অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া পর্ব_১৭
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
২৭.
ইফদিয়ার চোখ ফুলে গিয়েছে। কান্নারত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে ছিল। মিসেস হালিমা কয়েকবার দরজায় এসে কড়া নাড়লেন। কিন্তু ভেতরের পিনপন নিরবতা অনুধাবন করলেন। তিনি দরজায় কড়াঘাত করা থামিয়ে দিলেন। ভীষণ অস্বস্তিকর মনোবল সামলে ড্রয়িং রুমে ফিরে আসলেন। মেয়েটিকে খাবারের সময় চার-পাঁচবার ডেকে ছিল। তথাপি কোনো উত্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি রুমের দ্বারে গেলেন। ফলাফল নিশ্চুপতায় চলেই আসলেন। বোধ হয় মেয়েটা পরম ঘুমে ঘুমাচ্ছেন ভেবে মিসেস হালিমা স্মিত হাসি দিলেন।
চিন্তিত দম ছেড়ে মিসেস জাবিয়ার রুমে প্রবেশ করলেন। তিনি বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে আছেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন। মিসেস হালিমা টের না পাওয়ার মত আলতো পায়ে হেঁটে আসলেন বিছানার কাছে।
মিসেস জাবিয়া আচ করতে পেরে অর্ধবুজা চোখ উম্মুক্ত করে তাকান। মিসেস হালিমাকে দেখে মৃদু ঠোঁট নেড়ে হাসার চেষ্টা করলেন। তিনি হাতের ইশারায় বসতে বললেন মিসেস হালিমাকে। তিনিও বিনাবাক্যে বসে মালকিনের হাত ধরলেন। সুস্পষ্ট প্রণয়ঘটিত গলায় বলেন,
‘আপা আর কত এনে শুইয়া থাকবেন। যাবত জীবনে বাচ্চারা ওনেরে ছাইড়া মরিয়া হয়ে থাহে। ইফু মামুনি এহনো খানা খাইলো না।’
মিসেস জাবিয়া স্বত্তরে চোখের পাতা স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় পলক ফেললেন। যার অর্থ বুঝা মিসেস হালিমার পক্ষে দুরুহ! ঠোঁট কামড়ে অবুঝের মত নিজের মাথা উপর-নিচ নাড়লেন তিনি। মিসেস জাবিয়া জোরালো শ্বাস ছেড়ে পুনরায় মুখ ঘুরিয়ে চোখ বুজে নিলেন। মিসেস হালিমা দেওয়ালে টাঙানো ঘড়ির দিকে দৃষ্টপাত করলেন। এখন সময়ের কাঁটায় ৪টা বেজেছে। আসরের সময় আরম্ভ হয়েছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ঘড়িতে সময়ের প্রবাহমান গতিতে তিনিও বসে থাকলেন না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে খাবার এনে মিসেস জাবিয়াকে খাওয়ায় দিলেন। সযত্নে ওষুধ সেবন করিয়ে সাদুরে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন মিসেস জাবিয়াকে।
ঘণ্টাখানিক পেড়ানোর পর হতদন্ত হয়ে বাসায় প্রবেশ করে ইসমাইল। সে বাসায় ফিরে এসে মিসেস হালিমাকে দেখল। চিন্তিত দশায় পায়চারী করছেন তিনি। ইসমাইল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে।
‘কাকীমা আপনি কি চিন্তিত কোনো বিষয় নিয়ে!’
মিসেস হালিমা ভেবাচেকা খেয়ে গেলেন। তিনি ইফদিয়ার চিন্তায় বিভোর ছিলেন। রাত পোহালো তাও রুমের দরজা বন্ধ দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছেন। ইসমাইল যে কবে বাসায় এসে গেল তারও টের পেলেন না মিসেস হালিমা। ইসমাইল নিজের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে মেডিক্যাল ইন্ট্রুমেন্টে ব্যবহৃত ব্যাগটি টেবিলের উপর রাখল।
মিসেস হালিমাকে সোফায় বসিয়ে শান্ত ভঙ্গিমায় পুনরায় প্রশ্ন করলেন।
তিনি ইতস্ততবোধক কণ্ঠে জবাব দিলেন।
‘বাবা ইফু মামুনি সেই বিকালে আইসা রুমে ঢুইকা ছিল। এহনো বাইর হই নাই। মনটা বড্ড আনচান করতাছে। একটু গিয়ে ডাক না। মাইয়াটা খানাও খাইলো না।’
ইসমাইল রাগমিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
‘কি ইফুপাখি এখনো খাই নি আর রাত হয়ে গেল এখনো রুমে আছে। তুমি এই কথা মাত্র জানাচ্ছো!’
‘মাফ কইরো বাবা। মুই ভাবছি মামুনি ক্লান্ত। কিন্তু এই তো দেহি কোনো কারণে রুম বন্ধ কইরা আছে । দেহো না গিয়া।’
ইসমাইল ফ্রেশ না হয়েই ছুটে এলো বোনের রুমের দরজার সামনে। নিজেকে উত্তেজিত না করে স্বাভাবিক করল ইসমাইল। হাত উচিয়ে দরজায় এক-দুবার কড়া নেড়ে স্বাভাবিক সুরে বলে,
‘ওপেন দ্যা ডোর ইফুপাখি।’
ভেতর থেকে ভাবলেশনহীন আওয়াজ ভেসে আসছে। কোনো মানবের চিহ্নও যেন সেখানে নেই এমন দশা। ইসমাইল ঠোঁটযুগল ভিজিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ছেড়ে পুনরায় বলে,
‘বোনু পাখি প্লিজ দরজা খুল। কি হয়েছে আমায় বল!’
ইসমাইল চোখ খুলে এবার নিশ্চিত হলো। ভেতরে কোনো অঘটন ঘটেছে। না হলে দরজা বন্ধ করে রাখার মত মেয়ে তার বোন নয়। ভেবেই ইসমাইল সীমিত পরিমাণে পিছিয়ে এলো। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত নিচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ দরজা খুলে দিল ইফদিয়ার। ইসমাইল থমকে যায়। তার পুতুলের মত বোনটির বিধ্বস্ত মুখখানি ইসমাইলের হৃদয়ে আগুনের মত ধাওয়া করছে। বোনের কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সে উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে কাতর কণ্ঠে বলে,
‘ইফুপাখি কি হয়েছে তোর! কাঁদছিলি কেন এই কি হাল করেছিস মুখের। কেউ কি কিছু করেছে তোর সঙ্গে। প্লিজ বোন মুখ খুল। তোর তোর ভাই আছে না। তোকে সব বিপদ থেকে আগলে রাখবে। কেউ কিছু করলে, বললে নিদ্বিধায় বল। তাকে হাতের কাছে এনে পিছে জবাই করে দেব।’
ইসমাইল রাগে ফেটে যাচ্ছে। তার মাথায় যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তার বোনের বিধ্বস্ত চাহনী। ইফদিয়ার মন তখনো বেকাবু হয়ে আছে। ভাইকে কাছে পেয়ে এক পলক চোখ তুলে তাকায় ইফদিয়ার। ইসমাইল এর চোখে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিশর্মা রুপ দেখা দিয়েছে। ভাইয়ের বুক থেকে মাথা আলগা করে সরে এলো ইফদিয়ার। কি ভেবে যেন জট করে ভাইকে চেপে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। এতক্ষণ বুঝি পরম যত্নশীল বুকের অপেক্ষায় প্রহর গুণছিল সে। তার আপন সত্তার পরিপূরক ভাইয়ের মত ভাই পেয়েছে সে। ভাইকে আঁকড়ে রেখে ফুঁপানো কণ্ঠে বলে,
‘কেন ভাইয়া পৃথিবীতে কেউ বুঝে না কেন ভালোবাসার মূল্য। খুব বেশি ক্ষতি হতো। যদি একটু আগলে নিতো বুকের মাঝাড়ে, যদি না পরম শান্তি পেতে দিতো। ও ভাইয়া বলো না মানুষের মনমানসিকতায় সত্যতা বিচারের মর্মটা কেনো থাকে না।’
ইসমাইল বুঝতে পারছে না তার বোন আজগুবি কথা কেন বলছে। এই আবেগ জড়ানো ব্যক্তগুলি শুধু তখনি একজন মানুষের কাছ থেকে শুনা যায়। যখন মানুষটা নিদারুণ ভালোবাসায় জড়িয়ে হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে। তার বোনের সঙ্গেও কি অকস্মাৎ কিছু ঘটেছে!
ভাবতেও কলিজার পানি যেন শুকিয়ে গেল তার। বোনকে আলগা হাতে স্পর্শ করে কাঁধে বাঁ হাত রেখে ডান হাতে চোখের পানি মুছে দিল সে। সন্দেহজনক কণ্ঠে ইসমাইল ইফদিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে।
‘ইফুপাখি কে সেই ছেলে!’
ইফদিয়ার ভয়ার্ত দৃষ্টিতে পিটপিটিয়ে তাকায় ইসমাইল এর দিকে। তার অবুঝ মন জানতো না সে কি করে বসেছে। তার ভাইয়ের সামনে আবেগপূর্ণ মনোভাব উতলে দিয়েছে। ইফদিয়ার নিজের ভুল বুঝতে পেরে শুকনো ঢোক গিলে। ইসমাইল বোনের চোখে নিশ্চত ভীতি রুপ দেখছে। বোনকে শান্ত করতে অগ্নি ভঙ্গিমা বদলে বলে,
‘সুন্দর করে নাম বল বাকিটা আমি দেখে নিবো।’
‘কিছু না ভাইয়া। আসলে পেট ব্যথা করছিল!’
‘সত্যি বলছিস কেমনে বুঝব। কারণ তুই একটু আগে!’
‘ওগুলো স্বয়ং সাজানো এক্টিং করছিলাম। আসলে নতুন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কেউ রেগিং দিলে একই রুপে এক্ট করব ব্যস।’
নিচু গলায় শেষের কথাগুলো বলে। ইসমাইল ভ্রু বাঁকিয়ে সন্দেহটা গাড় করে দু হাত বুকের উপর গুজে বলে,
‘তাহলে কান্না করছিস কেন! এক্টিং এ রিয়েলিটি টেয়ারর্স বেমানান।’
‘উফ ভাইয়া আমার পেট ব্যথা করছে। ও কাকীমা খেতে দাও আর ন্যাপা এনে দিও।’
ইসমাইল এর বুকের জ্বালা শান্তি পেলেও বোনের হঠাৎ বিধ্বস্ত রুপের পরিবর্তনে খটকা লাগছে। আসলে কি তার বোনের জীবনে কেউ ছিল নাকি আছে! ভেবেও কুল কিনারা পাচ্ছে না ইসমাইল। ইফদিয়ার রুমের ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। পেটে সত্যি তার ব্যথা করছিল। ইসমাইল আন্দাজ করেছে তার বোনের কেনো পেট ব্যথা করছে। তাই সময় অতিবাহিত না করে নিজ রুমে চলে গেল। মিসেস হালিমা প্রথমে কিছু বুঝলেন না ইফদিয়ার অকস্মাৎ কান্না করা। কিন্তু পরিবেশ শান্ত হওয়ায় তিনিও প্রশান্তি লাভ করলেন।
মিসেস হালিমা ইফদিয়ার রুমে খাবার নিয়ে এলেন। বিছানার চাদরে সীমিত পরিমাণ রক্তের ফুটা লক্ষ করে চমকালেন। মনে মনে আউলে নিলেন।
‘আল্লাহ মাইয়া কি হাত কাটলো নি! কিতা হইলো গো মামুনির। জানতে হইবো।’
ইফদিয়ার সদ্য গোসল করে মাথা মুছতে মুছতে বের হলো। ঢিলেঢালা প্লাজু আর একটি বারবিকিউ রঙের টিশার্ট পড়েছে। বিছানার দিকে তার নজর আঁটকে গেল। রক্ত দেখে লজ্জায় মাথা নুয়ে নিল। আজ তার পিরিয়ডের ডেট ছিল আচ করতে পারিনি। ঘুমের মধ্যে কখন শুরু হলো সেটাও জানতে পারল না। উঠে দেখে রাত হয়ে গেছে আর এই দশা। তার উপর বাহির থেকে ভাইয়ের চিন্তিত কণ্ঠ দুটানায় পড়ে গিয়ে ছিল। বিছানার চাঁদর মোড়ে দিল আর গায়ে ফুতয়া জড়িয়ে নিল। যাতে ভাইয়ের সামনে লজ্জিত না হতে হয়। বুদ্ধি কাটিয়ে কাজ করলেও কাকীমার সামনে ত্রপাটে কেঁপে উঠল। মিসেস হালিমা সরু দৃষ্টিতে ইফদিয়ার লাজুক অবস্থা পরখ করছেন। পরক্ষণে রক্তগুলো কিসের বুঝতে পেরে অনুচিন্তা ছেড়ে বলেন,
‘শোন মামুনি খাবার রাইখা যাইতাছি। চাঁদর মুই ধুইয়া দিমু। তুই খাবার খাইয়া নতুন চাঁদর বিছাইয়া শুইয়া থাক। পেটে জোর কাটাইস না ব্যথা করব।’
ইফদিয়ার মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। মিসেস হালিমা পুরুনো চাঁদর উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। ইফদিয়ার হাঁফ শ্বাস ছেড়ে দরজা ভিজিয়ে দিল। পড়ার টেবিলের কাছে এসে ক্যালেন্ডারে তারিখ দেখে নিল কোন দিন শুরু হয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ করতে। তারিখ দেখে অসহায় কণ্ঠে বলে,
‘ইশ! পুরু পাঁচদিন কেমনে কাটাবো। যে গণহারে দুদিন ব্যথা করে। আল্লাহ এত কষ্ট কেন হয় এই পিরিয়ডে। ধুর ভাল্লাগে না।’
অসহ্য হয়ে সোফার উপর বসে পড়ে। তলপেটে ভীষণ ব্যথা অনুভব করছে। পিরিয়ড শুরু হলে প্রথমদিন ব্যথা করবে এটাই স্বাভাবিক। সোফায় গা হেলিয়ে দিয়ে ভাবে।
‘সহস্র ব্যথাও দূর হত একটুখানি আপনার #ছোঁয়া-তে। অস্তিত্বের নিমীলিত নয়নে কেনো আপনার পায়ের রেখা মাটিতে দেখি! কেনো পায় আপনার পায়ের ছোঁয়া মাটিতে! কেনো অক্ষি উম্মুক্ত করিলে আপনার মুখশ্রী দেখার ব্যকুলতা ঘিরে ধরে। বলিবেন কি করিলে পাবো আপনায়!
কি করিলে ছোঁয়া হবে আমাদের অস্তিত্বের মিলনপূর্ণ রাত্রিতে। আপনি আসিবেন কি কখনো ফিরে আমার #অস্তিত্বে। চাই শুধু আপনারি ছোঁয়া।’
চোখদ্বয় বুজতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে স্বচ্ছ অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে। খাবারের ঘ্রাণ আসছে তাও মুখে পুরতে মন সায় দিচ্ছে না ইফদিয়ার। তবুও তলপেটের দরুণ যন্ত্রণা আর খিদার পীড়নে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে খেতে লাগল।
২৮.
মধ্য রাতের তারাকার বিলাস কতটা সুন্দর তা ধারণক্ষমতাহীন সকলের কাছে। কিন্তু এক রাত জাগা পাখি জানে অমাবস্যার রাত কতটা না বিলাসবহুল হয়। যাবিয়াজ হোস্টেলে রুমের বেলকনিতে কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধোঁয়া উঠা কফির মগে এক চুমুক দিয়ে এক ধ্যানে আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছে যাবিয়াজ। আজ তার মন না বিষাদ, না বিষন্ন কিন্তু প্রিয় মানুষের মনের ক্ষতিগ্রস্থে নিহত হয়েছে মনের কেন্দ্রীয় অনুভূতিগুলো। ‘রাত পোহালে কষ্ট বাড়ে’ এর মর্ম উপলদ্ধি যাবিয়াজের মনে দৃঢ়ভাবে নাড়া দিচ্ছে।
আকাশে দুটি পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের গায়ে ঘন ছাই রঙের মধ্যে কালশিরা দাগকাটা রঙের মিশ্রণ, পাখাগুলো উম্মুক্ত করে দুজন একসঙ্গে উড়ে বেড়াচ্ছে। বড় আকাশের দিকে দূর দূরান্তে তারা উড়ন্ত পাখি।
এশারের নামাজ পড়ে যাবিয়াজ রুমে প্রবেশ করে নি। দিবাভাগে কম্পিউটারে প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বিকালের দিকে দু-তিন রোগীর চেকআপ করে হাত-পায়ের ভীষণ ধকল গেল। রাতে বন্ধুগণের সঙ্গে বাহিরে হেঁটে গল্পকথনে ব্যস্ত ছিল।
তিনবন্ধু ক্লান্ত হয়ে নামাজের পরিশেষে রুমে আসে। দু’বন্ধু নিদ্রামগ্ন হলেও যাবিয়াজ পারিনি নিদ্রায় চোখ বুজতে। চোখ বুজলেই যে ইফদিয়ার ছলছল দৃষ্টি চোখের পরশে ভেসে উঠে। তখনি হৃদপিন্ডের মাঝাড়ে ‘ইফদিয়ার’ নামক মানুষটির চাপা কষ্টের বাড় ধরা দেয়। তবুও এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য সব লন্ডভন্ড করে দিল। মনের গহীনে কখনো কখনো ইফদিয়ার বলা কথাগুলি সত্য মনে হয়। আনমনে কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
‘রাত যত অন্ধকার হয়, তারাগুলো
আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
দুঃখ আরো গভীর হয়, সৃষ্টিকর্তা
আরো কাছাকাছি থাকে।
ওহে অপ্সরী কেনো করিলাম তোমার হৃদয়ে আঘাত!
জানিলে তুমি ক্ষত হবে শতবার।
তুমি আমার রাত। যে রাত মানে গভীর নেশা,
স্বপ্ন দেখার আশা। লুকিয়ে থাকা উষ্ণ ভালোবাসা উতলে আসার আকাঙ্ক্ষা ।
ওহে অপ্সরীমনি তুমি আমার সেই রাত, যে রাতে চোখ বুজলে স্মৃতির মোড়ক খেলা করে।’
দৃঢ় শ্বাসে খেয়াল করে কফির মগে কফি একদম নিম্র তলায় এসে পড়েছে। গরম ধোঁয়াটে ভাব চলে গিয়েছে ইতিমধ্যে। কফির মগটা বেলকনিতে থাকা ট্রি টেবিলের উপর রেখে দিল। দু’বন্ধু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। যার শব্দ বেলকনিতে সহ আসছে। যাবিয়াজ শুনে স্মিত হেসে পুনরায় দৃষ্টি আকাশের দিকে মেলে দিল।
প্রতিটা মানুষ নিজের মনের কথন দু’স্থানে ব্যক্ত করে। প্রথমস্থান হলো প্রিয় আল্লাহর দরবারে জায়নামাজে কান্নারত অবস্থায়।
দ্বিতীয় স্থান হলো দিবা-রাত্রির স্থলে একমনে আসমানের দিকে চোখ রেখে মনের অব্যক্ত কথাগুলি স্মরণ করা।
ভাবনার পীড়ন কেটে যাবিয়াজ শক্তমনে রুমে প্রবেশ করে। বিছানায় গা হেলিয়ে নিদ্রামগ্ন হওয়ায় প্রয়াস করে।
চলবে…..