জীবন মানে তুমি পর্ব:১৪

জীবন মানে তুমি
লেখিকা:H.B.Irini Ori
পর্ব:১৪
(৫০)
অনু আজ দু’দিন ধরে ইয়ারাবীকে প্রচুর মিস করছে।ফোনে কথা হলেও,একে অপরের মাঝে খুব দুরত্ব মনে হচ্ছে।অনুর বাবা-মা রংপুরে থাকেন,তাই ওকে একা এই ফ্লাটে থাকতে হয়।একা বললে খুব ভুল হবে কেননা অর্ধেকের বেশি সময় ইয়ারাবীর সাথে কাটাতো।কিন্তু আজ একাকীত্বটা খুব বেশিই ওকে ঘিরে ধরেছে।এজন্য ইয়ারাবী ওকে বলতে,
-“মাঝে মাঝে কিছু সময় আসে,যখন আমাদেরকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ থাকে।তখন আমাদের খুব একা লাগে,আর যাদের অভ্যাস নেই তারাতো প্রায় পাগল হয়ে যায়।তাই আমি একাকীত্বকে বেশি আপন করে নিয়েছি।কেননা আমার মতে,আমার মতো লাইফ আর অন্য কারো নেই।”
অনু একবার টিভির সামনে বসছে তো একবার বেলকনিতে যাচ্ছে।এখন বিকাল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটা মতো বাজে,সামনের মাঠে বাচ্চারা খেলা করছে।অনু ওর মোটাকে কোলে নিয়ে মাঠের দিকে যায়।হঠাৎ কেউ ওর পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
-“আমি যদি ভুল না করি তাহলে তুমি অনু”
অনু ঘুরে তাকিয়ে দেখে প্রত্যয়-প্রাপ্তর মতো দেখতে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু আসলে কে এখানে ও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।ছেলেটা মনে হয় ওর কথা বুঝতে পেরেছে।তাই মৃদ্যু হেসে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
-“হাই আমি প্রত্যয়,বিয়ের ফাংশনে দেখা হয়েছিলো।”
-“ও হ্যাঁ,মনে পরেছে।তো আপনি এখানে কেন?না মানে ইয়ারাবী বলেছিলো আপনারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাই?”
-“রাইট বাট্ আমার এক খালামনির বাসা এখানে।আর আমাদের ছুটিতো সহজে মেলেনা,তাই এটাকে কাজে লাগাচ্ছি।চলো সামনে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি,সরি তুমি বলার জন্য।আসলে তোমার ফ্রেন্ড আমার ছোট তাই তোমাকে…”
-“কোনো ব্যাপার না…”
প্রত্যয় ওর বিড়ালকে আদর করে বলে,
-“এর নাম কী?”
-“মোটা…”
-“মোটা আবার কারো নাম হয়?”-অবাক চোখে তাকিয়ে কথাটা বলে।অনু ওর তাকানো দেখে হেসে বলে,
-“কেন হবেনা,নাম দিলেই হয়।তাছাড়া ও আমার বাকী বিড়ালদের থেকে বেশি মোটা”
-“কয়টা বিড়াল তোমার?”
-“মোট পাঁচটা,তাছাড়া ছয়-সাতটা এদের আন্ডা-বাচ্চা আছে।আমার বাসার সব জায়গা জুড়ে এদের রাজত্ব।”
প্রত্যয় অনুর কথা শুনে হাসলো।তারপর বললো,
-“মিস করছো খুব বান্ধবীকে?”
-“তাতো করছি,”-মুখ ফুলিয়ে কথাটা বলে অনু।এই কথাটার মধ্যে একটা অভিমান লুকিয়ে আছে।প্রত্যয় হেসে কিছুটা মজার ছলে বলে,
-“যদি ও স্বামী ওকে মানা করে দেয়,কারো সাথে মিশতে।”
কথাটা শুনার সাথে সাথে অনু ছলছল চোখে বলে,
-“সত্যিই কী মেয়েদের বিয়ের পরে স্বাধীনতা হারিয়ে যায়?আমি জানি,জিজু ইয়ারাবীকে মানা করবেনা।আর যদি মানা করে আমি কেন শুনবো?কান টেনে আমার বাসায় নিয়ে আসবো।আমারও একটা অধিকার আছে ওর উপর।”
-“অনু জাস্ট রিল্যাক্স,আমি মজা করে বলেছি।”
-“আপনি মজা করবেন কেন?কেউ আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে মজা করুক আমি চাইনা।”
-“আচ্ছা বাবা সরি,”
অনু আর প্রত্যয় বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে যে যার বাসার দিকে রওনা হলো।বাসায় এসে অনু ইয়ারাবীকে অনেকবার কল করে কিন্তু বারবার ফোন বন্ধ দেখায়।তারপর ও মেঘের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের গ্যাপ পড়াগুলো কম্পিলিট করে নেয়।তবে ওর মাথায় প্রত্যয়ের কথাটা ঘুরতে থাকে।ওর এখন চিন্তা হচ্ছে,
-“যদি ওর স্বামী সত্যিই ওকে মিশতে না দেয়।ওর লেখাপড়া যদি বন্ধ হয়ে যায়।”
বিয়ের দিন ইয়ারাবীর খালা নিকি ওর মামী আর ছোট চাচী বলাবলি করছিলো,ইয়ারাবীকে বিয়ের পর নাও পড়তে দিতে পারে।এমন ধরনের বিভিন্ন কথা তারা বলছিলো।ও মামী যা বলেছিলো,
-“আরে আপা,প্রথম প্রথম সবাই উপর উপর ভালো দেখায়।শ্বশুড়বাড়ির মানুষের কী খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই যে পরের মেয়েকে পড়াবে।”
-“ভাবী ঠিকই বলেছেন,আমার চাচতো ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের সময় এই কথা বলেছিলো কিন্তু পরে যেয়ে আর পড়তে দেয়নি।পড়ার কথা বললে গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতো।”
নিকি ওর ছোট চাচীকে বলে,
-“সে কী? তাহলে মেয়ে এখন কোথায় থাকে?”
-“কেন আবার শ্বশুড়বাড়িতে।বুঝলেন আপা আমাদের পরিবারের একটা রীতি আছে,মেয়েরা লাল শাড়ি পরে যাবে আর কাফনের কাপড় পরে বের হবে।”
অনু এদের কথা শুনে আফসোস করতে থাকে।কোন যামানায় এরা বসবাস করে।এখনো আদি কালের ভ্রান্ত ধারণা মনের মধ্যে পোষন করে রেখেছে।এদের জন্যই আজ আমাদের সমাজের মেয়েদের এই অবস্থা।
অনু শুয়ে শুয়ে চিন্তা করলো,
-“না আমি দাদাভাইয়ের থেকে যতটুকু জানি জিজু খুব ভালো।উনি ইয়ারাবীকে অবশ্যই পড়তে দিবেন।একজন ভালো স্বামী হবেন।সব সময় ওকে ঝড়-ঝাপটা থেকে আগলে রাখবেন।”
কথাগুলো ভাবতেই অনুর পুরানো ক্ষতগুলো আবার জেগে উঠলো।ও আজ ওদেরকে পাত্তা না দিয়ে অন্য চিন্তায় মগ্ন হতে চেষ্টা করে।কেননা এই ক্ষতগুলো ওকে অনেক কষ্ট দেয়।ও আর চাইনা পিছনে ফিরে দেখতে।
(৫১)
সন্ধ্যা থেকে ইয়ারাবী প্রচুর ভয়ে ভয়ে ছিলো।ওর বারবার সেই রাতের কথা মনে পরছে।পিয়াস কিছু করতে পারিনি ঠিকই কিন্তু ওর বাবা ওকে এমন বাজেভাবে মেরেছিলো যে ওর মনে ভয় ঢুকে গেছে।কেননা মি.ফুয়াদের আজও এই ধারণা যে দোষটা ওনার মেয়ের ছিলো,তবে ইরাকদের ভয়ে কিছু বলতে পারেননা।আজ পিয়াসের দৃষ্টি খুব অশ্লীল ছিলো।ওর মনে হচ্ছে পিয়াস ওর সাথে আবারও বাজে কিছু করার চেষ্টা করবে।উপর থেকে ওই স্বপ্ন যা ওকে আরো মানুষিকভাবে ভেঙে দিচ্ছে।
ডিনারের সময় ও নিচে নামেনি।এই নিয়ে ওর বাবা-মা ওকে কম কথা শুনাননি।বাধ্য হয়ে আবরারকে একাই নিচে যেতে হয়।মিসেস রহমান নিজের বাসায় ছিলেন,ইরাকও ফেরেনি তাই ওর ফুপি ওর খাবার রুমে নিয়ে যেয়ে জোর করে কয়েক লুকমা খাইয়ে দেয়।তারপর মেডিসিন দিয়ে বেড়িয়ে আসে।ওর ফুপি যাওয়ার সাথে সাথে ও ওর বেলকনির আর রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
সবার সাথে কথা বলতে বলতে আবরারের রুমে যেতে প্রায় রাত এগারোটা বেজে যায়।কিন্তু রুমে সামনে যেয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে লক করা।ওর বিষয়টা বুঝতে পেরে নক করে।কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সারাশব্দ পায়না।ও সেকেন্ড টাইম যখন নক করে ইয়ারাবীকে ডাকে তখন ও এসে দরজা খুলে দেয়।আবরার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ইয়ারাবীর দিকে ভালো করে দৃষ্টি দেয়।দেখে রাতের পোশাক পরলেও চুলগুলো এলোমেলো,দৃষ্টিতে ভয় মিশে আছে,ফ্যানের বাতাসেও ঘামছে।
আবরার চেন্জ করে এসে বিছানায় ইয়ারাবীর পাশে বসে।মেয়েটা একটা বালিশ কোলের ভিতর নিয়ে একদম বিছানার কর্নারের সাথে মিশে আছে।আবরার ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও কেঁপে উঠে।
-“রিল্যাক্স,ইটস্ মি।ডোন্ট ওরি,রাত অনেক হয়েছে।তোমার ঘুমের প্রয়োজন,চলো শুবে।”
-“অ আপনি শুয়ে পরুন।”
-“আর তুমি?সারারাত জেগে মশা মারবে নাকী?চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরো।আমি এক কথা বারবার রিপিট করিনা।আর এতো ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই,আই এম স্টে উইথ্ ইউ্।কেউ কিছু করতে পারবেনা।”
ইয়ারাবীর ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এখন ঘুমালে একটু পরে ঘুম এমনিতেই ভেঙে যাবে।আর তাছাড়া রাত তিনটার পরেই আমার ঘুম আসে।”
-“আর ইউ ম্যাড্,এতো রাত জেগে থাকলে ব্রেনে ইফেক্ট পরে।লিসেন তুমি রাতে যে কারনে ভয় পাও ওটা তোমার কল্পনা,মাথা থেকে আউট করে দাও দেখবে কিছুই হয়নি।”
-“ক্ কিন্তু….”
-“কোনো কিন্তু নয়, আর জানো মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য। ’ (সুরা : নাবা, আয়াত : ৯-১১)
সুতরাং ঘুমিয়ে পরো।আর এদিকে এসো,একদম কর্নারে পরে যাবে তো।আচ্ছা,খাওয়ার পরে মেডিসিন নিয়েছো।”
-“মনি খাইয়ে দিয়ে গেছে,আপনি ঘুমান আমি কাবার্ড থেকে বালিশগুলা বের করি।”
আবরার কাত হয়ে শুয়ে এক হাতের উপর ভর করে উচু হয়ে বলে,
-“বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার বর্ডারের দরকার হবে বলে মনে হয়না।কাল রাতেও তুমি আমার থেকে এক হাত দূরেই ছিলে।”
ইয়ারাবী নিরুপায় হয়ে শুয়ে পরে।রাতে এক প্রকার না ঘুমাতে পারার জন্য অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া হয়ে গেছে।এটা এক প্রকারের রোগ,এর কারণে মানুষের ওবেসিটি বা স্থূলতা, হৃদরোগ ও টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি মানুষের আয়ু্ও কমে যায়।আর আবরার চাইনা মেয়েটার আর কোনো ক্ষতি হোক,কেননা যখন ইফাজ ওকে ইয়ারাবীর ব্যাপারে বলেছিলো তখন আবরার ওকে ওয়াদা করেছিলো।
ইয়ারাবী শুয়ে পড়লে আবরার ওর গায়ে চাদরটা ঠিক করে দেয়।মেইন সুইচ অফ করে ডিম লাইট জ্বালালে ইয়ারাবী বলে উঠে,
-“আলোটা বন্ধ করে দিন।”
-“কেন?”
-“কিছুনা থাক।”
ইয়ারাবী চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।হঠাৎ ও ওর গায়ে হালকা মৃদ্যু বাতাস উপলব্ধি করে।পাশে তাকিয়ে দেখে আবরার কিছু পড়ে নিজের শরীরে আর ওর শরীরে ফুঁ দিচ্ছে।ইয়ারাবী অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“অনেক আছে যারা এসব মানেনা।আর আপনিতো অনেক বড় একজন ডাক্তার।”
ও হালকা হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
-“ডাক্তার হওয়ার সর্বপ্রথম আমি একজন মুসলিম।আর ইসলাম আমার পরিচয়।হয়তো কাজের চাপে বেশি মানতে পারিনা,তবে যতটুকু পারি চেষ্টা করি।এখন ঘুমানোর চেষ্টা করো।”
ইয়ারাবী ওর কথা শুনে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকে।তবে আবরারের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার এক পর্যায়ে ও ঘুমিয়ে যায়।যখন আবরার বুঝে ও ঘুমিয়ে গেছে তখন নিজেও ঘুমিয়ে পরে।
হালকা আলোয় চারটা ছেলে বিছানা আর ফ্লোরে বসে আছে।হঠাৎ ওদের দরজায় কেউ নক করে।তৌফিক দরজা খুলে দেখে হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে,হাতে একটা ব্যাগ।পিয়াস ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এনেছিস জিনিসগুলো?”
-“হ ভাই আনছি তবে খুব রিস্কী।ভাগ্যিস আজকে ওই ইরাকটা নেই,নয়তো ধরা পরে যেতাম।”
-“ওর সাথে আমার অনেক পুরানো হিসাব বাকী আছে।তবে আজ ইয়ারাবীকে দেখে মাথায় হিট উঠে গেছে,সেই বিকালে একবার দেখেছি আর দেখা হয়নি।”
বাপ্পি ওর কথা শুনে কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“ওসব বাঁধ দাও,আগে খেয়েনি এগুলো।তবে বেশি কড়া খাওয়া যাবেনা।কেননা টের পেলে রক্ষে নেই।”
হৃদয় বাপ্পির কথা শুনে ছোট টেবিলে ব্যাগ থেকে বের করে এক এক করে মদ,সোডা,চাটনি আরো অনেক কিছু রাখলো।বিপ্লব এক এক করে গ্লাসে ঢেলে নিজেরা খাওয়া শুরু করে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,অন্যদিকে পিয়াস খাচ্ছে আর এক ধ্যানে ইয়ারাবীর ছবি দেখছে।তবে ওর চাহনি বলে দিচ্ছে ওর মাথায় কোনো ভয়ংকর প্লান কাজ করছে।
পিয়াস এক ধরনের মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগী,যার ছোট বড় বয়সী নারীদের প্রতি আসক্তি আছে।ওর পরিবার এই কথা জানে কিন্তু ছেলের কোনো চিকিৎসা করেনা।ইয়ারাবীর যখন আট বছর বয়স তখন ওর নজরে পরে।সেবার শুভর মুসলমানির অনুষ্ঠান রংপুরে করা হয়েছিলো।গোসলের পর হালকা পিংক কালারের একটা ফ্রক পরেছিলো,মাথার চুলগুলো ভিজে পিঠে পানি পরেছিলো।ওর খালা ওর চুলগুলো মুছে দিচ্ছিলো তখনি ওই শয়তানের নজরে পরে।আর সেই সময় থেকে সুযোগের অপেক্ষা করছে।
রাত প্রায় দেড়টা বাজে,ঘুমের ভিতরে ইয়ারাবী আবরারের পেটের উপর ওর হাত রাখে।হঠাৎ করে আবরারের মনে হলো কেউ ওর পেটের উপর শক্ত করে কিছু ধরছে।ঘুম ভেগে তাকিয়ে দেখে ইয়ারাবীর হাত,ও ঘুমের ভিতর কাঁপছে।আবরার ওর হাতের ওর হাত রাখতেই ওর ঘুমে ভেঙে গেলে উঠে বসে বাম পাসের কর্নারের দিকে ভয়ের দৃষ্টিতে তাকায়।আবরার ওকে ঝাকিয়ে বলে,
-“ইয়ারাবী কী হয়েছে?”
-“ও্ ওখানে কেউ আছে,আমাকে দেখছে,কাছে অা আসবে ও।”
-“কে আছে ওখানে?দেখো ভালো করে কেউ নেই,জাস্ট কাবার্ড আছে।”
-“না,ক্ কেউ মনে হয় আছে,ফিল করছি আমি।”
-“ওকে লিসেন, ওদিকে তাকাবেনা।তিন কুল,আয়াতুল কুরসি পড়ো,দেখবে ঠিক হয়ে গেছে।”
ইয়ারাবী ওর কথা শুনে সব কিছু পড়ে নরমাল হয় যায়।এখন আর ওর তৃতীয় কোনো ব্যাক্তির উপস্থিতি টের পাচ্ছেনা।আবরার ওকে ছেড়ে উঠতে গেলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“ক্ কোথায় যাচ্ছেন?”
আবরার মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-“যেহেতু মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেছে সেহেতু তাহাজ্জুদের নামাযটা পড়েনি।”
-“আপনি তাহাজ্জুদের নামায পড়েন?”
-“কেন পড়বোনা?যেখানে, রাসুলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)।তাই এটাকে মিস করতে পারিনা।যেদিন উঠতে পারি পড়েনি।তুমি পড়োনা?”
-“আমিতো ঘুমায় তিনটা চারটার দিকে,পড়তে পড়তে খেয়াল থাকেনা।”
-“এখন থেকে আর কোনো হেয়ালি করবেনা, সুস্থ হয়ে গেলে আমার সাথে পড়বে।আচ্ছা তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো আমি ওযু করে আসি।”
ইয়ারাবী মাথা নেরে শুয়ে পড়ে।আবরার ওযু করে এসে দেখে ইয়ারাবী ঘুমিয়ে পড়েছে।ওর গায়ে চাদরটা ঠিক করে দিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে যায়।
(৫২)
আদিবার শরীর এমনিতে ভালো নেই।কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে ভেতরে,কিন্তু বুঝতে পারছেনা।তাই আজ আর ভার্সিটিতে যায়নি।ব্রেকফাস্ট করে একটা বই নিয়ে পরতে বসেছে।এমন সময় ওর বাবা মি.জামান তড়িঘরি করে এসে ওনার স্ত্রীকে বলেন,
-“আদিবের আম্মু,বলছি মেয়েকে রেডি হতে বলো।ছেলেরা এখন দেখতে আসবে।”
মিসেস জামান থালা-বাসন ধুতে ধুতে বলেন,
-“তোমার কী মাথা খারাপ?তোমার মেয়ে এখন বিয়ে করবেনা,কার না কার পছন্দ করলেই হয়ে গেলো।তোমার মেয়ে বলে দিয়েছে কোনো ব্যাংকারকে বিয়ে করবেনা।”
-“একদম বেয়াদবের মতো কথা বলবেনা।আমার ছেলে পছন্দ,বয়স কত হয়েছে খেয়াল আছে,ওর ছোটদেরর বিয়ে হয়ে গেছে।আর উনি বসে পুজো করবেন।যাও মেয়েক রেডি হতে বলো।”
মিসেস জামান বেশি কথা বাড়ালেন না।কারন ওনার স্বামী বেশি ভালো মানুষনা।কারণে আকারণে চিৎকার -চেচামেচি করেন।ওনার জন্য ওই এরিয়ার একটা মানুষও শান্তিতে থাকতে পারেনা।কেউ যদি ওনার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে আসেন তো তাকেও ছেড়ে দিয়ে কথা বলেননা।আদিবের ভাষ্যমতে ওর বাবার মেন্টালি সমস্যা আছে।
মিসেস জামান রুমে যেয়ে মেয়েকে কথাটা বলতেও আদিবা বাঘের মতো গর্জন করে বলে,
-“মা আমি তোমাকে বলেছিনা,আমি আবরার বাদে কাউকে বিয়ে করবোনা।তুমি কথাটা জেনেও আমাকে রেডি হতে বলছো।”
এবার উনি মেয়ের কথা শুনে রেগে যান।চিৎকার করে বলেন,
-শুধু আবরার,আবরার,আবরার।তুই কী পাগল হয়ে গেছিস নাকী।ও এখন ইয়ারাবীর স্বামী,ও তোকে কেন বিয়ে করবে?”
-“তুমিই তো বলেছিলে,ওকে আমার এনে দিবে।তাহলে আমাকে কেন জিজ্ঞাস করছো?”
-“তোর কথা শুনেই তো এমন পরিনতি হয়েছে।মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে একই নাম জপে যাচ্ছিস।”
-“আমি কিছু জানিনা আমার আবরার চাই ব্যাস।”
-“আচ্ছা পাবি,কিন্তু এখন গুছিয়েনে।নয়তো তোর বাপ লঙ্কা-কান্ড বাঁধাবে।”
আদিবা ওর বাবাকে দেখে কিছুটা ভয় পায়,বলতে গেলে ভয় পায় ওনার চিল্লা-চিল্লিতে।ও সৌকেস থেকে একটা বোরকা বের করে পরে নেয়।নেকাব দিয়ে মুখটা বাঁধে।পর্দার দিক থেকে যাকে বলে মাশাল্লাহ্ , কিন্তু মনের ভিতরটা কুৎসিত হয়ে আছে।
পাঁচ-দশ মিনিট পর ,পাত্রপক্ষরা দেখতে আসে ওকে।ছেলে আর ওর বাবা-মা সাথে এসেছে।মেয়েকে পর্দায় দেখে এক ঝটকায় ওনাদের পছন্দ হয়ে যায়।ছেলের নাম হাসান,পেশায় একজন ব্যাংকার।ও আদিবার সাথে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য পারমিশন নিয়ে রুমে যায়।কিছুটা সময় চুপ থাকার পর হাসান বলে,
-“আমাকে কী পছন্দ হয়েছে আপনার?”
-“আমি বিয়েটা করতে চাইনা।আমি বাইরে যেয়ে বলবেন আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি।আশা করি আর কিছু বলতে হবেনা।”
-“কিন্তু আমি মিথ্যা কেন বলতে যাবো?”
-“বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করিনা”
হাসান আর কিছু না বলে আদিবার সাথে বাইরে বেড়িয়ে এসে ওর মা-বাবাকে বলে,
-“মা আমার আদিবাকে পছন্দ হয়েছে,যদি কিছু মনে না করো তাহলে কাবিনটা এখনি সেরে ফেলতে চাই।”
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।আদিবা রেগে হাসানের দিকে তাকায়।হাসান সবার আড়ালে ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে বলে,
-“তুমি যদি অর্ডার না করে রিকুয়েস্ট করতে তবে আমি মানতাম।কেননা কেউ আমাকে অর্ডার করুক সেটা আমার পছন্দ নয়।তাছাড়া বড় কথা আমার বাবা-মায়ের তুমি খুব পছন্দ হয়েছে।আর এনারা আমার দুনিয়া,কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।”
মি.জামানের যেনো খুশি আর ধরেনা।ছেলেরা বড়লোক,টাকা-পয়সা অনেক আছে।তার উপর হলো বাড়ির একমাত্র সন্তান।উনি খুশিতে আটখানা হয়ে পরিচিত একজন কাজিকে ডাকেন।আদিবা ওর মায়ের দিকে তাকায়।মিসেস জামান দেখেও না দেখার ভান করে।কেননা হুজুর বলেছিলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে।
সেদিন দুপুরে আদিবার আকদ হয়ে যায়।ওনারা লান্চ করে চলে গেলে আদিবা রুমের এক একটা জিনিস পত্র ভাঙতে থাকে।মি.জামান রুমে এসে দেখেন ওনার পর্দানশীন মেয়ের উৎশৃঙ্খলা। উনি অবাক হয়ে যান,ওনার স্ত্রীর কাছে কারন জানতে চাইলে উনি চুপ থাকেন।আদিবাকে বলেন,
-“তোমার আকদ হওয়াতে তুমি খুশিনা।ছেলেতো অনেক ভালো।”
-“না কেননা আমার হাসানকে নয় আবরারকে চাই।”-চিৎকার করে আদিবা কথাটা বলে উঠে।মি.জামান অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন,
-“আবরার মানে?”
তারপর ওনার ছোট মেয়ে সাদিয়া সব সত্যি বলে দেয়।উনি রেগে ওনার মেয়েকে জোরে একটা চড় মারেন।আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
-“ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে বলে আর তোমার গায়ে হাত তুলিনি।তোমার জন্য মেয়ের এতো অধঃপতন হয়েছেন,আর তোর লজ্জা করেনা বোনেরা স্বামীর ওপর নজর দিস।”
মি.জামান রাগের মাথায় অনেক মারেন আদিবাকে।উনি কখনো মেয়েদেরকে মারতেন না শুধু বকাবকি করতেন।কিন্তু আজ কাজটা এমনি করেছে যে ওনি গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হন।মি.জামান অর্থলোভী আছেন,ঘুষ খান তবে ওনাদের জন্য অন্যের সংসার ভাঙবে এটা উনি চাননা।
(৫৩)
-“ওই রেবি,ওই ছ্যামরা আমি তোকে বলছি।ওই দিকে কী দেখিস আমার দিকে তাকা।জানিস তোর মাম্মা তোকে কত মিস করছে?ড্যাবড্যাব করে কী দেখিস।চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি আমাকে এই দু’দিনে ভুলে গেছেন।এখন সব তো ইয়ামিলা হয়ে গেছে,খাওয়ায়-দাওয়ায় আমি মানুষের মতো খরগোশ করছি তার কিছুনা।ওমা,ওই কামড়াস ক্যা?”
আবরার রুমে ঢুকে দেখে ইয়ারাবী খরগোশকে কোলে নিয়ে ওর সাথে কথা বলছে।আবরার দেয়ালে হেলান দিয়ে দু’হাত ভাজ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ইয়ারাবীর মধ্যে একটা বাচ্চা লুকিয়ে আছে,কিন্তু প্রকাশ করতে চাচ্ছেনা।
-“ওই তোর তো সাহস মন্দ না মার কামড় দিস।এই দু’দিনে বুঝি এসব শিখেছিস।ভাবলাম তোরে বিয়ে দিবো তা আর হলোনা,এমন পঁচা ছেলেকে কেউ মেয়ে দেয়না।ওমা আহ্,নক এতো বড়ো কেন?কাঁটেনি কেউ।”
আবরার ওর কথাশুনে জোরে জোরে হেসে দেয়।ইয়ারাবী পিছনে তাকিয়ে দেখে আবরার দাঁড়িয়ে আছে।ওর কিছুটা অস্বস্তি হয় এতে।ইয়ারাবী খরগোশটাকে ছেড়ে দিতেই ও রুম থেকে বেরিয়ে যায়।আবরার ইয়ারাবীককে বলে,
-“মা ছেলে মিলে কী করা হচ্ছিলো?”
-“ক্ কিছুনা তো”
-“আচ্ছা,একটা কথা বলোতো,আমি তোমাকে মেরেছি নাকী বকেছি?তাহলে আমাকে দেখলে এমন ভয় পাও কেন?”
ইয়ারাবী চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আবরার জানে ইয়ারাবীর কাছে কোনো উত্তর নেই।ও হেসে ইয়ারাবীর দু’বাহু ধরে বলে,
-“কাল আমি কী বলেছিলাম বলোতো?উই আর ফ্রেন্ডস্।আর ফ্রেন্ডস্ মানে একে অপরের সব কথা সিয়ার করা।বিয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসাপূর্ণ ও বন্ধুত্ব পূর্ণ আবেগময় পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
কুরআনে কারিমের একাধিক আয়াতের মাধ্যমেও এ বিষয়টি বুঝে আসে। যেমন সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর আরেক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকতে পারো এবং তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা রূম : ২১)
বুঝতে পারছো আমি কী বলেছি?এখন থেকে আমার সাথে কথা বলার সময় এসব না দেখি।”
ইয়ারাবী ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বুঝেছি।আচ্ছা আপনিতো লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন তাহলে এসব হাদিস শিখলেন কীভাবে?”
-“যদি তুমি চাও তাহলে যেখানেই থাকোনা কেন,সব পারবে।”
-“আমাকে শিখিয়ে দিবেন?”-কথাটা অনেক আস্তে বলে।আবরার ওর সামনের চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলে,
-“কেন নয়?তুমি আগে সুস্থ হয়ে নাও তারপর সব একে একে শিখিয়ে দিবো।কিন্তু এখন ডিনার টাইম,আর আমার পেটে অলরেডি ইঁদুর রেস শুরু করে দিয়েছে।”
-“আচ্ছা,আপনি যেয়ে ডিনারটা করে নিন।”
-“আর তুমি?”
ইয়ারাবী মাথাটা নিচু করে নেয়।কেননা ওসব ছেলেদের সামনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।আর পিয়াস এসেতো একেবারে ঘাঁটি গেরেছে।উপর থেকে বাসায় ইরাক নেই।যদি পিয়াস উল্টো-পাল্টা কিছু করে তো আবার ওকে কথা শুনতে হবে।এর মাঝে তারা এসে রুমে এসে বলে,
-“ওহ্ সরি সরি,আসলে ভুলে গেছিলাম পুতুল আর একা নয়।”
-“স্টারপু তুমি সব সময় একটু বেশিই ভাবো।এমন কিছুই হচ্ছে না এখানে।”
-“যাই হোক,সবাই খেতে ডাকছে।নিচে এসো তোমরা।”
আবরার ফোনটা টিপতে টিপতে বলে,
-“তোমার বোন বলছে ও যাবেনা।”
-“কেন যাবিনা?ইফাজ ডাকছে তোকে,কী কথা আছে বলে?”
ইয়ারাবী চোখগুলো ছোট ছোট করে বলে,
-“ইফাজ ভাইয়া থেকে একেবারে ইফাজ ব্যাপার কী?”
-“নাটক করবিনা একদম,আবরার ওকে নিয়ে নিচে এসো।”
ইয়ারাবী চশমাটা পরে নেয়,ওর জানা আছে আবরার ওকে না নিয়ে নামবেনা।আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“চশমাটা কী শুধু চোখের জন্য?”
-“না আসলে মাথাব্যথার জন্যেও,আসলে ওইদিন ফুপিকে…”
-“ইটস্ ওকে,মাথাব্যাথা কয়দিন ধরে হয়?”
-“চ্ চার বছর, এখন ঠিক আছে চলুন নিচে যায়।”
ওরা নিচে নেমে দেখে সবাই ডাইনিং এ বসে আছে।ওর চাচতো ভায়েরা ওকে দেখে মাথা নিচু করে নেয় তবে পিয়াস ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে।ইয়ারাবীর চুলগুলো মাথার উপর একটা কাঁটা দিয়ে খোপা করা,পরনে মেজেন্টা কালারের লং গেন্জি,ব্লাক কালারের প্লাজু আর গলায় বড় একটা স্কার্ফ পেচানো।সবদিক থেকে শালীনতা বজায় আছে,তবুও পিয়াসের দৃষ্টি প্রচন্ড নেশাময়।
ইয়ারাবী পিয়াসের দিকে না তাকিয়ে চুপ করে আবরারের পাশে বসে পড়ে।পিয়াস ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোকে দেখলে তো মনে হয়না বিয়ে হয়েছে,নোজ পিন কোথায়?”
আবরার গ্লাস থেকে একটু পানি খেয়ে বলে,
-“ইসলামে কোনো রীতি নেই বিয়ের চিহ্ন হিসাবে নোজ পিন পরার।তাই আমিও চায়না আমার স্ত্রী এমন হারাম কাজ করুন।আর তাছাড়া ওর ব্যাপারে তোমার মাথা না ঘামালেও চলবে।”
পিয়াস এমন কোনো কথা শুনবে বুঝতে পারেনি।ইফাজ ওর কথা শুনে মিটমিট করে হাসে।ফাতেমা সবার প্লেটে খাবার সার্ভ করে দেয়।সবার খাচ্ছে,এমন সময় ইফাজ বলে,
-“তোর প্রফেসারের ফোন এসেছিলো,কিছু নোট দিয়েছে অনুর কাছে।ক্লাস শুরু করার আগে নিয়ে নিস।”
আবরার খেতে খেতে বলে,
-“ভালো কথা মনে করেছো,ইয়ারাবী রাতে তোমার বইসহ যা যা লাগবে ঘুছিয়ে নিবে।কাল সকালে আমরা খেয়ে বেরিয়ে পরবো।”
মি.ফুয়াদ বলে,
-“সেকী কালই চলে যাবে?কিন্তু কেন?”
-“আব্বু ওর এক মাস পরে এক্সাম,আমারও ল্যাবে যাওয়া হয়না।তাই কালই চলে যাবো।”
ওর ছোট চাচী হঠাৎ বলে উঠে,
-“ওকী এখনো পড়াশোনা করবে?”
-“মানে?”
-“না বলছিলাম বাবা,বিয়েতো হয়েই গেছে এখন পড়ে কী লাভ।এখন ঘর সাংসার করবে,বাচ্চা মানুষ করবে,আমি বলি কী তোমরা তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিয়ে নাও।কার মনে কী আছে বলাতো যায়না।ধরে তুমি নিজে টাকা-পয়সা খরচ করে ওকে পড়ালে কিন্তু পরে দেখা গেলো যে মানে বুঝতে পারছো…”
ইয়ারাবীর মুখে খাবার দিতে যেয়েও পারেনা,ওর বাবা-মা যে কোনো কথা বলবেনা তা ওর জানা আছে।কিন্তু অন্যান্য দিন ইফাজ তো চুপ করে থাকেনা তাহলে আজ কেন চুপ করে আছে।ওর কান্না পাচ্ছে খুব, নিজের জীবনের উপর ঘৃণা হচ্ছে ওর।হঠাৎ আবরার বলে উঠে,
-“আমার স্ত্রী আমার টাকা আর পুরোটাই আমার ডিসিশন।সরি টু সে্ আন্টি,আপনারা যদি ভাবেন এসব উল্টো-পাল্টা কান ভাঙানি আমাকে দিবেন আর আমিও সেটা মানবো তাহলে আপনাদের ধারণা ভুল।আমি একজন সাইকোলজিস্ট তাই কার মনে কী চলে একটু হলেও ধারণা করতে পারি।”
আবরার একবার আড়চোখে ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে আবার খেতে শুরু করে আর বলে,
-“প্লেটে যা আছে সবটা খেয়ে তবে উঠবে,কেউ মারা যায়নি যে না খেয়ে শোক পালন করবে।”
ইয়ারাবী ওর কথা শুনে তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করে।এদিকে ইফাজ আর তারা ফ্রিতে বিনোদন নিচ্ছে।হঠাৎ খেতে খেতে ইয়ারাবী ওর পায়ের সাথে কারোর পায়ের স্পর্শ টের পায়।ওর পাশে আবরার বসে আছে,আর ওর সামনে ইফাজ।ইফাজ এমনটা করবেনা তা ও খুব ভালো করে জানে।তাহলে কে করছে।ওর চোখ হঠাৎ করে পিয়াসের দিকে যায়,দেখে ও মিটমিট করে হাসছে।হঠাৎ ইয়ারাবীর কী হয় সেটা ও বুঝতে পারেনা।ও উঠেই পিয়াসকে ঠাস্ করে একটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
এটা দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।বেশি অবাক হয় ইফাজ,কেননা যার নাম শুনলে ভয়ে শিউরে উঠতো আজ তাকে থাপ্পড় মারলো।ইফাজ চামচটা রেখে ওকে বলে,
-“কী হয়েছে পিচ্চি?”
-“ভাইয়া নিকৃষ্ট লোকটা আমার পায়ে বারবার পা দিয়ে স্পর্শ করছিলো।”
ইশানি জোরে ওকে একটা চড় মেরে বলে,
-“বেয়াদব মেয়ে,হতে পারে লেগে গেছে তাই বলে তুই গায়ে হাত তুলবি।বড়দের সম্মান করতে পারিসনা,তুই জানিস না ওর তোর বড়।”
মিসেস ইশানি আবার মারতে গেলে আবরার ওনার হাত ধরে ফেলে আর বলে,
-“আপনি ওর মা হতে পারেন ঠিকই কিন্তু আপনার থেকে এখন অধিকার ওর উপর আমার বেশি।কেমন বাবা-মা আপনারা?মেয়েকে বিশ্বাস না করে বাইরের মানুষকে বিশ্বাস করেন।চার বছর আগে যেটা হয়েছে সেটান পুনরাবৃত্তি আমি হতে দিবোনা।”
আবরার ইয়ারাবীকে নিয়ে উপরে চলে আসে।ওর মুখের জেল লাগিয়ে দেয়,তারপর মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে ওকে শুয়ে পড়তে বলে।ইয়ারাবী চুপচাপ শুয়ে পরে,ওর মধ্যে কোনো অনুভুতি নেই।বারবার সেইদিনের কথা মনে পরে যাচ্ছে,ওই সময়ও ওর কথা কেউ না শুনে ওকে মেরেছিলো।ওর চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে,বুঝা যাচ্ছে ওর খুব মাথাব্যাথা করছে।তবে এই ব্যাথা ওর কাছে কিছুই না।
শব্দ ছাড়া কান্নাগুলো খুব বেশি কষ্টের হয়,আর যদি অবহেলা কাছের মানুষগুলোর হয় তবে মরে যেতে ইচ্ছা করে।এখন ইয়ারাবীর কাছে এটাই মনে হচ্ছে ওই রাতে মারা কেন গেলোনা?কেন ওর খালা ওকে বাঁচালো।
কপালে কারোর স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে ঘুরে দেখে আবরার মাথা আর কপাল ম্যাসাজ করে দিচ্ছে।ইয়ারাবী আস্তে করে বলে,
-“আমি ঠিক আছি লাগবেনা এসব,,,”
-“চুপ, আমার যা করার আমি করছি।”
ইয়ারাবীর এখন কথা বলতে ভালো লাগছেনা।আবরারের ম্যাসাজে কখন ঘুমিয়ে গেছে ও টের পায়নি।আবরার আস্তে করে ওর কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে উঠে পরে।তারপর কাউকে ফোন করে রুম থেকে বের হয়ে দরজা লক করে দেয়।
রাত সাড়ে বারোটার দিকে ইয়ারাবীর ঘুম ভেঙে যায়।ও উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে আবরার বিছানায় নেই,ওয়াশরুমের ও লাইট অফ।দরজা খোলার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে আবরার রুমে ঢুকছে।আবরার ওকে সজাগ দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।ইয়ারাবী ভালো করে ওকে লক্ষ্য করে দেখে,মাথার চুলগুলো এলোমেলো,টি-শার্টটা পুরো ঘামে ভিজা,চোখগুলো খুব ভয়ংকর লাগছে।কোথায় গিয়েছিলো আবরার?আর ওকে দেখে ভয় কেনো পেলো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here