#পর্ব_১৯
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে পরিবেশ মুখরিত, পাখিরা নিজেদের বাসায় ফিরতে ব্যাস্ত..!
একমুঠো স্বপ্ন বুনার আশায় জোর কদমে এগিয়ে আসছে চারজন মানুষ,মাঝ রাস্তায় নাহিদ বললো, মীম মনে হয় আমাকে ভুল বুঝবে, আমি তো একদিনের কথা বলেছিলাম, কিন্তু এখন তো তিনদিন পার হয়ে গেছে..!
নাফিসা বলে উঠলো, চিন্তা কইরেন না ভাইয়া, আপুকে সমস্যার কথা বললে ওনি ঠিক বুঝবেন…!
নাহিদ মনে মনে ভয় পাচ্ছে,তার বাবা মাদক ব্যবসায়ী এটা শুনে যদি মীম রাজি না হয় তাকে বিয়ে করার জন্য..মনে নানা রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে, চলতে শুরু করলেন মীমের বাড়ির দিকে….!
——-
রহিম মিয়া বাড়ির বাহিরে বসে ছিলেন, এই ভর সন্ধ্যায় দূর থেকে চারজন মানুষকে এই দিকে আসতে দেখে তিনি চমকে গেছেন..!
মীম “মা” দেখ কারা জানি আসতাছে, রহিম মিয়ার আওয়াজ শুনে মীম বাড়ির ভেতরে থেকে বেরিয়ে আসলো, দূর থেকে দেখেই চিনতে পারলো মানুষ গুলোকে..!
আব্বা যার কথা বলছিলাম ওনি আসতাছে, আমি জানতাম ওনি আসবেন…!
মীমের মুখে আনন্দের হাসি, রহিম মিয়ার খুব ভালো লাগে, তার মেয়ের হাঁসি..!
এই হাসিটা যেন স্বর্গের সুখ এনে দেয় তার মনে…!
কাছে আসতেই, নাফিসা ডেকে উঠলো মীম আপু দেখো কে আইছে, নাহিদ ভাইয়া আইছে….!
নাহিদ রহিম মিয়াকে সালাম দিলেন, রহিম মিয়া অনেক খুশি.. তোমরা সবাই বাড়ির ভেতরে যাও, আজকে সবাই থাকবা আমাগো বাড়িতে..! আমি বাজার যাইতাছি একটু পরেই আসমু,যাও বাবারা সবাই বাড়িতে যাও….!
রুবেল বললো,চাচা আমার একটু কাজ আছে,ওরা থাক_আমি না হয় অন্য আরেকদিন থাকবো…!
আচ্ছা বাবা তুমি যাও, সাবধানে যাইয়ো….
রুবেল চলে যায় সাইফুল মাস্টারের বাড়ির দিকে.. কবীর, নাফিসা, নাহিদ যায় মীমের বাড়িতে..! রহিম মিয়া ব্যাগ নিয়ে বাজারে দৌড় দেন..!
—–
জোছনা রাত চেয়ার নিয়ে সবাই বসছে উঠানে,রাত ১০টা বাজে, খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই গল্প করতে ব্যাস্ত…
নাহিদ বলে উঠলো, আমি মীমের সাথে কিছু কথা বলতে চাই…
আরে ভাই সব কথা বিয়ের পর বইলো,আর দুইদিন পরেই বিয়া, এখন কি তর সইছে না কবীর ফাজলামি করে হাসলো,পরে বললো উঠানে ওই কোনায় মাচা আছে, ওইখানে বইসা যাও, কথা কও আর মশার গান শুনো_ মশা মারো হা হাহা হা…
নাহিদ মীমকে নিয়ে বাড়ির বাহিরে গিয়ে দাড়ায়, জোছনা রাতে চারদিক চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে, মাঝে মাঝে জোনাকি পোকা আলো ছড়ায়…
আপনি এতো দেরি করে আসলেন ক্যান..?
কোন কী ঝামেলা হয়েছিল, আপনার বাবা কোই ওনি কি রাজি হন নাই…!
আমার অনেক ভয় লাগতাছে, সত্যি জানার পরে তুমি আমাকে ছেড়ে যাইবা না তো…?
মীম দ্বিধাহীন কন্ঠে বললো, আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনার অন্য কোনো সমস্যা গুলো কে ভয় পাই না, মানুষের জীবনে নানারকম সমস্যা ঝামেলা থেকেই থাকে,তাই জন্য কী ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে যেতে হবে, এইটা কোন কথা….?
আমার বাবা একজন মাদক ব্যবসায়ী, আমি মাদক ব্যবসায়ীর ছেলে..! এখন কী আমাকে মেনে নিবে..?
মাদক ব্যবসায়ী আপনার বাবা_কিন্তু আপনি তো নন..
আমি আপনার হাত ধরে দুনিয়ার ওই পাড়েও পাড়ি দিতে রাজি,মাদক ব্যবসায়ীর ঘর তো মামুলি ব্যাপার..!
কিন্তু আমাকে কথা দিতে হবে, আপনি শেষ পর্যন্ত আমার হাত ধরে থাকবেন তো..? আমাকে ভালোবাসবেন তো, আমার হয়ে থাকবেন তো…?
এই নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ স্বাক্ষি,আসমান,জমিন,গ্রহ, নক্ষত্র,এই দুনিয়ায় প্রতিটা ধুলিকনা স্বাক্ষি আমি আজকে তোমার এই হাত ধরলাম, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ছাড়বো না.. মরনের পরপারে যদি বা কখনো দেখা সেদিন ও বলিবো আমি তুমি ছিলে আমারি হ্নিদয়..
শুধু এপারে নয়_ ওহে প্রেয়সী পূর্ণ জন্ম বলে যদি কিছু থাকে, সেই জন্মেও আমি তোমার হাত ধরে রাখতে চাই..! পরপারে দেখা হলে আমি সেইদিন ও তোমার হাত ধরবো…!
মীমের মুখে আনন্দের হাসি, জীবনে আসতে চলছে হয়তোবা সুখের তিথি..!
চলেন জোছনা রাতে আপনার হাত ধরে একটু পথ হাঁটি, খুব ইচ্ছে করতাছে আপনার হাত ধরে কিছু রাস্তা হাঁটতে…!
নাহিদ কিছু বলে না, চেয়ে আছে মায়াবী মুখটির দিকে,এই হাসিটা তাকে অন্য জগতে নিয়ে যায়, চাঁদের আলোয় দাঁত গুলো মুক্তোর মতো চকচক করছে,এক কথায় মুক্তো ঝড়ানো হাসি…
এই হাসির খাদে পড়ে থেকেই জীবন পাড় করতে মন চায়…!প্রেয়সী আমার কি ইচ্ছে করে জানো,”_প্রতিটা শিশির ভেজা সকালে তোমার সাথে হাতে হাত রেখে হাঁটবো…! জোছনা মাখা রাতে তোমার সাথে কিছু পথ হাঁটি..!
প্রেয়সী চাঁদের কী হিংসা লাগছে না…?
কেনো হিংসা লাগবে চাঁদের..?
চাঁদের চেয়েও সুন্দর একজন যে আমার সাথে দাঁড়িয়ে আছে, চাঁদের তো হিংসা লাগার কথা..!
মীম আবার ও মুক্তো ঝড়ানো হাসি দিলো…!
হালকা কুয়াশা, চারদিকে চাঁদের আলোয় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, হেঁটে চলেছে দুইজন মানুষ, একজন মনের সুখে খিলখিলিয়ে হাসছে, অন্যজন এই হাঁসি দেখতেই ব্যাস্ত….!
————-
নিঝুম পরিবেশ চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, মাঝে মাঝেই শেয়ালের ডাক ভেসে আসে, জোনাকি পোকারা আলো ছড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে…!
হঠাৎ কবীর নাফিসার হাত ধরে হেঁচকা টান দিলো, নাফিসা নিজেকে সামাল দিতে না পেরে, কবীরের বুকে এসে পড়লো, কবীর নাফিসা কে নিয়ে_ হুমরি খেয়ে পড়ে গেলো উঠানে বিছানো মাদুরের উপর..! হালকা বাতাসে নাফিসার ছোট ছোট চুল গুলো অবাধ্যের মতো উড়ছে.. কবীর চুল গুলো নাফিসার কানে গুজে দিতে দিতে বললো..
তুমি এসে গেছো আমার কাছে তে..!
তোমার আসাতে ঝলমল হ্নিদয়ের চারিদিক যে….
তোমার আলোতে ভরে ওঠে_আমার জীবনের প্রতিটা দিন যে…!
রাত ও আছে_ঘুমও আছে…!
স্বপ্ন জুড়ে শুধু তুমি..?
ফুলও আছে_গন্ধও আছে..!
মন বাগান জুড়ে শুধুই তুমি..
জীবনও তুমি মরণও তুমি..!
চাঁদও তুমি_জোছনাও তুমি ..!
না জানি আর কী কী তুমি..!
হয়েছে হয়েছে কবী মশাই, আজকে কী আমাকে আলুর বস্তার মতো ওজন লাগতাছে না..?
আজকে কম ওজন লাগতাছে, এই আলুর বস্তা আজকে তুলোর বস্তার মতো মনে হচ্ছে…
ইচ্ছে করতাছে এইভাবেই বুকে জড়িয়ে রাখি সারাজীবন..!
হয়েছে এখন ছাড়ো, কেউ দেখে ফেলবে…!
জোছনা মাখা রাতে, চাঁদ নেমে এসেছে আমার বুকে..
দেখে ফেলুক না কেউ,কী হবে তাঁতে.. কলঙ্কের দাগ যদিও চাঁদের গায়ে কখনো লাগে…? তবুও কিন্তু চাঁদ কেই ভালো লাগে…!
কেটে যায় কিছু মূহূর্ত নাফিসা কিছু বলে না …
চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে, দূর থেকে ভেসে আসলো একটা শেয়ালের ডাক..!
নাফিসা কবীরের বুকে মুখ গুঁজে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,এই বুকেই সে স্বর্গের সুখ খুঁজে পায়..
দুইজন কিছু সময় নীরব, হঠাৎ কবীর বলে উঠলো, নাহিদ ভাইয়া তো দুইদিন পর বিয়ে করে নিবো..?
কিন্তু আমাদের খবর কী..?
মন্ডল চাচা কী মেনে নিবো আমাকে, হঠাৎ মনের মধ্যে ভয় কাজ করা শুরু করলো..
কবীর হাতের বাঁধন আগলা করে দিলো.., নাফিসা ওঠে বসলো..!
আমারও অনেক ভয় লাগতাছে, আমি তোমারে ছাড়া থাকতে পারমু না, আব্বা কী করবো আমি জানি না, কিন্তু আমার তোমারেই লাগবো…
নাফু আমার অনেক ইচ্ছা, তোমার সাথে থাকার, তোমার হাঁত ধরে অনেক দূর পথ চলার..! আমাকে কোন সময় ভুল বুঝে তুমি দূরে সরিয়ে দিয়ো না..
আমাদের সুন্দর একটা গল্প হোক..!রাগ অভিমানের খুনসুটি ভরা একটা ছোট্ট সংসার হোক..!আমাদের কখনো বিচ্ছেদ না হোক.! এক সাথে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হাতে হাত রেখে অনেক পথ হাঁটা হোক..!
নাফিসা কবীর কে জড়িয়ে ধরে বলে,হবে হবে সব হবে, তুমি চিন্তা কইরো না, আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না..
দু জনেই নীরবে চোখের জল ফেলে,পাবে তো পূর্ণতা তাদের ভালোবাসা.. হবে তো স্বপ্ন পুরন_ দুজন দুজনের সাথে আমৃত্যু বেঁচে থাকার অনেক আশা…!
——-
নিশি রাত কারো কোন সারা শব্দ নেই, হঠাৎ টোকা পড়লো সাইফুল মাস্টারের ঘরের জানালায়…
হিয়া মারা যাবার পর, সাইফুল মাস্টার একটু মানুষিক ভাবে ভারসাম্য হীন..মাস্টার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন…
দক্ষিণের জানালাটা হঠাৎ খুলে গেলো,আরে তুমি এতো রাইতে এইখানে ক্যান, কেউ দেখলে তো সর্বনাশ হয়ে যাইবো..!
রাস্তায় দেখছি কতো ফুল,কেহ মন কেড়ে, করিতে পারে নাই ব্যাকুল..ওহে শিমুল ফুল,দেখো তোমার জন্য আমি আনিয়াছি কতো রকমের ফুল_বিশ্বাস করো শিমু তুমি নিজেই আমার মন বাগানে একটা ফুটন্ত ফুল ..!
জানালা দিয়ে কিছু গোলাপ ফুল এগিয়ে দিলো রুবেল শিমুর দিকে..
শিমু হলো, সাইফুল মাস্টারের ভাতিজি.. শহরে থাকেন, গ্রামে এসেছে চাচাকে দেখার জন্য.. রুবেলের সাথে তাঁর শহরে থেকেই পরিচয়, প্রেমের সম্পর্কও আছে তাদের মধ্যে…
শিমু মুচকি হেসে বললো, আমি এই গ্রামে আছি তুমি কীভাবে জানলে…?
রুবেল চুল ঠিক করতে করতে বললো..!
ফুলের মধু কোথায় আছে সেটা ভ্রুমর যেমন জানে…?
স্বপ্নের কথা সেতো ঘুমি জানে…!
প্রেমিকার খোঁজ সেতো প্রেমিক ওই জানবে..!
বুঝছি প্রেমিক সাহেব, আপনার প্রেমের টান আছে, এখন বলো এতো রাতে ক্যান আইছো…!
আজকে প্রেমের রাত’ চারদিকে_ শুধু প্রেমের ছড়াছাড়ি, ওগো ললনা বলো_ আমি কী_ না ‘এসে থাকতে পারি..!
আচ্ছা একটা কথা বলো, আমার মতো শ্যাম বর্ণের মেয়ের মাঝে তুমি কি দেখলা..! এমন নেশা চোখে তাকিয়ে দেইখো না,নজর লাইগা যাইবো…
ভীষণ আক্ষেপ নিয়ে কবি সুরে আজ বলতে চাই..
অনেক সংগ্রাম শেষে জয় করে নিয়েছি তোমায়.. ‘এই দুই আঁখিতে দেখিতে চেয়েছি আমি যারে, দেখা পেয়েছি তার তোমারি মাঝে…!
ঘোলাটে চোখ দুটো কী যে খুঁজে বেরায় বুঝনি কখনও একবার..!’ আমি খুঁজেছি সেদিন আমি খুব করে খুঁজেছি_তোমার মায়া ভরা চোখে ভালোবাসার প্রনয়…?
কিন্তু আফসোস দেখা মেলেনি ভালোবাসার.. তবে আমি আবার এসেছি, দেখেছি দু’চোখ ভরে ভালোবাসার হাতছানি..!
এই চাঁদনী রাতে তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে শ্যামবতী..! সত্যি তুমি ভুবনমোহিনী তাই তো কাছে থেকে দেখার আক্ষেপ টা একটু বেশি…!
শিমু তুমি আমার কাছে শিমুল ফুলের মতোই সুন্দর..!
রুবেল তাকিয়ে আছে শিমুর দিকে,যেন আজীবন দেখলেও তোমাকে দেখার এই তৃষ্ণা আমার মিটবে না…!
শিমু লজ্জায় লাল হয়ে যায়, মনে পড়ে যায় সেই প্রথম দিনের কথা,যেদিন রুবেল বলেছিলো, ভালোবাসি_কিন্তু শিমু তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে.. কিন্তু বহুদিন পর শিমুকে ধরা দিতে হয়েছে, রুবেলের প্রেমের জালে.. অতীত ভাবতে ভাবতেই, শিমু চমকে উঠলো..
শিমু দেখলো, জানালার পাশে রুবেল ধুপ করে পড়ে গেলো…!
শিমু দৌড়ে বাহিয়ে আসলো..”রুবেল জ্ঞান হারানোর আগে পর্যন্ত চিৎকার করে বলতে থাকলো, শিমুল ফুল তুমি ঘরে যাও বাহিয়ে এসো না..! রুবেল মাটিতে নেতিয়ে পড়লো..!
শিমু বাহিরে আসতেই কিছু কালো হাত তাকে জড়িয়ে নিলো..! নিমিষেই মুখটা বেঁধে দিলো কাপড়ে..?
রুবেলের দেহটাকে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে.. শিমুকে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো জঙ্গলের দিকে….
চলবে….