#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১৩
বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন উদয় তোর স্বামী।
ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী বিয়ে হইছে।
ধর্মমতে সে এখন তোর স্বামী। এই বিয়ে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারোই নেই।
স্বামীকে ভক্তি শ্রদ্ধা করা, সম্মান করা, ভালোবাসা, তার প্রাপ্য অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত না করা এখন তোর কর্তব্য।
–
–
এখন ওকে খুশি রাখাও তোর দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
কাউকে খুশি করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।
একটু সম্মান, একটু শ্রদ্ধা, একটু ভালো আচরণ, একটু ভালোবাসাই যথেষ্ট।
আর একটু সম্মান করলে, একটু শ্রদ্ধা করলে, একটু ভালো আচরণ করলে, একটু ভালবাসলে তুই ছোট হয়ে যাবি না।
বরং উদয় খুশি হলে আমরা সবাই খুশি হবো।
দেখবি সবাই যখন খুশি হবে তখন তুই নিজেও খুশি হবি।
একসময় ধীরে ধীরে ওর জন্য তোর মনে মায়ার জন্ম হবে। ভালো লাগার জন্ম হবে।
তারপর সেই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার জন্ম হবে।
আমি তোর মা, জগতে আমি তোর সবচাইতে বেশি ভালো চাই। আমার কথা শোন উদয় খুব ভালো ছেলে। ওর সাথে তুই খুব ভালো থাকবি,
সুখে থাকবি।
ওকে একটু সময় দে, ওর সাথে ফোন করে গল্প করে দেখ ও কেমন। ও তোকে কল করছিল, তোর ফোন বন্ধ ছিল।
তাই ল্যান্ড ফোনে কল করছিলো তোর সাথে কথা বলার জন্য।
রিয়া ফোন রিসিভ করছিল, বলছে তুই আমার সাথে তোর মামার বাসায় গেছিস।
আমি বলি কি, তুই
ওকে একটা কল কর।
এখন তোর উচিত ওকে কল করা।
একটু কথা বলা।
না হলে মাইন্ড করতে পারে, মনে কষ্ট নিতে পারে।
কারো মনে কি কষ্ট দেয়া ঠিক?
কারো মনে কষ্ট দিতে নেই।
এতে আল্লাহ নারাজ হন।
–
আচ্ছা, তুমি যখন বলছো তখন আমি কল করবো।
কিন্তু কি কথা বলবো! ভেবে পাচ্ছি না।
চিনি না, জানি না,
কিভাবে শুরু করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।
তাও আম্মুকে বললাম, তুমি যাও।
যেতে বলছিস, যাচ্ছি কিন্তু কথা দে
আমাকে, আর কোন খারাপ চিন্তা মনে আনবি না।
–
না আম্মু আর কোন খারাপ চিন্তা মনে আনবো না।
এখন থেকে তুমি যা বলবে তাই করতে চেষ্টা করবো।
কথা দিলি তো!
হুম তোমাকে কথা দিলাম।
লিয়ার মা ঘর থেকে চলে গেল।
লিয়া উদয়ের নাম্বারে কল দিতে গিয়েও দিলো না। ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে দুই হাটুর মাঝে মাথা রেখে নীরবে অশ্রু ঝরাতে লাগলো।
উদয় তখন অফিসে। কাজে ঠিকমত মন বসাতে পারছে না। কেমন যেনো একটা অস্থিরতা কাজ করছে বুকের ভিতর। বারবার পিচ্চি বউটার কথা মনে পড়ছে। একটু দেখতে ইচ্ছে করছে।
লিয়া উদয়ের নাম্বারে কল করতে গিয়েও করে নি। কি কথা বলবে, যাকে সে চায় না, পছন্দ করে না, তার সাথে কি কোন কথা বলা যায়? ভাগ্য তাকে কোথায় নিয়ে দার করিয়েছে।
কান্না ছাড়া আর কিছুই করার নেই। দু চোখ ভেসে যায় লোনা জলে।
আব্বু আম্মুর সম্মান রক্ষা করতে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে উদয়কে কল দেয়ার জন্য আবারও ফোন হাতে নিলো। এবারও পারলো না ফোন করতে। অবশেষে ফোনটা সুইচড অফ করে দিলো।
আল্লাহ আমার অনিচ্ছায় করা গুনাহ মাফ করে দেন।
আমি জিয়ানের সাথে করা ওয়াদা ভঙ্গ করছি।
আপনিতো জানেন আল্লাহ, এখানে আমার কিছুই করার ছিল না।
আমি ছিলাম সম্পূর্ণ অসহায়।
আব্বু আম্মুর মান সম্মান রক্ষা করতে
আর তাদের খুশি করতে আমি চিরদিনের জন্য আমার ভালোবাসাকে গলা টিপে হত্যা করলাম।
আমার ভালোবাসাকে চিরদিনের দূরে সরিয়ে দিলাম। এই ছিল আমার ভবিতব্য।
–
–
আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন জিয়ান। আমি হেরে গেলাম।
আমি আপনার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারলাম না।
আপনার লিয়া আজ চিরদিনের জন্য পর হয়ে গেলো। কিন্তু মন থেকে আপনাকে আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না।
আমার মনের মনি কোঠায় শুধু আপনিই থাকবেন।
–
–
উদয় নিজ মনেই বলে সোনা বউ আমার, বলতো কি করে তোমার কাছে যাই?
আমি যে আর পারছি না। কি যে ছটফট করে কাটে আমার সময় সেটা তুমি যদি জানতে।
আমি তোমাকে খুব মিস করছি।
আজকেও যদি তোমার ফোন বন্ধ পাই তাহলে অফিস ছুটির পর তোমাদের বাসায় চলে যাবো। লাজলজ্জার ধার ধারি না আমি।
আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। আমি তোমাকে খুব
ভালোবেসে ফেলেছি।
তোমার কাছ থেকে দূরে থাকা অসম্ভব।
কেমন করে এত ভালবেসে ফেললাম আমি জানি না।
মনে হয় তোমার সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক।
দীর্ঘ দিনের পরিচয় ।
তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।
মনটা খুব ছটফট করছে।
তুমি আমাকে ডাকো না তোমার কাছে। আমার পিচ্চি বউ, সোনা বউ।
আমি তোমার কাছে আসতে চাই । একা একাই বিড়বিড় করে চলেছে উদয়।
লিয়ার নাম্বারে কল করলো উদয়। ফোন বন্ধ পেলো। বিরক্ত হলো খুব। তারপর ল্যান্ড লাইনে কল করলো।
ফোন ধরলো আফরোজা।
শ্বাশুড়ি মাকে সালাম দিয়ে তার সাথে কুশল বিনিময় করে এদিক ওদিক নানান কথা বলতে লাগলো। লজ্জায় বলতে পারছে না যে লিয়াকে ফোনটা দেন।
আফরোজা নিজেই বুঝতে পেরে বললো, তুমি লাইনে থাকো আমি লিয়াকে ডেকে দিচ্ছি।
উদয় যেনো হাপ ছেড়ে বাঁচলো। মুরুব্বিদের সাথে কথা বলতে কেমন যেনো সংকোচ হয়। দম বন্ধ বন্ধ লাগে। তারপর ইনী হলেন শাশুড়ি মা।
আফরোজা লিয়ার ঘরে গিয়ে লিয়াকে বললো, কিরে তুই উদয়কে ফোন করিসনি?
আমি এতো করে বুঝিয়ে বললাম তোকে।
আম্মু আমি কল করতে চেয়েছি কিন্তু কোন কথা খুজে পাইনি। কি কথা বলবো তার সাথে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুই বসার ঘরে যা, উদয় ফোন করেছে, লাইনেই আছে।
তুমি যাও আমি আসছি।
আমার সাথেই চল, ছেলেটা ফোনের ওপারে অপেক্ষা করছে।
যাচ্ছি তুমি যাও।
লিয়া মনে মনে ভর্ৎসনা করে বললো আস্ত বেহায়া একটা লোক। মাত্র তিন চারদিন হলো বিয়ে হইছে আর কি শুরু করছে। অসভ্য একটা লোক। এমন মানুষ কি করে ভালো হতে পারে। এই ব্যাটা তো লুচু দ্যা গ্রেট। প্রতিদিন ফোন দিয়ে যাচ্ছে। কিসের এতো ব্যাকুলতা তার।
ফোন ধরে হ্যালো বলে সালাম দিলো।
আর ওপাশ থেকে শুরু হলো ভালোবাসার প্যানপ্যানানি। শুনতে অসহ্য লাগছে। বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি।
ইচ্ছে করছে ফোনটা ঠাস করে রেখে দেই। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে তেমন কিছুই করলাম না।
সব কথায় হু হ্যাঁ করে জবাব দিচ্ছি।
উদয় বললো, আমি এতো কথা বলছি আর তুমি একটা কথাও বলছো না কেন?
কিছু তো বলো।
আমি তোমার কথা শুনতে চাই।
কি বলবো, বুঝতে পারছি না।
আপনি বলেন আমি শুনছি।
এই বউ চলো না কালকে কোথাও ঘুরতে যাই। যাবে আমার সাথে?
তুমি যদি বলো যাবে, তাহলে অফিস থেকে ছুটি নিবো।
না, কাল না।
অন্য কোনদিন যাবো।
তোমার গলা এতো ধরা ধরা লাগছে কেন?
তুমি আজকেও কেঁদেছো? সত্যি করে বলো। একদম মিথ্যা বলবে না।
না, আমি কাদছি না।
সত্যিই বলছি
মাথাটা একটু ধরেছে। আর কোন কিছু না।
আবার শুরু হলো ঘ্যানঘ্যান। জানো, তোমার কথা মনে হলে, তোমাকে দেখতে ইচ্ছা হলে, আমি আমাদের বিয়ের ছবি নিয়ে বসে যাই তোমাকে দেখতে।
তুমি দেখেছো আমাদের বিয়ের ছবি?
কোন কোন ছবি তোমার ভালো লেগেছে বলতো!
যেই ছবি গুলি তোমার ভালো লেগেছে সেগুলি আমার হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিও।
আচ্ছা পাঠিয়ে দিবো।
পরে কথা বলবো, এখন রাখি।
লিয়া বললো,
আপনি এখন কাজ করেন।
আপনি তো অফিসে তাই না?
হুম, আমি অফিসে।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি অফিস ছুটির পর তোমাকে কল দিব। তোমার তো মাথা ব্যাথা, তুমি একটু ঘুমিয়ে থাকো।
তোমার সাথে কথা বলতে পেরে আমি খুব খুশি হইছি।
থ্যাংকস এ লট আমাকে এই খুশিটা দেয়ার জন্য।
তোমার ফোন বন্ধ কেন?
ফোনে চার্জ দিতে মনে নেই। তাই কখন বন্ধ হয়েছে জানি না।
রাতে কিন্তু আমি কল করবো। অনেক কথা বলবো তখন। তুমি এক্ষুনি ফোনে চার্জ দিয়ে রাখো। আর ফোন সবসময় অন রাখবে। বুঝলে?
হুম রাখবো।
–
–
আমিতো লোকটাকে দেখিনি । কার সাথে আমার বিয়ে হইছে, সে দেখতে কেমন আমি কিছুই জানি না।
তাই রিয়াকে ডেকে বললাম, তোরা আমার বিয়ের ছবি
তুলিসনি?
রিয়া বললো, কি বলো কতো ছবি তুলেছি। অনেক অনেক ছবি তুলেছি তোমার বিয়ের।
কোথায় সেগুলি?
আম্মুর মোবাইল দিয়ে তুলেছি।
সব ছবি আম্মুর মোবাইলে সেভ করা আছে।
যা নিয়ে আয়, আমি দেখবো।
রিয়া আম্মুর ফোন এনে দিলো।
লিয়া সবগুলি ছবি নিজের ফোনে নিয়ে নিল।
তারপর বললো যা আম্মুর ফোন দিয়ে আয়।
লিয়া ছবিগুলি দেখছে আর সেই কষ্টের মুহূর্ত গুলি মনে করছে। ছবিতে মনোযোগ নেই ওর।
ও চলে গেছে সেই কষ্টের মুহূর্তগুলোর কাছে।
মুহূর্তেই নিজের সাজানো দুনিয়াটা তছনছ হয়ে গেল।
কি ভাবলাম আর কি হলো।
মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক।
নিয়তির কি করুন পরিহাস।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(চলবে)