#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১১
লিয়া সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত শুনে ওর আব্বু আম্মু ভীষণ খুশি হয়।
আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানায় ।
মিজান সাহেব বলে,
আমি ভিতরে গিয়ে মেয়েটাকে একটু দেখে আসি। তুমি এখানেই বসো।
না, আমিও যাব,
আমাকেও তোমার সাথে মেয়ের কাছে নিয়ে চলো।
না , তুমি পরে যেও_
তুমি ওর কাছে গেলে কান্নাকাটি করো তাতে অন্য রোগীর সমস্যা হয়!
আর তারপর ভিতর থেকে বের করে দেয়।
তুমি পরে যাবে, আমিই তোমাকে নিয়ে যাবো।
মন খারাপ করো না।
মিজান সাহেব ভিতরে গিয়ে দেখে লিয়ার বেডের পাশে ডিউটি ডক্টর রা আর নার্সরা দাড়ানো।
এই অবস্থা দেখে সে ঘাবরে যায়।
লিয়ার কিছু হলো নাতো?
সামনে যেতেই একজন সিস্টার বললো, আপনার মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে। ডক্টর সেটাই চেক করছে।
আপনি বাইরে অপেক্ষা করেন, ডক্টর আপনাকে ডাকলে তখন আসবেন।
মিজান সাহেব বাইরে চলে এলো।
লিয়ার মা জিজ্ঞেস করলো, চলে এলে যে, আমার লিয়া কেমন আছে?
সে হেসে দিয়ে বললো, আল্লাহ আমদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।
আমার লিয়ার জ্ঞান ফিরেছে।
দুজনেই আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শোকরিয়া জানালো।
মিজান সাহেব তার স্ত্রীকে বলে, আমি নামাজ পরে আসি । ভিতর থেকে ডাকলে তুমি ভিতরে যেও।
আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
লিয়ার মাও একপাশে বসে ওয়াক্তের নামাজের পর দুই রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করলো।
মিজান সাহেব নামাজ শেষে ফিরে এলো।
তখনও ভিতর থেকে ডাক পড়েনি ।
তার একটু পর সিস্টার একটা ওষুধের স্লীপ নিয়ে এলো বললো, এক্ষুনি এই ইনজেকশনটা দুটা নিয়ে আসেন।
এখানে দুটা ইনজেকশনের নাম লেখা আছে, দ্রুত গিয়ে নিয়ে আসেন।
আমার মেয়ের কি অবস্থা? নতুন কোন সমস্যা হয়নি তো?
আপনার মেয়ে
ভাল আছে, জ্ঞান ফিরেছে,
এখন এই ইনজেকশন দুটা পুশ করতে হবে।
মিজান সাহেব ইনজেকশন কিনতে চলে গেল।
ইনজেকশন এনে নার্সের হাতে ভিতরে পাঠিয়ে দিলো।
এক ঘণ্টা পরে ওদের ডাক পরলো ভিতরে যাবার।
মেয়ের কাছে গেলো মিজান সাহেব আর তার স্ত্রী।
লিয়া চুপচাপ শুয়ে আছে।
অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেয়া হয়েছে।
স্যালাইন চলছে তখনও।
লিয়া অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।
ওর আম্মু গিয়ে লিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
আমার মানিক, এখন কেমন আছিস?
এই কাজ করার আগে আমাদের কথা তোর একবারও মনে হয়নি?
আমরা কি তোকে ভালবাসি না!
বলছে আর কাদছে ।
মিজান সাহেব স্ত্রীকে বলে, আঃ তুমি থামবে, এসব কথার সময় এটা না।
ও একটু সুস্থ হলে যত খুশি কথা বোলো ওর সাথে।
কিন্তু এখন না।
লিয়ার আব্বু ওর কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
কপালে চুমু দিয়ে আদর করলো মেয়েকে।
লিয়ার সামনে দাড়িয়ে দুই কান ধরে বলে,
সরি মা, ক্ষমা করে দে আমাকে। আমার সব ভুলের জন্য সরি।
লিয়া ওর আব্বুকে দেখে দুই হাত দিয়ে আব্বুর হাত আকড়ে ধরে।
আব্বুর কান ধরা দেখে হেসে ফেলে।
খুব মলিন সে হাসি ।
পরক্ষনেই কেদে ফেলে, আব্বুর কান থেকে হাত নামিয়ে দিয়ে বলে, আমাকে কেন বাঁচালে আব্বু,
আমি বাঁচতে চাই না।
এমন করে বলিস না মা। তুই যে আমার কলিজার টুকরা, নয়নের মনি ।
তুই না থাকলে আমিও এই দুনিয়ায় বাঁচতে চাই না।
তুই তো জানিস আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তোকে।
আমার একদিকে শুধু তুই আর বাকি সব আরেক দিকে।
ডক্টরের সাথে কথা বলার জন্য ডক্টরের টেবিলে গেল।
ডক্টর বললো, আপনার মেয়ে এখন ভালো আছে তবে বেশ দুর্বল,
অনেক বড় একটা ধকল গেছে ওর ওপর দিয়ে।
মিজান সাহেব বললো,
আমি ওকে বাসায় নিয়ে যেতে চাই।
ডক্টর চোখ বড় বড় করে বলে,
কি বলেন ,মাত্রই জ্ঞান ফিরলো।
এটা কিভাবে সম্ভব ।
একজন ডক্টর হিসেবে আমি আপনাকে এই অনুমতি দিতে পারি না।
ডক্টর আপনি সব ব্যাবস্থা পত্র আমাকে বুঝিয়ে দেন,
আমি নিজ দায়িত্বে সেভাবে কেয়ার নিবো।
বুঝার চেষ্টা করেন, আমার মানসম্মান জড়িয়ে আছে এখানে।
ও ছেলে মানুষি করে যে কাজটা করছে, সেটা তো কোন ভাল কাজ না ।
খুবই লজ্জাজনক কাজ।
আমার আত্মীয় স্বজন, পারা প্রতিবেশিরা জানতে পারলে আমি সবার কাছে ছোট হয়ে যাবো। দশজন দশ রকম কথা বলবে, কেউ কেউ বাজে কথার কানাঘুষা করবে। তাতে আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে।
–
–
ডক্টর বললো, সবই বুঝলাম_
ঠিক আছে নিয়ে যান,
তবে ডিসচার্জ অন রিস্ক বন্ড সই করে নিতে হবে।
এই রোগীকে এইভাবে রিলিজ দেয়ার কোন অনুমতি নেই আমাদের।
ঠিক আছে আমি সিগনেচার করে নিজ দায়িত্বে নিয়ে যেতে চাই।
আপনি ব্যাবস্থা করেন প্লিজ।
ঠিক আছে আমরা ব্যাবস্থা করছি ।
–
–
লিয়ার জ্ঞান ফেরার পর হসপিটাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ইনফর্ম করছে।
পুলিশ এসে লিয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করলো।
জিজ্ঞেস করলো কেন সে আত্মহত্যা করতে গেছিলো।
লিয়া শুধু বললো, আব্বু আম্মুর ওপর রাগ করে ঘুমের ওষুধ খেয়েছি।
এটা কোন কথা হলো, তোমরা আজকালকের ছেলে মেয়েরা অনেক বেশি ইমোশনাল।
বাবা মায়ের মান ইজ্জত নিয়ে খেলো ।
ভবিষ্যতে যদি আর এমন ঘটনা ঘটে তবে তোমাকে কঠিন সাজা পেতে হবে, মনে রেখো।
লিয়ার আব্বু আম্মুর সাথেও তারা কিছু কথাবার্তা
বলে পুলিশ ইন্সপেক্টর তার টিম নিয়ে চলে গেল।
–
–
ডাক্তারের কাছে শুনে নিলো কি কি করতে হবে।
আর মেডিসিনের টাইম টেবিল জেনে নিলো।
আপনার মেয়ে আপনি নিজ দায়িত্বে নিয়ে যেতে চাইছেন, নিয়ে যান । কিন্তু খেয়াল রাখবেন ও যেনো মানসিক ভাবে উত্তেজিত না হয়।
হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
আর প্রপার রেস্টের ব্যাবস্থা করবেন।
মেডিসিন গুলো টাইম টু টাইম দিবেন।
–
–
তারপর লিয়াকে একজন আয়া হুইল চেয়ারে করে গাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসলো।
লিয়ার বাবা আয়াকে
কিছু টাকা বকশিস দিলো।
আয়া লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, ভালো থাইকো মা, বাপ মায় যেমনে কয় হেমনেই চইলো।
মা বাপের চেয়ে আপন এই দুনিয়ায় আর কেউ নাই।
আয়া টাকা নিয়ে, হুইল চেয়ার নিয়ে চলে গেল।
–
–
লিয়ার মা ওকে ধরে গাড়িতে বসালো, পাশে নিজে বসলো।
ওর বাবা গাড়ি ড্রাইভ করে বাসার দিকে রওনা দিলো।
বাসায় পৌছতে ওদের অনেক রাত হয়ে যায়,
বাসায় পৌছে লিয়ার আম্মু ওকে ওর ঘরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
নিজেও ওর পাশেই
বসে থাকে।
মনে মনে ভাবতে থাকে ওকে কিছুতেই
একা রাখা যাবে না ।
কাউকে না কাউকে সর্বক্ষণ ওর পাশে
থাকতে হবে। আবার কি করে ফেলে কিছুই বলা যায় না।
পাশাপাশি ভাবতে থাকে কি এমন ঘটছে যে ওকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হইছে,
বিয়ের ঘটনার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। যা হইছে তা হঠাৎ করেই হইছে,
সেজন্য রাগ করতে পারতো, ঝগড়া করতে পারতো, ভাঙচুর করতে পারতো কিন্তু তা না করে আত্মহত্যার মত কঠিন সিদ্ধান্ত কেন নিলো।
কোনভাবেই হিসেব মিলাতে পারছে না ।
–
লিয়ার দাদু ওর ঘরে আসে ওকে দেখতে।
লিয়ার হাত ধরে কেদে ফেলে।
এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত তুই কিভাবে নিলি দাদু ভাই?
তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা কি করতাম।
আত্মীয় স্বজনদের কাছে কত ছোট হয়ে যেতাম।
নতুন কুটুমরাই বা আমাদের কি বলতো!!
আমার কোন ভুল হলে আমাকে ক্ষমা করে দে দাদু।
লিয়ার বাবা তাড়াতাড়ি এসে উনাকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যায় সেখান থেকে।
লিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে বাবাকে বলে,
বাবা ওর সাথে এখন এইসব কথা বলা যাবে না, ডাক্তারের নিষেধ।
অনেক যুদ্ধের পর ও জীবন ফিরে পাইছে, ওর শরীর মন দুইই খুব দুর্বল।
যেখানে মৃত্যুই অবধারিত ছিল, আমাদের সবার দুয়ায় আর কান্নায় আল্লাহ ওকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
ডাক্তার ওকে ছাড়তে চায়নি, আমি জোর করে বন্ড সই দিয়ে নিয়ে এসেছি।
তাই মানসিক আঘাত পায় এমন কথা এখন বলা যাবে না।
–
–
ওদিকে উদয় লিয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।
মনে মনে লিয়ার নাম দিছে পিচ্চি বউ।
আমার পিচ্চি বউ কি এখনও তার মামার বাসা থেকে ফেরেনি?
সে নিজেই আবার লিয়ার নাম্বারে কল করলো। এখনও ফোন বন্ধ।
কিন্তু কি করি আমার যে এখন পিচ্চির সাথে কথা বলতে মন চাইছে।
আমি যে ওর মায়ায় বাঁধা পড়েছি।
আমি আমার পিচ্চি কে অনেক ভালবেসে ফেলছি। কিন্তু এতো অল্প সময়ে এতো ভালবাসা হলো কিভাবে?
যাকে আগে মাত্র একদিন দেখছি তার জন্য মনের মধ্যে এতো টান অনুভব কেন করছি?
হয়তো আল্লাহর পবিত্র কালাম পড়ে, তিনবার কবুল বলে বিয়ে করছি, তাই হয়তো এতোটা মনের টান ফিল হচ্ছে ।
অস্থিরতা কাটানোর জন্য মোবাইলে সেভ করা এনগেজমেন্ট আর বিয়ের ছবিগুলি
দেখতে বসে।
বিয়ের দিন, রিমি আর ওর ছোট ভাই উচ্ছাস তুলেছিল ছবি গুলি।
রিমির মোবাইলের ছবি তো আগেই নিয়েছে। এবার উচ্ছাসের তোলা ছবি গুলি নিয়ে নিলো।
এনগেজমেন্টের ছবি দেখে আর সেই মুহূর্তটায় হারিয়ে যায়। মুচকি মুচকি হাসছে। ছবির ওপর পিচ্চিকে ছুয়ে অনুভব করে। ছবিটায় চুমু খায় আর বলে আমার পিচ্চি বউ।
ওর কান্নার কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ও এতো বেশি কেদেছিল যে চোখ দুটো আর মুখটা ফুলে একাকার হয়ে গিয়েছিলো।
আমার কাছে আসার পড় তোমাকে কোনদিন কাদতে দিবো না।
এটা আমার প্রমিজ
তোমার কাছে।
আমার ভালবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবো।
আবার ছবি দেখায় মনযোগ দেয়।
বিয়ের শাড়ি গহনা পড়া ছবিটা দেখে আর চুমু খায় ছবিটার ওপর। বলে পিচ্চি বউটা যেনো পুতুল একটা।
এতো কিউট কেন তুমি, আমার পিচ্চি বউ, আমার বাচ্চা বউ।
মনে মনে ভাবে কাল অফিস ছুটির পর কি যাব বউটাকে দেখতে?
আবার নিজেই জবাব দেয়, না, ওই বাড়ি থেকে নিতে না এলে যাওয়াটা ঠিক হবে না। লুচু ভাবতে পারে।
ফোনে কথা
বলাটাই রাইট ওয়ে।
কিন্তু মহারানীর ফোন তো বন্ধ।
মোবাইলটা অন করো আমার জান।
আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই, অনেক কথা।
————
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(চলবে)