ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part- 34

0
8604

ছায়া হয়ে থাকব পাশে
Part ঃ last
Writer ঃ humayra khan

আর্টিসটঃ ম্যাম আপনি সত্যি অনেক লাকি এমন একটা ছেলে পেয়েছেন……
চারু ঃ হুম অনেক বেশি লাকি আমি….. যে আল্লাহ এতো মূল্যবান গিফট আমাকে উপহার দিয়েছেন
কাল……
সকাল সকাল সবাই ব্যস্ত হয়ে পরে বিয়ের কাজের জন্য……
সন্ধা হলে দিশা চারুকে পার্লারে নিয়ে যায় সাজানোর জন্য……….
কনে সাজাতে বসে চারুর পরা লাল বেনারসি শাড়ি আর ওর গালে লজ্জার লাল রঙ যেন একদম মিলে যাচ্ছে……
চারুর মেক আপ করা কম্পলিট হলে বিউটিশিয়ান রা চারুর চুল গুলো খোপা করে সেই খোপায় গোলাপ ফুল দিয়ে আবৃত করে দেয়।।।
হাতে অজ্রস চুড়ি ; বালা.; গলায় হার ;
কানে বড় বড় ঝুমকো…; মাথায় বড় টায়রা ;পরে বধুবেশে আবিষ্কার করলো চারু নিজেকে……

চারুকে সাজানো শেষ হলে চারুকে নিয়ে দিশা সোজা চলে যায় সেন্টার এর উদ্দেশ্য এ………
চারুকে স্টেজ এ বসানো হলে বিয়েতে আসা অজ্রস মেহমান ব্যস্ত হয়ে পরে চারুর সাথে ছবি তুলতে……
বর এসেছে বর এসেছে বলে যখন সবাই বর দেখার জন্য ছুটতে লাগলো চারুর মনের অস্তিরতা যেন হাজারো গুন বেড়ে গেল…..
বার বার সামনের দিক এ তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো আহানকে এক পলক দেখার জন্য……
হটাৎ ভিড় এর মাঝ খান থেকে কেউ গান গেয়ে উঠে –
jab dildarakta hai…….
গানের আওয়াজ শুনে সবাই সাইড হয়ে সড়ে গেলে চারু খেয়াল করে আহান একটা গোল্ডেন কালারের শেরওানি পরে হাতে মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে……..
আহান চারুর কাছে গিয়ে ওকে স্টেজ থেকে নামিয়ে এনে চারুর সামনে হাটু গেড়ে বসে আহান আবারও গান গাইতে লাগলো —
Jab dil darakta hai….
Meh soosh ai hota hai…
Tum dil me kahin chupke
Baithe ho mere Janam..
har sash me samil hai teri sash ki khusbu
Jata nehi yadoon se tere pyar ka mausam
Janam..janam…janam..ooo mere janam..
গানটি গাওয়া শেষ হলে আহান চারুর হাতে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে উঠে পরে ফ্লোর থেকে….
আর আহানের গান গাওয়া শুনে বিয়েতে উপস্থিত থাকা সকলেই জোড়ে জোড়ে তালি বাজাতে থাকে….
এরপর সকল নিয়মনীতি অনুযায়ী ওদের বিয়ের কাজটা সপন্ন হয়ে পরে………..
বাড়িতে এসে পৌছালে চারু আর আহান দুইজন এক সাথে মিসেস সাবিনা আর মিরাজ সাহেবকে সালাম করে বাসার মধ্যে প্রবেশ করে…….
বাসর ঘরে চারু প্রবেশ করে হা করে তাকিয়ে থাকে কারন পুরো রুমটা গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো আর আহানের রুমের দেয়ালে চারু আর আহানের গায় হলুদ এর সেই ছবিটা বড় করে টাঙানো
চারু ছবিটির কাছে গিয়ে আহানের হলুদ মাখা ফেসটি দেখে নিজে নিজেই হেসে উঠে…..
হটাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলে চারু তাড়াতাড়ি করে বিছানায় গিয়ে গুমটা মাথায় দিয়ে চুপ করে বসে থাকে……
আহান রুমের মধ্যে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলে ভয়ে চারুর হাত পাঁ কাঁপতে থাকে
আহান বিছানায় চারুর কাছে এসে ওর গোমটা খুলতে নিলে চারু ভয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানায় থেকে উঠে গিয়ে দৌড় দিয়ে বেলকনি চলে যায়….

চারু বেলকনি গিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকলে
আহান পিছন থেকে এসে চারুকে জড়িয়ে ধরে..
আহানঃ কি হলো আমার চড়ই পাখিটা এইভাবে চলে আসলো কেন সেই খান থেকে????
চারু ঃ আ আসলে….
আহান চারুর কথা শুনে পিছন থেকে চারুর চুল সরিয়ে দিয়ে চারুর গাড়ে নিজের ঠোঁট এর স্পর্শ ছুয়াতে লাগলে চারুর লজ্জায় হাত পা কাঁপতে থাকে…
আহান চারুকে কোলে তুলে নিয়ে চলে যায় রুমের দিক এ….. বিছানায় চারুকে বসিয়ে…
নিজের আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে ধরিয়ে দেয় চারুর হাতে……….
চারুঃ এইটাতে কি????
আহানঃ এইটা দেনমোহর এর টাকা…….
চারু ঃ এই টাকা দিয়ে আমি কি করব আহান??(অবাক হয়ে)
আহানঃ এইটা তোমার হক চারু… তাছাড়া দেনমোহর না দেওয়া পর্যন্ত স্বামী অধিকার নিয়ে তোমার কাছে আসতে পারব না….
চারুর আহানের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে……
আহান চারুর কাছে এসে ওর পরানো গয়নাগুলো নিজ হাতে খুলতে থাকে…..
আহানের স্পর্শ পেয়ে চারু যেন কেঁপে উঠছে বার বার…
আহান চারুকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে চারুর উপর শুয়ে চারুর চোখ গালে ঠোঁট এ অজ্রস চুমু খেতে থাকে….…
চারু সরে যেতে নিলে আহান আরও শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় চারুকে……….

দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে যায় আর চারু আহানের সার্পোট এ নিজেকে একজন ফেমাস গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নেয়……
সকালে………
চারু ঘুম থেকে উঠতে নিলে আহান চারুর হাত হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশে নেয়….
চারু ঃ অই কি করছেন কি ছাড়ুন আমায়….
আহানঃ আরেকটু ঘুমাতে দাও তো আর তুমিও আমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে থাকো….
চারু ঃ অই তাড়াতাড়ি করে আমাকে ছেড়ে হসপিটালে যান… কয়েক দিন হলো হসপিটালে যাচ্ছেন না…
আহান চারুর কথা শুনে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে চারুর পেট এ সামনে নিজের মুখটা এনে
আহানঃ আচ্ছা বাবু বলতো আমি হসপিটালে যাব নাকি যাব না???
কথাটি বলে আহান চারুর পেট এ নিজের কান রেখে-
আহানঃ বাবু বলছে হসপিটালে না গিয়ে ওর আম্মুর আর ওর পাশে থাকতে…….
চারু আহানের কথা শুনে আহানের দিক চোখ রাঙিয়ে তাকালে-
আহানঃ আরও কি বলছে জানো….বলছে মাম্মা প্লিজ পাপা আর আমাকে একটা গান শুনাও।।।।
চারু ঃ হ আমাকে বলদ পেয়েছেন??পেটে ভিতর এ থেকে বাচ্চা কিভাবে কথা বলতে পারে….
ভালোয় ভালো হসপিটালে যান বলছি…..
আহানঃ মোটেও না…… আমি তোমার ডেলিভারি হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমাকে একা ছাড়ছিনা?
চারু ঃ ডেলিভারি হওয়ার আগ পর্যন্ত মানে??
আহানঃ মানে ডেলিভারির সময় ও আমি তোমার পাশেই থাকব…..
চারুঃ আপনাকে ঢুকতে দিবে নাকি??
আহানঃ হা হা তুমি ভুলে গেছ আমি যে ডাক্তার??
চারু আহানের কথা শুনে রেগে মেগে আহান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠতে নিবে…..
আহানঃ কোথায় যাচ্ছে আমার চড়ই পাখি???
চারু ঃ ওয়াসরুমে যাচ্ছে।।। এখন ওয়াসরুমেও কি আসবেন নাকি??
আহানঃ তুমি কিছু না মনে করলে আমি আসতে রাজি(শয়তানি হাসি দিয়ে)
চারু আহানের কথা শুনে একটা ভেংচি কেটে চলে যায় ওয়াসরুমের ভিতর এ………
ডায়নিং টেবিলে বসে সবাই ব্রেকফাস্ট করলে আহান নিজের হাতে চারুকে খাইয়ে দিতে থাকে…
চারু ঃ আর খেতে পারব না আমি…আমার পেট ফুল হয়ে গিয়েছে…
আহানঃ বললেই হলো আমার বাচ্চা টার এখনো পেট ভরে নি.. তাই ঢং না করে চুপ চাপ খাও…
চারু ঃ প্লিজ মা আহানকে একটু বুঝান না…সত্যি আমার অনেক খারাপ লাগছে আর খেতে ইচ্ছে করছেনা…..
আহানঃ হয়েছে তোমার নিত্য দিনের কাহিনি এইটা…
চুপ করে জুস টা খেয়ে নাও…
আহান চারুকে জোড় করে খাওয়াতে নিলে চারু পেট এ হাত রেখে ব্যথায় ছটফট করতে থাকলে……
আহানঃ না খাওয়ার জন্য এমন করছো তাইনা…
চারুঃ আহান সত্যি আমার অনেক বেশি খারাপ লাগছে……
দিশাঃ চারু তুমি আবারও শয়তানি করছো তাইনা?
আহানঃ ভাবি আমার মনে হয়না চারু এখন না খাওয়ার জন্য এমন করছে…
দিশাঃ কিন্তু ভাইয়া চারু তো আট মাস চলছে…
আহান কিছু না ভেবেই তাড়াতাড়ি করে কাউকে কল দিয়ে বসলো…
আহানঃ হ্যালো ডাক্তার মৌ..আমার মনে হয় চারুর পেইন শুরু হয়ে গেছে তাই আপনি তাড়াতাড়ি সব রেডি করে রাখুন আমি আসছি ওকে নিয়ে।
মৌঃ কিন্তু এত যলদি??? ডাক্তার আহান আমি বলেছিলাম আপনাকে আর আপনার বউ কে কমপ্লিকেশন এর কথা… আর এই টাও বলেছিলাম যে চারুর জানের ক্ষতি হতে পারে….কিন্তু আপনার বউ তো শুনলোই না আমার কথা….
আহানঃ দেখুন এইসব আজে বাজে কথা বার্তা না বলে সব কিছু রেডি করুন আমরা আসছি…….
চারু আহানকে কোলে তুলতে নিলে-
চারুঃ দিশা ভাবি হয়ত আমি আর ফিরে আসব না এই বাড়িতে কিন্তু আমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাচ্চা টাকে তুমি তোমার বাচ্চার মত মানুষ করো….
আহানঃ কি সব যাতা বলছো তুমি?? আমি তোমার সাথে আছি না এতো ভয় পাওয়ার কি আছে…
আমি কিছুই হতে দিব না….
আহান তাড়াতাড়ি করে গাড়ি বের করে চারুকে নিয়ে যায় হসপিিটালে…..
অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হলে চারু ব্যথায় জোরে জোরে কান্না করতে থাকে……
চারুর কান্না দেখে আহান চারুর হাত শক্ত করে ধরলে-
চারু ঃ আহান অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার…
আমি হয়ত…..
চারু কথা শেষ করার আগেই আহান চারুর মুখে আঙুল দিয়ে-
আহানঃ চুপ বললাম না কিছুই হবেনা..
চারু আহানের হাত শক্ত করে ধরে ব্যথায় আরও জোরে জোরে চিৎকার দিতে থাকে…..
হটাৎ নবজাত শিশুর কান্না রুমে মধ্যে ভেসে উঠে —
ডাক্তার ঃ congratulations ডাক্তার আহান আপনার ফুটফুটে একটি ছেলে হয়েছে…
আহান ডাক্তার হাত থেকে নিজের ছেলেকে হাতে নিয়ে খুশিতে কান্না করে দেয়…..
আহানঃ থ্যাংকস ডাক্তার..
ডাক্তার ঃ আমাকে থ্যাংকস দেওয়া উচিত আপনাকে..
আপনি আপনার ওয়াইফের পাশে থেকে যদি তাকে সাহস না জোগাতেন তাহলে হয়ত আপনার ওয়াইফ কে হেন ডেল করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না…
ডাক্তার এর কথা শুনে আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর বাচ্চাকে নিজের কাছে নিয়ে আলতো করে একটা চুমু খায়…
আহানঃ দেখো চারু তুমি অকারনেই ভয় পাচ্ছিলে আল্লাহর রহমতে তুমি আর আমাদের ছেলে পুরো পুরি সুস্থ আছে
ডাক্তার অপারেশন রুম থেকে থেকে বের হয়ে গেলে-
মিরাজঃ ডাক্তার??
ডাক্তার ঃ congestulation আল্লাহ রহমতে আপনার ছেলের বউ এর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে
ডাক্তার এর কথা শুনে দিশা আবির সাবিনা আর মিরাজ সবাই খুশি হয়ে পরে..
দিশাঃ ডাক্তার চারু কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো??
ডাক্তার ঃ হ্যা সেও ঠিক আছে।।।ডাক্তার আহান তার সাথে আছে আপনারা টেনশন নিয়েন না……
তাকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হলে আপনারা দেখা করতে পারবেন তার সাথে……
কিছুক্ষন পর চারুকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হলে…
ডাক্তার ঃ আপনারা এখন দেখা করতে পারবেন….
ডাক্তারের পারমিশন পেলে সবাই তাড়াতাড়ি করে চারুর রুমে প্রবেশ করে দেখে দোলনায় ছোট একটি বাচ্চা তার ছোট ছোট হাত পা নাড়াচাড়া করছে…
বাচ্চাটিকে দেখে সবার চোখ এ পানি চলে আসে…
মিরাজ সাহেব তাড়াতাড়ি করে দোলনা থেকে বাচ্চাটিকে নিজের কোলে তুলে নেয়….
মিরাজ ঃ দেখো সাবিনা পুরাই আহানের কার্বন কপি..
সাবিনা মিরাজ সাহেব এর কোল থেকে বাচ্চাটিকে নিয়ে চুমু দিতে থাকে বাচ্চাটির কপালে
…পুরাই আমার আহান…….
দিশাঃ আমিও নিব কোলে…
সাবিনাঃ আচ্ছা নে….
মিসেস সাবিনা বাচ্চাটিকে দিশার কোলে দিলে-
দিশাঃ ওরেেে কতো কিউট হয়েছে………….
বলতে হবে চারু তুমি অনেক লাকি ডেলিভারির সময় ও নিজের হাসবেন্ডকে পাশে পেয়েছো….
ইসস আমার হাসবেন্ড যদি ডাক্তার হতো…….
আবিরঃ টেনশন নিয়ো না দিশা তোমার বেবি হতে আরও পাঁচ মাস বাকি.. এই পাঁচ মাস এ আমি ডাক্তারি পড়া পরে ডাক্তার হয়ে তোমার ডেলিভারির সময় পাশে থাকব….
দিশাঃ আপনার জোকস টা শুনে আমার মোটেও হাসি আসেনি…হু…
আহানঃ ইসস ভাবি আমার বাচ্চা আমার কোলে দাও তো।।।তোমাদের দেখা দেখি আমার বাচ্চা টাও জগড়া শিখে যাবে……
আহান দিশা হাত থেকে বাচ্চাটিকে নিয়ে চারুর পাশে গিয়ে বসে…
আহানঃ থ্যাংকস চারু জীবন এর সব চেয়ে মূল্যবান জিনিস আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য……
আজ বাবা হয়ে অন্য একটা অনুভূতি কাজ করছে….
দিশাঃ তো ভাইয়া বাচ্চাটার নাম কি রাখবেন???
আহান কিছু বলতে নিবে চারু আহানের কথা মাঝ খানে বলে উঠলো….
চারু ঃ অই আমি রাখবো….
আহানঃ আচ্ছা তুমি বলো আমাদের বাচ্চার নাম কি হবে.???
চারু ঃ আপ্রান।।।।।।
দিশাঃ ওয়াও ওয়াট এ নাইস নেম…..
আহান চারু কথা শুনে চারুর কপালে একটা চুমু খেয়ে চারুকে আর বাচ্চাটাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।।।।।।
।।।।।।।।।।।।। সমাপ্ত।।।।।।।।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here