বক্ররেখা(৪র্থ পর্ব) ###লাকি রশীদ

0
171

###বক্ররেখা(৪র্থ পর্ব)
###লাকি রশীদ

বলা হয় সঙ্গী যদি মন মতো থাকে তবে কোনো জার্নি বিরক্তিকর মনে হয় না। রুম্পাকে নিয়ে চোখের ডাক্তারের কাছে এসেছি। ও অনবরত কথা বলতেই আছে। প্রসঙ্গের কোনো অভাব হয় না ওর। আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ খেয়াল করেছে মনে হয়,বললো কি দেখো দাদী? আমি চোখ বুজে বলি সুখ দেখি দিদিভাই। শিশির
ভীষণ ভাগ্যবান, তোর মতো এতো ভালো একটা বৌ পেয়েছে। ও এবার বসা থেকে উঠে বললো, এই কথাটা তুমি দয়া করে শিশির কে বলবে। ও তোমাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে। তোমার কথা উঠলেই বলে, ও !!! দাদী মানে সেই গ্ৰেসফুল লেডি !!!

আমি এবার বলি,এই কথাটার মানে কি? এবার বলছে এই সেরেছে। দাঁড়াও আমি দেখে বলি এর বাংলা অর্থ কি। পার্স থেকে ফোন বের করে কি সব টিপাটিপি করে বললো, এই তো পেয়েছি।এর অর্থ হচ্ছে শোভাময়, কমনীয়, সুতনু,শ্রীময়ী,ক্ষমা পুর্ণ,মাধুর্য মন্ডিত। আমি এবার ওকে থামিয়ে দিয়ে বলি, হয়েছে হয়েছে নিজের অনেক প্রশংসা শুনতে পেলাম। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন, শিশির এর সাথে সব মিলিয়ে কথা বলেছি হয়তো ৪/৫ দিন। তাহলে সে তো আমার অনেক দূরের মানুষ।
দূরের মানুষ কি কাছের মানুষ থেকে অন্যরকম মানে যা সত্যি নয় তাই দেখে? কারণ আমার খুব কাছের মানুষ গুলো তো আমাকে দাম ই দেয় না। এবার সে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
তুমি অনেক ভালো, দামী মানুষ দাদী। ওরা অন্ধ,
তাই দেখতে পায় না।

এই ছেলেটা অনেক দিন ধরে আমায় দেখছে। বললাম দেখো তো বাবা কিছু পড়তে পারছি না। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললো,আন্টি বাম চোখে ছানি পড়ে গেছে। তাই আপনার সমস্যা হচ্ছে। এটা সামান্য সময়ের ব্যাপার। আপনি কবে কখন আসবেন বলুন, আমার ক্লিনিকে ই করে দিবো। ডাক্তারের সাথে কিছুক্ষণ শলা পরামর্শ করে বের হয়ে দেখি সন্ধ্যা ৬টার মতো বাজে। রুম্পা সেই প্রথম থেকেই আমার হাত ধরে ধরে হাঁটছে। ও তো আর জানে না এসব দেখে আমার হৃদয়ের গভীরে ভীষণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কারণ ওর দাদুও
আমাকে নিয়ে কোথাও বের হলে হাত ধরে ধরে হাঁটতো। কতো বকা দিয়েছি কি করো? মানুষ যদি দেখে বেহায়া বলবে। আজ ২ বছর ধরে সেই মুহূর্তগুলোর জন্য হাহাকার করে উঠে বুক। কিন্তু সময় বড় নিষ্ঠুর। সে হিসাবে বড্ড পাকা। একবার কোটা পুর্ণ হলে আর কেঁদে কেটে অস্থির হলেও কোনো ভাবে তা ফিরিয়ে দিবে না। দেয়া যায় না।

ডাক্তারের চেম্বারে ই আসর ও মাগরিবের নামাজ পড়েছি। ঘরে ফিরতে মন চাইছে না। রুম্পা কে বলি চল্ দাদী নাতনি কোথাও খেয়ে যাই। আমি কিন্তু ভাই তোদের এতো সস মেশানো খাবার খেতে পারি না। কি রকম মিষ্টি মিষ্টি লাগে। রুম্পা
হেসে বললো কিন্তু স্পাইসি খেলে তোমার যদি গ্যাস হয়ে যায়। আমি যেন ওর সাথে ষড়যন্ত্রে মশগুল,বললাম ঔষধ ডাবল খেয়ে নেবো না হয়। দুজনে পেট পুরে ঝাল পাস্তা খেলাম। খেয়ে খেয়ে মনে হলো খুব তাড়াতাড়ি যেন জীবন থেকে সময় হারিয়ে যাচ্ছে। কি যে করছি আমি নিজেই বুঝতে পারছি না।

বিল দিয়ে উঠবো তখন রুম্পা উবার কল করল।
সামনের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি। বহু মানুষের আনাগোনা আছে। পাশেই নির্মাণাধীন একটি বিল্ডিং, অনেক লাইট বাইরের দিকে জ্বালানো।
কিছু কর্মীদের কথা বার্তা শোনা যাচ্ছে। চিৎকার করে কি যেন বলছে। রুম্পা আমার হাত ধরে টানছে,চলো দাদী ওখানে দাঁড়াই। তাহলে ড্রাইভার
সাহেব আমাদের কে দেখতে পাবে। আমি মানা করি, এসবের নীচে দাঁড়াতে আমার ভীষণ ভয় করে রে। কথা শেষ করতে পারিনি, জোরে একটা শব্দ হলো সাথে তীক্ষ্ম চিৎকার। চার পা এগোতেই দেখি বিল্ডিং থেকে শাবল পড়ে একজন পথচারী
অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। মানুষ গলায়, হাতে পরীক্ষা করে বলছে মারা গেছে। আমি কাঁপতে কাঁপতে রুম্পাকে জড়িয়ে ধরে বলি, তুই না ওখানে গিয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলি। এখন আমি সেতু ও শিশির কে কি জবাব দিতাম বল্? সে ভিড় ঠেলে ঠেলে আমাকে বের করে,মাত্র এসে দাঁড়ানো গাড়িটিতে তুলে বলছে রিলাক্স দাদী। আমরা এখন বাসায় যাচ্ছি। দেখো আমার কিচ্ছু হয়নি।

গাড়ির জানালা দিয়ে আমার ঘোলাটে চোখ দিয়ে
এক টুকরো আকাশ দেখতে দেখতে ভাবছি, কি এই মানবজীবন !!! মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোকের পাশে ছড়ানো ছিলো কেজি দুয়েক কমলা। হয়তো বা বাচ্চারা ফলের অপেক্ষা করে আছে। মুহুর্তের মধ্যেই একটা পরিবার অতলে ডুবলো হয়তো। কি ভেবে এতো নিশ্চিন্ত হয়ে,ছেলেদের পাপ দেখেও না দেখার ভান করে,আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বসে আছি। পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো আর ভালো রাখা…….. এই একটা অবোধ্য বৃত্তে যেন আমি ঘুরছি। হায়াত আল্লাহ কতোদিন রেখেছেন তা তো জানি না। যতোদিন আছে ততোদিন অন্তত ভালো ভাবে বাঁচার অধিকার আমার নিশ্চয়ই আছে। আর আমার প্রাপ্য অংশের মধ্যে অভাবীদেরও একটি হক আছে। দুই অকৃতজ্ঞ ছেলেদের উপর দৃষ্টি না দিয়ে এবার এদের দিকে তাকানোর সময় হয়তো এসেছে।

বাসায় এসে মেয়েদের ফোন করে বলেছি, কালকে
রাতে শশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে ওরা যেন খেতে আসে। রনি বলছে,মা আমি কালকে সকালে আপনাকে বাজার করে দিয়ে যাবো। সংসার বড় কঠিন জায়গা, কতো ছলনার মে আশ্রয় নিতে হয়। বললাম বাজার হয়ে গেছে বাবা। তুমি শুধু দেখো সবাই যেন আসে। সে এবার হেসে আমাকে আশ্বস্ত করলো।

সেদিন রাতের খাবারের সময় সবাই খেতে বসলে
আমি বলি,এক চোখে ছানি অপারেশন করাতে হবে আমার। আগামী পরশু করাব ইনশাআল্লাহ।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে এসেছি।
নাঈম বললো খরচ কেমন পড়বে ডাক্তার কিছু বলেছে মা? আমি এবার ওর দিকে তাকিয়ে বলি,
তা দিয়ে তুমি কি করবে বাপ? তুমি না কি সংসার এর খরচ করে করে খুব ই হয়রান। কুলিয়ে উঠতে পারছ না বলে তোমার বৌ কাজের মেয়ের চাদর টাও ভালো কোয়ালিটির আনতে পারছে না। এটা শুনে শায়লা বলছে,ভাই কি একা সব খরচ দেয় না কি যে কুলোতে কষ্ট হবে? অর্ধেকের বেশি তো আমরাই দেই। মেহের কি বলতে চাচ্ছিল, আমি শায়লার দিকে তাকিয়ে বলি, পারিবারিক শিক্ষা অনেক জরুরী শায়লা। এটাও কি জানো না যে,
যখন দুই জন বড় কথা বলে তখন ছোটরা এর মধ্যে ঢুকা উচিত নয়। হ্যা যা বলছিলাম আমার অপারেশন এর টাকা নিয়ে তোমাদের কাউকে ব্যস্ত হতে হবে না। বরং আমি কি বলছি সবাই একটু মন দিয়ে শোনো।

তোমরা ভালো করেই জানো, তোমাদের বাবা দুটো
ফ্ল্যাটের ভাড়া আমাকে দিতেন। উনি মারা যাবার পর প্রথম তিন মাস পেলেও পরে আর আমি পাই নি। নানান ঝামেলায় ও দুশ্চিন্তায় পরে জিজ্ঞেস করবো ভেবে ভুলে গেছি। এখন ২৪ মাসের মধ্যে ৩ মাস গেলে থাকে ২১ মাস। ধরো ২০ মাস ই। ৪০ হাজার করে মাসিক ভাড়া হলে প্রায় ৮ লাখ টাকা
এই টাকা গুলো কই? এবার দেখি দুই ভাই একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। দুই বৌও অবাক নয়নে আমার মুখের পানে চেয়ে আছে। আমি বেশ জানি এদের মধ্যে সবচেয়ে লোভী ও চতুর হচ্ছে শায়লা। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ও মা বলতেই আমি বৌমা না ডেকে সোজা বলি,আশ্চর্য
এইমাত্র না বললাম বড়দের কথার মধ্যে ছোটদের নাক গলানো আমি পছন্দ করি না। কি হলো রে,
তোরা বোবা হয়ে গেলি না কি? কথা বলছিস না
কেন?

এবার নাঈম বলছে, আসলে আমরা ভেবেছিলাম
তোমার তো তেমন কোনো খরচ নেই। তাই আমরা দুজন প্রতিমাসে ভাগ করে ২০ হাজার করে নিয়ে গেছি। আমি শান্ত কন্ঠে বললাম নিয়ে গেছ তো
ভালো কথা এবার ৪ লাখ করে দুজনে ফেরত দিয়ে দাও। আমার অনেক কাজ জমে আছে।ইডিয়ট সজল এবার মুখ খুলেছে, তোমার আবার এতো টাকা দিয়ে কি কাজ? হঠাৎ মনে হলো, এসব নিমকহারাম ছেলেদের চশমা দিয়ে পরিস্কার
ও ঝকঝকে দেখাই উচিত নয়।আমার চোখগুলো
বেশ বড় সেটা আমি জানি। ওদের বাবা বলতেন, তুমি চোখ বড়বড় করে তাকালে হৃদয়ের সবকিছু দেখে ফেলো মনে হয়। কি রকম ভয় ভয় লাগে।
ঠিক সেভাবে চশমা খুলে তাকিয়ে বলি,সে হিসাব
কি তোমায় দিতে হবে? আমার বাবা বলতেন, মানুষের ভেতর ধরে জোরে টান দিলে ওরা ঠিক পাগলের মতো হয়ে যায়। এবার সে চেঁচাচ্ছে, কি
আশ্চর্য !!! হঠাৎ তোমার এতো টাকার প্রয়োজন পড়লো কেন সেটাই শুধু আমি বুঝতে চাচ্ছি।

অপারেশন করাতে চাও, আমি আমার বন্ধু আই স্পেশালিষ্ট সামাদকে বলে দেবো না হয়। যা খরচ
লাগে তাও পৌঁছে দেবো। আমি এবার হেসে বলি,
কিছু সময়ের ব্যবধানে একই মানুষের মুখ থেকে
কতো রকম কথা যে বের হয় !!! ছিঃ ছিঃ ছিঃ !!!
তুমি না বললে নতুন ক্লিনিক খোলার জন্য তোমার দম ফেলার ফুরসত নেই। তাহলে এখন ব্যবস্থা করে দিবে কেন? লজ্জা লাগে না,তোমরা স্বামী স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও রুম্পাকে নিয়ে চোখের ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। আবার গলা উঁচু করে কথা বলো?

এবার রেগে গিয়ে বলল, ঠিক আছে কালকে তোমার ৪ লাখ টাকা পেয়ে যাবে। আমি বলি, কখন? এতো টাকা তো ঘরে রাখা নিরাপদ হবে না। ও ব্যাঙ্কের নাম বললে মনে হয় ওখানে তো আমারও একটা একাউন্ট আছে। বললাম সকাল দশটায় পৌঁছুতে পারি এমনভাবে ঘর থেকে আমরা দুইজন বের হবো। ওখানে টাকাগুলোর
ব্যবস্থা করে তুমি আমাকে একটা উবার ডেকে দিয়ে হাসপাতালে চলে যাবে। আমি চলে আসবো
বাসায়। ঠিক আছে? এবার সে মাথা নেড়ে হ্যা বলছে। আমি শায়লার দিকে তাকিয়ে দেখি, আহ্ অক্ষম রাগে ও ক্ষোভে মুখখানা লাল হয়ে গেছে।
২ বার বড়দের কথার মধ্যে ঢুকে বকাও খেলো,
ওদিকে স্বামীকে টাকা ফেরত দেয়া থেকে কোনো ভাবেই আটকাতে পারলো না। আফসোস !!!

বাচ্চারা মাদের যতোই বোকা ভাবুক তারা তো জানে না,পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা মার কাছেও সন্তানরা তার হাতের তালুর মতো পরিচিত। বাঘা
সজল কে বাগে আনতে পারলে নাঈম তো কোন ছার !!! এবার তার দিকে তাকিয়ে বলি, তুমি টাকা
দিচ্ছো কখন? সে মিনমিন করে কি বলতে যাবে ওমনি মেহের বলছে মা আমার কথাটা শুনেন। আবার সেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলি, তোমার কথা পরে শোনবো। এমনিতেই বিয়ের পর থেকে তোমার শশুর মারা যাওয়া পর্যন্ত তুমি এতো কথা বলোনি,যতোটা এই ২ বছরে বলেছো। আমি বেশ জানি এক্ষুনি কথাবার্তা না শেষ করলে সুচতুর মেহের কুবুদ্ধি দিয়ে রাতারাতি চিত্রপট উল্টে দিবে

আবার নাঈমের দিকে তাকাতেই দেখি ও বলছে, আসলে মা ২ লাখ টাকা আছে, বাকিটা খরচ করে ফেলেছি। একজোড়া হীরার দুল মেহের কিনেছে এই টাকা দিয়ে। আমি বলি,তাই? তুমি আমার টাকা দিয়ে হীরের দুল কিনো মেহের আর আমি একটা চাদর আনতে বলায় সস্তা দেখে আনলে……… লাজ লজ্জা বলতে কি তোমাদের কিছু নেই। সারা জীবন তো শুধু তুমি স্বামীকে কানভাঙ্গানি দিলে। ঘরে কি ঘটেছে স্বামী ঘরে ঢুকার সাথে সাথে না বললে শান্তি নেই। আমি তো অনেক শখ করে বৌ এনেছিলাম, বিবিসি কিন্তু আনিনি।

এবার নাঈমকে বলি একদিন দোকানে দেরিতে গেলে সমস্যা নেই। কালকে সকালে তুমিও আমার ও সজলের সাথে যাবে, এই ২ লাখ দিবে। আর বাকি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য ৬ মাস সময় দিলাম। কান খুলে শোনে রাখো,একে তো বিধবা তার উপরে আবার মা……. এর টাকা আত্মসাতের চিন্তা করলে তোমাদের কি করুণ পরিণতি হতে পারে তা ভাবতেও পারবে না। আর একটা কথা এখন থেকে নীচতলার ২ ফ্ল্যাটের ভাড়া তুলে নাঈম আমাকে দিবে। ১০ তারিখের ভেতর ওদের ভাড়া দিতে বলবে। আশা করি এটা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করতে হবে না। এখন সবাই যার যার রুমে ঘুমাতে যাও। নাঈম কে তুলে দিতে বলেছি কারণ কেন যেন মনে হয় সজলের চেয়ে ওর মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধটুকু নিভু নিভু হলেও এখনো আছে।

সকালে নাস্তা করে দুই ছেলেকে নিয়ে বের হলাম আমি। ৬ লাখ টাকা একাউন্টে জমা রেখে দিয়েছি
সজল ওখান থেকেই হাসপাতালে চলে গেছে। গোটা সকালটাই গোমড়া ও কঠিন মুখ করে রেখেছে। আমি যেন দেখেও দেখিনি ও বুঝিনি।
আমি ও নাঈম গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। পাশের চেয়ারে সে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। হঠাৎ মনে হলো বাজার করাতে হবে। বলি
তুমি তো বৌয়ের কথা শুনে শুনে দিন দিন একদম মাথামোটা বলদ হচ্ছো। বোনদের দেখলে তোমার কপাল কুঁচকে যায়। পরের মুখে ঝাল খাওয়া কি ঠিক? ভাইবোনের সুন্দর সম্পর্কটা যে নষ্ট করছো,
আখেরাতে কি জবাব দেবে? আমার তো আমার মেয়েদের জন্য বাজার করতে হবে, পথে আমাকে নামিয়ে দিও।

এতো কিছু শোনার পরও সে তবুও দেখি কোনো কথা বলছে না, নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। গাড়িতে উঠে আকাশ পাতাল ভাবছি। খেয়াল করিনি হঠাৎ দেখি পাড়ার মোড়ে চলে এসেছি। রেগে বলি,বললাম না বাজারে নামিয়ে দেবার জন্য। ও এবার নীচুস্বরে বলল, তুমি বাসায় যাও মা। আমি বাজার নিয়ে আসছি। আমি হেসে বলি, বোনদের জন্য তোমার হাতে কি উঠবে……… সে ব্যাপারে আমি কিন্তু যথেষ্ট সন্দিহান। বললো,আনলে দেখো। আমার আনা বাজার পছন্দ না হলে তখন না হয় যাবে। কি কি আনবো বলো। আমি বলছি আর ছেলে ফোনে টুকছে। তন্নতন্ন করে খুঁজেও গত ২ বছরের স্মৃতিগুলোর মধ্যে এরকম একটা দৃশ্য পাওয়া যাবে না,তা আমি নিশ্চিত। পার্স খুলে টাকা বের করবো, হাত ধরে বললো এসে নিবো। এখন রেখে দাও মা।

এতো বাজার করে এনেছে বলার মতো না। মুরগি,
গরু,খাসি,৫ পদের মাছ, কবুতর, অনেক ফল…….
কি নেই তাতে? দেখি ব্যাগ রেখে চলে যাচ্ছে,বলি
কত টাকা হয়েছে রে? আমার হাতে হাত বুলিয়ে বললো, এগুলো আমার বোনদের জন্য এনেছি মা। টাকা নিবো কেন? ওদের বলো একসাথে সবাই মিলে ডিনার করবো। ঠিক সাড়ে ৮টায় আমি আসবো। একদিন দোকানে না বসলে হাতি ঘোড়া কিছু উল্টাবে না দেখো। আমি হাসি দিয়েছি
কারণ এই ডায়লগটা আমার। আমি শ্লেষের সুরে বলি হঠাৎ !!! কিছু না বলে হাত চেপে ধরে বলছে
হঠাৎ কি সুবুদ্ধি আসতে পারে না? প্লিজ আমাকে বদদোয়া দিও না মা। আমার যে কি হয়েছিল…….. আমি নিজেও জানি না। বদদোয়া দিলে জ্বলেপুড়ে
একদম ছারখার হয়ে যাবো।আমি তখন নির্বাক, নিশ্চুপ।

এবার সাহস পেয়ে বললো,মা শোনো সজল ও শায়লাকেও ডিনারে উপস্থিত থাকতে বলবো। আমি মনে মনে হাসছি,কারণ ১০০ ভাগ নিশ্চিত ওরা কেউই এসবে থাকবে না। আমি কি জানি না, আমার কোন বাচ্চা কেমন। আমার মুখে হাসি দেখে নাঈম কি ভেবে এবার বললো,তাই বলে ভেবো না আমি তোমার টাকাগুলো মেরে দেয়ার জন্য এসব করছি। গত রাতে অনেক ভেবেছি মা। দোতলার এক ফ্ল্যাটের ভাড়া প্রতিমাসে যে ২০ হাজার পাবো সেই টাকা তোমাকে দিয়ে দিবো। শুধু একটা সমস্যা হলো,তোমার বেঁধে দেয়া সময় মানে ৬ মাসে না দিয়ে ১০ মাসে দিবো। আমি এখন আসছি মা। আমি ধীরগলায় বলি আয়।
(রিপোষ্ট)

(চলবে)
###৫ম পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here