জীবন মানে তুমি পর্ব:১৩

জীবন মানে তুমি
লেখিকা:H.B.Irini Ori
পর্ব:১৩
(৪৭)
জগতে সুন্দর অতি,যাহা যাহা হয়।
গুন না থাকিলে তার,কিছু কিছু নয়||
সুবর্ণ সুবর্ণ জিনি,চম্পকের ফুল।
সুদল সুবাস করে,অন্তরে আকুল||
কিন্তু এই দোষ বড়,মধু নাই তার।
এই হেতু অলি তাহে,করে না বিহার||
কবিতার লাইনগুলো বলে আবরার হেসে ইয়ারাবীকে কোল থেকে নামিয়ে পাহাড়ের উপর দাঁড়ায়।ইয়ারাবীর উচ্চতার ভয় আছে।যেহেতু পাহাড়ের চূড়াটা অনেক উচু তাই ও আবরারের একহাত শক্ত করে ধরে।আবরার ওর দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে বলে,
-“কষ্ট করে তোমাকে এতো উপরে নিয়ে এলাম,তারপর একটা কবিতাও শুনালাম কিন্তু বদলে কিছুই দিলেনা।”
-“আমি আসতে চাইনি,তুমি নিয়ে এসেছো।আর আমিতো জানতাম তুমি শুধু গান গাইতে পারো কিন্তু কবিতাও সুন্দর করে বলতে পারো এটা প্রথম দেখলাম।যাইহোক ধন্যবাদ।”
-“কবিতাটা তোমাকে ডেডিকেট করে বলেছি।”
-“রুপ আর গুনের কবিতা,তার মানে আমাকে নিয়ে নেহায়েত মজা করা।কারণ না আছে আমার রুপ আর গুনের কথাতো বাদ দিলাম।”
আবরার ওকে পাশ থেকে সামনে ঘুড়িয়ে কোমর বন্ধন করে বলে,
-“তোমরা মেয়েরা সব সময় একটু বেশি বুঝো।নিজেদেরকে সর্বদা আইনস্টাইন, নিউটন বা বিদ্যাসাগর না ভাবলে কী চলেনা?সত্য কথা হলো তোমরা মেয়েরা খুব বোকা,অল্পতেই বিশ্বাস করে নাও।”
-“একদম ফালতু কথা বলবেনা”
-“এখানে তো কোনো ফালতু কথা বলিনি,ইউ নো আমি অলওয়েজ ট্রু বলি নট্ লাইক ইউ্।”
কথাটা বলে আবরার বাকা হাসি দেয়।তবে এই হাসির আড়ালে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।”নট্ লাইক ইউ”কথাটা শোনার সাথে সাথে ইয়ারাবী চমকে যায়।আবরারের চোখে চোখ রেখে ভ্রু কিছুটা কুচকে বলে,
-“আমি কখনো তোমাকে মিথ্যা বলিনি তাহলে।”
-“কিন্তু সত্যও বলোনি।সরি…”
-” সরি কেন?”
আবরার ইয়ারাবীর কোমর বন্ধনমুক্ত করে বলে,
-“সরি,বিকজ্ আই্ কান্ট স্পেনড্ মাই্ হোল লাইফ উইথ এ্যা গার্ল লাইক ইউ।”
-“তুমি এসব কী বলছো?দেখো তুমি জানো আমি এগুলো নিয়ে একদম মজা পছন্দ করিনা।”
-“নো ইয়ারাবী,আই ওয়ান্ট টু বি রিলিজ্ড্।কেননা তোমার মতো একজন উইকনেস্,ইল এন্ড যার এমন অতীত আছে তাকে কিছুতেই আমার লাইফে সাফার করতে পারবোনা।বাট্ ডোন্ট ওরি,আমি তোমাকে এমনভাবে মুক্ত করবো কেউ বুঝতেও পারবেনা,এন্ড তোমার কোনো কষ্টও হবেনা।”
ওর মুখে স্লাইড করতে করতে কথাটা বলে।ইয়ারাবী অশ্রুসিক্ত চোখে ওর হাতটা ধরে বলে,
-“আ আবরার,প্লীজ এসব বলোনা।যদি মুক্তি চাও তাহলে বিয়ে কেন করলে?”
আবরার হাসতে হাসতে বলে,
-“মোহ,হ্যাঁ ইয়ারাবী মোহ।তোমার মোহে পরে বিয়ে করেছিলাম।বাট্ দেখো তোমার এতে একটুও কষ্ট হবেনা।কেননা আমি তোমাকে প্রমিস্ করেছিলাম তোমাকে একটু কষ্ট পেতে দেবোনা।তাইতো এখানে নিয়ে এসেছি।এমনিতেও তোমার ব্যাপারে তোমার বাবা-মায়ের কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
ইয়ারাবী ওর কথা শুনে কাঁদতে থাকে।আবরার ইয়ারাবীর বাতাসের তালে উড়া অবাদ্ধ চুলগুলোকে ওর কানের কাছে গুজে দিয়ে চোখ মুছে দেয়।তারপর ইয়ারাবীর দু’বাহু শক্ত করে পাহাড়ের খাদের দিকে মুখ করে ঘুড়িয়ে বলে,
-“জাস্ট সি ইয়ারাবী,এখান থেকে যদি কেউ পরে যায় বা ফেলে দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু দুর্ঘটনায় ধরা হবে।আর ছাড়া এই প্যালেসের আশেপাশে তেমন কেউ নেই যে ঘটনাটা দেখবে।”
-“আব আবরার,কেন আমার সাথে এমন করছো?আমি কখনো তোমার থেকে কিছু লুকায়নি।”
ওর হাতটা আর শক্ত করে চেপে ধরে।ইয়ারাবী ব্যাথায় কুকড়ে যায়।আবরার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“সিরিয়াসলি,তুমি কী ভেবেছো তুমি কিছু না বললে আমি জানবোনা।তোমার প্রতিটা অতীত আমার জানা আছে।”
-“আবরার ট্রাস্ট মি,আমি তখন কিছুই বুঝতাম না।আমার কোনো দোষ নেই এগুতে।আবরার প্লীজ এমন করবেনা,আমার ভয় করছে।”
-“যদি তুমি কিছু বুঝতেই না,দোষও নেই তাহলে আমাকে বলোনি কেন?আমি তোমার স্বামী,জানার অধিকার আছে।এ্যান্সার মি?”
-“ভ্ ভয়ে…”
আবরার খুব জোরে জোরে হাসতে থাকে।তারপর ওকে পাহাড় থেকে একটা ধাক্কা দিয়ে সাথে সাথে এক হাত ধরে বলে,
-“সরি…”
সাথে সাথে ওর হাত ছেড়ে দেয়।ইয়ারাবীর শুধু একটা চিৎকার শুনা যায়।তারপর সবকিছু স্তব্ধ।তবে কী সব শেষ হয়ে গেল?
স্বপ্নটা দেখার সাথে সাথে ঘুম ভেঙে উঠে পরে ইয়ারাবী।প্রচুর ঘামতে থাকে,আশেপাশে তাকিয়ে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে।কিছুটা সময় পর ও বুঝতে পারে নিজের রুমে আছে,আবরারের কথা মনে পরতেই পাশে তাকিয়ে দেখে বিছানাটা খালি।ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা বাজে,দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ।তাহলে এত সকালে কোথায় যাবে।হঠাৎ সাইডে ভালোকরে তাকিয়ে দেখে সাদা পান্জাবি পরে কেউ রুমের এক কর্নারে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছে।আবরারকে দেখে ও খুব স্বস্তি পায়,কিন্তু স্বপ্নটার কথা মনে পরতে ভয়ে কুকড়ে যায়।যদি সত্যিই আবরার ওকে ছেড়ে চলে যায়?অতীতগুলো যদি জেনে আবরার বাকী পাঁচ জনের মতো ওকেও ভুল বোঝে।
আবরার সালাম ফিরিয়ে দেখে ইয়ারাবী ঘুম থেকে উঠে পরেছে।পুরো নামাযটা শেষ করে এসে ওর মাথায় হাত রেখে কিছু একটা পরে ওকে ফু দেয়।
-“উঠে পরলে কেনো আরেকটু ঘুমাতে?এখনতো নামাযও পরতে পারবেনা।”
ইয়ারাবী অবাক চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আপনি কীভাবে জানলেন?”
-“আপনি কীভাবে জানলাম সেটা পরে বলি,আগে বলো পেইন হচ্ছে নাকী?”
ইয়ারাবী ওর কথা শুনে বিস্ময় আর লজ্জায় কুকড়ে যায়।আবরার বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,
-“হাসবেন্ড হই আমি তোমার,সব জানার আর বোঝার অধিকার আছে।আমি জানি তুমি এখনো মন থেকে আমাকে স্বামী হিসাবে মানতে পারোনি বাট্ বন্ধু ভাবতে পারো।আর আমিও তোমার হাসবেন্ড হওয়ার আগে একজন ভালো বন্ধু হতে চাই।”
ইয়ারাবীর মনে হচ্ছে আবরারের কথায় মাঝে এক প্রকার জাদু আছে,বারবার ওর কথাতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু ওই স্বপ্ন,যা ওর মস্তিষ্ককে বারবার সাবধান করছে।কেননা ইয়ারাবী অতীতে এমন কিছু ভয়ানক স্বপ্ন দেখেছিলো যা ওর অতীতের সাথে মিলে গেছিলো।ভয় হচ্ছে,প্রচন্ড ভয় যদি সত্যিই এমন কিছু হয়।
আবরার ওর কোনো রেসপন্স না পেয়ে সামনে তুরি বাজিয়ে বলে,
-“হ্যালো ম্যাম,বারবার কোথায় হারিয়ে যাও।আমি কিন্তু আপনার প্রশ্নের জবাব পায়নি। করবে ফ্রেন্ডশিপ?”
ইয়ারাবী ওর কথায় জোর পুর্বক একটা হাসি দিয়ে বলে,
-“আচ্ছা…”
-“এখন বলো কেমন লাগছে?কোথাও ব্যাথা হচ্ছে?”
-“হালকা ব্যাথা সবারই হয়।আপনি চিন্তা করবেন না।”
-“আমি চিন্তা না করলে কে করবে শুনি, আফটারঅল এখন থেকে আমার লাইফের সাথে না চাইতেও তুমি জুরে গেছো।জীবনের একপ্রকার মানে হয়ে দাঁড়িয়েছো।যেমন চাঁদের সাথে রাতের গভীর সম্পর্ক তেমন তোমার সাথে আমার।”
-“থেকে থেকে এমন মোটিভেশন দেন যা আমি বুঝতে পারিনা।”
আবরার ওর কথা শুনে হেসে দেয়।হঠাৎ কিছুর আওয়াজে আবরার বলে,
-“কীসের শব্দ এটা?”
-“রান্নাঘর থেকে আসছে”
-“এতো সকাল বেলা কিচেনে কে আছে?”
-“আম্মু,আসলে আব্বু নামাযের পরে চা খায়।তাছাড়া সবাই এই টাইমে একবারে উঠে পরে।”
-“ও তাহলে তুমি বসো আমি আসছি।”
-“কোথায় যাচ্ছেন?”
-“এতই এখনি আসছি…”
আবরার কথাটা বলে নিচে এসে দেখে মি.ফুয়াদ সোফায় একটা বুখারি শরীফ হাতে নিয়ে পরছেন।মিসেন ইশানি কিচেনে চা বানাচ্ছেন।মি.ফুয়াদ আবরারকে দেখে বলে,
-“আবরার বাবা,তুমি এতো ভোরে উঠে পরেছো।মনে হয় এই গবীরের ঘরে ঠিকমতো ঘুম হয়নি?”
-“আব্বু কী বলছেন এসব?ঘুম ভালোই হয়েছে,আমি নামাযের টাইমে একবারে উঠে পরি।বাকী সবাই ঘুমাচ্ছে নিশ্চয়ই।”
-“মনে হয়।”
মিসেস ইশানি কিচেন থেকে বের হয়ে আবরারকে দেখে বলে,
-“বাবা তুমি,চা দিবো তোমার?”
-“না আম্মু আমি জগিং এর আগে কিছু খায়না।”
-“ওহ্,তো ইয়ারাবী কোথায়?এখনো মনে হয় পরে পরে ঘুমাচ্ছে।জীবনে ভালো হবে বলে মনে হয়না,স্বামী উঠে পরেছে আর উনি।বিয়ের পরে তো নিজের স্বভাব বদলাতে পারে।”
-“আম্মু ইয়ারাবী উঠে পরেছে।আমি একটা হেল্পের জন্য এসেছি।”
-“কী হেল্প বলো বাবা?”
-“হট ব্যাগ থাকলে সেটা দেন তো একটু।”
-“তোমার কী কোথাও লেগেছে?ঠিক আছো তুমি?”
-“আমি ঠিক আছি,আসলে ইয়ারাবীর দরকার।ওর পেইন হচ্ছে।”
-“ওহ্ ,তো ম্যাডাম উঠতে না উঠতেই অর্ডার করতে শুরু করেছে।নিজে এসেই তো নিতে পারতো।এমন কী হয় বুঝিনা।বাবা তুমি বসো আমি এনে দিচ্ছি।”
মি.ফুয়াদ ইশানি চলে যেতেই বলে,
-“তোমার শ্বাশুড়ির কথায় কিছু মনে নিয়োনা।”
আবরার ওর কথায় হাসে আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
-“একটা মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের কষ্টকে উপলব্ধি করতে পারলোনা।আর উনি তো মা।ওর ব্যাপারে তো জানেন তাহলে,নাকী…”
মিসেস ইশানি ওর হাতে হট ব্যাগটা দিয়ে বলে,
-“এই নাও আর শোনো ওকে বেশি মাথায় তুলবেনা।না মানে আমি বলতে চাচ্ছি এখন বিয়ে হয়েছে তাই।আগে তো কোনো কাজ করতো না তাই এখন আস্তে আস্তে করলে সব শিখে যাবে আরকী।”
-“সেটা আমি বুঝে নিবো।”
আবরার রুমে এসে দেখে ইয়ারাবী বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।শুধু বসে আছে বললে ভুল হবে কোনো বিশেষ চিন্তায় মগ্ন আছে।
-“তোমার জানা উচিত এই সময় এমন উদাসীন থাকতে নেই।নয়তো বেশি বেশি মুড সুইং হয়।”
-“আমার আবার মুড সুইং।”
-“এখন শুয়ে পরোতো।”
-“আপনার মাথা খারাপ।এখন আবার শুবো,রাতে ঘুমিয়েছি।এখন শুলে সবাই রাগ করবে।”
-“কে করবে আর কী করবে আই ডোন্ট কেয়ার।তোমাকে যা বলেছি তাই করবে।”
আবরারে কথায় খানিকটা রাগ প্রকাশ পায়।ইয়ারাবী ভয়ে আর কিছু বলেনা।কেন জানেনা আবরারকে দেখলে ওর ভয় করে।বিশেষ করে ওর চোখ,হ্যাঁ এই চোখের সৌন্দর্যের গভীরতা অনেক কিন্তু রহস্য বিশাল।ও চুপচাপ শুয়ে পরে।আবরার ওর গায়ে চাদরটা টিকমতো দিয়ে ওর যেখানে পেইন হচ্ছে সেখানে হট ব্যাগটা রাখে।এখন ভালোই লাগছে ইয়ারাবীর,আসলেই আগের মাত্রায় এবার বেশি ব্যাথা করছিলো।ইয়ারাবীর ঘুম চলে আসছে।আবরার ওর মাথায় হাত রেখে বলে,
-“ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পরো,আমি জগিং এ বের হচ্ছি।”
ইয়ারাবী মাথা নাড়ায়। ও ব্যাগ থেকে জগিং শ্যুট বের করে পরে বেড়িয়ে যায়।ক্লান্তি,ভয়,দুশ্চিন্তার রেষ কাটিয়ে ঘুম এসে ভর করে ওর চোখের পাতায়।আগে কখনো এমন কেয়ার পায়নি।হ্যাঁ পেয়েছে সেটা ক্ষণিকের জন্য।তাও ওর খালার বা ফুপির কাছে।যখন ওনারা আসতো বা ও যেতো তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও সুখের হাতছানি পেতো।যেখানে না আছে দুঃখ-কষ্ট,না আছে সামান্য ভুলের জন্য কারো বকা বা মার।
(৪৮)
-“কুরআন-সুন্নায় জাদুকে কুফরি ও ধ্বংসকারী কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জাদু করা শয়তানের কাজ।জাদু করা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেন-
তারা ঐ শাস্ত্র বা বিদ্যার অনুসরণ করলো, যা (হজরত) সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেননি; শয়তানরাই কুফর করেছিল।
তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত।
তারা (হারুত-মারুত) উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না।
অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তাদ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে।
তারা ভালরূপে জানে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।(সুরা বাকারা : আয়াত ১০২)
যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তালা জাদু / কুফরি থেকে বিরত থাকতে বলেছেন সেখানে আপনি কীভাবে এমন কাফিরের মতো কাজ করেন।”
মিসেস জামান দু’হাত জোরো করে কান্না করতে করতে বলে,
-“হুজুর যেভাবেই হোক আমার মেয়েকে বাঁচান।”
-“আপনার মেয়েকে বাঁচানোর মালিক আমি নই স্বয়ং আল্লাহ।আমরা যতই পাপ কাজ করিনা কেন,যদি আমরা অনুতপ্ত হয়ে তাঁর দরবারে দু’হাত তুলে তওবা করে কাঁদি তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেন। পাপ করার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন মর্মে কুরআনেও ঘোষণা দেন-
‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)
ইনসাল্লাহ, আমি বিষয়টা দেখছি।আপনার মেয়েকে হিংসা,লোভ এগুলো ভুলতে বলে এক মনে আল্লাহর ইবাদত করতে বলবেন।নামাযের সময় হয়ে গেছে,উঠতে হবে আমাকে।আল্লাহ ভরসা,সব ঠিক হয়ে যাবে।আসসালামুআলাইকুম, আল্লাহ হাফেজ।”
ইমাম হাবিবুল্লাহ কথাটা বলে মসজিদের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যান।মিসেস জামান ওনার দিকে তাকিয়ে থাকেন আর আল্লাহকে ডাকেন।
সকালের দিকে মিসেস জামান নিন্দুকে সাথে নিয়ে সেই গ্রামে যান।নদীর পার হয়ে দেখেন গোবিন্দ ওনাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন।গোবিন্দকে সাথে নিয়ে ওনারা সেই কুদ্দুস নামের লোকের বাড়িতে যান আর সবটা খুলে বলেন।ওই লোকটা কিছু সময় চুপ থেকে মিসেস জামানকে বলেন:
-“যে তাবিজ আর পুতুল দিয়েছিলাম ওগুলো কোথায়?”
-“পুতুলটাতো এখনো ফেলতে পারিনি,ওটা বাসাতেই আছে।আসলে ব্যাস্ততায় মনে ছিলোনা।তবে তাবিজটা ওর বালিশের নিচে রেখে ছিলাম।”
-“পুতুল পরে ফেলবেন সেটা নাই বুজলাম কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তাবিজটা আপনার বাসায় আছে।কেননা শুধু কাপড় দিয়ে তো কাজ হয়নি,ছবিটাতে বেশি কাজ দিবে।এইজন্যই আমি ছবি ব্যাবহার করে ছিলাম,আর ওখানে আপনার মেয়েও ছবি ছিলো।হতে পারে ওই পুতুল আর তাবিজ দুটাই আপনার ঘরে এই জন্য…”
-“না সেটা কী করে হবে?আমি নিজে হাতে ওর বালিশের তলে ওটা রেখেছি।”
-“কোনোভাবে ওটা আপনার বাসায়।যাই হোক যেটা ওই মেয়েটাকে ধাওয়া করার জন্য পাঠিয়ে ছিলাম ওটা এখন আপনার মেয়ের পিছু নিয়েছে।তবে কিছু আছার ওই মেয়ের ও হবে।”
-“ওর যা হয় হোক,বাঁচুক বা মরুক আমার কিছু আশে যায়না।আমার মেয়েকে প্লীজ উদ্ধার করুন।”
-“ক্ষমা করবেন আমার।এ খুব শক্তিশালী। একে ফিরানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমিতো শুধু চালান করেদি আর যা করার ওরাই করে।”
মিসেস জামান আর নিন্দু খালি হাতে ফিরে আসেন।মেয়ের কথা ভেবে মিসেস জামানের দু’চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে।এখন ওনার মনে হচ্ছে,কেন উনি ইয়ারাবীর ক্ষতি করতে চেয়েছিলন?না করেই ওনার উপায় ছিলোনা,কথায় আছে স্বভাব যায়না ধুলি।সেটাই ওনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।কেননা উনি কারো সুখ সহ্য করতে পারেননা।
নৌকার জন্য ওনারা ঘাটে দাঁড়িয়ে ছিলেন।ওই পথ দিয়ে বড় মসজিদের এক হুজুর যাচ্ছিলনে।ওনাদের কান্নার আওয়াজ শুনে এগিয়ে যান।তখন বিস্তারিত জানতে পারেন।মিসেস জামান ওনার সম্পর্কে শুনে ওনাকে অনুরোধ করেন।হুজুর প্রথমে মানা করতে চাইলেও আল্লাহর ইচ্ছা মেনে রাজি হয়ে যান।
মিসেস জামান কিছুটা স্বস্তির সাথে বাসার দিকে রওনা হন।
(৪৯)
বিকালের দিকে তারার সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে দেখে আবরার বেডের উপর হেলান দিয়ে ইয়ারাবীর ফোন টিপছে।ওর আসার শব্দ শুনে ওর দিকে না তাকিয়ে আবরার বলে,
-“নো পাস নো পিন,ফোনে তো কোনো সিকিউরিটি নেই।আমি আজ পর্যন্ত এমন কোনো মেয়ে দেখিনি।এখন তো ক্লাস ফাইভের মেয়ের কাছে ফোন থাকলে সেও ফোনে পাস দেয়।”
ইয়ারাবী ওর কথা শুনে বলে,
-“আই নো বাট্,আমার ফোনে এমন কিছুই নাই।একদিন দিয়েছিলাম কিন্তু যা শুনেছি…আচ্ছা বাদ দিন।”
-“তোমার এফ বিতে কোনো পিক নেই,আই লাইক ইট।তবে চ্যাট লিস্ট এ মেঘ, তয়ন,আদি,শুভ, নিলয়, ইরাক,ইফাজ আর ইমন ছাড়া কোনো ছেলে নেই।এর মধ্যে সবতো তোমার ভাই,আর মেঘ বাদে এই দু’টা তোমার ফ্রেন্ড।”
-“আপনি নিষেধ করলে ওদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবো।”
আবরার উঠে ঠিক হয়ে বসে ইয়ারাবীরর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ফ্রেন্ড কথা বলতেই পারো,তাছাড়া এই দু’টাকে আমি চিনি।বাংলার টিপিক্যাল স্বামীর মতো এটা বলবোনা তুমি কথা বলা বন্ধ করে দাও”
ইয়ারাবী ওর কথাশুনে ফিক করে হেসে দেয়।আবরার ওর হাত ধরে বলে,
-“তবে কাজের বাইরে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে পারবেনা।আমি তোমাকে স্বাধীনতা দিবো,কিন্তু তোমাকে সেটা রক্ষা করতে হবে।বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারবেনা।নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”
-“আমি করবোও না।আপনি আমাকে পড়তে দিবেন,জব করারও পারমিশন দিয়েছেন আমার জন্য এটাই অনেক।”
-“হাসোনা কেন তুমি?হাসলে কী হয়?”
-“যত হাসি ততো কান্না-প্রবাদটা শুনেছেন নিশ্চয়।”
-“বয়স কম হলে কী হবে, সব সময় ম্যাচুরিটি দেখানোর ট্রাই করো।”
-“করতে হয়,নয়তো বেঁচে থাকা মুসকিল…”
আবরার কিছু বলতে যাবে,এর মাঝেই টিকলি এসে বিকালের নাস্তার জন্য ডাক দেয়।ওরাও আর কথা না বাড়িয়ে নিচে যায়।আবরার সোফায় বসার সাথে সাথে জারা একপাশে ঠাস করে বসে পরে,অন্যপাশে নিলয়।ইয়ারাবী ওদের কান্ডে মনে মনে হাসে।কেননা আজ আবরারের নিস্তার নাই।ইয়ারাবী যেয়ে ইরাকরে পাসে বসে।মিসেস ইশানি,আর ওর চাচীরা রান্নাঘরে।এর মধ্যে মিনা এসে চিকেন চপ, পিঠা, মিষ্টি,চিকেন রোল,বার্গার,পুডিং আর বিশেষ করে মিসেস ফাতেমার হাতে বানানো ফুসকা দিয়ে যায়।
ফুসকা দেখে ইফাজ একবার ফুসকার দিকে তাকায় একবার ইয়ারাবীর দিকে।ইফাজ চা খেতে খেতে বলে,
-“ভুলেও ফুসকা খাওয়ার ধান্ধা করবিনা পিচ্চি।”
ইয়ারাবী একটা মাসুম চেহারা করে ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“গুনে গুনে জাস্ট পাঁচটা খাবো।”
-“নো পাঁচটা তো দূরে থাক তুই একটাও খাবিনা।”
-“ফুসকা না খেলে মনির কতো খারাপ লাগবে।তাছাড়া দেখো কেমনভাবে তাকিয়ে আছে ফুসকাগুলো?বলছে ইয়ারাবী প্লীজ একটা হলেও খা আমাদের।তুমি এমন করো কেন?”
-“হ্যাঁ,খাওয়ার পরে যখন ব্যাথা হবে তখন এই ভাইয়ার কথা মনে পরবে।আর ফুসকা কথা বলতে পারে যে তোকে বলছে।আবরার তোমার বৌকে তুমি কিছু বলো,এতদিন আমি সামলেছি এবার তুমি।”
আবরার ওর কথায় হাসতে হাসতে বলে,
-“তোমার বোন তোমার কথা ফেললে তবে তো মানা করবো।ভাই-বোনের চক্ররে আমি নাই।”
-“খাচ্ছিনা আমি হয়েছে।স্টারপু বার্গার দাও,ওটাই গিলবো।”
ইরাক ইয়ারাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“জাস্ট কয়টা দিন ,তারপর এসব খাবি।তাই মুখ ফুলিয়ে না থেকে ঠিক করে খা।বয়স আঠারো আর ওয়েট মাত্র পঁয়তাল্লিশ। ”
তারা মাঝ থেকে পিন্চ করে বলে,
-“ইরাক ভাইয়া ডোন্ট ওরি,বিয়ের পরে সবাই মোটা হয়ে যায়।আমাদের পুতুলও হয়ে যাবে,তাইনা বাবু…”
কথাটা শুনে ইয়ারাবী ড্যাবড্যাব করে তাকায়।সবাই মিটমিট করে হাসতে থাকে,ও রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
-“দাঁড়াও মনিকে ডেকে তোমার বিদায় করছি।মনি……”
তারা তাড়াতাড়ি উঠে ওর মুখ চেপে ধরে আর বলে,
-“পুতুল,তুই না আমার বাচ্চা,আমার কিউট-মাসুম বোন।মাকে ডাকিসনা প্লীজ..”
-“আমার বলার সময় মনে ছিলোনা তাইনা।”
এর মাঝে জারা আবরারের মুখে বড় একটি মিষ্টি পুরে দিয়ে বলে,
-“দুলাভাই,আপু আপনাকে টাচ করতে দিয়েছিলো তো।”
বেচারি ইয়ারাবী কেবল কোকে মুখ দিয়েছিলো,কিন্তু ওর কথায় আচ্ছামতো বিষম খায়।ইরাক তাড়াতাড়ি ওকে পানি দেয়।তারা রাগী চোখে জারার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“জারা এসব কথা কেউ ভাইয়াকে প্রশ্ন করে?”
-“আপিপু কেমন মেয়ে আমি সেটা জানি,তাই দুলাভাইকে করছি।”
আবরার হাসতে হাসতে বলে,
-“তোমার কী ধারণা শালিক পাখি?”
-“দেইনি,মুই জানি।হ্যাঁ,সরি আপিপু আমি জাস্ট জ্বালাতে চাইছিলাম তাই।”
এর মাঝে মিসেস ইশানি এসে ইয়ারাবীকে বলে,
-“শোন ইয়ারাবী,পিয়াস আসবে আজ।ভাল ব্যবহার আমি যেনো দেখতে পায়।”
ইয়ারাবী ওর মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।ইরাক কিছু বলতে যাবে,ইফাজ নিষেধ করে ইশারায়।
-“আমি আসবো না এসে গেছে মাই ডিয়ার আন্টি।”
সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচ ফুট পাঁচ ইন্চির মতো শ্যামলা একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।ডান হাতে ট্যাটু করা,মাথার চুলগুলো জেল দিয়ে স্পাইক করা।মিসেস ইশানি ওকে দেখে মুচকি হেসে বলেন,
-“আসতে দেরী করলি কেনো সোনা?আমি তো বলেছি এটাকে নিজের বাড়ি মনে করবি সব সময়।”
-“হ্যাঁ,আন্টি নিজের বাড়ি মনে করেই তো এলাম,তাছাড়া বাড়িকে যেমন নিজের মনে করি তেমনি জিনিসগুলোকেও।”
-“তোরা বসে কথা বল।আবরার বাবা এ হলো পিয়াস।আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে।পিয়াস ইয়ারাবীর হাসবেন্ড।”
মিসেস ইশানি চলে যাওয়ার পর পিয়াস আবরারের সাথে হাত মিলায়।পিয়াস বলে,
-“শেষমেষ বাজি তুমিই মেরে দিলে ব্রো,নয়তো..”
আবরার কিছু না বলে শুধু ওর চোখের দিকে খেয়াল করছে।কেমন একটা কামনার দৃষ্টি দিচ্ছে ইয়ারাবীর দিকে।পিয়াস ইয়ারাবীর দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে স্ক্যান করে।ওর চোখের দৃষ্টি খুবই ভয়ানক।ইয়ারাবী ভয়ে ওর ভাইয়ের হাত শক্ত করে ধরে।আবরার তাকিয়ে দেখে পিয়াসকে দেখে ইয়ারাবী কেমন একটা ভয় পাচ্ছে।
পিয়াস ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ভালোই তো দেখতে হয়েছিস,বিয়েটা তাহলে হয়ে গেলো।”
ইয়ারাবী ওকে ইগনোর করার চেষ্টা করে তারার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“স্টারপু আমি রুমে যাবো,চলো।”
তারা আর দ্বিতীয় কথা বাড়ায় না কেননা ও ইয়ারাবীর ভয়ের কারনটা জানে।আবরারের কাছে কেমন একটা রহস্য লাগে ব্যাপারটা।ও সবাইকে বাই বলে রুমে এসে দেখে ইয়ারাবী ফ্লোরে বসে কান্না করছে আর তারা ওকে সামলানোর চেষ্টা করছে।তারা আবরারকে দেখে চলে যাবে এমন সময় আবরার বলে,
-“আপু,ইফাজকে একটু বলবেন আমার সাথে দেখা করতে।”
তারা চলে যেতেই আবরার ইয়ারাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“কী হয়েছে ইয়ারাবী? আমাকে কী বলা যাবেনা,একটু আগেই তো ঠিক ছিলে তাহলে?”
-“আবরার আমি একটু শান্তি চায়,আবরার আমাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবেন।আমি এখানে থাকবোনা।”
-“এই প্রথম দেখলাম মেয়েরা বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য কান্না করে।”
ইয়ারাবী কিছুনা বলে হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে।ইফাজ এসে দেখে এই অবস্থা।ও ইয়ারাবীকে কিছু বলেনা।রুমের দরজা বন্ধ করে আবরারকে নিয়ে ছাদে যায়।
-“তারা বললো তুই ডেকেছিস?”
আবরার ছাদের রেলিং এর উপর বসে বলে,
-“এই পিয়াসকে দেখে ইয়ারাবী এমন ভয় কেন পাচ্ছে?আর ইরাকেও দেখলাম রাগ করে বাইরে চলে গেলো।আমি যা ভাবছি সেটা নাকী?কারন আমি ওর লোলুপদৃষ্টি দেখেছি।”
-“বিশ্বাস কর ওর এখানে কোনো দেষ নেই,ওতো তখন কিছু বুঝতোও না।”
-“বিশ্বাস করি বলেই বিয়েটা করেছি।”
-“এক একটা অতীতের মধ্যে পিয়াসও একজন।ও প্রচুর ড্রাগ এডিক্টেড ছেলে।ও মেয়েদেরকে নিজের খেলার পাত্র মনে করে।দ্যা স্টোরি ইজ্ দ্যাট্ পিয়াস ট্রাইড টু মোলেস্ট হিম।একবার নয় দু’বার,একবার যখন ওর আট বছর বয়স ছিলো আরেকবার চৌদ্দ বছরের সময়।কিন্তু পারেনি,কেননা গ্রামে ও সব সময় আমাদের সাথেই যেতো।একবার ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পুকুরের পাড়ে নিয়ে গিয়েছিলো তখন ভাগ্যভালো ভাইয়া ফোন কথা বলতে বলতে দেখে ফেলেছিলো।কিন্তু তারপরের বার রাতে ওর রুমে ঢুকেছিলো।আম্মু যখনি ইয়ারাবীদের সাথে আসতো আম্মু ওকে নিজের কাছে নিয়ে ঘুমাতো।ওইদিন রাতে আম্মু ওয়াসরুমে গিয়েছিলো।কিছু করতে পারিনি বাট্ ওই ঘটনার জন্য ইয়ারাবী আজও ভয় পায়।ইউ্ নো খালু ঘটনাটা জেনে ইয়ারাবীকে মেরে ছিলো।তার ধারণা ইয়ারাবী এমন কিছু করেছে যাতে পিয়াস আকৃষ্ট হয়েছে।তখন থেকে ইয়ারাবী ওর নাম শুনলেও ভয় পেয়ে ওঠে।”
-“ও মেন্টালি সিক হয়ে আছে,ডিপ্রেশনের কারনে রাতে ঘুমাতে পারেনা,ভয় পায় রাতে।তোর খালাও সব জেনে চুপ করে আছে।মেয়েটাকে সবাই মিলে মেন্টালি পেশার দিয়ে ধীরে ধীরে মেরে ফেলছে।”
ইফাজ ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি কিন্তু তোকে বলেছিলাম,ক্ষণিকের জন্য আমিও ভেবেছিলাম তুই ওর মোহে পরেছিস।”
আবরার ইফাজের কথায় হেসে দেয়।হ্যাঁ,ইয়ারাবীকে প্রথম দেখেছিলো ইফাজের ল্যাপটপে। ওর ছবি দেখেই ভালো লেগে গেছিলো ওর।ও কথা ঘুরিয়ে বলে,
-“তোর খালা-খালুর কোনো কারন আছে নিশ্চয়, নয়তো এমন করার কথা নয়।ইয়ারাবীকে সুস্থ করতে হলে ওর আসল কারন জানতে হবে।কেননা মেয়ের সাথে এমন জঘন্য কাজ যে করেছে তাকে সাজা না দিয়ে মেয়েকে কেনো মারবে?”
-“আম্মুর জন্য ইয়ারাবী বেঁচে গিয়েছিলো,নয়তো ওইদিনে খালু ওকে মেরে ফেলতো।”
আবরার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আচ্ছা,ইরাক আর তোর বাবাকে দেখে তোর খালু এত ভয় পায় কেন?”
ইফাজ এসে বলে,
-“মারের কারণে ইয়ারাবীর মাথায় আঘাত লেগে কেটে গেছিলো,টানা দু’সপ্তাহ জ্বর ছিলো।ওইদিন আমরা বাবার ফ্রেন্ডের বাসার ছিলাম।পরদিন এসে যখন আসল ঘটনা শুনে ইরাকতো পিয়াসকে মেরে পুলিশে দিয়েছিলো,আর বাবা খালুর নামেও কেস করেছিলো।সেদিনের পর থেকে কিছুটা চুপ থাকে।”
আবরার আর কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে এসে দেখে ইয়ারাবী এখনো কান্না করছে।যেটা হয়েছে সেটাই মেয়েটার কোনো দোষ নেই।তবুও কেন ওর বাবা ওকে মারলো সেটাই বুঝতে পারছেনা।কাল রাতে ইয়ারাবীর কপালের বেশ কিছুটা উপরে একটা কাঁটা দাগ দেখতে পায়।এখন বুঝতে পারছে দাগটা কিসের।আবরার ইয়ারাবীর পাশে বসে বলে,
-“ভেঙে পরোনা,নিরাশ হয়োনা,সাহায্য আসবেই।”জেনে রেখো নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে”(সুরা বাকারা-২১৪)”
কথাটা শুনে ইয়ারাবী আবরারের দিকে তাকায়।আবরার দু’হাতে ওর মুখটা ধরে বলে,
-“যা হয়েছে সেটাই তোমার কোনো ভুল নেই,তাহলে কাঁদছো কেন?”
ইয়ারাবী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়।আবরার বলে,
-“তুমি না বললে আমি জানবোনা সেটা কখনো ভাববে না।”
হঠাৎ ওর স্বপ্নের কথাটা মনে পরে যায়।ইয়ারাবী ওর হাত ধরে কান্না করতে করতে বলে,
-“প্লীজ আমাকে ভুল বুঝবেন না,আমি সত্যিই এই ব্যাপারে কিছু জানতাম না।প্লীজ আমাকে মারবেননা।”
-“ভয় কেন পাচ্ছো?আর আমি কেন তোমাকে মারবো?শাস্তি ওরা পাবে যারা এসব করে।ডোন্ট ওরি আমি সব সময় তোমার পাশে আছি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here