#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_৩৯
জাহিদের প্রজেক্টে আজ নতুন একটি আর্কিটেকচার ফার্ম যোগ দিয়েছে। তাদের সাথেই কথা হচ্ছে। সেই আর্কিটেকচার ফার্মের প্রধান সায়েম খান। তারা এত ধনী নয় তবে ভালো কাজ করেছেন। ফরিদ সাহেবের মুখ বাংলার পাঁচ হয়ে আছে। মনে হচ্ছে তিনি পছন্দ করছেন না ওনাদের।
– আপনার সমস্যা কী ফরিদ সাহেব? আপনি ওনার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কেন?
– এই লোকটাকে আমার পছন্দ না।
– কেন?
– আগে কাজ করেছি। অনেক অহংকার করেন। আগের অবস্থা নেই এখন আর যদিও।
– আগে কী ছিল?
– ফার্ম ই ছিল। দুই ছেলে ছিল। খুব গর্ব করতো তাদের নিয়ে। একটা ছেলে তাদের নিজের না। ওটাকে কোথায় যেন গায়েব করে দিয়েছে। আর একটা নিজের। ঐ ছেলেটাকেও অনেকদিন হলো দেখা যাচ্ছে না। একদম ভালো হয়েছে!
– কেন? নিজেদের ছেলে হওয়ার পরই দত্তক নেওয়া ছেলের প্রতি তাদের আসল দরদ দেখা গিয়েছে। অতঃপর সেজন ও ছেড়ে গেল। উচিত শিক্ষা!
জাহিদ সায়েম সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যিই কী এমন? তাদের পার্সোনাল বিষয়। তবে আগ্রহ তো একটু হচ্ছে।
– আপনার পরিবারে ঠিক কে কে আছে?
– আমি, মিসেস আর এক ছেলে।
– ছেলে কী করে?
– বিদেশে পড়ছে।
– নাম কী তার?
– ওয়াসি।
জাহিদের একটু সন্দেহ হচ্ছে। সব কী করে এক জায়গায়!
– কোন দেশে?
অনেকটা অমনোযোগেই বলল জাহিদ। সায়েম সাহেব একটু গলা ঝেড়ে বললেন,
– ফ্রান্স। প্যারিসে।
– ওহ!
সায়েম সাহেবের সোজা চুল আর চেহারা সত্যিই আসল ওয়াসির মতো। তবে কী?
– ফরিদ সাহেব, ওনার ছেলে কোন স্কুলে পড়তো জানেন?
– স্কলাসটিকা।
– ওহ!
– আরেকটা কী বড় স্কুলেও পড়তো। দামী স্কুল। ম্যাগনেফিসেন্ট। কিন্তু বড় ছেলে পড়েছে ক্যাডেটে। ম্যাগনেফিসেন্টের মতো এত দামী না।
– ক্যাডেট ও তো ভালো। ইনফ্যাক্ট ক্যাডেট বেস্ট।
– বিশিষ্ট ধনীদের ছেলেরা তো ম্যাগনেফিসেন্টেই পড়ে। বড়লোকের আলাদা ঠাঁট! আর ক্যাডেটে তো যোগ্যতা লাগে। কষ্ট করতে হয়।
জাহিদ ভাবছে ওয়াসি তো ফ্রিতেই পড়তো। উল্টো হয়তো ক্যাডেটে বেশি টাকা লাগতো।
– ওহ! ওর নাম জানেন?
– তোমার হঠাৎ এত ইন্টারেস্ট?
– এমনি। আচ্ছা অন্য কথা বলি।
এদিকে ম্যাগনেফিসেন্টে নাদিয়া ঐ প্রিয়া নামের মেয়েটিকে খুঁজছে। ওর অনেক তথ্য দরকার। লাইব্রেরিতেই ওর সাথে দেখা হয়েছিল তো সেখানেই বসে আছে। রোহান ওকে দেখে এগিয়ে আসলো,
– কার জন্য অপেক্ষা করছেন? ওয়াসি?
– না। একজন ছাত্রী। ওকে এখানেই দেখেছি।
– ওহ। নাম কী?
– প্রিয়া।
– আচ্ছা বসুন।
নাদিয়া এরপর নিজের ফোনে একটা মেসেজ পায়। “আমাকে বাঁচান ম্যাম। ওরা আমাকে মেরে ফেলছে।”
মেসেজটা পেয়েই নাদিয়া ঘাবড়ে গেল। ওকে এভাবে কে মেসেজ করবে? ওকে কে চেনে? একটু পর আরেকটা মেসেজ এলো,
“আমি প্রিয়া। আমাকে প্লিজ বাঁচান।”
নাদিয়া কিছু না ভেবে বের হয়ে গেল লাইব্রেরি থেকে। কী হচ্ছে ওর সাথে? রোহান খেয়াল করলো নাদিয়া চলে যাচ্ছে। নাদিয়া মেয়েটিকে একটা মেসেজ করলো ও কোথায়? মেয়েটি বলল এমন একটা জায়গায় যেখানে কেউ নেই। নাদিয়া মেয়েটিকে সব জায়গা খুঁজতে লাগলো। মেয়েটা কোথায়? সুইমিং পুল অডিটোরিয়াম কোথাও নেই। অতঃপর মেয়েটি ওকে মেসেজ করলো ও জিমে। নাদিয়া জিমের ভেতর ঢোকার আগে মনে করল ও তো ক্যামেরা আনেনি। রেকর্ড করবি কী করে? রেকর্ড পরে হবে। আগে মেয়েটার নিরাপত্তা। নাদিয়া দৌঁড়ে ঢুকলো সেখানে। কেউ নেই।
নাদিয়া আস্তে আস্তে পা ফেলে খুঁজতে থাকে জিমের ভেতর। জিম টা অন্ধকার। ও হঠাৎ টের পায় কেউ জিম টা বন্ধ করে দিয়েছে। নাদিয়া দরজার কাছে গিয়ে ধাক্কা দিতে লাগলো।
“দরজা খোলো! দরজা খোলো!”
” স্যরি ম্যাম! আপনি না এখানে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকুন।”
নাদিয়া অবাক হয়ে গেল বললে কম হবে। এটা তো প্রিয়ার গলা! তারমানে এ সব ওর প্ল্যান! নাদিয়া ওয়াসিকে ফোন দিতে লাগলো। কিন্তু ওর ফোনে ঢুকছে না। ও বোধহয় কোথাও আবার ইনভেস্টিগেশন করছে। ততক্ষণ পর্যন্ত এখানেই বন্দি থাকতে হবে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার পর নাদিয়া মাটিতে বসতেই যাবে তখন বুঝলো কেউ দরজা খুলছে। বাইরে তাকিয়ে দেখলো রোহান আর আরেকজন লোক। নাদিয়া সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। রোহান ওর পেছন পেছন গেল,
– তোমাকে এখানে কে আটকে দিলো?
– একটা মেয়ে।
– কেন?
– জানিনা। আমি বুঝি না। চিনি না এই ম্যাগনেফিসেন্টের লোকদের। বাচ্চা মেয়েটি কে আমি বিশ্বাস করেছিলাম।
– কেন?
– এমনিই।
– ও বলেছিল ওকে বুলি করা হয়?
নাদিয়া মন খারাপ করে নীচের দিকে তাকিয়ে রইলো। রোহান ওর পাশে এসে দাঁড়ালো,
– এই ম্যাগনেফিসেন্ট একটা গোলকধাঁধা। এখানে যে ঢুকেছে সেই জানে।
– মানে?
– এখানে সবাই ফেক। কাউকে বিশ্বাস করো না।
– কেন?
– সবাই মিথ্যা বলে। মুখোশ পরে থাকে। এই ছোট বাচ্চা বলছ যাদের, ওরা কোনো বাচ্চা না। ওরা তোমার আমার থেকে অনেক বড়। অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সন্তান। ভবিষ্যতে আরো ক্ষমতাধর হবে।
– জানি।
– তাই বলছি, ওদের শোধরাতে যেও না। নিজেই বেঁকে যাবে। এখানে যেই এসেছে এসব শোধরাতে, সেই শেষ হয়ে গেছে।
– তুমি এত কিছু কী করে জানো?
– আমার থেকে বেশি কেউ জানে না। আমি এখানে আজ পাঁচ বছর।
– পাঁচ বছর!
– জ্বী। অনেক পুরনো।
– কেন এসেছিলে এখানে?
– সত্যি বলব? কাউকে বলবে না তো?
– না। কেন বলব? কাকে বলব?
– তো শুনো, জাস্টিসের জন্য।
নাদিয়া ভয় পেয়ে গেলো। জাস্টিস! এসব কথা আবার কেউ শুনছে না তো? নাদিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু আছে কি না,
– ভয় পেও না। কেউ নেই এখানে।
– তোমার ভয় করে না?
– করে। অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমি মূলত ঢুকেছি সার্ভে করতে। সবার খোঁজ নিতে। ধীরে ধীরে জানতে পারি সব নোংরা সত্য! কীভাবে স্কলারশিপের টোপ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এখানে এনে অত্যাচার করা হয়। এটা একভাবে একটা ট্রেনিং সেন্টার। ভবিষ্যত ক্ষমতাধর তৈরী করার।
– এরপর কী করলেন?
– কিছুই করিনি। তবে একটা মোটামুটি নাম্বার জানতে পেরেছি।
– কীসের?
– সুই *সাইডের!
নাদিয়া বুঝতে পারছে না ওর কী আর এখানে থাকা উচিত কি না। ওয়াসি কোথায়? খুব শীঘ্রই ওর এইখানে আসা দরকার।
– ভয় পাচ্ছ? পুরো সংখ্যা টা শুনলে না জানি কী করবে?
– কত?
– ১২।
– ১২! আর পুলিশ কেস?
– জিরো!
– আচ্ছা, কারা কারা সুই*সাইড করেছে তাদের নাম আর রিজন জানো?
– হ্যাঁ। রিজন তো একটাই। ডিপ্রেশনে, বুলিইং। তবে একটা একটু ভিন্ন।
– কী?
– রে*ইপ!
– রেই*প!!! এই স্কুলে রেই*প!
– হ্যাঁ। শুনলে অবাক হবে, ওর বন্ধুরাই করেছে। মেয়েটা বলতেও পারেনি কাউকে।
– নাম কী?
– মনে নেই। রেকর্ডে আছে।
– আমি কী জানতে পারি?
– না। আই ডোন্ট ট্রাস্ট এনিওয়ান।
– কেন? এত কিছু বললে আর এটা এমন কী?
– অনেক কিছু। আমি জানি, তবে ধরা খেতে চাই না।
– প্লিজ আমাকে নামটা দিও।
– কেন? তোমার কেউ আছে?
নাদিয়া ভাবছে বলবে কী বলবে না। রোহানকে কী বিশ্বাস করা যায়?
– ছিল, বন্ধু। নাম প্রিয়ম।
– আত্ম*হত্যা?
– হ্যাঁ।
– রেই*প হলে তো তুমি জানার কথা।
– তাও। কিন্তু ওর আত্ম*হ*ত্যা অনেক হঠাৎ ছিল। কেউ বোঝেনি। আমি আজ ও জানি না কারণ কী।
– তুমি কী চাও?
– কারণ জানতে চাই। আসলে কেন করলো?
– জানার পর কী করবে? জাস্টিস চাইবে?
– জানি না। তবে আমি আগে জানতে চাই।
– এটা জেনে রাখো, জাস্টিস তুমি পাবে না।
– আচ্ছা, তুমি এভাবে যে এসব বলছ, ধরা খাবে না?
– কেন?
– এই ফোন,
– এই ফোনে কল বা ফাইলে কী আছে জানতে পারবে। কিন্তু এখন এভাবে বলছি জানতে পারবে না। আর আমি এখানে পাঁচ বছর আছি।
– সিনিয়র।
– তবে শোনো, এই কথা কাউকে বলো না। ওয়াসি ও না। ওকে?
– ওকে।
– আর তোমার প্রিয়মের ইয়ার টা দিও।
নাদিয়া ভাবছে এটা কী বলবে নাকি ওয়াসি কে। ওয়াসি এগিয়ে আসলো,
– কোথায় ছিলে?
– আটকে ছিলাম।
– মানে?
– মানে প্রিয়া বলে যে মেয়েটা ও আমাকে জিমে আটকে দিয়েছিল।
– তারপর?
– রোহান বাঁচালো। আচ্ছা একটা কথা বলার ছিল।
– কী?
নাদিয়া চুপ হয়ে গেল। ওয়াসি কে তো বলতে মানা করল। কিন্তু ও কী রে জানে ওয়াসি আর নাদিয়া একসাথে? ওয়াসি আবার ওকে জিজ্ঞেস করলো। নাদিয়া কিছু বলল না। ওয়াসি আর জিজ্ঞেস করল না। ওরা দুজন বেরিয়ে গেল। গাড়িতে নাদিয়া জিজ্ঞেস করলো,
– আচ্ছা, প্রিয়মের খবর পেলে কিছু?
– না। খোঁজ চলছে।
– কিছুই পাওনি?
ওয়াসি চুপ করে আছে। যা ও জেনেছে তা যদি এখন বলে দেয় তো সব ছারখার হয়ে যাবে।
– বলছি তো চলছে।
– ইউ নো ওয়াসি, আমার মনে হয় তুমি আমার সময় নষ্ট করছো। আমি তোমার কাজ ঠিকই করছি কিন্তু তুমি আমার কাজ করছো না!
– আমি করছি না তেমন না। আমি করছি।
– কোথায়? একটা কিছু তো বলবে? এর থেকে ভালো ছিল আমি নিজেই করতাম।
– দেখো নাদিয়া, ধৈর্য ধরো। আমি করছি তো!
– দেখতেই পাচ্ছি।
নাদিয়া খুব রাগান্বিত হয়ে বের হয়ে গেলো গাড়ি থেকে। রোহানের কাছে রেইপের কথা শোনার পর থেকে নাদিয়া যেন বদলে গেল। এদিকে ওয়াসি ভাবছে নাদিয়া কত কিছুই করে ফেলতো। সংসার করছে যার সাথে সেই লোকটাই সব জানে। সেসব কিছুই টের পেল না আবার রাগারাগি করছে।
নাদিয়া ঘরে এসে দেখলো রাহু দাঁড়িয়ে আছে ওর জন্য। থানা পুলিশ নিয়ে কথা বলতে চায়।
– কী জন্য হলো? জাহিদ ভাইয়ের কোনো শত্রু?
– মিত্র।
– মানে?
– জানা লাগবে না। আমরা আর আগাতে চাই না। বাবা মা কে কিছু বলিস না।
– আবার কিছু করলে?
– করবে না।
– এই, লক আপে ছিলি নাকি?
– না। ঢোকার আগেই উকিল নাফিস রেজা বাঁচিয়ে নিলো।
– বাহ! তুই কেস করবি না?
– না। এখানেই শেষ করতে চাই।
জাহিদ বাসায় আসার পর রাহু চলে গেল। রাহু যাওয়ার আগে কেমন ধমক ধমক চোখে তাকালো জাহিদের দিকে। আর নাদিয়া ও জাহিদের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ওদের মধ্যে যে দূরত্বটা এসেছে সেটা কোনো ভাবেই কমানো সম্ভব নয়। নাদিয়া নিজের মতোই কাজ করছে। এই মুহুর্তে জাহিদের ওর দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। নাদিয়া ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। জাহিদের খুব কৌতুহল হলো। জিজ্ঞেস করবে কি না ভাবছে,
– জানো, আফরা প্রেগনেন্ট!
– আলহামদুলিল্লাহ! কংগ্রাচুলেশন।
– এই, জাহিদ তোদের অভিনন্দন জানালো।
নাদিয়া কথা বলতে বলতে আবার ভেতরে চলে গেল। ওর কথা শেষে ও আর জাহিদের দিকে তাকিয়েও দেখলো না। তাই জাহিদ ভেতরে গিয়ে নাদিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। নাদিয়া জাহিদের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
– আহ! জাহিদ! আমাকে ছাড়ো!
– না ছাড়বো না। তুমি দেখছি আমাকে এভয়েড করছো।
– এভয়েড করছি না।
– করছো তো। কথা বলছ না।
– বললাম তো একটু আগে।
– ওটা তো আফরার কথা বললে।
এই বলে জাহিদ নাদিয়াকে সামনে ফিরিয়ে ওকে নিজের দুই হাতের মধ্যে শক্ত করে তালাবদ্ধ করে ওর গলায় চুমু খেতে লাগলো। প্রথমে নাদিয়া চোখ বন্ধ করে জাহিদের স্পর্শ অনুভব করলেও আস্তে আস্তে হাত দিয়ে আটকাতে লাগলো,
– ছাড়ো। ছাড়ো না!
– কথা বলো। তবে ছাড়বো।
– আমার খেজুরে আলাপ করার সময় আর ইচ্ছে দুটোই নেই জাহিদ।
– আমার ইচ্ছে হচ্ছে।
এই বলে জাহিদ নাদিয়ার মাথার পেছনে হাত দিয়ে ওর গালে চুমু খেলো। নাদিয়া এবার নিজেকে আটকাতে না পেরে জাহিদকে জড়িয়ে ধরলো। আস্তে আস্তে জাহিদ নাদিয়ার মাথার পিছনে হাত দিয়ে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। এরপর নাদিয়া জাহিদের কানে কানে বলল,
– হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট? আজকে এমন করছো কেন?
– সবসময় তোমার ই করতে হবে? আমার ইচ্ছে হয় না?
– আজ দেখছি জেলাসি ইনসিকিউরিটি বাদে অন্য কিছুও আছে।
– তোমার নেই?
– কী?
– বেবির ইচ্ছা?
নাদিয়া জাহিদকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তড়িৎগতিতে বসে পড়লো। জাহিদ ধাক্কা খেয়ে বিছানায় পড়ে রইলো। বুঝতে পারল না হলোটা কী! নাদিয়া কী ওর সাথে বেবি চায় না? নাকি দেরিতে চায়? ও কী আবার রাগিয়ে দিলো? গন্ডগোল করে ফেলল! নাদিয়া বিছানা থেকে উঠে যেতেই জাহিদ ওর হাত টেনে ধরলো,
– আ’ম স্যরি। আমি ওভাবে বলতে চাইনি। মানে এখনই না।
– পরেও না।
– মানে?
– আমার কিছু কাজ আছে। ওসব শেষ না করে আমি তোমার সাথে এক স্টেপ আগাতে পারি না।
– তো আমরা বেবি নেব না?
– তুমি হঠাৎ এমন কথা বলছ কেন?
– এমনি।
জাহিদ উঠে নাদিয়ার মুখোমুখি বসলো। এরপর ওর হাত ধরে বলল,
– তুমি বলো, তুমি কেন চাইছ না?
– বললাম তো। কাজ আছে। বেবি নিলে আমার কাজে অনেক বিরতি হবে। ততদিনে কাজটা আর হবেও না। লিসেন, আমি কোনো রিগ্রেট ছাড়া আমার সামনের জীবনে আগাতে চাই। চাপে পড়ে একবার বিয়ে করেছি। ডোন্ট ফোর্স মি।
– ফোর্স করছি না। জানতে চাইছি। কখনোই না?
– তেমন না। আই হ্যাভ প্ল্যানস। ইফ ইউ আর থিংকিং আমি বুড়ো হয়ে যাবো। আর গর্ভধারণ করতে পারব না তখন আমরা দত্তক নিতে পারি। অপশন আছে।
– ওহ!
জাহিদ নীচের দিকে তাকালো। নাদিয়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। অন্য সময় হলে অন্তত একটা হাত ওর কাঁধে রাখতো। বা চেহারা স্পর্শ করে দেখতো। আজ একদম নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।
– আর ইউ আনশিউর আবাউট মি?
– মানে?
– এখনো দ্বিধা আছে? আমাকে কী এখনো ঠিক মনে হয় না?
নাদিয়া অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো। এবার আর জাহিদ আটকালো না।
“তোমাকে খাতা কলমে বোঝালেও তুমি যা আগে থেকে বুঝেছ তাই বুঝবে। আমার কথাটা কখনো বুঝবে না।”
সেই রাত জাহিদ আর ঘুমাতে পারেনি। পরদিন সারাদিন অফিসে জাহিদের মাথায় শুধু এই দুটি বাক্যই বাঁজছে।
“তোমাকে খাতা কলমে বোঝালেও তুমি যা আগে থেকে বুঝেছ তাই বুঝবে। আমার কথাটা কখনো বুঝবে না।”
ওর কথা কী?
– শি ডাজেন্ট ওয়ান্ট আ বেবি উইথ মি!
– হুম!!! গুড ডিসিশন।
– আশ্চর্য! আপনি এটা বলতে পারলেন? এর মানে জানেন?
– কী?
– আপনি বুঝতে পারছেন না।
– আমি ঠিকই বুঝেছি। তুমি কী বুঝেছ তা বলো।
– এর মানে, ও দ্বিধায় আছে আমাকে নিয়ে। এখনো ডিভোর্স দিতে চায়। ছেড়ে চলে যাবে, তাই।
পিপি এবার তার চেয়ারে পেছনের দিকে হেলান দিয়ে বলে,
– ওহ! মিস্টার ওভারথিংকার, আপনি দেখছেন পাহাড়, পর্বত, নদী, সমুদ্র, জঙ্গল আর মরুভূমি সব ভেবে রেখেছেন। দয়া করে বেনজির কে এসব ব্যাপারে আরেকবার বলবেন।
– আপনার কী মনে হয়?
– আমার মনে হয়, ও যে মিশনে গেছে ম্যাগনেফিসেন্টে। ঐ যে প্রিয়মের মৃত্যুর কারণ, তা জানার পর ও কন্টিনিউ করবে।
– আর?
– আর শি লাইকস ইউ আ লট। হ্যাঁ, দ্বিধা আছে। তোমার মিথ্যা নিয়ে। তাও সে ভালোবাসে। তাই ও এডপ্টের কথাও বলল পরে। অনেক দূর পর্যন্ত ভেবেছে। আর তুমি বহুদূর, অনেক দূর, দূরান্তর ভেবে রেখেছ।
জাহিদ লজ্জিত হয়ে নীচের দিতে তাকিয়ে আছে। সে এতো বোকা কেন?
– আর তুমি কী গাঁধা? এই মুহূর্তে বেবি চাইছো কোন সাহসে? তোমার কাছে আশা করি না।
– কেন?
– আবার কেন বলছে! মাঝে মাঝে আমার তোমার উপর খুব রাগ হয়। তুমি কী ওকে এখনো সত্যি বলেছ? তোমাদের দুজনের সম্পর্ক এখনো ততটাই অনিশ্চিত যতটা প্রথম দিন ছিল। এই মুহুর্তে একটা বেবি নিলে ওর ভবিষ্যত কী হবে? নাকি ওকে ব্ল্যাকমেল করবে তোমার সাথে থাকতে? আগে তো টক্সিক রিলেশনশিপ ছিল, এবার টক্সিক ফ্যামিলি। বাচ্চা কী দেখবে? বাবা মাকে মিথ্যা বলেছিল তাই মা প্রতিদিন ঝগড়া করে। মা আমার জন্যই থেকে গেছে এখানে এসব? আমিই নষ্টের গোড়া।
– এভাবে বলছেন কেন? আমি এত কিছু ভাবিনি। ব্ল্যাকমেল! আমি তো ওর বান্ধবীর বেবি হবে তাই ওকে এমনি বললাম। ওর ও ইচ্ছা জানতে চাইছিলাম। কিন্তু ও আমাকে,
– ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে না দিয়ে থা*পড়ানো উচিত ছিল। এত আকাশ বাতাস ভাবো আর এই সামান্য জিনিস ভাবতে পারো না। তোমার ওভারস্মার্টগিরির জন্য মেয়েটা মাত্র জেল খাটতে খাটতে বাঁচলো। এত খারাপ একটা জন্মদিনের পর তুমি আবার ওর কাছে একটা বেবি চেয়ে বসলে। এত কিছু বাদ দিলে নরমাল একটা মেয়ে ও রাগ করবে।
– কেন?
– বেবি তো নয় মাস তুমি নিয়ে ঘুরবে না। নাদিয়াকেই বহন করতে হবে। একটা বেবির জন্য পুরুষদের তো এত কষ্ট করতে হয় না। এমনি একটা বাচ্চা পেয়ে বলে আমার বাচ্চা।
– আপনি এভাবে বলছেন কেন? আপনিও তো পুরুষ।
– মানসিক ভাবে তৈরী করছি তোমাকে। হ্যাঁ, ছেলেদের ও কষ্ট হয়। মানসিক চাপ থাকে। কিন্তু মেয়েদের মতো না। বেনজির শারীরিক আর মানসিকভাবে যে কত কষ্ট করেছিল আমি দেখেছি। তা দেখেই আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। সেজন্য আমি এসব বিষয়ে অনেক সেন্সিটিভ। তাই এত উপদেশ দিলাম।
– থ্যাংকস স্যার।
– এখন বাড়ি গিয়ে এ সব উল্টো পাল্টা বলো না আবার।
এদিকে ম্যাগনেফিসেন্টে নাদিয়া ওয়াসির সাথে কথা বলছে না। ওয়াসি ভাবছে রাগ দেখাচ্ছে। কিন্তু জিনিসটা অন্য। ওর মন থেকে রোহানের কথা গুলো সরছেই না। ক্লাস শেষে আজ ও লাইব্রেরিতে যাচ্ছে নাদিয়া। সেখানে একটা নোটিশ দেখলো। ম্যাগনেফিসেন্টের রিইউনিয়ন। ওদের ১৫ তম এ লেভেল ব্যাচের রিইউনিয়ন হবে। অর্থাৎ প্রিয়মের বছরের সবাই আসবে। তারা মানে এটা একটা সুযোগ সেই ব্যাপারে জানার। তার আগে রোহানের কাছে গিয়ে বলল,
– তোমাকে যে বলেছিলাম?
– সত্যি বলতে একটু সময় লাগবে। ফাইল টা আমার পিসিতে। কাল গিয়ে দেখি একটু প্রবলেম হয়েছে। দোকানে দিয়েছি। ঠিক হলেই প্রথম তোমাকে কল দিচ্ছি।
– প্লিজ! আমার খুব দরকার।
– তুমি একটা কাজ করতে পারবে?
– কী?
– এই রিইউনিয়নে এসে দেখা করতে পারলে হবে। কেউ না কেউ তো মনে রাখবেই। সবাই তো আর খারাপ না।
– আসতে পারবো?
– ওহ হো! প্রবলেম হচ্ছে অনলি স্টুডেন্টস। এন্ট্রি পাস না থাকলে তো পারবে না।
মন খারাপ করে নাদিয়া বাসায় আসার সময় ভাবছে ও কী করে সেই পাস পাবে? বাসায় ঢোকার সময় দাড়োয়ান বলল ওদের চিঠি এসেছে। সেই চিঠির উপরে লেখা ম্যাগনেফিসেন্ট। নাদিয়া আর খেয়াল করলো না এটা করা। খাম খোলার পর দেখলো এর উপর জাহিদের নাম লেখা আর ভেতরে “রিইউনিয়ন ইনভিটেশন” !!!!
(চলবে)
[ঈদ মোবারক আর ৫০০ লাইকের জন্য ধন্যবাদ। আশা করি সবাই এখন ক্লান্ত। শুয়ে শুয়ে উপভোগ করেছেন।]