টা এতো innocent হলেও আমি মোটেও এতো innocent নই।
“তিশা : ( রেগে এসে নিশি’র কাছ থেকে ফোন টা নিতে যায়। )
“নিশি : ( ফোনটা কোনোমতে সামলিয়ে ) আরে আপ্পি রিল্যাক্স। কি ফোন লাগবে তোমার এই নাও। ( তিশা’র হাতে’র কাছে দিয়ে। তিশা ফোন টা নিতে গেলেই নিশি ফোন টা সরিয়ে ফেলে ) আরে আপ্পি ফোন টা তোমায় দিয়ে দেবো এতো বোকা আমি নই তাই না।
“তিশা : (রেগে নিশি’র গালে চড় মারতে যায় )
“নিশি : ( তিশা’র হাত ঘুরিয়ে পিছনে নিয়ে এসে বলে ) হাত পা ভাঙ্গার অভ্যাস আমার আছে আপ্পি। অনেক ভেঙ্গেছি। কিন্তু তুমিও চিন্তা করো না তোমার টা ভাঙ্গবো না কারন তোমার প্রান ভোমরা তো আমার কাছে না
তাই বেশি বাড়াবাড়ি না আরে চুপচাপ থাকো দেখবে কিছু হবে না। অতিথি না তুমি অতিথি হয়ে থাকো। খাও দাও বিন্দাস ঘুরো তারপর চলে যেও কিন্তু বেশি উড়তে যেও না ঠিক আছে ( হেসে তিশা কে ছেড়ে দেয় )
“তিশা : খুব বড় ভুল করছো নিশি
“নিশি : এটা তো সময় বলবে…. ( বলেই চলে যায় নিশি )
.
“ফুপি : পাগল হয়ে গেছিস তুই? কি করেছিস তুই?
“তিশা : সরি মম আমি বুঝতে পারি নি।
“ফুপি : তাই বলে এতো বড়ো বোকামি। আরে আসলি তো আজকেই, দুই’টা দিন ওয়েট করতে পারলি না।
“তিশা : মম আমার সহ্য হচ্ছে না ওই মেয়ে”টাকে নিশানের সাথে, রাগ হয় আমার, ইচ্ছে করে তখনই ওকে শেষ করে দেই।
“ফুপি : শান্ত হো একটু ( তিশা’র মাথায় হাত দিয়ে )
“তিশা : মম নিশান কে আমার চাই!
“ফুপি : পাবি পাবি, তুই চিন্তা করিস না। আমি আছি তো।
.
নিশান আজ একটু আগেই বাসায় ফিরে। বাড়িতে ঢুকে দেখে সবাই বসার ঘরে শুধু নিশি ছাড়া। খানিকটা অবাক হয় সে। নিশান কে দেখে তিশা বলে ওঠে..
“তিশা : এসে পরলি তুই!
“ফুপি : তিশা ওকে আগে ফ্রেশ হতে দাও।
“নিশান : মা নিশি কোথায়?
“আরশিয়া : বিকালে একটু বাইরে গিয়েছিলো এখনও আসে নি।
“ফুপি : এই নাকি বাড়ির বউ! এতো রাতে বাড়ির বাইরে কি করে এই মেয়ে! আর তোমাকেও বলি আরশিয়া শাশুড়ি হয়ে বউ কে একটু শাসন করতে পারো না।
“আরশিয়া : আপু ও আমাকে কল করে বলেছে আসতে দেরি হবে।
“ফুপি : আর তুমিও মেনে নিলে বাহ। এখন তো আমি বলছি ক”দিন বাইরের মানুষ এসে বলবে।
“আরশিয়া : আপু আমি ওর মা শাশুড়ি না। আর আমার মেয়ের ওপর আমার ভরসা আছে।
“ফুপি : এতো কিছু বলাও যাচ্ছে না দেখি। তা নিশান..( নিশান দাঁড়িয়ে চুপচাপ সব শুনছিলো। ফুপির ডাকে তার দিকে ফিরে ) তুই তো দেখি বউ’র আঁচলে বেঁধে আছিস। বউ কে একটু শাসন করতে পারিস না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনও বাড়ির বউ ঘরে আসে নি এসব কি? দেখিনি কখনো।
“নিশি : কেন ফুপি আমি তো শুনলাম তোমারা বিদেশে থাক, তা ওখানে তো সবাই লেট নাইট পার্টি করে, ঘোরাঘুরি করে তুমি দেখোনি এইসব। ( দরজায় দাঁড়িয়ে )
“ফুপি : এসেছে এতোক্ষণ পর আর এসেই মুখে মুখে তর্ক করছে। তা মা এতোক্ষণ ছিলে কোথায় তুমি? সংস্কার সংস্কৃতি কিছু জানো না। এতো রাতে কি মেয়ে’রা বাড়ির বাইরে থাকে।
“নিশি : হামম অবাক হলাম ফুপি, এই genaration এ”এসে এরকম ভাবনা চিন্তা তাও তুমি! আসলে তুমি তো এতদিন ধরে দেশের বাইরে থাকো আর… যাই হোক বাদ দাও আর রইলো সংস্কার! সেটা তিশা আপ্পি কে দেখলে খুব ভালো বোঝা যায়।
“তিশা : shut up নিশি। তুমি অপমান করছো আমায় ( রেগে )
“ফুপি : নিশান তোর বউ এভাবে অপমান করছে আর তুই কিছুই বলছিস না। অপমান করবি ভালো কথা তাই বলে পর কে দিয়ে এভাবে…
“নিশি : আরে ফুপি তুমি ভুল বুঝছো..
“নিশান : নিশি! ( নিশি’র দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে নিশি কে চুপ করতে বলে )
“ফুপি : এভাবে চুপ করালেই কি সব শেষ নাকি!
“তিশা : কোথায় ছিলে এতোক্ষণ তুমি!
“নিশি : ডেটিং করতে গিয়েছিলাম! ( হেসে )
“ফুপি : কি মেয়েরে বাবা ।
“নিশান : ( বুঝলাম না জান পাখি আজ এসব কি বলছে। এমন করছে কেন সে ) নিশি কি যা তা বলছো।
“নিশি : তাহলে আর কি বলবো আপনি বলুন, দেখছে আমার হাতে শপিং ব্যাগ এর মানে তো শপিং করতেই গিয়েছি তাই নই কি! আর লেট হবার জন্য আমার দোষ নেই আপনার দোষ!
“নিশান : আমার… আমি কি করলাম।
“নিশি : কিপ্টামি করে কম দামি গাড়ি কিনেছেন অর্ধেক রাস্তা চলেই গাড়ি স্টপ হয়ে থাকে। আপনার জন্য’ই আমার দেরি হয়েছে!
“নিশান : ড্রাইভার যায় নি সাথে!
“নিশি : তাহলে কে গেছে আমি কি ড্রাইভ করতে পারি নাকি। ধুর ভাল্লাগেনা এতো কষ্ট করে শপিং করলাম কতো ক্লান্ত আমি তার মধ্যে সবার এতো কথা মাথা ঘুরছে এখন আমার।
“আরশিয়া : আসলেই তোরাও পারিস মেয়েটা আসতে না আসতেই শুরু করে দিলি।
“নিশান : ( তাড়াতাড়ি করে নিশি’র কাছে গিয়ে ) ঠিক আছো তুমি! বেশি খারাপ লাগছে, ডাক্তার এর কাছে যাবে!
“নিশি : না ঠিক আছি আমি,ফ্রেশ হতে পারলে ভালো লাগবে।
“আরশিয়া : তাই ভালো, তোরা দুজনে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাবার বাড়ছি খেয়ে নিবি।
“নিশান : মাথা কি আর এমনে ঘুরছে,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে এমনি হবে।
“নিশি : ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ) কথা শেষ!
“নিশান : ঘরে চলো হচ্ছে তোমার ( ফিসফিসিয়ে )
“নিশি : নিয়ে যাবে কে আমার পা আর চলছে না..
“নিশান : ( হুট করেই নিশি কে কোলে তুলে নিয়ে ) আমি থাকতে তোমার কষ্ট হবে কেন? আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমায়…
“নিশি : ( মুচকি হেসে )
“আরশিয়া : ( মুচকি হেসে চলে যায় সেখান থেকে )
“তিশা : ( নিশান নিশি কে কোলে তুলায় চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে ) বাহ কি ভালোবাসা!
“নিশি : আপ্পি কালো টিকা লাগিয়ে দাও নাহলে নজর লেগে যাবে।
“নিশান : ( দাঁত বের করে হেসে ) তুমি এটাও চিন্তা করো!
.
নিশান নিশি কে কোলে তুলে ওপরে নিয়ে যায়। তিশা তাকিয়ে থাকে। নিশি পিছনে ফিরে তিশা কে একটা চোখ টিপ দিয়ে জয়ের হাসি দেয়। ফুপি এসব তাকিয়ে দেখছিলেন।
“তিশা : মম দেখলে তুমি!
“ফুপি : দেখেছি সব কিছু করতে হবে এই মেয়ের।
.
এদিকে রুমে আসার পর..
“নিশান : কোলে ওঠার বাহানা চাই তোমার! ( নিশি কে কোলে নিয়েই )
“নিশি : কিহ বললেন?
“নিশান : আমার কোলে উঠতে চাইলে বলতেই পারো কোলে তুলুন আমায়..
“নিশি : এই আপনার কোলে কে উঠতে চেয়েছে..
“নিশান : ( নিশি’র কানে ফিসফিসিয়ে ) আমার বউ!
“নিশি : মোটেও না!
“নিশান : ওহ্ আচ্ছা ( ধপাশ করে বিছানায় ফেলে দিয়ে )
“নিশি : আম্মুউউউউ এটা কি হলো?
“নিশান : তুমি আমার কোলে ওঠতে চাও নি তাই ফেলে দিলাম
“নিশি : হুহ! যদি আমার কোমর ভেঙ্গে যেত!
“নিশান : বিছানায় ফেলেছি তোমাকে, ভাঙলে বিছানা ভাঙ্গত তোমার কোমর না বুঝলে ( নিশি র নাক টোকা দিয়ে )
“নিশি : তাই তো আমাকে কোলে নিবেন কেন আপনার জান গিয়ে কোলে নিন ভালো লাগবে! ( বিছানা থেকে নেমে চলে যেতে নেয় )
“নিশান : ( পেছন থেকে নিশি কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিশি’র ঘাড়ে থিতুনিতে রেখে ) জান পাখি তো তুমি!
“নিশি : আমি আপনার জান এর কথা বলছি যাকে সকালে জান জান বলে জরিয়ে ধরেছিলেন।
“নিশান : বাহ একদিনেই তুমি এতো দূর।
“নিশি : ছাড়ুন তো কাজ আছে আমার।
“নিশান : জান পাখি শোন না।
“নিশি : জান পাখি বলে ডাকবেন না আমায়..
“নিশান : কেন?
“নিশি : কারো Second option হতে চাই না আমি!
“নিশান : হ্যাঁ জানি আমি পুড়া পুড়া গন্ধ আসছে…
“নিশি : আমি মোটেও জ্বলছি না।
“নিশান : আমি কোথায় বললাম তুমি জ্বলছো।
“নিশি : কথা বলবেন না আমার সাথে ছাড়ুন আমায়, আমি কারো জান পাখি না।
“নিশান : আচ্ছা বলো কি করতে হবে…
“নিশি : কিছু করতে হবে না আপনার আপনি ছাড়ুন আমায়..
“নিশান : ( নিশি কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ) done ডাকবো না আর জান বলে হ্যাপি, আসলে আমার ছোট বোন ও, ছোটবেলা থেকেই আদর করে ওকে জান ডাকতাম আমি। এখন আমার জান পাখি’র ভালো না লাগলে আমি আর ডাকবো না ঠিক আছে।
“নিশি : বিড় বিড় করে ( আপনি তো বোন”ই ভাবেন, কিন্তু ওই ভুতনি তো ভুতনি, শাকচুন্নী একটা )
“নিশান : কিছু বললে জান পাখি!
“নিশি : ফ্রেশ হয়ে আসুন!
“নিশান : হুম।
.
পরের দিন সকালে সবাই নাস্তা করতে থাকে, এমন সময় জিসান আসে। জিসান কে দেখে সবাই খুশি কিন্তু জিসান বেশ রেগে আছে। সে কারো সাথে কোন কথা না বলেই রুমে চলে যায়। আরশিয়া জিসানের পিছু পিছু যায়।
নিশান বুঝতে পারে তাদের আবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত টা হয়তো জিসান নিতে পারে নি। রাতে কথা বলেছে এই ব্যাপারে বাবা’র সাথে। আরিয়ান এর বাবা’র সাথে কথা বলেছে আহসান। বিয়ে’টা ১ সপ্তাহ পর এই বাড়িতে’ই হবে। আরশিয়া আজ থেকেই সব তোরজোর শুরু করে দিয়েছে । নিশানের আবার বিয়ে হবে নিশি’র সাথে এই কথা শুনে তিশা আর ফুপি অনেক অবাক। তারা কিছু করবে বলে আন্দাজ করছে নিশি। চোখে চোখে রাখছে তাদের।
নিশান অফিসে চলে যায়। নিশি রুম গোছাতে থাকে, তখন জিসান এসে রুম নক করে।
“নিশি : তুই!
চলবে….
গল্পের_নাম : #অভ্রভেদী_প্রণয় ( #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৬
নিশান অফিসে চলে যায়। নিশি রুম গোছাতে থাকে, তখন জিসান এসে রুম নক করে।
“নিশি : তুই!
“জিসান : হুম কথা আছে তোর সাথে।
“নিশি : বল।
“জিসান : তা কি ভাবলি?
“নিশি : কোন ব্যাপারে?
“জিসান : ডির্ভোস এর ব্যাপারে.. মনে আছে। তিন দিন আগে আমি তোকে দিয়েছিলাম।
“নিশি : ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) জিসান আমি…
“জিসান : তুই ডির্ভোস দিবি না এইটাই তো।
“নিশি : হ্যাঁ!
“জিসান : ( জোরে হেসে ) বাহ! এই কয়েকদিনে ভালো ও বেসে ফেললি। তা কি রকম ভালো বাসলি। আমার মতো।
“নিশি : তোর মতো ভালো বাসবো ( তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ) ভালোই বললি! তোকে তো আমি এক তরফা ভালোবেসে গেলাম তার চেয়ে বরং ওকে বাসি আর যাই হোক এক তরফা হবে না এটা।
“জিসান : নিশি!
“নিশি : প্লিজ জিসান তর্ক করিস না, সব জানি আমি!
“জিসান : কি জানিস তুই?
“নিশি : ওহ্ আচ্ছা এখন বলবো। ( জিসানের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে কললিস্টে গিয়ে জিসানের সামনে ধরে ) আসলে কি বলতো কখনো তোর ফোন আমি চেক করি নি। যদি আগে করতাম তাহলে আমার এতো কষ্ট পেতে হতো না।
“জিসান : নিশি এগুলো..
“নিশি : থাম! কথা বলিস না তুই জানিস সত্যি টা কি। আর এখন আমার কিছু যায় আসে না। আমি এখন নিশানের স্ত্রী। এই বার বিয়ে হলে আমি নিজের মন থেকে মেনেই ওকে বিয়ে টা করবো।
“জিসান : বিয়ে টা হবে তো।
“নিশি : বিয়ে টা আমি করবো।
“জিসান : দেখা যাক কি হয়, নিশি তুই আমার জেদ আর জিসান আজ পর্যন্ত যা চেয়েছে সব পেয়েছে!
“নিশি : ( তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ) সেটাই বড় ভুল।
.
জিসান রেগে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো তিশা। জিসানের রেগে ঘর থেকে বের হওয়াতে বাঁকা হাসি দেয় সে।
জিসান রুমে এসে ঘরের জিনিসপত্র ছুড়ে মারে। ফুলদানি ছুড়ে মারলে তিশা সেটা ধরে ফেলে, তারপর বলতে থাকে..
“তিশা : এক জনের রাগ এই বেচারা ফুলদানি’র ওপর দেখিয়ে কি লাভ?
“জিসান : তিশা তুই?
“তিশা : হ্যাঁ আমি.. তোর সাথে একটা ডিল করতে আসলাম। ( হেসে )
“জিসান : ডিল! ( ভ্রু কুঁচকে )
“তিশা : হ্যাঁ ডিল, কি বলতো আমরা একই পথের সঙ্গী তাই ভাবলাম এক সাথেই হাঁটি!
“জিসান : মানে..
“তিশা : মানে টা হলো নিশান।
“জিসান : তুই নিশান কে…
“তিশা: হ্যাঁ আর তুই নিশি! দেখ আমি শুধু নিশান কে চাই আর কিছু না। এরপর নিশি কে তুই বিয়ে কর, ছেড়ে দে আই ডোন্ট কেয়ার কিন্তু নিশান কে আমার’ই চাই।
“জিসান : ( তাকিয়ে আছে তিশা’র দিকে )
“তিশা : তা কি ভাবলি…
“জিসান : কি করতে হবে আমায়!
“তিশা : ( জিসানের কথায় বাঁকা হাসি দেয় )
.
রাতে…
নিশি ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুনছে। আজকের আকাশ টা খুব সুন্দর আর পরিবেশ’টাও শান্ত। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বর্ষা কাল চলছে, একটু আগেই খুব জোরে বৃষ্টি হয়েছিল। আর এখন সব শান্ত নিশ্চুপ। রাস্তায় কিছু ল্যাম্পপোস্ট জ্বলছে। মানুষ এর আনাগোনা নেই বললেই চলে। নিশি ছাদের শেষে গ্লিল টা ধরে দাঁড়িয়ে আশপাশ দেখছে।
হঠাৎ করেই ঘাড়ে কারো নিঃশ্বাস পরে। নিশি চোখ বন্ধ করে অনুভব করে। গাঁয়ের গন্ধ খুব চেনা নিশি’র। কারন এটা নিশান। নিশান নিশি’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে…
“নিশান : আইসক্রিম খাবে জান পাখি!
“নিশি : ( নিশানের কথা শুনে সামনে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাত পেতে বলে ) দিন!
“নিশান : আমি তো জিজ্ঞেস করছি। ( ভ্রু কুঁচকে )
“নিশি : ওহ আনে নি। ( মুখ টা কালো করে )
“নিশান : ( নিশি’র সামনে ধরে ) নাও।
“নিশি : ( দাঁত বের করে হেসে ) thanku.
“নিশান : thanks বলতেও জানো না দেখছি।
“নিশি : হি হি হি।
“নিশান : বেশি খেয়ো না জর আসবে না হলে।
“নিশি : কেন সেবা করতে ভয় হয়।
“নিশান : ( পেছন থেকে গ্রিল ওপর হাত রেখে নিশি’র সামনে দাঁড়িয়ে ) আমার জান পাখি’র সেবা করতে ভয় লাগবে কেন?
“নিশি : তাহলে!
“নিশান : আরে বোকা মেয়ে কিছু না। খাও তুমি!
“নিশি : আচ্ছা!
“নিশান : আমাকে একবার সাধবে না।
“নিশি : কেন? এটা আমার না।
“নিশান : বাহ একা একাই খাবে।
“নিশি : হুম।
“নিশান : আচ্ছা খাও।
.
নিশি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিল আর নিশান ওকে দেখছিলো। নিশি খাবার শেষ করে নিশানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়। নিশান হেসে মাথা নাড়ায়।
“নিশান :জান পাখি!
“নিশি : হুম।
“নিশান : একটা কথা বলি।
“নিশি : হুম..
“নিশান : ভালোবাসবে আমায়।
“নিশি : ( মুচকি হাসে মাথা নিচু করে নেয় )
“নিশান : ( নিশি ঘাড়ে’র কাছে গিয়ে বলে ) থাক লজ্জা পাওয়া লাগবে না আমি জানি।
“নিশি : আমি লজ্জা পেলাম কোথায়। আর আপনি কি জানেন?
“নিশান : এটাই যে তুমি ভালোবাসো আমায়!
“নিশি : এই কথা আমি কখন বললাম।
“নিশান : তুমি তো বললে!
“নিশি : কখন?
“নিশান : হুম তুমি বলেছো!
“নিশি : কখন বললাম বলবেন তো।
“নিশান : জান পাখি তুমি বলেছো!
“নিশি : আমি কখন বললাম ভালোবাসি!
“নিশান : এই যে বললে ভালোবাসি। ( নিশি’র ঘাড়ে হাত রেখে )
“নিশি : ( জিহ্বা কামড় দিয়ে ) এটা চিটিং।
“নিশান : ভালোবাসা”য় সব জায়েজ।
“নিশি : কচু!
নিশান : ( হাসতে থাকে )
“নিশি : হাঁটতে যাবেন?
“নিশান : এখন?
“নিশি : হ্যাঁ ইচ্ছে করছে।
“নিশান : আমার জান পাখি’র ইচ্ছে করছে আমি না যেয়ে পারি চলো!
.
নিশি আর নিশান হাটতে বের হয়। নিশান একটা কালো জিন্স আর হুডি পরে আর নিশি কালো রঙের শাড়ি। নিশি নিশানের বাহু ধরে রাস্তায় থাকে। পুরো রাস্তা নীরব, মানুষের আনাগোনা নেই দূরে কিছু খোলা দোকান আছে। ল্যাম্পপোস্ট আলোয় রাস্তা দেখা যাচ্ছে, গাছের পাতা বেয়ে এখনো পানি পরছে, প্রকৃতি এখনও বৃষ্টিতে মুখর।
নিশান আর নিশি হাঁটতে হাঁটতে পার্কে চলে এসে। নিশান নিশি কে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে বাইরে যায়। কিছুক্ষণ পর দু’হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আসে। নিশান নিশি’র সামনে চায়ের কাপ টা ধরে। নিশি মুচকি হেসে কাপ টা নিয়ে চুমুক দেয়। নিশান নিশি’র গা ঘেঁষে বসে পরে। চারপাশ নিস্তব্ধ।
“নিশি : দারুন লাগছে জায়গাটা।
“নিশান : হুম ঠিক বলেছো। শহুরে এলাকা দিনে যেমন শোরগোল আর ব্যস্ততায় ভরা থাকে রাতে ঠিক ততোটাই শান্ত আর নীরব থাকে। ( চায়ে চুমুক দিয়ে )
“নিশি : ঠিক বলেছেন, আর এই ব্যস্ত শহরে মানুষ চিন্তে পাওয়া বড়ো দায়।
“নিশান : ( নিশি’র দিকে তাকিয়ে ) তাই!
“নিশি : হুম।
“নিশান : ( আকাশের দিকে তাকিয়ে ) একটা কথ বলবো জান পাখি!
“নিশি : হুম…
“নিশান : ( নিশি’র হাতে হাত রেখে নিশি’র দিকে তাকিয়ে ) আমরা আবার বিয়ে করবো, তা সবকিছু কি আবারও শুরু করতে পারি নাহ।
“নিশি : ( নিশানের থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে নিজেও চায় নিশান কে সুযোগ দিতে, তাকে ভালোবাসি বলতে কিন্তু কি করে যে বলবে ভেবেই পাচ্ছে না। কোথাও গিয়েও যেন বাধা দিচ্ছে। )
“নিশান : ( নিশি’র নিশ্চুপ হওয়াতে হাত সরিয়ে ) তোমাকে আর জোর করবো না। তোমার যখন ইচ্ছা তুমি বলো!
.
বলেই নিশান উঠে দাঁড়ায়। তারপর কয়েক পা হাঁটে। তখন পিছন থেকে নিশি ডাক দেয়…
“নিশি : শুনুন..
“নিশান : হুম!
“নিশি : ( দাঁড়িয়ে নিশানের সামনে আসে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থাকে। নিশান কিছু বলতে যাবে তখনই নিশি নিশান কে জরিয়ে ধরে )
“নিশান : ( হুট করেই নিশি’র জরিয়ে ধরাতে অবাক হয় নিশান। তবুও সে নিশি কে জরিয়ে। )
“নিশি : ( নিশান জরিয়ে ধরলে নিশি আরো জোরে নিশান কে জরিয়ে ধরে। নিশি নিশানের বুকের সাথে মিশে আছে। নিশানের প্রত্যেকটা হার্টবিট শুনতে পারছে সে )
“নিশান : ( অনেকক্ষণ দু’জন দু’জনকে এভাবে জরিয়ে ধরে রাখে। নিশান একটু ঝুকে নিশি’র কানের কাছে গিয়ে বলে ) ভালোবাসি জান পাখি!
“নিশি : ভালোবাসি!
“নিশান : ( নিশি’র উওর শুনে নিশি কে ছেড়ে দিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল ) কি বললে তুমি!
“নিশি : একটু নিচে হন তো।
“নিশান : কেন?
“নিশি : আপনি খুব লম্বু তাই।
“নিশান : জান পাখি!
“নিশি : আরে নিচে হন তো।
“নিশান : বলো! ( এক হাঁটু গেড়ে বসে )
“নিশি : ( হুট করেই নিশানের কপালে আলতো করে একটা কিস করলো। )
“নিশান : ( চোখ বড় বড় করে নিশি’র দিকে তাকিয়ে রইল )
“নিশি : প্রকাশ না করে অনুভব করতে শিখুন। ( মুচকি হেসে )
“নিশান : ( মুচকি হেসে ) বুঝতে পেরেছি ( নিশি’র গাল ধরে কপালে আলতো করে একটা কিস করে )
“নিশি : চলুন।
“নিশান : হুম চলো।
.
নিশান আজ অনেক খুশি। নিশি’র হাতে নিজের হাত মুঠো করে রাস্তায় হেঁটে চলছে সে। তার এতোদিনের কষ্ট সফল হলো আজ। তার জান পাখি অবশেষে তাকে ভালোবাসে ফেলেছে।
নিশি আর নিশান দু’জনেই বাসায় ফিরল। দু’জনেই খুব খুশি, কিন্তু তাদের এই খুশি দেখে আরো দুইজন রাগে ফুঁসছে। জিসান আর তিশা! কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এইসব। কিন্তু নিশান আর নিশি তাদের দেখল না।
.
পরদিন সকালে….
নিশানের ঘুম ভাঙে নিশি’র ভেজা চুলের ঘ্রাণে। নিশি গোসল করে ভেজা চুল নিশানের মুখে ঝাড়া মারছে। নিশান ঘুম থেকে উঠে নিশি কে হেঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে…
“নিশান : গুড মর্নিং জান পাখি!
“নিশি : মনিং! ঘুম হয়েছে…
“নিশান : হুম খুব ভালো।
“নিশি : তাহলে ওঠুন দেরি হচ্ছে আপনার।
“নিশান : ইচ্ছে করছে যেতে।
“নিশি : চুপচাপ ওঠে তৈরি হয়ে নিন, বিকালে শপিং করতে যাবো।
“নিশান : বিয়ের!
“নিশি : হুম, আমি আর আরিফা শপিং মলেই থাকবো, আপনি আর আরিয়ান ভাইয়া ঠিক টাইমে চলে আসবেন।
“নিশান : জো হুকুম জান পাখি ( নিশি কপালে কিস করে )
“নিশি : এখন উঠুন ফ্রেশ হয়ে নিন।
“নিশান : হুম।
.
“ফুপি : প্ল্যান টা খুব ভালো। কাজ হবে এতে..
“তিশা : কিন্তু সব ক্রেডিট কিন্তু তোমার মা। যদি তুমি জিসান কে এমন করে না তুলতে তাহলে এমন কিছুই হতো না।
“ফুপি : চাইলাম তো নিশানকে করতে। কারন নিশানের মা তার সমস্ত সম্পত্তি ওর নামে করে গেছে আর এছাড়াও ভাইয়ের সম্পত্তি ও তো আছে। কিন্তু এই নিশান আরশিয়া একটু বেশিই ভালোবাসত যার কারনে জিসান কে আমার ভুল বোঝাতে হয়। আর এমনে তেও তখন ও বাচ্চা ছিলো তাই এতো বুঝতো না। কিন্তু এর ফল যে এভাবে পাব বুঝিনি।
“তিশা : you are great mom.
( দরজার আড়াল থেকে তাদের সমস্ত কথা একজন শুনল )
.
রাতে…
নিশি আর নিশান এক সাথেই ফিরল। ফুপি তাদের দেখে জিজ্ঞেস করল…
“ফুপি : কোথায় গিয়েছিলে?
“নিশান : বিয়ের শপিং করতে ফুপি।
“ফুপি : ওহ্ ভাল। তা তোমার বউ নাকি প্রথম বার পালিয়েছিল বিয়েতে, এবারও কি পালাবে।
“নিশান : ফুপি…
“তিশা : কেন মিথ্যে নাকি এইসব। তারপরও এই মেয়েকে তোমরা এতো আদর যত্ন করো কিভাবে?
“নিশান : shut up তিশা, এই কোনো মেয়ে না আমার জান পাখি, আমার স্ত্রী। ভদ্রভাবে কথা বলো ওর সাথে।
“তিশা : তুই আমায় নাম ধরে ডাকলি।
“নিশান : নাম তো রাখার জন্য’ই ডাকা তাই না। আচ্ছা মা আমরা ওপরে যাচ্ছি, ডিনার করেই এসেছি আমরা।
.
বলেই নিশান নিশি’র হাত ধরে ওপরে নিয়ে গেল। এই ঘটনার অনেক দিন হয়ে গেল। নিশান রাগে তিশা আর ফুপি’র সাথে কয়েকদিন কথা বলেনি। শেষে তিশা এসে মাফ চেয়ে গেলে নিশি’র কথায় নিশান ওদের সাথে কথা বলতে থাকে।
দেখতে দেখতে আরো কয়েকদিন চলে যায়। তিশা আর খারাপ ব্যবহার করে না, ফুপিও না। বিয়ের আর একদিন বাকি। নিশি আরিফার সাথে বাইরে যায় কিছু দরকারে। তখন তিশা আসে নিশানের ঘরে…
“নিশান : কিছু বলবি?
“তিশা : হ্যাঁ!
“নিশান : বল!
“তিশা : কালকে তো বিয়ে তা বাসর রাতে নিশি’র জন্য কোনো সারপ্রাইজ প্ল্যান করেস নি।
“নিশান : না মানে…
“তিশা : আমি জানতাম তুই ভুলে যাবি।
“নিশান : আচ্ছা কি কেনা যায় বল তো।
“তিশা : এভাবে কি করে বলবো, চল একটা কাজ করি শপিং মল এ যাই দেখি কি ভালো লাগে।
“নিশান : হুম চল!
.
নিশান আর তিশা বাইরে বের হয়। দুইজনেই শপিং মল এ ঘুরছে কি কেনা যায়। হঠাৎ করেই তিশা বলে…
“তিশা : আরে নিশি না।
“নিশান : কোথায়?
“তিশা : ওই যে।
“নিশান : ( তাকিয়ে দেখল নিশি একজন ছেলের সাথে বসে আছে। ছেলেটা নিশি’র হাত ধরে আছে। নিশান এর মাথা গরম হয়ে গেল। সে একটু ঘুরে ছেলেকে দেখতে চাইলো, তাকে দেখে নিশান অবাক হয়ে গেল। সে বলে ওঠল.. ) জিসান…..
চলবে….
আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/399836045071507/