চন্দ্রকুঠি পর্ব-১০

0
2511

#চন্দ্রকুঠি
পর্ব (১০)
#নুশরাত জাহান মিষ্টি

সকালে,,
রিয়াদ টাকা নিয়ে রাতুলের রুমে গেলো। রিয়াদকে দেখে রাতুল বসতে বললো।
রিয়াদ বললো, ” ভাই টাকা….”
রিয়াদের কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে রাতুল তার বউয়ের উদ্দেশ্য বললো, ” নিচে গিয়ে মাকে কাজে সাহায্য করো।”
রুপা(রাতুলের বউ) বললো, ” কিন্তু আপনি তো….”
” কথা কানে যায়নি।”
রুপা চুপচাপ চলে গেলো। রুপার চলে যাওয়ার দিকে এক পলক তাকালো রিয়াদ।
” টাকা এনেছো?”
” হ্যাঁ।”
” দেও।”
রিয়াদ রাতুলকে টাকাটা দিলো। রাতুল টাকাটা নিয়ে আলমারি থেকে একটা সবুজ কার্ড বের করে রিয়াদকে দিলো। তারপর বললো, ” খুব সাবধানে এই কার্ডটি দেখাবে। তারপর বাকি কাজ চন্দ্রকুঠির লোকেরাই করে দিবে।”
” আচ্ছা।”
” হুম।”
রিয়াদ কার্ডটি নিয়ে চলে গেলো। কার্ডটি পেয়ে গেছে এটা ভেবে মনেমনে খুব খুশি হলো। যাক অন্তত ‘চন্দ্রকুঠির’ ভিতরে কি হয় সেটা তো জানা গেলো। কিন্তু প্রশ্ন হলো চন্দ্রকুঠিতে এসব কিভাবে শুরু হলো আর তালুকদার বাড়ির লোকেরা এরসাথে যুক্তই বা কিভাবে হলো? প্রশ্ন অনেক উত্তর নেই।

অন্যদিকে মুন রাফিকে নিয়ে গ্রামটি ঘুরে দেখতে বের হলো। রাফি আর মুন পাশাপাশি হাঁটছে। দু’জনেই নিরব। নিরবতা ভেঙে রাফিই বললো,” কাল মাধুরির বিপদ নিয়ে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে?”
মুন খুব স্বাভাবিকভাবে বললো, ” যে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনে তার সম্পর্কে কি আর বলবো?”
” মানে?”
” এই যে আপু তোমার মতো একজনকে ছেড়ে অন্যকারো সাথে পালিয়ে গিয়েছে। এটাই তো ওর জন্য বিপদ। আজ না বুঝলেও একদিন বুঝবে।”
” ওহ। এটাই বলতে চাইছিলে কাল?”
” হ্যাঁ।”
” যাই হোক এসব কথা বাদ দেও। এসব নিয়ে যত ভাববো ততই কষ্ট বাড়বে বই কমবে না।”
” হুম। তা চাকরিতে যোগ দিবে কবে?”
” এই তো দুই একদিনের মধ্যে।”
” ওহ৷ আচ্ছা আমি শুনেছি তোমার বাবাও নাকি জেলার ছিলো?”
” হুম। এখানকারই।”
” ওহ। তার চাকরিটাই তুমি পেয়েছো নাকি?”
রাফি কিছুটা চমকালো তারপর বললো, ” মানে? এরকম হয় নাকি।”
” হয় না বলছো। তাহলে এত ছোট বয়সেই তুমি এক ধাপে জেলার হয়ে গেলে?”
” না৷ তেমন নয়। এটা পেতে অবশ্যই আমাকে পরিশ্রম করতে হয়েছে, যোগ্যতার প্রমান দিতে হয়েছে। তারপর না পেলাম।”
” হুম বুঝলাম।”
হঠাৎ করে এমন সময় কোথা থেকে জেনো রিয়াদ এসে পড়লো।
” আমাকে ছাড়াই ঘুরছো তোমরা?”

রাফি রিয়াদকে দেখে বললো, ” তোমাকে ছাড়া আর ঘুরতে দিলে কোথায়?”
” তাও অবশ্য ঠিক। চলে এলাম।”
” যাই হোক তোমরা এদিকটা ঘুরে দেখো আমি পাশের দোকান থেকে কিছু নিয়ে আসছি।”
” আচ্ছা।”
রাফি চলে গেলো। রিয়াদ মুনের উদ্দেশ্য বললো, ” আমরা এখানে কেন এসেছি সেটা বোধহয় তুমি ভুলে গিয়েছো?”
” তুমি?” ভ্রু কুচকে
পরক্ষনেই বললো, ” দেখুন আমি সেসব ভুলি নি। তবে ভুলতে চাই।”
” মানে?”
” আমার মনে হচ্ছে আমরা মরিচিকার পিছনে ছুটে চলেছি। আমি আর এসবের পিছনে ছুটতে চাইছি না।”
” কি? তোমার ঠিক কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছো কেন?”
” কিভাবে কথা বলছি?”
” তুমি বুঝতে পারছো না তুমি কি বলছো? কালকেও তো সব ঠিকই ছিলো তাহলে হঠাৎ সুর বদলাচ্ছো কেন?”
” দেখুন কালকে ভিডিও দেখে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আপু নিজ ইচ্ছায় কারো সাথে চলে গেছে। তাই আমি আর আপুকে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছি না।”
” তো কি নিয়ে ভাবতে চাচ্ছো?”
” রাফিকে নিয়ে।”
” কি?”
রিয়াদ বেশ চমকালো। রিয়াদ এটাই বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে মুনের হলো কি! ওদের প্লান অনুযায়ী ওরা তালুকদার বাড়ি ডুকলো তারপর হঠাৎ কি হলো যে মুন এরকম করছে!
” রাফিকে নিয়ে মানে?”
” আমার রাফিকে খুব ভালো লাগে। আমি রাফির জীবনে আপু শূন্যতা পূরণ করতে চাই।”
” মানে? রাফি ভাইয়া থেকে সোজা রাফি, তারপর এসব কি বলছো?”
” যা শুনছেন তাই বলছি। রাফিকে আমার চাই।”
” রাফিকে চাইলেই বুঝি রাফি তোমাকে চাইবে?”
” জানি চাইবে না। কারন রাফি আপুকে ভালোবাসে কিন্তু সমস্যা কি আমি অপেক্ষা করবো। রাফির আপুকে ভুলে যাওয়ার অপেক্ষা।”
” আমার মনে হচ্ছে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।”
রিয়াদ বেশ রেগে কথাটি বললো। মুন রিয়াদের রাগকে পাত্তা না দিয়ে বললো, ” বেশ তো। তুমি বলতে অনুমতি নেন না, আপনি বলতেও না।”
রিয়াদ রেগে কিছু বলতে যাবে তখনি রাফি চলে এলো। রাফি এসে বললো, ” কি হলো তোমাদের মুখগুলো এরকম করে আছো কেন?”
” না কিছু না। আমি বাসায় যাচ্ছি তোমরা থাকো।”
কথাটি বলে রিয়াদ বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলো। পিছু পিছু মুন ও রাফিও আসছিলো। রাফি রিয়াদের ব্যপারটা বুঝতে পারলো না। ঐদিকে রিয়াদ মুনের ব্যপার বুঝতে পারছে না। এক রাতের মাঝে এতটা বদল কিভাবে সম্ভব! কি হচ্ছে এসব!

_________

সন্ধ্যার দিকে রিয়াদ ‘চন্দ্রকুঠির’ উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলো। এমন সময় লক্ষ্য করলো মুন এবং রাফি পুকুরপাড়ে বসে গল্প করছে। মুন বারবার কথার তালে তালে রাফির হাত ধরছিলো। রাফি কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করছিলো। তবুও মুনকে কিছু বললো না। রিয়াদ মুনের এই অস্বাভাবিক আচরণ দেখে মুচকি হাঁসি দিয়ে ওখান থেকে চলে এলো।
চন্দ্রকুঠির ভিতরে ডুকলো রিয়াদ। রিয়াদের হাতে সবুজ কার্ড দেখে একটি লোক এসে ওকে দর্শক সারি থেকে আলাদা একটি সারিতে বসালো। সেদিনের সেই যায়গাটিতেই বসানো হয়েছে। তবে আজকে সাজসজ্জা ভিন্ন। আজকে যায়গাটি দর্শকদের থেকে আড়াল করার জন্য পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্দার এপাশে মানুষ বসে আছে এটা কেউ বুঝতে পারবে না। রিয়াদ বসা অবস্থায় আশপাশ ভালোভাবে তাকালো। তার পাশে দুই তিনজন বসা। কিছুক্ষনের মাঝে দুই তিনজন থেকে সেটা দশ বারোজন হয়ে গেলো।
কিছুক্ষন বাদে একজন এসে খুব সাবধানে বললো তাদের কি করতে হবে। একজন চলে যাওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট পড় অন্যজন চলে যাবে।

রিয়াদের আগে দুজন সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। এরপর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে রিয়াদ উপরে উঠলো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই দুজন ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। একজন সবুজ কার্ডটি দেখাতে বললো, অন্যজন ওর বডি চেক করছিলো। সব কিছু মেটার পর একজন তার সাথে যেতে বললো। রিয়াদ লোকটির পিছু পিছু গেলো। লোকটি একটি রুমে নিয়ে গেলো তাকে। রুমে ডুকে রিয়াদ দেখলো সেখানে বেশ কিছু মেয়ে বসা। মেয়েদের মাঝে যিনি প্রধান তিনি বললেন, ” দেখ কাকে পছন্দ?”
রিয়াদ মেয়েগুলোকে ভালোভাবে দেখলো। এদের মাঝে রিয়াদ যাকে খুঁজছে সে নেই। এদের দেখেই বোঝা যায় এরা এই কাজে বেশ চালু। এদের মাঝে কোন দ্বিধাবোধ নেই। অর্থাৎ এরা এখানে বেশ পুরনো মানুষ। নতুন হলে নিশ্চয়ই কিছুটা সংকোচ চোখে ফুটে উঠতো। রিয়াদ একটু ভয়ে ভয়ে বললো, ” ২১-২২ বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে না?”
এখানে সবার বয়স আনুমানিক ত্রিশ থেকে বত্রিশের মধ্যে। সেই অনুমানে মাধুরির বয়স আন্দাজ করে কথাটি বললো রিয়াদ। মহিলাটি একটু ভেবে বললো, ” পকেটে মাল-কড়ি আছে?”
” আছে অল্প কিছু। কিন্তু আমি তো টাকা দিয়েই এখানে আসলাম?”
” সেটাতো বেড অব্দি মেয়ে নেওয়ার জন্য৷ এবার তো দিবি ডিমান্ড অনুযায়ী মেয়ে পাওয়ার জন্য।”
” কত দিতে হবে?”
” দে দশ।”
” আচ্ছা দেখছি আছে কিনা।”
রিয়াদ পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করে দিলো। আগেই ভেবেছিলো এখানে আসলে আরো টাকার প্রয়োজন হতে পারে। তাই টাকা নিয়েই আসছিলো।
” ওকে মেয়েটার রুমে দিয়ে আয়।”
মহিলাটি একজনকে নির্দেশ দিলো। তারপর রিয়াদকে তার সাথে যেতে বললো। রিয়াদ তার পিছু পিছু যাচ্ছিলো আর মনেমনে বলছিলো, ” আমার ভাবনা মতো হবে তো সবকিছু। এরা আদো মাধুরির কাছে নিয়ে যাচ্ছে তো? যদি অন্যকারো কাছে নিয়ে যায় তো? তাহলে কি হবে?”
কিছুটা ভয় নিয়েই রিয়াদ এগিয়ে যাচ্ছিলো। রিয়াদকে একটি রুমের সামনে এনে লোকটি দাঁড়িয়ে গেলো। বললো,”ভিতরে যান। যদি কোনভাবে বাঁধা দেয় তবে আমাদের ডাকবেন নয়তো থাপ্পড় মেরে বসিয়ে দিবেন। একদম ঠিক হয়ে যাবে।”
কথাটি বলে রিয়াদের ভিতরে যাওয়ার অপেক্ষা করলো লোকটি। রিয়াদ ভিতরে না গেলে এ যাবে না বুঝতে পেরে রিয়াদ ভিতরে গেলো। রিয়াদ ভিতরে গিয়ে দরজাটি বন্ধ করে বিছানার দিকে তাকালো। একটি মেয়ে বেশ জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। মেয়েটির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলো না রিয়াদ। কারন মেয়েটি ঘুরে বসে ছিলো। তাই সাইড দেখা যাচ্ছিলো। সাইড দেখে রিয়াদ যতটা আন্দাজ করলে এটা মাধুরিই হতে পারে। কোনকিছু না ভেবেই রিয়াদ বললো, ” মাধুরি।”
মাধুরি ডাকটার সাথে সাথে মেয়েটি রিয়াদের দিকে তাকালো।

অন্যদিকে মুন তালুকদার বাড়িটি ভালোভাবে ঘুরে দেখছিলো। এমন সময় রুপা মুনকে ডাকলো। মুন রুপার সাথে তার রুমে গেলো। রুপা মুনকে বসতে বললো তার পাশে। মুন বসার পর রুপা বললো, ” রাফিকে ভালো লাগে তোমার?”
” হঠাৎ এ প্রশ্ন।”
” না মনে হলো আর কি?”
” ভালো লাগলে কি খুব ভুল হবে।”
” না ভুল হবে না। রাফি ভালো ছেলে। কিন্তু এই পরিবারটা কেমন জানি?”
” কেমন?”
” জানি না। অদ্ভুত।”
” কিছু মনে না করলে জানতে পারি আপনাদের বিয়ে হয়েছে ঠিক কতদিন?”
” সাত বছর।”
” এতদিনে অদ্ভুত মনে হওয়ার মতো কি ঘটেছে আপনার সাথে?”
” কিছুই না। বিয়ের দুই বছর ভালোই কাটছিলো আমাদের। তারপর ছেলে হওয়ার পর জীবনটা কেমন জানি হয়ে গেছে।”
” কেমন?”
” তোমাকে সব বলতে পারবো না। শুধু একটু বলছি রাফির পরিবার সম্পর্কে জেনেই ভালোলাগাটাকে এগিয়ো।”
” আচ্ছা।”
মুন আরো কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু তাকে বলতে না রুপা বললো, ” চলো তোমাকে বাড়ির ছাদটা দেখিয়ে নিয়ে আসি।”
” আচ্ছা।”
এরপর মুন এবং রুপা বাড়ির ছাঁদে গেলো।
________

পরেরদিন সকালে,
রিয়াদকে যে ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই ঘরটি ধাক্কা দিচ্ছিলো একজন লোক। বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেওয়ার পরও কেউ দরজা খুলছে না দেখে প্রধান মহিলাকে ডেকে আনলো। মহিলাটি দরজা ভাঙার নির্দেশ দিলেন। দরজা ভাঙার নির্দেশ পেয়ে দু’জন দরজাটি ভেঙে ফেললো। ভিতরে ডুকে সবাই অবাক। ঘরের সমস্ত জিনিস ছড়ানো ছেটানো। ফুলদানি ভেঙে কয়েকশো টুকরো হয়েছে আর বিছানার উপর রিয়াদ অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। রিয়াদের মাথা রক্ত আর জানালার কাঁচ ভাঙা দেখে মহিলাটি সব বুঝে গেলো। তিনি রিয়াদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বললো এবং ঘর পরিষ্কার করতে বলে চলে গেলেন।

বেশ কিছুক্ষন পর রিয়াদের জ্ঞান ফিরলো। রিয়াদের জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে মহিলাটিকে ডাকা হলো। মহিলাটি রিয়াদকে জিজ্ঞেস করলেন,” রাতে কি হয়েছিলো?”
” জানি না। রুমে ডোকার পর মাথায় একটা আঘাত অনুভব করলাম, তারপর আর কিছু মনে নেই।”
” আচ্ছা।”

কিছুক্ষন পর রাতুল এসে রিয়াদকে তালুকদার বাড়ি নিয়ে এলো। রাতুল রিয়াদের কাছে ক্ষমা চাইলো এবং বললো আজকে রাতে ওখানে কাটাতে চাইলে কাটাতে পারে। রিয়াদ বললো পরে জানাবে।

চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here