#আত্মতৃপ্তি
#লেখক_জীবন
#পর্ব ১৭
নিশির কথা মত নিবির দু-তিন দিন অফিস ছুটি নেয়। এ ক’দিন সে নিজেকে রিলাক্স করে। ঘুড়ে বেড়ায়। সে ক’দিন তার ভালোই কাটে। নিবির আর সুপ্ত দুজনে খুব ভালো দিন কাটায়। সত্যি কথা বলতে তারা দুজন এ পর্যন্ত এরকম মজার দিন কাটায় নি। নিবির আবার সব ভুলে যায় যে তার উপর দু – দু’বার মার্ডার কেস এর আরোপ লাগানো হয়েছিল। এ ক’দিনে তার একবারের জন্যও সে কথা মনে পরে না।
ছুটি শেষ হলে নিবির আবার অফিসে যায়। সবাই তার দিকে অন্য রকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নিশিও তার কাজে ব্যস্ত ছিল। নিবিরকে দেখে তার মুখে অপরুপ হাসি ফোটে। নিশি এগিয়ে আসে নিবিরের দিকে।
– নিবির কেমন আছো?
– হুম ভালোই তো আছি। কিন্তু এই ইমপ্লয় গুলোর মনে সব সুখ ধুলোর সাথে মিশে গেছে আমাকে দেখে।
– ওদের কথা বাদ দাও তো। তোমাকে কিন্তু আজ অনেক সুন্দর লাগছে!
– যে কথা আমি বলে তোমাকে ইমপ্রেস করব, সে কথা তুমি আমাকেই বলছো!
– আমি মজা করছি না। সত্যি কথা বলছি।
– ওহহ…সিরিয়াসলি! থ্যাংক ইউ সো মাচ।
– ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।
তাদের কথার পর্ব শেষ করে যার যার কাজে লেগে পরে। নিবির অনেক দিন পর কাজে আসছে। অনেক দিন বললে একটু ভুল হতে পারে। তারপরও বলব। যাহোক, তার কাজ করতে আজ বেশ ভালোই লাগছে। সারাদিন নিশি আর নিবিরের ছোটো-খাটো ব্যাপার নিয়ে কথা হয়। আর মাঝে মাঝে হাসির ধুপ পরে যায়। অন্যসব ইমপ্লয় গুলো হয়তো তাদের এরকম কান্ড দেখে বিরক্ত লাগছিল। কিন্তু তারা[নিবির আর নিশি] তাদের[ইমপ্লয়] বিরক্ত উপেক্ষা করে তাদের[নিবির আর নিশির] হাসি-তামাশা চালিয়ে চায়।
অফিস শেষে নিবির বাসায় উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠতে যাবে, ঠিক তখনই ইন্সপেক্টর মিথিলা চলে আসে। নিবির তাকে দেখে চমকে যায়। এরপর গাড়িতে না উঠে ইন্সপেক্টর এর দিকে এগিয়ে যায়। আর বলে,
– আজ তো কারোর খুন হয় নি, কিন্তু তারপর আমাকে নিতে আসছেন!
– কিভাবে বুঝলেন যে আজ খুন হয়নি আর আর খুন যদিও হয় তাহলে আমি আপনাকে ধরতে আসব?
– নিউজ আমরা নিজেরাই তো তৈরি করি, কিন্তু সেখানে আজ কোন খুন এর নিউজ পাবলিশ করা হয় নি। তাই আর কি! আর খুন হল তো আপনারা প্রথমে আমাকে ধরতে আসেন।
– যদি সময় থাকে তাহলে আমরা কি একটু বসে কথা বলতে পারি?
– দেখেন আমার সময় আছে। কিন্তু আমি চাইবো না, আমার মুল্যবান সময় গুলো আপনার সাথে নষ্ট করি। কিন্তু আপনি যখন বলেছেন, তাহলে আপনাকে কিছু সময় দিতে পারি।
ইন্সপেক্টর একটু মুচকি হাসি দেয়। এরপর নিবিরকে ধন্যবাদ জানায়। সে[ইন্সপেক্টর] আবার বলে উঠে,
– আচ্ছা এই চায়ের দোকানেই বসা যায়।[ অফিসের সামনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলে]
– আমি চাইব না আমার অফিসের কেউ কিছু জানুক সে আমি আপনার সাথে আবার কথা বলছি। আরেকটু আগে একটা দোকান আছে। আমরা সেখানেই বসতে পারি যদি আপনার কিছু মনে না হয়।
– ঠিক আছে আপনার কথাই না হয় রাখি। যেহেতু আপনার একটা প্রেস্টিজ আছে এই অফিসে।
তারা দুজন হাটতে থাকে সেই দোকানে যাওয়ার জন্য। দুজনেই চুপচাপ যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে দু-একটা কথা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সেই দোকানে পৌছে যায়। তারা বসে চায়ের অর্ডার দেয় আর আবার কথায় ফিরে আসে।
– হুম ইন্সপেক্টর আপনি কিছু একটা বলছিলেন আমাকে।
– এই যে, আপনি যে খুন গুলো করছেন। কেন করছে খুন গুলো বলন তো?
– আমি আবারও বলছি আমি কোন খুন করি নি।
– আপনার এ সাধু হওয়া গল্প অন্য কাউকে শোনাতে পারেন, আমাকে না। আমি জানি খুন গুলো আপনিই করেছেন।
– কিন্তু আপনার কোর্ট তো সেটা প্রমান করতে পারছে না।
– এ জন্যই আপনার ভাগ্য ভালো যে আপনি বার বার বেচে যাচ্ছেন।
এরমধ্যেই তাদের চা চলে আসে। নিবির চায়ের কাপ টা মুখে নিয়ে ছোট করে একটা চুমুক দেয়। ইন্সপেক্টর তার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিবির সেটা খেয়াল করে আর বলে,” ম্যাম চা মনের সব অশান্তিকে দূর করে, মনকে শান্ত রাখে। তো আপনি চা – টা খেতে পারেন।” নিবিরের কথা শুনে নিবিরের ইন্সপেক্টরও চা-তে চুমুক লাগায়। কিছু সময় দুজনেই চা খেতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তারপর ইন্সপেক্টর আবার বলে,
– আচ্ছা বলেন তো কেন করেছেন মার্ডার গুলো? আর এই ভালো মানুষ গুলোকেই বা কেন মার্ডার করলেন?
নিবিরের ঠোঁটের কোনে ছোট করে একটা মুচকি হাসি দেখা যায়। কিন্তু ইন্সপেক্টর শত চেষ্টার পরও এ হাসির রহস্যটা বের করতে পারল না। নিবির বলে উঠে,
– এ বিষয় ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে যদি কথা বলতে চান, বলতে পারেন। কিন্তু আমার এই ব্যাপার টা ইন্টারেস্টিং লাগছে না।
– এটা আপনিও জানেন যে একজন ইন্সপেক্টর কি বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারে মানুষের সাথে। আর আমিও তাই করছি।
– কিন্তু এ প্রশ্ন গুলো আমাকে করে লাভ নেই।
– সেটা না হয় পরে দেখা যাবে।……. তবে আপনি যা করছেন, সেগুলো মোটেও ভালো না।
– আমি কিন্তু আগেই বলেছি, খুনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
ইন্সপেক্টর নিবিরের সাথে পেরে উঠে না। তাই চলে যাওয়াই শেয় মনে করে। যাওয়ার আগে বলে যায়,” নিবির সাহেব.. শুধু এত টুকু মনে রাখেন। ভাগ্য বার বার সহায় হয় না। আর আমি আপনাকে আপনার আসল রুপ সবাইকে দেখিয়েই ছাড়ব। আপনি খুনি হলে আমিও পুলিশ।” নিবির বলে,” আমারও দোয়া রইল যেন আপনি সাকসেসফুল হতে পারেন।” ইন্সপেক্টর নিবিরের শেষ কথা শুনে চলে যান সেখান থেকে। নিবির আরো কিছুক্ষন সেখানে বসে থাকে। তারপর বিল পে – করে বাসায় চলে যায়।
বাসায় গিয়ে ফ্রশ হয়ে সুপ্তকে বলে,
– আজ ইন্সপেক্টর ম্যাম আমার সাথে দেখা করতে আসছিলো….।
– কিরে আবার কেউ খুন হইছে নাকি? এবার কিন্তু আমি কিছু করতে পারব না। ইশতিয়াক আর আমার কথাও শুনবে না।
– আরে আগে আমার পুরো কথাটা শোন। ইন্সপেক্টর আমাকে এ্যারেস্ট করতে আসে নি।
– তবে কেন এসেছিল?
নিবির সব কথা খুলে বলে সুপ্তকে। সুপ্ত নিবিরের কথা শুনে বলে,
– পুলিশের যা কাজ তাই করে। খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, আসল খুনিকে ছেড়ে আমাদের পিছিনে লেগে পরেছে।
– তবে ইন্সপেক্টর মেয়েটার মাথা খুব ভালো। সেকোন কেস এক চুটকিতেই সল্ভ করে দিবে।
– তুই কিভাবে বুঝলি?
– সেটা তুই বুঝবি না। আর তোকে বুঝতেও হবে না। তুই ঘুমা।
– বুঝালে বুঝবো না কেন? আর আমি এখন আর বেশি ঘুমাই না। একটু-আধটু কাজও করি।
– ওহহ আল্লাহ তাহলে তোর দিকে মানুষ বানিয়েছে অবশেষে।
সন্ধার পর নিবির আর সুপ্ত বাসার ছাদে গিয়ে আড্ডা দেয়।
চলবে…
[বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি। তাই কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে গল্পটি তুলনা করবেন না। আর কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়।]
পরবর্তী পর্বগুলো সবার আগে পেতে আমার অফিসিয়াল পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকবেন👇👇…..
https://www.facebook.com/জীবনের-গল্প-Zibons-Story-116756624349083/