রিস্টার্ট পার্ট-৩

0
5869

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_৩

সামাদ রহমান ও আয়শা রহমানের বড় ছেলে নাহিয়ান সামাদ অংশু। তার জন্মের প্রায় পাঁচ বছর পর নাদিয়ার জন্ম আর নাদিয়ার এক বছর দুই মাস পর রাহু। প্রথম দিকে খুব শখ করে বাচ্চাদের ভালো নাম আর ডাক নাম রেখেছিলেন। কিন্তু একদিন কোথায় যেন শুনলেন বাচ্চাদের যদি ভালো নাম ধরে ডাকা হয় তাদের ব্যক্তিত্ব ফুঁটে উঠে। তারা অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় দায়িত্বশীল হয়। সেদিন থেকেই তিনি তাদের ভালো নাম ধরেই ডাকেন। তবে তার স্ত্রী আর অন্যান্য সদস্যরা ডাক নামেই ডাকে। নাদিয়া সবার থেকে ভিন্ন, ও পারলে ওর অরনী নামটা কখনোই রাখে না। অরনী নামটা ওর খুবই চাইল্ডিশ মনে হয়। যেন কোনো স্টুপিড নভেলের নেতিয়ে পড়া নায়িকা। ও স্ট্রং। ওর সাথে শুধু নাদিয়া যায়। না দি য়া। বলতেই দাঁত ভেঙে আসে। কিন্তু নাদিয়া নামের অর্থ নরম, নমনীয় বা দুর্বল। ওর বাবা ওকে স্ট্রং করে তৈরী করেছে যাতে ওকে কখনো কারো কাছে মুখাপেক্ষী না হতে হয়। যে ওকে মজবুত করে গড়ে তুলেছে আজ সেই ওকে ভাঙতে চাইছে। ও ডিভোর্স দিতে চাইছে তা শুনে ওর বাবাই ওর সাথে বেশি খারাপ ব্যবহার করেছে। তাছাড়া ওর মা ভাই ভাবি ও আছে। এই কয়দিনে বহু আপনজনের আসল চেহারা দেখা হয়ে গেছে। সামনে আরো দেখতে হবে।

জাহিদ আর ওর ফুপু এসেছে নাদিয়াদের বাসায়। স্কুল থেকে ফিরে এই দৃশ্য দেখে নাদিয়া স্তব্ধ। ওরা কেন এসেছে? ভেতরে গিয়ে দেখে ওর বড় খালা আর চাচা ও এসেছে। সবাই এখানে বসে এখন একটা আলোচনা করবে কীভাবে ওদের সম্পর্ক টা টিকিয়ে রাখা যায়। নাদিয়ার কাছে বিষয়টা অনেক বিব্রতকর মনে হলো। ওর পার্সোনাল ব্যাপারে সবাই এভাবে কী করে নাক গলাতে পারে। একটু পরেই সালাম ভাই আর মোহনা ভাবি এলেন। ওনারা জাহিদের বড় ভাই আর ভাবি। নাদিয়া ওর ঘরে গিয়ে বসে আছে। ওর শাড়ি বদলাতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু এখন তা সম্ভব না। সবার দিকে রুদ্রমুর্তি হয়ে তাকানোর ইচ্ছেটাও নেই। ইগনোর ও করা যাচ্ছে না। পুরো বাসা ভর্তি লোক। আজ সবাই মিলে ওকে বাড়ি থেকে বের করেই ছাড়বে। ওর ঘরে ওর বড় খালা আর আর ফুপু শাশুড়ি এসেছেন। ওর ফুপু শাশুড়ি ওকে খুবই পছন্দ করেন। ওদের বিয়ের পর ফুপুই ওদের বাসায় থেকে ওদের ঘর গুছিয়ে দিয়েছিল। শাশুড়ির দায়িত্ব টা উনিই পালন করেছেন। নাদিয়া ও ওনাকে পছন্দ করেন। তাই ওনার সাথে চোখ মেলাচ্ছে না। আর ও জানে উনি কষ্ট পেয়েছেন। জাহিদের পরিবারে শুধু উনিই গুরুজন। সবার অভিভাবক উনি। ওনার কষ্ট হওয়ার ই কথা। নাদিয়া ওনাকে সালাম করল।

– ছোট বউ,
– জ্বী ফুপু।
– কেমন আছ?
– ভালো।

নাদিয়া গলা নিচু করে বলল। উনি নাদিয়ার গাল ধরে বললেন,
– মনে তো হচ্ছে না। জাহিদ কী কিছু বলেছে?
নাদিয়ার কান্না পাওয়ার উপক্রম। তবুও নিজেকে সামলে নিয়েছে। সবাই শুধু একটা কথাই বলে, “জাহিদ কী কিছু বলেছে?” কথা টা শুনলেই ওর কেমন যেন লাগে। কারণ জাহিদ তো কিছু বলেই না।

– না।
– তো সমস্যা কোথায় ?
– সমস্যা অন্য কিছু, আমি বলতে চাই না।
– সমস্যা না বললে সমাধান হবে কী করে?
– এই সমস্যার সমাধান সম্ভব না।

ঐদিকে ছেলেরা সবাই জাহিদকে বোঝাচ্ছে। জাহিদ মানুষ টা শান্ত একটা মানুষ। বরাবরই ও কম কথা বলে। পরিবারের ছোটরা যেমন হয় ও একদমই তেমন না। নাদিয়ার বাবার ওর জন্য এমনই কাউকে চাইছিলেন। নাদিয়ার জন্য একদম পারফেক্ট। প্রথম সাক্ষাতেই জাহিদ বাবা মেয়ের মন জয় করে নিয়েছিল। বাবা আজ ও তেমনই ভালোবাসে, কিন্তু মেয়ের মন এখনই মরে গেছে।

বসার ঘরে নাদিয়ার ভাইয়েরা বলছে নাদিয়ার জন্য তারা লজ্জিত, আর জাহিদের ভাইয়েরা বলছে জাহিদের জন্য তারা লজ্জিত। আসলে কোনো মানুষকে তার সহোদর ছাড়া আরে কেউই বোধহয় ভালো চেনেনা।

– তোকে আমি কত বলেছি একটা দুইটা হিন্দি সিনেমা দেখ। একটু রোমান্টিক হ। এরকম পানশা হলে কেউ থাকবে না।
– ভাইয়া চুপ করেন।
– তুই একবার ও ভেবেছিস, নাদিয়া যদি চলে যায় আমাদের কী হবে? আমরা তো তোকে সবসময় একা থাকতে দিতে পারি না।

জাহিদ চুপচাপ আছে। নাদিয়ার ভাই অংশু এবার বলে,

– ভাইয়া জাহিদের দোষ দেবেন না। ও ছেলে মানুষ, তার উপর চাপা স্বভাবের। অনেকের দ্বারা এসব হয় না। অরনী তো অ্যাডজাস্ট করতে পারত। বাবা আমাদের ই দোষ, ওকে আমরা কিছুই শিখাইনি।
– আহ! নাহিয়ান, বড়রা কথা বলছে।

জাহিদের বড় ভাই হা করে ভাবছে এই অরনী আবার কে? নাদিয়ার চাচা বললেন,
– ভাইয়া, দোষটা তোমার। এই অরনীকে তুমিই নষ্ট করেছ। তুমি তোমার মেয়ে কে স্ট্রং ইন্ডিপেন্ডেন্ট করতে গিয়ে এই শিক্ষা দিয়েছ। আমি মানছি মেয়েদের স্ট্রং হতে হবে, কিন্তু দেখলে তো। এখন নিজের দুধ কলা দিয়ে পালা নারীবাদের কামড় এবার নিজেই খাও।
– চুপ করো!!! কাজের কাজ কিছু করছ না শুধু একে অন্যকে দোষারোপ!!!
নাদিয়ার বাবার চিৎকার বসার ঘর থেকে নাদিয়ার ঘর পর্যন্ত এলো। ও ওর বাবার অবস্থা টা বুঝতে পারছে, কিন্তু ওর অবস্থাটাও তো বুঝতে হবে। নাদিয়াকে ওনাদের জন্য চা করতে বলা হলো। নাদিয়া চা বানিয়ে নাস্তা সহ বসার ঘরে দিয়ে আসে। সেখানে ওর জাহিদের সাথে আবার দেখা হলো। কী একটা বেচারা চেহারা নিয়ে বসে আছে। সেখানে উপস্থিত সকল পুরুষের দৃষ্টি দেখে নাদিয়া বুঝল বরাবরের মতো ও ই ভিলেন। ও গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো। সব মহিলারা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নাদিয়া ও ওদের দিকে তাকালো। ওর কাছে মনে হচ্ছে সবাই যেন কোনো এক গুহায় আটকে ছিল, ও ই প্রথম ওদের বাঁচাতে ঢুকেছে। একমাত্র ও ই পারে ওদের এই বিপদ থেকে বাঁচাতে। সঙ্গে সঙ্গে রাহু এসে বলে,

– অরনী, বাবা তোকে ব্যাগ গোছাতে বলেছে।
– কেন?
– এখনই যেতে হবে তোকে।
– কোথায়?
– কোথায় আবার, তোর বাসা।
– বাবাকে বলে দে আমি যাচ্ছি না।
– বেয়াদপি করবি না একদম! বাবা এমনিতেই তোর জন্য অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
– তবুও আমি যাচ্ছি না।

নাদিয়া এ কথা বলে ভেতরে চলে যাচ্ছিল। তখন ওর মা এসে ওকে আটকে দেয়।
– মা, একটু অ্যাডজাস্ট কর। জাহিদ ভালো ছেলে। একটা চান্স দে। ঝগড়া কাদের মধ্যে হয়না?
– আমাদের কোনো ঝগড়া হয় নি মা।
– তাহলে কী সমস্যা?
– আমাদের মধ্যে অনেক দূরত্ব। এত কাছাকাছির একটা সম্পর্কে এত দূরত্ব থাকলে সম্পর্ক টা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।
– একটা বাচ্চা নিয়ে নে। আবার শুরু কর। দেখবি বাচ্চা আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
– মা!!!
– বাচ্চা আসলে সব দূরত্ব মিটে যায়। আবার শুরু করা যায়।

নাদিয়ার মাথাটা ভন ভন করছে। বাচ্চা! বাচ্চা কোথা থেকে আসবে? এখন ও শুধু ও একা, বাচ্চা আসার পর ও আর বাচ্চা একা। কিন্তু বাচ্চা টা কোথা থেকে আসবে? নাদিয়ার খালা আর ফুপু শাশুড়ি ও শুরু করল “একটা বাচ্চা! একটা বাচ্চা নিয়ে নে! একটা বাচ্চা সব ঠিক করে দেবে!” নাদিয়ার খুব অস্বস্তি লাগতে শুরু করল। ও ওদের আওয়াজ বন্ধ করে দিতে চাইল। কিন্তু এবার ওর আর জাহিদের ভাবিরাও শুরু করল, ” একটা বাচ্চা নাও! বাচ্চারা আল্লাহ্ এর আশীর্বাদ! বিয়ে টা টিকে যাবে!” নাদিয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। ও আর নিতে পারছে না।
” যখন দুজন মানুষের মধ্যে নূন্যতম কথাও হয় না , হাত ও ধরে না তখন বাচ্চা কী করে আসবে! বাচ্চা কী খেলার পুতুল? আমি দোকান থেকে কিনে আনবো বাচ্চা???”

খুব জোরে জোরে চিৎকার করে কথা গুলো বলল নাদিয়া। জাহিদ ও চলে এসেছে। সবাই থ হয়ে তাকিয়ে আছে। কী বলছে ও! রাহু বিব্রত হয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় দেখল জাহিদ ও আছে। নাদিয়া ও জাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাহু লজ্জিত হয়ে নাদিয়া কে বলল,

– তুই ভেতরে যা।
– ভেতরে কেন যাব? কথা যখন শুরু হয়েছে আমি বলব! আমার দম বন্ধ হয়ে আসে এই লোকটার সাথে। সে দিনে একটা কথাও বলে না। রোবট ও ভালো ওনার থেকে। অন্তত পক্ষে কারো কথা মতো কাজ করে! উনি কোনো কথাই বলে না আমার সাথে! আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে, পরে বলিস।
– না! এখনই শোন! তোমরা যে বলছ একটা বাচ্চা নিতে, কী করে বাচ্চা হবে? বিয়ে করলেই বাচ্চা হয়ে যায়? এক ছাঁদের নিচে একই বিছানায় দুজন দুই ধারে। আমার তো অন্য কিছুর দরকার নেই, আমি চাই উনি একটু কথা বলুক অন্তত। আমি এটুকুও জানি না উনি আমাকে ঘৃণা করেন কিনা! আচ্ছা আমি কী ঘৃণা করার মতো মানুষ?
– না তুই অনেক ভালো, এখন ভেতরে যা।
– তুই চুপ রাহু! ফুপু, আমার মনে হয়ে ওর কোনো প্রেমিকা ছিল, আপনারা তার সাথে বিয়ে দেন নি তাই উনি ইচ্ছে করে আমাকে ইগনোর করছেন। কারণ উনি মুক্তি চান। আর আমি কারো বোঝা হতে পারব না। জাহিদ, আপনি যেখানে খুশি যান, যাকে ইচ্ছা বিয়ে করুন।

জাহিদ হালকা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নাদিয়ার চোখ লাল হয়ে আছে। ওর কান্না আটকে রাখার এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে। যদি সে ক্ষমতা না থাকতো তবে আজ এখানে গঙ্গা যমুনা বয়ে যেত। জাহিদ সে জিনিস টা বুঝতে পারছে। ও বোধহয় জানে ব্যাপার টা। নাদিয়া জাহিদের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আপনি মুক্তি চান? আমি মুক্তি দিলাম। আমাকেও মুক্তি দিয়ে দিন। তোমরাও আমাদের মুক্তি দিয়ে দাও। আমাদের পক্ষে একসাথে থাকা আর সম্ভব না!
– প্লিজ, আপনি একটু শান্ত হন।

জাহিদ মাথা নিচু করে এই কথাটুকু বলল। জাহিদের কথা শুনে নাদিয়া কেমন শান্ত হয়ে গেল। রাহুর এখন রাগ হচ্ছে। তবে কী এই সাদাসিধা গঙ্গাধর ভেতরে ভেতরে অনেক বড় শয়তান? ওর কী সত্যি সত্যি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে? ও কী কোনো ভাবে অরনী কে ধোঁকা দিচ্ছে। আজ এক ভাইয়ের পরীক্ষা। যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকবে ওর বোনের কাছে।

– এক মিনিট জাহিদ ভাই, আপনার কী কোনো পছন্দ আছে?
– জ্বী?
– আপনার গার্লেফ্রন্ড আছে?
– না।
– ছিল? পছন্দ করতেন? আপনাকে জোর করা হয়েছে?
– না, না , না। (ধীরে ধীরে)

ওর উত্তর শুনে রাহুর কেমন যেন লাগছে। ” না, না, না।” আসলেই কেমন লোক! জাহিদের বড় ভাই সাথে সাথে বলে,
– ওর পছন্দ নেই নাদিয়া। ও অনেক আনরোমান্টিক আমরা জানি। আমরা ওকে অনেক বার বলেছি কাউকে পছন্দ করতে, ওর কেউ পছন্দ ছিল না। তাই তো ফুপু তোমাকে দেখল। ও এমন ছেলে না। ফুপু বলেন।
– হ্যাঁ নাদিয়া, বিশ্বাস কর মা। আমার জাদু এমন না।

নাদিয়া আস্তে আস্তে জাহিদের দিকে তাকায়। ও এখনো নীচের দিকে তাকিয়ে। নাদিয়ার চাচা আর বাবা ও দেখছে এই কাণ্ডকারখানা। নাদিয়া ভাবছে তবে কী কারণে উনি এমন? ওর কোনো গার্লফ্রেন্ড ও নেই, তবে কীসের জন্য এমন করছে? ততক্ষণে জাহিদ বলল,

– ফুপু, ভাইয়া ভাবি, এখন বাসায় চলুন।
– কিন্তু, (জাহিদের বড় ভাই)
– আমি চাই না আর কোনো বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে। থাক, পরে কথা হবে।

জাহিদ বেরিয়ে গেল। ব্যাপারটা কেমন ঘেঁটে গেল না? মিষ্টি ঘোমটা দিয়ে ঘরে চলে গেল। নাদিয়া আর জাহিদের বেডরুমের ব্যাপার এভাবে খোলামেলা আলোচনা। ছি! ছি! আসলেই বিব্রতকর। জাহিদ আর ওর পরিবার চলে যাওয়ার পর নাদিয়া দৌঁড়ে ওর পুরনো বারান্দায় যায়। সেখান থেকে জাহিদের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। গাড়িটা চলে যাচ্ছে। দৃশ্যটা দেখেই ও বারান্দায় বসে পড়ে। ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছে এখানে বসে কিছুক্ষণ কাঁদতে। এই বারান্দাটা কেমন যেন ওর আপন। এই বেল গাছ টা ওর বন্ধু। দু ফোঁটা চোখের জল ফেলার স্থান। হঠাৎ করে দেখল পেছনে রাহু দাঁড়িয়ে।
– যেতেই পারতি।
– কী?
– এতই যখন ইচ্ছে ছিল , যেতেই পারতি। তুই আমাকে খুলে বল, তুই কী ওকে কারো সাথে কথা বলতে দেখেছিস? মানে কোনো অন্য নারী? সন্দেহজনক কিছু?

নাদিয়া ঠোঁট কামড়ে বসে আছে। ওর কান্না পাচ্ছে, রাহুর সামনে কাঁদা যাবে না। নরম হওয়া যাবে না।

– কী হলো ? বল।
– ও কারো সাথে কথা বলে না। আসলে ও, কোনো কথাই বলে না। আমি ওর কন্ঠ শোনার জন্য বসে থাকি, ও কিছুই বলে না।
– কী বলিস!
– ওর সাথে কথা বলার জন্যে আমি ওকে রাতের বেলা অনেকদিন খাবার দেইনি। উপোস ছিল, সকাল বেলা ও দেইনি। বাসার সব খাবার দাড়োয়ানকে দিয়ে দিয়েছি। তাও কিছু বলেনি। মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের করেনি।
– কিছুই খায় নি!
– একদিন উপোস করে বাইরে থেকে খেয়েছে। তাও কিছু বলেনি।
– আর এই কারণেই ও তোর সাথে কথা বলতে ভয় পায়।

নাদিয়া রুদ্রমুর্তি হয়ে তাকালো। রাহু ভয়ে বারান্দা থেকে বেরিয়ে গেল। নাদিয়া তারপর ওর ঘরে চলে গেল। ওর খাটে উপুড় হয়ে শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। ওর একটি বারের জন্য মনে হয়েছিল চলে যাবে। কিন্তু সত্যি এটাই যে, এই সম্পর্কে জাহিদের তরফ থেকে কিছুই নেই। উল্টো আজ ও যা যা বলেছে দুজনের ই অপমান হয়েছে। বাবা শুনেছে, চাচ্চু শুনেছে, ভাইয়েরা শুনেছে। আর মিষ্টি ভাবিও। ওর মান সম্মান ও নিজেই নষ্ট করেছে। তাই কাল সকালে কেউ দেখার আগে বের হতে হবে। সবার থেকে কিছুদিন দূরত্ব রাখলে আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হলে হতেও পারে। তবে ওর জীবন আর স্বাভাবিক হবে না। কখনো কারো জন্য নাদিয়া এত দুর্বল হয়নি, জাহিদের জন্যই কেন? আচ্ছা জাহিদ কী ভাবে না ওর কথা? ওর কী মন কাঁদে না?
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here