পার্থক্য পর্ব-৯

0
1002

পার্থক্য

৯ পর্ব।

#রিফাত_হোসেন।

আরিয়ান রিফাত কে জোরে একটা ধাক্কা দিলো আর রিফাত তারিনের উপরে গিয়ে পড়লো।
সবাই ‘থ’ হয়ে গেলো। কী হলো কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। আরিয়ান ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। তারিন আর রিফাত একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। অল্পকিছু সময়ের মধ্যে যে এতকিছু হয়ে যাবে কেউ ভাবেনি। তারিন রিফাতের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বলল – ‘আপনি আমার উপরে পড়লেন কেন?’

রিফাত অবাক হয়ে বলল – ‘আমি কখন আপনার উপরে পড়লাম।’
– ‘আপনি এখনও তো আমার উপরেই আছেন।’
– ‘হ্যাঁ তাই তো।’

তারিন খুব বিরক্ত নিয়ে বলল – ‘আপনি কী উঠবেন, না আমার উপরেই শুয়ে থাকবেন।’

রিফাত আস্তে আস্তে বলল – ‘আমি তো এত কিছু চাইনি। শুধু একটু ভালবাসা চেয়েছি।’
– ‘কিছু বললেন’
– ‘কই না তো।’
– ‘তাহলে এখনও শুয়ে আছেন কেন? উঠুন তাড়াতাড়ি।
– ‘যদি না উঠি।

রিফাতের কথা শুনে তারিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।

রিফাত বিষয়টি বুঝতে পেরে বলল – ‘রেগে যাচ্ছেন কেন উঠছি তো।’

রিফাত তারিনের উপর থেকে উঠে তারিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তারিন কোন দ্বিধা না করেই রিফাতের হাত ধরে উপরে উঠে গেলো।

রিফাত বলল – ‘আপনি আমার সামনে কখন এলেন?’
– ‘যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন যেন আগে কখনও মেয়ে দেখেন নাই। লুচ্চা কোথাকার।’
– ‘আপনি তো সবার থেকে আলাদা।’

তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘মানে?’
রিফাত আবার একটা ঘোরের মধ্যে থেকে বলল – ‘আপনি এমন একজন, যার চোখের দিকে তাকালে পুরো পৃথিবীর দেখা যায়। যে সামনে আসলে বুকের হার্টবিড বেড়ে যায়। যার মুখে আছে অজস্র মায়া।

তারিন রিফাতের কথা শুনে বলল – ‘হ্যালো মিঃ এসব কী বলছেন আপনি?’

তারিনের কথা শুনে রিফাত কিছুটা চমকে গেলো। ও নিজেই বুঝতে পারছে না এগুলো কেন বলল।

রিফাতের চুপ করে থাকা দেখে তারিনের কিছুটা রাগ হলো। কিন্তু কিছু বলল না।
পাশ থেকে আরিয়ান বলল – ‘আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তুই ওনাকে চিনিস নাকি?'( রিফাত কে উদ্দেশ্য করে বলল)

রিফাত আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল – ‘আগে বল আমাকে ধাক্কা দিছে কে?’

আরিয়ান কোন কথা বলছে না, চুপ হয়ে আছে। রিফাত এবার তারিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘সত্যি করে বলুন আমাকে ধাক্কা কে দিছে?’
– ‘আমি কীভাবে জানবো?’
– ‘আমার তো খুব সন্দেহ হচ্ছে?’

তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘কীসের সন্দেহ?’

– ‘আমার মনে হচ্ছে আপনি আমাকে টান দিয়ে আপনার উপরে ফেলেছেন।’
– ‘হুহ আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনাকে টান দিয়ে আমার উপরে নিয়ে আসবো।

রিফাত একটু রাগ দেখিয়ে বলল – ‘তাহলে আমি আপনার উপরে কীভাবে পড়লাম।’
– ‘আপনি যে লেভেলের লুচ্চা। তাতে কাউকে ধাক্কা দিতে হবে না, এমনিতেই মেয়েদের উপরে পড়ে যাবেন।’

তারিনের কথা শুনে রিফাত তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। তারপর বলল – ‘দেখুন আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন।’
– ‘ছোটবেলার ডায়লগ টা ছাড়বো নাকি।’

রিফাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘কী ডায়লগ?’
– “আমাগো বাড়ির সামনে দিয়া গেলে এক্কেবারে ভাজি কইরা খাইয়া ফালামু”

তারিনের মুখে এই কথা শোনার পর সবাই একসাথে হেসে দিলো। রিফাতের মনে মনে হাসি পেলেও বাস্তবে তা প্রকাশ করলো না।
সবাই এভাবে হাসছে দেখে তারিন জিজ্ঞেস করলো – ‘সবাই এভাবে হাসছেন কেন?’

আরিফ সাহেব বলল – ‘তোমার এই ডায়লগ শুনে।’

তারিন একটা হাসি দিয়ে বলল – ‘আমার স্টকে আরও অনেক ডায়লগ জমা হয়ে আছে।’

তারিন কে আরেকটু রাগানোর জন্য রিফাত বলল – ‘আপনার মত রাক্ষসীর মুখে এইসব ডায়লগ’ই পারফেক্ট।’
– ‘আপনার সাহস কী করে হলো আমাকে রাক্ষসী বলার।’
– ‘হা হা হা।আপনাকে আমি ভয় পাই নাকি।
– ‘দাঁড়ান দেখাচ্ছি মজা।’
একথা বলেই তারিন রিফাতের নাকে একটা ঘুসি মেরে দিলো।

তারিনের এইরকম কাজ দেখে সবাই চুপ হয়ে গেছে। রিফাত বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তারিন অবাক হয়ে রিফাত কে জিজ্ঞেস করলো – ‘আপনাকে মারলাম নাকে অথচ আপনি বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

রিফাত বুকে হাত দিয়েই বলল – ‘ঘন্টা বেজে গেছে।’
– ‘কীসের ঘন্টা?’
– ‘ প্রেমের ঘন্টা।’

রিফাত কথা শুনে আবার সবাই একসাথে হেসে উঠলো। তারিন লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।

১৩.
সন্ধ্যা হতে এখনও অনেকটা সময় আছে। আরিফ সাহেব বলল – ‘সন্ধ্যা হতে তো অনেকটা সময় বাকি আছে। চলো সবাই মিলে একটু নৌকা দিয়ে ঘুরে আসি।’

নৌকা দিয়ে নদী দেখার সুযোগটা কেউ মিস করতে চায় না। তাই সাথে সাথে সবাই রাজি হয়ে গেলো। আরিফ সাহেব ঘাটে গিয়ে একটা বড় নৌকা ভাড়া করে নিলো। সবাই মিলে উঠতে যাবে তখন রাফি বলল – ‘রিফাত তোরা যা আমি যাবো না।’
– ‘কেন?’
– ‘আরে আমার খুব ভয় করে।’
– ‘ভয়ের কী আছে?’
– ‘যদি নৌকা ডুবে যায়।’

রাফির কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
রিফাত বলল – ‘নৌকা ডুবে গেলে, সাথে তোকে ও ডুবিয়ে দিয়ে আসবো।’
– ‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। শুধু শুধু আমাকে কেন ভয় দেখাচ্ছিস।’
– ‘তুই যদি এখন নৌকায় না উঠে বাড়তি কোন কথা বলিস তাহলে এখানে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেবো।’
– ‘আরে রেগে যাচ্ছিস কেন। আমি তো এমনি মজা করছিলাম।’
– ‘হু এবার উঠে পর তাড়াতাড়ি।’.

রাফি আর কোন কথা না বলে নৌকায় উঠে পড়লো। নৌকা আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলো। সবাই মিলে গল্প করছে। তারিন সবাইকে একটা একটা করে ঘটনা শোনাচ্ছে আর সবাই মিলে একসাথে হেসে উঠছে। রিফাত মনে মনে ভাবছে মেয়েটা এত কথা কীভাবে বলে। সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে। এত কথা বলে ওর মুখ কী ব্যাথা করে না। অবশ্য তারিনের কন্ঠ টা ও বেশ মিষ্টি। যত কথা বলে ততই যেন ওর সৌন্দর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কথা বলার স্টাইল টা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। রিফাতের জীবন সঙ্গী হিসেবে তারিন একদম পারফেক্ট।
সবার মনযোগ তারিনের গল্পের দিকে থাকলেও রিফাতের মনযোগ তারিনের মায়াবী মুখের দিকে। তারিনের কথাগুলোর উপর নজর না রাখলেও কথা বলার প্রতিটি স্টাইল রিফাত একমনে দেখে যাচ্ছে।
তারিনের দিকে তাকালে রিফাত কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তারিনের গোলাপি রঙের দু’ই ঠোঁট ছুঁয়ে আসা প্রতিটি অক্ষর রিফাতের বুকে এসে প্রেমের ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। যেন ওই অক্ষরগুলো তারিনের জন্যই তৈরি হয়েছে। রিফাত বার বার তারিনের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। এত্তো এত্তো প্রেম জমা হয়েছে যে, ওগুলো বিক্রি করলে রিফাত রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাবে। সেই কোটি কোটি টাকা দিয়ে রিফাত নতুন এক রাজ্য তৈরি করবে। সেই রাজ্যে শুধু তারিন আর রিফাত থাকবে। জ্যোৎস্না রাতে দু’জনে ছাদে বসে থাকবো। তারিনের কোলে মাথা রেখে আকাশে তারাদের খেলা দেখবে। চাঁদের আবছায়া আলোয় তারিনের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে। তারিন মাথা নিচু করে বসে থাকবে। রিফাত নিজের হাত দিয়ে তারিনের মাথাটা উপরে তুলে আলতো করে কপালে চুম্বন এঁকে দিবে৷ লজ্জা পেয়ে তারিন রিফাত কে জড়িয়ে ধরবে। রিফাত শক্ত করে তারিন কে নিজের বুকে বন্দী করে নিবে।
“আহ্ ভাবতেই কেমন শরীরটা শিউরে উঠছে। প্রতিটি চুম্বনে যা মজা, এক্কেরে বিরিয়ানির মজা ও হার মেনে যাবে”

১৪.
তারিন খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে রিফাত ওর দিকে তাকিয়ে অন্য জগতে হারিয়ে গেছে। অন্যরা কেউ খেয়াল করেনি কারণ সবাই তারিনের গল্প তে মগ্ন হয়ে আছে। রিফাতের এভাবে তাকিয়ে থাকাটা কেন জানি তারিনের খুব ভাল্লাগছে। তারিন সবাইকে গল্প শোনাচ্ছে আর আড়চোখে রিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কেন এমন হচ্ছে। কেন বার বার রিফাতের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে। কেন রিফাত সামনে আসলে আশিকের দেওয়া কষ্টটা ভুলে যায়। যেখানে আশিকের দেওয়া কষ্ট বুকের বা পাশে থাকা হৃদয়টা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে কেন নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন জন্ম নিচ্ছে। যদি ভিতরে থাকা হৃদয়টাকে জিজ্ঞেস করতে পারতাম কেন তুই নতুন করে ভালবাসার সৃষ্টি করছিস? কী উদ্দেশ্য তোর? তাহলে হয়ত নিজেকে কিছুটা হলেও শান্ত করতে পারতাম।
মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তারিনের। কী হতে পারে এত্তোগুলা প্রশ্নের উত্তর? কেন ভিতরে থাকা হৃদয়টা বার বার বলছে নতুন করে বাঁচো। নতুন করে স্বপ্ন দেখ। কে সেই নতুন স্বপ্নের সাথী। কেন বার বার সে বাধ্য করছে তাকে ভালবাসতে। কে সেই ব্যক্তি? যার জন্য ভিতরের তীব্র যন্ত্রণা আজ কাবু হয়ে গেছে। রিফাত নয়তো।
রিফাতের কথা মনে পড়তেই তারিন কেঁপে উঠলো।

১৫.
গল্পটা থামে গেছে। তারিন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়ত তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। কেন হঠাৎ করে তারিনের বলা গল্পটা থেমে গেলো। রিফাত পশ্চিমে থাকা সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। আর একটু পড়ে সূর্য লুকিয়ে পড়বে। তৈরি হবে নতুন এক দুনিয়া। রিফাত মনে হয় সেই দুনিয়ায় অপেক্ষায় আছে।
সবার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে তিশা বলল – ‘কী হলো তারিন থেমে গেলি কেন?’

তারিন রিফাতের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বলল – ‘সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাদের এবার বাড়ি ফেরার সময়।

তারিনের কথাতে সবাই মত দিলো। মাঝি ভাইকে বলল নৌকা ঘাটের দিকে নিয়ে যেতে।

চলবে…………?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here