পার্থক্য
৬ পর্ব।
#রিফাত_হোসেন।
আফজাল সাহেব আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছে। আর অজানা অচেনা ছেলে রিফাত কে অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছে।
আফজাল সাহেব তারিনের দু’হাত ধরে বলল – ‘আমাকে ক্ষমা করে দিস মা। আমি তোর সাথে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
তারিন কান্না করতে করতে বলল – ‘তুমি কোন অন্যায় করনি বাবা। আমারই উচিত হয়নি, তোমাদের মিথ্যে বলে যাওয়া।
– ‘আমি আর কিছু চাই না। তুই যে সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছিস এটাই অনেক।’
আমেনা বেগম বলল – ‘যে তোকে বাড়িতে পৌঁছে দিলো, সে কোথায়?’
– ‘এই এলাকাতেই আছে। একটা গানের পোগ্রামে এসেছে। ‘
আফজাল সাহেব বলল – ‘ওহ্, তাহলে তো ভালই হলো, তাকে অন্তত
একটা ধন্যবাদ দিতে পারবো। সে আমাদের এত বড় একটা বিপদের হাত থেকে বাঁচালো।
পাশ থেকে আমেনা বেগম বলল – ‘সে এখন কোথায় আছে।’
– ‘এখন কোথায় আছে, তা জানিনা। তবে তার ফোন নম্বর আছে আমার কাছে।’
– ‘তাহলে তাকে ফোন করে আমাদের বাড়িতে আসতে বলবি।’
আফজাল সাহেব বলল – ‘সে সব পরে হবে। আগে তারিন কে খাবার দেও। দেখে মনে হচ্ছে এখনও কিছু খায়নি।
তিশা তারিন কে ঘরে নিয়ে গেলো। আমেনা বেগম খাবার তৈরি করতে গেলো।
তারিন তিশার হাত ধরে বলল – ‘আমাকে ক্ষমা করে দিস তিশা।’
তিশা অবাক হয়ে তারিন কে জিজ্ঞেস করলো – ‘তুই ক্ষমা চাইছিস কেন?’
– ‘আজ পর্যন্ত তোকে না বলে কোথাও যাইনি। কিন্তু জানিনা কোন কারণে এই প্রথম তোকে না জানিয়ে কোথাও গেছি।’
– ‘তোর আর আশিক ভাইয়ের রিলেশন এর শুরু থেকে আমি সব জানি। তুই আমার কাছে কোন কিছু গোপন রাখিস নাই। এই প্রথম একটা ভুল করে ফেলেছিস। এতে ক্ষমা চাওয়ার কী আছে?’
– ‘তবুও আমার এটা করা ঠিক হয়নি। অন্তত তোকে বলে যাওয়া উচিত ছিল।’
– ‘কিন্তু তুই একা একা গেলি কেন?’
– ‘আরে আশিক এমনভাবে বলল যে শরীর খারাপ। আমার মাথা ঠিক ছিল না। আর তখন এত কিছু ভাবার সময় পাইনি। তাই সকালে কলেজের কথা বলে বের হইছি। আর বলেছি কলেজ শেষে তোর বাড়িতে যাবো। যাতে একটু দেরি হলেও কোন সমস্যা না হয়। কিন্তু যাওয়ার পর আশিক নানান অজুহাতে আমাকে আটকে রাখছিল। প্রথমে বিষয়টা বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই আশিকের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছি। কিন্তু ততক্ষনে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে আশিক আমার কাছাকাছি আশার চেষ্টা করে। কয়েকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। শেষ যখন খুব কাছে চলে আসে, আমি ওর গালে একটা থাপ্পড় মেরে দূরে সরে আসি। তারপর ও একটা ছুরি বের করে আমার দিকে এগুতে থাকে। জানিস সেই মুহূর্তে মনে হয়েছে এটা আমার আশিক না। কারণ আশিক কখনও এইরকম কিছু করতে পারে না। আশিক আমাকে খুব ভালবাসে। আমি চিৎকার করতে করতে বললাম প্লিজ আশিক আমারে ছেড়ে দাও। কিন্তু ওই জানোয়ার টা আমাকে ছেড়ে দেয়নি। বরং আরও কাছে চলে আসে। কিছুক্ষনের মধ্যেই এত কিছু হয়ে যাবে আমি ভাবি নি। বাবা-মা’র মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
হাতের কাছে যা পেয়েছি, তাই দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে এসেছি।
– ‘আশিক ভাইয়া যে এতটা খারাপ আগে বুঝতে পারিনি।
– ‘ হু ‘
– ‘আগে ভাবতাম আমাকে নিজের বোনের মতো ভালবাসতো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি। সেসব ছিল তার অভিনয়।’
– ‘আমিও বিশ্বাস করতে পারছি না। আশিক আমার ভালবাসা কে নিয়ে নোংরামো করবে।’
– ‘মন খারাপ করিসা না। তোর ভাগ্য ভাল, তুই এখনও সুস্থ আছিস।’
– ‘হু’
– ‘আচ্ছা তখন যে বললি একটা লোক তোকে ঢাকা থেকে এখানে নিয়ে এসেছে।’
– ‘হ্যাঁ, ওনার নাম রিফাত। ঢাকা তেই থাকে। এখানে কোথায় যেন গান গাইতে এসেছে।’
– ‘চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির পাশে যে বড় মাঠটা আছে। সেখানেই গানের আয়োজন করা হয়েছে।’
– ‘আজকেই গান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওখানে কী যেন একটা সমস্যা হয়েছে। তাই তারিখ টা পিছিয়ে দিয়েছে।’
– ‘তাহলে তো লোকটা সেখানেই থাকবে।’
– ‘হবে হয়তো, আমি শুধু ফোন করার ঠিকানা দেখিয়ে দিয়ে চলে এসেছি।’
– ‘তুই তো বললি লোকটার ফোন নম্বর তোর কাছে আছে।’
– ‘হ্যাঁ, আছে।’
– ‘তাহলে একটা ফোন দে।’
– ‘পাগল হইছিস নাকি। এখন ফোন দিলে কি না কি মনে করবে।’
– ‘কী আবার মনে করবে।’
– ‘তাছাড়া ওনি সারারাত ঘুমাতে পারেনি। এখন নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে। তাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করা ঠিক হবে না এখন।’
তিশা খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘আচ্ছা ছেলেটা দেখতে কেমন রে?’
তারিন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে
বলল – ‘দেখতে অনেকটা ভালো। তবে? ‘
তিশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘তবে কী?’
তারিন বলল – ‘আমি অনেকবার খেয়াল করেছি, লোকটা লুকিয়ে লুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।’
– ‘তাই নাকি।’
– ‘ শুধু তাই নয়। বাসে যখন বাতাসে চুলগুলো আমার মুখে এসে পড়েছে। তখন সে নিজেই হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিতে গেছে। কিন্তু বেচারা তাতে সফল হতে পারেনি। কারণ তার আগেই আমি তার হাতটা ধরে ফেলেছিলাম।’
– ‘তখন লোকটার মুখের অবস্থা কিরকম হয়ে ছিল রে।’
– ‘সেই সময়ের কথা মনে পড়লে এখনও আমার হাসি পায়। এত লজ্জা পেয়েছে, যে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।’
হঠাৎ তিশা বলে উঠলো – ‘আমার মনে হয় লোকটা তোর প্রেমে পড়ে গেছে।’
তারিন একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল – ‘কি সব আবোল তাবোল বলছিস।’
তিশা বলল – ‘তুই একবার ভেবে দেখ বিষয়টা কতটা রোমান্টিক। একটা মেয়েকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে।’
এই কথা বলেই দু’জনে হাসতে শুরু করলো। কিছুক্ষন পর তিশা হাসি থামিয়ে তারিন কে বলল – ‘ যে মেয়েটার চোখে একটু আগেও জল ছিল। সেই মেয়ে এখন এত খুশি ব্যাপার কী?’
– ‘কী আবার ব্যাপার থাকবে।’
– ‘মনে হচ্ছে তুইও ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছিস।’
তারিন একটু রাগি ভাব দেখিয়ে বলল – ‘তিশা, তুই কিন্তু এখন বেশি বেশি বলছিস।’
তিশা আর কিছু বলতে পারলো না কারণ তারিনের মা খাবার নিয়ে ঘরে এসেছে।
তিশা বিছানা থেকে উঠে বলল – ‘তারিন তাহলে তুই এখন খেয়ে রেস্ট নে। আমি আবার পরে আসবো।’
আমেনা বেগম তিশা কে বলল – ‘ খেয়ে যা।’
– ‘না আন্টি এখন আর খাবো না। মা বাড়িতে একা আছে।’
তারিন বলল – ‘আরে বেশি সময় লাগবে না।’
তিশা আর না করলো না। আমেনা বেগম খাবার টা রেখে বাহিরে চলে এলো। তারিন আর তিশা খাওয়া শুরু করলো।
খাওয়ার মাঝে তারিন বলল – ‘ আমি বিকেলে তোদের বাড়িতে যাবো।’
– ‘আমাদের বাড়িতে যাবি কেন? সেটা তো আমি খুব ভাল করেই জানি।’
তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘মানে?’
– ‘ চেয়ারম্যান বাড়ির পাশেই তো আমাদের বাড়ি।’
– ‘সেটা তো আমি জানি।’
– ‘আমি খুব ভাল করেই জানি তুই ওই ছেলেটা কে দেখার জন্য যাবি।’
– ‘তুই এবার মার খাবি আমার হাতে।’
– ‘সত্যি কথা বললেই দোষ। তাই না।’
– ‘চুপ করে খাওয়া শেষ কর।’
তারপর তারিন আর তিশা খাওয়া শেষ করলো। হাত মুখ ধুয়ে তিশা বলল – ‘তাহলে এবার আমি বাড়িতে যাই।’
– ‘ঠিক আছে যা।’
তিশা আরেকটু মজা করার জন্য বলল – ‘মন টা খুব ছটফট করছে তাই না।’
তারিন – ‘কেন?’
তারিন একটা হাসি দিয়ে বলল – ‘লোকটা কে দেখার জন্য।’
তারিন – ‘দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।’
তারিন বিছানা থেকে নামতে নামতে তিশা দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো। তারপর তারিন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
কিন্তু বার বার কালকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে আশিকের ভয়ংকর রূপ।
তারিন নিজেকে সামলে নিয়ে আবার চোখ বন্ধ করলো।
কিন্তু এই ঘটনা টা তারিন কে শান্তি দিচ্ছে না। চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছে তারিনের নিথর দেহ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। তার সামনে বসে বাবা- মা কান্না করছে। তারিন বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। ঘামে পুরো শরীর ভিজে গেছে তারিনের। চিৎকার করে বাবা বলে ডাক দিলো। পাশের ঘরেই বসে ছিল তারিনের বাবা- মা। মেয়ের এভাবে চিৎকার শুনে দৌড়ে তারিনের ঘরে আসলো।
আমেনা বেগম জিজ্ঞেস করলো – ‘কী হয়েছে মা?’
তারিন কোন কথা না বলেই মা’কে জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের অবস্থা দেখে আফজাল সাহেব খুব সহজেই বুঝে গেলো, এখনও খুব ভয়ে আছে। এই মুহূর্তে মেয়ের পাশে থাকটা খুব দরকার।
৮.
বিকেলের দিকে রিফাতের ঘুম ভাঙ্গলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। কিন্তু নিচে গিয়েও কাউকে পেলো না। ফোন টা ও উপরে রেখে এসেছে। খুব খিদে পেয়েছে, আশেপাশে মানুষ আছে ঠিকই, কিন্তু লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছে না। আস্তে আস্তে করে বাড়ির বাহিরে গেলো। বাড়ির ডান দিকে একটা বড় মাঠ আছে। দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করাতে বলল ওই মাঠে আছে সবাই। রিফাত যেতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলো।
চলবে…………?