#নতুন_তুই_আমি#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-২২……………………….
তামান্না অনেক জোর করার পরও সিয়াম বাসায় এলো না।বেশ রাগ করে আছে ছেলেটা-তামান্না বুঝতে পারছে।কিন্তু সিয়ামকে কি করে কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।তাই আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ল।
আর সিয়াম সাথে সাথে গাড়ি পেছনের দিকে নিয়ে ঘুরিয়ে নিল।
তামান্নাকে কিছু বলার সুযোগও দিল না আর সে নিজেও কিছু বলল না।
তামান্না তবুও গেইটে কিছুক্ষণ দাঁড়াল।
খুব খারাপ লাগছে,সিয়ামের গাড়িটা চোখের আড়াল হওয়া মাত্রই কান্না করতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু গেইট খোলে তো দাড়োয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
কাঁদলে আবার জানতে চাইবে কেন কাঁদছে।
“মামনি,আসো….বাইরে কেন এহনো।বাবাজি তো গেছে গা…আসো…..”
“জ্বি চাচা….”
ভেতরে চলে আসলো তামান্না।
বাসায় ডুকে দেখল সবাই ড্রয়িং রোমে বসা।
ভাবী তামান্নাকে দেখে দৌঁড়ে গেলো তার কাছে।
মুখে বিশ্বজয়ের একটা হাঁসি এনে বলল,
“কি রে ননদিনী শাড়ি……”
আর কিছু বলতে পারলো না তামান্না সবার দিকে তাঁকিয়ে মুখটা গোমড়া করে ছুটে উপরে চলে গেলো।
ভাবী বুঝতে পারলো তামান্নার চোখে পানি।
তাই পিছু ডাকল,
“তামান্না!!!বোন শোন……তামান্না…..”
থামলো না সে।
ভাইয়া জানতে চাইল,
“কি ব্যাপার কি হলো ওর??”
ভাবী বলল,
“কি জানি।আমি দেখছি….”
ভাবীও উপরে চলে গেলো।
তামান্নার মা উঠতে চাইলে ওর বাবা বলল,
“থাক,বউ মা তো গেছে।তোমার যেতে হবে না…..”
“হ্যাঁ,তোর যাওয়া লাগবে না।বউ মা ই সামলাক…..”
ভাবী ঘরে ডুকে দেখল তামান্না ওয়াশরোমে।
ওয়াশরোমে নক করে বলল,
“তামান্না!!!সাওয়ার নিচ্ছিস??”
তামান্না কোনো কথা বলল না।
ভাবী আবার ডাকল,
“তামান্না….”
কিছু বলল না সে।ভাবী ওয়েট করছে-সাওয়ারের শব্দ শোনে বুঝল সে সাওয়ার নিচ্ছে।
কিছুক্ষন পর বেরিয়ে আসল তামান্না।
ভাবীকে দেখেই মুখ টা ফিরিয়ে নিলো।
আয়ানার সামনে গিয়ে চুলগুলো মুছছে।
“কি রে??কি হয়েছে??ওমন করে চলে এলি??”
“…….”
“তামান্না!!দেখি তাঁকা…..কি রে??কাঁদছিস???”
“না…..”
“চোখ তাহলে লাল হয়ে আছে…..কাঁদলি কেনো??”
“তোমাদের জানতে হবে না…”
বলে তামান্না বিছানায় এসে বসল।
ভাবী পাশে বসে বলল,
“বল না কি হয়েছে??সিয়াম কিছু বলছে???”
“……”
“এভাবে চুপ করে থাকিস না বোন।বল কি হয়েছে??
রাগারাগি করেছিস??”
“কেনো জানতে হবে তোমার।আমি কি কিছু হই কারো??”
“মানে কি বলছিস??”
“হ্যাঁ,ঠিক বলছি আমি….”
“কি হলো??কে কি করল??”
“কেউ কিছু করে নি।যাও তুমি।আমার কাছে কেনো আসছো।আমার খবর নিয়ে কি হবে??”
“তামান্না!!!পাগলী!!!চুপ…কি সব বলে…”
“ঠিকি বলছি আমি।আমি যে এতো রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে ছিলাম কেউ কি আমাকে একটাবার ফোন দিয়েছে???ভাইয়া তো আসরের নামাযের সময় আমাকে বাসায় না পেলে ফোন করে।তাহলে??আজ কেনো কেউ কোনো কল করল না।মাম্মাম,জেঠিমনি,তুমি না আমার বাবাজান কেউ মনে করে নি আমায়…..”
চোখের পানি মুছে তামান্না দাঁড়িয়ে বলল,
“এখন তো বাসায় এসে গেছি।আর কারও কোনো খোঁজ নিতে হবে না। যাও…..”
ভাবী এতক্ষণ হা হয়ে তামান্নাকে দেখছিল।
কিন্তু তামান্নার সব কথাগুলো শোনে ফিক করে হেঁসে ফেলল।
উঠে গিয়ে তামান্নার দু গালে হাত রেখে বলল,
“ওরে পাগলী,এইজন্য এতো অভিমান??বোকা কোথাকার।তুই তোর বরের সাথে প্রথমদিন ঘুরতে গেছিস আর আমরা তোকে কল করবো??
ডির্স্টাব হতো না??”
“ভাবী!!!!আমি না সিয়ামের সাথে এর আগেও অনেক জায়গায় গিয়েছি।সো এসব বলো না।বল যে আমার খোজ নেওয়া কোনো প্রয়োজন-ই মনে করো নি তোমরা……”
“আরে আরে রাগ করে কেনো এমন করে।শোন না…..এই শোন….”
“বলো….”
“দেখি তাঁকা আমার দিকে।
আহা রে কি অবস্থা চোখের!!এর্লাজি হয়ে যাবে কিন্তু পড়ে।মাইর লাগাবো এখন।শুধু বড়ই হলি বুদ্ধি হলো না তোর।”
“তাই তো পর করে দিচ্ছো…..”
“ইশশশ!!বললেই হলো।হুম বস এখানে।”
“কি??”
“আগে তো সিয়াম বন্ধু ছিলো এখন তো তোর হাসবেন্ড।বিয়ের পর আজকে প্রথম তোরা ঘুরতে গেলি।তোদের তো একটু প্রাইভেসি থাকতে পারে।তাই নয় কি???
সেজন্য কেউ ফোন দেয় নি…..”
“কিসের প্রাইভেসি আবার…..ফোন দিলে কি হতো???জানো ফোন হাতে নিয়ে যখন দেখলাম বাসার কেউ ফোন করে নি তখন এত্ত খারাপ লাগছিল!!!”
“ধুর পাগলী!!!মন খারাপ করে না।আর কি রে হ্যাঁ???আমার এতো সুন্দর ননদিনীটাকে নিয়ে গেছে সাথে করে এমনি এমনি??কোনো পার্সনাল কাজ-ই কি করে নি???☺☺”
“ভাবী!!!!!!তুমি কিন্তু……”
“আচ্ছা বাবা হয়েছে….বাদ দিলাম সব….হ্যাপী??”
“হুমমম।তোমরা কি করে জানলে আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম??”
“বা রে,সিয়াম ফোন করে সন্ধ্যার আগে জানিয়েছিল আমায় যে তোকে নিয়ে ফিরতে রাত হবে ওর।তারমানে ঘুরতেই যাবি……”
“কই আমি তো ফোন করতে দেখলাম না??”
“হয়তো তুই খেয়াল করিস নি….”
“হুম হতে পারে।আচ্ছা এখন আমি শুবো,খুব ট্রায়াড একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও……”
“হ্যাঁ তাই তো…..তাই করবো না এখন আমি??”
তামান্না ভাবীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলল,
“আস্তে আস্তে চুল টেনে দাও….”
“হুমম….দিচ্ছি।এখনি ঘুমাবি নাকি???”
“নাহ্…এখন আর ঘুম আসবে নাকি??আরও পরে…তুমি চুলে হাত বুলাও একটু আরাম পাবো….”
“এই তুই ডিনার করবি না??নাকি করে আসছিস??”
“না করবো না।তোমরা করেছো???”
“সন্ধ্যায় পিঠা করেছিলাম।সবাই একটু খেয়ে বলছে রাতে আর খাবে না……”
“কি পিঠা??”
“কুমড়ো-মরচা……”
“ইয়াক!!!এটা আবার……”
“হুম তোমার তো ভালো খাবার দেখলেই ইয়াক…..দিই ঝাল করে চটপটি বানিয়ে সেটা তো মুখে ঠিকই রুচিয়ে নাও…..”
“আমার চটপটি ভালো লাগলে আমি কি করবো??”
“তাই তো।তোমার আর কি করার???পাটকাঠি হচ্ছো দিনকে দিন……”
“আমি তো মোটাই ভাবী…..”
“চুপ।মোটা টা কি??হাতি হয়ে গেছো না তুমি!!!ডিনার করছিস??”
“উমহু….”
“কিহ!!!”
“সিয়াম রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলো।আমি যাই নি…..”
“মানে??”
“হ্যাঁ…তাই রেগে মেগে চলে গেছে……”
“এই মানে কি??তুই ঠিক আছিস তো……”
“হুম আছি।রাগলে রাগুক আমার কি!!ওর এতো রাগ দেখে কে??”
“তারমানে সিয়াম রাগে বাসায় ঢুকে নি…..”
“হুম। যত ভাব সব…..”
“হায় আল্লাহ!!কি বলে কি এই মেয়ে।তোর মাথায় কি একটু বুদ্ধিসুদ্ধি নেই হ্যাঁ???”
“আমি কি করবো??”
“বোকা মেয়ে বর যখন ভালোবেসে খাওয়াতে নিয়ে যায় তখন কেউ ফির আসে??
আর আসলে বরের মেজাজ কি হয়??তুই জানিস????”
“উফফ…ভাবী!!!ও তো সব সময় রাগ ই করে।বদমাইশ একটা……”
“তামান্না!!!!থাপ্পর খাবি একটা……”
“………”
“দেখি উঠ…উঠ বলছি…..”
“উমমম…কি??”
“ফোন কর……”
“কাকে??”
“সিয়ামকে……”
“কেনো??করতে যাবো কেনো??ও শুধু শুধু না বুঝে এতো রাগ দেখায় কেনো???আমি কত রিকুয়েস্ট করলাম বাসায় আসার জন্য আসলই না…….”
“আচ্ছা যা হয়েছে,সব বাদ।তুই ফোন করে এখন কথা বলবি ওর সাথে….আর রাগ ভাঙাবি যেভাবেই হোক….বুঝলি??”
“মানে???”
“মানে বুঝো না তুমি??মেয়ে হয়েছো বরের অভিমান ছাড়াতে পারবে না??
শোন এরকম একটু আধটু অভিমান না নিজে হার মেনে ভাঙাতে হয় তাহলে ভালোবাসা আরও গভীর হয়…..”
বলেই ভাবী চলে গেলো।
আর তামান্না হা হয়ে ভাবীর চলে যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে রইল।
“কি বলে গেলো!!!!!আজব গো আজব……….”
বলে তামান্না ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ল।