অতঃপরঃ ইতি পর্ব -৭

0
1626

পর্ব – ৭

” অতঃপরঃ ইতি ”

লেখিকাঃ অপরাজিতা আফরিন মিম

এই সব’ই ভাবছিলো ফাহাদ, তখন তার কাধে নরম স্পর্শ অনুভব করে, পিছনে ফিরে দেখে তার মা রাশেদা বেগম দাড়িয়ে আছে।
ফাহাদের চোখ গড়িয়ে এখনো জল পড়ছে,,সে একবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবারো সামনের দিকে তাকালো। কিছুইক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলতে লাগলো

— জানো আম্মু, তোমার এই ছেলে যখন যা চেয়েছে তা” ই পেয়েছে, তোমরা কখনোই কোন আল্লাদ ই অপূর্ণ রাখো নি আমার। কেন,সব সময় সব কিছু দিয়েছো বলো তো? কিছু আবদার যদি অপূর্ণ রাখতে তাহলে হয় তো আজ না পাওয়ার কষ্ট টা নতুন কিছু হয়ে ধরা দিতো না,পুরোনো হয়ে ধরা দিতো,আর আমিও হয়তো সেটা খুব সহজেই মেনে নিতাম,,কেন অপূর্ণতার কষ্ট আমাকে বুঝতে দেও নি? কেন আম্মু কেন?

কথা গুলো বলেই আবারো কাঁদতে থাকে ফাহাদ। রাশেদা বেগম বেশ ভালো ভাবে’ই বুঝতে পারছেন,তার ছেলে খুব বড় রকম না পাওয়ায় ভোগছে। কিন্তু সেটা কি? কিসের জন্য তার ছেলে এমন পাগলের মতো কাঁদছে, তার হাসি খুশি ছেলের চোখে তো কখনো কান্না দেখেন নি তিনি, তাহলে আজ কি এমন হলো যার জন্য ফাহাদ অঝড়ে কাদেই যাচ্ছে…..।
রাশেদা বেগমের মনে হাজার খানেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, যার উওর ওনার জানা নেই,,এদিকে ফাহাদ কে কিভাবে শান্তনা দিবেন সেটাও বুঝতে পারছেন না।তবে তিনি মনে মনে পণ করলেন,ফাহাদের এই অপূর্নতা পূর্ন করবে তিনি…….। তার ছেলের চোখের পানি যে তার সহ্য হয় না। অবশ্য পৃথিবীর কোন মায়েরই সহ্য হয় তার সন্তানের কান্না,,কারণ পৃথিবীর কোন সন্তানের চোখেই কান্না মানায় না…।
রাশেদা বেগম এবার কিছুটা সাহস জুগিয়ে ফাহাদের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন…

— কি হয়েছে বাবা,কাদছিস কেন? কি পাস নি তুই, মা কে বল,মা তোকে এনে দিবো….।

এমন মন গলা কথায় ফাহাদ যেন আরো গলে গেলো,মমতাময়ী এমন স্নেহ যুক্ত মায়ের কথা শুনে ফাহাদ মাকে জড়িয়ে ধরে আরো জোড়ে কাদতে লাগলো।
ফাহাদের মা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন,এখন ফাহাদ কিছুই বলবে না তাকে। যতক্ষণ না তার মন ভালো হবে ততক্ষণ সে কান্না করেই যাবে….

ফাহাদের মা এবার ফাহাদ কে কিছুটা ঠেলে ওয়াশ রুমে পাঠিয়ে দিলেন, সাথে কড়া গলায় বলে গেলেন,
— ওয়াশ রুমে পাঠিয়েছি ফ্রেশ হওয়ার জন্য,কেউ যদি আবার সেখানে বসে কান্না কাটি জুড়ে দেয় তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না….
এটা বলেই ওনি নিচে চলে গেলেন।

এদিকে ফাহাদ, ওয়াশ রুমে ঢুকে ঝর্ণা ছেড়ে অঝড়ে কেদে যাচ্ছে,,,জীবনে ১ম বার না পাওয়ায় ভুগছে,এই কান্না সহজে থামার নয়….।তবে সে মনে মনে পণ করলো সে আর কাদবে না,,সে তো জুইয়ের সামনে জোড় গলায় বলে এসে, সে জুইকে নিজের করেই ছাড়বে,তাহলে সে কেন এত কাদছে,তাকে তো কথা রাখতে হবে,এইভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না……..

ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকলে ফাহাদ, আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভেজা চুল গুলো কে হাত দিয়ে কয়েকবার এপাশ, ওপাশ করে নিলো সে, পড়নে তার নীল রঙ্গের গেন্জি আর টাওজার,অতিরিক্ত কান্নার ফলে চোখ গুলো ফুলে আছে,, বেশ মায়াবী লাগছিলো তাকে…এমন সময় রাশেদা বেগম ফাহাদের রুমে এলেন, হাতে খাবারের প্লেট….ফাহাদ তার মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবারো আয়নায় নিজের দেখায় মননিবেশ করলো,আর বলতে লাগলো
— খাবার এনেছো কেন? আমি এখন খাবো না, নিয়ে যাও।
— না খেলে কি যে জিনিস টা চাইছিস সেই জিনিস টা কি পাওয়া যাবে? খেতে হবে,খেলে শরীর ভালো থাকবে, সাথে মনও ভালো থাকবে, আর এই দুইটা ভালো থাকলে,যা চাইছিস সেটাও পাওয়া যাবে….।

এইটা বলেই রাশেদা বেগম খাবারের লোকমা তুলে ধরলেন ফাহাদের সামনে, ফাহাদ ও আর না করলো না,চুপচাপ লক্ষী ছেলের মতো খেলো…।

সেদিনের পর আজ ৫ দিন কেটে গেলো….ফাহাদ কলেজ যায় না। এদিকে জুই কলেজে আসে,ক্লাস করে বাড়ি চলে যায়,এই কয়দিনে ফাহাদের অভাব টা বেশ ভালো ভাবেই বুঝেছে সে।

৬ দিনে কলেজে আসে ফাহাদ…সাথে গিটার,সকলে তাকে চেপে ধরেছে গান গাওয়ার জন্য,,ফাহাদও আর না করলো না, গিটারের তালে তালে গান ধরলো,মেয়েরা ঘিরে বসেছে ফাহাদ কে,সকলে ফাহাদের কন্ঠের সাথে কন্ঠ মিলাচ্ছে। ঠিক তখন’ই কলেজে প্রবেশ করে জুই, ফাহাদ কে দেখে বেশ আনন্দিত হয় সে,তবে তার চার পাশে এত মেয়েকে দেখে জুইয়ের কিছুটা বিরক্ত লাগে,সে নিজেও বুঝতে পারছে না,ফাহাদের সাথে অন্য মেয়ে থাকলে তার কেন এত খারাপ লাগে? তবে কি এটাই ভালোবাসা? এটাই কি হারানোর ভয়,কে জানে হয় তো বা, এটাই কোন এক প্রকার ভালোবাসা।

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে ছিলো জুই,তখন ফাহাদ দুইটা কাঠ গোলাপ নিয়ে আসে,আলতো করে জুইয়ের খোপায় পড়িয়ে দেয়। জুইও কিছু বললো না,কেবল নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,,ফাহাদ ও কিছুটা অবাক হলো সে ভেবে ছিলো জুই রাগ করবে কিন্তু করে নি, কেন করে নি? আর কিছু না ভেবে’ই এবার সে জুই জিঙ্গাসা করলো….
— আমি যে ফুল পড়িয়ে দিছি, সেটা কি খেয়াল করেছো তুমি?
— হুমম
— তাহলে রাগ করলে না যে?
— সব সময় কি রাগ দেখানোর কথা আছে নাকি?
— না মানে আমার মহা রানী তো রাগী,তার তো রাগ করার কথা,,,অবশ্য রাগ করলে তাকে বেশ ভালোই লাগে….
— ফালতু কথা ছাড়ুন তো ভালো লাগছে না….
— ভালো লাগছে না কেন?
— জানি না।
— এটা কোন কথা?
— হুমম
— আচ্চা বুঝছি মহা রানীর মুড অফ,, কি করি, কি করি, কি করি🤔 হুমম চলো আমার সাথে
— কোথায়?
— আহা! চলো না,গেলেই তো দেখতে পাবে।
— না যাবো না,ভালো লাগছে না…..
— আমার সাথে চলো ভালো লাগবে,,
এইটা বলেই ফাহাদ জুই কে এক প্রকার টেনে টুনেই নিয়ে গেলো…

মধ্যাহ্নের দুপুর,,নদীর পাড়ে আন মনে হেটে যাচ্ছে,জুই আর ফাহাদ,ফাহাদ অবশ্য এটা ওটা বলে জুই কে হাসানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে,তবে তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না…. শেষে বাধ্য হয়ে ফাহাদও চুপ করে গেলো,
দুজনেই নিরবে হাটতে ছিলো,তখন জুই হঠাৎ করেই বলে ওঠলো —
— সরি
ফাহাদ কিছুটা চমকে ওঠে বললো
— কি? কি? কি বললা তুমি?
— বলছি যে সরি( নিচের দিকে তাকিয়ে নত মুখে বললো জুই)
–বাহহহ্ বা,জুই রানি সরি ও বলতে পারে? আমি তো বাপু জোর করেও বলতে পারি না।
— আপনার মতো আমার ওত ইগু নাই
— হুম সেটা তো মাঝে মধ্যে দেখাই যায়😏
— আমি সরি বললাম,আর আপনি ঝগড়া জুরতে চাচ্ছেন?
— নাহহহ না, আমি কেন ঝগড়া জুড়তে যাবো,অতি কষ্টে নিজের ইগুকে দুরে ঠেলে তোমায় নিয়ে বের হয়েছি, ঝগড়া করার জন্য নাকি? মোটেও না….
— তাহলে কেন বের হইছেন শুনি?
— জানতে চাও?
— হ্যা জানতে চাই
— তাহলে চোখ বন্ধ করো
— বাহ রে চোখ কেন বন্ধ করবো…
— এটা নিয়ম।না হলে কিন্তু আমি বলবো না,বলে দিচ্ছি….
এবার জুই আর কিছু বললো না,, নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো,
ফাহাদ ও নিজের চোখ বন্ধ করে, একটু একটু করে জুইয়ের দিকে এগিয়ে গেলো,জুইয়ের প্রতিটি নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে ফাহাদ,,এবার সে আর দেরি না করে, জুইয়ের কোপালে আলতো করে আদরের রেখা একে দিলো,জুই লাফিয়ে ওঠে চোখ খুলে পেললো,,রাগি কন্ঠে বলে ওঠলো…..

— বিশ্বাস করে চোখ বন্ধ করে ছিলাম,আর সেই বিশ্বাসে কি না জল ডেলে দিলেন?
ফাহাদ কিছু নত মুখে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে,কি বলবে বুঝতে পারছে না,হালকা মাথা ওঠিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুটা শব্দ করে বলে ওঠলো
— সরি….
এবার জুই হেসে দিলো….
— বাহবা,ফাহাদ ও আজ কাল সরি বলছে? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?
জুইয়ের এমন কথায় আর হাসিতে বেশ অবাক হয়ে যায় ফাহাদ,সেও ভাবতে লাগে, এটা কি সত্যি জুই?

বেশ কিছুক্ষণ হাটাহাটি করার পর,জুইয়ের চোখে পড়ে আইসক্রিম ওলাকে,সে ফাহাদের কাছে আবদার করে যে,আইসক্রিম খাবে,ফাহাদও আর না করলো সে চলে গেলো আইসক্রিম আনতে…

— মামা আইসক্রিম কত?
– ২০ টাকা
— ২ টা দেন
ফাহাদ আইসক্রিম টা হাতের নেওয়া সঙ্গে সঙ্গে’ই জুইয়ের উচ্চ চিৎকারে কান দাধিয়ে যায়………….

চলবে….?

[ গল্প টি কেমন লাগছে আপনাদের, অবশ্যই তা কমেন্ট বক্সে জানাবেন…… ধন্যবাদ ❤️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here