তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:44
সকালে নাস্তা শেষে মোমেনা চৌধুরী ও রেহনুমা আহমেদ বাগানে বসলেন।কিছুক্ষণ পর বাগানে আরও দুটো চেয়ার পাতা হলো এহসান চৌধুরী ও হিশাম আহমেদ এর জন্য।মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু নিয়ে আলোচনা করতে চান।এই মুহূর্তে বাগানে কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।তবে আলোচনা শুরুর আগে চা দেওয়া হয়েছে।না হলে নাকি আলোচনা সামনে এগুতে পারবেনা।
মোমেনা চৌধুরী ও রেহনুমা আহমেদ বুঝতে পারছেন না কিসের আলোচনা হবে তাও আবার এত গোপনীয়তার সহিত।তাদেরকে বেশিক্ষণ দ্বিধায় না রেখে এহসান চৌধুরী বলা শুরু করলেন।ভাবী আমরা দুজন মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,ঠিক সিদ্ধান্ত না বলতে পারেন ভেবেছি এখানে আপনাদের মতামতও দরকার।মোমেনা চৌধুরী ও রেহনুমা আহমেদ একে অপরের দিকে তাকালেন।কি বিষয়ে বলুনতো?আমরা ঠিক করেছি আমার ছোট ছেলের সাথে আপনার বড় মেয়ের যদি বিয়ে দেওয়া যায় তাহলে আমাদের সম্পর্কটা আরও জোরালো হবে।রেহনুমা আহমেদ কিছু বলার আগেই মোমেনা চৌধুরী বলে উঠলেন এইটা খুব ভালো কথা।রেহনুমা আহমেদ ইতস্তত করে বললেন ওরাতো এখনো ছোট!ভাবী আমি কি বলেছি এখনই বিয়ে হবে?মাহিম অপলার পড়া শেষ হলে বিয়ে হবে।হিশাম আহমেদ এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন।এইবার তিনি বললেন,সবার আগে ওদের মতামত জানতে হবে।এহসান চৌধুরী শব্দ করে হেসে উঠলেন।তার সাথে মোমেনা চৌধুরী ও রেহনুমা আহমেদও হাসলেন।হিশাম আহমেদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,বুঝতে পারছেন না হাসির মত কি বললেন তিনি।তুই এখনো বুঝিসনি কিছু?ওদের হাবভাব দেখেও বুঝলি না?আমার ছেলেতো তোর মেয়েকে চোখে হারায়।তবুও আমি একবার অপলার সাথে এইবাপ্যারে কথা বলে যা সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিবো।ঠিক আছে কথা বল,কথা বলার পরও তোর মেয়ে আমার বাড়ির বউই হবে আর তুই হবি আমার বেয়াই।বলেই উচ্চশব্দে দুজনই হেসে উঠলেন।
আলোচনা শেষ হওয়ার পর হিশাম আহমেদ সরাসরি মেয়ের ঘরে গেলেন। গেটে দাঁড়িয়ে দেখলেন মেয়েটা খুব হেসে হেসে লুবনার সাথে কথা বলছে।এইখানে আসার পর তার মেয়েটা সত্যিই অনেক ভালো আছে।আসবো রে অপলা?অপলা আর লুবনা একসাথে গেটের দিকে তাকালো।অপলা বলল, বাবা তোমাকে কি অনুমতি নিয়ে আমার রুমে ডুকতে হবে নাকি?হিশাম আহমেদ ভিতরে ডুকতে ডুকতে বললেন,মেয়েরা বড় হলে দরকার হয়।না বাবা তার কোনো দরকার নেই।হিশাম আহমেদ লুবনা আর অপলার মাঝে বসে বললেন,লুবনা মা তুমি একটু তোমার মামীর কাছে যাওতো।ঠিক আছে মামা।লুবনা চলে যেতেই হিশাম আহমেদ অপলার তাকালেন।বাবা কিছু বলবে কি? হ্যারে মা,তোর সাথে একটা বিষয়ে কথা বলার ছিল। বলো বাবা।কিভাবে বলবো সেইটাই ভাবছি।আহ বাবা বলনা।এহসান বলছিল তোর আর মাহিমের বিয়ের কথা।অপলা খুব অবাক হল সত্যিই ওদের বিয়ে হবে!!লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো।আমি তোর মত ছাড়া কিছুই করতে চাইনা,কথাও বাড়াইনি।ভালবাসার মানুষকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাওয়া এত সহজ!!তোর কি মত,তুই কি এই বিয়েতে রাজি?অপলা মাথা একটু উচু করে বলল,তোমাদের যেটা ইচ্ছে সেটাই আমার মত।তারমানে তোর এই বিয়েতে সম্মতি আছে?তোমাদের থাকলে আমারও আছে।ঠিক আছে এইব্যাপারে আমি তাহলে এগুই?অপলা আর বসে থাকতে পারছেনা।ও রুম থেকে বেরিয়ে এলো।ও এখনো বুঝতে পারছে না সত্যিই শুনলো নাকি স্বপ্ন??
বিকেলে আজকে ওরা ক্লাবে যাবে।জীবন্ত স্বর্গে।আজকে আগের দিনের চেয়ে বেশি সময় ধরে আড্ডা চললো।এইখানের সবার সাথে এতটা মিশে গেলো যেনো ওরাও এইখানকার মেম্বার।অপলারা তিনদিন পর ঢাকায় ফিরে যাবে।তাই আজ সবাই মিলে ঠিক করলো কালই ওরা জীবন্ত স্বর্গে যাবে।সবাই রাজিও হয়ে গেল খুব আনন্দের সাথে।তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হলো অপলা।কেনো তা ও নিজেও জানেনা।তবে আজ অপলা কোনোভাবেই মাহিমের দিকে তাকাতেই পারছেনা।চারপাশ থেকে প্রচন্ড লজ্জারা ঘিরে ধরে আছে।মাহিম খেয়াল করল কিন্তু কিছু বলছে।ওরও খুব ভালো লাগছে এইভাবে দেখতে কি মিষ্টিই না লাগছে।ওরা যখন ফিরে আসছে তখনও অপলা মাহিমের দিকে তাকাতে পারছেনা।কথা বলছে কিন্তু তাকাচ্ছে না।বেশ ইন্টারেস্টিংও লাগছে মাহিমের কাছে।আর রিজভী আর আমি লুবনার যেনো কথাই শেষ হয়না।মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে ওদের সাথে যে কেউ আছে তারও খেয়াল নেই ওদের।
আজও সন্ধ্যার পর আবার সবাই একত্রিত হলো।কারণ এহসান চৌধুরী সবাইকে ডেকেছেন।মোহনকেও অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে বলেছেন।ড্রয়িংরুমে সবাই থাকলেও অপলা নেই।ওর যে খুব লজ্জা লাগছে।ওকে অনেকবার ডেকেছে।তবুও যায়নি।মাথা ব্যাথা বলে শুয়ে আছে।ওর বিয়ের আলোচনায় ও কি করে থাকবে??তবে ঐখানে কি বলছে সেটা শুনতে ওর মন খুব উশখুশ করছে।অবাধ্য কান দুটো যেনো ঐদিকেই আড়ি পেতে আছে।কিছু কিছু কথা হটাৎ হটাৎ ছিটে আসছে ওর কানে।কিন্তু পুরোটা বুঝা যাচ্ছে না।ঐতো এহসান আংকেল মাহিমের কাছে বিয়ের ব্যাপারে ওর মতামত জানতে চাইছে।অপলার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে।মাহিম কি বলবে?ওকি এই বিয়েতে রাজি?মাহিমের কোনো শব্দইতো শুনতে পাচ্ছিনা তাহলে ওকি রাজি না?অপলা খুব ছটফট করছে।হটাৎ এহসান চৌধুরী ও হিশাম আহমেদ শব্দ করে বলে উঠলেন আলহামদুলিল্লাহ।সাথে সাথে বাড়ির সবাই যেনো বিজয় উল্লাস করে উঠলো।ঐতো লিপি আপুর গলা পাওয়া যাচ্ছে ছুটোছুটি করে মিষ্টি আনতে বলছে।তারমানে মাহিম রাজি!!লজ্জায় দুহাতে নিজের মুখটা ঢেকে ফেলল।
ঠিক সে সময়ই লিপি আপু রুমে আসলো।দেখি দেখি মুখটা,আর লজ্জা পেতে হবে না হা করতো।অপলা মুখ থেকে হাত সরালেও লজ্জায় মাথা তুলতে পারছেনা।লিপি আপু নিজেই জোর করে মুখ তুলে মুখে মিষ্টি পুড়ে দিলো।তারপর হাসি মুখে বলল,আমি কিন্তু আগেই বুঝেছিলাম কিছু একটা চলছে আর সেটাই সত্যি হলো।শোনো আমি কিন্তু তোমার বড় জা হই।কিন্তু ভুল করেও বড় জা ভাবলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা এই বলে দিলাম।অপলা একরাশ বিস্ময় নিয়ে লিপির দিকে তাকালো ও এই কথার মানে বুঝলো না।লিপিও বুঝতে পারলো অপলার চোখের ভাষা।দুহাতে অপলাকে বুকে টেনে বলল,আজ থেকে তুমি আমার ছোট বোন মনে থাকবেতো,আর যদি ভুলে যাও খুব শাসন করবো একাই মনে পড়ে যাবে বলে হাসলো।অপলাও দুহাতে লিপিকে আকড়ে ধরে বলল মনে থাকবে আপু।
রেহনুমা আহমেদ এর চোখ ভিজে উঠছে সুখের কান্নায়।তার মেয়ে এত ভালো একটা পরিবার পাবে সেই সুখে।রেহনুমা আহমেদ এর চোখের পানি মুছে দিলেন মোমেনা চৌধুরী না ভাবী আজকে আনন্দের দিনে একদম চোখের পানি নয়।ভাবী এইটা যে সুখের কান্না।বলে দুজনই আলতো হাসলেন।দুজন মাই বুঝেন এ কান্নার মানে।উনিওতো মেয়ের মা।রেহনুমা আহমেদ এর মনের কথা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হলো না তার।শুধু বলো,ভাবী আমি এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছি ঠিকই কিন্তু আল্লাহ আমার ঘর আলো করে আরও দুটো মেয়ের ব্যাবস্থাও করে দিলেন।রেহনুমা আহমেদ তৃপ্তির হাসি হাসলেন।তিনি জানেন তার মেয়ে এইখানে খুব ভালো থাকবে।
চলবে……….
তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:45
রাতে খাবার টেবিলে মাহিমের সাথে অপলার চোখাচোখি হয়ে গেল।অপলা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো আর মাহিম মিটমিট করে হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে।ওর এত বেশি লজ্জা লাগছে যে খেতেও পারছে না।খানিক অসস্তিও হচ্ছে।তবে সবাই ওদের বিয়ে নিয়ে খুব খুশি বুঝাই যাচ্ছে।ওর অসস্তি আরও বেড়ে গেলো যখন ওর পায়ের উপর কারো পায়ের স্পর্শ পেলো।বুঝতে আর বাকি নেই এইটা মাহিমের পা।এমনি তাকাতে পারছেনা তারমধ্যে মাহিমের এই দুষ্টুমি।পা সরিয়ে নিতেই আবার দিচ্ছে।খুব অসস্তি হচ্ছে।কিছু বলতে পারছেনা তার সুযোগটাই যেনো মাহিম নিচ্ছে।মাহিম খুব মজাও পাচ্ছে।
মাহিমের ফোন বেজেই চলেছে।ফোনটা রুমেই ছিল।তূর্য সারা বাড়িময় ছুটছে আর লিপি তার পিছন দৌড়ে দৌড়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।তূর্য ফোনের সাউন্ড পেয়ে দৌড়ে ফোন নিয়ে আসে।ও ফোন ধরতে নিলে লিপি বাধা দেয় আর ততক্ষণে ফোন একাই কেটে গেছে।তুর্য ফোনটা হাতে নিয়ে চাচ্চুকে দিতে ছুটল।মাহিম অব্দি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ফোনটা আবার বেজে উঠে।রিংটোন শুনে মাহিম পা সরিয়ে নিয়ে পিছনে তাকাতেই তূর্য এগিয়ে দিয়ে ভো দৌড়।রুদ্র ফোন করেছে।মাহিম উঠে একটু সরে গিয়ে কথা বলে আবার টেবিলে এসে বসলো।মাহিমই বলা শুরু করলো,রিজভী শোন রুদ্র ফোন করেছিলো।রিজভী পুরো কথা না শুনেই বলল,কালকের প্ল্যান কি চেঞ্জ করল নাকি??অপলা কারেন্ট শকড খাওয়ার মত করে মাথা তুলে মাহিমের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মাহিমের দৃষ্টি অপলার দিকে,বুঝতে পারছে ঐখানে যাওয়া নিয়ে অপলা খুব বেশি excited।টেবিলে বসেই ওরা চার জন যাওয়া নিয়ে কথা বলছে।রুদ্র কি বলেছে মাহিম বলল।অপলার যেনো ধরে প্রান এলো এতটা খুশি হলো।ওরা তবে যাচ্ছে।
এতক্ষণ টেবিলে বসে বড়রাও কথা শুনছিল।তবে কোথায় যাবে সেটা বুঝতে পারছে না।হিশাম আহমেদই আগ্রহ করে জানতে চাইলেন।কোথায় যাওয়ার প্ল্যান করা হচ্ছে??মাহিম ঘাড় ফিরিয়ে বলতে যাবে তার আগেই অপলা খুব উৎসাহ নিয়ে বলল,বাবা আমরা জীবন্ত স্বর্গে যাবো।হিশাম আহমেদ এর এক সেকেন্ডের মধ্যেই যেনো ভিতরে একটা তুফান বয়ে গেলো।কি বলবেন তিনি??এহসান চৌধুরী বললেন,জীবন্ত স্বর্গ মানে ওই বৃদ্ধাশ্রমটাতে যাচ্ছ?হ্যাঁ,আব্বু।এইবার যেনো রেহনুমা আহমেদ এর প্রাণ যায় অবস্থা এই ভয়টাই উনি পাচ্ছিলেন।স্বামীর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।সে দৃষ্টি বারবার বলছে আটকাও ওকে যেতে দিও না।এহসান চৌধুরী এবার বললেন তোমরা কি জানো এই বৃদ্ধাশ্রমটা কে শুরু করেছিলেন?সবাই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তোমাদের হিশাম আংকেল।এইটা শুনবে কেউ ভাবেনি তবে শুনে সবাই খুব খুশি হলো।আর উৎসাহ যেনো আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।মাহিম বলছে আংকেল আপনি খুব ভালো একটা কাজ করেছেন।ঐখানে যারা থাকে তাদের এইরকম একটা থাকার ব্যবস্থা করায়,অনেকের কুসন্তান আবার অনেকের সন্তান নেই।নিঃসঙ্গ মানুষগুলো মাথার উপর ছাদ পেয়েছে।সবদিক থেকেই এইটা যেনো নিশ্চিন্তে থাকার ঠিকানা তাদের জন্য।হিশাম আহমেদ শুকনো মুখে হাসলেন।তিনি বারবার অপলার দিকে তাকাচ্ছেন,মেয়েটার এত উৎসাহ দেখে বারণ করতে ইচ্ছা করছে না।কিন্তু ঐখানে ওকে একা ছাড়া যাবে না।মাহিম আর রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল,তোমরা একাই কেনো যাবে?আমাদের সবাইকেও নিয়ে চলো।অপলা উচ্ছাসিত গলায় বললো,বাবা তোমরা সবাই যাবে?যদি সবাই রাজি থাকে আর তোরা নিস।লিপি এতক্ষণ শুনছিল এবার সে এগিয়ে এসে বলল রাজি কি বলছেন আংকেল,সবাই রাজি আমরাও যাবো ঠিক আছে আব্বু বলে শশুর এর দিকে তাকালো।এহসান চৌধুরী হেসে বলল,আমার মা যখন বলে দিয়েছে তখনতো যেতেই হবে,সব ব্যবস্থা আমি করছি,তোমার বন্ধুদের জানিয়ে দিও।সবাই হাসলো।হিশাম আহমেদ মিথ্যে হাসার চেষ্টা করলেন শুধু রেহনুমা আহমেদ হাসতে পারছেন না।তার শরীর খারাপ করছে,শরীর বারবার কেপে কেপে উঠছে।
তুমি কি এইটা ঠিক করলে?ওকে মোটেই ঐখানে যেতে দেওয়া যাবেনা।অপলার মা এতো ভেবো না।মেয়েটার আনন্দটা দেখলে না ঐখানে যাওয়া নিয়ে?হ্যাঁ,দেখছি তাইতো আরও ভয় হচ্ছে।ভয় পেওনা,আমরাতো যাবোই সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখবো আমরা দুজন মিলে।তবুও আমার ভয় হচ্ছে।এত ভয় পেওনা।ভয় পেওনা বললেইতো ভয় চলে যায় না যদি রুমানার সাথে দেখা হয়ে যায়?হলেই কি?ওর কথা বলার মত অবস্থা নেই এখন তখন অবস্থা।রেহনুমা আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।উনার ভয় যে কমছেই না।বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে গেলেন।
রানু..রানু মা আমার বুকে আয়,আয়না মা।এই যে দেখ আমাকে আমিই তো তোর মা।আয়না মা একবার কাছে।তোকে আমি আর যেতে দিবো না মা আয়না আমার কাছে।এইতো আরেকটু কাছে আয়।আয়না আরেকটু কাছে তোকে আর কোনোদিন কারো কাছে দিবো না তুই আমার কাছে থাকবি আমার সাথে।আমার কোল আলো করে আয়না মা কাছে। আয়য়য়য়য়য়য়…………না ও আমার আমার মেয়ে কেউ ওকে নিবে না কেউ না।যাবিনা মা যাবিনা ওদিকে যাবিনা একদম…আমার কাছে আয় মা……নাআআআআ……
স্ত্রীর চিৎকারের শব্দে উঠে বসলেন হিশাম আহমেদ।টেবিল ল্যাম্পের আলো জ্বালিয়ে স্ত্রীর গায়ে হাত দিয়ে ডাকলেন।রেহনুমা আহমেদ ধরধর করে ঘামছেন আর দুহাতে কিছু একটা ধরার চেষ্টা করছেন।হিশাম আহমেদ আবার ডাকলেন।রেহনুমা আহমেদ পিটপিট করে তাকালেন।স্বামীকে দেখতে পেয়ে দুহাতে তার হাত আকড়ে ধরে বললেন ওকে আটকাও আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে আটকাও ওকে।অপলার মা শান্ত হও।কোথায় কে?ঐতো রোমম…. বলে সামনে তাকিয়ে দেখেন কেউ নেই।পুরো ঘরটা চোখ বুলিয়ে নিয়ে উঠে দাড়াতে নিলে হিশাম আহমেদ আটকে বলেন কোথায় যাচ্ছো?অপলার ঘরে।এত রাতে গেলে অযথা মেয়েটার ঘুম ভেংগে যাবে।তুমি বুঝছো না কেনো আমার মেয়েটাকে নিয়ে যাবে।কে নিয়ে যাবে?রোমানা..আমি মাত্রই দেখলাম।অপলার মা তুমি স্বপ্ন দেখছিলে।সব ঠিক আছে।আমি একবার ও ঘরে যাবো আটকিও না।ঠিক আছে চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ওদের ঘুম যেনো না ভাঙ্গে।ঠিক আছে।
অপলার মুখে মাথায় হাতে রেহনুমা আহমেদ আলতো করে ছুয়ে দিলেন।কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলেন।বিড়বিড় করে বললেন তুই আমার মেয়ে।অন্য আর কারোর না।সারাজীবন তোকে আমার বুকেই আগলে রাখব।ভয় পাসনা মা আমিই তোর মা আমার বুকেই তোকে রাখবো।কেউ নিতে পারবে না আমার থেকে তোকে।দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।অপলার গাঁয়ে পড়ার আগেই হিশাম আহমেদ রেহনুমাকে নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছেন তিনি নিজেও।মাঝ রাতে রেহনুমার এমন কাণ্ড দেখলে কি ভাবতো মেয়েটা!!মহিলা মানুষ সত্যিই অনেক বোকা।এতো বোকা কেনো যে হয় বুঝে পান না তিনি।
চলবে………..
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3