অনুভবী হিয়া’ পর্ব-১০

0
2420

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

১০.

স্নিগ্ধ সকালে পাখির কুহুরব মনোমুগ্ধকর। ঘড়ির কাটা ছয়টায় ছুঁই ছুঁই। মিহির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে আর স্নিগ্ধ সকাল উপভোগ করছে। তখনি পিছন থেকে মাথায় চাপড় পরে। মিহির ‘আহঃ!’ বলে মাথা ঢলতে থাকে। ব্যালকনির রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে মাহিন, ‘আস্তেই দিছি ড্রামা করার দরকার নাই। ব্যাথা পাসনি জানি।’

‘কচু জানো তুমি।’ মুখ কালো করে বলে মিহির।

‘আচ্ছা অফিসে সমস্যা হয় তোর? কেউ কিছু বলে? আমাকে বলতে পারিস।’ সিরিয়াস হয়ে বলে মাহিন। হঠাৎ ভাইয়ের এমন প্রশ্নে অবাক হয় মিহির। ভাইকে তো শুভর কথা বলা হয় নাই। আর অফিস নিয়ে এতো চিন্তিত কেনো ভাইয়ার? স্বাভাবিক গলায় বলে, ‘না তো ভাইয়া কোনো সমস্যা নেই।’

‘সত্যি বলছিস তো?’ মিহির এইবার ইতস্ততবোধ করে। আচ্ছা ভাইকে কি শুভর কথা জানিয়ে দেবো? ভাই যদি বেশি সিরিয়াসলি নেয়? এটা কোনো সাবজেক্ট হলো। আমি তো আর শুভর প্রতি দুর্বল না। বলার প্রশ্নই আসে না। মিহির ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, ‘হ্যাঁ সত্যি বলছি!’

মাহিন কিছুক্ষন ত্নীক্ষ দৃষ্টিতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। লম্বা দম ফেলে বেড়িয়ে যায় সে।

ভাইয়ের মতিগতি বুঝতে পারছে না মিহির। হঠাৎ তার অফিস নিয়ে পরেছে কেনো? মিহির অফিসে জয়েন করা নিয়ে মাহিনের ঘোর আপত্তি ছিলো। তবে সময়ের সাথে মাহিন চুপ হয়ে যায়। কিন্তু কাল রাতে খাবার শেষে মিহির সোফায় বসে টিভি দেখছিলো তখন মাহিন সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘তুই আর অফিস যাবি না। রিজাইন দিয়ে দে।’

ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মিহির। অবাক স্বরে বলে মিহির, ‘রিজাইন দিবো মানে?’

‘মানে তুই আর অফিস যাচ্ছিস না। কাজ করতে হবে না তোকে। আমি যা ইনকাম করি তাতেই চলবে। পড়াশোনায় মনোযোগ দে শুধু।’ সিরিয়াস ভাবে বলে মাহিন। রাশেদা বেগম এতোক্ষনে মুখ খুললেন, ‘মানে কি মাহিন। মিহু রিজাইন দিবে কেনো? তুই আবার আগের মতো শুরু করছিস। তোর ইনকাম দিয়ে চলবে মানে? তুই কি করিস না করিস, কিভাবে টাকা ইনকাম করিস কিছু জানি না আমরা। আদৌ তুই খারাপ কাজে লিপ্ত আছিস কিনা সেটাও জানি না।’

‘মা, আমার ওপর তোমার ভরসা নেই? তোমরা আমাকে এমন কোনো শিক্ষা দেওনি যে টাকার জন্য আমি খারাপ কাজে লিপ্ত হবো। আমি যা ইনকাম করি সব পরিশ্রম করেই করি।’ গম্ভীর গলায় বলে মাহিন।

‘তোদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। মেয়েটা যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে ক্ষতি কি? এতো দিন তো কোনো সমস্যা হয়নি তাহলে হঠাৎ কেনো রিজাইনের কথা বলছিস?’

‘মা শুধু শুধু কেনো মিহু কষ্ট করবে? আমার যা আছে তাতেই ওকে রাজকন্যার মতো রাখবো। মিহুকে শুধু পড়াশোনা করতে বলো।’ চোখ মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে মাহিন।

মিহির সিরিয়াস হয়ে অনুরোধ স্বরে বলে, ‘ভাইয়া প্লিজ, আমি নিজে থেকে কিছু একটা করতে চাই। তুমি চাওনা তোমার বোন কারোর ওপর নির্ভরশীল না হোক। নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াক? তুমি তো এমনিতেই আমার সব চাওয়া পূরণ করো আমাকে অনেক ভালোবাসো। প্লিজ ভাইয়া আমি জব করবো।’

মাহিন শান্ত চোখে কিছুক্ষণ মিহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর ‘ঠিক আছে’ বলে রুমে চলে যায়।

________________

সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো শুভ। পরনে হুয়াইট শার্টের ওপর হুয়াইট ব্লেজার, ব্ল্যাক টাই, ব্ল্যাক প্যান্ট, ব্ল্যাক ওয়াচ। ড্রয়ার থেকে গাড়ির চাবি নিবে এমন সময় গ্রুপ কল আসে। রিসিভ করার পর রাহুল বলে উঠে, ‘মামাহ কাহিনী হইয়া গেছে জানো তো?’
-কি হয়েছে না বললে জানবো কিভাবে?’ শুভ
-সবুজরে মা:রার জন্য যাদের পাঠাই ছিলাম তারাই এখন হাসপাতালে এডমিট।’ ফিচেল গলায় বলে আদিল।
-তো কি হইছে? মা:র:পি:ট করতে গিয়ে দুই-চার টা লাগছে হইতো।’ স্বাভাবিক ভাবে বলে শুভ।
-না তুই যা ভাবছিস তা নয়।’ অসহায় কন্ঠে বলে রাহুল।
-ওই ছেলে গুলারে বেধম কে:লানি দিছে কেউ অবস্থা অনেক খারাপ। ছয় সাত মাস তো হাসপাতালে থাকতে হবে। পোলা গুলারে জ্যা:ন্ত ছাইড়া দিছে যে এটাই বেশি।’ বলে সামির।
-কে মেরেছে ওদের?’ বিস্মিত হয়ে বলে শুভ।
-কে জানি না। তবে ছেলেটা সবুজ ছিলো না এইডা সিউর তারা। ছেলে গুলারে নাকি খালি জিজ্ঞেস করছে কারা পাঠায়ছে। ভাই যে মায়া ছাড়া এমনে মা:রতে পারে হে একবার আমরারে পাইলে ছাড়বো না।’ ভয়াক্রান্ত স্বরে বলে রাহুল।
-আরে নাহ। আমাদের পাবে কিভাবে? আমরা ঢাকা আছি আর ওরা কুমিল্লা। আমাদের ধরা প্রশ্নই আসে না। প্যারা নিস না তোরা। আর ধরতে পারলে নাহয় আমরা আমাদের মতো ক্লাস নিবো। কি বলিস?’ মজার ছলে শক্ত কন্ঠে বলে শুভ। আরো কিছু কথার পর কল কেটে দেয়।

চলবে..!!

  1. [ছোট হয়েছে পর্ব টা! 👀 হ্যাপি রিডিং ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here