#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ০৯
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি
সাজ্জাদ এগিয়ে এসে এক হাত দিয়ে আমাকে টান দিয়ে সাজ্জাদের সাথে জড়িয়ে ধরে নওশিনের উদ্দেশ্য বলে আদ্রিতার সাথে নেক্সট টাইম থেকে যেন এইভাবে কথা বলতে না দেখি। যদি কখনো আদ্রিতার থেকে জানতে পারি যে তোমরা ওর সাথে এইরকম আচরণ করেছো তাহলে আমি তোমাদের নামে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে বিচার দিবো। আর কি যেনো বললে ওকে আমার সাথে কেনো গাড়ি দিয়ে এসেছে? ওর ইচ্ছে হলে প্রতিদিন আমার সাথে আসবে তোমাদের সমস্যা কি?
রাইসা বুঝতে পারছে কথা বাড়ালে অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হবে। তাই সাজ্জাদকে বললো, ভাইয়া সরি আমরা বুঝতে পারি নি। কথাটা বলে রাইসা বাকিদের নিয়ে চলে গেলো।
আমি বললাম ছাড়ুন আমাকে, সাজ্জাদ আমাকে ছেড়ে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়ালো।
সাজ্জাদ আদ্রিতাকে বললো, এমনি ত কম বক বক করো না তাহলে কেউ তোমাকে খারাপ কথা বললে তখন জবাব দিতে পারো না কেনো?
আরে আজব ত আমি কিছু বলার আগেই ত আপনি চলে আসলেন আর আপনি আমাকে….
কি হলো বলো কি বলবে? জড়িয়ে ধরেছি কেনো এইটা জিজ্ঞেস করবে? (সাজ্জাদ)
হ্যাঁ, এইটাই জিজ্ঞেস করবো। কেনো জড়িয়ে ধরেছেন?
আমার ইচ্ছা কথাটি বলে সাজ্জাদ চলে গেলো।
আমি একা একা কি করবো রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি আবির, তানহা,আলো সবাই একসাথে বসে আছে। আমাকে দেখে আলো বলে উঠলো,
কিরে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?
এতোক্ষণ যা হলো সব খুলে বললাম।
এই সাজ্জাদ কি সেই মানুষটা যে আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি? ( আবির)
হুম, উনার গাড়িতেই আমরা এসেছি। (আদ্রিতা)
কিন্তু তুই উনাকে কিভাবে চিনিছ? (তানহা)
বাবার বন্ধুর ছেলে।(আদ্রিতা)
ও আচ্ছা। (তানহা)
এমন সময় ক্লাসে স্যার চলে আসলো আমরা সবাই জায়গা মতো বসে পড়লাম। ক্লাস শুরু হলো।
অন্যদিকে ~
সামিরা রুমে বসে বসে চোখের জল ফেলছে। তার পক্ষে সম্ভব না তার আধুরির সব থেকে কাছের জিনিস কেড়ে নেওয়া। আর সেদিনের রাতে ওদের উপর হামলা হওয়ার পর সাজ্জাদ আদ্রিতার জন্য যেইভাবে বিচলিত হয়ে গিয়েছিল তাতে বোঝা যায় সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি কি করবো এখন পরিবারের সম্মানের ব্যাপার। বাসায় অলরেডি সামিরার ফুফি, চাচা আর খালামনি এসেছে। আজকে শুধু বড়রা আছে। অনুষ্ঠানের সময় সবাই আসবে। বাসায় সবাই মিলে অনেক ধরনের খাবার ব্যবস্থা করছে আর এদিকে সামিরা রুমে বসে বসে চোখের জল ফেলছে। আচ্ছা সাজ্জাদের সাথে যদি আমার বিয়ে হয়ে ও যায় তাহলে আধুরি কি আমাকে ঘৃণা করবে? এটা কিভাবে সহ্য করবো আমি?
কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার পর।
মনে মনে আজকে খুশি লাগছে কারন সাজ্জাদ আমার জন্য তাদের বকেছে। আচ্ছা মানুষটাকি আমাকে ভালোবাসে নাকি? দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম। তখন আবির বললো আমি আর তানহা বাসায় গেলাম বলে ওরা চলে গেলো। আমি আলোকে বললাম আচ্ছা সাজ্জাদ কি আমাকে ভালোবাসে? না হলে আজকে সবার সামনে এরকম আচরন করলো কেনো?
দোস্ত তোর কথা শুনে ত মনে হচ্ছে সাজ্জাদ তোকে ভালোবাসে। ( আলো)
মুচকি হাসলাম, আলোকে এখনো বলি নি যে সাজ্জাদের সাথে দির বিয়ে ঠিক করা আছে। যাই হোক এখন শুধু একটি মুহূর্ত মনে পড়ছে তা হচ্ছে সাজ্জাদ আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।
হয়েছে মেডাম আপনার হিরোর কথা ভেবে আর লজ্জা পেতে হবে না ( আলো)
কথাটি শুনে আমি আর আলো ২ জনেই হেসে উঠলাম।
এদিকে ~
সাজ্জাদ কলেজ থেকে একটু দুরে দাঁড়িয়ে আদ্রিতাকে দেখে চলছে। সাজ্জাদ নিজে ও যানে না তখন কেনো আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরলো। কথাটা ভেবে সাজ্জাদ ও আনমনে হেসে উঠলো। সাজ্জাদ যে দাঁড়িয়ে আছে তা আদ্রিতা খেয়াল করে নি। এমন অবস্থায় সাজ্জাদের মনে একটি গানই ভেজে উঠে তা হলো….
হতে পারে কোনো রাস্তায়
কোনো হুড তোলা এক রিক্সায়,
আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে,তুমি দেখলে না!!🖤
আমি আর আলো কতক্ষণ গল্প করে বাসায় চলে আসলাম। আদ্রিতা চলে গেছে দেখে সাজ্জাদ ও চলে আসলো।
বাসায় আসার পর ~
তোকে না বলেছি আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে আজকে সাজ্জাদের বাসার সবাই আসবে। ( মা)
মুহূর্তেই মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো। কতক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম মানুষটার সাথে দির বিয়ে ঠিক করা।
হ্যাঁ মা একটু দেরি হয়ে গিয়েছে এখনি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি কথাটি বলে সবার সাথে একবার দেখা করে দির রুমে গেলাম।
একি দি তোর চোখে জল কেনো?
কিছু না, তুই কখন আসলি? ( সামিরা)
কি হয়েছে আমাকে বলবি না? ( আদ্রিতা)
সাজ্জাদের সাথে আমি কিভাবে বিয়ে করবো, মানুষটা যে তোকে ভালোবাসে। আমার পক্ষে সম্ভব না এ বিয়ে করা আধুরি তুই এ বিয়ে ভেঙে দে। ( সামিরা)
দি, তুই কি পাগল হয়ে গেছিছ। হ্যাঁ, আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না। আর তুই বুঝিছ বিয়ের আগে যদি হঠাৎ তোর বিয়ে ভেঙে যায় তাহলে তোর অবস্থা কি হবে? এ সমাজ তোকে শান্তিতে ঠিকতে দিবে না। সারাক্ষণ মনে করিয়ে দিবে বিয়ের আগে তোর বিয়ে ভেঙে গিয়েছে। আর আমাদের পরিবারের সম্মান ও নষ্ট হবে। এ বিয়ে করে নে তুই দরকার হলে তোর বিয়ের পর আমি কখনো তোদের সামনে আসবো না। কথাগুলো বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।
বিয়ের পর কখনো তোদের সামনে আসবো না কথাটি বার বার সামিরার কানে ভেসে চলেছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যেভাবেই হোক না কেনো এ বিয়ে ভেঙে দিতে হবে।
দির রুম থেকে চলে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম এদিকে ওরা আসার সময় ও হয়ে আসছে।
অন্যদিকে ~
সাজ্জাদের বাসায় স্বাধীন তারা একসাথেই আসবে। সাজ্জাদ আর স্বাধীন ২ জনই কালো ড্রেস পড়েছে। যেকোনো মেয়ে দেখলে যেনো আজকে তারা তাদের প্রেমে পড়ে যাবে।
সাজ্জাদ ভাবছে কোনোভাবে সামিরাকে বিয়ে করা যাবে না। এতে আদ্রিতার সাথে ও সামিরার সম্পর্ক নষ্ট হবে। কিন্তু এখন যদি হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে দেয় তাহলে সামিরার পক্ষে তা সহ্য করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সাজ্জাদ এসব চিন্তায় মগ্ন তখন স্বাধীন বলে উঠলো কি ব্যাপার ভাবির চিন্তায় মগ্ন নাকি? একটু পরই ত দেখতে পারবি তাহলে এতো চিন্তা কিসের? কথা গুলো বলে স্বাধীন হেসে উঠলো।
এমন সময় সাজ্জাদের মা এসে বললো, আর কতো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। চল তাড়াতাড়ি। তারপর তারা সবাই বেরিয়ে পড়লো সামিরাদের বাসায় আসার জন্য।
****আদ্রিতাদের বাসায় *****
আমি গোসল করে একটি কালো থ্রি – পিস পড়ে নিলাম। হালকা মেকআপ করে নিলাম, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর সাথে একটি হিজাব পড়ে নিলাম।
সামিরা গোসল সেড়ে বেগুনি কালারের একটি শাড়ি পড়ে নিলো। সামিরা ও হালকা মেকআপ করেছে আর সাথে একটি হিজাব।
বাসার বেল বাজলে আদ্রিতার মা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দিলো। জিজ্ঞেস করলো আপনাদের আসতে কোনো সমস্যা হয় নি ত?
তারা বললো কোনো সমস্যা হয় নি। তারা এসে সোফায় বসলো। সোফায় সাজ্জাদের পরিবার বসে আছে। বাবা, চাচা কথা বলছে তাদের সাথে আর বাকিরা তাদের আপ্যায়নের জন্য ব্যস্ত। আমি দির সাথে আছি। এমন সময় মা ডাকতেই আমি নিচে যেতে নিলাম
হঠাৎ সাজ্জাদের চোখ গেলো সিড়ির দিকে সাজ্জাদের যেন মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়েটি যেনো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে…….
#চলবে
[ বিয়ের একটি ব্যাপার কিন্তু চলে এসেছে 💁♀️। আদ্রিতা, সামিরা ,আলো, সাজ্জাদ, স্বাধীন, আরিয়ান কার সাথে কার মিল হয় বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে নওশিন সাজ্জাদকে ভালোবাসে 🤷♀️
যাই হোক সামিরা আর সাজ্জাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে সবার দাওয়াত রইলো 😁 ]