#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-২৭
দুই বছর পর জিয়ান দেশে ফিরে এসেছে। সেমিস্টার ফাইনালের পর ছোট্ট একটা ভেকেশনে। মাত্র বারো দিনের ছুটি। তের নাম্বার দিন ক্লাস অ্যাটেন্ড করতে হবে।
.
শুধুমাত্র লিয়ার কোন খোঁজ পাচ্ছে না বলেই দেশে এসেছে। নাহলে এতো অল্প ছুটিতে সে আসতো না।
.
দীর্ঘদিন যাবত সে লিয়ার নাম্বারে ট্রাই করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই লিয়ার সাথে কন্টাক করতে পারছে না।
লিয়ার কোন খোঁজ পাচ্ছে না। বহুদিন ধরে ফেইসবুকেও এক্টিভ না সে। ফেইসবুক ডিয়েকটিভেট করা। ফোন বন্ধ। লিয়া নিজে থেকেও কোন ফোন করেনি জিয়ানকে। কোনরকম যোগাযোগের চেষ্টা করেনি সে।
.
জিয়ান নিজেও যে কল করবে সে রাস্তাও বন্ধ। লিয়ার ফেইসবুক একাউন্ট আর ওর ফোন নাম্বার ছাড়া সে আর কিছুই যানে না। অন্য কোন পরিচিত কারো ফোন নাম্বারও জানে না সে, যার মাধ্যমে লিয়া পর্যন্ত পৌঁছুতে পারবে।
দেশে ফিরে এসে হন্যে হয়ে লিয়ার খোজ করছে।
ফোন করছে, নট এভেইলেবল বলছে, বারবার কল দিয়েই যাচ্ছে, পাচ্ছে না। ও এখন পাগলপ্রায়।
কিভাবে আমি লিয়া পর্যন্ত পৌঁছবো। বাসাতো চিনি, সেখানে যাওয়া কিছুতেই ঠিক হবে না।
.
লিয়া একবার বলেছিল কোনভাবেই যেনো ওদের সম্পর্কের কথা কেউ না জানে, জানলে ওর সমস্যা হবে। পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে, না হয় বিয়ে দিয়ে দিবে। এই ভয়ে সে ওদের বাসার আশেপাশেও যায়নি।
আমার করা ভুলে যদি লিয়ার কোন সমস্যা হয়। ওর কোন সমস্যা হতে দেয়া যাবে না। আর আমি সেটা চাইও না। শুধু একটু খোঁজ চাই আমার প্রিয় হরিণীর। আমি যে ওর বিরহ আর নিতে পারছি না।
দেশের বাইরে ছিলাম তখন না হয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল কিন্তু এখন দেশে এসে এতো কাছে থেকেও ওর কোন খোজ পাচ্ছিনা। এ কষ্ট আমি কোনভাবেই মানতে পারছি না।
লিয়া এখন কলেজে পড়ে ভেবে সেই সকাল থেকেই রাস্তার মোরে দাড়িয়ে থাকে। এই পথ ধরেই তো যাতায়াত করতো আগে। এখনও হয়তো এই পথ দিয়েই যাবে।
পরপর তিন দিন সারাদিন দাড়িয়ে থেকেও লিয়ার দেখা পেলো না এমনকি কোন খোজও পেলো না।
জিয়ান দিশেহারা হয়ে গেছে। ভাবছে কিভাবে লিয়ার দেখা পাবে।
সিদ্ধান্ত নিলো নাফিসার বাসায় যাবে।
নাফিসার কাছ থেকে কোন খবর না পেলে এবার সে সরাসরি লিয়াদের বাসায় যাবে। যা হবার হবে, পরে দেখা যাবে।
জিয়ান দেশে ফিরে আসার পর থেকেই খুব অশান্ত ভাবে দিন পার করছে। বাসায় তিনবেলা ঠিক মত খাবারও খায় না। ঠিকমত কথাও বলে না। কেমন যেনো মনমরা হয়ে থাকে।এটা ওর বাবা মা খেয়াল করেছে। কি হয়েছে তাদের ছেলের। কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
.
জিয়ানের মা সুমাইয়া ছেলেকে মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করে কোন সদুত্তর পায়নি।
কানাডায় কারো সাথে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা? বা দেশে কারো সাথে কোন গন্ডগোল হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে,
জিয়ান বলেছে কারো সাথেই কিছু হয়নি, এমনিই ওর মনটা ভালো না।
.
একমাত্র ছেলের এমন মনমরা ভাব দেখে তাদেরও ভালো লাগছে না।
পরদিন খুব সকালে নাফিসার বাসার সামনে দাড়িয়ে রইলো অনেক সময় ধরে। নাফিসারও দেখা নেই।
এগারোটার দিকে নাফিসা বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।
নাফিসা আজ কলেজে যায়নি, এক বান্ধবীর বাসায় যাবে নোটস কালেক্ট করতে তাই সে বেরিয়েছে।
.
জিয়ানকে বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু হকচকিয়ে গেলো নাফিসা।
মনে মনে ভাবলো এই লোক এখানে কেনো?
নিশ্চয়ই লিয়ার খোজে এসেছে।
ওর কথা জিজ্ঞেস করলে কি জবাব দিবো।
লিয়াকে না জিজ্ঞেস করে কিছু বলা কি ঠিক হবে?
কিছু না বললে তো সমস্যা আরো বাড়বে বৈ কমবে না।
হায় আল্লাহ এখন আমি কি করবো। নানান কথা ভাবছে সে।
দেখা যাক কি বলতে চায় লোকটা।
তখন সাফ সাফ বলে দিবে সব। কিছুই লুকাবো না। এখন আর কোন কিছুই সম্ভব না, গেম ওভার।
.
জিয়ান নাফিসার সামনে এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছেন?
.
নাফিসা সালামের জবাব দিয়ে বললো, আমি ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন? কবে ফিরলেন? কানাডায় আপনার পড়াশুনা কেমন চলছে?
.
জিয়ান সে কথার জবাব না দিয়ে সরাসরি বললো, লিয়ার ফোন বন্ধ কেন? ওকি নতুন নাম্বার নিয়েছে? ওর সাথেতো কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। ওর নতুন নাম্বারটা দেন প্লিজ।
.
লিয়াকে আর খুঁজবেন না ভাই। ওকে খুজে কোন লাভ নেই। ওর বিয়ে হয়ে গেছে। ওর সাথে আর যোগাযোগের চেষ্টা করবেন না। ওকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না।
ওর সংসার জীবনে নতুন করে ঝড় তুলবেন না।
অনেক দুঃখ কষ্টের পর সংসারে মন বসেছে মেয়েটার।
.
জিয়ানের তো মাথা ঘুরে গেল। বলে কী এই মেয়ে, নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
.
কি বলছেন এসব যা তা ! এ হতেই পরে না। আমি বিশ্বাস করি না।
.
এই ধরনের ইয়ার্কি করবেন না প্লিজ।
লিয়াকে আমি আমার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। লিয়া আমার আর কারো না। আমরা একে অপরকে অনেক ভালোবাসি। আমরা দুজন এক থাকার ওয়াদা করেছি।
.
নাফিসা বলল, আমি সবই জানি ভাই। এখানে লিয়ার কিছুই করার ছিল না। ও ছিলো সম্পূর্ণ অসহায়। ওর দাদুর জেদের কাছে জিম্মি হয়েছিলো ওর আব্বু আম্মু।
.
ওকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। পাত্রপক্ষ যেদিন দেখতে এসেছে সেদিনই ওর বিয়ে হয়ে গেছে। আর বিয়েটা হয়েছে আপনি কানাডা যাওয়ার দুই মাস পর।
.
লিয়া আপনার কথা ভেবে, আপনাকে ভালোবাসে বলে, আপনাকে কথা দিয়েছিলো বলে সুইসাইড করতেও গেছিলো। জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়েছিলো।
বেচেঁ ফিরার কোন কথাই ছিলো না। যমে মানুষে টানাটানি শুরু হয়ে গেছিলো। অনেক চেষ্টার পর জীবন ফিরে পেয়েছে লিয়া।
লিয়া সত্যি আপনাকে অনেক ভালবাসতো। ওর বিয়ের খবরে আপনার মন ভেঙ্গে যেতো। আপনি কষ্ট পেতেন তাই সে চেপে গেছে সব। আপনার পড়াশুনার ক্ষতি হবে ভেবেই আপনাকে কিছুই বলেনি। সে একাই সব দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে।
তাই বলছি, আপনি ফিরে যান। লিয়াকে ভুলে যান। ওকে শান্তিতে থাকতে দেন।
.
লিয়ার ফোন নাম্বারটা দেন প্লিজ। আমি একবার ওর সাথে কথা বলতে চাই।
.
নাম্বার দিয়ে আর কি হবে? আপনি ওকে কল করবেন না প্লিজ।
ও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছে। ওকে আর নতুন করে কষ্টে ফেলবেন না। ওকে কষ্ট দেয়া একদম ঠিক হবে না। তাহলে এবার আর বাঁচবে না লিয়া। মনের মৃত্যু তো আগেই হয়েছে এবার প্রাণটাও খাঁচা ছেড়ে চলে যাবে।
.
ওকে কোন কষ্ট দিবো না। ওকে কষ্ট দিকে আমিই কি ভালো থাকবো? শুধু একবার কথা বলতে হবে ওর সাথে। কথা বলাটা খুব জরুরী। না হলে আমি নিজেও বাঁচবো না। জিয়ান ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।
.
নাম্বার দিতে চাচ্ছিলো না নাফিসা, জিয়ানের কান্না দেখে ওর নিজেরও খারাপ লাগছে। একজন ছেলে মানুষের কান্না করা দেখাটাও কঠিন।
.
খুব রিকুয়েস্ট করে জিয়ান। হাত জোর করে অনুনয় বিনয় করে নাম্বারটা নিলো নাফিসার কাছ থেকে।
.
জিয়ান বাসায় ফিরে রুমের দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কাদলো।
সে সত্যি অনেক ভালোবেসেছিলো লিয়াকে। কত স্বপ্ন বুনেছিল ওকে ঘিরে। এইভাবে ওকে হারিয়ে ফেলবে কল্পনাও করেনি সে। বুকের ভিতরটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হুহু করছে অন্তরটা। লিয়া ওর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, এটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
.
যথারীতি উদয় আর ওর বাবা অফিসে চলে গেছে সকালে।
বাসার অন্য সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে যে যার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ভাত ঘুম দিয়েছে।
.
লিয়া আয়ুশকে পায়ে নিয়ে দোল দিয়ে ঘুম পারাচ্ছে। দুলতে দুলতে একটু পর আয়ুশ ঘুমিয়ে পরলো।
আয়ুশকে ঠিকমত শুইয়ে দিয়ে লিয়া একটা বই চোখের সামনে মেলে ধরলো।
এমন সময় ওর মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে।
জিয়ান লিয়াকে ফোন দিলো__
এ পাশ থেকে লিয়া ফোন রিসিভ করলো।
.
কেমন আছো লিয়া? আমার বাঘিনী, আমার হরিণী বলার অধিকারতো আমার থেকে কেড়েই নিয়েছো।
.
লিয়া জিয়ানের গলার আওয়াজ শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো। শোয়া থেকে ধরমড়িয়ে উঠে বসে। এতো দিন পর জিয়ানের গলার আওয়াজ শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলো। কতদিন শুনিনি এই মন কাড়া আওয়াজ। বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। বুক ধড়ফড় করছে খুব। বুক ভেঙে কান্না পাচ্ছে।
.
লিয়ার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানির ধারা।
অনেকক্ষণ সে কিছুই বলতে পারলো না। গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হলো না। কথারা সব ফিরে গেছে যেনো। সব ভাষা হারিয়ে গেছে।
.
জিয়ান বললো, চুপ করে আছো কেন! কথা বলো,
নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো! এখন তো তোমার ভালো থাকারই দিন। কেমন করে পারলে তুমি ! আমাদের ভালোবাসার দিনগুলি কি করে ভুলে গেলে ! সেই প্রথম দেখার দিন, সেই শেষ দেখার দিন।
ফোনে করা আমাদের ওয়াদা। মনে আছে তোমার?
.
তোমার সেদিনের কান্না দেখে ভেবেছিলাম, তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচবে না অথচ তুমি দিব্যি সংসার করে যাচ্ছো। এক সন্তানের মা হয়েছো।
জানো তোমাকে আমি একদম ভুলিনি। তোমার কথা আমার খুব মনে পড়ে। আমাদের একসাথে কাটানো সময়গুলো খুব অল্পদিন ছিল তবুও সেই দিনগুলো ছিলো আমার ভালো থাকার অনুপ্রেরণা।
.
জিয়ানের কথা শুনে লিয়া অঝোর ধারায় কাদতে থাকলো। কান্না ছাড়া আর কি বা করতে পারে সে।
.
জিয়ান বললো কথা বলছো না কেন? কিছু তো বলো? না হয় এক ঝুড়ি মিথ্যে আশ্বাস দাও আবার। কিছু মিথ্যে প্রমিজ করো।
.
লিয়া অনেক কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পরে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো।
কেমন আছেন জিয়ান?
হয়তো ভালোই আছেন। আর ভালো থাকেন এটাই সব সময় চেয়েছি।
আমি ভালো নেই, ভালো থাকার অভিনয় করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
আপনাকে ছাড়া আমি কি ভালো থাকতে পারি?
জানি আমার এই কথা আপনার কাছে অর্থহীন মনে হবে। আমার ভালো থাকা আর না থাকায় আপনার কিছুই এসে যায় না।
আপনি আমার, এই কথা বলার অধিকার আমি হারিয়ে ফেলেছি।
অনেকদিন আপনার সাথে কথা হয় না, দেখাও হয় না। কিন্তু সবসময় আপনার কথা মনে হয়। ভুলে থাকতে চাই খুব চাই কিন্তু পারি কই। ভুলতে চাইলে আরো বেশি করে মনে পরে। আপনার কথা ভেবে আমার খুব কষ্ট হয়। আপনার সাথে কাটানো সময়গুলি যদিও খুব অল্প, তবুও সেগুলি আমার মনকে অস্থির করে, ভীষন কাদায়। কারো সামনে কাদতেও পারি না। হাজারো কান্না বুকের মাঝে দাফন করেছি।
পুরনো স্মৃতি গুলি মনে পড়ে। আপনার সাথে কথা বলতে না পারলে ছট্ফট্ করতাম, রেগে যেতাম। আর এখন বছরের পর বছর কথা হয় না, খুব কষ্ট হয়, তবুও থাকতে হয়। মনকে বুঝিয়ে নিয়েছি, মানিয়ে নিয়েছি। আমি আপনাকে যে কষ্ট দিয়েছি তা নিতান্তই অনিচ্ছা স্বত্বে।
তারপরও বলবো আমাকে অভিশাপ দেন। ক্ষমা করবেন না কোনদিন আমায়। আমার অপরাধের ক্ষমা হয় না। আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমার শাস্তি হওয়া দরকার। কঠিন শাস্তিই আমার প্রাপ্য।
.
জিয়ান বললো,
আমার কি মনে হয় জানো, আমার মনে হয় তুমি কখনো আমাকে ভালোই বাসনি। কিন্তু আমি তোমাকে অন্ধের মত ভালোবেসে গেছি সব সময়।
তোমার ভালোবাসায় আমি ছিলাম অন্ধ।
আচ্ছা তোমার হাসব্যান্ড কি তোমাকে আমার চাইতেও বেশি ভালোবাসে? তুমিও কি তাকে খুব ভালোবাসো?
.
জানো, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। অনেকদিন, অনেক মাস, দুই বছরের বেশি দেখি না তোমায়।
একবার দেখা করবে আমার সাথে। খুব দেখতে ইচ্ছে করে। মনকে কিছুতেই মানাতে পারছি না।
.
তা আর হয় না জিয়ান। একটু বোঝার চেষ্টা করেন। আমি এখন কারো বাড়ির বউ, কারো স্ত্রী, কারো মা। আমি কি এখন এসব অস্বীকার করতে পারি? বেধে দেয়া একটা গণ্ডির মধ্যে যে আমার বাস করতে হয়। আমার দুর্ভাগ্যের কারণে আমি এখন অন্য কারো।
.
তুমি আমারই আছো ভেবে, আমি তোমার জন্য কতো কিছু কানাডা থেকে নিয়ে এসেছি। কি করবো এগুলি এখন।
.
আপনার কোন কিছুতেই আমার আর অধিকার নেই। আমার আর আপনার দূরত্ব এখন যোজন যোজন দূর। যেই দূরত্ব কখনো মিটবে না। আমাদের রাস্তা এখন আলাদা। সমান্তরাল রেললাইনের মত যেটা কখনোই মিলিত হবে না।
.
জিয়ান বললো, আমি যেমন কষ্ট পেয়েছি, তুমি যেন সেই কষ্ট কোনদিন না পাও। আমি চাই না তুমি আমার জন্য নীরবে কাদো। মন থেকে চাই তুমি ভালো থাকো। বেঁচে থাকো আমার ভালোবাসা।
.
আর যদি আমার কাছে ফিরতে চাও সেই সুযোগও আমি তোমায় দিবো। কারন আমি যে তোমাকে খুব ভালোবাসি।
.
লিয়া বললো,
আপনি হয় তো ভেবেছেন আমি আপনাকে ভুলে গেছি।
কিন্তু বিশ্বাস করেন সারাদিনে যতগুলি নিঃশ্বাস নেই ততবারই আপনার কথা মনে পড়ে। বারবার আপনার কথাই মনে পড়ে।
আমি তো পাথর না যে, আমার কষ্ট হয় না। আমারও কষ্ট হয়। শুধু চিৎকার করে কাদতে পারিনা। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে সংসারে মন বসিয়েছি। আমার বাচ্চাটাই এখন আমার দুনিয়া।
পৃথিবীতে অন্যকে কষ্ট দিয়ে খুব কম মানুষই সুখী হতে পারে। আপনি যদি ভেবে থাকেন, আপনাকে কষ্ট দিয়ে আমি সুখে আছি, তবে আপনি ভুল ভাবছেন।
আমি ছিলাম বড় বেশি হেল্পলেস চরম অসহায়। কিছুই করার ছিল না আমার। কতইবা বয়স তখন, সিদ্ধান্ত নেবার সাহস হয়নি তখনও।
শুধু সময়ের ব্যবধানে বয়ে চলেছি এক বিশাল শূন্যতা, আর অসীম হাহাকার।
এখন আর সময় নেই শুধরে নেয়ার।
.
জিয়ান বললো,
আমি তোমার অন্তরে কতটা জায়গা করতে পেরেছি তা জানি না। কিন্তু তোমায় আমি আমার পুরা সত্ত্বা জুড়ে রেখেছি। তুমি আমার ভালোবাসাকে বিশ্বাস করো কি না আমি জানি না, তবে আমি পুরাপুরি বিশ্বাস করি তোমাকে। সবটুকু দিয়ে ভালোবাসি তোমাকে। তুমি আমাকে যতই কষ্ট দাও, আমি তোমাকেই ভালোবাসবো আজীবন।
যতোদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন শুধু তোমাকেই আপন বলে জানবো।
.
তুমি চলে আসো আমার কাছে। তুমি আমার শুধু আমার আর কারো না।
.
লিয়া বললো,আমি এখন
বিবাহিতা, একজনের স্ত্রী।একথা ভুলে যাচ্ছেন কেনো? তার ওপর এখন এক সন্তানের মা।
.
আমি তোমার সন্তান সহ ই তোমাকে মেনে নিবো। তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে কি না বলো।
.
এখন আর তা হয় না জিয়ান।
আপনি ভালো থাকবেন। পড়াশুনা শেষ করে, ভালো চাকরি করবেন, বিয়ে করে সংসারী হবেন। আমাকে চিরদিনের মতো ভুলে যান। আমি এটাই চাই।
.
তোমাকে ছাড়া আমি কেমন করে ভালো থাকবো লিয়া?
দুই বছর পর কি ভেবে দেশে আসলাম, আর এসে কি দেখছি। কত স্বপ্ন নিয়ে দেশে এসেছি সেটা কি তুমি জানো?
.
আমাকে নিয়ে আর কোন স্বপ্ন দেখবেন না। আমার আশা ছেড়ে দেন, আমাকে ভুলে যান।
ধরে নেন লিয়া নামের কেউ আপনার জীবনে ছিলোই না। না হয় মনে করেন আমি মরে গেছি। মৃত মানুষ কি আর কখনো ফিরে আসে?
শেষবারের মত একটা অনুরোধ করি, আমাকে আর কখনো ফোন করবেন না।
আপনি ফোন করলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না। আপনার কাছে ছুটে যেতে মন চাইবে। আপনাকে কাছে পেতে মন চাইবে।
তখন লোকে আমাকে চরিত্রহীনা বলবে, কলঙ্কিনী বলবে। আর সেই কলংকের ছায়া আমার সন্তানের গায়েও পড়বে। যা আমি চাই না।
ভালো স্ত্রী হতে পারিনি, কিন্তু ভালো মা হতে চাই। আমার সুখের জন্য আমার বাচ্চার ভবিষ্যত নষ্ট করতে পারি না।
ভালো থাকবেন জিয়ান। সুখে থাকবেন, শান্তিতে থাকবেন।
দূর থেকেই জানবো আপনি ভালো আছেন। আর আপনার ভালো থাকাতেই আমি ভালো থাকবো।
.
ফোনের ওপাশ থেকে জিয়ান খুব জোরে জোরে কাদছে। কাদতে কাদতে ওর হেচকি উঠছে, সেটা লিয়া স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। জিয়ানের হৃদয় ভাঙ্গা কান্নার আওয়াজে লিয়ার দুনিয়া প্রকম্পিত হচ্ছে।
কোন পুরুষ এমনভাবে তখনই কাদে যখন তার সব হারিয়ে যায়।
.
লিয়া বুঝে নিলো, ওর এই কান্নায় আমার জীবনে অভিশাপ বয়ে আনবে, অন্ধকার নিয়ে আসবে, সব লন্ডভন্ড হয়ে যাবে।সব শেষ হয়ে যাবে।
আমি কোন কিছুর জন্য দায়ী না হলেও, ওর সমস্ত কষ্টের কারণ আমি। ওকে সান্তনা দেয়ার কোন ভাষা আমার জানা নেই। আমিও যে একই ব্যথার ব্যেথি।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(চলবে)