হুংকার পর্ব-৩

0
1059

#হুংকার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৩

সুলতান সাহেবের আজ ইচ্ছে করছে নিজের প্রাণ দিয়ে দিতে। ইয়ামিনকে নিজের ছেলে বলতেও লজ্জা করছে উনার৷ রমজান সাহেব রাগে কটমট করছেন। আসফিয়া বেগম কপালে হাত রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন৷ উর্মি চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“যদি ইয়ামিন ভাইয়া রে*পিস্ট হয়ে থাকে আমি নিজে তাকে পুলিশদের দিয়ে ধরিয়ে দেবো।”
উর্মি বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার মতামত কি আব্বু?”
“তুমি যেমনটা বলছো তেমনটাই হবে।”
উর্মি মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার বন্ধুকে আসতে বলো।”
মোস্তফা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল উর্মির দিকে। উর্মি রাগী কন্ঠে বলল,
“আসতে বলবে কি না?”
মোস্তফা চুপচাপ পকেট থেকে মোবাইল বের করে আলীকে কল করলো।

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে ইয়ামিন খাটে বসলো৷ ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তার৷ হসপিটালে কিছুক্ষণ বসার পর্যন্ত সময় পায় নি। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করলো। বেশ কিছুক্ষণ পর তার মোবাইল বেজে উঠল। হাতে নিয়ে দেখে ইলিয়াস কল করছে। রিসিভ করে কানে ধরলো,
“বল”
“ভাইয়া আপনি কোথায়?”
“বাসায়”
“দ্রুত বাসা থেকে বের হোন। আর যতদূর সম্ভব চলে যান।”
“কিন্তু কেন?”
“পুলিশ আসবে আপনাকে এরেস্ট করার জন্য।”
“আমি কেন পালাবো? আমি রে*পিস্ট নই।”
“রাবেয়ার প্রত্যেক কান্ড আপনাকে দোষী প্রমাণ করছে।”
“রাবেয়া কেন এমন করছে আমি জানি না। বিশ্বাস কর ইলিয়াস। রাবেয়া ইচ্ছে করে আমাকে ফাঁসাচ্ছে।”
“রাবেয়া এমন মেয়ে না ভাইয়া। ও কেন আপনাকে ফাঁসাবে?”
“ওর হয়ে এত কথা বলছিস কেন?”
ইলিয়াস জবাব দিলো না। ইয়ামিন লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল,
“এই মেয়ের চক্করে পরিস না ইলিয়াস। সেচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে এসেছে এই মেয়ে। এখন আমাকে ফাঁসিয়ে সবাইকে হাত করছে।”
ইলিয়াস দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আপনাকে ভাই ডাকতেও ঘৃণা করছে আমার। এত বাজে চিন্তা-ভাবনা আপনার?”
ইয়ামিন জবাব দিলো না। ইলিয়াস কল কেটে দিলো। ইয়ামিন এক নজর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আবার জানালার দিকে তাকাল। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পরছে। খাট থেকে নেমে জানালার পাশে গেল ইয়ামিন৷

মোস্তফা উর্মির হাত ধরে টেনে কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে আসলো।
“পাগল হয়ে গিয়েছো তুমি? ইয়ামিন এমন কাজ করতে পারে?”
“রাবেয়া মিথ্যে বলছে না।”
“রাবেয়া কিছুই বলেনি। রাবেয়া শুধু ইয়ামিনকে দেখে রিয়েক্ট করেছে।”
“তার রিয়েক্টই সব বলে দিয়েছে মোস্তফা।”
মোস্তফা উর্মির কাঁধে হাত রেখে বলল,
“প্লিজ উর্মি, এলাকায় তোমাদের পরিবারের অনেক নামডাক আছে। ইয়ামিনকে যদি শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে পুলিশ স্টেশন নিয়ে যাওয়া হয় কেমন দেখাবে বলো তো। আর তুমি তোমার ভাইয়ের উপর কেন বিশ্বাস করছো না?”
উর্মি মোস্তফার চোখে চোখ রেখে বলল,
“কারণ ইয়ামিন ভাইয়া এর আগে একবার রাবেয়ার সাথে বেয়াদবি করেছিল।”
মোস্তফা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মানে?”
উর্মি মাথা নিচু করে ফেলল। শক্ত করে নিজের ওড়না চেপে ধরলো সে। মোস্তফা আবার বলল,
“কি হলো? চুপ করে আছো কেন?”
“এটা প্রায় ২ বছর আগের কথা….”

———–

আজ ইলিয়াস ও উর্মির এইচএসসির রেজাল্ট দিয়েছে। পুরো বোর্ডে উর্মি ৫ নাম্বার পজিশন পেয়েছে। আর ইলিয়াস কোনো মতো পাশ করেছে। বাড়িতে আজ হৈহুল্লা। রমজান সাহেব মিষ্টি কিনে সুলতান সাহেবের বাসায় আসলেন। সাথে আসফিয়া বেগম এবং রাবেয়া এসেছে। সুলতান সাহেব ড্রইংরুমে বসে কাজের লোকদের বলছেন খাবারে আজ কী কী বানানো হবে। রমজান সাহেবকে দেখে উনি হাসিমুখে উঠে এগিয়ে গেলেন। সালাম দিয়ে সবাইকে বসতে বললেন। রাবেয়া এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে বলল,
“আংকেল সবাই কোথায়?”
“সবাই ছাদে। তুমিও যাও।”
রাবেয়া মাথা নাড়িয়ে দৌড়ে গেল। ছাদে গিয়ে দেখে উর্মি আর ইলিয়াস ঝগড়া করছে। আর ইয়ামিন এক পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। রাবেয়া ইয়ামিনকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়ে এগিয়ে আসলো। উর্মি রাবেয়াকে দেখে হেসে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
“অনেক অনেক অভিনন্দন আপু।”
“ধন্যবাদ, কখন আসলে?”
“এই মাত্র, কী ব্যাপার তোমরা ঝগড়া করছো কেন?”
উর্মি ইলিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেও একজন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে আমার রেজাল্ট দেখে। বলে আমি না-কি চিটিং করে পাশ করেছি।”
ইলিয়াস বলল,
“জি হ্যাঁ, নাহলে কি ওর মতো মাথা মোটা স্টুডেন্ট পাশ করার?”
উর্মি তেড়ে যেতে নিলো। রাবেয়া উর্মির হাত ধরে বলল,
“আচ্ছা হয়েছে তো। প্লিজ আর ঝগড়া করো না তোমরা। আব্বু আম্মু এসেছেন। চলো আমরা নিচে যাই।”
ইলিয়াস শুনেই চলে গেল। উর্মি আর রাবেয়া কথা বলতে বলতে হেটে যাচ্ছে। রাবেয়া হঠাৎ থেমে ইয়ামিনকে দেখে বলল,
“আপনি আসবেন না?”
ইয়ামিন রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল,
“আমি গিয়ে কী করবো?”
“আমরা যা করবো। মানে কথা বলবো বসে।”
“তোমার সাথে কথা বলার রুচি নেই আমার। যাও এখান থেকে।”
“আপনার সমস্যা কি জানতে পারি? আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করেন কেন?”
ইয়ামিন সিগারেট ফেলে পা দিয়ে নিভিয়ে বলল,
“তোমাকে আমার সহ্য হয় না। হয়েছে? যাও এখন।”
রাবেয়া হনহন করে এগিয়ে এসে ইয়ামিনের বরাবর দাঁড়াল। উর্মি আগ্রহ নিয়ে তাকাল তাদের দিকে। সে কিছুটা এক্সাইটেড। কারণ এখন নাটক শুরু হবে। রাবেয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমি কি দেখতে এতোই খারাপ যে আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না?”
“কেন তুমি তোমার চেহারা আয়নায় দেখে বুঝতে পারো না?”
“যথেষ্ট সুন্দর আমি। নাহলে কী আপনার দু দুটো বন্ধু বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতো আমার বাসায়?”
“খুব অহংকার করো তাই না নিজের রূপ নিয়ে?”
“উঁহু, গর্ব করি।”
“বেশি উড়ো না, পাখা কিভাবে কাটে আমি তা ভালো মতো জানি।”
রাবেয়া ইয়ামিনকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কি করবেন শুনি?”
ইয়ামিনের মাথায় রক্ত উঠে গেল। সবার সামনে নিষ্পাপ সেজে ঘুরে বেড়ায়। অথচ তার সাথে বেয়াদবি করে মেয়েটা। ইয়ামিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“চড় মেরে দাঁত ফেলে দেবো যদি আর একবার ছুঁয়ে দেখো আমায়।”
“আপনি চড় মারবেন আমাকে? সাহস আছে আপনার?”
“তুমি আমার সাহস দেখতে চাও?”
“হ্যাঁ দেখান”
ইয়ামিন রাগে কটমট করছে। রাবেয়া এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে ইয়ামিনের দিকে। ইয়ামিনের ভাবসাব দেখে রাবেয়া ফিক করে হেসে দিলো।
“চেহারা দেখুন নিজের। শুধু শুধু হাওয়ায় হুমকি দিয়ে কি লাভ? আজকের পর থেকে আমার উপর রাগ ঝাড়ার আগে একশত একবার ভেবে নিবেন মিস্টার ইয়ামিন হোসেন।”
বলেই রাবেয়া ঘুরে হাটা ধরলো। ইয়ামিন খোপ করে রাবেয়ার ওড়না ধরে টেনে হাতে নিয়ে নিলো। উর্মি চমকে উঠল ইয়ামিনের কান্ড দেখে। রাবেয়া থমকে দাঁড়িয়ে আছে। উর্মি দৌড়ে এসে রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে ইয়ামিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাইয়া এটা কি করছেন? রাবেয়ার ওড়না ফেরত দিন।”
ইয়ামিন ওড়না মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে বলল,
“আজকের পর থেকে এই মেয়ে যাতে আমার সামনে না আসে। এখন তো শুধু ওর ওড়না টেনেছি পরের বার কাপড় টেনে ছেঁড়ার আগে দুবার ভাববো না।”
উর্মি অবাক না হয়ে পারলো না। তার ভাই হঠাৎ হঠাৎ কেন এমন কান্ড করে সে ভেবে পায় না। রাবেয়া ইয়ামিনের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,
“সামান্য ঝগড়ায় আপনি আমার সম্মান নিয়ে খেলা করছেন?”
ইয়ামিন রাবেয়ার চোখে চোখ রেখে বলল,
“তুমি আমাকে শয়তানের রূপ ডাকো তাই না? ঠিক নাম দিয়েছো। আমি কোন লেভেলে নামতে পারি তুমি আন্দাজও করতে পারবে না।”
বলেই ইয়ামিন রাবেয়ার ওড়নার উপর পা রেখে হেটে চলে গেল। রাবেয়া ইয়ামিনের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে বলল,
“তুমি জিজ্ঞেস করো না আমি কেন তোমার ভাইকে অপছন্দ করি? ঠিক এই কারণে। আর আজ তো উনার কান্ড আমার মনে উনার প্রতি ঘৃণা জমাট হয়ে গিয়েছে। যা কখনো শেষ হবে না।”

———-

মোস্তফা মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। উর্মি আবার বলল,
“ভেবেছিলাম আমার ভাই এমন মানুষ না। কিন্তু হঠাৎ আমার সেদিনটার কথা মনে আসলো। আমার ভাই রাগের মাথায় যে কিছু করতে পারে।”
“কিন্তু রাবেয়ার গণধ*র্ষণ হয়েছে।”
“ইয়ামিন ভাইয়ার অনেক বন্ধু আছে। তাদের মধ্যে দুজন রাবেয়াকে বিয়ে করার জন্য পাগল ছিল।”
মোস্তফা এর উত্তরে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তখনই ইলিয়াস হনহন করতে করতে আসলো। তার রাগ দেখে উর্মি ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি হলো তোমার? এত রেগে আছো কেন?”
“ভাইয়ার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।”
“কি বলেছে?”
“ভাইয়া বলছে রাবেয়া সেচ্ছায় ধ*র্ষণ হয়েছে। আদৌও কি একটা মেয়ে এমন করতে পারে? আমাদের রাবেয়া কি এমন মেয়ে তুই বল।”
উর্মি মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলল,
“শুনলে?”
“রাবেয়া যত পর্যন্ত নিজের মুখে ইয়ামিনের নাম না নেবে আমি ইয়ামিনকে সন্দেহ করবো না। যদিও ওর উপর সন্দেহ করার নানান কারণ আছে।”
ইলিয়াস চেয়ারে বসে বলল,
“ঠিক বললে। আমিও প্রমাণ না পাওয়ার পর্যন্ত ভাইয়ার উপর সন্দেহ করবো না। হ্যাঁ ভাইয়া খুব রাগী তাই বলে এত বড়ো পাপ করতে পারে না।”
.
.
বৃষ্টি পরার কারণে পুরো এলাকার বিদুৎ চলে গিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ইয়ামিন তৈরী হয়ে বাসা থেকে বের হলো। রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েছে এবং সকালেও নাশতা করেনি। গাড়িতে বসে ইলিয়াসকে কল করলো। কিন্তু ইলিয়াস রিসিভ করেনি। উর্মি, বাবা কাওকেই কল দিয়ে পেল না। ইয়ামিন লম্বা নিশ্বাস ফেলে অফিসে চলে গেল। কাজে মন বসছে না। কোনো মতো অর্ধেক বেলা অফিসে কাটিয়ে বেরিয়ে পরলো। সোজা বাসায় ফিরে আসলো। এসে দেখে বাড়ির দরজা খোলা। ভেতরে গিয়ে দেখে মোস্তফা সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। ইয়ামিনকে দেখে উঠে দাঁড়াল। উর্মি রান্নাঘর থেকে কফি নিয়ে বেরিয়ে দেখে ইয়ামিন এসেছে। ইয়ামিনকে দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়ে মোস্তফার দিকে কফি এগিয়ে দিলো। ইয়ামিন চুপচাপ হেটে নিজের ঘরে চলে গেল। মোস্তফা উর্মির হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলল,
“কাজটা ঠিক করলে?”
“আমার কেন জানি ভাইয়াকে দেখলে খুব রাগ হয়।”
“শুনো নি আলী কি বলেছে? ইয়ামিনের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই। প্রমাণ ছাড়া কিভাবে এরেস্ট করবে? রাবেয়া স্টেটমেন্ট দেয়ার মতো অবস্থায় নেই। রশিদ বলেছে যে কোনো সময় কোমায় যেতে পারে।”
“আল্লাহ না করুক। রাবেয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে যাক।”
“তো এখন যাও ইয়ামিনের জন্য চা বানাও।”
উর্মি মাথা নাড়িয়ে উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। মোস্তফা কফির মগ রেখে ইয়ামিনের ঘরে গেল। ইয়ামিন খাটে বসে জুতা খুলছে। মোস্তফা দরজায় ঠকঠক করলো। ইয়ামিন না তাকিয়েই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কারো সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না আমি।”
মোস্তফা এগিয়ে গেল। ইয়ামিনের পাশে দাঁড়াতেই ইয়ামিন মাথা তুলে মোস্তফাকে দেখলো। বিরক্ত চেহারা বানিয়ে বলল,
“মন ভরেছে আমার বোনকে আমার বিরুদ্ধে নিয়ে গিয়ে?”
“ভুল ভাবছো ইয়ামিন। উর্মি রাবেয়ার জন্য খুব টেনশনে আছে। তাই উল্টাপাল্টা ভাবছে।”
ইয়ামিন দাঁড়িয়ে রাগে চিল্লিয়ে বলল,
“রাবেয়াকে নিয়ে টেনশন বলে আমার উপর সন্দেহ করবে। ও কি নিজের ভাইকে চেনে না?”
“শান্ত হও ইয়ামিন। আমি উর্মিকে বুঝিয়েছি। এখন রাগকে ধামাচাপা দিয়ে বাহিরে চলো। কিছুক্ষণের জন্য সকল টেনশন ভুলে আমরা আগের মতো কিছুক্ষণ বসে গল্প করি।”
“যাও তুমি। আমার তোমাদের সাথে গল্প করার সময় নেই।”
তখনই উর্মি আসলো ঘরে। ইয়ামিন তাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল।
“রান্না হয়ে গিয়েছে। আপনারা এসে খেয়ে নিন। আমি বাকি সবার জন্য টিফিনবক্সে নিয়ে নিচ্ছি।”
“তোমরা খেয়ে চলে যাও। খাব না আমি।”
বলেই ইয়ামিন দ্রুত হেটে বাথরুমে চলে গেল। উর্মি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মোস্তফা উর্মির হাত ধরে বলল,
“সব ঠিক হয়ে যাবে উর্মি। আমাদের শুধু ধৈর্য ধরতে হবে।”
উর্মি মাথা নাড়াল। হঠাৎ তার নজর ড্রেসিং টেবিলের উপর গেল। টেবিলের উপর একটা কালো রং এর ব্যাগ রাখা। ব্যাগটার চেইন ভেঙ্গে আছে। উর্মি এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা ধরে একটু উঁচু করতেই একটা মোবাইল আর গোলাপি রং এর হিজাব দেখতে পেলো। উর্মি অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। মোস্তফা বলল,
“কি হয়েছে?”
“রাবেয়ার মোবাইল এবং সেদিন বোরখার সাথে যে হিজাব পড়ে ছিল সেই হিজাব।”
মোস্তফা অবাক হয়ে ব্যাগের দিকে তাকাল। ইয়ামিন বাথরুম থেকে বের হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাদের দেখলো। হনহন করে এগিয়ে এসে ব্যাগটা হাতে নিয়ে রাগী দৃষ্টিতে উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
“বের হও আমার ঘর থেকে।”
উর্মি ইয়ামিনের চোখে চোখ রেখে বলল,
“তার মানে আমার সন্দেহ ঠিক ছিল।”
ইয়ামিন মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলল,
“নিয়ে যাও ওকে এখান থেকে।”
মোস্তফা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি এখনই আলীকে কল দিয়ে বলছি তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।”
“যা মন চায় গিয়ে বলো।”
মোস্তফা উর্মির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। ইয়ামিন লম্বা নিশ্বাস ফেলে ব্যাগের দিকে তাকাল।

উর্মি কপালে হাত দিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। মোস্তফা চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। উর্মিকে শান্তনা দেয়ার মতো শব্দ তার কাছে নেই। উর্মি মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পুলিশ স্টেশন চলো এখনই।”
“হুম, সেখানেই যাচ্ছি।”
“ভাইয়া কেন এমন করলো? রাবেয়াকে উনি এত ঘৃণা করে কেন?”
“তুমি শান্ত হয়ে বসো। আর এই বিষয়ে কাওকে কিছু বলবে না। আমি আলীকে বলে দেখি কি করা যায়।”

নার্সের ডাকে রশিদের ঘুম ভাঙলো। হেলান দিয়ে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছিল।
“বলুন”
“ডক্টর ১৮ ঘন্টা হতে চলল কিন্তু রাবেয়ার জ্ঞান ফিরছে না।”
“মানে কি? তুমি ভুল করে হাই পাওয়ারের ইনজেকশন তো দিয়ে দাও নি?”
“নো ডক্টর।”
রশিদ উঠে আইসিইউ’তে চলে গেল। রাবেয়ার পাশে শুধু তার মা বসে আছে। রশিদ এসে রাবেয়াকে চেক করে আসফিয়া বেগমকে বাহিরে যেতে বলল। আসফিয়া বেগম ভয় পেয়ে গেলেন। রশিদ কোনো মতো উনাকে বুঝিয়ে বাহিরে পাঠাল।

কিছুক্ষণ পর রশিদ আইসিইউ থেকে বের হয়ে সবাইকে এক নজর দেখলো। সবার মুখে চিন্তার ছাপ। রশিদ মাথা নিচু করে বলল,
“রাবেয়া কোমায় চলে গিয়েছে।”
সবাই চমকে উঠল রশিদের কথা শুনে। আসফিয়া বেগম ধপ করে বসে পরলেন। ইলিয়াস আর রমজান সাহেব উনাকে ধরলো। সুলতান সাহেব চিন্তিত স্বরে বললেন,
“ঠিক হয়ে যাবে তো?”
“আমরা নিজের সর্বদা চেষ্টা করেছি। আপনারা চিন্তা করবেন না। রাবেয়াকে আমরা সুস্থ করে তুলবো।”
ইলিয়াস রশিদের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,
“বেঁচে যাবে তো?”
“ইন শাহ আল্লাহ”
বলেই রশিদ চলে গেল। সুলতান সাহেব গিয়ে রমজান সাহেবকে ধরে দাঁড়া করালেন৷ আসফিয়া বেগম থমকে বসে আছেন। রমজান সাহেব হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন সুলতান সাহেবকে ধরে।
“আমাদের সাথে কেন এমন হলো ভাইজান? আমার নিষ্পাপ মেয়েটা তো কারো ক্ষতি করেনি।”
“ধৈর্য ধরো রমজান।”
ইলিয়াস বলল,
“আমি আপনাকে ওয়াদা করছি যে আমাদের রাবেয়ার সর্বনাশ করেছে তাকে তিলে তিলে শেষ করবো।”
.
.
আসরের নামাজ আদায় করে ইয়ামিন মসজিদ থেকে ধীর গতিতে বের হলো। বের হয়ে দেখে আলী ও কয়েকটা কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছে। ইয়ামিন হেটে গেল তার দিকে। আলী ইয়ামিনের দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“সার্চ ওয়ারেন্ট৷ আমরা আপনার বাড়ি সার্চ করবো। চলুন আমাদের সাথে।”
“ঠিক আছে চলুন”
আলী কনস্টেবলদের বলল জিপ চালিয়ে আর সে ইয়ামিনের সাথে গাড়িতে বাসায় আসলো। ইয়ামিন এসে দেখে উর্মি ও মোস্তফা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উর্মির চেহারায় রাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সবাই ইয়ামিনের ঘরে গেল। ইয়ামিন চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তারা নিজের কাজ করছে। ইয়ামিনের ঘর থেকে কোনো প্রমাণ না পেয়ে অন্যান্য ঘর সার্চ করলো। পুরো বাড়ির প্রত্যেকটি জায়গা ভালো মতো দেখেও কিছু না পেয়ে সবাই হতাশ হলো। ইয়ামিন সোফায় আয়েস করে বসে আছে। উর্মি হনহন করে এসে ইয়ামিনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“কোথায় লুকিয়েছেন ব্যাগ?”
ইয়ামিন শান্ত দৃষ্টিতে উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিসের ব্যাগ?”
“লুকাবেন না। রাবেয়ার জামা, মোবাইল সব আপনার কাছে।”
“তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে এসব কিছু আমার কাছে আছে?”
উর্মি ঝুঁকে ইয়ামিনের চোখে চোখ রেখে বলল,
“আপনাকে ভাই ডাকতে ঘৃণা হচ্ছে আমার। আপনি কিভাবে পারলেন এসব করতে?”
ইয়ামিন কিছু বলল না। মোস্তফা এসে উর্মির হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“এই মানুষটার সাথে তর্ক করে লাভ নেই। ইলিয়াস কল দিয়ে বলল রাবেয়া কোমায় চলে গিয়েছে। আমাদের এখনই হসপিটাল যেতে হবে।”
উর্মি অবাক হয়ে মোস্তফার দিকে তাকাল। এই কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে তারা? আর কতদিন ধৈর্য ধরে রাখতে হবে বুঝতে পারছে না। আলী এসে ইয়ামিনের দিকে সেই কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
“সাইন করুন। পুরো বাড়ি খুঁজেও কিছু পাই নি।”
“পাবেনও না। কারণ আমার কাছে কিছু নেই।”
উর্মি তেড়ে গিয়ে ইয়ামিনের কলার ধরে বলল,
“আপনি আমার ভাই হতেই পারেন না। এত নির্লজ্জ এত বাজে মানুষ আমার ভাই কখনোই হতে পারে না।”
ইয়ামিন এখনো শান্ত হয়ে বসে আছে৷ মোস্তফা উর্মিকে ছাড়িয়ে বুকে ভরে নিলো। উর্মি শব্দ করে কাঁদছে। ইয়ামিন নিজের পাঞ্জাবির কলার ঠিক করে বলল,
“সাবধান উর্মি আমি না হলেও তোমার কাছের থেকে কাছের মানুষও ধ*র্ষক হতে পারে।”
উর্মি রাগী কন্ঠে বলল,
“খবরদার, মোস্তফার সম্পর্কে কিছু বলবেন না। সে আপনার মতো খারাপ না।”
ইয়ামিন লম্বা নিশ্বাস ফেলে আলীর হাত থেকে কাগজ নিয়ে সাইন করে আবার ফিরিয়ে দিলো। আলী “আসি” বলে কনস্টেবলদের নিয়ে চলে গেল। উর্মি আর মোস্তফাও হাঁটা ধরলো। তারা যেতেই ইয়ামিন দরজার দিকে গেল। পুলিশ জিপ ও মোস্তফার গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। সে নিজের গাড়ির দিকে তাকাল। শান্ত গলায় বলল,
“আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে অচল পুলিশ টিম। বাড়ি সার্চ করলো কিন্তু গাড়ি না। সার্চ করলে, কিছু তো পেয়ে যেত।”

চলবে…….

[আমি এই প্রথম থ্রিলার গল্প লিখলাম। জানি না কেমন হচ্ছে। কোনো জায়গায় ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিয়েন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here