পর্ব_০৫ #অসমাপ্ত_প্রনয় #মিঃনাহিদ_হাসান

0
310

#পর্ব_০৫
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান

কবীর কতো বেলা হয়েছে গেছে খেয়াল আছে তোর,আর কতো ঘুমাবি,সেই ছোট বেলার অভ্যাস এখনো ছাড়তে পারলি না।

সেই কতোদিন পরে আসলাম,একটু তো শান্তি মতো ঘুমাতে দেও, এমন করো ক্যান।

কাল রাতে নদীর পাড়ে থেকে যে ছেলেটাকে নিয়ে আসলাম তাঁর শরীরের অবস্থা তো ভালো না,ডাক্তার আনা লাগতো, শরীরের অনেক জায়গায় কাইটা গেছে।

ঘুম ঘুম চোখে কবীর ওঠে বসলো, পাশের ঘরে গেলো, নাহিদ ঘুমাইছে, পোশাক দেখে মনে হয় বড়ো ঘরের ছেলে, কিন্তু এইভাবে নদীর পাড়ে পড়ে ছিলো ক্যান,যাই হোক _আগে সুস্থ হোক, পরে সব জানা যাবে,গায়ে হাত দিয়ে দেখলো অনেক জ্বর আসছে, কবীর আর দেরি করলো না ডাক্তার আনতে চলে গেলো।

বায়জিদ গরম পানি করে জমে যাওয়া রক্ত গুলো মুছে দিচ্ছে, কবীর কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার নিয়ে আসলো।
ডাক্তার কিছু ঔষধ দিলেন, রোগীর বিশ্রামের প্রয়োজন বলে চলে গেলেন।

আচ্ছা নাহিদ ভাইয়া আপনি বিশ্রাম নেন বিকালে শুনবো আপনার গল্প, কবীর ঘর থেকে বের হয়ে গেলো..

নাফিসা আনমনে রাতের কথা ভাবছে,রাতে ঘুম আসছিলো না_তাই ছাদে গেছিলো, ছাঁদ থেকে বাড়ির পিছনে তাকাতেই,আলো দেখতে পেলো,আলো গুলো কিসের বুঝতে পারলো,প্রায়ই এমন আলো দেখছে, আজকাল যেন একটু বেশিই ভাবছে এইসব ব্যাপারের নাফিসা…

হঠাৎ পিছনে থেকে মীম ডেকে উঠলো..!
কিরে নাফিসা কী এতো ভাবোস??
কোই তেমন কিছু না…

মীম আপু শুনছো কালকে নাকি কবীর আইছে ঢাকা থাইকা,সেই কতোদিন পরে আইলো,চলো দেখতে যাই।

তোমার এতো দেখতে মন চায় ক্যান,তলে তলে কিছু চলে নাকি?

নাফিসা একটু লজ্জা পেলো।
লাজুক কন্ঠে বললো,দূর কী যে বলো না আপু,ছোট থাইকা একসাথে বড়ো হইছি, একসাথে পড়াশুনা করলাম,তাই দেখতে যাইতে চাইছি, তুমি কী না কী ভাবতাছো।

আচ্ছা বুঝছি বুঝছি, আমি এমনে মজা করলাম,চলো যাই।
দুইজনে নদীর পাড় দিয়ে যাচ্ছে,দুই গ্রামের বুক চিরে নদীটা অনেক দূরে চলে গেছে, অনেক মানুষের আনাগোনা এই নদীর পাড়ে,গ্রাম দেখতে এমনেই সুন্দর, গ্রামের মধ্যে দিয়ে নদী বয়ে যাওয়া যেন গ্রামটাকে আরো মোহময় করে তুলছে…

হঠাৎ নাফিসা বলে উঠলো,মীম আপু দেখো_নদী দিয়া কী মনে হয় ভেসে যাইতাছি…
মীম দেখলো, সাদা কাপড়ে মোড়ানো কিছু, কিন্তু কী সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

এই মোহময় নদী_ মাঝে মধ্যে ভয়ানক হয়ে উঠে, হঠাৎ কারো শাল পাওয়া যায় এই নদীর বুকে..!
লাশ গুলো বেনামি হওয়ার জন্য, তেমন কোনো গুঞ্জন শোনা যায় না…

মীম তেমন গুরুত্ব দিলো না, নাফিসা কে বললো, এইসব নিয়া ভাবতে হবে না,হবে হয়তো কারো মায়ের বুক খালি হয়ে গেছে…
চলো যাই… দুইজন আবার চলতে শুরু করলো..!

বাড়ির আঙিনায় নাহিদের সাথে কবীর বসে আছে।
আচ্ছা নাহিদ ভাইয়া আপনার সম্পর্কে তো কিছুই জানলাম না, আপনাকে তো এই গ্রামের মানুষ মনে হয় না, কোথায় বাড়ি আপনার।

আমি শহর থেকে আসছি, আমার বাবা একজন বড়ো ব্যবসায়ী, আমি বাবার সাথে তার ব্যবসার কাজে সাহায্য করি,ব্যবসার কাজে আমি পাশের গ্রামে আসছিলাম,কাজ শেষ করে,সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্য রওনা করছিলাম, কিন্তু একদল অপরিচিত লোক, আমার উপর হামলা করে, আমার সাথে যা মাল পত্র ছিলো ওরা সব কেড়ে নিয়েছে। আমি কোন রকমে ওদের হাত থেকে বেঁচে ফিরছি, পরে বাকিটুকু তো জানেন, আপনারা সাহায্য না করলে হয়তো এতক্ষণে আমার কবর খোঁড়া লাগতো…

এইভাবে বলার কী আছে, মানুষ তো মানুষের জন্যেই,
আপনি যতোদিন পুরোপুরি সুস্থ না হোন, আমাদের বাড়িতে থাকেন।

দূর থেকে নূপুরের শব্দ শোনা গেলো, নাহিদ পিছনে ফিরে তাকালো।

কিরে নাফু কেমন আছোস, মনে হয় এতো দিন শান্তিতে ছিলি, আমি আবার জ্বালাতে চলে আসলাম।

ভালোই আছি,তুই কেমন আছোস, শহরে যাইয়া তো ভুলে গেলি, কালকে আসলি আর,একবার দেখতেও গেলি না।

যাই কেমনে, আসার সময়, নাহিদ ভাইয়ার সাথে দেখা, বাড়ি থেকে বের হবার সময় পাই নাই।মীম আপু যে কেমন আছো।

এইতো আল্লাহ যেমন রাখে আলহামদুলিল্লাহ, সাথে ওনি কে,তারে তো চিনলাম না।

এতোক্ষণ নাহিদ মীমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। এবার যেন নাহিদের হুশ ফিরলো।
আমতা আমতা করে বললো, আমি নাহিদ হাসান, শহরে থাকি, আমাকে চিনবেন না।

শহরে থাকেন, গ্রাম কেমন লাগে আপনার কাছে?

গ্রাম তো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে, শহরের মতো কোলাহল নাই,কতো সুন্দর মনোরম পরিবেশ।

তাহলে আমাদের গ্রামটা ঘুরে দেইখেন,আশা করি ভালো লাগবো,
জ্বি অবশ্যই।

আমিও তো অনেক দিন পর গ্রামে আসলাম, কতোদিন গ্রামে ছিলাম না, অনেক কিছু মনে হয় বদলে গেছে, কালকে নাহিদ ভাইয়া সাথে গ্রাম ঘুরতে বের হবো।

আচ্ছা এখন আমরা গেলাম, সন্ধ্যা হয়ে যাইতাছে,চলো মীম আপু বাড়িতে যাই।

নাফিসা মীমকে নিয়ে চলে গেলো, নাহিদ তাঁদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মীমের পায়ের নূপুরের আওয়াজ যেন এখনো কানে বাজছে।ওর মায়াবী মুখ, ঠোঁটের নিচে একটা তিল,ওই তিলটাই যেন তার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে,ওই ঠোঁটের কোনে রহস্যময় মুচকি হাসি যেন,হ্নিদয় ছুঁয়ে ফেলছে, অচেনা গ্রামে, অচেনা অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে লাগলো নাহিদ,হ্নিদয়ের স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে,কারো জন্য মনে হয়, বুকের ভেতর অস্থিরতা শুরু হয়েছে।এক পলক দেখার পরই এমন অনুভূতি কেন হচ্ছে।

এটাই কি ভালোবাসা নাকি,আরে আমি কি সব ভাবছি,এটা কখনো সম্ভব নয়…

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here