ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-৮

0
488

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ৮
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা

রাজনীতি নিয়ে রায়হানের নিজস্ব কিছু চিন্তাধারা আছে। এই মুহুর্তে সংসদ নির্বাচনের জন্য তৈরি না ও। ভেবেছিল নিজের অবস্থানকে আরো শক্ত করে কয়েক বছর পরে এ পথে আগাবে। কিন্তু অনেক চিন্তার পরে ভেবে দেখললো হায়দার চাচার অবর্তমানে অন্য কেউ এই যায়গাটায় আসলে হয়তোবা এলাকার পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন আসবে।

আবার চেয়ারম্যান পদে অন্য কেউ আসলে ইউনিয়নের উন্নয়নের কি হবে সেটা নিয়েও সন্দিহান ও। ভেবে কূল কিনারা না পেয়ে বাবার সাথে আলোচনা করে বিষয়টা নিয়ে। অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে রুস্তম শেখ যে সমাধান দিলেন তা অনেকটাই নির্ভরযোগ্য মনে হয় রায়হানের কাছে। তাঁর মতে রায়হানের উচিত এমপি নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া। আর চেয়ারম্যান পদে রায়হানের চাচাতো ভাই সোহেল শেখকে চিন্তা করতে বলে। বছর দুয়েক ধরে ভাইয়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এলাকার জন্য কাজ করেছে, এবার তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়াই যায়।

ছেলেটা সৎ, যোগ্য, একইসাথে বোল্ড আর অমায়িক। অভিজ্ঞতার যে অভাব সেটা রায়হান হাতে ধরে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে পারবে। বাবার কথায় রায়হানের মনের অস্থিরতা কেটে যায় অনেকটাই। এইজন্যই তো বাবাকে তার মনে হয় সব সমস্যার মুশকিল আসান। নিজের সিদ্ধান্তের কথা তালুকদার সাহেবকে জানালে তাঁর বুক থেকেও একটা ভার নেমে যায় সহসাই। প্রাণখুলে দোয়া করলেন তিনি তরুণ ছেলেটার জন্য।

এদিকে রায়হানও সোহেলকে ডেকে বুঝিয়ে বললো নমিনেশনের জন্য এপ্লাই করতে। সহসা ভাইয়ের এরকম নির্দেশনায় বিচলিত হয়ে পড়ে সোহেল। বার বার বলতে থাকে ও কিছুতেই রায়হানের যায়গা নিতে পারবে না। উত্তরে রায়হান শান্ত স্বরে বলে, “আমি আছি তো। সব সময় পাশে পাবি আমাকে।“

“আর তোমার কি হবে ভাই?”

“কয়েকদিনের মধ্যেই জানতে পারবি। নমিনেশন নেওয়ার জন্য সময় বাকি নাই একদম। ওইদিকে মনযোগ দে আপাতত। ঠিক আছে?”

মাথা নেড়ে সায় জানায় সোহেল।
আজ সবকিছুর চক্করে পড়ে বুশরার সাথে কথা হয়নি একদমই। মেয়েটা ফোন করেছিল দুইবার। সাড়া না পেয়ে ব্যস্ত আছে ভেবে আর বিরক্ত করেনি। শুধু সোশাল সাইটে ছোট্ট করে টেক্সট করেছে, “খুব ব্যাস্ত?”

এইটুকুতেই হাসি ফুটে ওঠে রায়হানের চেহারায়। মেয়েটা কত বুঝদার। রায়হানের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে ভেবে ফোনে টেক্সট করেনি। অথচ খুব ভালো করেই জানে রাতে বাসায় ফেরার আগে সোশাল সাইটে একদমই ঢু মারে না রায়হান। বিরক্ত না করে অপেক্ষা করাটাই বেছে নিয়েছে। আর দেরি না করে উত্তর দিল ও।

“ছিলাম, এখন ফ্রি।“

ম্যাসেজ সিন হলো না। ঘড়ি দেখে বুঝলো এখন বুশরার ওখানে মধ্যরাত, ঘুমিয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কেন জানি কথা বলতে ইচ্ছা করছে খুব। অগত্যা, ড্রয়ার টেনে বের করে নিয়ে বসলো বুশরার ডায়েরি। র্যা ন্ডম একটা পেইজ খুলে পড়তে শুরু করলো। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

“কথা মেয়েটা খুব বোকা। এমন মানুষের হাত ছাড়ে কেউ? অবশ্য ভালো হয়েছে, তাহলে আরেকটা রায়হান শেখ পেতাম কোথায়? উফ, আমি কি আত্মকেন্ত্রিক হয়ে গেছি। মানুষটা কত কষ্ট পায় কথাকে মনে করে। আর আমি কিনা! না বুশরা, কথার কথা ভাবলে হবে না। নিজের মানুষটাকে নিজের করে নাও। তাঁর দুঃখগুলো হাওয়াই মিঠাই হয়ে যাক তোমার পরশে। নাহলে কিসের সহধর্মিনী তুমি?”

“পাগল একটা”, আনমনে বললো রায়হান, “পরবাসী কন্যা তুমি কি জানো আমার মনটা আজকাল শুধু বুশরা বুশরা করে?”

পরক্ষনে উত্তর পাবে না জেনেও আরেকটা ম্যাসেজ পাঠালো, “ঘুমিয়ে পড়েছো, বউ?”

ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলো এক ধ্যানে, যতক্ষণ না স্ক্রিণ লাইট নিভে যায়। তারপর আবার ডায়েরীতে মনযোগ দিল। তবে ডায়েরির পাতা উলটানোর আগেই টুং করে বেজে উঠলো ফোনটা।

“আজ এত রোমান্টিসিজম?”

“কই? বউকে বউ ডাকা কি নিষেধ?”

“না তো। একশো বার ডাকুন।“

“সিওর।“

“বউ”

“বউ”

“বউ”

“বউ”

অনবরত বউ বউ বউ লেখা টেক্সট পেতে পেতে ঘুম ছুটে যায় বুশরার। কি হলো মানুষটার, এই চিন্তায়।

“শরীর খারাপ চেয়ারম্যান সাহেব?”

“না তো।“

“তাহলে?”

“ঘুমাও নি? অনেক রাত তো ওখানে।“

“ঘুম আসছিলো না। সারাদিন একটুও কথা হয়নি। ভালো লাগছিলো না।“

“তাই?”

“হুম। আজ একটু ভিডিও কল দিই?“

“বুশরা প্লিজ না।“

এই একটা বিষয়ে রায়হানকে রাজি করানো যায়না একদমই। মন খারাপ হলেও জোর করলো না বুশরা। আর ওদিকে রায়হান মনে মনে বললো, “দেখলেই আরো দেখতে ইচ্ছা করবে পাগলী। ওই রিস্ক নেওয়া যাবেনা।“ বুশরা চুপ করে আছে দেখে রায়হান লিখলো, “ঘুমাও এখন। অনেক রাত হয়েছে।“

“ঘুম আসে না।“

“আচ্ছা তাহলে একটা নিউজ দিই। ভাবছিলাম শুনলে ঘুম আসবে না তোমার, কাল সকালে বলবো। তো ঘুম নাই যখন তো এখনই শেয়ার করি।“

“উউম, গুড নিউজ? নাকি ব্যাড?”

“কনফিউজড।“

“আচ্ছা বলো।“

“আমি সম্ভবত এবার সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন পাচ্ছি পার্টি থেকে।“

টেক্সটটা দেখে কয়েকবার চোখ কচলালো বুশরা। এমন মজা করার মানুষ রায়হান না সেটা ভালই জানে ও। উত্তেজনার আতিশয্যে সঙ্গে সঙ্গে ওপাশের মানুষটাকে ফোন করলো বুশরা। টেক্সটে পোষাচ্ছেনা আর যেন। ফোন রিসিভ হতেই প্রায় চিৎকার করে প্রশ্ন করলো,

“সত্যি বলছো?”

“হ্যাঁ।“

“হঠাত? কিভাবে কি হলো?”

একে একে সব খুলে বললো রায়হান। চুপচাপ শুনলো বুশরা।

তারপর বললো, “তা এখন থেকে আপনাকে কি বলে ডাকবো? এমপি সাহেব?”

রায়হান হেসে বললো, “গাছে কাঠাল, গোফে তেল।“

এরপর আলতো স্বরে বললো, “চেঞ্জ যখন করবা তখন চুজ সামথিং পার্সোনাল।“

চলবে…

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here