#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_৩৩
#মিদহাদ_আহমদ
চোখ আমার সেখানে আটকে গেলো৷ বাসায় আসতেই তামান্না শাশুড়ির সাথে এই সেই নিয়ে কথা বলতে লাগলো। শাশুড়িও শুনে অবাক যে তামান্নার হবু ননাস যে আঠারো ক্যারেটের হারটা দিয়েছেন, সেটা ওই পাঁচ ভরির মধ্যেই। আমরা সবাই ভেবেছিলাম ওগুলো ননাস হিসাবে ছোট ভাইর বউকে দিচ্ছেন উনি।
দুইবোন আর মা মিলে কথাবার্তা বলছিলো। আমি রুমে চলে এলাম। কিছুতেই মিলাতে পারছিলাম না নিজের মনের সাথে। সেই ছেলেটা নিশ্চিত আসিফ। একদম তার মতো দেখতে! আমার চোখের দেখায় এতবড় ভুল হতে পারে না৷ আসিফের নাম্বারে কল দিলাম। আসিফ কল উঠালো না। আবার কল দিলাম। ধরেই কিছুটা শক্ত গলায় বললো,
‘কাজে আছি আমি। আমাকে বিরক্ত করো না এখন ‘
বলেই সে কল রেখে দিলো। একবারও প্রয়োজন মনে করলো না আমাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার! শাশুড়ি মা রুমে আসলেন। আমার আর নিজেকে সামলে রাখার শক্তি রইলো না। ওনাকে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলাম। শাশুড়ি মা জিজ্ঞেসা করলেন আমি কান্না করছি কেন। বললাম আসিফের কথা৷ সে কোন ভাবেই যেনো আগের মতো না আর। কাল রাতের কাশির সাথে রক্ত যাওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে গেলাম। এইটাও এড়িয়ে গেলাম যে আমার ধারণা আসিফ আবার নেশা করছে আগের মতো। শাশুড়ি মা আমাকে অভয় দিয়ে বললেন,
‘ছেলেটা সংসারি হচ্ছে নুপুর। যখন তোমরা বাইরে গিয়েছিলা জুয়েলার্সে, তখন সে বাসায় এসেছে। খাসির মাংস দুই কেজি দিয়ে গেছে৷ রাতে কোরমা করবো বলেছে। ছেলের আমার কোরমা পছন্দ।’
আমি অনেকদিন ধরে মনে পোষণ করে রাখা প্রশ্নটা এবার শাশুড়ি মা কে করেই বসলাম। বললাম,
‘মা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘হ্যাঁ মা বলো।’
‘আপনারা কি আসিফকে এখন কোন টাকা দিচ্ছেন? সে যে এসব করছে, এসব কিনে আনছে, এইসব করার টাকা সে কোথায় পাচ্ছে? তার বেতন তো মাত্র ষোল হাজার টাকা।’
‘না তো! আমরা তাকে কোন টাকা দেই না। গাড়ি শুধু চালাচ্ছে এই যা। আর গাড়িতে তোমার শ্বশুর গ্যাস ভরে রাখেন সব সময়৷ এছাড়া সে যে বাজারহাট করছে, তার সবকিছুই তার নিজের টাকায় করছে। ওসব নিয়ে এতো চিন্তা করো না তো তুমি। চলো খাবার রেডি করা আছে।’
রুম থেকে বের হওয়ার আগেই ননদ চলে এলো। এসেই বললো, আমি বলেছি তাকে আমার গহনা থেকে একটা সীতাহার দিয়ে দিবো। সেইটা দিতে। আমার গহনা সব শাশুড়ির কাছে রাখা। শাশুড়িকে বলে ওনার আলমারি থেকে গহনা বের করে সব সামনে রাখলাম তামান্নার। তামান্না আমার বিয়ের সময়ে এই বাড়ি থেকে দেয়া সীতাহার তুলে নিলো। টিকলিও তুলে নিতে নিতে বললো,
‘এইটা নিয়ে নেই ভাবি?’
আমি হাসিমুখে আরেকটা মান্তাসা আংটি তামান্নার হাতে তুলে দিয়ে বললাম
‘এইটাও রাখো। আমার একমাত্র ননদ বলে কথা।’
তামান্না আমাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর সব গহনা শাশুড়ি আবার তার আলমারিতে তুলে রাখলেন। শাশুড়ি কিন্তু একবারের জন্যও মেয়েকে নিষেধ করলেন না যে পুত্রবধূর গহনা যেনো না নেয়। আমি আমার সরল মনেই দিয়ে দিয়েছি৷ ওসব ভারিক্কি জিনিসপত্র আমার ভালো লাগে না পরতে।
দুপুরে সবাই একসাথে বসে ভাত খেলেও আমার ভাত যেনো পেট দিয়ে যাচ্ছে না৷ আমি একেবারে থ বনে বসে আছি৷ ওই মেয়েটার সাথে কারে করে কোথায় গেলো আসিফ! মেয়েটাই বা কে!
বাসায় আসতে আসতে আসিফের সেদিন রাত এগারোটা হয়ে গেলো। বাসায় ঢুকেই সে তামান্নাকে ডেকে এনে তামান্নার হাতে একটা ছোট মতোন বক্স তুলে দিয়ে বললো,
‘এইটা তোর জন্য। ডায়মন্ডের ফিঙ্গার রিং৷ তোর ওয়েডিং গিফট।’
ননাস বললো,
‘বাহ রে! আর আমার নাই বুঝি?’
‘দিবো।’
‘বউয়ের জন্যও এনেছিস বুঝি?’
আসিফ তখন ব্যাগ থেকে একটা ডার্ক চকলেটের বার বের করে ননাসের হাতে দিয়ে বললো,
‘এইটা তোমার জন্য আর এই বেলী ফুলের গাজরা আমার বউয়ের জন্য’
ভাত খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসিফ তার বেডে বসে মোবাইল টিপছিলো। আসিফকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম এবার,
‘ওই মহিলা কে ছিলো?’
‘কোন মহিলা?’
‘ওই মহিলা কে ছিলো? যে তোমাকে তার কারে তুলে নিলো?’
‘হুয়াট! কার কথা বলছো তুমি?’
‘ডায়মন্ডের ফিঙ্গার রিং কেনার সামর্থ্য তোমার ছয় মাসের বেতন এক করলেও কি হবে?’
আসিফ আমার এসব কথা কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। আমার জোরাজুরি দেখে আসিফ চিৎকার করে বললো, জানতে চাও আমি কী করি? দেখতে চাও আমি কী করি? আচ্ছা ঠিক আছে। আগামীকাল সকালেই তুমি আমার সাথে চলবা। আগামীকাল সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমি কী করছি, কোথায় যাচ্ছি এসবের জন্য এভাবে জাছুছি করছো? আমা পেছনে লোক লাগিয়েছো? সন্দেহ করছো আমাকে?
আমার নিজের ভাবতেই কেমন লাগছে নুপুর। তুমি? তুমি এসব করছো?
আচ্ছামত আমাকে কথা শুনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো আসিফ৷ আমি একদম অবুঝের মতো বসে রইলাম। কী করবো ভেবে উঠতে পারলাম না। বসে রইলাম খাটের উপর চুপ করে।
আসিফ রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে চলে যায়। আসিফের পেছন পেছন তানিয়াও চলে যায় ড্রইংরুমে। আসিফের কাছে গিয়ে বসে তানিয়া জিজ্ঞেস করলো,
‘কী হয়েছে ভাই? এভাবে রুম থেকে বের হয়ে চলে এলি যে?’
ডিভানে মাথা চাপিয়ে আসিফ শুয়ে পড়লো। তানিয়া আবার বলতে লাগলো,
‘আসলে সন্দেহ এমন এক জিনিস যা মানুষের সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। আর যখন নিজের পার্টনার একজন অন্যজনের উপর সন্দেহের চোখে দেখে, তখন আর সেই সম্পর্ক, সম্পর্কে থাকে না। সবকিছু শেষ হয়ে যায় এক মুহূর্তে। আর সন্দেহ নিয়ে ভালোবাসা যায় না। এগিয়ে নেয়া যায় না নিজেদের। জানি না তোদের কি হয়েছে, তবে সন্দেহ নামক কোনকিছু হলে এই সম্পর্কও এখানে শেষ।’
কথাগুলো বলে তানিয়া চলে গেলো ড্রইংরুম থেকে। আসিফ আর নুপুরের রুমের বাইরে থেকে সন্দেহ শব্দটা সে শুনতে পেয়েছিলো। আর এই সুযোগে সন্দেহ জিনিসটা নিয়ে ভাইয়ের ভেতরে ভরে দিলো এক গভীর বিষ!
বোন চলে যাওয়ার পর ডিভানের একটা বালিশে পাথা রেখে আসিফ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলো। বারবার কানে ভেসে উঠলো বোনের বলে যাওয়া সেই কথাগুলো। সম্পর্কে কেউ সন্দেহ করা শুরু করলে সম্পর্ক আর এগিয়ে নেয়া যায় না।
এসব চিন্তা করতে করতে রাত গভীর হয়। আসিফ ঘুমিয়ে যায়। নুপুরের ঘুম আসে না। বাইরে কুকুরের ডাক। এক নাগাড়ে ডাক যাকে বলে।আগামীকাল কী দেখাতে নিয়ে যাবে আসিফ? সিলেটে হুটহাট বৃষ্টি নামে। এখনও বৃষ্টি দিচ্ছে। কারেন্ট চলে গেলো। জেনারেটর অন হলো।
আমার ঘুম আসছে না চোখে। বিছানা ছেড়ে উঠলাম। একটা কাঁথা নিলাম। ড্রইংরুমে গিয়ে ফ্যান কিছুটা স্লো করলাম। কাঁথাটা আসিফের গায়ে জড়িয়ে দিলাম। তার গোলাপি ঠোঁট আর গভীর চোখের উপর গড়ে পড়া লম্বা চুলে তাকে অদ্ভুত মোহনীয় লাগছে দেখতে। কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে চুপিসারে নিজের খাটে এসে বসলাম। বাইরের বৃষ্টির সাথে করে আমার চোখ দিয়েও যে বৃষ্টির ধারা বইতে শুরু করলো, তা হয়তো আমি ছাড়া আর কেউ টের পেলো না। আসিফের গলায় দৈববানী হয়ে কানে আসছে যেনো করিমের সেই গান,
‘বসে ভাবি নিরালা
আগে তো জানিনা
বন্ধের পিরিতের জ্বালা
যেনো ইটের ভাটায় দিয়া
কয়লা আগুন জ্বালাইছে
দেওয়ানা বানাইছে
কী জাদু করিয়া বন্ধে মায়া লাগাইছে’
[প্রিয় পাঠক, আজ বাসায় আসলাম। সব মিলিয়ে কয়েকটা বিভীষিকাময় দিন পার করলাম বন্যার কবলে। শরীর ভালোর দিকে। এই কয়েকদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকবো। দোয়া রাখবেন। ভালো থাকবেন। যারা যারা খোঁজ নিয়েছেন/নিচ্ছেন আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা। ]
* কেউ পরিচয় গোপন করে আমার গল্প নিয়ে কোন মতামত, পরামর্শ, উপদেশ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অথবা যেকোন জিজ্ঞাসা থাকলে নিচের লিংকে ঢুকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আপনার পরিচয় আমি পাবো না, তবে প্রশ্ন পাবো। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো পোস্ট দিয়ে। লিংক যুক্ত করে দিলাম এখানে
Ask me anything, anonymously 😉
https://hushup.app/midhad
(চলবে)