[পর্বটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত মনষ্কদের জন্য নয়! নৃশং*স খু*নের বর্ণনা রয়েছে, নিজ দায়িত্বে পড়বেন।]
#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৩৩
_______________________
বিশ্বজিতের সাথে ষোড়শী সারদার সম্পর্ক এগোলো খুবই দ্রুত। এই বয়সটাই মেয়েদের আবেগের, তার ওপর বিশ্বজিত দেখতেও ছিলো সুপুরুষ। আর পাঁচটা ছেলের সাথে তাকে দাঁড় করালে এক দেখায় চোখে পড়ার মতোই দৈহিক গঠন ছিলো তার। সারদা দ্রুতই আকৃষ্ট হয়ে যায় বিশ্বজিতের প্রতি আর অপরদিকে বিশ্বজিৎ! তার মতো নিকৃষ্ট মানুষ দুটো আছে কি না সেটা নিয়ে তার নিজেরও বেশ সন্দেহ আছে৷ যতবারই সে সারদার প্রশংসা করেছে ততবারই নিজ মনে লালন করে কিছু বিকৃত ইচ্ছাকে। তবে সারদা ছিলো খুবই সহজ সরল মেয়ে। বিশ্বজিতের নোং*রা উদ্দেশ্য গুলো সে ধরতে পারেনি। অন্ধের মতো বিশ্বাস করে গেছে বিশ্বজিতকে। অবশ্য তার ভাগ্যটা সম্ভবত কিঞ্চিৎ ভালো ছিলো কারণ বিশ্বজিত যতই খারাপ হোক না কেনো, সারদার প্রতি তার মনে জন্ম নিয়েছিলো সত্যিকারের অনুভূতি আর এ অনুভূতি সম্পর্কে অবগত ছিলো শুধুমাত্র সারদা আর প্রতিমা। প্রতিমা বাচ্চা হলেও সকল ধরনের কাজে সাহায্য করেছে বিশ্বজিত আর সারদাকে। এতদিনে বিশ্বজিতকে সে নিজের দাদার মতোই ভালোবাসতে শুরু করেছে। বিশ্বজিত অবশ্য প্রতিমাকে বোনের মতো ভালো না বাসলেও বেশ স্নেহ করে। প্রতিমাই বোধহয় একমাত্র মেয়ে ছিলো যার প্রতি বিশ্বজিত কখনো কুনজরে তাকায় নি। প্রতিমা অবশ্য তখন বেশ ছোট ছিলো, চেহারাও সারদার মতো লাবন্যময়ী ছিলো না। পুরুষকে আকৃষ্ট করার মতো কোনো গুনই তখনকার প্রতিমার মধ্যে ছিলো না অথচ প্রতিমার বয়সী মেয়েদের বিয়ে ওইসময় অহরহ হচ্ছিলো। অবশ্য প্রতিমার চেহারা যেমন ভালো না তেমনি খারাপও ছিলো না। অল্পবয়সী হলেও মেয়েটা বেশ সচেতন। পিষতুতো বোনকে যে বিয়ে করা যায়না সে সম্পর্কে প্রতিমা তাকে অনেকবার সচেতন করেছে। বিশ্বজিত অবশ্য সেসব আমলে নেয়নি। তাদের দেখা করার জায়গা ছিলো মূলত বাড়ির পেছনের কৃষ্ণচূড়া গাছটি। বাড়ির কেউ সেদিকে যেতো না তাও বিশেষ নিরাপত্তার জন্য প্রতিমা পাহারা দিতো বাইরে৷ বিশ্বজিতের গ্রামে আসার দেড় মাস হয়ে এসেছিলো প্রায়। এরই মাঝে সারদার মনে জায়গায় তৈরি করে নিয়েছিলো সে। বরাবরের মতো সেদিন শুক্রবার সকালেও বিশ্বজিত দেখা করতে যায় সারদার সাথে।
– তোমারে একটা কথা জিজ্ঞেস করি? (বিশ্বজিত)
– কি কথা?
– তুমি এহনো বিয়া করো নাই ক্যান? গ্রামে তো অনেক আগেই মাইয়াগো বিয়া হইয়া যায়।
– আমার বিয়া হইলে তোমার কি হইতো?
– তোমারে তোমার পতিদেবের ঘর থেইকা তুইলা আইনা আমি বিয়া করতাম।
– এরচেয়ে যে আমি বিয়াই করি নাই সেইটা বেশি ভালো না?
– হ তা অবশ্য ভালো। দ্রুত বিয়াটা সাইরা নিতে হইবো বুঝছো।
– কিন্তু বিশ্বজিত দা!
– কি?
– পিষতুতো বোনরে তো বিয়া করা যায়না।
– ওইটা নিয়া তুমি চিন্তা কইরো না। তোমারে আমার করনের দায়িত্ব আমার।
– কৃষ্ণ যদি পাপ দেয় তো?
– দিবেনা। কৃষ্ণ নিজেও তো রাধারে ভালোবাসছে আর আমি রাধারে ভালোবাসলেই দোষ?
– রাধা তো কৃষ্ণের পিষতুতো বোন ছিলো না।
– কিছু হইবো না আমার সারদা দেবী। তুমি দেইখো সব ঠিক হইয়া যাইবো। শুনো আমি আইজ একটু শহরে যাইতাছি। এক সপ্তাহ লাগতে পারে আসতে। এরপরই আমি কিছু একটা করমু।
– চইলা যাইবা?
{গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া}
সারদার চোক্ষুদ্বয়ে জলের উপস্থিতি প্রবলভাবে লক্ষণীয় ছিলো সেদিন। বিশ্বজিত যত্ন সহকারে প্রেয়সীর অশ্রুজল ঠোঁটের সাহায্যে শুষে নিলো। বিশ্বজিতের এমন হঠাৎ স্পর্শে কেপে উঠলো সারদা। বিশ্বজিত মুচকি হেসে কপালে, অধরে, গালে আরো বিভিন্ন জায়গায় অধরের স্পর্শ দিয়ে সারদার কাছ থেকে সেদিন বিদায় নেয়। সেদিন বিশ্বজিত কি জানতো এইটা কতবড় একটা ঝামেলায় ফেলে দেবে তাদের!
বিশ্বজিৎ যাওয়ার পরপরই সারদার জন্য বেশ ভালো ঘর থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। তারা দ্রুতই বিয়েটা করিয়ে নিতে চায়। সারদার বয়সও বেশি হয়ে গেছে তাই বাড়ির লোকজন আর দ্বিমত করেনি। বিধবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সারদা। সুন্দরী বিধায় বিয়ে দিতে সমস্যা হবে না ভেবে তার মা কখনো বিয়েতে রাজি হয়নি কিন্তু যতদিন উপলব্ধি হলো মেয়ের বয়স বাড়ছে ততদিনে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসা কমে গিয়েছে। যারাও বা আসতো তারা সারদার যোগ্য ছিলোনা। আজ হঠাৎ এতদিন পরে এমন ভালো একটা প্রস্তাব কেউই ফেলতে চাইলো না তাই একসপ্তাহের মাঝেই শুভ সময় দেখে গোধূলি লগ্নে বিয়ে ঠিক করা হলো। সামনের শুক্রবারই সারদার বিয়ে অথচ তা জানতেও পারলোনা বিশ্বজিৎ। অপরদিকে, বিশ্বজিত যে বাসায় নেই তা সবাই উপলব্ধি করতে পারলো রাতে। কাউকে কিছু না বলে বিশ্বজিতের এভাবে চলে যাওয়া অবাক করলো সকলকেই।
★
গ্রাম থেকে যাওয়ার পর কোনোমত একসপ্তাহ একটা জরুরি কাজ করেই গ্রামে ফিরে এসেছে বিশ্বজিত। বাড়িতে যেতে যেতে বুঝলো, বড়সড় কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে। কিসের অনুষ্ঠান তা ঠাওর করতে পারলোনা বিশ্বজিত। এমন সময়ই দরজায় দেখা গেলো বিশ্বজিতের বড় পিষিকে। বিধবা দের শুভ কাজে অংশগ্রহণের নিয়ম নেই বিধায় সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে।
– পিষি!
– তুই? তুই হঠাৎ কইরা কই চইলা গেছিলি বাজান?
– একটা কাজ পইড়া গেছিলো পিষি তাই তাড়াহুড়ায় কাউরে না জানাইয়াই চইলা গেছিলাম। বাসায় কি কোনো অনুষ্ঠান?
– হুম। আইজ সারদার বিয়া। আমরা তো ভাবছি তুই বুঝি আর আসবিই না।
বিশ্বজিতের মাথা ঘুরতে লাগলো। মাথায় শুধু একটা কথাই বেজে চলেছে। “আইজ সারদার বিয়া।” একটা বাক্য যে এত ভারি হতে পারে তা জানা ছিলোনা বিশ্বজিতের। সে কোনোমত হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো ভেতরে কিন্তু বিশ্বজিত অনেক দেরি করে ফেলেছে। সে যাওয়ার আগ মূহুর্তেই সারদার সিঁদুর দান সম্পন্ন হয়েছে। লজ্জা বস্ত্র দ্বারা তার মুখ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বজিত এক মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। লজ্জা বস্ত্র সরাতেই সারদার চোখ পড়লো বিশ্বজিতের উপর। সাথে সাথেই আখি থেকে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়লো। সারদা যেনো খুব করে বলতে চাইছে, “আরেকটু আগে কেনো এলেনা বিশ্বজিৎ দা?” বিশ্বজিতের চোখের সামনেই একে একে সকল নিয়ম পালন করে কনে বিদায় দেওয়া হলো।
★
বিশ্বজিত দাঁড়িয়ে আছে সারদার শশুড় বাড়ির সামনে। সম্পূর্ণ বাড়ি নিঃস্তব্ধতার স্বীকার। সবাই ঘুমাচ্ছে। আজ সারদার কালরাত্রির রাত। আজকের দিনে বরের মুখ দর্শনও নিষিদ্ধ। কাল হবে বৌভাত আর তারপর ফুলশয্যা। তার সারদা অন্যকারো শয্যাসঙ্গিনী হবে সেটা ভাবতেও পারেনা বিশ্বজিৎ। সে নিজে হাজারো নারীর সাথে রাত কাটাতে পারলেও তার জীবনসঙ্গিনীকে হতে হবে সতী। কি বিকৃত চিন্তাচেতনা! বিশ্বজিত অতি সতর্কতা সহিত ঢুকে গেলো বাড়ির ভিতর। বাইরে গাড়িতে প্রতিমা আছে। একমাত্র প্রতিমাই সব জানতো তাই প্রতিমাকেও সাথে নিয়ে এসেছে বিশ্বজিত। বাড়িটা খুব বড় না বিধায় সারদাকে খুজে পেতে সমস্যা হলোনা। মহিলাটি সম্ভবত সারদার শাশুড়ী যার সাথে এখন সারদা শুয়ে আছে। দরজা বন্ধ ছিলো না বিধায় বিশ্বজিৎ সহজেই ঢুকে গেলো ভিতরে৷ বিশ্বজিতের কাছে ছিলো একটা স্প্রে যার সাহায্য মানুষকে অজ্ঞান করা যায়। বিশ্বজিত সেটা সারদার ঘুমন্ত শাশুড়ীর উপর প্রয়োগ করে দরজার বন্ধ করে দিলো।
– সারদা দেবী। উঠো, তাড়াতাড়ি ওঠো।
বিশ্বজিতের কণ্ঠস্বর পেয়ে দ্রুত ঘুম ভেঙে গেলো সারদার। সে দ্রুত উঠে বসলো,
– তুমি? তুমি এইহানে ক্যান? কেউ দেখলে কি ভাববো?
– আমার সারদা দেবী এইহানে তো আমি কই যামু? আমি আজ তোমারে এইহান থেইকা নিয়াই যামু।
– কেউ দেখলে কেলেঙ্কারির ঘইটা যাইবো।
– কেউ দেখবো না। আমার উপর বিশ্বাস রাখো।
কথাটা বলেই এতক্ষণে সম্পূর্ণভাবে সে সারদাকে দেখলো। শাড়ি পড়েছে মেয়েটা। হাটুর উপর উঠে আছে সেটি। আচলটাও কোনোমত বুকে পড়ে আছে। সারদা এখানো সেটা খেয়াল করেনি। বিশ্বজিতের দৃষ্টি বরাবর নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় মিইয়ে গেলো সারদা। নিজেকে ঢেকে নিলো যথাসম্ভব তবে বিশ্বজিত আর বাধা মানলো না। এতদিন যে নারীর বিশেষ অঙ্গ গুলো সে লুকিয়ে দেখেছে আজ সেই অঙ্গ গুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করলো সে তারই শশুড় বাড়িতে। সারদা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও পারলো না। প্রথম প্রেমিক পুরুষের প্রথম স্পর্শ ঠেলে দেওয়ার সামর্থ তার ছিলোনা। সেও ততক্ষণে জানতে পেরেছে তার শাশুড়ি এখন অচেতন। সকালের আগে ঘুম ভাঙবেনা। তাহলে আর বাধা কিসের?
নিজেদের মধ্যে একান্ত সময় কাটিয়ে সারদাকে নিয়ে বাড়ি থেকে অতি সন্তপর্ণে বেড়িয়ে এলো বিশ্বজিত। গায়ে একটা চাদর পেঁচিয়ে গাড়ি অবধি পৌঁছে গেলো তারা।
– আমরা এখন কি করমু বিশ্বজিৎ দা? এক স্বামী জীবিত থাকলে তো আরেকজনরে বিয়া করন যায়না। আমি তো এহন বিবাহিত আর তাছাড়া তুমি তো আমার,,
– আমরা মুসলিম হইয়া যামু। মুসলিম হইলে এ বিয়ার কোন ভিত্তি থাকবো না আর মুসলিম ধর্মে পিষতুতো বোনরে বিয়া করা যায়।
– কি বলো এইগুলা? আমরা ব্রাহ্মণ হইয়া ধর্ম পাল্টামু? কৃষ্ণ পাপ দিবো।
– সৃষ্টিকর্তা সব এক সারদা। শুধু নাম আর ধর্মের নাম আলাদা। আমরা সবাই এক সৃষ্টিকর্তারই পূজা করি। ইবাদত করি। মোট কথা কে ভগবানে কতটা বিশ্বাস করে ওইডার উপর সব নির্ভর করে।
– কিন্তু?
– কোনো কিন্তু না। তুমি আমারে ভালোবাসো না সারদা দেবী?
★★★
নিজের ঘটনাটি এই অবধি বলে কিছুক্ষণ জন্য থেমে গেলো বিশ্বজিত ওরফে নাজিমুদ্দিন। চারু আর হামিদ এখনো স্তব্ধ। তাদের যেনো বিশ্বাস হতে চায়না এ জঘন্য কাহিনি। এত বড় ধোকা? তাদের অস্তিত্বে এত বড় সন্দেহের চিহ্ন! নাজিমুদ্দিন আবার নিজেই বলতে শুরু করলো,
– ওইদিন আমরা পালায়া গ্রামের ছোট একটা ঘরে ছিলাম। পরেরদিন আমি আর সারদা মুসলিম ধর্মে যাই। কিন্তু ওই সময় বাধে বিপত্তি। পুরা গ্রাম ক্যামনে যেনো জানতে পাইরা যায় আমাগো মুসলিম হওনের কাহিনি। ব্রাহ্মণ হইয়াও ধর্ম পরিবর্তন করা মানে বিশাল এক পাপ করছিলাম আমরা। ধর্ম শুধু আমি আর সারদাই পাল্টাইছিলাম কিন্তু গ্রামবাসী ভাইবা নেয় প্রতিমাও ধর্ম পাল্টাইছে। আমাগো জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে লাগলে একপ্রকার বাধ্য হইয়া আমি সারদার সাথে প্রতিমারেও নিয়া পালায়া আসি। মাইয়াটা আমাগো জন্য বেঘোরে মা*রা যাইবো সারদা হেইডা মানতে পারলো না। সারদারে আইনা আমার বাড়িতে রাখলাম। সবাইরে জানাইলাম আমি বিয়া করছি আর প্রতিমা আমার বইন। যেহেতু আমি বসের ডান হাত ছিলাম তাই বস নিজেই আসে আমার বউরে দেখতে। আমি পাঁচ মিনিটের জন্য একটু বাইরে গেলে বস সারদার লগে অসভ্যতামো শুরু করে। আমি সঠিক সময়ে আসায় সে থাইমা যায়। সারদা যহন আমার কাছে নালিশ করতাছিলো আমার কলিজা ছিড়া যাইতাছিলো। মন চাইতাছিলো বসের হাতটা গোড়া থেইকা কাই*টা দেই। কত্ত বড় সাহস আমার সারদা দেবীর গায়ে হাত দেয়! সেইদিন বসের লগে আমার ঝামেলা বাধে আর আমি তার সাথে কাজ করা ছাইড়া দিলাম। হাতে যে জমানো পয়সা ছিলো ভাবলাম এইসব দিয়া সারদারে বিদেশে পাঠায়া দিমু। সারদা আমারে অনেক ভালোবাসতো। এইসব জানলে ও মানতে পারবো না। কিন্তু তার আগে প্রতিমার কিছু করতে হইতো। ও তো আর মুসলমান হয় নাই যে ওরে মুসলমান কেউর সাথে বিয়া দিমু। পরিকল্পনা কইরা আমি আর সারদা একটা হিন্দু পাড়ায় যাই। ওইহানে নিজেগো ব্রাহ্মণ পরিচয় দেই আর কই প্রতিমা আমার বইন। ওইহানে ভালো আরেকটা ব্রাহ্মণ পরিবার দেইখা প্রতিমার বিয়া দিয়া সারদারে বিদেশে পাঠায়া দিলাম। হাত তহন একেবারে খালি। টাকাপয়সা যা ছিলো সব সারদারে দিয়া দিছিলাম। আমি এক সপ্তাহ থাইকা সব গুছায়া দিয়া আসছি আরেকজন আজের মাইয়া রাখছিলাম সারদার সাথে সবসময় থাকার জন্য। এহন হাতে টাকাপয়সা নাই, নিজেও চলতে পারিনা, সারদারেও কিছু দিতে পারিনা। বসের লগেও কাম করতে যাইনা নিজের জেদে। তারপর একটা চলার রাস্তা খুজতে বড়লোক বাপের মাইয়ারে মোটা অংকের যৌতুক নিয়া বিয়া করি। ওইডা ছিলো মনোরমা। ওই যৌতুকের টাকা দিয়াই তহন আমি চলতাম আর সারদারে টাকা পাঠাইতাম। এরই মাঝে জানতে পারি আমার প্রথম সন্তান আসতে চলেছে। সারদা এক লগে আমার দুই পোলারে জন্ম দিলো। সুখেই চলতাছিলো সব কিন্তু একদিন আমার সুখের সংসার তছনছ হইয়া গেলো। নিজের হাতেই আমি খু*ন করছি আমার সারদা দেবীরে।
– কেনো? তাকে কেনো খু*ন করলেন? সে জানতে পেরে গিয়েছিলো সব?
– না। কামের মাইয়াডারে রাখছিলাম সারদার খেয়াল রাখার জন্য। একদিন ও আমারে জানাইলো, বিদেশে এক প্রতিবেশির লগে সারদার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। বিশ্বাস করতে পারতাছিলাম না। মাইডাটা কিছু ছবি পাঠাইলো তহন। দুনিয়া ঘুরতাছিলো আমার! রাগের মাথায় ওইদিন তাড়াহুড়ো কইরা বিদেশ যাই আর সারদার খু*ন করি তারপর আবার বসের সাথে কাজে লাইগা যাই। কিন্তু পরে জানতে পারলাম কি জানস? আমার সারদা দেবী আমারে ঠকায় নাই। ওই লোকডার আগেই নজর ছিলো আমার সারদার উপর। সারদা লোকটারে সুযোগ দেয় নাই তাই ওই লোক সারদার ওই কামের মাইয়াডার সাথে সম্পর্কে যায় আর তারে দিয়া আমারে মিথ্যা বলায় আর মিথ্যা ছবি বানায়া আমারে পাঠায়। ওইডা জাইনা আবারও বিদেশে যাই আর ওই জানো*য়ার দুইডারে আমি খু*ন করি। পোলা দুইটারে ন্যানির কাছে রাইখা মানুষ করি। এহন ওইহানেই থাকে। কত ভালো আমার পোলারা কিন্তু নিজের ভুলে আমি আমার সারদারে হারাইলাম। আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো তারে বিশ্বাস না করা।
– আপনে তারে কহনো ভালোই বাসেন নাই। ভালো বাসলে তারে অবিশ্বাস করতে পারতেন না। খু*ন করার চিন্তাও মাথায় আনতে পারতেন না। তার কথা নাহয় বাদই দিলাম, বিশটা বছর আমার মায়ের লগে সংসার করার পরেও তার উপর আপনের মায়া পড়লো না। এমন নির্দয়ভাবে হ*ত্যা করলেন আমার মায়েরে। একটা সত্যি কথা কইবেন, আপনে আমারে বা চারুরে কহনো ভালোবাসছিলেন?
– তোর জন্মের পরেই ভাবছিলাম তুই বড় হইলে তোরে আমাগো দিকে টাইনা আনমু। হেইডার জন্য তোর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করছি। ভাবছি আমি যদি তোরে ভালোবাসি তাইলে তুই আমার কথা মানবি কিন্তু সেগুড়ে বালি!
– আর চারু?
– আমার ছয়জন ঔরসজাত সন্তান। তার মধ্যে দুইটা পোলা বৈধ। ওই দুইজনের পরে যেই চাইর জন আছে তাদের মধ্যে আমি চারুরেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসছি। আমার দুই পোলায় আমারে ইংরেজ গো মতো কইরা ডাকে। তুই ডাকছ বাপজান আর আমার আরেক পোলা ডাকে বাজান। আর আরেক মাইয়া আমারে বাপ বইলা স্বীকারই করেনা। আমার থেইকা ওর জন্ম হইলো আর ও অন্য লোকরে বাপ ডাকে। আমারে ঘৃণা করে। কিন্তু চারু! আমার সব পোলাপানের মাঝে আমারে বাবা কইয়া ডাকতো। আহ! কলিজাটা জুড়ায়া যাইতো আমার। কহনো কইতে পারতাম না। কইলেই ওর মায়ায় পইড়া যাইতে হইতো। সবসময় অবহেলা দিয়া আসছি। ওরে নিয়া তো আমাগো অন্য পরিকল্পনা আছিলো। মায়ায় পড়লে আমার ঝামেলা।
হামিদ স্তব্ধ হয়ে রইলো। শব্দভাণ্ডার হারিয়ে গেছে তার। এই কথায় তার কি খুশি হওয়া উচিত নাকি এত বড় ধোকাবাজির জন্য রাগ হওয়া উচিত? চারুও কেমন অনুভূতিহীন। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাবার ভালোবাসা নিয়ে হামিদকে সে হিংসে করতো কিন্তু আজ জানতে পারলো হামিদের চেয়ে বেশি নাজিমুদ্দিন তাকে ভালোবাসতো কিন্তু চারুর মাঝে কোনো পরিবর্তন সাধিত হলোনা। চাওয়া পাওয়া অনেক আগেই হারিয়ে গেছে তার। নাজিমুদ্দিন তাকে ভালোবাসে তাতে কিছুই যায় আসেনা তার। সে হামিদের দিকে ঈশারা করলো নরপিশা*চটার শা*স্তি শুরু করার জন্য। তার শাস্তি হবে ভয়ংকর থেকেও ভয়ংকর আর তা উপভোগ করবে তারই আদরের কন্যা চারুলতা!
হামিদ এগিয়ে গেলো নাজিমুদ্দিনের দিকে। হাতে গরম করা ধারা*লো ছু*ড়ি। হামিদ যত্নসহকারে গালের মধ্যে একটা দাগ কে*টে দিলো। নাজিমুদ্দিন চিৎকার করে উঠলো ছু*ড়ির আঘাতে। হামিদ ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ মুখটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেললো।
– এইডা আমার মা আর সকল মাইয়ার জন্য যাদের আপনে আপনের এই সুন্দর চেহারা দিয়া ফাসাইছেন।
নাজিমুদ্দিন ভয়ংকর ভীতি যুক্ত চক্ষুদ্বয় নিয়ে তাকিয়ে রইলো হামিদের দিকে। তার চিৎকারে আশেপাশের মানুষের ঘুম ভেঙে যেতে পারে তাই হামিদ প্রত্যেকের মতো নাজিমুদ্দিনের জিহ্বা কে*টে ফেললো। সাধারণভাবে নয় মোটেও। প্রথমেই জিহ্বায় পেরেক ঠুকলো চার থেকে পাঁচটা। তারপর ধীরে ধীরে একটু একটু করে জীবটা কাট*লো চার টুকরো করে আর শেষবার হাত দিয়ে সেটাকে টেনে একেবারে গলা থেকে বের করে আনলো। নাজিমুদ্দিন রুদ্বশ্বাসে চিৎকার করে উঠলো।
– এখনই এত চিৎকার? মাত্র তো শুরু প্রিয় জন্মদাতা। আপনার পরের বউকেও এভাবে খু*ন করেছিলাম। তার কলিজা আর মাংস দিয়েই আপনাকে বিরিয়ানির রান্না করে খায়িয়েছি আমি।
নাজিমুদ্দিন ভয়ার্ত চোখে তাকালো চারুর দিকে। এতক্ষণ সম্পূর্ণ নেশা উবে গেছে তার। হামিদ এইবার খুব জোরে হাতুড়ি দিয়ে আঘা*ত করলো নাজিমুদ্দিনের হাতে। এতটাই জোরে যে হাত থেকে রক্ত পড়তে শুরু করলো।
– এইডা আমাগো সাথে ধোকা করনের শাস্তি। এই হাত দিয়াই তো একের পর এক পাপ করছেন আপনে তাই না?
নাজিমুদ্দিন কিছু বলতে পারলোনা। সে সামর্থ্য কিছুক্ষণ আগেই হামিদ তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। অবশ্য কথা বলার সামর্থ্য থাকলেও হয়তো সে মাফ চাওয়া ছাড়া আর কিছু বলতে পারতোনা। হামিদ নিজের ইচ্ছামত নাজিমুদ্দিনের দু হাতে হাতুড়ি দিয়ে কারুকার্য চালাতে লাগলো। এইবার হামিদ নাজিমুদ্দিনের হাতের নক তুলতে শুরু করলো একটা একটা করে। এতে অবশ্য চারুও সাহায্য করলো হামিদকে। নক তোলার সময় নাজিমুদ্দিনের চিৎকার বেশ ভালোই অনুভব করছিলো চারু ও হামিদ। হামিদ এইবার একটা পেরেক আরেকটা হাতুড়ি নিয়ে নাজিমুদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পেরেক ঠুকতে শুরু করলো। জিহ্বা হীন নাজিমুদ্দিন হাজার চেষ্টা করেও কিছু বলতে সক্ষম হলো না। হামিদ যেভাবে পেরেক গুলো লাগিয়েছিলো চারু একই সিরিয়ালে পেরেক গুলো খুলতে শুরু করলো আর সাথেই বাড়তে থাকলে নাজিমুদ্দিনের চিৎকার।
– চারু!
– হুম।
– লঙ্কাগুড়া লাগাবি না তারে?
– অবশ্যই। তাকে আমি লঙ্কা গুড়ো দিয়ে স্নান করিয়ে ছাড়বো।
– তাহলে শুরু কর।
হামিদ লঙ্কা গুড়োটা এগিয়ে দিলো চারুর দিকে। চারু উপর থেকে ছড়িয়ে দিলো সেটা। এইবার হামিদ একটা ড্রিল মেশিনের সাহায্যে নাজিমুদ্দিনের দু পায়ে দুটো ফুটো করলো। ব্যথায় নাজিমুদ্দিনের অজ্ঞান হওয়ার দশা। হামিদ একটা হাড়িতে জল গরম করে সেটাকে নাজিমুদ্দিনের মুখে ছুড়ে মারলো। নাজিমুদ্দিনের জ্ঞান ফিরলেও মুখ ঝলসে গেলো। আগেও ক্ষ*ত থাকার কারণে নাজিমুদ্দিনের অবস্থা হলো করুন। অবশ্য হামিদ আর চারুর মাঝে বিন্দুমাত্র করুনা ছিলো না। এইবার হামিদ আবারও ছু*ড়িটা গরম করে নিলো এবং সেই গরম ছু*ড়িটাই সরাসরি নাজিমুদ্দিনের চোখে ঢুকিয়ে দিলো। চারুও একই কাজ করলো নাজিমুদ্দিনের অপর চোখের সাথে। ছু*ড়িটা তখনও গরম ছিলো। হামিদ নাজিমুদ্দিনের দুটো কানই সেই গরম ধা*রালো ছু*ড়ির সাহায্যে কেটে ফেললো। নাকটাকে পাথরের সাহায্যে থেতলে ফেললো। একে একে নাজিমুদ্দিনের সকল দাঁত তুলে ফেলতেও ভুললো না।
– এখন আর না। আরো কাজ বাকি আছে আমাদের।
চারু নিজের হাতে ছু*ড়িটা তুলে নিলো। নাজিমুদ্দিনের সারা শরীরে এমনভাবে আঘা*ত করলো যাতে তার ব্যথা হবে ঠিকই কিন্তু সে মারা যায়না। অতঃপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! চারু আবারও ছু*ড়িটা হাতে তুলে নিয়ে আঘাত করলো আর তারপর হাত ও ছু*ড়ির সাহায্যে বের করে আনলো নাজিমুদ্দিনের কলিজা।
{গল্পের আসল লেখিকা শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া}
এতক্ষণ চারুর কোনো কষ্ট হচ্ছিলো না কিন্তু যখনই কলিজাটা বের করে আনলো তার ভেতরটা কেমন করে উঠলো। যতই হোক, লোকটা তার জন্মদাতা ছিলো। কিছুক্ষণ আগেই ও জানতে পেরেছে বাবা সম্মোধন করা এই লোকটি আসলেই তাকে ভালোবাসতো। অকারণেই বুকটা ভারি হয়ে এলো। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। এই লোকটাই ওর যন্ত্রনাময় জীবনের সবচেয়ে বড় কারণ তাও তার মৃ*ত্যু মানতে চারুর কষ্ট হচ্ছে। যতই হোক নাজিমুদ্দিন তার বাবা ছিলো। খু*ন করা এই ব্যক্তিগুলোর মধ্যে চারুর যদি কারোর প্রতি মায়া লেগে থাকে তবে সেটা নাজিমুদ্দিনের জন্য লাগতো। চারু অনুভব করলো তার দুচোখ থেকে জল পড়ছে। চারু আটকাতে চাইলো সে জল কিন্তু সেটা থামলো না। অনর্গল গড়িয়ে পড়তে লাগলো চোখ থেকে। নাজিমুদ্দিনকে ঘৃণা করেও কেনো তার মৃ*ত্যুতে চারুর চোখে জল? তবে কি মনের কোণে এখনও তার জন্য ভালোবাসা ছিলো? আদেও কি সত্যিই সেটা ভালোবাসা?
_________________________
– নাজিমুদ্দিন ওরফে সুবহানের আসল নাম তাহলে বিশ্বজিৎ?
– হুম।
– আপনি আমাকে আগে এইটা বলেন নি বেলিফুল। কেনো?
– বলতে ইচ্ছা হয়নি।
সাজিদ হতাশ হলো। কে জানে এই মেয়ে আর কতকিছু তাকে বলেনি।
– সাজিদ আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
– করুন।
– পুলিশেরা এখনো আমার মতো এমন ভয়ংকর আসামী খুজছেনা কেনো?
বিঃদ্রঃ আজকের টার্গেট ১k, সবাইকে মেহেদী দিয়ে দেওয়ায় আমার হাতে প্রচুর ব্যথা। গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। নাজিমুদ্দিনকে মন মতো শাস্তিও দিতে পারলাম না। রিচেকও করলাম না। এত কষ্টের মাঝে যদি আপনাদের রেসপন্স না আসে খুব খারাপ লাগে। লিখি তো আপনাদের জন্যই।
_______________________
To Be Continued…
®শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া