চন্দ্রকুঠি পর্ব-৫

0
2372

#চন্দ্রকুঠি
পর্ব (৫)
#নুশরাত জাহান মিষ্টি

গাড়ি এসে থামলো কদমতলী ডোকার রাস্তায়। গাড়ি থেকে নেমে রিয়াদ বললো, ” এখান থেকে পায়ে হেঁটে গ্রামে ডুকতে হবে। আর হ্যা খুব সাবধানে। আমরা শুধুমাত্র গ্রামটি দেখতে এসেছি। মনে থাকবে?”
” হুম মনে থাকবে।”
” গ্রামের ভিতর ডোকার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দেন তো?”
” হ্যা বলুন।”
” আপনারা রাফির বাড়ি খোঁজ নেন নি?”
” আমরা রাফির নাম ছাড়া কিছুই জানতাম না। আর শহরে একটি ফ্লাটে থাকতো সেটা জানতাম। সেখানে গিয়েছিলাম কোন লাভ হয়নি।”
” আপনারা তার কর্মস্থল থেকে খোঁজ নেন নি?”
” কর্মস্থলে গিয়েছিলাম। তাদের মতে রাফি যে নিখোঁজ সেটা তাদের কেউ জানায় নি। যতক্ষন না তারা নিশ্চিত হবে রাফি নিখোঁজ ততক্ষনে তেমন কিছু করতে পারবে না। তবে ব্যবস্থা নিবে বললো। আমরা ঠিকানা চাওয়ায় রহিমা দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আজিজ নামে একজন দিলো না। সে বললো এভাবে যাকে তাকে জেলারের ঠিকানা দেওয়া যায় না। আমরা অনুরোধ করেছিলাম খুব কিন্তু মনে হলো আজিজ ইচ্ছে করে দিতে চাইছে না।”
” ওহ। আপনার জন্য একটি চমক খবর আছে।”
” মানে কিসের চমক?”
” রাফির বাসা কদমতলী।”
” কি?”
মুন সত্যি সত্যি অনেকটা চমকে গেলো। চমকানোর রেশ কাটিয়ে মুন বললো, ” আপনি কি করে জানলেন? কারাগারে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন নাকি?”
” না। সত্যি বলতে আমি এই গ্রামে আগেও একবার এসেছিলাম। তখন রাফির সাথে দেখা হয়েছিলো। আমি যদি ভুল না হই তবে রাফি এখানকার তালুকদার বাড়ির ছেলে।”
” আপনি আগেও এসেছিলেন? কিন্তু কেন?”
” এমনি ঘুরতে এসেছিলাম।”
রিয়াদ মুখে ঘুরতে এসেছে বললেও মুন কথাটা বিশ্বাস করলো না। মুনের কেন জানি না এখন রিয়াদকে সন্দেহ হচ্ছে। রিয়াদের সাথে একা আসাটা ঠিক হলো কিনা তাই ভাবছে। মুনকে ভাবনায় দেখে রিয়াদ বললো, ” কি হলো কি ভাবছেন?”
” কিছু না। চলুন গ্রামে যাওয়া যাক।”
” হুম চলুন।”

রিয়াদ এবং মুন গ্রামে ডোকার রাস্তায় পা রাখলো। দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজমান। নিরবতা ভেঙে রিয়াদ বললো,” আপনার ভয় করছে না?”
” কেন?”
” এই যে একা একটি ছেলের সাথে এতদূর এসেছেন, যদি কিছু করে ফেলি?”
” নিজেকে রক্ষা করতে জানি আমি। আমাকে ছোট ভেবে ভুল করবেন না। আর হ্যাঁ যা হওয়ার হবে। আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তিত নই।”
” তাই।”
” হ্যাঁ।”
রিয়াদ আর কিছু বললো না। দুজনেই আবার চুপ করে গেলো। গ্রামের ভিতর প্রবেশ করলো মুন এবং রিয়াদ।

গ্রামের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো মুন। মানুষের বাড়িতে যেমন সদর দরজার রুপ লাবন্য নানাভাবে সাজানো থাকে, ঠিক সেরকম কদমতলী গ্রামে পা রাখার স্থানটি সাজানো। রাস্তার দু’পাশে দুটো কদম গাছ। কদম গাছের গা বেয়ে লতার মতো পেঁচিয়ে উঠেছে আর এক ফুল গাছ। গাছটির নাম জানা নেই মুনের। তবে খুব সুন্দর ভাবে দু’পাশ একত্র করে উপর থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গাছের পাতাগুলো। যেগুলোতে সাদা সাদা ছোট ছোট ফুল দেখা যাচ্ছে। গাছের মাধ্যমেই জানো কদমতলী গ্রামের প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয়েছে। হলুদ কদম, সাথে সাদা নাম না জানা ফুলগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এতটাই সুন্দর লাগছে দেখতে যে মুনের ইচ্ছে করছে হারিয়ে যেতে। আচ্ছা গ্রামের নাম কদমতলী তাই কি প্রবেশদ্বারটি এমনভাবে গড়া নাকি প্রবেশদ্বার এমনভাবে গড়া বলে গ্রামের নাম কদমতলী।মুন মুগ্ধতায় হারিয়ে গেলো। (আমার আজাইরা মাথার কিছু কল্পনা, গুছিয়ে তুলে ধরতে পারি নি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, সবাই কল্পনায় নিজেদের চাহিদামতো কিছু ভেবে নিয়েন।) রিয়াদ মুনের চোখে মুগ্ধতা দেখে কিছুক্ষন পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলো মুনের দিকে। তারপর নিরবতা ভেঙে বললো, ” ভিতরে চলুন মুগ্ধ হওয়ার আরো কারণ খুঁজে পাবেন।”
” মানে?”
” চলুন। গেলেই দেখতে পাবেন।”
মুন আর কথা বাড়ালো না। ভিতরে প্রবেশ করলো। রিয়াদ আর মুন পাশাপাশি হাঁটছিলো। মুন গ্রামের যত ভিতরে প্রবেশ করছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। ওরা যে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো, তার দু’পাশেই নানা ধরনের ফুলের গাছ। তার মাঝে কয়েকটি ফলের গাছও রয়েছে। মুন আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে বলেই ফেললো, ” এত সুন্দর গ্রাম আমি আগে কখনো দেখেনি।”
” দেখার চোখ সুন্দর হলে সবকিছুই সুন্দর দেখতে লাগে।”
” তারমানে আপনি বলতে চাইছেন আসলে গ্রামটি সুন্দর নয়?”
” তা নয়। হ্যাঁ সুন্দর। তারচেয়ে আপনি বেশি সুন্দর।” শেষে বিরবির করে
” কি?”
” কিছু না।”
” আচ্ছা এত সুন্দর গ্রামে আমরা কি সত্যি অস্বাভাবিক কিছু পাবো?”
” জানি না। পেতে হলে যে অনেক পরিশ্রম করতে হবে তা জানি। কেননা আগেরবার এসে খালি হাতে ফেরত গেছিলাম।”
” আগেরবার কি খুঁজতে এসেছিলেন?”
” তেমন কিছু না।”
” আচ্ছা যাই হোক, আগেরবার ‘চন্দ্রকুঠি’ গিয়েছিলেন?”
” না।”
” ওহ।”
” ভিতরে চলুন। আস্তে আস্তে সব জানা যাবে ।”
মুন আবার চুপ করে গেলো। মুগ্ধ নয়নে গ্রামের রাস্তা উপভোগ করছিলো।
_________

অন্যদিকে বারান্দায় বসে খোলা আকাশের নিচে তাকিয়ে আছে আরিফ সাহেব। তার চোখের পাতায় ভেসে উঠলো মেয়েদের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো। বিশেষ করে এই মূহুর্তে ভেসে উঠলো মাধুরির সেই কান্নাময় মুখ।
একদিন স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এসেছিলো মাধুরি। মাধুরির চোখে অশ্রু দেখে বুকটা ধুক করে উঠলো আরিফ সাহেবের। দৌড়ে মেয়ের কাছে গেলেন তিনি এবং বললেন, ” মামনি তুমি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে তোমার?”
মাধুরি কাঁদতে কাঁদতেই বললো, ” জানো বাবা সবাই আমার গায়ের রং নিয়ে কথা শোনায়। সবাই বলে আমি কালো, আমাকে কেউ পছন্দ করে না।”

আরিফ সাহেব বেশ চমকে গেলেন। তারপর খুব শান্তভাবে বললেন, ” এজন্য তুমি কাঁদছো?”
” হ্যাঁ। ওর আমাকে খুব বাজে কথা বলেছে।”
” ওরা পঁচা তাই পঁচা কথা বলেছে। ওদের কাজই এটা। তুমি কেন তাদের কথায় কষ্ট পাচ্ছো? তুমি জানো না ভালো মেয়েরা কখনো পঁচা বাচ্চাদের কথায় কাদে না।”
আরিফ সাহেব পরক্ষনেই মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর একটি আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালেন। খুব শান্তভাবে বললেন, ” দেখো কি দেখতে পাচ্ছো?”
” আমি বাবার কোলে আছি।”
” উহু। বাবার কোলে এক সিগ্ধ মায়ার বসবাস। যার সিগ্ধতায় আয়নাটি মুগ্ধ হয়ে তার প্রতিবিম্ব ফুটিয়ে তুলেছে।”
” মানে?”
” যারা তোমার গায়ের রং দেখেছে তারা মনের আয়নায় তোমাকে আঁকেনি। যদি আঁকতো তবে দেখতে পেতো শ্যাম বরণ গড়নে ফুটে ওঠা এক মায়াবী মুখের সিগ্ধ হাসির ঝলক। যার মায়াবী মুখে তাকিয়ে আমি হাজার বছর কাটিয়ে দিতে পারি।”
ছোট্ট মাধুরি বাবার সবকথা না বুঝলেও এটুকু বুঝেছে বাবার চোখে সে সবচেয়ে বেশি সুন্দরী। বাবার চোখে সুন্দরী মানে সে সুন্দরী আর কারো কথায় কিছু যায় আসে না তার। বাবা মাধুরির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ” আজ তুমি না বুঝলেও একদিন বুঝবে। সেদিন দেখবে কেউ না কেউ ঠিক আসবে তোমার মায়ার শহরে।”
তারপর মাধুরি আর বাবার হাসি-খুশিতে কেটে গেলো দিনটি। সেদিন পর মাধুরি তার গায়ের রং নিয়ে কখনো কিছু বলেনি। স্কুলের অনেকে বলতো সে আর মুন আসল বোন নয়। বোন হলে এদের গায়ের রং এত ভিন্নতা কেন! তখন মাধুরি শুধু একটা কথাই বলতো, ” মুন আমার বোন। পৃথিবী মিথ্যে হয়ে গেলেও এটাই সত্যি।”

কারো হাতের ছোঁয়ায় স্মৃতি থেকে বেরিয়ে এলেন আরিফ সাহেব। তাকিয়ে দেখলেন তার বন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। বন্ধু খুব চিন্তিতসুরে বললেন, ” তুই জানতি মুন কোন পথে পা বাড়াচ্ছে তবুও তাকে ছাড়াটা কি ঠিক হলো তোর?”
” জানি না। তবে এটুকু জানি মাধুরির দুর্ভোগের কারন মুন। এখন সময় এসেছে মুনের সবকিছু জানার।”
” তুই নিজের মেয়ের এত….”
কথা শেষ করতে না দিয়ে আরিফ সাহেব বললেন, ” মুন আর মাধু দুজনেই আমার মেয়ে। যদি মাধুর জীবনের অন্ধকার মুনের জন্য আসে তবে সেই অন্ধকারে মুনকেও নামতে হবে৷ হয় মুন মাধুকে নিয়ে ফিরবে নয়তো নিজেও হারিয়ে যাবে অন্ধকারে। আমি স্বার্থপরের মতো শুধু মুনকে নিয়ে ভাবতে পারবো না। মুন আমার জীবনে যতটা যায়গা জুড়ে আছে মাধুও ঠিক ততটা যায়গা জুড়ে আছে।”
” তোর মতো করে সবাই ভাবতে পারে না আরিফ। তবে মুন কি পারবে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে?”
” পারবে। মাধু শান্তশিষ্ট, কৌতূহলহীন ওকে বোকা বানানো সহজ কিন্তু মুনকে নয়। তাছাড়া মুন জানে সে তার লক্ষে পৌঁছালে মাধুরিকে ফিরে পাবে।”
” আমি আসা রাখছি দুজনেই ফিরে আসুক।”
” হুম।”

আরিফ সাহেব বলে তো দিলেন মুন পারবে। কিন্তু সত্যি কি পারবে! দ্বিধায় তো আরিফ সাহেব ও আছেন।

_______
রাস্তা পেরিয়ে লোকালয়ে পৌছে মুন আরো অবাক হয়ে গেলো। একটু পর পর এক একটি বাড়ি। এদের মাঝে ‘চন্দ্রকুঠি’ কোনটি সেটিও তো বুঝতে পারছে না। রিয়াদ মুনের ভাব ভঙ্গি বুঝতে পেরে বললো, ” এগুলো নয়। চন্দ্রকুঠি সামনে।”
মুন কিছু বলতে যাবে এমন সময় কে জানো বলে উঠলো, ” কারা তোমরা?”
মুন এবং রিয়াদ পিছনে ঘুরে তাকালো। দেখতে পেলো একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি রিয়াদের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকই ছিলো কিন্তু যেই মুনের দিকে তাকালো তখনি চমকে উঠলো। হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো লোকটির৷ মুন এবং রিয়াদ লোকটির অবস্থা দেখে বলে উঠলো, ” কি হয়েছে আপনার?”
লোকটি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো, ” চ চ চন্দ্র….”

চলবে,
[ কি গো মুনরা আজ কি বানানে ভুল কমেছে নাকি আরো আছে। সবাই ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন। সবকিছু আমার কল্পনা মনুরা। কল্পনা ভালোভাবে বর্ননা করতে পারলাম না। গুছিয়ে সাজাতে পারি নি তার জন্য দুঃখিত। সবাই নেক্সট গানটা একটু কম করেন। নেক্সট কিন্তু দিমু না খালি নেক্সট কইলে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here